সুরা-বাকারাহ্ এর বাংলা অর্থ (আয়াত ০১-৪৮)

সুরা-বাকারাহ্
আয়াত-২৮৬

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অসীম দয়াল

الم

(১) আলিফ লাম মিম।

ذَ‌ٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ ۛ فِيهِ ۛ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ

(২) এই কিতাব এমন- যাহার মধ্যে কোন সন্দেহ নাই, (ইহা) খোদাভীরুগনের জন্য পথ প্রদর্শক।

الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ

(৩) ঐ খোদাভীরুগন এমন যে, বিশ্বাস স্থাপন করে অদৃশ্য বস্তুসমুহের প্রতি এবংনামাজ কায়েম রাখে আর আমি তাহাদিগকে যাহা প্রদান করিয়াছি, উহা হইতে ব্যয় করে।

وَالَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ وَبِالْآخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ

(৪) এবং তাহারা এমন যে, বিশ্বাস স্থাপন করে এই কিতাবের প্রতিও যাহা আপনার প্রতি অবতীর্ণ হইয়াছে আর ঐ সমস্ত কিতাবের প্রতিও যাহা আপনার পূর্বে অবতীর্ণ হইয়াছিল,এবং আখেরাতের প্রতিও তাহারা দৃঢ বিশ্বাস রাখে।

শানে নুযুল:
১। এই হরফগুলির অর্থ সাধারন লোককে অবগত করান হয় নাই এবং ইহার সহিত বান্দার ধর্মবোধের কোন সম্পর্ক নাই। (ব:কো:)
২। অর্থাৎ এই কোরআন আল্লাহর কালাম হওয়া সম্ন্ন্ধে কোন সন্দেহ নাই।(ব:কো:)
৩। কেননা যাহাদের অন্তরে আল্লাহ্ তা’আলার ভয় নাই, তাহারা কোরআনের প্রদর্শিত পথ দেখিতে পায় না।(ব:কো:)
৪। অর্থাৎ আরকান ও আহকাম পূর্ণরুপে পালন করিয়া সর্বদা নিয়মিতভাবে নামায আদায় করে।(ব:কো:)
৫। অর্থাৎ নেক কাজ সমূহে ব্যয় করে। (ব:কো:)

أُولَـٰئِكَ عَلَىٰ هُدًى مِّن رَّبِّهِمْ ۖ وَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

(৫) ইহারাই রহিয়াছে তাহাদের প্রভু হইতে প্রাপ্ত হেদায়েতের উপর এবং ইহারাই পূর্ণ সফলকাম।

إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا سَوَاءٌ عَلَيْهِمْ أَأَنذَرْتَهُمْ أَمْ لَمْ تُنذِرْهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ

(৬) নিশ্চয় যাহারা কাফির হইয়া গিয়াছে, তাহাদের জন্য উভয়ই সমান, আপনি তাহাদিগকে ভয় দেখান বা না দেখান, তাহারা ঈমান আনিবে না।

خَتَمَ اللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ وَعَلَىٰ سَمْعِهِمْ ۖ وَعَلَىٰ أَبْصَارِهِمْ غِشَاوَةٌ ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ

(৭) আল্লাহ্ তা’আলা মোহর মারিয়া দিয়াছেন তাহাদের অন্তরসমূহের উপর ও তাহাদের কর্ণসমূহের উপর এবং তাহাদের চক্ষুসমূহের উপর পর্দা রহিয়াছে, আর তাহাদের জন্য রহিয়াছে গুরুতর শাস্তি।

وَمِنَ النَّاسِ مَن يَقُولُ آمَنَّا بِاللَّهِ وَبِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَمَا هُم بِمُؤْمِنِينَ

(৮) আর মানুষের মধ্যে কতক এমন লোকও আছে যাহারা বলে, ঈমান আনিয়াছি আল্লাহ তা’আলার প্রতি এবং শেষ দিবসের প্রতি, অথচ তাহারা মোটেও ঈমানদার নহে।

يُخَادِعُونَ اللَّهَ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَمَا يَخْدَعُونَ إِلَّا أَنفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ

(৯) তাহারা চালবাজী করে আল্লাহ্ এবং মুমেনদের সহিত, বস্তুত: তাহারা কাহারও সহিত চালবাজী করে না নিজদেরে ব্যতীত অথচ তাহারা এ সম্বন্ধে বোধই রাখে না।

فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ فَزَادَهُمُ اللَّهُ مَرَضًا ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ بِمَا كَانُوا يَكْذِبُونَ

(১০) তাহাদের অন্তরসমূহে রহিয়াছে কঠিন পীড়া, উপরন্ত আল্লাহ্ তাহাদের পীড়া  আরও বাড়াইয়া দিয়াছেন, আর তাহাদের জন্য রহিয়াছে যন্ত্রণাময় শাস্তি; এ কারনে যে, তাহারা মিথ্যা বলিত।

وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ لَا تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ قَالُوا إِنَّمَا نَحْنُ مُصْلِحُونَ

(১১) আর যখন তাহাদিগকে বলা হয়, তোমরা ফ্যাসাদ সৃষ্টি করিও না ভূ-পৃষ্ঠে, তখন তাহারা বলে, আমরা তো শুধু শান্তিই স্থাপনকারী।

শানে নুযুল:
১। প্রথম হইতে এপর্যন্ত মু’মেনদের বর্ণনা ছিল। অত;পর, হইতে কাফেরেদের এবং হইতে ১৩ নং আয়াত পর্যন্ত মুনাফেকদের বিষয় বর্ণিত হইয়াছে। (মু:কো:)
২। অন্তরের পীড়া বলিতে তাহাদের বিরূপ বিশ্বাস, ইসলামের প্রতি হিংসা, নিত্য নৈমিত্তিক সংশয় এবং দুশ্চিন্তা প্রভৃতি বুঝান হইয়াছে। ইসলামের ক্রমবর্ধমান উন্নতি ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে তাহাদের হিংসা ও বিদ্বেষ আরও বৃদ্ধি পাইতেছিল। ইহাকেই তাহাদের অন্তরের পীড়া বৃদ্ধি পাওয়া বলা হইয়াছে। (ব:কো:)
৩। অর্থাৎ, তাহারা ঈমান আনার মিথ্যা দাবী করিত। (ব:কো:)
৪। তাহাদের বোকামী ও দুষ্টামী এই পর্যায় পৌছিয়াছে যে, তাহারা নিজেদের দুষ্ক্রিয়া সমুহকে শান্তি স্থাপক ও সংশোধনকারী কার্য বলিয়া মনে করিত। (ব:কো:)

أَلَا إِنَّهُمْ هُمُ الْمُفْسِدُونَ وَلَـٰكِن لَّا يَشْعُرُونَ

(১২) সাবধান! নিশ্চয় ইহারাই ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী কিন্তু তাহারা এ সম্বন্ধে বোধই রাখে না।

وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ آمِنُوا كَمَا آمَنَ النَّاسُ قَالُوا أَنُؤْمِنُ كَمَا آمَنَ السُّفَهَاءُ ۗ أَلَا إِنَّهُمْ هُمُ السُّفَهَاءُ وَلَـٰكِن لَّا يَعْلَمُونَ

(১৩) আর যখন তাহাদিগকে বলা হয়, তদ্রুপ ঈমান আন যেরুপ ঈমান আনিয়াছে অন্যান্য লোক, তখন তাহারা বলে, আমরা কি ঈমান আনিব যেরুপ ঈমান আনিয়াছে এ নির্বোধেরা? যেনে রাখুন, তাহারাই নির্বোধ কিন্তু তাহারা বুঝিতে পারিতেছে না।

وَإِذَا لَقُوا الَّذِينَ آمَنُوا قَالُوا آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْا إِلَىٰ شَيَاطِينِهِمْ قَالُوا إِنَّا مَعَكُمْ إِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَهْزِئُونَ

(১৪) আর যখন মুনাফেকরা মুমেনদের সহিত সাক্ষাত করে, তখন তাহারা বলে, আমরা ঈমান আনিয়াছি, আর যখন তাহারা গোপনে মিলিত হয় নিজ দুষ্ট নেতাদের সহিত, বলে, নিশ্চয় আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি, আমরা তো শুধু ঠাট্টা করিয়া থাকি।

اللَّهُ يَسْتَهْزِئُ بِهِمْ وَيَمُدُّهُمْ فِي طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُونَ

(১৫) আল্লাহ্ই তাহাদের সহিত ঠাট্টা করিতেছেন, এবং তাহাদিগকে ঢিল দিয়া যাইতেছেন, ফলে তাহারা নিজেদের অবাধ্যতার মধ্যে উদভ্রান্ত হইয়া বেড়াইতেছে।

أُولَـٰئِكَ الَّذِينَ اشْتَرَوُا الضَّلَالَةَ بِالْهُدَىٰ فَمَا رَبِحَت تِّجَارَتُهُمْ وَمَا كَانُوا مُهْتَدِينَ

(১৬) ইহারা ঐ সমস্ত লোক যাহারা গ্রহন করিয়াছে গোমরাহী হেদায়েতের পরিবর্তে, সুতরাং তাহাদের এই ব্যবসা লাভজনক হয় নাই এবং তাহারা ঠিক পথে চলে নাই।

مَثَلُهُمْ كَمَثَلِ الَّذِي اسْتَوْقَدَ نَارًا فَلَمَّا أَضَاءَتْ مَا حَوْلَهُ ذَهَبَ اللَّهُ بِنُورِهِمْ وَتَرَكَهُمْ فِي ظُلُمَاتٍ لَّا يُبْصِرُونَ

(১৭) ইহাদের অবস্থা ঐ ব্যক্তির অবস্থার ন্যায়, যে কোথাও আগুন জালিয়াছে, অত:পর যখন আগুন তাহার চারিদিকের সবকিছু আলোকিত করিল, এমতাবস্থায় আল্লাহ্ তাআলা ছিনাইয়া লইলেন তাহাদের আলো, এবং তাহাদিগকে ফেলিলেন অন্ধকারে, তাহারা কিছুই দেখিতে পায় না।

صُمٌّ بُكْمٌ عُمْيٌ فَهُمْ لَا يَرْجِعُونَ

(১৮) বধির,মূক,অন্ধ-কাজেই তাহারা আর ফিরিবে না।

أَوْ كَصَيِّبٍ مِّنَ السَّمَاءِ فِيهِ ظُلُمَاتٌ وَرَعْدٌ وَبَرْقٌ يَجْعَلُونَ أَصَابِعَهُمْ فِي آذَانِهِم مِّنَ الصَّوَاعِقِ حَذَرَ الْمَوْتِ ۚ وَاللَّهُ مُحِيطٌ بِالْكَافِرِينَ

শানে নুযুল:
১। মুনাফেকরা নির্বোধ বলিতে সরল প্রকৃতির মুমেনদের প্রতি ইঙ্গিত করিয়াছে।
২। আল্লাহ পাকের ঠাট্টা এই যে, তাহাদিগকে তৎক্ষণাৎ শাস্তি না দিয়া সময় প্রদান করিয়াছেন। উদ্দেশ্য কুফরীর চরম সীমায় পৌছিলে অর্থাৎ অপরাধ গুরুতর হইলে অকষ্মাৎ তাহাদিগকে পাকড়াও করিবেন ও যথোচিত শাস্তি দিবেন। ঠাট্টার প্রতিবিধান হিসাবেই ইহাকে ঠাট্টা বলা হইয়াছে। অন্যথায় প্রকৃত প্রস্তাবে আল্লাহ তা’আলার এই কার্য ঠাট্টা নহে। (বঃকোঃ)
৩। অর্থাৎ, মুনাফেকরা সত্যপথ হইতে এতদূরে সরিয়া পড়িয়াছে যে, তাহাদের কান সত্য কথা শুনিবার, মুখ সত্য কথা বলিবার এবং চক্ষু সত্য পথ দেখিবার যোগ্যতা হারাইয়া ফেলিয়াছে। সুতরাং তাহাদের সত্যের দিকে ফিরিয়া আসার আর কি আশা। (বঃকোঃ)

(১৯) অথবা-এই মুনাফেকদের অবস্থা এইরুপ যেমন আসমান হইতে প্রচন্ড বৃষ্টিপাত হয়, উহাতে অন্ধকারেও আছে আর বজ্র ধ্বনি এবং বিদ্যুৎও আছে, এমতাবস্থায় যাহারা পথ চলে তাহারা গুজিয়া দেয় নিজেদের অঙ্গুলিসমুহ নিজেদের কর্ণকুহরে, বজ্রনিনাদে মৃত্যুর ভয়ে। আল্লাহ্ ঘিরিয়া রাখিয়াছেন কাফেরদিগকে সর্বদিক হইতে।

يَكَادُ الْبَرْقُ يَخْطَفُ أَبْصَارَهُمْ ۖ كُلَّمَا أَضَاءَ لَهُم مَّشَوْا فِيهِ وَإِذَا أَظْلَمَ عَلَيْهِمْ قَامُوا ۚ وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ لَذَهَبَ بِسَمْعِهِمْ وَأَبْصَارِهِمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

(২০) মনে হয় যেন বিদ্যুৎ এখনই তাহাদের দৃষ্টিশক্তি কাড়িয়া লয়; যখনই তাহাদের উপর বিদ্যুৎ প্রদীপ্ত হয় তখনই উহার আলোকে তাহারা চলিতে থাকে; আর যখন অন্ধকার তাহাদিগকে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলে তখন তাহারা দাড়াইয়া থাকে; আর যদি আল্লাহ্ ইচ্ছা করিতেন তবে তাহাদের কর্ণ ও চক্ষু সমস্তই কাড়িয়া লইতেন; নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সমস্ত বস্তুর উপর ক্ষমতাবান।

يَا أَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُمْ وَالَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

(২১) হে মানব জাতি! তোমরা ইবাদত কর তোমাদের প্রতিপালকের, যিনি সৃষ্টি করিয়াছেন তোমাদিগকে এবং উহাদিগকে, যাহারা তোমাদের পূর্বে অতীত হইয়াছে, আশ্চর্য নহে তোমরা দোযখ হইতে মুক্তি পাইবে।

الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ فِرَاشًا وَالسَّمَاءَ بِنَاءً وَأَنزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجَ بِهِ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَّكُمْ ۖ فَلَا تَجْعَلُوا لِلَّهِ أَندَادًا وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ

(২২) তিনি এমন, যে করিয়াছেন যমিনকে তোমাদের জন্য বিছানা স্বরুপ এবং আসমানকে ছাদ স্বরুপ, আর আসমান হইতে পানি বর্ষণ করিয়াছেন, উৎপন্ন করিয়াছেন উহা দ্বারা ফলসমূহ তোমাদের খাদ্যরুপে, অতএব, তোমরা কাহাকেও । আল্লাহর প্রতিদ্বন্দী স্থির করিও না, তোমরা তো জান, বুঝ।

وَإِن كُنتُمْ فِي رَيْبٍ مِّمَّا نَزَّلْنَا عَلَىٰ عَبْدِنَا فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِّن مِّثْلِهِ وَادْعُوا شُهَدَاءَكُم مِّن دُونِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ

(২৩) আর যদি তোমরা সন্দিহান হও, আমার খাছ বান্দার প্রতি অবতারিত কিতাবে তবে তোমরা অনুরূপ একটি সুরা রচনা কর এবং ডাকিয়া লও, তোমাদের সাহায্যকারীদের যাহারা খোদা হইতে পৃথক; যদি তোমরা সত্যবাদী হও।

শানে নুযুল:
১। এখানে দ্বীন ইসলামকে বৃষ্টির সাথে তুলনা করা হইয়াছে। বৃষ্টির দ্বারা ক্ষেত সরস ও সতেজ হয়, তদ্রুপ ইসলাম দ্বারা রূহ সতেজ ও প্রফুল্ল হইয়া অনন্ত জীবন লাভ করে। প্রাণকে ঈমানের অন্ধকার রাত্রি ও মেঘ বৃষ্টিকে ধর্ম-কর্মে দুঃখ কষ্টের, আর বজ্রপাত কে যুদ্ধে ধন দৌলত খরচ করা ও নিহত হওয়ার এবং লুটের মাল হস্তগত হওয়া ও যুদ্ধে জয়লাভ করাকে বিদ্যুতের চমকের সহিত তুলনা করা হইয়াছে। বাহিরে মুসলমান বলিয়া পরিচিত মুনাফেকদিগকে যখন কাফেরদিগকে কতল করার এবং দেশান্তর করার নির্দেশ শুনান হয়, তখন তাহারা ভয়ে কর্ণ কুহরে অঙ্গুলি ঢুকাইয়া দেয়। যেন কোরআনের নির্দেশ শুনিতে না পায়; পক্ষান্তরে মুসলমানদের জয় হইলে বা মালে গনীমত হস্তগত হইলে ইসলামের ভূয়সী প্রসংশা আরম্ভ করিয়া দেয়। (মুঃকোঃ)
২। এখানে মুক্তিদানের প্রতিশ্রুতিই বুঝিতে হইবে। (বঃকোঃ)

فَإِن لَّمْ تَفْعَلُوا وَلَن تَفْعَلُوا فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ ۖ أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ

(২৪) অনন্তর যদি তোমরা তাহা করিতে না পার এবং তোমরা কখনও তাহা করিতে পারিবে না,তবে তোমরা আত্মরক্ষা করিও দোযখ হইতে যাহার ইন্ধন হইবে মানুষ এবং পাথর,প্রস্তুত রাখা হয়েছে কাফেরদের জন্য।

وَبَشِّرِ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ۖ كُلَّمَا رُزِقُوا مِنْهَا مِن ثَمَرَةٍ رِّزْقًا ۙ قَالُوا هَـٰذَا الَّذِي رُزِقْنَا مِن قَبْلُ ۖ وَأُتُوا بِهِ مُتَشَابِهًا ۖ وَلَهُمْ فِيهَا أَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ ۖ وَهُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

(২৫) আর আপনি সুসংবাদ দিন উহাদের যাহারা ঈমান আনিয়াছে এবং নেক কাজ করিয়াছে। নিশ্চয়, তাহাদের জন্য এমন বেহেশত রহিয়াছে যাহার তলদেশ দিয়া প্রবাহিত হইতেছে নহরসমূহ। যতবারই তাহাদিগকে উক্ত বেহেশত হইতে কোন ফল খাইতে দেওয়া হইবে ততবারই তাহারা বলিবে ইহা তো সেই খাদ্য যাহা ইতিপূর্বে আমাদিগকে খাইতে দেওয়া হইয়াছিল। বস্ততঃ প্রত্যেকবারই তাহাদিগকে সাদৃশ্যপুর্ণ ফল দেওয়া হইবে; আর তাহাদের জন্য সেখানে থাকিবে পাক সাফ বিবিগন; তাহারা তথায় অনন্তকাল থাকিবে।

إِنَّ اللَّهَ لَا يَسْتَحْيِي أَن يَضْرِبَ مَثَلًا مَّا بَعُوضَةً فَمَا فَوْقَهَا ۚ فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا فَيَعْلَمُونَ أَنَّهُ الْحَقُّ مِن رَّبِّهِمْ ۖ وَأَمَّا الَّذِينَ كَفَرُوا فَيَقُولُونَ مَاذَا أَرَادَ اللَّهُ بِهَـٰذَا مَثَلًا ۘ يُضِلُّ بِهِ كَثِيرًا وَيَهْدِي بِهِ كَثِيرًا ۚ وَمَا يُضِلُّ بِهِ إِلَّا الْفَاسِقِينَ

(২৬) নিশ্চয় আল্লাহ লজ্জাবোধ করেন না যেকোন উপমা বর্ণনা করিতে-মশা-ই হউক বা তদপেক্ষা অধিক হউক; সুতরাং যাহারা ঈমান আনিয়াছে,যাহাই হউক না কেন, তাহারা তো ইহাই স্থির বিশ্বাস করিবে যে, এই উপমা খুবই স্থানোপযোগী হইয়াছে তাহাদের প্রভুর তরফ হইতে। আর যাহারা কাফের হইয়াছে, সর্বাবস্থায় তাহারা ইহাই বলিবে, এ সমস্ত নগণ্য বস্তুর উপমা দ্বারা আল্লাহর মতলবই বা কি? তিনি বিপথগামী করিয়া থাকেন ইহা দ্বারা অনেককে এবং ইহা দ্বারা হেদায়েত করেন অনেককে এবং ইহা দ্বারা তিনি বিপথগামী করেন কেবল ফাসেক দিগকেই।

শানে নুযুল:
১। অর্থাৎ,তোমাদের যদি সন্দেহ হয় যে,পয়গম্বর এই কোরআন নিজে রচনা করিয়া লইছেন, তবে তোমরাও তো রচনা করিতে পারবে। কেননা, তোমরা তো আরবী ভাষায় অভিজ্ঞ অনন্তর আরবী ভাষায় দক্ষতা সত্ত্বেও যখন তাহারা কোরআনের ন্যায় রচনা করিতে পারিবে না তখন প্রমানিত হইয়া যাবে যে, কোরআন মানুষের রচনা নহে। আল্লাহ্ তা‘আলার তরফ হইতে অবতীর্ণ মু’জেযাহ্। ইহাতে নিঃসন্দেহে হুযুরের পয়গম্বরীর সত্যতা প্রমানিত হইয়া যাইবে এবং ইহাই উদ্দেশ্য। (বঃকোঃ)
২। অর্থাৎ, আল্লাহ্, ব্যতীত যাহাদিগকে তোমরা সাহায্যকারী ও মা’বুদরূপে সাব্যস্য করিয়া রাখিয়াছ। (বঃ)
৩। অর্থাৎ, মূর্তিপূজার অসারতা ও মূর্তির অক্ষমতাকে নগণ্য মাছি-মশার সহিত তুলনা করাই ঠিক হইয়াছে। (বঃকোঃ)

الَّذِينَ يَنقُضُونَ عَهْدَ اللَّهِ مِن بَعْدِ مِيثَاقِهِ وَيَقْطَعُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَن يُوصَلَ وَيُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ ۚ أُولَـٰئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ

(২৭) যাহারা আল্লাহর সঙ্গে দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়ার পর উহা ভঙ্গ করে, এবং ছিন্ন করে ঐ সব সম্বন্ধ যাহা অবিচ্ছিন্ন রাখিতে আল্লাহর আদেশ দিয়াছেন এবং ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে ভুপৃষ্ঠে; ইহারাই পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত।

كَيْفَ تَكْفُرُونَ بِاللَّهِ وَكُنتُمْ أَمْوَاتًا فَأَحْيَاكُمْ ۖ ثُمَّ يُمِيتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيكُمْ ثُمَّ إِلَيْهِ تُرْجَعُونَ

(২৮) কেমন করিয়া তোমরা আল্লাহর না-শোকরী করিতেছ অথচ তোমরা ছিলে নির্জীব, তৎপর তিনি তোমাদিগকে জীবিত করিবেন, শেষে তোমরা তাহারই সমীপে নীত হইবে।

هُوَ الَّذِي خَلَقَ لَكُم مَّا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا ثُمَّ اسْتَوَىٰ إِلَى السَّمَاءِ فَسَوَّاهُنَّ سَبْعَ سَمَاوَاتٍ ۚ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ

(২৯) তিনি এমন যিনি তোমাদের হিতের জন্য পয়দা করিয়াছেন দুনিয়ার সবকিছু; অতঃপর মনঃসংযোগ করেন আসমানের প্রতি এবং উহাকে যথাযথভাবে নির্মাণ করেন সাত আসমানরূপে; তিনি তো সর্ববিষয়ে জ্ঞাত।

وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً ۖ قَالُوا أَتَجْعَلُ فِيهَا مَن يُفْسِدُ فِيهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَاءَ وَنَحْنُ نُسَبِّحُ بِحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ ۖ قَالَ إِنِّي أَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُونَ

(৩০) আর যখন বলিলেন, আপনার প্রভু ফেরেশ্তাগনকে, নিশ্চয় আমি বানাইব ভূ-পৃষ্ঠে একজন প্রতিনিধি; বলিল, আপনি কি সৃষ্টি করিবেন যমিনে এমন লোক যাহারা উহাতে ফ্যাসাদ করিবে ও রক্তারক্তি করিবে? পরন্ত আমরা সর্বদা তস্বীহ্ পাঠ করিতেছি আপনার প্রশংসার সহিত এবং আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করিয়া আসিতেছি; আল্লাহ্ বলিলেন, আমি উহা জানি, যাহা তোমরা জান না।

শানে নুযুল:
১। অবাধ্য লোকদিগকে তিনি স্বয়ং গোমরাহ করেন না; বরং হুকুমের বিরুদ্ধাচরণের অভিশাপে সত্যান্বেষণের যোগ্যতা তাহাদের থাকে না। ফলে নিজেদের কর্মদোষেই তাহারা গোমরাহ্ হইয়া যাই। (বঃকোঃ)
২। অর্থাৎ, আমরা সকলেই আপনার আজ্ঞাবহ ও অনুগত। কিন্তু আপনি যাহাদিগকে সৃষ্টি করিবেন, তাহাদের কেহ কেহ অশান্তি বিস্তার এবং রক্তপাতকারীও হইবে। সুতরাং যে কার্য আপনার প্রতিনিধির উপর ন্যাস্ত করিতে চান তাহা আমাদের উপর ন্যস্ত করিলে আমরাই সকলে মিলিয়া উহা সম্পন্ন করিতে পারি। কাজেই উক্ত কাজের জন্য নূতন অপর এক জাতি সৃষ্টি করার স্বার্থকতা কি? (বঃকোঃ)

وَعَلَّمَ آدَمَ الْأَسْمَاءَ كُلَّهَا ثُمَّ عَرَضَهُمْ عَلَى الْمَلَائِكَةِ فَقَالَ أَنبِئُونِي بِأَسْمَاءِ هَـٰؤُلَاءِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ

(৩১) আর আল্লাহ্ জ্ঞান দিলেন আদমকে সকল বস্তুর নামের, অনন্তর পেশ করিলেন উহা ফেরেশতাদের সামনে এবং বলিলেন, তোমরা আমার নিকট এ সমস্ত বস্তুর নাম বল, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।

قَالُوا سُبْحَانَكَ لَا عِلْمَ لَنَا إِلَّا مَا عَلَّمْتَنَا ۖ إِنَّكَ أَنتَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ

(৩২) ফেরেশতারা বলিল, আপনি অতি পবিত্র, আমাদেরই জ্ঞান নাই কেবল ততটুকুই আছে যাহা আপনি আমাদিগকে শিখাইয়াছেন, নিশ্চয়ই আপনি মহা জ্ঞানী- বড় হেকমতময়।

قَالَ يَا آدَمُ أَنبِئْهُم بِأَسْمَائِهِمْ ۖ فَلَمَّا أَنبَأَهُم بِأَسْمَائِهِمْ قَالَ أَلَمْ أَقُل لَّكُمْ إِنِّي أَعْلَمُ غَيْبَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَأَعْلَمُ مَا تُبْدُونَ وَمَا كُنتُمْ تَكْتُمُونَ

(৩৩) আল্লাহ্ বলিলেন, হে আদম! বলিয়া দাও তাহাদিগকে ঐ সমস্ত জিনিসের নাম, আদম তাহাদিগকে সমস্ত জিনিসের নাম বলিয়া দিলেন, তখন আল্লাহ্ বলিলেন, আমি কি তোমাদিগকে বলি নাই যে, নিশ্চয় আমি অবগত আছি সমস্ত অদৃশ্য বিষয় আসমান ও যমিনের এবং জ্ঞাত আছি যাহা তোমরা ব্যক্ত কর আর যাহা অন্তরে গোপন রাখ তাহাও।

وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ أَبَىٰ وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِينَ

(৩৪) আর আমি যখন হুকুম দিলাম ফেরেশ্তাদিগকে সেজদায় পতিত হও আদমের সামনে, তখন সকলেই সেজদায় পতিত হইল ইবলীস ব্যতীত; সে অমান্য করিল, অহংকৃত হইল এবং কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হইল।

وَقُلْنَا يَا آدَمُ اسْكُنْ أَنتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ وَكُلَا مِنْهَا رَغَدًا حَيْثُ شِئْتُمَا وَلَا تَقْرَبَا هَـٰذِهِ الشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ الظَّالِمِينَ

(৩৫) আর হুকুম দিলাম, হে আদম! বাস কর তুমি এবং তোমার স্ত্রী বেহেশ্তে এবং খাও উভয়ে উহা হইতে স্বচ্ছন্দে ও যথেচ্ছা, আর যাইও না এই বৃক্ষের কাছে, অন্যথায় তোমরাও পরিগণিত হইবে জালেমদের মধ্যে।

শানে নুযুল:
১। অর্থাৎ হে ফেরেশতাগন! তোমরা আদমের সৃষ্টি করা সম্বন্ধে যে বিষয়টিকে প্রতিবন্ধক মনে করিতেছ প্রকৃতপক্ষে উহাই সৃষ্টির মূল কারন। কেননা, আদেশ এবং নিষেধ সমূহ তাহাদের উপরই প্রযোজ্য যাহাদের মধ্যে অবস্থা হইতে সীমালংঘকারীও থাকে। (বঃকোঃ)
২। অর্থাৎ,পৃথিবীর যাবতীয় বস্তুর বাহ্যিক পরিচয় ও লক্ষণাদি এবং গুনাবলী ব্যাপকভাবে শিক্ষা দিলেন। (বঃকোঃ)
৩। অর্থাৎ, আদমকে উহার এলম দান করিয়াছেন এবং আমাদের নিকট গোপন রাখিয়াছেন এমন দোষারপ হইতে আপনি সম্পূর্ণরূপে পবিত্র, বরং আমাদেরই জ্ঞান নাই। আমাদিগকে যতটুকু যোগ্যতা ও জ্ঞান দান করিয়াছেন তদ্ব্যতীত অন্য কিছু জানিবরি ক্ষমতাই আমাদের নাই। (বঃকোঃ)
৪। সুতরাং যাহার জন্য যতটুকু জ্ঞান মঙ্গল জনক, তাহাকে ততটুকু জ্ঞানই দান করিয়াছেন। (বঃকোঃ)

فَأَزَلَّهُمَا الشَّيْطَانُ عَنْهَا فَأَخْرَجَهُمَا مِمَّا كَانَا فِيهِ ۖ وَقُلْنَا اهْبِطُوا بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ ۖ وَلَكُمْ فِي الْأَرْضِ مُسْتَقَرٌّ وَمَتَاعٌ إِلَىٰ حِينٍ

(৩৬) অনন্তর পদস্থলিত করিল শয়তান আদম ও হাওয়াকে ঐ বৃক্ষের কারণে, অতঃপর বহিষ্কৃত করিয়া ছাড়িল তাহাদিগকে সেই সুখ-শান্তি হইতে যাহাতে তাহারা ছিলেন; অনন্তর আমি বলিলাম, নীচে নামিয়া যাও, তোমাদের কতিপয় কতিপয়ের শত্রু থাকিবে। আর ভূ-পৃষ্ঠে তোমাদের কিছুকাল অবস্থান করিতে হইবে এবং ফায়দা উঠাইতে হইবে এক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত।

فَتَلَقَّىٰ آدَمُ مِن رَّبِّهِ كَلِمَاتٍ فَتَابَ عَلَيْهِ ۚ إِنَّهُ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ

(৩৭) অতঃপর আদম (আঃ) লাভ করিল, স্বীয় প্রভু হইতে কতিপয় বাক্য তখন আল্লাহ্ কৃপা-দৃষ্টি করিলেন তাহার প্রতি, নিশ্চয় তিনিই বড় তওবা কবূলকারী পরম দয়ালু।

قُلْنَا اهْبِطُوا مِنْهَا جَمِيعًا ۖ فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُم مِّنِّي هُدًى فَمَن تَبِعَ هُدَايَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ

(৩৮) বলিলাম, নীচে নামিয়া যাও তোমরা সকলে বেহেশত হইতে; অতঃপর যদি তোমাদের নিকট আসে, আমার পক্ষ হইতে কোন হেদায়ত, তবে যাহারা অনুসরণ করিবে আমার ঐ হেদায়েত, তাহাদের উপর কোন ভয়ও আসিবে না এবং ইহারা সন্তপ্তও হইবে না।

وَالَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا أُولَـٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

(৩৯) আর যাহারা কুফরী করিবে এবং মিথ্যা প্রতিপন্ন করিবে আমার আহ্কামকে তাহারা হইবে দোযখী, তাহারা উহাতে অনন্তকাল থাকিবে।

يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ اذْكُرُوا نِعْمَتِيَ الَّتِي أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَأَوْفُوا بِعَهْدِي أُوفِ بِعَهْدِكُمْ وَإِيَّايَ فَارْهَبُونِ

(৪০) হে বনী ইসরাঈল! স্মরণ কর আমার সেই এহ্সানগুলি যাহা আমি তোমাদের প্রতি করিয়াছিলাম, এবং তোমরা পূর্ণ কর আমার অঙ্গীকার, আমি পূর্ণ করিব তোমাদের অঙ্গীকার, আর শুধু আমাকেই ভয় কর।

وَآمِنُوا بِمَا أَنزَلْتُ مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَكُمْ وَلَا تَكُونُوا أَوَّلَ كَافِرٍ بِهِ ۖ وَلَا تَشْتَرُوا بِآيَاتِي ثَمَنًا قَلِيلًا وَإِيَّايَ فَاتَّقُونِ

(৪১) আর ঈমান আন ঐ কিতাবের প্রতি যাহা আমি নাযিল করিয়াছি। এমনভাবে যে, উহা সত্যতা প্রমানকারী ঐ কিতাবের যাহা তোমাদের সঙ্গে আছে, আর হইও না তোমরা সকলের মধ্যে ঐ কোরআনের সর্বপ্রথম অবিশ্বাসী, আর গ্রহন করিও না-আমার আহকামের পরিবর্তে তুচ্ছ বিনিময় এবং আমাকেই পূর্ণরূপে ভয় কর।

শানে নুযুল:
১। ফেরেশতাদের দল হইতে বিতারিত শয়তান হযরত আদমকে উচ্চ সম্মানে সম্মানিত দেখিয়া তাহাকে পদস্থলিত করিতে বদ্ধপরিকর হইল। নিষিদ্ধ বৃক্ষের অমরত্ব গুন তাহাকে চমৎকাররূপে বুঝাইয়া দিল, উপরন্ত আল্লাহর নামে কসমও করিল। আদম (আঃ) আল্লাহর নামের কসম শুনিয়া বিশ্বাস করিলেন যে, এখন আর এই ফল খাওয়াতে নিষেধ রহে নাই। অতএব, তিনি উক্ত ফল খাইলেন। (বঃকোঃ)
২। ভূ-পৃষ্ঠেও সর্বদা থাকিতে পারিবে না, কিছুকাল পর উহাও ত্যাগ করিতে হইবে। (বঃকোঃ)
৩। অর্থাৎ, উক্ত হেদায়েত পালনের বিনিময়ে কিয়ামতে তাহারা এই ফল প্রাপ্ত হইবে। (বঃকোঃ)
৪। হযরত ইয়াকুব (আঃ) এর অপর নাম ইসরাঈল। বংশধরগনকে বনীইসরাঈল বলা হয়। (বঃকোঃ)

وَلَا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوا الْحَقَّ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ

(৪২) আর মিশ্রিত করিও না সত্যকে অসত্যের সহিত এবং গোপন করিও না সত্যকে যখন তোমরা অবগত আছ।

وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوا مَعَ الرَّاكِعِينَ

(৪৩) আর তোমরা কায়েম কর নামায এবং দাও যাকাত। আর বিনয় প্রকাশ কর বিনয়ীদের সহিত।

أَتَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنسَوْنَ أَنفُسَكُمْ وَأَنتُمْ تَتْلُونَ الْكِتَابَ ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ

(৪৪) কি আশ্চর্য! আদেশ কর অন্যকে সৎকাজের আর নিজেদের সম্বন্ধে বেখবর, অথচ তোমরা কিতাব (তাওরাত) পাঠ করিয়া থাক; তবে কি তোমরা এতটুকুও বুঝ না?

وَاسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ ۚ وَإِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ إِلَّا عَلَى الْخَاشِعِينَ

(৪৫) আর সাহায্য লও ধৈর্য ও নামায দ্বারা এবং নিশ্চয়ই নামায কঠিন কাজ কিন্তু খুশুওয়ালাদের জন্য নহে।

الَّذِينَ يَظُنُّونَ أَنَّهُم مُّلَاقُو رَبِّهِمْ وَأَنَّهُمْ إِلَيْهِ رَاجِعُونَ

(৪৬) খুশুওয়ালা তাহারাই যাহারা ধারনা করে যে, নিশ্চয় তাহারা সাক্ষাতকারী স্বীয় প্রভুর সহিত আর ইহাও ধারনা করে যে, তাহারা আপন প্রভুর নিকট প্রত্যাবর্তনকারী।

يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ اذْكُرُوا نِعْمَتِيَ الَّتِي أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَأَنِّي فَضَّلْتُكُمْ عَلَى الْعَالَمِينَ

(৪৭) হে বনী ইসরাঈল! স্মরণ কর-তোমারা আমার ঐ নেয়ামত যাহা আমি তোমাদেরকে পুরষ্কাররূপে দিয়াছি আর ইহাও যে, আমি তোমাদিগকে ফযীলত দান করিয়াছি সমগ্র বিশ্বাসীর উপর।

وَاتَّقُوا يَوْمًا لَّا تَجْزِي نَفْسٌ عَن نَّفْسٍ شَيْئًا وَلَا يُقْبَلُ مِنْهَا شَفَاعَةٌ وَلَا يُؤْخَذُ مِنْهَا عَدْلٌ وَلَا هُمْ يُنصَرُونَ

(৪৮) আর সেই দিনকে ভয় কর যেদিন কেহ কাহারও পক্ষ হইতে কোন দাবী পরিশোধ করিতে পারিবে না। এবং কবুল হইবে না কোন ব্যক্তি হইতে কোন সুপারিশও এবং গৃহিত হইবে না কোন ব্যক্তি হইতে কোন বিনিময়ও আর তাহাদের প্রতি চলিতে পারিবে না কোন পক্ষপাতিত্বও।

শানে নুযুল:
১। অর্থাৎ, তোমাদের অনুসরন করিয়া যত লোক কোরআনকে অবিশ্বাস করিবে তাহাদের মধ্যে তোমরাই সর্বপ্রথম পাপ প্রতিষ্ঠাকারী বলিয়া গণ্য হইবে এবং সকলের অবিশ্বাস জনিত পাপ তোমাদের আমল নামায়ও লিখিত হইতে থাকিবে। (বঃকোঃ)
২। স্বার্থপর লোকেরা শরীয়তের আহকামকে দুই প্রকারে বিকৃত করিয়া থাকে। প্রথমতঃ, সুযোগ পাইলেই শরীয়তের হুকুমকে গোপন করিয়া ফেলে। দ্বিতীয়তঃ, কোথাও বা ভুল ব্যাখ্যা করিয়া ইচ্ছানুযায়ী অর্থ গ্রহন করে। আল্লাহ্ এতদুভয় কাজকেই নিষিদ্ধ করিয়াছেন। (বঃকোঃ)
৩। মাস্আলাহ এখানে একথা বুঝায় না যে, বে-আমল আলেমের পক্ষে ওয়ায করা না জায়েয; বরং ইহাই বুঝায় যে, ওয়ায়েযের পক্ষে বে-আমল হওয়া জায়েজ নহে।(বঃকোঃ)

সূরা ফাতিহা পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন