সুরা-বাকারাহ্ বাংলা অর্থ (আয়াত ২১২-২২৮)

সুরা-বাকারাহ্ এর বাংলা
আয়াত-২৮৬

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অসীম দয়াল

زُيِّنَ لِلَّذِينَ كَفَرُوا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَيَسْخَرُونَ مِنَ الَّذِينَ آمَنُوا ۘ وَالَّذِينَ اتَّقَوْا فَوْقَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۗ وَاللَّهُ يَرْزُقُ مَن يَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ

(২১২) পার্থিব জীবন কাফেরদের নিকট সুসজ্জিত মনে হয়। এবং (এই কারনেই) তাহারা এই সমস্ত মুসলমানের সহিত বিদ্রুপ করে। অথচ (মুসলমানগণ) যাহারা (কুফর ও শিরক হইতে) বাঁচিয়া থাকে, ঐ সমস্ত কাফের হইতে উচ্চস্তরে থাকিবে কিয়ামতের দিন। আর রিয্ক তো, আল্লাহ্ যাহাকে চাহেন বে-হিসাব দিয়া থাকেন।

كَانَ النَّاسُ أُمَّةً وَاحِدَةً فَبَعَثَ اللَّهُ النَّبِيِّينَ مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ وَأَنزَلَ مَعَهُمُ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِيَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ فِيمَا اخْتَلَفُوا فِيهِ ۚ وَمَا اخْتَلَفَ فِيهِ إِلَّا الَّذِينَ أُوتُوهُ مِن بَعْدِ مَا جَاءَتْهُمُ الْبَيِّنَاتُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ ۖ فَهَدَى اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا لِمَا اخْتَلَفُوا فِيهِ مِنَ الْحَقِّ بِإِذْنِهِ ۗ وَاللَّهُ يَهْدِي مَن يَشَاءُ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ

(২১৩) সকল মানুষ (এক কালে) একই পথের ছিল। অনন্তর আল্লাহ্ নবীদিগকে পাঠাইলেন, যাঁহারা সুসংবাদ প্রদান করিতেন ও ভীতি প্রদর্শন করিতেন। আর তাঁহাদের সাথে কিতাবও যথাযথভাবে নাযিল করিলেন, এই উদ্দেশ্যে যে, আল্লাহ্ মানুষের মধ্যে তাহাদের মতভেদযুক্ত বিষয়সমূহের মীমাংসা করিয়া দিলেন। এবং এই কিতাবে মতভেদ আর কেহ করে নাই; কেবল তাহারাই, যাহারা এই কিতাব প্রাপ্ত হইয়াছিল; ইহাদের নিকট উজ্জল প্রমাণসমূহ আসিবার পর; তাহাদের পরস্পর বিদ্বেষের দরুন। অতঃপর আল্লাহ্ (সর্বদা) মু’মিনদিগকে ঐ সত্য –যাহা নিয়া (মতবিরোধকারীরা) মতবিরোধ করিত–স্বীয় করুণায় বলিয়া দেন । আর আল্লাহ্ তা‘আলা যাহাকে ইচ্ছা করেন তাহাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেন।

أَمْ حَسِبْتُمْ أَن تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُم مَّثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِن قَبْلِكُم ۖ مَّسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّىٰ يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ مَتَىٰ نَصْرُ اللَّهِ ۗ أَلَا إِنَّ نَصْرَ اللَّهِ قَرِيبٌ

(২১৪) অপর একটি কথা শ্রবণ কর, তোমরা কি মনে কর যে, (বিনা শ্রমে) বেহেশতে প্রবেশ করিবে? অথচ এখনও তাহাদের ন্যায় তোমাদের সম্মুখে কোন আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে নাই-যাহারা তোমাদের পূর্বে অতীত হইয়াছে। তাহাদের উপর (বিরোধীদের কারণে) এমন এমন অভাব ও বিপদ আপদ আসিয়াছিল এবং তাহারা এমন প্রকল্পিত হইয়াছিল যে, স্বয়ং রাসুল ও তাহার মু’মিন সাথীগণও বলিয়া উঠিয়াছিলেন, আল্লাহর সাহায্য কখন আসিবে? স্মরণ রাখিও, নিশ্চয়, আল্লাহর সাহায্য আসন্ন।

শানে নুযুল:

১। হযরত বেলাল ও আম্মার প্রমুখ গরীব মুসলমানদিগকে দেখিয়া কাফের প্রধানরা বিদ্রƒপ করিয়া বলিত, মোহাম্মদ বলিয়া থাকে যে,“আমি এ সমস্ত দরিদ্র লোকের সহযোগিতায় আমার পার্থিব কাজ সম্পন্ন করিতেছি ও কাফের-প্রধানের দর্প চূর্ণ করিতেছি।” তাঁহার ধর্ম সত্য হইলে তিনি অবশ্যই আরব-প্রধানদের সহযোগতিা পাইতেন। একথার উত্তরে আল্লাহ্ তা‘আলা এই আয়াতটি নাযিল করেন। (মুঃকোঃ)
২। হযরত আদম (আঃ) পৃথিবীতে আসার পর হইতে বহুকাল যাবত আদম সন্তানগণ তাঁহার তা‘লীম অনুযায়ী এক আল্লাহ্রই এবাদত করিত। ক্রমাদ্বয়ে তাহাদের কর্মে ও ধর্ম-বিশ^সে পার্থক্য ও অনৈক্য আরম্ভ হইলে এই পার্থক্য দূরীকরণের জন্যই আল্লাহ্ পয়গম্বর ও বিধান প্রেরণ করিতে থাকেন। ( বঃকো)

يَسْأَلُونَكَ مَاذَا يُنفِقُونَ ۖ قُلْ مَا أَنفَقْتُم مِّنْ خَيْرٍ فَلِلْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينِ وَابْنِ السَّبِيلِ ۗ وَمَا تَفْعَلُوا مِنْ خَيْرٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ

(২১৫) লোকেরা আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, তাহারা কোন জিনিস (এবং কোথায়) ব্যয় করিবে। আপনি বলিয়া দিন যে, যাহাকিছু তোমরা ব্যয় করিতে চাও তাহা-পিতা-মাতার ও আত্মীয়-স্বজনের ও পিতৃহীন শিশুদের ও অভাবগ্রস্তদের ও মুসাফিরদের প্রাপ্য। আর যে কোন নেক কাজ করিবে, আল্লাহ্ তা‘আলা তৎসম্বন্ধে খুবই অবহিত।

كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌ لَّكُمْ ۖ وَعَسَىٰ أَن تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ ۖ وَعَسَىٰ أَن تُحِبُّوا شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَّكُمْ ۗ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ

(২১৬) জেহাদ করা তোমাদের উপর ফরয করা হইয়াছে, অথচ ইহা তোমাদের নিকট অপ্রীতিকর। আর একথা সম্ভব যে, তোমরা কোন বিষয়কে অপ্রীতিকর মনে কর, অথচ উহা তোমাদের জন্য কল্যানকর। আর ইহাও সম্ভব যে, কোন বিষয় তোমরা প্রীতিকর মনে কর, অথচ উহা তোমাদের জন্য অনিষ্টকর। এবং আল্লাহ্ জানেন আর তোমরা জান না।

শানে নুযুলঃ

১। আমর ইবনে জামূহ্ নামক এক সাহাবী হুজুরকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “আমরা কিরূপ মাল,এবং কিরূপ ক্ষেতে দান ক্ষয়রাত করিব”? তদত্তুরে আল্লাহ্ আয়াতটি নাযিল করেন। (লোঃনুঃ)
ফঃ অত্র আয়াতে নফল ছদ্কার কথা বলা হইয়াছে। কারণ যাকাত এবং অন্যান্য ছদ্কায়ে ওয়াজেব পিতা-মাতকে দেয়া জায়েজ নহে। (বঃকোঃ)
২। ঘটনাক্রমে ছাহাবাদের সহিত কাফেরদের এক সংঘর্ষ হয় এবং আমর হাযরামী নামক জৈনক কাফের নিহতও হয়। ১লা রজবে এই ঘটনাটি ঘটিয়াছিল। কিন্তু ছাহাবাদের ধারনায় ইহা ছিল জামাদিওয্ সানীর শেষ তারিখ। রজব মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ ছিল, কাজেই বিধর্মীরা বলিতে লাগিল, মুসলমানগণ সম্মানিত মাসের প্রতিও লক্ষ করে নাই। তদত্তরে এই আয়াতটি নাযিল হয়। (বঃকোঃ)

يَسْأَلُونَكَ عَنِ الشَّهْرِ الْحَرَامِ قِتَالٍ فِيهِ ۖ قُلْ قِتَالٌ فِيهِ كَبِيرٌ ۖ وَصَدٌّ عَن سَبِيلِ اللَّهِ وَكُفْرٌ بِهِ وَالْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَإِخْرَاجُ أَهْلِهِ مِنْهُ أَكْبَرُ عِندَ اللَّهِ ۚ وَالْفِتْنَةُ أَكْبَرُ مِنَ الْقَتْلِ ۗ وَلَا يَزَالُونَ يُقَاتِلُونَكُمْ حَتَّىٰ يَرُدُّوكُمْ عَن دِينِكُمْ إِنِ اسْتَطَاعُوا ۚ وَمَن يَرْتَدِدْ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَيَمُتْ وَهُوَ كَافِرٌ فَأُولَـٰئِكَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ۖ وَأُولَـٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

(২১৭) মানুষ আপনাকে সম্মানিত মাসে–যুদ্ধ-বিগ্রহ করা সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে। আপনি বলিয়া দিন, ইহাতে (ইচ্ছাকৃতভাবে) যুদ্ধ-বিগ্রহ করা গুরুতর অপরাধ। আর আল্লাহর পথ হইতে প্রতিরোধ করা এবং আল্লাহর সহিত ও মসজিদে-হারামের সহিত কুফরীকরা, এবং মসজিদে হারামের অধিকারীদিগকে তথা হইতে বহিষ্কৃত করা উহার চেয়ে গুরুতর অপরাধ আল্লাহর নিকট। আর অশান্তি সৃষ্টি করা হত্যা অপেক্ষা অধিকতর জঘণ্য; আর এই কাফেরেরা তোমাদের সহিত সর্বক্ষন যুদ্ধ বাধাইয়াই রাখিবে। এই উদ্দেশ্যে যে, সুযোগ পাইলেই তাহারা তোমাদিগকে তোমাদের ধর্ম হইতে ফিরাইয়া দিবে। আর তোমাদের মধ্য হইতে যে-ব্যক্তি স্বীয় ধর্ম হইতে ফিরিয়া যায়, অনন্তর কাফের অবস্থাই তাহার মৃত্যু হয়, তবে এরূপ লোকের আ’মলসমূহ ইহলোকে ও পরলোকে ব্যর্থ হইয়া যায়। এবং এরূপ লোক দোযখী হয়্ ইহারা দোযখে অনন্তকাল অবস্থান করিবে।

إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَالَّذِينَ هَاجَرُوا وَجَاهَدُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أُولَـٰئِكَ يَرْجُونَ رَحْمَتَ اللَّهِ ۚ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

(২১৮) প্রকৃতপক্ষে যাহারা ঈমান আনিয়াছে এবং যাহারা আল্লাহর রহমতের আশা পোষণ করে। আর আল্লাহ্ তা‘আলা ক্ষমা করিবেন, করুণা করিবেন।

يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ ۖ قُلْ فِيهِمَا إِثْمٌ كَبِيرٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَإِثْمُهُمَا أَكْبَرُ مِن نَّفْعِهِمَا ۗ وَيَسْأَلُونَكَ مَاذَا يُنفِقُونَ قُلِ الْعَفْوَ ۗ كَذَ‌ٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُونَ

(২১৯) মানুষ আপনাকে মদ ও জুয়া সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে। আপনি বলিয়া দিন, এতদুভয়ের (ব্যবহারের) মধ্যে গুরুতর পাপও আছে এবং মানুষের কোন কোন) উপকারও আছে। আর এতদুভয়ের (উক্ত) পাপরাশী ইহাদের উপকার অপেক্ষা অধিক গুরুতর। আর মানুষ আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, কি পরিমাণ ব্যয় করিবে। আপনি বলিয়া দিন, যে পরিমাণ সহজ হয় আল্লাহ্ পাক এইভাবে বিধানসমূহ সু-স্পষ্টরূপে তোমাদের চিন্তা করিয়া লও।

শানে নুযুল:

১। মুরতাদদের পার্থিব কর্মের ব্যর্থতাঃ মুরতাদ হইলে স্ত্রীর সহিত বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিবে, তাঁহার কোন নিকট-আত্মীয়ের মৃত্যু হইলে সে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিস হইবে না, মুসলমান থাকা কালে যত নেক আমল করিয়াছিল সমস্ত বিনষ্ট হইবে,মৃত্যু হইলে তাঁহার জানাযার নামাজ পড়া যাইবে না, মুসলমানদের কবরস্থানে তাহাকে দাফন করা যাইবে না।
আর পারলৌকিক ব্যর্থতাঃ এই যে তাহার সৎকাজের কোন প্রতিদানই পাইবে না। সে অনন্ত কালের জন্য দোযখী হইবে। মুরতাদ ব্যক্তি পুনরায় ইসলাম গ্রহন করিলে দোযখ হইতে নাজাত পাইবে, ইহলোক ভবিষ্যতে সে পূর্ণ মুসলমান বলিয়া গণ্য হইবে। ফলকথা মুরতাদের অবস্থা কাফের অপেক্ষাও নিকৃষ্টতর। মুরতাদ ব্যক্তি পূনরায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ না করিলে পুরুষকে হত্যা এবং নারীকে আজীবন বন্দি করিয়া রাখিতে হইবে।

فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ۗ وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْيَتَامَىٰ ۖ قُلْ إِصْلَاحٌ لَّهُمْ خَيْرٌ ۖ وَإِن تُخَالِطُوهُمْ فَإِخْوَانُكُمْ ۚ وَاللَّهُ يَعْلَمُ الْمُفْسِدَ مِنَ الْمُصْلِحِ ۚ وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ لَأَعْنَتَكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

(২২০) ইহলৌকিক ও পারলৌকিক ব্যাপারে। আর মানুষ আপনাকে এতীমদের (ব্যবস্থা) সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে। আপনি বলিয়া দিন, তাহাদের স্বার্থরক্ষার প্রতি লক্ষ্য রাখা শ্রেয়; আর যদি তোমরা তাহাদের সহিত ব্যয়বিধান একত্রই রাখ, তবে তাহারা তোমাদের ভাই। আর আল্লাহ্ তা‘আলা স্বার্থ-নষ্টকারীকে এবং স্বার্থ-রক্ষাকারীকে জানেন। আল্লাহ্ ইচ্ছা করিলে তোমাদিগকে বিপদগ্রস্ত করিতে পরিতেন; আল্লাহ্ মহাপরাক্রমশালী, বিজ্ঞানময়।

وَلَا تَنكِحُوا الْمُشْرِكَاتِ حَتَّىٰ يُؤْمِنَّ ۚ وَلَأَمَةٌ مُّؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِّن مُّشْرِكَةٍ وَلَوْ أَعْجَبَتْكُمْ ۗ وَلَا تُنكِحُوا الْمُشْرِكِينَ حَتَّىٰ يُؤْمِنُوا ۚ وَلَعَبْدٌ مُّؤْمِنٌ خَيْرٌ مِّن مُّشْرِكٍ وَلَوْ أَعْجَبَكُمْ ۗ أُولَـٰئِكَ يَدْعُونَ إِلَى النَّارِ ۖ وَاللَّهُ يَدْعُو إِلَى الْجَنَّةِ وَالْمَغْفِرَةِ بِإِذْنِهِ ۖ وَيُبَيِّنُ آيَاتِهِ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ

(২২১) আর বিবাহ করিও না কাফের নারীদিগকে–মুসলমান না হওয়া পর্যন্ত, আর মূসলমান দাসী কাফের রমণী হইতে উত্তম, যদিও সে চিত্তাকর্ষক করে। আর নারীদিগকে কাফের পুরুষের সহিত বিবাহ দিও না–মুসলমান না হওয়া পর্যন্ত। আর মুসলমান দাসও কাফের পুরুষের চেয়ে উত্তম–যদিও সে তোমাদের চিত্তাকর্ষণ করে। ইহারা দোযখের প্রেরণা দেয়; আর আল্লাহ্ বেহেশত ও ক্ষমার প্রতি প্রেরণা দেন স্বীয় বিধান দ্বারা। আর আল্লাহ্ মানবমন্ডলীকে স্বীয় বিধানসমূহ এই জন্য বর্ণনা করেন যেন তাহারা উপদেশ মত কাজ করে।

শানে নুযুল:

১। এখানে মদ ও জুয়াকে হারাম করা হয় নাই; বরং কতক আনুসঙ্গিক কারনে বলা হইয়াছে যে, ইহাতে উপকারের চেয়ে অপকারই অধিক। কাজেই ইহা বর্জন করা উচিত। একদা জনৈক ছাহাবী মদ্যপান করিয়া নামাজ আরম্ভ করিলে নামাজে ভুল করিয়া বসেন, তখন শুধু নামাযের সময়ই ইহা হারাম করিয়া দেয়া হয়। ইহার কিছুকাল পরে মদ্যপান চিরতরে হারাম করা হয়। ইহাই সর্বশেষ ব্যবস্থা। (বঃকোঃ)
২। “এতীমদের মাল খাওয়া দোযখের জ¦লন্ত আগুন খাওয়ারই শামীল।” আয়াতটি নাযিল হইলে শ্রবণকারীরা ভীত হইয়া এতীমদের প্রতিপালন ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে পৃথক করিয়া দিল। আর এরূপ সতন্ত্র ব্যবস্থা রাখা খুবই অসুবিধাজনক। ইহার সুব্যবস্থার জন্য তাহারা হুযুরের নিকট আবেদন করিলে উহার প্রতি বিধানরূপেই আয়াতটি নাযিল হয়। (বঃকোঃ)

وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْمَحِيضِ ۖ قُلْ هُوَ أَذًى فَاعْتَزِلُوا النِّسَاءَ فِي الْمَحِيضِ ۖ وَلَا تَقْرَبُوهُنَّ حَتَّىٰ يَطْهُرْنَ ۖ فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللَّهُ ۚ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ التَّوَّابِينَ وَيُحِبُّ الْمُتَطَهِّرِينَ

(২২২) আর মানুষ আপনার নিকট ঋতুকালীন বিধান জিজ্ঞাসা করে। আপনি বলিয়া দিন, ইহা অপবিত্র বস্তু। সুতরাং ঋতুকালে তোমরা স্ত্রীদের হইতে পৃথক থাকিও। আর তাহাদের নিকটবর্তী হইও না পাক না হওয়া পর্যন্ত। অতঃপর যখন তাহারা উত্তমরূপে পাক হইবে, তখন তাহাদের নিকট যাতায়াত কর; যে স্থান দিয়া আল্লাহ্ তোমাদিগকে অনুমতি দিয়াছেন। নিশ্চয়, আল্লাহ্ ভালোবাসেন তওবাকারীগণকে আর মহব্বত করেন পবিত্রাচারীদিগকে।

نِسَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَّكُمْ فَأْتُوا حَرْثَكُمْ أَنَّىٰ شِئْتُمْ ۖ وَقَدِّمُوا لِأَنفُسِكُمْ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّكُم مُّلَاقُوهُ ۗ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ

(২২৩) তোমাদের পত্মীগণ তোমাদের জন্য শষ্যক্ষেত্র স্বরূপ। সুতরাং স্বীয় শষ্যক্ষেত্রে আগমন কর যেদিক দিয়া ইচ্ছা। আর ভবিষ্যতের উদ্দেশ্যে নিজের জন্য কিছু (নেককাজ) করিতে থাক। আর আল্লাহ্কে ভয় কর দৃঢ় বিশ্বাস রাখিও যে, নিশ্চয়, তোমাদিগকে আল্লাহর সমীপে উপস্থিত হইতে হইবে। আর এরূপ মুমিনদিগকে সুসংবাদ শুনাইয়া দিন।

وَلَا تَجْعَلُوا اللَّهَ عُرْضَةً لِّأَيْمَانِكُمْ أَن تَبَرُّوا وَتَتَّقُوا وَتُصْلِحُوا بَيْنَ النَّاسِ ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

(২২৪) আর স্বীয় কসমসমূহ দ্বারা আল্লাহ্ (-এর নাম)-কে প্রতিবন্ধক বানাইও না এসমস্ত কাজের যে, তোমরা কোন নেক কাজ করিবে এবং পরহেযগারী করিবে ও মানুষের মধ্যে সন্ধি স্থাপন করিবে। আর আল্লাহ্ সবকিছু শুনেন, জানেন।

لَّا يُؤَاخِذُكُمُ اللَّهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَانِكُمْ وَلَـٰكِن يُؤَاخِذُكُم بِمَا كَسَبَتْ قُلُوبُكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ حَلِيمٌ

(২২৫) আল্লাহ্ কৈফিয়ত চাহিবেন না তোমাদের শপথসমূহের মধ্যে অযথা শপথের জন্য; কিন্তু কৈফিয়ত চাহিবেন উহার– যাহা তোমাদের অন্তরসমূহ (মিথ্যা বলার) ইচ্ছা করিয়াছেন। আর আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, সহি ।

শানে নুযুল:

১। এই আয়াতের সারমর্ম এই যে, কোন মুশরেক পুরুষের সহিত মুসলমান নারীর এবং মুশরেক নারীর সহিত মুসলমান পুরুষের বিবাহ জায়েয নহে। এমনকি মুসলিম স্বামী-স্ত্রীর যে কোন একজন মুশরেক হইয়া গেলে বিবাহ বিচ্ছিন্ন হইয়া যাইবে। ইহুদী, নাছারারা কিতাবী বলিয়া তাহাদের সহিত বিবাহ জায়েয; কিন্তু ইহা হইতে বাঁচিয়া থাকায় মুসলমানের কর্তব্য। কেননা, আজকালের ইহুদী, নাছারারা অধিকাংশই মুশরেক বা মুলহেদ। আর মুশরেক বা মুলহেদের সহিত বিবাহ হারাম। (বঃকোঃ)
২। মাসআলাঃ কাম-রিপুর তাড়নায় ঋতুমতী স্ত্রীর সহিত সহবাস করিয়া ফেলিলে বিশেষভাবে তওবা করিবে এবং কিছু দান খয়রাত করা উত্তম। (বঃকোঃ)
৩। অর্থাৎ, আল্লাহর নাম নিয়া এরূপ কসম করিও না যে, আমরা এসব কাজ করিব না। (বঃকোঃ)

لِّلَّذِينَ يُؤْلُونَ مِن نِّسَائِهِمْ تَرَبُّصُ أَرْبَعَةِ أَشْهُرٍ ۖ فَإِن فَاءُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

(২২৬) যাহারা কসম করিয়া বলে স্বীয় পত্মীদের সহিত (তাহাদের নিকট না যাওয়ার) তাহাদের জন্য চারি মাসের অবকাশ রহিয়াছে। অতএব, তাহারা যদি প্রত্যাবর্তন করে, তবে আল্লাহ্ ক্ষমা করিয়া দিবেন, অনুগ্রহ করিবেন।

وَإِنْ عَزَمُوا الطَّلَاقَ فَإِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

(২২৭) আর যদি একেবারে পরিত্যাগ করিবারই দৃঢ় সংকল্প করিয়া থাক, তবে আল্লাহ্ পাক শ্রবণ করেন, জানেন।

وَالْمُطَلَّقَاتُ يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ ثَلَاثَةَ قُرُوءٍ ۚ وَلَا يَحِلُّ لَهُنَّ أَن يَكْتُمْنَ مَا خَلَقَ اللَّهُ فِي أَرْحَامِهِنَّ إِن كُنَّ يُؤْمِنَّ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۚ وَبُعُولَتُهُنَّ أَحَقُّ بِرَدِّهِنَّ فِي ذَ‌ٰلِكَ إِنْ أَرَادُوا إِصْلَاحًا ۚ وَلَهُنَّ مِثْلُ الَّذِي عَلَيْهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ ۚ وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌ ۗ وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

(২২৮) আর তালাকপ্রাপ্তা নারীগণ বিরত রাখিবে নিজদিগকে তিন ঋতু পর্যন্ত। আর সেই নারীদের জন্য হালাল নহে গোপন করা যাহাকিছু সৃষ্টি করিয়াছেন আল্লাহ্ পাক তাহাদের জরায়ুর মধ্যে। যদি ঐ নারীগণ আল্লাহ্ এবং শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে; আর তাহাদের স্বামীগণ তাহাদিগকে পুনঃগ্রহণ করিবার অধিকার রাখে ঐ ইদ্দতের মধ্যে, যদি ইচ্ছা করে পরস্পর সদ্ভাবে থাকার। আর নারীদেরও (পুরুষদের উপর) তদ্রুপ দাবী আছে যদ্রুপ ঐ নারীদের উপর (পুরুষদের দাবী) আছে (শরীয়তের) নিয়ম অনুযায়ী। আর পুরুষদের অপেক্ষাকৃত শ্রেষ্ঠত্ব রহিয়াছে নারীদের উপর। আর আল্লাহ্ মহাপরাক্রমশালী, মহাজ্ঞানী।

শানে নুযুল:

১। ঈলাঃ স্ত্রীর সহিত চারি মাস বা তদুর্ধ্ব নির্দিষ্ট বা অনির্দিষ্টকালের জন্য সঙ্গম না করার শপথ করাকে ‘ঈলা’ বলে। এমতাবস্থায় চারি মাসের মধ্যে স্ত্রীর সহিত সঙ্গম করিলে বিবাহ শুদ্ধ থাকিবে এবং শপথ ভঙ্গের জন্য কাফ্ফারা দিতে হইবে। কিন্তু সঙ্গম ব্যতীত চারি মাস গত হইলে এক তালাক বায়েন পড়িয়া স্ত্রী বিচ্ছিন্ন হইয়া যাইবে। পুনবিবাহ ভিন্ন হালাল হইবে না। চারি মাসের কম সময়ের জন্য শপথ করিয়া তাহা পূর্ণ হইলেও বিবাহ বিচ্ছিন্ন হইবে না। কেননা ইহা ‘ঈলা’ নহে। (বঃকোঃ)
২।
(ক) তালাকের ইদ্দতঃ সঙ্গম বা নির্জন-বাসের পূর্বে স্ত্রী তালাকপ্রাপ্ত হইলে স্ত্রীকে ইদ্দত পালন করিতে হইবে না।
(খ) ঋতুমতী স্ত্রীর ইদ্দত, তালাকের পরবর্তী তিন ঋতু। অল্প বয়স বা বার্ধক্য বশতঃ ঋতু না হইলে ইদ্দত তিন মাস। গর্ভিনীর ইদ্দত গর্ভ খালাছ হওয়া পর্যন্ত। (বঃকোঃ)

সূরা ফাতিহা পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সুরা-বাকারাহ্ এর আয়াত ০১ হতে ৪৮ পর্যন্ত বাংলা অর্থ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সুরা-বাকারাহ্ এর আয়াত ৪৯ হতে ৭১ পর্যন্ত বাংলা অর্থ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সুরা-বাকারাহ্ এর আয়াত ৭২ হতে ৮৯ পর্যন্ত বাংলা অর্থ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সুরা-বাকারাহ্ এর আয়াত ৯০ হতে ১০২ পর্যন্ত বাংলা অর্থ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সুরা-বাকারাহ্ এর আয়াত ১০৩ হতে ১১৩ পর্যন্ত বাংলা অর্থ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সুরা-বাকারাহ্ এর আয়াত ১১৪ হতে ১২৬ পর্যন্ত বাংলা অর্থ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সুরা-বাকারাহ্ এর আয়াত ১২৭ হতে ১৩৬ পর্যন্ত বাংলা অর্থ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সুরা-বাকারাহ্ এর আয়াত ১৩৭ হতে ১৪৮ পর্যন্ত বাংলা অর্থ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সুরা-বাকারাহ্ এর আয়াত ১৪৯ হতে ১৬৪ পর্যন্ত বাংলা অর্থ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সুরা-বাকারাহ্ এর আয়াত ১৬৫ হতে ১৭৯ পর্যন্ত বাংলা অর্থ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সুরা-বাকারাহ্ এর আয়াত ১৮০ হতে ১৮৯ পর্যন্ত বাংলা অর্থ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সুরা-বাকারাহ্ এর আয়াত ১৯০ হতে ২০০ পর্যন্ত বাংলা অর্থ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সুরা-বাকারাহ্ এর আয়াত ২০১ হতে ২১১ পর্যন্ত বাংলা অর্থ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-