সুরা-বাকারাহ্ বাংলা অর্থ (আয়াত ২২৯-২৪৯)

সুরা-বাকারাহ্ এর বাংলা
আয়াত-২৮৬

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু

الطَّلَاقُ مَرَّتَانِ ۖ فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ ۗ وَلَا يَحِلُّ لَكُمْ أَن تَأْخُذُوا مِمَّا آتَيْتُمُوهُنَّ شَيْئًا إِلَّا أَن يَخَافَا أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۖ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا فِيمَا افْتَدَتْ بِهِ ۗ تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ فَلَا تَعْتَدُوهَا ۚ وَمَن يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ

(২২৯) এই তালাক দুইবার। অতঃপর রাখা নিয়মানুযায়ী অথবা বর্জন করা সদ্ভাবে; আর তোমাদের জন্য ইহা হালাল নহে যে,গ্রহণ কর সামান্য কিছুও উহা হইতে,যাহা তোমরা (মহরানা স্বরূপ) তাহাদিগকে দিয়াছিলে। অনন্তর যদি স্বামী-স্ত্রী উভয়ের আশংকা হয় যে,আল্লাহর বিধানসমুহ কায়েম রাখিতে পারিবে না। অতএব, যদি তোমাদের এই আশংকা হয় যে,উভয়ে আল্লাহর বিধানসমূহ কায়েম রাখিয়া চলিতে পারিবে না, তবে উভয়েরই কোন পাপ হইবে না- ঐ বিনিময় গ্রহণে যাহা প্রদান করিয়া স্ত্রী নিজকে মুক্ত করিয়া লয়। ইহা আল্লাহর বিধানসমূহ সুতরাং তোমরা ইহার সীমালঙ্ঘন করিও না। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধানসমূহের সীমা লঙ্ঘন করে। বস্তুতঃএরূপ লোকই নিজেদের ক্ষতিসাধনকারী।

فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ

(২৩০) অনন্তর যদি কেহ (তৃতীয়) তালাক দেয় স্ত্রীকে, তবে এই স্ত্রী তাহার জন্য হালাল থাকিবে না ইহার পর যে-পর্যন্ত না সে অন্য স্বামীর সাথে বিবাহিতা হয়। অতঃপর যদি সে তাহাকে তালাক দেয়, তবে তাহাদের উভয়ের কোন পাপ হইবে না যথারীতি পরস্পর পুনর্মিলনে, যদি উভয়ের দৃঢ় ধারনা হয়, আল্লাহর কানুন কায়েম রাখিতে পারিবে। আর এই সমস্ত আল্লাহর বিধান। আল্লাহ্ ইহা বর্ণনা করেন এরূপ লোকের জন্য যাহারা জ্ঞানবান।

শানে নুযুল:

১। খোলাঃ অর্থের বিনিময়ে স্ত্রী স্বামীর কিট বিবাহ-বন্ধন হইতে মুক্তি চাহিলে স্বামী উহা মঞ্জুর করা মাত্রই ‘খোলা’ তালাক হইবে। মুখে তালাক শব্দ বলার প্রয়োজন হইবে না। স্বামী মঞ্জুর করা মাত্র এক তালাক বায়েন পড়িবে এবং স্বীকৃত অর্থ প্রদান করা স্ত্রীর উপর ওয়াজেব হইবে। এই বিচ্ছেদের ব্যাপারে স্ত্রীর দোষ থাকিলে এবং স্ত্রীই বিচ্ছেদের প্রস্তাব করিলে বিনিময় গ্রহণে স্বামীর কোন পাপ হইবে না। কিন্তু প্রদত্ত মহর হইতে অধিক লওয়া মাকরূহ। আর বিচ্ছেদে স্বামীর ত্রুটি থাকিলে স্বামীর পক্ষে বিনিময় গ্রহণ করা পাপজনক হইবে।

وَإِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ فَبَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَأَمْسِكُوهُنَّ بِمَعْرُوفٍ أَوْ سَرِّحُوهُنَّ بِمَعْرُوفٍ ۚ وَلَا تُمْسِكُوهُنَّ ضِرَارًا لِّتَعْتَدُوا ۚ وَمَن يَفْعَلْ ذَ‌ٰلِكَ فَقَدْ ظَلَمَ نَفْسَهُ ۚ وَلَا تَتَّخِذُوا آيَاتِ اللَّهِ هُزُوًا ۚ وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَمَا أَنزَلَ عَلَيْكُم مِّنَ الْكِتَابِ وَالْحِكْمَةِ يَعِظُكُم بِهِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ

(২৩১) আর যখন তোমরা তালাক প্রদান কর স্ত্রীদিগকে ,অতঃপর তাহারা নিকটবর্তী হয় স্বীয় ইন্দত শেষ হওয়ার, তখন হয়ত নিয়মানুযায়ী তাহাদিগকে বিবাহ বন্ধনে থাকিতে দাও অথবা নিয়মানুযায়ী তাহাদিগকে মুক্তি দাও; এবং তাহাদিগকে যন্ত্রণা দিবার উদ্দেশ্যে আবদ্ধ রাখিও না, এই ইচ্ছয়ি যে, তাহাদের প্রতি অত্যাচার করিবে। আর যে ব্যক্তি এরূপ করিবে বস্তুতঃ সে নিজেরই ক্ষতি করিবে। আর আল্লাহর হুকুমসমূহকে খেল-তামাশা মনে করিও না। আর আল্লাহর নেয়ামতকে যাহা তোমাদের প্রতি রহিয়াছে স্মরণ কর, আর সেই কিতাব ও হেকমতকে– যাহা আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের প্রতি এই হিসাবে নাযিল করিয়াছেন যে, উহা দ্বারা তোমাদিগকে উপদেশ প্রদান করিতেছেন। আর আল্লাহ্কে ভয় করিতে থাক, এবং দৃঢ় বিশ্বাস রাখিও যে, আল্লাহ্ প্রত্যেক বিষয় খুব ভালোভাবে জানেন।

وَإِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ فَبَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَلَا تَعْضُلُوهُنَّ أَن يَنكِحْنَ أَزْوَاجَهُنَّ إِذَا تَرَاضَوْا بَيْنَهُم بِالْمَعْرُوفِ ۗ ذَ‌ٰلِكَ يُوعَظُ بِهِ مَن كَانَ مِنكُمْ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۗ ذَ‌ٰلِكُمْ أَزْكَىٰ لَكُمْ وَأَطْهَرُ ۗ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ

(২৩২) আর যখন তোমাদের মধ্যে এরূপ লোক পাওয়া যায় যে, তাহারা স্বীয় পত্নীগণকে তালাক দিয়াছে তৎপর সেই স্ত্রীগণ স্বীয় নির্ধারিত সময় (ইদ্দৎ) ও পূর্ণ করিয়া ফেলে, তখন তোমরা তাহাদিগকে এই কাজে বাধা দিও না যে, তাহারা স্বীয় স্বামীর সহিত পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হয়, যখন পরস্পর সকলে সম্মত হইয়া যায় নিয়মানুযায়ী। এই বিষয় দ্বারা নছীহত করা হইতেছে সেই ব্যক্তিকে তোমাদের মধ্যে যে-ব্যক্তি আল্লাহ্ এবং ক্বিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান রাখে। এই নছীহত কবূল করা তোমাদের জন্য অধিকতর বিশুদ্ধতা ও পবিত্রতার বিষয়, আর আল্লাহ্ জানেন এবং তোমরা জান না।

শানে নুযুল:

১। খেল তামাশার ন্যায় বেকদর মনে করিও না, যাহার যেমন ইচ্ছা তেমনই করিল, অথবা করিলই না। আর যদি সত্য সত্যই কেহ আল্লাহ্ তা‘আলার ধর্ম-বিধান লইয়া বিদ্রুপ করে তবে সে অবশ্যই কাফের হইয়া যাইবে। (বঃকোঃ)
২। পরিত্যক্তা নারী পূর্ব-স্বামী ভিন্ন অন্যত্র বিবাহ করিতে চাহিলে প্রতিবন্ধকতা সুষ্টি করা নিষিদ্ধ, তবে অ-সমকক্ষ বরে কিংবা মহরে-মিসিলের কমে হইলে ওলী বাধা দিতে পারিবে; এমনকি, বিবাহ সম্পন্ন হইয়া গেলেও কাযীর নিকট বিবাহ ভঙ্গের মামলা দায়ের করিতে পারিবে।
৩। জননী যতক্ষন বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধা থাকে কিংবা ইদ্দতের মধ্যে থাকে, ততক্ষন অক্ষমতার কোন কারণ না থাকিলে সন্তানকে স্তন্য দান করা দিয়ানাত দারী হিসাবে ওয়াজেব এবং তজ্জন্য কোন পারিশ্রমিকও গ্রহণ করা জায়েয নহে।

وَالْوَالِدَاتُ يُرْضِعْنَ أَوْلَادَهُنَّ حَوْلَيْنِ كَامِلَيْنِ ۖ لِمَنْ أَرَادَ أَن يُتِمَّ الرَّضَاعَةَ ۚ وَعَلَى الْمَوْلُودِ لَهُ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ ۚ لَا تُكَلَّفُ نَفْسٌ إِلَّا وُسْعَهَا ۚ لَا تُضَارَّ وَالِدَةٌ بِوَلَدِهَا وَلَا مَوْلُودٌ لَّهُ بِوَلَدِهِ ۚ وَعَلَى الْوَارِثِ مِثْلُ ذَ‌ٰلِكَ ۗ فَإِنْ أَرَادَا فِصَالًا عَن تَرَاضٍ مِّنْهُمَا وَتَشَاوُرٍ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا ۗ وَإِنْ أَرَدتُّمْ أَن تَسْتَرْضِعُوا أَوْلَادَكُمْ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ إِذَا سَلَّمْتُم مَّا آتَيْتُم بِالْمَعْرُوفِ ۗ وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ

(২৩৩) আর জননীগন স্বীয় সন্তানদিগকে পূর্ণ দুই বৎসরকাল স্তন্য দান করিবে। এই নির্দিষ্ট সময় তাহারই জন্য, যে স্তন্য দানের মুদ্দত পূর্ণ করিতে চাহে। আর যাহার সন্তান তাহার দায়িত্বে স্তন্য দানকারিণীদের খোরপোষের ভার নিয়মানুযায়ী বর্তিবে। কাহাকেও (কোন) নির্দেশ দেওয়া হয় না; কিন্তু তাহার ক্ষমতানুযায়ী, কোন জননীকে কষ্ট দেওয়া উচিত নহে তাহার সন্তানের জন্য এবং কোন পিতাকেও কষ্ট দেওয়া উচিত নহে তাহার সন্তানের জন্য। আর উক্ত নিয়মানুযায়ী (সন্তানের ভার) অর্পিত হইবে ওয়ারিসদের উপর; অতঃপর যদি উভয়ে দুধ ছাড়াইবার ইচ্ছা করে স্বীয় সম্মতি ও পরামর্শক্রমে, তবে উভয়ের কোন পাপ হইবে না। আর যদি তোমরা স্বীয় সন্তানদিগকে অন্য কোন ধাত্রীর দুধ পান করাইতে চাও, তবে (ইহাতেও) তোমাদের কোন পাপ হইবে না, যখন সমর্পণ করিবে, তাহাদিগকে যাহাকিছু দেওয়া স্থির করিয়াছ–নিয়মানুযায়ী। আর আল্লাহ্কে ভয় কর এবং দৃঢ়রূপে বিশ্বাস রাখ যে, আল্লাহ্ তোমাদের কৃতকর্মসমূহ খুব প্রত্যক্ষ করিতেছেন।

وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا ۖ فَإِذَا بَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا فَعَلْنَ فِي أَنفُسِهِنَّ بِالْمَعْرُوفِ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ

(২৩৪) আর যাহারা তোমাদের মধ্যে হইতে মৃত্যুবরণ করে এবং পত্নীগণকে রাখিয়া যায়, উক্ত পত্নীগণ নিজদিগকে বিরত রাখিবে চারি মাস ও দশ দিন। অনন্তর যখন তাহারা স্বীয় ইদ্দত পূর্ণ করিবে। তখন তোমাদের কোন গুনাহ্ হইবে না ঐ সমস্ত কাজে যাহা উক্ত স্তীগণ নিজেদের জন্য কোন ব্যবস্থা অবলম্বন করিবে যথানিয়মে। এবং আল্লাহ্ তোমাদের যাবতীয় কাজের খবর রাখেন।

শানে নুযুল:

১। মাস্আলাঃ জননী ইদ্দত অন্তে সন্তানকে দুধ পান করানোর দরুন পারিশ্রমিক দাবী করিলে সন্তানের পিতা তাহা দিতে বাধ্য থাকিবে। তালাকের ইদ্দতান্তে স্তন্য পানের দরুন যদি জননী পারিশ্রমিক দাবী করে এবং পিতা সেই পরিমান পারিশ্রমিকে অন্য ধাত্রী নিযুক্ত করিতে চায়, তবে জননীর দাবী অগ্রগণ্য হইবে। পিতার অবর্তমানে সন্তানের সম্পত্তি হইতে তাহার ব্যয় নির্বাহ করা হইবে। আর যদি তাহার কোন সম্পত্তি না থাকে, তবে মুহার্রাম আত্মীয়, যাহারা তাহার সম্পত্তির ভবিষ্যত ওয়ারিস হইবে তাহারা নিজ নিজ প্রাপ্য অংশ হারে শিশুর ব্যয়ভার বহন করিবে। (বঃকোঃ)
২। গর্ভবর্তী না হইলে বিধবা নারীর ইদ্দৎ চারি মাস দশ দিন; আর গর্ভবর্তী হইলে গর্ভ খালাস হওয়া পর্যন্ত। ইদ্দতকালে বিধবা রমণীর পক্ষে সুগন্ধী দ্রব্য ব্যবহার, সাজ সজ্জা করা, স্পষ্টভাবে বিবাহ সম্বন্ধে আলোচনা করা জায়েয নহে। (বঃকোঃ)

وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا عَرَّضْتُم بِهِ مِنْ خِطْبَةِ النِّسَاءِ أَوْ أَكْنَنتُمْ فِي أَنفُسِكُمْ ۚ عَلِمَ اللَّهُ أَنَّكُمْ سَتَذْكُرُونَهُنَّ وَلَـٰكِن لَّا تُوَاعِدُوهُنَّ سِرًّا إِلَّا أَن تَقُولُوا قَوْلًا مَّعْرُوفًا ۚ وَلَا تَعْزِمُوا عُقْدَةَ النِّكَاحِ حَتَّىٰ يَبْلُغَ الْكِتَابُ أَجَلَهُ ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِي أَنفُسِكُمْ فَاحْذَرُوهُ ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ غَفُورٌ حَلِيمٌ

(২৩৫) আর তোমাদের গুনাহ্ হইবে না ইহাতে যে, উক্ত নারীদিগকে (বিবাহের) প্রস্তাব প্রদান সম্বন্ধে কোন কথা—ইঙ্গিত করিয়া বল অথবা নিজেদের অন্তরে গোপন রাখ। আল্লাহ্ জ্ঞাত আছেন যে, তোমরা ঐ স্ত্রীলোকদের সম্বন্ধে আলোচনা করিবে। কিন্তু তাহাদের সহিত (পরিষ্কার শব্দে) বিবাহের প্রতিশ্রুতি দিও না, হাঁ, কোন কথা নিয়মানুযায়ী আলোচনা করিতে পার। আর তোমরা (এখন) বিবাহ-বন্ধনের সংকল্পও করিও না, যে-পর্যন্ত না নির্ধারিত সময় পূর্ণ হইয়া যায়। আর দৃঢ় বিশ্বাস রাখিও যে, আল্লাহ্ তা‘আলা ক্ষমাশীল, ধৈর্যশীল।

لَّا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ إِن طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ مَا لَمْ تَمَسُّوهُنَّ أَوْ تَفْرِضُوا لَهُنَّ فَرِيضَةً ۚ وَمَتِّعُوهُنَّ عَلَى الْمُوسِعِ قَدَرُهُ وَعَلَى الْمُقْتِرِ قَدَرُهُ مَتَاعًا بِالْمَعْرُوفِ ۖ حَقًّا عَلَى الْمُحْسِنِينَ

(২৩৬) তোমাদের প্রতি কোন (মহরের) দায়িত্ব নাই, যদি তোমরা স্ত্রীদিগকে এরূপ অবস্থায় তালাক দাও যে, তাহাদিগকে স্পর্শও কর নাই আর তাহাদের জন্য কোন মহরও ধার্য কর নাই এবং তাহাদিগকে ফায়দা পৌঁছাও। স্বচ্ছল ব্যক্তির যিম্বায় তাহার অবস্থানুযায়ী এবং অভাবগ্রস্ত ব্যক্তির যিম্বায় তাহার অবস্থানুযায়ী–এক বিশেষ রকমের ফায়দা (জামাজোড়া) পৌঁছান যাহা যথারীতি সদাচারীদের উপর ওয়াজেব।

শানে নুযুল:

১। এখানে ইদ্দতকালে বিবাহ সম্বন্ধে চারিটি বিধান বর্ণিত হইয়াছে।
(ক) স্পষ্টভাবে মুখে প্রস্তাব করা হারাম।
(খ) মুখে ইঙ্গিতে প্রস্তাব করাতে দোষ নাই।
(গ) অন্তরে ইদ্দতের মধ্যে বিবাহ করার ইচ্ছা করা হারাম।
(ঘ) ইদ্দতের পর বিবাহ করিবে বলিয়া ইদ্দতের মধ্যে ইচ্ছা পোষণ করাতে দোষ নাই। (বঃকোঃ)
২। মাসআলাঃ বিবাহের সময় মোহর নির্দিষ্ট না করা হইলেও বিবাহ শুদ্ধ হইবে। এমতাবস্থায় নির্জন-সাক্ষাতের পূর্বে স্ত্রীকে তালাক দিলে মোহর দিতে হইবে না; অবশ্য একটি কোর্তা একটি ওড়নী ও একটি চাদর ‘মোতা’ স্বরূপ দান করিবে। (বঃকোঃ)

وَإِن طَلَّقْتُمُوهُنَّ مِن قَبْلِ أَن تَمَسُّوهُنَّ وَقَدْ فَرَضْتُمْ لَهُنَّ فَرِيضَةً فَنِصْفُ مَا فَرَضْتُمْ إِلَّا أَن يَعْفُونَ أَوْ يَعْفُوَ الَّذِي بِيَدِهِ عُقْدَةُ النِّكَاحِ ۚ وَأَن تَعْفُوا أَقْرَبُ لِلتَّقْوَىٰ ۚ وَلَا تَنسَوُا الْفَضْلَ بَيْنَكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ

(২৩৭) আর যদি তোমরা ঐ স্ত্রীলোকদিগকে তালাক দাও; তাহাদিগকে স্পর্শ করার পূর্বে, এবং তাহাদের জন্য কিছু মহরও নির্ধারিত করিয়াছিলে, তাহা হইলে তোমাদের নির্ধারিত মহরের অর্ধাংশ। হাঁ, যদি ঐ স্ত্রীগণ মা’ফ করিয়া দেয় অথবা সেই ব্যক্তি (অর্থাৎ স্বামী স্বেচ্ছায় পূর্ণ মহর দিয়া) অনুগ্রহ করে যাহার হাতে বিবাহের বন্ধন রহিয়াছে। আর তোমাদের ক্ষমা করিয়া দেওয়া পরহেযগারীর অধিক নিকটবর্তী এবং তোমরা পরস্পরে উদারতা প্রদর্শনে শৈথলা করিও না। নিঃসন্দেহে, আল্লাহ্ তোমাদের যাবতীয় কার্যসমূহ প্রত্যক্ষ করেন।

حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطَىٰ وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ

(২৩৮) তোমরা সংরক্ষণ করস সমস্ত নামাযের এবং মধ্যবর্তী নামাযের। আর দন্ডায়মান হও আল্লাহর সম্মুখে বিনয়ী অবস্থান।

فَإِنْ خِفْتُمْ فَرِجَالًا أَوْ رُكْبَانًا ۖ فَإِذَا أَمِنتُمْ فَاذْكُرُوا اللَّهَ كَمَا عَلَّمَكُم مَّا لَمْ تَكُونُوا تَعْلَمُونَ

(২৩৯) আর যদি তোমাদের (যথারীতি নামায পড়িতে) আশঙ্কা হয় তবে (জমিনে) দাঁড়াইয়া অথবা আরোহী অবস্থায় পড়িয়া লও। অতঃপর যখন তোমরা নিরাপদ হইয়া যাও, তখন আল্লাহর স্মরণ সেইরূপে কর যেরূপ তিনি তোমাদিগকে শিখাইয়াছেন- যাহা তোমরা জানিতে না।

وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا وَصِيَّةً لِّأَزْوَاجِهِم مَّتَاعًا إِلَى الْحَوْلِ غَيْرَ إِخْرَاجٍ ۚ فَإِنْ خَرَجْنَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِي مَا فَعَلْنَ فِي أَنفُسِهِنَّ مِن مَّعْرُوفٍ ۗ وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

(২৪০) আর তোমাদের মধ্যে যাহাদের মৃত্যু হয় এবং পত্নীগণকে রাখিয়া যায়, তাহারা যেন স্বীয় পত্নীদের জন্য ওছিয়ত করিয়া যায়, যেন সে এক বৎসর পর্যন্ত উপকৃত হয় এইরূপে যে, তাহাদিগকে ঘর হইতে বহিষ্কৃত করা না হয়। হাঁ, যদি নিজেরাই বাহির হইয়া যায়, তবে তোমাদের কোন পাপ নাই- ঐ নিয়ম সঙ্গত বিষয়ে যাহা তাহারা নিজেদের জন্য (সাব্যস্ত) করে। আর আল্লাহ্ মহা পরাক্রমশালী, জ্ঞানময়।

শানে নুযুল:

১। মাস্আলাঃ বিবাহের সময় স্ত্রীর মোহর ধার্য হইয়া থাকিলে, এবং নির্জন বাসের পূর্বে যদি তাহাকে তালাক দেওয়া হয়, তবে নির্ধারিত মোহরের অর্ধেক দিতে হইবে। আর যদি স্ত্রী স্বীয় মোহর মাফ করিয়া দেয় অথবা স্বামী ইচ্ছাপূর্বক পূর্ণ মোহর দিয়া দেয়, তবে উহা স্বতন্ত্র কথা। (বঃকোঃ)
২। ইসলামের প্রাথমিক যুগে অন্যান্যদের ন্যায় স্ত্রীকেও মৃত স্বামীর অছিয়তের উপরই নির্ভর করিতে হইত। তৎকালীন বিধান অনুযায়ী বিধবা স্ত্রী মৃত স্বামীর গৃহে বাস করিতে চাহিলে এক বৎসরকাল পর্যন্ত স্বামীর পরিত্যাক্ত সম্পত্তি হইতে তাহার ভরণ-পোষনের ব্যবস্থা করিতে হইত। কিন্তু স্ত্রী ইদ্দতান্তে স্বীয় প্রাপ্য মৃত স্বামীর ওয়ারিসগণকে দিয়া অন্যত্র বিবাহিতা হইয়া চলিয়া যাইতে পারিত। অতঃপর মীরাসের বিধান নাযিল হওয়ায় এই ব্যবস্থা রহিত হইয়া যায়। (বঃকোঃ)

وَلِلْمُطَلَّقَاتِ مَتَاعٌ بِالْمَعْرُوفِ ۖ حَقًّا عَلَى الْمُتَّقِينَ

(২৪১) আর সকল তালাকপ্রাপ্তা নারীদিগকে কিছু কিছু ভোগ্যবস্তু দেওয়া নিয়মানুযায়ী নির্ধারণ করা হইয়াছে–পরহেযগারদের প্রতি।

كَذَ‌ٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ

(২৪২) এইরূপে আল্লাহ্ তোমাদের জন্য তাঁহার বিধানসমূহ বর্ণনা করেন, আশা, তোমরা হৃদয়ঙ্গম কর।

أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ خَرَجُوا مِن دِيَارِهِمْ وَهُمْ أُلُوفٌ حَذَرَ الْمَوْتِ فَقَالَ لَهُمُ اللَّهُ مُوتُوا ثُمَّ أَحْيَاهُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ لَذُو فَضْلٍ عَلَى النَّاسِ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَشْكُرُونَ

(২৪৩) তুমি কি ঐ সকল লোকের ঘটনা অবগত নও–যাহারা বাহির হইয়া পড়িয়াছিল নিজেদের ঘর হইতে, সুতরাং আল্লাহ্ তাহাদের উদ্দেশ্যে বলিলেন যাও। অতঃপর তিনি তাহাদিগকে জীবিত করিলেন। নিশ্চয়, আল্লাহ্ তা‘আলা অতি অনুগ্রহশীল মানুষের প্রতি। কিন্তু অধিকাংশ লোক শোকরগুযারী করে না।

وَقَاتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

(২৪৪) আর আল্লাহ্ পথে জেহাদ কর এবং দৃঢ়ভাবে একথা জানিয়া রাখিও যে, নিশ্চয়, আল্লাহ খুব শ্রবণকারী, মহা জ্ঞানী।

مَّن ذَا الَّذِي يُقْرِضُ اللَّهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضَاعِفَهُ لَهُ أَضْعَافًا كَثِيرَةً ۚ وَاللَّهُ يَقْبِضُ وَيَبْسُطُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ

 

(২৪৫) (এমন ব্যক্তি) কে আছে, যে আল্লাহ এক করয দিবে, উত্তম করয দেওয়া, অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলা ইহাকে তাহার জন্য বর্ধিত করিয়া দিবেন বহুগুণে। আর আল্লাহ্ তা‘আলা কমান এবং বাড়ান। আর তোমরা তাঁহারই দিকে প্রত্যাবর্থিত হইবে।

শানে নুযুল:

১। কোন এক শহরে প্লেগের দরুন কিংবা ধর্ম-যুদ্ধের নির্দেশ দেওয়া হইলে প্রায় ৪০ কিংবা ৭০ হাজার বনী ইসরাঈল প্রান-ভয়ে বনের দিকে পলায়ন করিল। আল্লাহ্ তাহাদিগকে মুহূর্তকালের মধ্যে মৃত্যু দিয়া দেখাইয়া দিলেন যে, ‘জীবন-মরণ আল্লাহরই হাতে।’ বহু বৎসর পরে মূসা (আঃ) এর তৃতীয় খলীফা হেযক্বীল (আঃ) এর দোআয় আল্লাহ্ তাহাদের শুষ্ক ও বিক্ষিপ্ত হাড় সমূহকে পুনর্জীবিত করিয়া দিলেন। পূববর্তী আয়াতে ইহার প্রতি ইঙ্গিত করা হইয়াছে। (মুঃকোঃ)
২। এইখানে অনুগ্রহ এই-মৃত দেহে প্রাণ দান করা, কিংবা তদ্দারা ধর্ম বিশ্বাসের সংশোধন অথবা উম্মতে মোহাম্মদিয়াকে পুরান কথা শুনাইয়া তাহাদের আমল ও বিশ্বাসের সংশোধন করা, যেন তাহারা বুঝিতে পারে যে, মৃত্যু-ভয়ে জেহাদ হইতে পলায়ন করা বৃথা। (বঃকোঃ)

أَلَمْ تَرَ إِلَى الْمَلَإِ مِن بَنِي إِسْرَائِيلَ مِن بَعْدِ مُوسَىٰ إِذْ قَالُوا لِنَبِيٍّ لَّهُمُ ابْعَثْ لَنَا مَلِكًا نُّقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ۖ قَالَ هَلْ عَسَيْتُمْ إِن كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ أَلَّا تُقَاتِلُوا ۖ قَالُوا وَمَا لَنَا أَلَّا نُقَاتِلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَقَدْ أُخْرِجْنَا مِن دِيَارِنَا وَأَبْنَائِنَا ۖ فَلَمَّا كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقِتَالُ تَوَلَّوْا إِلَّا قَلِيلًا مِّنْهُمْ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِالظَّالِمِينَ

(২৪৬) মূসার (আঃ) পরবর্তী একদল বনী-ইসরাঈলের কাহিনী তুমি কি জান না? যখন তাহারা নিজেদের এক নবীকে বলিয়াছিল যে, আমাদের জন্য একজন বাদশাহ্ নির্ধারিত করুন যেন আমরা আল্লাহর পথে জেহাদ করিতে পারি। সেই পয়গম্বর বলিলেন, এরূপ সম্ভাবনা আছে কি যে-যদি তোমাদিগকে জেহাদের আদেশ দেওয়া হয়, তোমরা যুদ্ধ করিবে না? তাহারা বলিল, আমাদের এমন কি কারনে হইতে পারে যে, আমরা আল্লাহর পথে জেহাদ করিব না! অথচ আমরা আমাদের বাড়ী-ঘর হইতে এবং সন্তানদের হইতেও বহিষ্কৃত হইয়াছি। অনন্তর যখন তাহাদিগকে জেহাদের আদেশ অমান্যকারীদিগকে ভালরূপেই জানেন।

وَقَالَ لَهُمْ نَبِيُّهُمْ إِنَّ اللَّهَ قَدْ بَعَثَ لَكُمْ طَالُوتَ مَلِكًا ۚ قَالُوا أَنَّىٰ يَكُونُ لَهُ الْمُلْكُ عَلَيْنَا وَنَحْنُ أَحَقُّ بِالْمُلْكِ مِنْهُ وَلَمْ يُؤْتَ سَعَةً مِّنَ الْمَالِ ۚ قَالَ إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَاهُ عَلَيْكُمْ وَزَادَهُ بَسْطَةً فِي الْعِلْمِ وَالْجِسْمِ ۖ وَاللَّهُ يُؤْتِي مُلْكَهُ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ

 

(২৪৭) আর তাহাদিগকে তাহাদে রনবী বলিলেন, আল্লাহ্ তা‘আলা তালূতকে তোমাদের জন্য বাদশাহ্ নিযুক্ত করিয়াছেন। তাহারা বলিতে লাগিল, আমাদের উপর তাহার রাজত্ব করার অধিকার কিরূপে থাকিতে পারে? অথচ তাহার তুলনাই আমরাই রাজত্ব করিবার অধিক যোগ্য। তাহাকে তো আর্থিক স্বচ্ছলতাও প্রদান করা হয় নাই। পয়গম্বর বলিলেন, আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের মোকাবেলায় তাঁহাকে নির্বাচিত করিয়াছেন। আর আধিক্য প্রদান করিয়াছেন তাহাকে জ্ঞানে এবং দেহাবয়বে। আর আল্লাহ্ তাঁহার রাজ্য যাহাকে ইচ্ছা প্রদান করেন। আর আল্লাহ্ প্রশস্ততা প্রদানকারী, মহা জ্ঞানী।

শানে নুযুল:

১। তাহাদের ধর্ম-বিশ্বাসের ও মালের বিকৃতি বশতঃ জালুত নামক এক যালিম ও কাফের বাদশাহ্কে আল্লাহ্ তাহাদের উপর জয়ী করিয়া দিয়াছিলেন। সে তাহাদিগকে বাড়ী-ঘর হইতে তাড়াইয়া দিয়াছিল এবং তাহাদের সন্তান-সন্তনীগণকে বন্দী করিয়া নিয়াছিল। (বঃকোঃ)
২। বনী ইসরাঈলগণ বাইতুল মুকাদ্দাসে সমবেত হইয়া তদানীন্তন নবী শামুয়ীল (আঃ) কে বলিল, আমাদের মধ্যে একজন জ্ঞানী লোককে বাদশ্হা করিয়া দিন; তাহার পরিচালনাধীনে আমরা কাফিরদের সহিত যুদ্ধ করিব। (মুঃকোঃ)

وَقَالَ لَهُمْ نَبِيُّهُمْ إِنَّ آيَةَ مُلْكِهِ أَن يَأْتِيَكُمُ التَّابُوتُ فِيهِ سَكِينَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَبَقِيَّةٌ مِّمَّا تَرَكَ آلُ مُوسَىٰ وَآلُ هَارُونَ تَحْمِلُهُ الْمَلَائِكَةُ ۚ إِنَّ فِي ذَ‌ٰلِكَ لَآيَةً لَّكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ

(২৪৮) আর তাহাদে রনবী তাহাদিগকে বলিলেন–তাহার বাদশাহ্ হওয়ার নিদর্শন এই যে, তোমাদের নিকট সেই সিন্দুকটি আসিবে। যাহাতে সান্তনার বস্তু রহিয়াছে তোমাদের প্রভুর তরফ হইতে আর কতক উদ্বৃত্ত বস্তু রহিয়াছে যাহা হযরত মূসা ও হযরত হারূন (আঃ) পরিত্যাগ করিয়া গিয়াছেন। উক্ত সিন্দুক ফেরেসতাগণ বহন করিয়া আনিবে, ইহাতে তোমাদের জন্য পূর্ণ নিদর্শন রহিয়াছে যদি তোমরা বিশ্বাসী হও।

فَلَمَّا فَصَلَ طَالُوتُ بِالْجُنُودِ قَالَ إِنَّ اللَّهَ مُبْتَلِيكُم بِنَهَرٍ فَمَن شَرِبَ مِنْهُ فَلَيْسَ مِنِّي وَمَن لَّمْ يَطْعَمْهُ فَإِنَّهُ مِنِّي إِلَّا مَنِ اغْتَرَفَ غُرْفَةً بِيَدِهِ ۚ فَشَرِبُوا مِنْهُ إِلَّا قَلِيلًا مِّنْهُمْ ۚ فَلَمَّا جَاوَزَهُ هُوَ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ قَالُوا لَا طَاقَةَ لَنَا الْيَوْمَ بِجَالُوتَ وَجُنُودِهِ ۚ قَالَ الَّذِينَ يَظُنُّونَ أَنَّهُم مُّلَاقُو اللَّهِ كَم مِّن فِئَةٍ قَلِيلَةٍ غَلَبَتْ فِئَةً كَثِيرَةً بِإِذْنِ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ مَعَ الصَّابِرِينَ

(২৪৯) অনন্তর যখন তালূত সৈন্যবাহিনী লইয়া যাত্রা করিলেন, তখন তিনি বলিলেন, আল্লাহ্ তোমাদিগকে পরীক্ষা করিবেন একটি নদী দ্বারা, সুতরাং যে-ব্যক্তি উহা হইতে পানি পান করিবে সে আমার দলভুক্ত নহে। আর যে-ব্যক্তি উহা মুখেও না লয় ও আমার দলভূক্ত, হাঁ, যে ব্যক্তি স্বীয় হস্তে এক অঞ্জলী পানি পান করে (তবে এতটুকু অনুমতি আছে); অতঃপর সকলেই উহা হইতে পান করিতে লাগিল, তাহাদের মধ্যকার অল্প কয়েকজন ব্যতীত। সুতরাং তালূত এবং তাঁহার সঙ্গী-মু’মিনগণ নদী অতিক্রম করিয়া গেলেন, তাহারা বলিতে লাগিল–আজ তো আমাদের মধ্যে জালূত ও তাহার সৈন্যদের সম্মুখীন হওয়ার ক্ষমতা আছে বলিয়া মনে হয়না। এইরূপ লোক যাহাদের এই ধারণা ছিল যে, তাহারা অবশ্যই আল্লাহর সমীপে উপস্থাপিত হইবে। বলিতে লাগিল–কত কত ক্ষুদ্র দল বৃহত্তম দলের উপর আল্লাহর হকুমে জয়লাভ করিয়াছে। বস্তুতঃ আল্লাহ্ অটল সংকল্পকারীদের সহায়তা করেন।

শানে নুযুল:

১। কেননা, আভ্যন্তরীণ শাসন পরিচালনার জন্য তদ্বিষয়ে জ্ঞান থাকা আবশ্যক। আর মিত্রদের মনে মর্যাদা এবং শত্রুদের মনে ত্রাস ও ভীতি সঞ্চার করার জন্য দৈহিক শক্তি, দেহাবয়বের উচ্চতা এবং পরিপুষ্টতার প্রয়োজন। (বঃকোঃ)
২। জালুত ইসরাঈলদের উপর জয়ী হইলে সিন্দুকটি তাহার হস্তগত হয়। কিন্তু আল্লাহর যখন উহা ইসরাঈলীদের হাতে ফিরাইয়া দেওয়ার ইচ্ছা হইল, তখন এই অবস্থা হইল যে, কাফেররা সিন্দুকটিকে যেখানে রাখিত সেখানেই নানাবিধ ভীষণ বিপদ-আপদ উপস্থিত হইত। অবশেষে বাধ্য হইয়া জালুত উহাকে একটি গরুর গাড়ীর উপর চাপাইয়া দিয়া উক্ত বিপদ হইতে রক্ষা পাইল। ফেরেশতাগণ গাড়ীখানিকে ইসরাঈলীদের নিকট পৌঁছাইয়া দিলেন। ইহাতে ইসরাঈলীরা আনন্দিত হইয়া তালুতকে বাদশাহ বলিয়া স্বীকার করিয়া লইল। (বঃকোঃ)