بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু
ইসলাম র্ধমমতে লাইলাতুল মেরাজ’ বা মেরাজের রাত, যা সচরাচর শবে মেরাজ হিসাবে আখ্যায়তি হয়, হচ্ছে। যে রাতে ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.) ঐশ্বরকি উপায়ে র্ঊধ্বাকাশে আরোহণ করেছিলেন এবং স্রষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করেন। অনেক মুসলমান এবাদত- বন্দেগীর মধ্য দিয়ে এই রাতটি উদযাপন করেন। ইসলামে মেরাজের বিষেশ গুরুত্ব আছে, কেননা এই মেরাজের মাধ্যমেই ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের দ্বিতীয় স্তম্ভ অর্থাৎ নামায, মুসলমানদের জন্য অত্যাবশ্যক (ফরজ) করা হয় এবং এই রাতেই পাঁচ ওয়াক্ত নামায মুসলমানদের জন্য নিয়ে আসেন নবী মুহাম্মদ (সা:)।
পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত-যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল। (সূরা বনী ইসরাঈল-১)
হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, হযরত আবু যর (রাঃ) বর্ণনা করতেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আমি মক্কা থাকা অবস্থায় এক রাতে হঠাৎ আমার (উম্মে হানী রাঃ)-এর) ঘরের ছাদ ফাঁকা হয়ে গেল। অতঃপর হযরত জিব্রাঈল (আঃ) অবতরন করলেন। তিনি আমার বক্ষ বিদীর্ণ (সিনাচাক) করে ‘জমজম’ কূপের পানি দ্বারা ধৌত করেন। তারপর (ঈমান ও হেকমতে ভরপুর) স্বর্ণের একটি পাত্র এনে তা আমার বক্ষে ঢেলে দিয়ে ফাঁড়া একত্রিত করে দিলেন। তারপর আমার হাত ধরে দুনিয়ার আসমানের দিকে উঠেন। যখন আমি দুনিয়ার আসমানের কাছে আসলাম, তখন জিব্রাঈল (আঃ) আসমানের দ্বাররক্ষককে বললেন, দরজা খোল। দ্বাররক্ষক প্রশ্ন করলেন, আপনি কে? তিনি বললেন আমি জিব্রাঈল। দ্বাররক্ষক পুনরায় প্রশ্ন করলেন, আপনার সাথে কেউ আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমার সাথে হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আছেন। দ্বাররক্ষক পুনরায় বললেন, তাঁর কাছে দাওয়াত নিয়ে পাঠানো হয়েছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ।
অতঃপর যখন দরজা খুলল তখন আমরা দুনিয়ার আসমানের উপর উঠলাম। হঠাৎ এক লোক তথায় এমনভাবে বসা আছেন, যাঁর ডানে বামে মানুষের প্রতিবিম্ব রূহ সমূহ রয়েছে। তিনি যখন ডান দিকে তাকান তখন হাসেন, আবার যখন বাম দিকে তাকান তখন কেঁদে ফেলেন। তিনি বললেন, সত্য নবী ও যোগ্য সন্তানের জন্য খোশ আমদেদ। আমি হযরত জিব্রাঈল (আঃ)-কে বললাম, ইনি কে? তিনি উত্তর দিলেন, ইনি হযরত আদম (আঃ)। আর আপনি তাঁর ডানে বামে প্রতিবিম্ব বা রূহ গুলো দেখতে পাচ্ছেন, এগুলো তার আওলাদের রূহসমূহ। তার ডান দিকে অবস্থিত রূহগুলো বেহেশত বাসীদের আর বাম দিকে অবস্থিত রূহগুলো দোযখবাসীদের তাই তিনি ডান দিকে নজর করলে হাসেন এবং বাম দিকে নজর করলে কেঁদে ফেলেন। তারপর জিব্রাঈল (আঃ) আমার হাত ধরে দিত্বীয় আসমানের দিকে উঠেন। অতঃপর তার দ্বাররক্ষককে বললেন, দরজা খোল। তখন তার দ্বাররক্ষক তাই বলল যা প্রথম দ্বাররক্ষক বলেছিল।……………
হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, যখন জিব্রাঈল (আঃ) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে সাথে করে হযরত ইদ্রীস (আঃ) এর কাছ দিয়ে যেতে লাগলেন, তখন তিনি বললেন, যোগ্য নবী ও যোগ্য ভাইয়ের জন্য মারহাবা, হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আমি তখন হযরত জিব্রাঈল (আঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, ইনি কে? তিনি বললেন, ইনি হযরত ইদ্রীস (আঃ)। অতঃপর আমি হযরত মূসা (আঃ) এর কাছ দিয়ে যেতে লাগলাম, তখন তিনি বললেন, যোগ্য নবী ও যোগ্য ভাইয়ের জন্য মারহাবা, আমি তখন হযরত জিব্রাঈল (আঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, ইনি কে? তিনি বললেন, ইনি হযরত মূসা (আঃ)। অতঃপর আমি হযরত ঈসা (আঃ) এর কাছ দিয়ে যেতে লাগলাম, তখন তিনি বললেন, যোগ্য নবী ও যোগ্য ভাইয়ের জন্য মারহাবা, আমি তখন হযরত জিব্রাঈল (আঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, ইনি কে? তিনি বললেন, ইনি হযরত ঈসা (আঃ)। অতঃপর আমি হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর কাছ দিয়ে যেতে লাগলাম, তখন তিনি বললেন, যোগ্য নবী ও যোগ্য ভাইয়ের জন্য মারহাবা, আমি তখন জিব্রাঈল (আঃ)-কে প্রশ্ন করলাম, ইনি কে? তিনি বললেন, ইনি হযরত ইবরাহীম (আঃ)।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, তারপর আমাকে আরো উপরে উঠানো হল। আমাকে এরূপ সুউচ্চ সমতল ভূমিতে উঠানো হল, যেখান থেকে আমি ‘কলম’ চলার আওয়াজ শুনতে পেলাম।
নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, অতঃপর মহান আল্লাহ্ আমার উম্মতের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেন। আমি তা নিয়ে ফিরে আসতে মূসা (আঃ)-কাছ দিয়ে অতিক্রম করতে লাগলাম। তিনি আমাকে বললেন, মহান আল্লাহ্ আপনার উম্মতের উপর কি ফরয করেছেন? আমি বললাম, পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরজ করেছেন। মূসা (আঃ) আমাকে পরামর্শ দিলেন, আপনি আপনার প্রভূর কাছে ফিরে যান। আপনার উম্মত এত ওয়াক্ত নামায আদায় করতে সক্ষম হবে না। হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, আমি তাঁর পরামর্শে আল্লাহর কাছে ফিরে গেলে তিনি কিছু অংশ কমিয়ে দিলেন। তারপর আমি আবার হযরত মূসা (আঃ)-এর কাছে ফিরে এসে তাঁকে বললাম, মহান আল্লাহ কিছু অংশ কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি পুনরায় বললেন, আপনি আপনার প্রভূর কাছে আবার যান, আপনার উম্মত এত ওয়াক্ত নামায আদায় করতে সক্ষম হবে না। আমি হতাঁর পরামর্শে পুনরায় আল্লাহর কাছে ফিরে গেলে আবার তিনি কিছু অংশ কমিয়ে দিলেন। আবার আমি হযরত মূসা (আঃ)-এর কাছে আসলে তিনি পূববৎ পরামর্শ দিয়ে বললেন, আপনি আপনার প্রভূর কাছে ফিরে যান। আপনার উম্মত এত ওয়াক্ত নামায আদায় করতে সক্ষম হবে না। তাই আমি তাঁর পরামর্শ অনুসারে মহান আল্লাহ্র দরবারে ফিরে গেলে তিনি শেষ বারে বললেন, ফরজ নামায এবারে পাঁচ ওয়াক্ত নির্ধারণ করা হল। কিন্তু সওয়াব পঞ্চাশ ওয়াক্তেরই রয়ে গেল। আর আপনি জেনে রাখুন, আমার কথার কখনো পরিবর্তন হয় না। এ ঘটনার পর আমি পুনরায় হযরত মূসা (আঃ)-এর কাছে ফিরে আসলে তিনি আবার আমাকে পরামর্শ দিলেন, আপনি আপনার প্রভূর নিকট পুনরায় যান। আমি বললাম, আমি এ ব্যাপারে মহান আল্লাহর খেদমতে পুনরায় যেতে লজ্জা অনুভব করছি। (সহীহ বোখারী-৩৪৯)