সুরা-আল-ইমরান
আয়াত-২০০
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু
১০২। হে মুমিন গণ ! আল্লহকে (এইরূপ ) ভয় কর যেরূপ ভয় করা উচিত, এবং ইসলাম ব্যতীত আর অন্য কোন অবস্থায় প্রাণ ত্যাগ করিও না।
وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا ۚ وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنتُمْ عَلَىٰ شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ
১০৩। এবং তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে (দ্বীনের) দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এমনিভাবে যে, তোমরা পরস্পর একতাবদ্ধও থাক এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইও না, আর তোমাদের প্রতি আল্লাহর যে দান রহিয়াছে তাহা স্মরন কর, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের অন্তরে ভালবাসা সৃষ্টি করিয়া দিয়াছেন, ফলে তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহে পরস্পর ভাই ভাই হইয়া গিয়াছ, এবং তোমরা দোযখের গর্তের তীরে ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাদের উহা হইতে রক্ষা করিয়াছেন; এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে স্বীয় বিধানসমূহ পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করিয়া থাকেন, যেন তোমরা (সঠিক) পথে থাক।
وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ ۚ وَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
১০৪। আর তোমাদের মধ্যে এইরূপ থাকা একজন আবশ্যক, যেন তাহারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করে এবং নেক কাজের আদেশ করিতে ও মন্দ কাজ হইতে বারণ করিতে থাকে, আর এরূপলোক পূর্ণ সফলকাম হইবে।
وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ تَفَرَّقُوا وَاخْتَلَفُوا مِن بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ ۚ وَأُولَـٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
১০৫। আর তোমরা ঐ সমস্ত লোকের মতো হইও না, যাহারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইয়া পড়িয়াছে এবং মতবিরোধ করিয়াছে, তাহাদের নিকট স্পষ্ট বিধান পৌছিবার পর; আর তাহাদের জন্য ভীষন শাস্তি রহিয়াছে।
১০৬। সেই দিন কতিপয় চেহারা সাদা হইবে এবং কতিপয় চেহারা কালো হইবে, সুতরাং যাহাদের চেহারা কালো হইবে তাহাদিগকে বলা হইবে। তোমরা কি কাফের হইয়া ছিলে ঈমাণ আনার পর? কাজেই এখন স্বীয় কুফরীর দরুন শাস্তির স্বাদ গ্রহন কর।
শানে নুযুল
১) অর্থাৎ আল্লাহর ধর্মকে উহার মূলনীতি ও শাখা প্রশাখা সহ আকড়াইয়া ধর। একতাবদ্ধ থাকার নিদের্শ ও এই ধর্মে রহিয়াছে। (বঃ কোঃ)
২) অর্থাৎ ইসলাম গ্রহনের পূর্বে যেমন আওস ও খাযরাজ গোত্রদ্বয়ের মধ্যে দীর্ঘকাল যাবৎ যুদ্ধ বিগ্রহ চলিতেছিল। (বঃ কোঃ)
৩) অর্থাৎ কাফের হওয়ার দরুন দোযখের এত নিকটবর্তী হইয়াছিলে যে, দোযখে যাওয়ার জন্য কেবল মৃত্যুরই বিলম্ব ছিল। (বঃ কোঃ)
৪) অর্থাৎ ইসলাম গ্রহনের সৌভাগ্য দান করিয়াছেন। (বঃ কোঃ)
৫) সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করা সকল মুসলমারে জন্য অপরিহার্য কর্তব্য ।(বঃ কোঃ)
৬) ইহুদীরা হযরত মূসা (আঃ) এর এন্তেকালের অব্যবহিত ৫০০ বৎসর পরে এবং খৃষ্টানরা হযরত ঈসা (আঃ) এর আসমানে আহরনের ৩০ বৎসর পরে ধর্ম সম্বন্ধে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হইয়াছে। (মুঃ কোঃ)
১০৭। আর যাহাদের চেহারা সাদা হইয়া যাইবে তাহারা আল্লাহর রহমতের মধ্যে থাকিবে; তাহারা ইহাতে অনন্তকাল অবস্থান করিবে।
تِلْكَ آيَاتُ اللَّهِ نَتْلُوهَا عَلَيْكَ بِالْحَقِّ ۗ وَمَا اللَّهُ يُرِيدُ ظُلْمًا لِّلْعَالَمِينَ
১০৮। ইহা আল্লাহর আয়াত সমূহ, যাহা আমি যথাযথভাবে পাঠ করিয়া আপনাকে শুনাইছি; আর আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি যুলুম করিতে চাহেন না।
وَلِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۚ وَإِلَى اللَّهِ تُرْجَعُ الْأُمُورُ
১০৯। আর আল্লাহরই স্বত্বাধিকার রহিয়াছে, যাহাকিছু আসমান সমূহে এবং যাহাকিছু যমিনে আছে; এবং আল্লাহরই দিকে সমস্ত বিষয় প্রত্যাবর্তিত হইবে।
১১০। তোমরা উত্তম সম্প্রদায়কে প্রকাশ করা হইয়াছে মানবমন্ডলীর জন্য, তোমরা নেক কাজে আদেশ কর এবং নিবিৃত্ত রাখ এবং আল্লাহর প্রতি ঈমাণ রাখ; আর যদি আহলে কিতাবরা ঈমাণ আনিত, তবে তাহাদের জন্য অধিক মঙ্গল হইত; ইহাদের মধ্যে কেহ কেহ তো মুসলমান, আর ইহাদের অধিকাংশ কাফের।
لَن يَضُرُّوكُمْ إِلَّا أَذًى ۖ وَإِن يُقَاتِلُوكُمْ يُوَلُّوكُمُ الْأَدْبَارَ ثُمَّ لَا يُنصَرُونَ
১১১। তাহারা কখনও তোমাদের ক্ষতি করিতে পারিবে না–সামান্য কিছু কষ্ট প্রদান ব্যতীত; আর তাহারা যদি তোমাদের সহিত যুদ্ধ করে, তবে তোমাদিগকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করতঃ পলাইয়া যাইবে। অতঃপর কাহারও পক্ষ হইতে ইহাদের সাহায্যও করা হইবে না।
শানে নুযুল
১) সুতরাং বুঝা গেল, যাহার জন্য যে পুরষ্কার বা যে শাস্তি নির্ধারন করিয়াছেন, তাহা যথোপযোগী হইয়াছে। (বঃ কোঃ)
২) অতঃএব, সবকিছুই যখন তাহার স্বত্ব তখন তাহারই আনুগত্য ইহাদের প্রতি ওয়াজিব ছিল। (বঃ কোঃ)
৩) সমস্ত উম্মতে মুহাম্মাদীয়াকেই ব্যাপক ভাবে এখনে সম্বোধন করা হইয়াছে। কামালাইন কিতাবে উদ্ধত আছে হুযূর (দঃ) বলিয়াছেন, আমার উম্মতই শ্রেষ্ঠতম উম্মত। (বঃ কোঃ)
৪) এই আয়াতের বর্ণনা ভঙ্গিতে বুঝা যায়, সাহাবাগণকেই সম্বোধন করা হইয়াছে। ফলতঃ ইহুদী ও নাছারাগণ হুযুর (দঃ) এর যুগে কোন যুদ্ধে জয়লাভ করিতে পারে নাই। (বঃকোঃ)
ضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الذِّلَّةُ أَيْنَ مَا ثُقِفُوا إِلَّا بِحَبْلٍ مِّنَ اللَّهِ وَحَبْلٍ مِّنَ النَّاسِ وَبَاءُوا بِغَضَبٍ مِّنَ اللَّهِ وَضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الْمَسْكَنَةُ ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ كَانُوا يَكْفُرُونَ بِآيَاتِ اللَّهِ وَيَقْتُلُونَ الْأَنبِيَاءَ بِغَيْرِ حَقٍّ ۚ ذَٰلِكَ بِمَا عَصَوا وَّكَانُوا يَعْتَدُونَ
১১২। তাহাদের প্রতি (বিশেষ) লাঞ্ছনার ছাপ লাগান হইয়াছে তাহারা যেখাইেন থাকুক না কেন, হাঁ, তবে এমন একটি উপায় এর দরুন যাহা আল্লাহর পক্ষ হইতে এবং অন্য এমন একটি উপায় এর দরুন যাহা মানুষের পক্ষ হইতে, আর তাহারা যোগ্য হইয়াছে আল্লাহর গযবের এবং তাহাদের উপর অবমাননার ছাপ লাগান ইহয়াছে, ইহা এই নিমিত্ত যে, তাহারা আল্লাহ বিধান সমূহ অমান্য করিত এবং পয়গম্বরদিগকে অন্যায়ভাবে হত্যা করিয়া ফেলিত; (আর) ইহা এই জন্য রহিয়াছে যে, ইহারা অনুগ্রত্য করিত না এবং সীমা ছাড়াইয়া যাইত।
لَيْسُوا سَوَاءً ۗ مِّنْ أَهْلِ الْكِتَابِ أُمَّةٌ قَائِمَةٌ يَتْلُونَ آيَاتِ اللَّهِ آنَاءَ اللَّيْلِ وَهُمْ يَسْجُدُونَ
১১৩। তাহারা সকলে সমান নহে। এই আহলে কিতাদের মধ্যে এক সম্প্রদায় তাহারাও যাহারা (সত্য ধর্মে ) সুপ্রতিষ্ঠিত; আল্লাহর আয়াত সমূহ রাত্রিকালে পাঠ করে, আর তাহারা নামায ও পড়িয়া থাকে।
يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَأُولَـٰئِكَ مِنَ الصَّالِحِينَ
১১৪। আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে, এবং নেক কাজের আদেশ করে ও মন্দ কাজ হইতে বিরত রাখে, আর নেক কাজের দিকে ধাবিত হয়। আর ইহারা সুসভ্য লোকের মধ্যে গণ্য।
وَمَا يَفْعَلُوا مِنْ خَيْرٍ فَلَن يُكْفَرُوهُ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِالْمُتَّقِينَ
১১৫। আর তাহারা যে নেক কাজ করিবে উহা হইতে তাহাদের বঞ্চিত করা হইবে না। আর আল্লাহ তা‘আলা পরহেযগারদিগকে খুব ভালোভাবে জানেন।
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا لَن تُغْنِيَ عَنْهُمْ أَمْوَالُهُمْ وَلَا أَوْلَادُهُم مِّنَ اللَّهِ شَيْئًا ۖ وَأُولَـٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۚ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
১১৬। নিশ্চয়, যাহারা কাফের রহিয়াছে কখনও তাহাদের ধনরাশি এবং তাহাদের সন্তান সন্ততি আল্লাহ তা‘আলার (আযাবের) সম্মুখে বিন্দুমাত্রও তাহাদের কাজে আসিবে না। আর তাহারা দোযখী; তাহারা অনন্তকাল উহাতে থাকিবে।
শানে নুযুল
১) আল্লাহর পক্ষ হইতে প্রাণের নিরাপত্তা লাভ হওয়ার উপায় এই যে, যদি কোন আহলে কিতাবে আল্লাহর এবাদতে মশগুল থাকে ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত না হয়, তবে তাহাকে হত্যা করা যাইবে না। অবশ্য তাহাদের এই এবাদত পরকালে কোনই কাজে আসিবে না। আহলে কিতাবদের মধ্যে অক্ষম, নাবালেক কিংবা স্ত্রী লোকদিগকেও হত্যা করা হইবে না । আর মানুষের পক্ষ হইতে নিরাপত্তার অর্থ হইল, কোন সম্প্রদায় তাহাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সংকল্প না করা। অথবা মুসলমানের সহিত সন্ধি রা চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া।(বঃ কোঃ)
২) অর্থাৎ, তাহাদের উন্নত সাহস এবং উচ্চ সংকল্প লোপ পাইয়াছে, এতদ্ভিন্ন জিযিয়া কর এবং দেশান্তরকরণও অবমাননার অন্তরভূক্ত।(বঃ কোঃ)
৩) যে সমস্ত গুন উম্মতে মুহাম্মাদীয়ার শ্রেষ্ঠত্বের কারণ, সে সমস্ত গুণ সম্পন্ন ব্যাক্তিদের প্রশংসা করাই এই আয়াতের উদ্দেশ্য ।(বঃ কোঃ)
مَثَلُ مَا يُنفِقُونَ فِي هَـٰذِهِ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَثَلِ رِيحٍ فِيهَا صِرٌّ أَصَابَتْ حَرْثَ قَوْمٍ ظَلَمُوا أَنفُسَهُمْ فَأَهْلَكَتْهُ ۚ وَمَا ظَلَمَهُمُ اللَّهُ وَلَـٰكِنْ أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ
১১৭। তাহারা এই পার্থিব জীবনে যাহা কিছু ব্যয় করে, উহার অবস্থার অনুরূপ যে, এই রূপ বাতাস যাহাতে প্রচুন্ড হিম আছে, ঐ বাতাস এমন লোকের শষ্য ক্ষেত্র স্পর্শ করিল যাহারা নিজের ক্ষতি সাধন রাখিয়াছে। অনন্তর ঐ বাতাস উক্ত শষ্য ক্ষেত ধ্বংস করিয়া ফেলিল। আর আল্লাহ তাহাদের প্রতি যুলুম করেন নাই; বরং তাহারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি সাধন করিতেছিল।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا بِطَانَةً مِّن دُونِكُمْ لَا يَأْلُونَكُمْ خَبَالًا وَدُّوا مَا عَنِتُّمْ قَدْ بَدَتِ الْبَغْضَاءُ مِنْ أَفْوَاهِهِمْ وَمَا تُخْفِي صُدُورُهُمْ أَكْبَرُ ۚ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْآيَاتِ ۖ إِن كُنتُمْ تَعْقِلُونَ
১১৮। হে মুমিনগণ ! নিজেদের (লোক) ব্যতীত কাহাকে ও অন্তরঙ্গ বন্ধু বানাইও না, তাহারা তোমাদের সহিত দুষ্টামি করিতে বিন্দু মাত্রও ত্রুটি করে না। তোমাদের অনিষ্ট কামনা করে। বাস্তবিক, শত্রুতা তাহাদের মুখ হইতে প্রকাশ হইয়া পড়ে। আর যে পরিমাণ তাহাদের অন্তরে রহিয়াছে, সে তো অনেক কিছু। আমি লক্ষণসমূহ তোমাদের সম্মুখে প্রকাশ করিয়া দিয়াছি, যদি তোমরা বুদ্ধি রাখ।
هَا أَنتُمْ أُولَاءِ تُحِبُّونَهُمْ وَلَا يُحِبُّونَكُمْ وَتُؤْمِنُونَ بِالْكِتَابِ كُلِّهِ وَإِذَا لَقُوكُمْ قَالُوا آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْا عَضُّوا عَلَيْكُمُ الْأَنَامِلَ مِنَ الْغَيْظِ ۚ قُلْ مُوتُوا بِغَيْظِكُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ
১১৯। হাঁ, তোমরা তো এই রূপ যে, তাহাদের সঙ্গে ভালোবাসা রাখ, আর তাহারা তোমাদের সঙ্গে আদৌ ভালোবাসা রাখেনা; অথচ তোমরা সমস্ত কিতাবের প্রতি ঈমাণ রাখ। আর তাহারা তোমাদের সঙ্গে মিলিত হইলে বলে আমরা ঈমাণ আনিয়াছি, আর যখন পৃথক হইয়া যায়, তখন তোমাদের প্রতি ক্রোধে নিজেদের অঙ্গুলীসমূহ দংশন করে। আপনি বলিয়া দিন, তোমরা স্বীয় ক্রোধে মরিয়া যাও। নিশ্চয়, আল্লাহ অন্তরের কথা পরিজ্ঞাত।
শানে নুযুল
১) তদ্রুপ কাফেরদের দানও পরকালে বিনিষ্ট হইয়া যাইবে। কেননা কুফরী দান কবূল হওয়ার পরিপন্থী। (বঃ কোঃ)
২) প্রচন্ড হিমপূর্ণ বায়ুতে ধার্মিক অধার্মিক সকলের শস্যই নষ্ট হয়, তথাপি যালিম ক্বওমের শস্যক্ষেত্র বলিয়া নিদিষ্ট করার তাৎপর্য এই যে, মুসলমানদের কোন পার্থিব ক্ষতি হইলে তাহারা পরলোকে উহার বিনিময় প্রাপ্ত হইবে, কিন্তু কাফেরেরা পরকালে উহার কোন বিনিময়ই প্রাপ্ত হবেনা।(বঃ কোঃ)
৩) অন্য ধর্মাবলম্বীকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহন করিতে এই আয়াতে নিষেধ করা হইয়াছে। তাহাদিগকে স্বীয় গুপ্ত বিষয়ের বিশ্বাসীরূপে গ্রহন না করা এবং শাসন ও শৃঙ্খলামূলক কার্যসমূহে হস্তক্ষেপের অধিকার না দেওয়াও উক্ত নিষেধের অন্তভূক্ত।(বঃ কোঃ)
إِن تَمْسَسْكُمْ حَسَنَةٌ تَسُؤْهُمْ وَإِن تُصِبْكُمْ سَيِّئَةٌ يَفْرَحُوا بِهَا ۖ وَإِن تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا لَا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا ۗ إِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ
১২০। যদি তোমাদের কোন মঙ্গলময় অবস্থার উপস্থিত হয়, তবে তাহাদের মনবেদনার কারণ হয়। আর যদি তোমাদের কোন অমঙ্গল জনক অবস্থার উপস্থিত হয়, তবে তাহারা উহাতে আনন্দিত হয় । আর যদি তোমরা অটল ও সংযমী হও, তবে তাহাদের চক্রান্ত তোমাদের কোন ক্ষতি করিতে পারিবে না। নিশ্চয়, আল্লাহ তাহাদের কার্যসমূহকে পরিবেষ্টন করিয়া আছেন।
وَإِذْ غَدَوْتَ مِنْ أَهْلِكَ تُبَوِّئُ الْمُؤْمِنِينَ مَقَاعِدَ لِلْقِتَالِ ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
১২১। আর যখন আপনি প্রভাতে বাহির হইলেন স্বীয় গৃহ হইতে, মুসলমানদিগকে যুদ্ধের জন্য যথাস্থানে সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান করিতেছিলেন। আর আল্লাহ সব (ই) শুনিতেছিলেন, জানিতেছিলেন।
১২২। যখন তোমাদের মধ্যে হইতে দুটি দল মনে মনে ভগ্নোৎসাহ হওয়ার কল্পনা করিল, আর আল্লাহ তো ঐ উভয় দলের সহায়ক ছিলেন । আর মুসলমানদের তো আল্লাহর উপরই ভরসা করা উচিত।
وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ اللَّهُ بِبَدْرٍ وَأَنتُمْ أَذِلَّةٌ ۖ فَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
১২৩। আর ইহা সুনিশ্চিত যে, আল্লাহ তোমাদিগক বদরে(বদর যুদ্ধে) সাহায্য করিয়াছেন, অথচ তোমরা সহায়-সম্বলহীন ছিলে। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করিতে থাক– যেন তোমরা শুকরগুযার হও।
إِذْ تَقُولُ لِلْمُؤْمِنِينَ أَلَن يَكْفِيَكُمْ أَن يُمِدَّكُمْ رَبُّكُم بِثَلَاثَةِ آلَافٍ مِّنَ الْمَلَائِكَةِ مُنزَلِينَ
১২৪। যখন আপনি মুসলমান দিগকে এইরূপ বলিতেছিলেন যে, তোমাদের কি ইহা যথেষ্ঠ হইবে না যে, তোমাদের রব্ব তিন সহস্র ফেরেশতা দ্বারা তোমাদের সাহায্য করিবেন? যাহারা (আসমান হইতে) অবতারিত হইবে।
শানে নুযুলঃ
১) হিজরীর তৃতীয় সনে মক্কার কাফেরগণ তিন সহস্র অশ্বারোহী ও পদাতিকের এক বাহিনী লইয়া মদিনা আক্রমণের উদ্দেশ্য যাত্রা করিল। হুযুর এই সংবাদ শুনিয়া সাহাবা গণের সহিত পরামর্শক্রমে মাঠে নামিয়া যুদ্ধ করাই স্থির করিলেন। মুহাজির ও আনছারদের এক সহস্র লোকের বাহিনী লইয়া ওহুদ প্রান্তে রওয়ানা হইলেন। এই বাহিনীতে মুনাফেক আবদুল্লাহ ইবনে উবাইও যোগ দিয়াছিল পথিমধ্যে অসন্তুষ্ট হইয়া সে তিনশত লোক লইয়া সরিয়া পড়িল। অবশিষ্ট সাতশত সাহাবি লইয়া হুযুর ওহুদ পাবর্তকে পিছনে রাখিয়া রণক্ষেত্রে দাড়াইলেন। এসম্বন্ধে আল্লাহ তা‘আলা পরবর্তী আয়াত গুলি নাযিল করিয়া মুসলমানদিগকে উৎসাহ প্রদান করিতেছেন। (বঃ কোঃ)