তাওহীদ ও রিসালাতের শাহাদত এবং ইসলামের বিধানের দিকে আহ্বান

তাওহীদ ও রিসালাতের শাহাদত এবং ইসলামের বিধানের দিকে আহ্বান:-

২৯) আবূ বকর ইবনে আবূ শায়বা, আবূ কুরায়ব ও ইসহাক ইবনে ইবরাহীম রহ…ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণনা করেন, ইবনে আব্বাস রাযি. বলেন যে, মু‘আয রাযি. বলেছেন রাসূলুল্লাহ আমাকে (ইয়ামানের প্রশাসক নিযুক্ত করে) পাঠালেন। তখন বললেন, তুমি আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের কাছে যাচ্ছ তুমি তাদেরকে আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল-এ কথার সাক্ষ্যদানের আহ্বান জানাবে। যদি তারা তা মেনে নেয় তাহলে তাদের জানিয়ে দেবে দিনে এবং রাতে আল্লাহ তাদেও উপর পাঁচ ওয়াক্তের নামায ফরয করেছেন। যদি তারা তা মেনে নেয়, তাহলে তাদের জানিয়ে দেবে যে, আল্লাহ তাদেও উপর যাকাত ফরয করেছেন। ধনীদের থেকে তা আদায় করা হবে এবং তাদের দরিদ্রদের মাঝে বন্টন করা হবে। তারা এটা মেনে নিলে, সাবধান, যাকাত হিসেবে তুমি তাদের থেকে বাছাই করে উত্তমগুলো নিবে না। আর মযলূমের (বদ) দু‘আ থেকে সাবধান! কেননা আল্লাহ ও মযলূমের দু‘আর মধ্যে কোন অন্তরায় নেই।

একটি প্রশ্ন ও তার জবাব:

হযরত মু‘আজ রাযি. কে ইয়ামেনে প্রেরণের পূর্বে হজ এবং সাওম ফরজ হয়। তা স্বত্ত্বেও এ দুটি বিধানের উল্লেখ আলোচ্য হাদীসে নেই কেন?

জবাব:

(ক) সাওম ও হজ কারো ক্ষেত্রে কোনো কোনো সময় পালনীয় সময় পালনীয় নাও হতে পারে। যেমন সাওমের ফিদিয়া প্রদান এবং বদলী হজ করানো। পক্ষান্তরে নামাজ ও যাকাত নিজে আদায় করার বিকল্প নেই। এ কারণে এ দুটিকে এক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব প্রদান করেছে।

(খ) শাইখুল হিন্দ মাহমুদ হাসান দেওবন্দী রহ. বলেন- শরীয়াত প্রণেতা যখন ইসলামের আরকান বর্ণনা করেন তখন সাধারণত এগুলোর পূর্ণ বিবরণ প্রদান করেন। আর ইসলামের আরকানের দাওয়াত দেওয়ার সময় অপেক্ষাকৃত গুরুত্বপূর্ণ গুলো উল্লেখ করে থাকেন।

(গ) দরবারে রেসালাতের পক্ষ থেকে প্রেরিত সাহাবায়ে কেরাম ইসলামের মৌলিক সব বিষয় ভালোভাবে জানতেন বিধায় তাদেরকে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছিলো। তাই তাদের সামনে আরকানে ইসলামের সবগুলো উল্লেখ করা প্রয়োজন ছিলো না, বরং দু’একটি উল্লেখ করে ইসলামের প্রতি দাওয়াত দেওয়ার রীতি-নীতি শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।

(ঘ) কালিমায়ে তাওহীদ এবং কালিমায়ে শাহাদত মুখে উচ্চারণ এবং মনে প্রাণে বিশ্বাস করা কাফেরদের জন্য অনেক বেশি কষ্টের ছিলো। নামাজ দৈনন্দিনের পাঁচ বারের আমল। বারবার হওয়ার করণে এটিও ছিলো তাদের জন্য খুব কষ্টকর। যাকাত হলো সম্পদ সংশ্লিষ্ট ইবাদত। দুনিয়ার মুহাব্বতের কারণে এটিও তাদের জন্য সহজসাধ্য ছিলো না। কোনো মানুষ যদি এগুলোতে অভ্যস্ত হয়ে যায় তহলে অন্য সব আরকানের উপর আমল তার জন্য সহজ হয়ে যায়। এদিকে লক্ষ করে শুধু উল্লিখিত আরকানগুলোর আলোচনা করা হয়েছে।

৩০) ইবনে আবূ উমর রাযি…ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী (সা) মু‘আয ইবনে জাবাল রাযি-কে ইয়ামানে (প্রশাসক করে) পাঠালেন। তখন বললেন, নিশ্চয়ই তুমি এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে যাচ্ছ…বাকি অংশ ওয়াকীর বর্ণনার অনুরুপ।

৩১) উমায়্যা ইবনে বিসতাম আল-আয়শী রাযি…ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) মু‘আয ইবনে জাবাল রাযি-কে ইয়ামানে পাঠালেন সময় বলেছিলেন, তুমি আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের কাছে যাচ্ছ। তাদেও প্রথম যে দাওয়াত দিবে তা-হলো, মহান আল্লাহর ইবাদত। যখন তারা আল্লাহকে চিনে নিবে, তখন তাদের জানিয়ে দিবে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য দিন ও রাত্রে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। তারা তা করলে তাদের জানিয়ে দিবে যে, আল্লাহ তাদের উপর যাকাত ফরয করেছেন যা তাদের ধনীদের থেকে আদায় করা হবে এবং তা তাদের গরীবদের মাঝে বিতরণ করা হবে। এর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করলে তুমি তাদের থেকে তা আদায় করবে; কিন্তু তাদেও উত্তম মাল থেকে সাবধান থাকবে।

(সহীহ মুসলিম শরীফ-২৯-৩১)