সুরা-বাকারাহ্
আয়াত-২৮৬
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অসীম দয়াল
وَلَوْ أَنَّهُمْ آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَمَثُوبَةٌ مِّنْ عِندِ اللَّهِ خَيْرٌ ۖ لَّوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ
(১০৩) আর যদি তাহারা ঈমান আনিত এবং পরহেযগারী করিত, তবে আল্লাহর তরফ হইতে সওয়াব উৎকৃষ্ট ছিল; হায়, তাহাদের যদি বুদ্ধি থাকিত।
(১০৪) হে মুমেনগন! তোমরা ‘রায়েনা’ বলিও না; বরং ‘ওনযোরনা’ বলিও এবং শুনিয়া লইও; আর কাফেরদের জন্য রহিয়াছে যন্ত্রণাময় শাস্তি।
مَّا يَوَدُّ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ وَلَا الْمُشْرِكِينَ أَن يُنَزَّلَ عَلَيْكُم مِّنْ خَيْرٍ مِّن رَّبِّكُمْ ۗ وَاللَّهُ يَخْتَصُّ بِرَحْمَتِهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ
(১০৫) মোটেই পছন্দ করে না এই কাফেরেরা কিতাবীই হউক আর মুশরেকই হউক, তোমাদের উপর অবতারিত হওয়া তোমাদের প্রভুর তরফ হইতে কোনও কল্যাণ; আর আল্লাহ্ নির্দিষ্ট করিয়া লন তাঁহার রহমতের সহিত যাহাকে ইচ্ছা, আর আল্লাহ্ মহা করুণাময়।
শানে নুযুল:
১। এক সময় বাবেল শহরে যাদু-বিদ্যার খুব প্রচলন ছিল। উহার প্রভাবে মূর্খ লোকেরা যাদুকরের যাদু এবং নবীর মু’জেযার পার্থক্য বুঝিতে পারিত না। কেহ কেহ যাদুকে মূ’জেয়া মনে করিয়া যাদুকরকে নবীর ন্যয় অনুসরনণীয় মনে করিত। এই ধাঁ ধাঁ ও ভ্রান্তি দুর করার জন্য আল্লাহ্ তা‘আলা হারূ-মারূত নামক দুইজন ফেরেশতাকে তথায় পাঠাইয়া যাদু-বিদ্যার মূলতত্ত্ব মানুষকে বুঝাইয়া দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। (বঃকোঃ)
২। হুযুরের কোন কথা বুঝিতে না পারিলে মুসলমানগণ বলিতেন, অর্থাৎ, ‘ আমাদের প্রতি মেহেরবানী করুন।’ কিন্তু এই শব্দটি ইহুদিদের ভাষায় ‘আহমক’ অর্থে ব্যবহৃত হইত। কাজেই সুযোগ পাইয়া তাহারা গালি দেওয়ার উদ্দেশ্যে হুযুরকে বলিত, আর এই জন্যই আল্লাহ্ মুসলমানদিগকে ‘রইনা’-র স্থলে ‘আনজারনা’ বলিতে নির্দেশ দিয়াছিলেন। (মুঃকোঃ)
مَا نَنسَخْ مِنْ آيَةٍ أَوْ نُنسِهَا نَأْتِ بِخَيْرٍ مِّنْهَا أَوْ مِثْلِهَا ۗ أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
(১০৬) আমি কোন আয়াতের হুকুম রহিত করিলে কিংবা আয়াতটিকেই বিস্মৃত করাইয়া দিলে তদপেক্ষা উত্তম বা তদনুরূপ আনয়ন করি; তুমি কি জান না যে, আল্লাহ্ সকল বিষয়ের উপরই ক্ষমতাবান।
(১০৭) তুমি কি জানো না যে, আসমানসমূহ ও যমিনের আধিপত্য একমাত্র আল্লাহরই; আর আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন বন্ধুও নাই এবং সাহায্যকারীও নাই।
(১০৮) তোমরা কি চাও যে, তোমাদের রাসুলের নিকট আবেদন করিবে যেমন ইতিপূর্বে (হঠকারিতা বশতঃ এরূপ বহু নিরর্থক) আবেদন করা হইয়াছিল মূসার নিকট আর যেব্যক্তি ঈমানের পরিবর্তে কুফরী অবলম্বন করে, নিশ্চয় সে সঠিক পথ হইতে দূরে সরিয়া পড়ে।
وَدَّ كَثِيرٌ مِّنْ أَهْلِ الْكِتَابِ لَوْ يَرُدُّونَكُم مِّن بَعْدِ إِيمَانِكُمْ كُفَّارًا حَسَدًا مِّنْ عِندِ أَنفُسِهِم مِّن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمُ الْحَقُّ ۖ فَاعْفُوا وَاصْفَحُوا حَتَّىٰ يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
(১০৯) কায়মনে চায় কিতাবীদের মধ্য হইতে অনেকেই, তোমাদের ঈমান আনয়নের পর আবার তোমাদিগকে কাফের করিয়া ফেলে, শুধু তাহাদের অন্তরে নিহিত হিসাব দরুন, তাহাদের নিকট সত্য প্রকাশিত হওয়ার পর, যাহা হউক, ক্ষমা করিতে থাক, উপেক্ষা করিতে থাক যতক্ষন না আল্লাহ্ তাআলা তাঁহার হুকুম পাঠান। নিশ্চয়, আল্লাহ প্রত্যেক বস্তুর উপর ক্ষমতাবান।
শানে নুযুল:
১। কোরানের প্রতি দোষারপ করিয়া ইহুদিরা মুসলমানদিগকে বলিত, তোমাদের কোরানের কোন কোন আয়াত রহিত হইয়া যায়। যদি ইহা খোদার কালামই হইয়া থাকে, তবে কোন দোষে ইহাকে রহিত করা হয়? ইহার উত্তরে এই আয়াতটি নাযিল হয়। (মুঃকোঃ)
২। কোন কোন ইহুদী হটকারিতা বশতঃ হুযুরের খেদমত আবেদন করিয়াছিল, তওরাত কিতাব যেমন মূসার উপর একসঙ্গে অবতীর্ণ হয়, আপনিও কোরআনকে তদ্রুপ সমষ্টি গতভাবে আনয়ন করুন, তদুত্তরে এই আয়াত নাযিল হয়। ( লোঃনুঃ)
৩। হুয়াই ইব্নে আখ্তাব প্রমুখ ইহুদী সরদারগণ আরবদের প্রতি ভীষণ হিংসা পোষণ করিত। কেননা, আল্লাহ্ তা‘আলা আরবদের জন্য রাসুল প্রেরণ করিয়াছেন। অতএব, তাহারা সাধ্যানুযায়ী মুসলমানদিগকে ধর্ম হইতে ফিরাইতে চেষ্টা করিত। তৎসম্বন্ধে এই আয়াতটি নাযিল হয়। (হাসিয়া বঃ কোঃ)
وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ ۚ وَمَا تُقَدِّمُوا لِأَنفُسِكُم مِّنْ خَيْرٍ تَجِدُوهُ عِندَ اللَّهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
(১১০) এবং যথারীতি নামায পড় ও যাকাত দাও। আর যে নেককাজই নিজ কল্যাণের জন্য সঞ্চয় করিতে থাকিবে তাহা আল্লাহর নিকট পাইবে। কেননা, আল্লাহ্ তোমাদের সকল কৃতকর্মের প্রতি দৃষ্টি রাখিতেছেন।
(১১১) আর ইহুদী, নাছারাগন বলে বেহেশতে কেহই কখনও যাইতে পারিবে না উহারা ব্যতীত যাহারা ইহুদী বা নাছারা হইয়াছে; ইহা তাহাদের আত্ম-সান্তনামূলক উক্তি; আপনি বলিয়া দিন, নিজ নিজ দলিল আন-যদি তোমরা সত্যবাদী হও।
بَلَىٰ مَنْ أَسْلَمَ وَجْهَهُ لِلَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَلَهُ أَجْرُهُ عِندَ رَبِّهِ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
(১১২) নিশ্চয়, অন্যরাও যাইবে, যে কোন ব্যক্তিই নিজের চেহারা আল্লাহর দিকে ঝুকাইবে এবং সে অকপটও হয়, তবে এরূপ ব্যক্তি উহার বিনিময় পাইবে তাহার প্রতিপালকের নিকট পৌছিয়া, আর না তাহাদের কোন ভয় আছে এবং তাহারা চিন্তান্বিতও হইবে।
(১১৩) আর ইহুদীরা বলে, নাছারাগন কোন ভিত্তির উপরই নহে, আর নাছারাগন বলে, ইহুদীরা কোন ভিত্তির উপরই নহে, অথচ ইহারা সকলে কিতাব পাঠ করে, এইরূপে যাহারা মূর্খ ও নিরক্ষর উহাদের ন্যায় উক্তি করে, আল্লাহ্ ফয়সালা করিয়া দিবেন ইহাদের মধ্যে ক্বিয়ামত দিবসে। ঐ সমস্ত বিষয়ের যাহা লইয়া তাহারা পরস্পর মত বিরোধ করিতেছে।
শানে নুযুল:
১। অর্থাৎ, ইহুদীরা বলে, ইহুদী ভিন্ন আর নাছারারা বলে, নাছারা ভিন্ন এর কেহই বেহেশতে প্রবেশ করতে পারিবে না। এ উক্তিগুলো শুধু তাহাদের আত্বসান্তনামূলক (বঃকোঃ)
২। ইহুদীরা তওরাত এবং নাছারারা ইঞ্জীল পাঠ ও আলোচনা করে। উভয় রাসুলের সত্যতামূলক বর্ণনা রহিয়াছে ইহুদীরা বলে, নাছারা ধর্ম কোন ভিত্তির উপর স্থাপিত নহে অনুরূপভাবে নাছারারাও বলে, ইহুদী ধর্ম কোন ভিত্তির উপর স্থাপিত নহে কিতাবীগণের পরস্পর পরস্পরের এরূপ উক্তি শ্রবণ করিয়া আরবের কাফেরেরাও উত্তেজিত হইয়া বলিয়াছিল, ইহুদী ও নাছারাদের উভয় ধর্মই ভিত্তিহীন। আমরাই সত্যের উপর আছি। (বঃকোঃ)