সুরা-বাকারাহ্ এর বাংলা
আয়াত-২৮৬
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অসীম দয়াল
وَمِنْهُم مَّن يَقُولُ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
(২০১) আর কতক লোক এমন আছে– যাহারা বলে হে আমাদের প্রভু! আমাদিগকে ইহলোকেও কল্যাণ দান করুন এবং পরলোকেও কল্যান দান করুন এবং আমাদিগকে দোযখের আযাব হইতে রক্ষা করুন।
أُولَـٰئِكَ لَهُمْ نَصِيبٌ مِّمَّا كَسَبُوا ۚ وَاللَّهُ سَرِيعُ الْحِسَابِ
(২০২) এরূপ লোকেরা বড় অংশ পাইবে তাহাদের এই আমলের দরুন; এবং আল্লাহ্ তা‘আলা সত্বরই হিসাব লইবেন।
وَاذْكُرُوا اللَّهَ فِي أَيَّامٍ مَّعْدُودَاتٍ ۚ فَمَن تَعَجَّلَ فِي يَوْمَيْنِ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ وَمَن تَأَخَّرَ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ ۚ لِمَنِ اتَّقَىٰ ۗ وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّكُمْ إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ
(২০৩) আর আল্লাহর যিকর কর কয়েক দিন পর্যন্ত। অতঃপর যে ব্যক্তি তাড়াহুড়া করিবে দুই দিনের মধ্যে, তাহার উপরও কোন পাপ নাই। আর যে দেরী করিবে তাহার উপরও কোন পাপ নাই– যে (খোদার) ভয় রাখে। আর আল্লাহ্কে ভয় করিতে থাক এবং দৃঢ় বিম্বাস রাখ যে, তোমাদের সকলকে আল্লাহরই সমীপে সমবেত হইতে হইবে।
وَمِنَ النَّاسِ مَن يُعْجِبُكَ قَوْلُهُ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيُشْهِدُ اللَّهَ عَلَىٰ مَا فِي قَلْبِهِ وَهُوَ أَلَدُّ الْخِصَامِ
(২০৪) আর কোন কোন মানুষ এমনও আছে যে, আপনার নিকট তাহার আলাপ-আলোচনা — যাহা শুধু পার্থিব উদ্দেশ্যেই হয়, চিত্তাকর্ষক মনে হয় এবং সে আল্লাহ্কে হাযির নাযির বর্ণনা করে নিজের অন্তরস্থ বিষয়ের প্রতি অথচ সে বিরোধিতায় কঠোর।
(২০৫) এবং যখন প্রস্থান করে, তখন এই চেষ্টায় ঘুরিয়া বেড়ায় যে, দেশে অশান্তির সৃষ্টি করিবে এবং শষ্য ও জীবজন্তু বিনষ্ট করিয়া দিবে। আর আল্লাহ্ তা‘আলা ফ্যাসাদ পছন্দ করেন না।
শানে নুযুল:
১। এই যিকিরটি বিশেষ পদ্ধতির। অর্থাৎ, তিনটি নির্দিষ্ট পাথরের উপর ‘আল্লাহ্ আকবার’ বলিয়া কঙ্কর নিক্ষেপ করা আর কয়েক দিন অর্থাৎ আইয়ামে তাশরীকের তিনদিন ১০,১১, ও ১২ই যিলহজ্জ।
২। আখনাস ইবনে শুরা ইকনামে জনৈক প্রাঞ্জল ভাষী মুনাফেক রাসুল (দঃ) এর নিকট আল্লাহর কসম করিয়া ইসলাম গ্রহণের মিথ্যা দাবী করিত এবং সেই বৈঠক হইতে উঠিয়াই মানুষের নানা রকম ক্ষতি ও অশান্তিজনক কাজে ঘুরিয়া বেড়াইত। এই মুনাফেক লোকটির সম্বন্ধেই আল্লাহ্ তা‘আলা এই আয়াতটি নাযিল করিয়াছেন। (বঃকোঃ)
(২০৬) আর যখন কেহ তাহাকে বলে, খোদাকে তো ভয় কর, তখন অহংকার তাহাকে ঐ পাপের দিকে অগ্রসর করিয়া দেয়। সুতরাং এই প্রকৃতির লোকের যথোপযুক্ত শাস্তি–জাহান্নাম; আর ইহা কী নিকৃষ্টতম বিশ্রামাগার।
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْرِي نَفْسَهُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ رَءُوفٌ بِالْعِبَادِ
(২০৭) আর কতক লোক এমনও আছে, যাহারা আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের জন্য স্বীয় জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করিয়া দেয়। এবং আল্লাহ্ (এরূপ) বান্দাদের (অবস্থার) প্রতি খুবই করুণাময়।
(২০৮) হে মুমিনগণ! তোমরা ইসলামে পূর্ণরূপে দাখেল হও। এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরন করিয়া চলিও না। বাস্তবিকই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
(২০৯) অনন্তর তোমাদের নিকট উজ্জল প্রমাণাদি আসার পরেও যদি তোমরা ( ছেরাতে মুস্তাকীম হইতে) পদস্থলিত হইতে থাক, তবে দৃঢ় বিশ্বাস রাখিও, আল্লাহ্ মহা পরাক্রমশালী, হেকমতওয়ালা (প্রজ্ঞাময়)
هَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا أَن يَأْتِيَهُمُ اللَّهُ فِي ظُلَلٍ مِّنَ الْغَمَامِ وَالْمَلَائِكَةُ وَقُضِيَ الْأَمْرُ ۚ وَإِلَى اللَّهِ تُرْجَعُ الْأُمُورُ
(২১০) তাহারা শুধু ইহারাই প্রতীক্ষা করে যে, আল্লাহ্ এবং ফেরেশতাগণ যেন মেঘপুঞ্জের চাঁদোয়া তলে (শাস্তি দিবার মানসে) তাহাদের নিকট আসেন এবং যাবতীয় বিষয়েরই মীমাংসা হইয়া যায়। আর এই সমস্ত (পুরস্কার ও শাস্তির) বিষয়াদি আল্লাহরই সমীপে উপস্থিত করা হইবে।
سَلْ بَنِي إِسْرَائِيلَ كَمْ آتَيْنَاهُم مِّنْ آيَةٍ بَيِّنَةٍ ۗ وَمَن يُبَدِّلْ نِعْمَةَ اللَّهِ مِن بَعْدِ مَا جَاءَتْهُ فَإِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
(২১১) আপনি বনী-ইস্রাঈলদিগকে জিজ্ঞাসা করুন, আমি তাহাদিগকে কত উজ্জল প্রমাণাদি দান করিয়াছিলাম। পরন্ত যে-ব্যক্তি আল্লাহর নেয়ামতকে পরিবর্তন করে–তাহার নিকট পৌছিবার পর, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ্ কঠোর শাস্তি প্রদান করেন।
শানে নুযুল:
১। হযরত ছোয়াইব (রাঃ) মদীনায় যাত্রাকালে মক্কার একদল কাফের তাঁহার পথ ঘেরাও করিল, তিনি তাহাদিগকে বলিলেন, তোমরা জান আমি তীরন্দায ও অসি-যোদ্ধা, সুতরাং তোমরা আমার কাছে ঘেষিতে পারিবে না, হাঁ আমার ধন-সম্পদের বিনিময়ে আমাকে ছাড়িয়া দাও। ইহাতে তাহারা রাযী হইয়া ফিরিয়া গেল। তিনি মদীনা পৌছিলে হুযুর (দঃ) তাঁহাকে বলিলেন, হে আবু-ইয়াহ্ইয়া! তোমার ব্যবসায় লাভজনক হইয়াছে। আল্লাহ্ তোমার সম্বন্ধে এই আয়াতটি নাযিল করিয়াছেন। (লোঃনুঃ)
২। আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম প্রমুখ কতিপয় নও মুসলিম ইহুদী আলেম হুযুরের খেদমত আরয করিলেন, শনিবার দিনটি আমাদের নিকট সম্মানিত, এবং তওরাত আল্লাহরই কিতাব; আমাদের শনিবারের সম্মান করার ও উটের গোশত ভক্ষণ না করার অনুমতি দিন। তখন এই আয়াতটি নাযিল হয়। (লোঃনুঃ)