সূরা আল-ইমরান বাংলা অনুবাদ ও শানে নযুল

সূরা আল-ইমরান বাংলা অনুবাদ
সর্বমোট আয়াত-২০০

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু

الم

১। আলিফ-লাম, মিম।

اللَّهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ

২। আল্লাহ্ এমন যে, তিনি ব্যতীত মা’বুদরূপে গ্রহণ করিবার যোগ্য আর কেহই নাই। তিনি চিরঞ্জীব, যাবতীয় বস্তুর সংরক্ষণকারী।

نَزَّلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ وَأَنزَلَ التَّوْرَاةَ وَالْإِنجِيلَ

৩। আল্লাহ্ আপনার প্রতি কোরআন নাযিল করিয়াছেন বাস্তব সত্যের সহিত এই প্রকারে যে, উহা পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের সমর্থন করে আর প্রেরণ করিয়াছিলেন তাওরাত ও ইঞ্জীল।

مِن قَبْلُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَأَنزَلَ الْفُرْقَانَ ۗ إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بِآيَاتِ اللَّهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيدٌ ۗ وَاللَّهُ عَزِيزٌ ذُو انتِقَامٍ

৪। ইহার পূর্বে জনগণের হেদায়েতের জন্য। আর আল্লাহ্ প্রেরণ করিয়াছেন মু’জেযাসমূহ। নিশ্চয়, যাহারা প্রত্যাখ্যান করিয়াছে আল্লার আয়াতসমূহকে, তাহাদের জন্য রহিয়াছে কঠোর শাস্তি। আর আল্লাহ্ মহা পরাক্রমশালী প্রতিশোধ গ্রহণকারী।

إِنَّ اللَّهَ لَا يَخْفَىٰ عَلَيْهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ

৫। নিশ্চয়ই, আল্লাহর নিকট কোন বিষয়ই গোপন নাই, না যমিনে আর না আসমানে।

هُوَ الَّذِي يُصَوِّرُكُمْ فِي الْأَرْحَامِ كَيْفَ يَشَاءُ ۚ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

৬। তিনি এমন সত্তা যে, জরায়ুর মধ্যে তোমাদের আকৃতি গঠন করিয়া থাকেন, যেরূপ ইচ্ছা করেন। কেহই মা’বুদ হওয়ার যোগ্য নহে তিনি ব্যতীত, তিনি পরাক্রমশালী,তত্ত্বজ্ঞ।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১। ফঃ প্রকৃত মা’বুদের ‘অমরত্ব’ এবং ‘যাবতীয়’ বস্তুর সংরক্ষনকারী গুণ দুইটি দ্বারা বুঝা যায়, যাবতীয় বাতেল মা’বুদগুলি মা’বুদই নহে। কেননা, ইহাদের মধ্যে এই দুইটি গুণ নাই। যে সর্বদা বিদ্যমান না থাকে এবং নিজের সংরক্ষনের জন্য পরের মুখাপেক্ষী,সে উপাস্য হওয়ার যোগ্য হইতে পারে না। (বঃকোঃ)
২। অর্থাৎ, কাহারও এক রকম অন্যজনের অন্য রকম আকৃতি গঠন করেন।
৩। শানে নুযুলঃ কতিপয় খৃষ্টান এক দিন হুযুর (দঃ) এর সমীপে আসিয়া ধর্মীয় আলোচনা আরম্ভ করে। তিনি বিস্তৃত আলোচনায় আল্লাহর অমরত্ব,পূর্ণ সংরক্ষণ ক্ষমতা, জ্ঞানের সীমাহীনতা এবং সৃষ্টির ক্ষমতা-নৈপুণ্যে অদ্বিতীয়তা বিশ্লেষন করিয়া খৃষ্টানদের তিন খোদার বিশ্বাস খন্ডন করিয়া দিলেন, ফলে তাহারা এই উপক্রমণিকাগুলি মানিতে বাধ্য হইল। (বঃকোঃ)

هُوَ الَّذِي أَنزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ آيَاتٌ مُّحْكَمَاتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ ۖ فَأَمَّا الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَاءَ تَأْوِيلِهِ ۗ وَمَا يَعْلَمُ تَأْوِيلَهُ إِلَّا اللَّهُ ۗ وَالرَّاسِخُونَ فِي الْعِلْمِ يَقُولُونَ آمَنَّا بِهِ كُلٌّ مِّنْ عِندِ رَبِّنَا ۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ

৭। তিনি এমন সত্তা, যিনি তোমাদের প্রতি কিতাব নাযিল করিয়াছেন, যাহার একাংশে ঐ আয়াতসমূহ রহিয়াছে, যাহা অস্পষ্ট মর্ম হইতে সংরক্ষিত। এই আয়াতগুলিই কিতাবের মূলভিত্তি, আর অন্যান্য আয়াতগুলি এইরূপ যে, যাহা অস্পষ্ট মর্মবিশিষ্ট। সুতরাং যাহাদের অন্তরে বক্রতা রহিয়াছে তাহারা ইহার ঐ অংশের পিছনে পড়ে যাহা অস্পষ্ট মর্মবিশিষ্ট, গোলযোগ অন্বেষণের উদ্দেশ্যে; এবং ইহার (মনগড়া) ব্যাখ্যা অন্বেষণের উদ্দেশ্যে। অথচ ইহার মর্ম আল্লাহ্ ভিন্ন আর কেহ অবগত নহে। আর যাহারা (ধর্মীয়) জ্ঞানে নিপুণ তাহারা বলে–আমরা ইহাতে দৃঢ়বিশ্বাস পোষণ করি, সবই আমাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে সমাগত, আর উপদেশ তাহারাই গ্রহণ করে, যাহারা বুদ্ধিমান।

رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً ۚ إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ

৮। হে আমাদের পরওয়ারদেগার! আমাদের অন্তরসমূহকে বক্র করিবেন না ইহার পর যে, আপনি আমাদের সুপথ প্রদর্শন করিয়াছেন, আর আমাদিগকে আপনার নিকট হইতে করুণা প্রদান করুন, নিশ্চয়, আপনি মহা দাতা।

رَبَّنَا إِنَّكَ جَامِعُ النَّاسِ لِيَوْمٍ لَّا رَيْبَ فِيهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ لَا يُخْلِفُ الْمِيعَادَ

৯। হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয়, আপনি সকল মানুষকে সমবেতকারী–ঐ দিনে যাহাতে কোন সন্দেহ নাই, নিঃসন্দেহ, আল্লাহ্ তা‘আলা ভঙ্গ করেন না (তাঁহার) ওয়াদা।

إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا لَن تُغْنِيَ عَنْهُمْ أَمْوَالُهُمْ وَلَا أَوْلَادُهُم مِّنَ اللَّهِ شَيْئًا ۖ وَأُولَـٰئِكَ هُمْ وَقُودُ النَّارِ

১০। নিশ্চয়, যাহারা কুফর করে, কখনও তাহাদের কাজে আসিবে না তাহাদের ধন আর তাহাদের সন্তান-সন্ততি আল্লাহর মোকাবিলায় সামান্য পরিমাণও; আর এই প্রকৃতির লোক জাহান্নামে ইন্ধন হইবে।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১। তবে যদি আল্লাহ স্বয়ং কোরআন অথবা রাসুলের হাদীস মাধ্যমে মর্ম স্পষ্টরূপে অথবা ইঙ্গিতে বলিয়া দেন, তবে যাহা বলিয়া দিবেন ততটুকুই লোকে অবগত হইতে পারিবে। (বঃকোঃ)
২। অর্থাৎ, হিতকর ও আবশ্যকীয় বিষয়ে মশগুল থাকা এবং ক্ষতিকর ও অনর্থক বিষয়ের পিছনে পড়িয়া না থাকায় বুদ্ধিমানের কাজ। (বঃকোঃ)
ফঃ খৃষ্টানগণ মারইয়ামকে আল্লাহর বিবী ও ঈসাকে আল্লাহর পুত্র বলিত। তাহাদের এই ভ্রান্ত ধারণা দূরীকরণের উদ্দেশ্যে আল্লাহ্ তা‘আলা এখানে বলিয়াছেনঃ আল্লাহ্ ত‘আলা প্রত্যেক কিতাবে অস্পষ্ট মর্মযুক্ত কতগুলি শব্দ রাখিয়াছেন। পথভ্রষ্ট লোকেরা নিজেদের মনগড়া মতে উহার অর্থ করিয়া লয়। কিন্তু ধর্মে ও জ্ঞানে অভিজ্ঞ লোকগণ মূল কিতাবের সহিত মিলাইয়া উহার অর্থ গ্রহণ করিয়া থাকে। (মুঃকোঃ)

كَدَأْبِ آلِ فِرْعَوْنَ وَالَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ ۚ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا فَأَخَذَهُمُ اللَّهُ بِذُنُوبِهِمْ ۗ وَاللَّهُ شَدِيدُ الْعِقَابِ

১১। যেমন আচরণ ছিল ফেরাউন সম্প্রদায়ের এবং ইহাদের পূর্ববর্তীদের-ইহারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করিয়াছে, তাই আল্লাহ্ তাহাদিগকে পাকড়াও করিয়াছেন তাহাদের অপরাধের জন্য; আর আল্লাহ্ কঠোর শাস্তিদাতা।

قُل لِّلَّذِينَ كَفَرُوا سَتُغْلَبُونَ وَتُحْشَرُونَ إِلَىٰ جَهَنَّمَ ۚ وَبِئْسَ الْمِهَادُ

১২। আপনি এই কাফিরদিগকে বলিয়া দিন যে, অচিরেই তোমরা পরাভ’ত হইবে এবং তোমাদিগকে সমবেত করিয়া জাহান্নামের দিকে লইয়া যাওয়া হইবে, আর উহা নিকৃষ্ট বাসস্থান ।

قَدْ كَانَ لَكُمْ آيَةٌ فِي فِئَتَيْنِ الْتَقَتَا ۖ فِئَةٌ تُقَاتِلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَأُخْرَىٰ كَافِرَةٌ يَرَوْنَهُم مِّثْلَيْهِمْ رَأْيَ الْعَيْنِ ۚ وَاللَّهُ يُؤَيِّدُ بِنَصْرِهِ مَن يَشَاءُ ۗ إِنَّ فِي ذَ‌ٰلِكَ لَعِبْرَةً لِّأُولِي الْأَبْصَارِ

১৩। নিশ্চয়, তোমাদের জন্য মহান নিদর্শন রহিয়াছে দুই দলের মধ্যে, যাহারা পরস্পর মুখামুখী হইয়াছিল। একদল তো আল্লাহর পথে যুদ্ধ করিতেছিল। আর অন্য দল ছিল কাফের। এই কাফেররা নিজদিগকে মুসলমানদের দ্বিগুণ দেখিতেছিল প্রত্যক্ষ দৃষ্টিতে। আর আল্লাহ্ স্বীয় সাহায্য দ্বারা যাহাকে ইচ্ছা শক্তি প্রদান করিয়া থাকেন। নিশ্চয়, ইহার মধ্যে মহান উপদেশ রহিয়াছে চক্ষুস্মান লোকদের জন্য।

زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاءِ وَالْبَنِينَ وَالْقَنَاطِيرِ الْمُقَنطَرَةِ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَالْخَيْلِ الْمُسَوَّمَةِ وَالْأَنْعَامِ وَالْحَرْثِ ۗ ذَ‌ٰلِكَ مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَاللَّهُ عِندَهُ حُسْنُ الْمَآبِ

১৪। সু-শোভিত মনে হয় মানুষের নিকট লোভনীয় বস্তুর মহব্বত, রমণী হউক, সন্তান-সন্ততি হউক, পুঞ্জীভ’ত স্বর্ণ এবং রৌপ্য হউক, চিহিৃত অথবা পালিত পশূু হইক, আর শস্যক্ষেত্রই হউক, এই সমুদয় পার্থিব জীবনের ব্যবহারিক বস্তু। আর পরিণামের শোভা তো আল্লারই নিকট রহিয়াছে।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১। বদরের যুদ্ধে জয় লাভের পর হুযুর (দঃ) কাইনুকা’র বাজারে ইহুদীগকে একত্রিত করিয়া বলিলেন, “কোরেশদের ন্যায় তোমাদের অবস্থা হওয়ার পূর্বে ইসলাম গ্রহণ কর”। ইহুদীরা বলিল, ‘কোরেশেরা ছিল যুদ্ধে অনভিজ্ঞ, তাহাদিগকে পরাস্ত করিয়াছো বলিয়া তুমি প্রতারিত হইও না, আল্লাহর শপথ আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ বাধিলে বুঝিতে পারিবে যুদ্ধ কাহাকে বলে। আমাদের ন্যায় যোদ্ধা সম্প্রদায়ের সঙ্গে এ যাবৎ তোমার মোকাবেলাই হয় নাই”। ইহার উত্তরেই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (লঃনুঃ)
২। বদরের যুদ্ধে মুসলমানদের সংখ্যা ছিল তিন শত তের জন। আর কাফেরদের সংখ্যা ছিল সাড়ে নয় শত। কিন্তু আল্লাহর অনুগ্রহে পরিশেষে কাফেরদেরই শোচনীয় পরাজয় হইয়াছিল। ইহাতে বুঝা যায়, জয় ও পরাজয় আল্লাহরই অধিকারে রহিয়াছে। (বঃকোঃ)

قُلْ أَؤُنَبِّئُكُم بِخَيْرٍ مِّن ذَ‌ٰلِكُمْ ۚ لِلَّذِينَ اتَّقَوْا عِندَ رَبِّهِمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَأَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ وَرِضْوَانٌ مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ بَصِيرٌ بِالْعِبَادِ

১৫। আপনি বলিয়া দিন, আমি কি তোমাদিগকে এমন বস্তুর কথা বলিয়া দিব, যাহা এই বস্তুসমূহ অপেক্ষা উত্তম, এইরূপ মানুষের জন্য যাহারা খোদাভীরু; তাহাদের রবের নিকট এরূপ উদ্দ্যান রহিয়াছে যাহার নিম্নদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত, উহাতে তাহারা অনন্তকাল অবস্থান করিবে, আর পাক পবিত্রা বিবিগণ রহিয়াছে, আর সন্তুষ্টি রহিয়াছে আল্লাহর তরফ হইতে, আর আল্লাহ্ খুব দেখেন বান্দাগণকে।

الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

১৬। (ইহারা) এইরূপ লোক যাহারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক। আমরা ঈমান আনিয়াছি, সুতরাং আমাদের গুনাসমূহ মা’ফ করিয়া দিন। এবং আমাদিগকে দোযখের আযাব হইতে বাঁচাইয়া লউন।

الصَّابِرِينَ وَالصَّادِقِينَ وَالْقَانِتِينَ وَالْمُنفِقِينَ وَالْمُسْتَغْفِرِينَ بِالْأَسْحَارِ

১৭। (তাহারা) সহিষ্ণু এবং সত্যপরায়ণ এবং বিনয়ী এবং দানশীল এবং শেষরাত্রে পাপমোচনের প্রার্থনাকারী।

شَهِدَ اللَّهُ أَنَّهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ وَالْمَلَائِكَةُ وَأُولُو الْعِلْمِ قَائِمًا بِالْقِسْطِ ۚ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

১৮। সাক্ষ্য প্রদান করিয়াছেন আল্লাহ্ তা‘আলা ইহার যে, ঐ (পাক) সত্ত্বাভিন্ন অন্য কেহই মা’বুদ হওয়ার যোগ্য নহে, আর ফেরেশতারাও এবং জ্ঞানবানগণও। আর মা’বুদও তিনি এইরূপ যে, ন্যায়ের সহিত শৃঙ্খলা রক্ষাকারী। তিনি ভিন্ন কেহই মা’বুদ হওয়ার যোগ্য নহে, তিনি পরাক্রমশালী–মহা জ্ঞানী।

إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ ۗ وَمَا اخْتَلَفَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ إِلَّا مِن بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْعِلْمُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ ۗ وَمَن يَكْفُرْ بِآيَاتِ اللَّهِ فَإِنَّ اللَّهَ سَرِيعُ الْحِسَابِ

১৯। নিঃসন্দেহে, ধর্ম (সত্য ও মনোনীত) আল্লার নিকট শুধু ইসলামই। আর আহলে কিতাবরা (ইসলাম সম্বন্ধে সন্দেহ বশতঃ নহে বরং) শুধু (মুসলমানদের প্রতি) পরস্পর যিদ্ ও হিংসা বশতঃ। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর আহকামকে প্রত্যাখ্যান করিবে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ্ অতি সত্বর ইহার হিসাব গ্রহণকারী।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১। ফঃ ইহুদী এবং নাছারাগণ তাওরাত ও ইঞ্জীল দেখিয়া বলিত, আখেরী যমানার পয়গম্বর আবির্ভুত হওয়ার সময় আসিয়াছে। তাঁহার প্রাপ্ত কোরআন এবং প্রচারিত ধর্ম ইসলাম সত্য হইবে। আমাদের বংশধর যাহারা তখন বিদ্যমান থকিবে, তাহারা যেন তাঁহার ধর্ম গ্রহণ করে। তাহাদের ধারনা ছিল,বনী ইসরাঈল বংশেই শেষ নবী জন্ম গ্র্রহণ করিবেন। কিন্তু হযরত মোহাম্মদ (দঃ) যখন বনী ইসরাঈল বংশে জন্মগ্রহণ করিলেন, তখন তাহাদের হিংসা হইল এবং ভাবিল, আমরা তাঁহার আনুগত্য অবলম্বন করিলে আমাদের সম্মান ও প্রতাপ বিলুপ্ত হইবে। এই কারনে তাহারা হুযুরের বর্ণনা সম্বলিত আয়াতগুলিকে বিকৃত ও পরিবর্তীত করিয়া ফেলিল, এবং হুযুরের বিরোধিতায় নিজেরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হইয়া গেল। (মুঃকোঃ)

فَإِنْ حَاجُّوكَ فَقُلْ أَسْلَمْتُ وَجْهِيَ لِلَّهِ وَمَنِ اتَّبَعَنِ ۗ وَقُل لِّلَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ وَالْأُمِّيِّينَ أَأَسْلَمْتُمْ ۚ فَإِنْ أَسْلَمُوا فَقَدِ اهْتَدَوا ۖ وَّإِن تَوَلَّوْا فَإِنَّمَا عَلَيْكَ الْبَلَاغُ ۗ وَاللَّهُ بَصِيرٌ بِالْعِبَادِ

২০। এর পরও যদি ইহারা আপনার সহিত বিতর্ক করে, তবে আপনি বলিয়া দিন, আমি তো আমার চেহারা একমাত্র আল্লাহর দিকে রুজু করিয়াছি, আর আমার অনুগামীরাও। আর বলুন, আহলে কিতাবকে এবং (মুশরেক) আরবদিগকে, তোমরাও কি ইসলাম গ্রহণ করিতেছ? ইতঃপর যদি তাহারা ইসলাম গ্রহণ করে, তবে তাহারাও পথে আসিয়া যাইবে, আর যদি তাহারা বিমুখই থাকে, তবে আপনার দায়িত্ব শুধু (আল্লাহর আহকাম) পৌঁছাইয়া দেওয়া মাত্র। আর আল্লাহ্ স্বয়ং দেখিয়া লইবেন বান্দাদিগকে।

إِنَّ الَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِآيَاتِ اللَّهِ وَيَقْتُلُونَ النَّبِيِّينَ بِغَيْرِ حَقٍّ وَيَقْتُلُونَ الَّذِينَ يَأْمُرُونَ بِالْقِسْطِ مِنَ النَّاسِ فَبَشِّرْهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٍ

২১। নিশ্চয়, যাহারা অমান্য করে আল্লার আয়াতসমূহকে এবং অন্যায়ভাবে হত্যা করে, এবং হত্যা করে এমন লোকদিগকে যাহারা ন্যায়পরায়ণতা শিক্ষা দেয়; সুতরাং এরূপ লোকদিগকে সংবাদ শুনাইয়া দিন এক যন্ত্রণাময় শাস্তির।

أُولَـٰئِكَ الَّذِينَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَمَا لَهُم مِّن نَّاصِرِينَ

২২। ইহারা ঐ লোক, যাহাদের যাবতীয় আমল বিনষ্ট হইয়া গিয়াছে, ইহলোক ও পরলোকে; আর তাহাদের কোন সাহায্যকারী হইবে না।

أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ أُوتُوا نَصِيبًا مِّنَ الْكِتَابِ يُدْعَوْنَ إِلَىٰ كِتَابِ اللَّهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ يَتَوَلَّىٰ فَرِيقٌ مِّنْهُمْ وَهُم مُّعْرِضُونَ

২৩। আপনি কি এইরূপ লোক প্রত্যক্ষ করেন নাই, যাহাদিগকে কিতাবের (তাওরাতের) এক অংশ প্রদান করা হইয়াছিল; আর সেই কিতাবুল্লার দিকে এই উদ্দেশ্যে তাহাদিগকে ডাকাও হয়, যেন ইহা তাহাদের মধ্যে মীমাংসা করিয়া দেয়; অতঃপর তাহাদের মধ্য হইতে কতক লোক ফিরিয়া যায় অবজ্ঞা করিয়া।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১। বনী ইসরাঈল সম্প্রদায় কোন এক রবিবারের প্রভাতে ৪৩ জন নবীকে এবং সেই দিনই ১০০ জন সৎ উপদেষ্টাকে হত্যা করিয়াছিল, যাঁহারা তাহাদিগকে মন্দ কাজ করিতে বারণ করিত। অথচ বনী ইসরাঈল সম্প্রদায় এই জঘন্য কার্যকেও ধর্মীয় কর্তব্য বলিয়া মনে করিত। তাহাদিগকে আল্লাহ্ তা‘আলা কঠোর শাস্তির কথা শুনাইতেছেন। (মুঃকোঃ)
২। একদা হুযুর (দঃ) ইহুদিগকে বলিলেন, তোমরা ঈমান আনো। ইহুদীরা বলিল, আমরা স্বীয় সম্প্রদায়ের আলেমদেরকে লইয়া ধর্ম সম্বন্ধে আপনার সঙ্গে বাহাস্ করিব। হুযুর বলিলেন, তাহলে সেই আয়াতগুলিও আনিও যাহাতে আমার সম্বন্ধে বিবরণ রহিয়াছে। কিন্তু তাহারা সেই আয়াতগুলিও আনিল না। এই সম্বন্ধেই আয়াতটি নাযিল হইয়াছে। (মুঃকোঃ)

ذَ‌ٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا لَن تَمَسَّنَا النَّارُ إِلَّا أَيَّامًا مَّعْدُودَاتٍ ۖ وَغَرَّهُمْ فِي دِينِهِم مَّا كَانُوا يَفْتَرُونَ

২৪। ইহা এইজন্য যে, তাহারা এরূপ বলে যে, আমাদিগকে কেবল নির্দিষ্ট অল্প কয় দিন জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করিবে। আর তাহাদিগকে ধোকায় ফেলিয়া রাখিয়াছে তাহাদের (ধর্ম সম্বন্ধে) তৈয়ারী মনগড়া কথাসমূহ।

فَكَيْفَ إِذَا جَمَعْنَاهُمْ لِيَوْمٍ لَّا رَيْبَ فِيهِ وَوُفِّيَتْ كُلُّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ

২৫। অনন্তর তাহাদের কি অবস্থা হইবে! যখন আমি তাহাদিগকে ঐ তারিখে সমবেত করিব, যাহাতে কোন সন্দেহ নাই, এবং পূর্ণ বিনিময় প্রাপ্ত হইবে প্রত্যেকে, যাহাকিছু সে করিয়াছিল, আর তাহাদের উপর যুলুম করা হইবে না।

قُلِ اللَّهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَن تَشَاءُ وَتَنزِعُ الْمُلْكَ مِمَّن تَشَاءُ وَتُعِزُّ مَن تَشَاءُ وَتُذِلُّ مَن تَشَاءُ ۖ بِيَدِكَ الْخَيْرُ ۖ إِنَّكَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

২৬। আপনি এইরূপ বলুন,হে আল্লাহ্! সমস্ত রাজ্যের মালিক, আপনি রাজ্য যাহাকে ইচ্ছা প্রদান করেন এবং যাহা হইতে ইচ্ছা করেন রাজ্য ছিনাইয়া লন। আর যাহাকে ইচ্ছা আপনি বিজয়ী করেন, আর যাহাকে ইচ্ছা আপনি পরাভূত করেন। আপনারই অধিকারে রহিয়াছে সমস্ত কল্যাণ। নিশ্চয়, আপনি সর্ববিষয়ে পূর্ণ ক্ষমতাবান।

تُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَتُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ ۖ وَتُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَتُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ ۖ وَتَرْزُقُ مَن تَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ

২৭। আপনি রাত্র (-এর অংশ) কে দিনের মধ্যে প্রবেশ করান এবং দিন (-এর অংশ) কে রাত্রির মধ্যে প্রবেশ করান। আর আপনি সজীবকে নির্জীব হইতে বাহির করেন, যেমন ডিম্ব হইতে বাচ্চা) আর নির্জীব বস্তুকে সজীব হইতে বাহির করেন। আর আপনি যাহাকে ইচ্ছা অপরিমিত রেযেক দান করেন।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১। ইহুদীরা মীমাংসাকার্যে তাওরাত অনুযায়ী আমল করিত না এবং নির্ভয়ে গুনাহের কাজ করিত। কেননা, তাহাদের পূর্ব-পুরুষগণ তাওরাতে মনগড়া ভাবে লিখিয়া গিয়াছে যে, ‘আমরা শত দিনের বেশী দোযখের শাস্তি ভোগ করিব না। আমাদের পূর্ব-পুরুষ হযরত ইয়াকুব, তাঁহার পিতা ও দাদা আমাদিগকে দোযখ হইতে মুক্ত করিয়া লইবেন।’ ইহারা উহাই বিশ্বাস করিত। আল্লাহ্ তা‘আলা এ সম্বন্ধে আয়াতটিতে বলিতেছেন। (মুঃকোঃ)
২। অর্থাৎ, আপনি গ্রীষ্মকালে রাত্রের অংশকে দিনের মধ্যে প্রবেশ করাইয়া দিনকে বড় এবং রাত্রকে ছোট করেন, আর শীতকালে দিনের অংশকে রাত্রের মধ্যে প্রবেশ করাইয়া রাত্রি বড় এবংদিন ছোট করেন। আর আপনি নির্জীব পদার্থ হইতে সজীব পদার্থ যেমন-শৃক্র হইতে প্রাণী এবং বীজ হইতে উদ্ভিদ কিংবা মূর্খ ও কাফের হইতে ওলী ও মু’মিন পয়দা করিয়া থাকেন। আর সজীব পদার্থ হইতে নির্জীব পদার্থ যেমন, প্রাণী হইতে শুক্র ও পক্ষী হইতে ডিম এবং নেককার হইতে বদকার বাহির করেন। (মুঃকোঃ)

لَّا يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِن دُونِ الْمُؤْمِنِينَ ۖ وَمَن يَفْعَلْ ذَ‌ٰلِكَ فَلَيْسَ مِنَ اللَّهِ فِي شَيْءٍ إِلَّا أَن تَتَّقُوا مِنْهُمْ تُقَاةً ۗ وَيُحَذِّرُكُمُ اللَّهُ نَفْسَهُ ۗ وَإِلَى اللَّهِ الْمَصِيرُ

২৮। মুসলমানদের উচিত কাফেরদিগকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করা মুসলমানদিগকে (বন্ধুত্ব) অতিক্রম করিয়া, আর যে ব্যক্তি এইরূপ করিবে, সে ব্যক্তি আল্লার সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখার কোন হিসাবে নহে। অবশ্য এমন অবস্থায় (বাহিৃক বন্ধুত্বের অনুমতি আছে) যখন তোমরা তাহাদিগ হইতে কোন প্রকার আশংকা কর, আর আল্লাহ্ তোমাদিগকে তাঁহার সত্ত্বার ভয় দেখাইতেছেন। আর আল্লাহ্রই নিকট ফিরিয়া যাইতে হইবে।

قُلْ إِن تُخْفُوا مَا فِي صُدُورِكُمْ أَوْ تُبْدُوهُ يَعْلَمْهُ اللَّهُ ۗ وَيَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ وَاللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

২৯। আপনি বলিয়া দিন, যদি তোমরা গোপন কর স্বীয় মনের বিষয়কে অথবা ইহা প্রকাশ কর আল্লাহ্ তাহা জানেন। আর তিনি তো সবকিছু জানেন,যাহাকিছু আসমান সমূহে আছে আর যাহাকিছু যমীনে আছে। আর আল্লাহ্ সর্ববিষয়োপরি ক্ষমতাও পূর্ণ রাখেন।

يَوْمَ تَجِدُ كُلُّ نَفْسٍ مَّا عَمِلَتْ مِنْ خَيْرٍ مُّحْضَرًا وَمَا عَمِلَتْ مِن سُوءٍ تَوَدُّ لَوْ أَنَّ بَيْنَهَا وَبَيْنَهُ أَمَدًا بَعِيدًا ۗ وَيُحَذِّرُكُمُ اللَّهُ نَفْسَهُ ۗ وَاللَّهُ رَءُوفٌ بِالْعِبَادِ

৩০। যেদিন প্রত্যেকেই স্বীয় কৃত নেককাজসমূহ সম্মুখে উপস্থাপিত পাইবে এবং স্বীয় কৃত মন্দ কাজসমূহ (ও); (সেদিন) এই কামনা করিবে যে, কি চমৎকার হইতো! যদি এই ব্যক্তি এবং সেই দিনের মধ্যে সুদুর ব্যবধান থাকিত। আর আল্লাহ্ তোমাদিগকে স্বীয় সত্ত্বার ভয় দেখাইতেছেন, এবং আল্লাহ্ বান্দাদের প্রতি খুব দয়াশীল।

قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

৩১। আপনি বলিয়া দিন, যদি তোমরা আল্লার সঙ্গে ভালোবাসা রাখ, তবে তোমরা আমায় অনুসরণ কর, আল্লাহ্ তোমাদিগকে ভালোবাসিবেন এবং তোমাদের যাবতীয় গুনাহ্ মা’ফ করিয়া দিবেন। আর আল্লাহ্ খুব ক্ষমাশীল বড় করুণাময়।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

আচার ব্যবহার তিন প্রকার-যথাঃ

১। বন্ধুত্বঃ কাফেরদের সহিত বন্ধুত্ব স্থাপন করা কোন অবস্থাতেই জায়েয নহে।
২। বাহিৃক সদ্ব্যবহারঃ ইহা তিন প্রকার যথাঃ (ক) প্রতিরোদের উদ্দেশ্যে (খ) সদ্ব্যবহারে কাফের মুসলমান হওয়ার সম্ভাবনা থাকিলে, (গ) কাফের মেহ্মানের সম্মানার্থে বাহিৃক সদ্ব্যবহারের অনুমতি রহিয়াছে। এতদভিন্ন ব্যক্তিগত মান-মর্যাদা বা ধন-সম্পদ লাভের উদ্দেশ্যে কাফেরের সহিত সদ্ব্যবহার জায়েয নহে। অধিকন্তু ধর্ম বিষয়ে কোন প্রকার ক্ষতির আশংকা থাকিলে উপরোক্ত সদ্ব্যবহার হারাম।
৩। সাহায্য ও উপকার করাঃ হরবী দেশে অবস্থানকারী কাফের ব্যতীত অন্যান্য কাফেরদিগের সাহায্য ও উপকার করা জায়েয। (বঃকোঃ)

قُلْ أَطِيعُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ ۖ فَإِن تَوَلَّوْا فَإِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْكَافِرِينَ

৩২। আপনি বলিয়া দিন, তোমরা অনুসরণ কর আল্লাহ্ ও রাসুলের। অতঃপর যদি তাহারা ফিরিয়া যায়, তবে (শুনিয়া রাখুক) আল্লাহ্ তা‘আলা কাফিরদের সহিত ভালোবাসা রাখেন না।

إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَىٰ آدَمَ وَنُوحًا وَآلَ إِبْرَاهِيمَ وَآلَ عِمْرَانَ عَلَى الْعَالَمِينَ

৩৩। নিশ্চয়, আল্লাহ্ মনোনীত করিয়াছেন (নুবুওয়্যাতের জন্য) আদমকে, নূহকে এবং ইব্রাহীমের সন্তানগণকে ও এমরানের সন্তানদিগকে বিশ্বজগতের উপর।

ذُرِّيَّةً بَعْضُهَا مِن بَعْضٍ ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

৩৪। তাঁহারা এক অন্যের সন্তান। আর আল্লাহ্ খুব শ্রবণকারী, মহা জ্ঞানী।

إِذْ قَالَتِ امْرَأَتُ عِمْرَانَ رَبِّ إِنِّي نَذَرْتُ لَكَ مَا فِي بَطْنِي مُحَرَّرًا فَتَقَبَّلْ مِنِّي ۖ إِنَّكَ أَنتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

৩৫। যখন এমরান পত্নী নিবেদন করিল, হে আমার রব আমি মান্নত করিয়াছি আপনার জন্য এই সন্তান যাহা আমার উদরে রহিয়াছে, তাহাকে আযাদ রাখা হইবে। সুতরাং আপনি আমা হইতে গ্রহণ করুন। নিশ্চয়ই, আপনি খুব শ্রবণকারী, মহা জ্ঞানী।

فَلَمَّا وَضَعَتْهَا قَالَتْ رَبِّ إِنِّي وَضَعْتُهَا أُنثَىٰ وَاللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا وَضَعَتْ وَلَيْسَ الذَّكَرُ كَالْأُنثَىٰ ۖ وَإِنِّي سَمَّيْتُهَا مَرْيَمَ وَإِنِّي أُعِيذُهَا بِكَ وَذُرِّيَّتَهَا مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ

৩৬। অনন্তর যখন সে কন্যা প্রসব করিল, বলিল, হে আমার প্রভু! আমি তো কন্যা প্রসব করিয়াছি। অথচ আল্লাহ্ সমধিক জানেন যাহা সে প্রসব করিয়াছে। আর সেই ছেলে (যাহা তিনি কামনা করিয়াছিলেন) এই কন্যার সমকক্ষ নহে। আর আমি এই কন্যার নাম মারইয়াম রাখিলাম। আর আমি উহাকে ও উহার সন্তানগণকে আপনার আশ্রয়ে সমর্পণ করিতেছি বিতাড়িত শয়তান হইতে।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১। এমরানের পত্নীর নাম ‘হান্না’ ইনি হযরত মারইয়ামের মা ও ঈসা (আঃ) এর নানী। (মুঃকোঃ)
২। সেকালে পুত্র সন্তানকে পার্থিব কাজ হইতে মুক্ত রাখিয়া বাইতুল মুকাদ্দাসের জন্য মান্নত করা জায়েয ছিল, হান্নাও তাহার গর্ভস্থ শিশুকে তদ্রুপ মান্নত করিলেন, আশা ছিল, এই উছিলায় আল্লাহ্ পুত্র সন্তান দান করিবেন। (বঃকোঃ)
৩। মারইয়াম ভূমিষ্ঠ হইলে তাঁহার মা ধারনা করিলেন, তাঁহার মান্নত কবূল হয় নাই। কেননা, বাইতুল মুকাদ্দাসের খেদমতের জন্য মেয়ে-সন্তান কবুল করা হইত না। অবশেষে বিবি হান্না স্বপ্নযোগে অবগত হইলেন, মারইয়ামকে কবুল করা হইয়াছে। তাই তিনি মারইয়ামকে মসজিদে উপস্থিত করিয়া স্বপ্ন বৃত্তান্ত জানাইলেন। ইহাতে সকলে তাঁহাকে মসজিদে রাখিতে সম্মত হইলেন। তাঁহার খালু হযরত যাকারিয়া (আঃ) তাঁহাকে লালন-পালন করিতে লাগিলেন। (বঃকোঃ)

فَتَقَبَّلَهَا رَبُّهَا بِقَبُولٍ حَسَنٍ وَأَنبَتَهَا نَبَاتًا حَسَنًا وَكَفَّلَهَا زَكَرِيَّا ۖ كُلَّمَا دَخَلَ عَلَيْهَا زَكَرِيَّا الْمِحْرَابَ وَجَدَ عِندَهَا رِزْقًا ۖ قَالَ يَا مَرْيَمُ أَنَّىٰ لَكِ هَـٰذَا ۖ قَالَتْ هُوَ مِنْ عِندِ اللَّهِ ۖ إِنَّ اللَّهَ يَرْزُقُ مَن يَشَاءُ بِغَيْرِ حِسَابٍ

৩৭। অনন্তর তাঁহাকে তাঁহার প্রতিপালক উত্তমরূপে গ্রহণ করিলেন। আর উত্তমরূপে তাঁহার পরিবর্ধন সমাধা করিলেন এবং যাকারিয়াকে তাঁহার অভিভাবক করিয়া দিলেন। যখনই যাকারিয়া উত্তম প্রকোষ্ঠে তাঁহার নিকট আসিতেন, তখন তাঁহার নিকট পানাহারের বস্তুসমূহ পাইতেন; এইরূপ বলিতেন, হে মারইয়াম! এই খাদ্যগুলি তোমার জন্য কোথা হইতে আসিয়াছে? তিনি বলিতেন, ইহা আল্লাহর নিকট হইতে আসিয়াছে। নিশ্চয়, আল্লাহ্ তা‘আলা যাহাকে ইচ্ছা অধিকার বিহনে রেযেক প্রদান করেন।

هُنَالِكَ دَعَا زَكَرِيَّا رَبَّهُ ۖ قَالَ رَبِّ هَبْ لِي مِن لَّدُنكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً ۖ إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاءِ

৩৮। তখন যাকারিয়া প্রার্থনা করিলেন স্বীয় প্রভূর নিকট, বলিলেন, হে আমার রব! দান করুন আমাকে খাছ আপনার নিকট হইতে কোন উত্তম সন্তান; নিশ্চয়, আপনি খুব প্রার্থনা শ্রবণকারী।

فَنَادَتْهُ الْمَلَائِكَةُ وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي فِي الْمِحْرَابِ أَنَّ اللَّهَ يُبَشِّرُكَ بِيَحْيَىٰ مُصَدِّقًا بِكَلِمَةٍ مِّنَ اللَّهِ وَسَيِّدًا وَحَصُورًا وَنَبِيًّا مِّنَ الصَّالِحِينَ

৩৯। ইতঃপর তাঁহাকে ফেরেশতাগণ ডাকিয়া বলিলেন–যখন তিনি মেহেরাবে দাঁড়াইয়া নামায পড়িতেছিলেন– আল্লাহ্ আপনাকে সুসংবাদ দিতেছেন ইয়হইয়ার; তাঁহার অবস্থা এই হইবে যে, তিনি সমর্থনকারী হইবেন ‘কালেমাতুল্লাহর’ (নুবুওয়্যাতে ঈসার) এবং সরদার হইবেন এবং স্বীয় প্রবৃত্তিকে খুব দমনকারী হইবেন আর নবীও হইবেন এবং উচ্চস্তরের সুসভ্যও হইবেন।

قَالَ رَبِّ أَنَّىٰ يَكُونُ لِي غُلَامٌ وَقَدْ بَلَغَنِيَ الْكِبَرُ وَامْرَأَتِي عَاقِرٌ ۖ قَالَ كَذَ‌ٰلِكَ اللَّهُ يَفْعَلُ مَا يَشَاءُ

৪০। যাকারিয়া আরয করিলেন, হে আমার রব! আমার পুত্র হইবে কি করিয়া? অথচ আমার বার্ধক্য উপস্থিত হইয়াছে আর আমার স্ত্রীও সন্তান প্রসবের যোগ্য রহে নাই। আল্লাহ্ বলিলেন, এই অবস্থাতেই পুত্র হইবে, কেননা, আল্লাহ্ যাহা চান করেন।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১। হযরত যাকারিয়া নিঃসন্তান ছিলেন। বার্ধক্যে সন্তান হওয়া নিয়ম-বিরুদ্ধ। তাই আল্লাহ্ তা‘আলার হুযুরে সন্তান প্রার্থনা করার সাহস করিতেন না কিন্তু মারইয়মের নিকট অ-মৌসুমী ফল আসিতে দেখিয়া তাঁহার আশা হইল, আমিও অসময়ে সন্তান লাভ করিতে পারি। অতএব, তিনি সন্তানের জন্য প্রার্থনা করিলেন। (মুঃকোঃ)
২। অর্থাৎ, হযরত ইয়াহইয়া ভূমিষ্ট হইয়া বলিবেন, হযরত ঈসা সত্য পয়গম্বর এবং তিনি পিতার মাধ্যস্থতা ব্যতীত শুধু আল্লাহর হুকুমেই সৃজিত হইয়াছেন। (মুঃকোঃ)
৩। অর্থাৎ, হযরত যাকারিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, হে প্রভূ! আমাকে পুনরায়যৌবন দান করিবেন, না এই বার্ধকোই সন্তান দান করিবেন? এরশাদ হইল, এই অবস্থায়ই পুত্র দিব। কেননা, আল্লাহ্ তা‘আলা যাহা চাহেন, করেন। (মুঃকোঃ)

قَالَ رَبِّ اجْعَل لِّي آيَةً ۖ قَالَ آيَتُكَ أَلَّا تُكَلِّمَ النَّاسَ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ إِلَّا رَمْزًا ۗ وَاذْكُر رَّبَّكَ كَثِيرًا وَسَبِّحْ بِالْعَشِيِّ وَالْإِبْكَارِ

৪১। তিনি আরয করিলেন, হে আমার রব! আমার জন্য কোন লক্ষণ নির্ধারণ করুন। আল্লাহ্ বলিলেন, তোমার লক্ষন ইহাই যে, তুমি মানুষের সহিত কথা বলিতে সমর্থ হইবে না তিন দিন পর্যন্ত ইশারা ব্যতীত। আর স্বীয় প্রভূর প্রচুর পরিমাণে যেকের করিও আর তাসবীহ পাঠ করিও অপরাহ্নেও পূর্বাহ্নেও।

وَإِذْ قَالَتِ الْمَلَائِكَةُ يَا مَرْيَمُ إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَاكِ وَطَهَّرَكِ وَاصْطَفَاكِ عَلَىٰ نِسَاءِ الْعَالَمِينَ

৪২। আর যখন ফেরেশতাগণ বলিলেন, হে মারইয়াম! নিশ্চয়, আল্লাহ্ তোমাকে মনোনীত করিয়াছেন এবং পবিত্র করিয়াছেন এবং নির্বাচিত করিয়াছেন বিশ্বজগতের নারীগণের মোকাবেলায়।

يَا مَرْيَمُ اقْنُتِي لِرَبِّكِ وَاسْجُدِي وَارْكَعِي مَعَ الرَّاكِعِينَ

৪৩। হে মারইয়াম! আনুগত্য করিতে থাকো স্বীয় রবের এবং সেজদা করিতে থাক, আর রুকু করিতে থাক রুকুকারীদের সঙ্গে।

ذَ‌ٰلِكَ مِنْ أَنبَاءِ الْغَيْبِ نُوحِيهِ إِلَيْكَ ۚ وَمَا كُنتَ لَدَيْهِمْ إِذْ يُلْقُونَ أَقْلَامَهُمْ أَيُّهُمْ يَكْفُلُ مَرْيَمَ وَمَا كُنتَ لَدَيْهِمْ إِذْ يَخْتَصِمُونَ

৪৪। এই ইতিবৃত্ত গায়েবী সংবাদসমূহের অন্যতম, আমি ইহার ওহী প্রেরণ করিতেছি আপনার নিকট। আপনি তখন তাহাদের নিকট ছিলেন না, যখন তাহারা স্ব স্ব কলমসমূহ নিক্ষেপ করিতেছিল এই উদ্দেশ্যে যে, তাহদের মধ্যে কোন ব্যক্তি মারইয়মের প্রতিপালন করিবে। আর আপনি তখনও তাহাদের নিকট ছিলেন না, যখন তাহারা পরস্পর মতবিরোধ করিতেছিল।

إِذْ قَالَتِ الْمَلَائِكَةُ يَا مَرْيَمُ إِنَّ اللَّهَ يُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٍ مِّنْهُ اسْمُهُ الْمَسِيحُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ وَجِيهًا فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَمِنَ الْمُقَرَّبِينَ

৪৫। (ঐ সময়কে স্মরণ কর) যখন ফেরেশতাগণ বলিলেন, হে মারইয়াম! নিশ্চয়, আল্লাহ্ তোমাকে সু-সংবাদ দিতেছেন একটি কলেমার যাহা আল্লাহর তরফ হইতে হইবে। তাঁহার নাম হইবে মাসীহ্ ঈসা-ইবনে মারইয়াম। সম্মানিত হইবেন ইহলোকে এবং পরলোকে এবং সান্নিধ্য প্রাপ্তগণের অন্তর্ভূক্ত হইবেন।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১। হযরত ইয়াহইয়া যখন স্বীয় মাতৃগর্ভে পয়দা হন, তখন হযরত যাকারিয়ার বয়স ছিল ১০০ বৎসর, আর তাঁহার স্ত্রীর বয়স বয়স ছিল ৯৮ বৎসর। (মুঃকোঃ)
২। মারইয়ামের মাতা স্বীয় স্বপ্ন-বৃত্তান্ত বর্ণনা করিলে বাইতুল মুকাদ্দাসের তাপসগণ সকলেই মারইয়ামের প্রতি পালনের ভার গ্রহণের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করিরলেন। অবশেষে সাব্যস্ত হইল, প্রত্যেকে নিজ নিজ কলম-যাহা দ্বারা তাওরাত লিখা হইত, প্রবাহিত পানিতে নিক্ষেপ করিবেন। তাহাই করা হইল। সকলের কলম ভাটির দিকে বহিয়া চলিল, কিন্তু হযরত যাকারিয়ার কলম উজাইয়া আসিল। সুতরাং তিনিই মারইয়ামের প্রতিপালনের ভার প্রাপ্ত হইলেন। (বঃকোঃ)

وَيُكَلِّمُ النَّاسَ فِي الْمَهْدِ وَكَهْلًا وَمِنَ الصَّالِحِينَ

৪৬। আর মানুষের সহিত কথা বলিবেন দোলনার মধ্যে এবং প্রাপ্তবয়সে এবং সুসভ্য লোকদের অন্তর্ভূক্ত হইবেন।

قَالَتْ رَبِّ أَنَّىٰ يَكُونُ لِي وَلَدٌ وَلَمْ يَمْسَسْنِي بَشَرٌ ۖ قَالَ كَذَ‌ٰلِكِ اللَّهُ يَخْلُقُ مَا يَشَاءُ ۚ إِذَا قَضَىٰ أَمْرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُ كُن فَيَكُونُ

৪৭। মারইয়াম বলিলেন, হে আমার রব! কিরূপে আমার সন্তান হইবে? অথচ কোন মানুষ আমাকে স্পর্শ নাই! আল্লাহ্ বলিলেন, এইরূপেই হইবে, আল্লাহ্ যাহা ইচ্ছা করেন, সৃষ্টি করিয়া দেন। যখন কোন কার্যকে পূর্ণ করিতে ইচ্ছা করেন, তখন উহাকে বলেন, হইয়া যাও, ব্যাস উহা হইয়া যাও।

وَيُعَلِّمُهُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَالتَّوْرَاةَ وَالْإِنجِيلَ

৪৮। আর আল্লাহ্ তাঁহাকে শিক্ষা দিবেন কিতাব এবং জ্ঞানগর্ভ কথা এবং তাওরাত ও ইঞ্জীল ।

وَرَسُولًا إِلَىٰ بَنِي إِسْرَائِيلَ أَنِّي قَدْ جِئْتُكُم بِآيَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ ۖ أَنِّي أَخْلُقُ لَكُم مِّنَ الطِّينِ كَهَيْئَةِ الطَّيْرِ فَأَنفُخُ فِيهِ فَيَكُونُ طَيْرًا بِإِذْنِ اللَّهِ ۖ وَأُبْرِئُ الْأَكْمَهَ وَالْأَبْرَصَ وَأُحْيِي الْمَوْتَىٰ بِإِذْنِ اللَّهِ ۖ وَأُنَبِّئُكُم بِمَا تَأْكُلُونَ وَمَا تَدَّخِرُونَ فِي بُيُوتِكُمْ ۚ إِنَّ فِي ذَ‌ٰلِكَ لَآيَةً لَّكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ

৪৯। আর তাঁহাকে বনী ইসরাঈলের প্রতি ( পয়গম্বর করিয়া) প্রেরণ করিবেন, আমি তোমাদের নিকট প্রভূ হইতে (স্বীয় নুবুওয়্যাতের) যথেষ্ট প্রমাণ লইয়া আসিয়াছি তাহা এই যে, আমি তোমাদের জন্য কাদার দ্বারা এইরূপ আকার গঠন করি যেমন পক্ষীর আকৃতি হইয়া থাকে। অতঃপর উহাতে ফুৎকার দেই, তাহাতে উহা পক্ষী হইয়া যায় আল্লাহর আদেশে। আর আমি আরোগ্য করি জন্মান্ধকে এবং কুষ্ঠ রোগীকে এবং জীবিত করি মৃতকে আল্লাহর আদেশে। আর তোমাদিগকে বলিয়া দেই, যাহাকিছু নিজেদের ঘরে খাও এবং যাহা রাখিয়া আস। নিশ্চয়, ইহার মধ্যে তোমাদের জন্য যথেষ্ট প্রমাণ আছে যদি তোমরা ঈমান আনিতে চাও।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১। অর্থাৎ, নুবুওয়্যাতের নিদর্শন স্বরুপ তাঁহাকে এই মু’জেযা দেওয়া হইবে যে, মাত্র কয়েক দিনের শিশু বয়স্ক লোকের ন্যায় জ্ঞানগর্ভ কথা বলিবেন। (মুঃকোঃ)
২। হযরত ঈসা মাটি দ্বারা চামচিকার আকৃতি প্রস্তুত করিয়া উহার মুখে আল্লাহর নামে ফুঁ দেওয়া মাত্র উহা উড়িয়া যাইত। (মুঃকোঃ)
৩। হযরত ঈসা(আঃ) জন্মান্ধ লোকের চোখে এবং শ্বেত-কুষ্ঠ রোগীর দেহে আল্লাহর নাম লইয়া হাত মুছিয়া দিলে তাহারা আরোগ্য লাভ করিত। ঔষধ ব্যবহারে বা স্বাভাবিক উপায়ে জন্মান্ধতা এবং শ্বেত-কুষ্ঠ রোগ ভালো হইতে পারে। কিন্তু ঔষধ স্বাভাবিক উপায় ব্যতীত আরোগ্য লাভ করিলে উহাকে মু’জেযা বলা হয়। (বঃকোঃ)

وَمُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَلِأُحِلَّ لَكُم بَعْضَ الَّذِي حُرِّمَ عَلَيْكُمْ ۚ وَجِئْتُكُم بِآيَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ

৫০। আর আমি আসিয়াছি আমার পূর্ববর্তী কিতাব তাওরাতের সমর্থনকারীরূপে, আর এই জন্য আসিয়াছি যে, হালাল করিয়া দিব তোমাদের জন্য কতিপয় এমন বস্তু যাহা তোমাদের প্রতি হারাম করা হইয়াছিল। আর আমি তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে (নুবুওয়্যাতের) প্রমাণ লইয়া তোমাদের নিকট আসিয়াছি। মোটকথা, তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর, আর আমার কথা মানিয়া লও।

إِنَّ اللَّهَ رَبِّي وَرَبُّكُمْ فَاعْبُدُوهُ ۗ هَـٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيمٌ

৫১। নিশ্চয়, আল্লাহ্ আমারও রব তোমাদেরও রব! সুতরাং তোমরা তাঁহার এবাদত কর; ইহাই সরল পথ।

فَلَمَّا أَحَسَّ عِيسَىٰ مِنْهُمُ الْكُفْرَ قَالَ مَنْ أَنصَارِي إِلَى اللَّهِ ۖ قَالَ الْحَوَارِيُّونَ نَحْنُ أَنصَارُ اللَّهِ آمَنَّا بِاللَّهِ وَاشْهَدْ بِأَنَّا مُسْلِمُونَ

৫২। অনন্তর যখন ঈসা তোমাদের মধ্যে কুফর দেখিতে পাইলেন, তখন তিনি বলিলেন,এমনও কেহ আছে কি, যে আমার সাহায্যকারী হইবে আল্লাহ্র পথে? হাওয়ারীগণ বলিল, আমরাই আল্লার সাহায্যকারী হইব। আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনিলাম। আর আপনি একথার সাক্ষী থাকুন যে, আমরা ফরমাবরদার।

رَبَّنَا آمَنَّا بِمَا أَنزَلْتَ وَاتَّبَعْنَا الرَّسُولَ فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِينَ

৫৩। হে আমাদের রব! আমরা ঈমান আনিয়াছি উহার প্রতি যাহা আপনি নাযিল করিয়াছেন, আর আনুগত্য অবলম্বন করিয়াছি আমরা রসুলের, সুতরাং আমাদিগকে তাহাদের সঙ্গে লিপিবদ্ধ করুন, যাহারা সমর্থনকারী।

وَمَكَرُوا وَمَكَرَ اللَّهُ ۖ وَاللَّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ

৫৪। আর তাহারা গোপন ষড়যন্ত্র করিল এবং আল্লাহ্ গোপন কৌশল করিলেন। আর আল্লাহ্ শ্রেষ্ঠতম কৌশলী।

إِذْ قَالَ اللَّهُ يَا عِيسَىٰ إِنِّي مُتَوَفِّيكَ وَرَافِعُكَ إِلَيَّ وَمُطَهِّرُكَ مِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا وَجَاعِلُ الَّذِينَ اتَّبَعُوكَ فَوْقَ الَّذِينَ كَفَرُوا إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ ۖ ثُمَّ إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأَحْكُمُ بَيْنَكُمْ فِيمَا كُنتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ

৫৫। যখন আল্লাহ্ বলিলেন, হে ঈসা! নিশ্চয়, আমি তোমাকে মৃত্যু দান করিব এবং তোমাকে (আপাততঃ) নিজের দিকে উঠাইয়া লইতেছি এবং আমি তোমাকে ঐসকল লোক হইতে পবিত্র করিব যাহারা প্রত্যাখ্যান করে। আর যাহারা তোমার কথা মানে তাহাদিগকে বিজয়ী করিব উহাদের উপর যাহারা প্রত্যাখ্যানকারী, কিয়ামতদিবস পর্যন্ত। অতঃপর আমরাই দিকে হইবে সকলের প্রত্যাবর্তন। তৎপর আমি তোমাদের মধ্যে মীমাংসা করিয়া দিব ঐ সমস্ত বিষয়ে যাহাতে তোমরা পরস্পর মতভেদ করিতেছিলে।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১। হযরত ঈসা (আঃ) যখন বুঝিতে পারিলেন যে, ইহুদীরা আমার দ্বীন কবুল করিবে না, তখন তিনি মিসরে পলাইয়া গেলেন এবং একদল “হাওয়ারীকে” নিজের ধর্মে দ্বীক্ষিত করিলেন। “হাওয়ারী” অর্থ ধোপা। ইহারাই হযরত ঈসার সাহায্য কারী হইয়াছিলেন। (মুঃকোঃ)
২। ইহুদীরা হযরত ঈসা (আঃ) কে গেরেফতার করিয়া একটি গৃহে আবদ্ধ করিয়া রাখিল। পরদিন ভোরে তাঁহাকে ঘর হইতে বাহির করিয়া আনার জন্য এক ব্যক্তিকে পাঠান হইল। অবশ্য পূর্ব-রাত্রিতেই আল্লাহ্ ঈসাকে আসমানে উঠাইয়া নিয়াছিলেন। সুতরাং প্রেরিত লোকটি ঈসাকে না পাইয়া সংবাদ দিতে আসিল-ঈসা নাই। কিন্তু আল্লাহ্ তা‘আলা তাহার আকৃতি অবিকল ঈসার আকৃতি করিয়া দিলেন; সে বাহিরে আসিতেই সকলে তাহাকে ধরিল। অবশেষে তাহাকে শূলে চড়াইয়া ও পাথর মারিয়া হত্যা করিয়া ফেলিল। এই হইল তাহাদের ষড়যন্ত্রের শাস্তি। (মুঃকোঃ)

فَأَمَّا الَّذِينَ كَفَرُوا فَأُعَذِّبُهُمْ عَذَابًا شَدِيدًا فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَمَا لَهُم مِّن نَّاصِرِينَ

৫৬। সুতরাং যাহারা কাফের ছিল, বস্তুতঃ আমি তাহাদিগকে কঠোর শাস্তি প্রদান করিব ইহলোকেও এবং পরলোকেও। আর তাহাদের কোন সাহায্যকারী হইবে না।

وَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَيُوَفِّيهِمْ أُجُورَهُمْ ۗ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِينَ

৫৭। আর যাহারা মুমিন ছিল এবং নেক আমল করিয়াছিল, ফলতঃ আল্লাহ্ তাহাদিগকে তাহাদের ছওয়াব দান করিবেন। আর আল্লাহ্ যালেমদের সহিত ভালবাসা রাখেন না।

ذَ‌ٰلِكَ نَتْلُوهُ عَلَيْكَ مِنَ الْآيَاتِ وَالذِّكْرِ الْحَكِيمِ

৫৮। ইহা আমি আপনাকে পড়িয়া পড়িয়া শুনাইতেছি, যাহা প্রমাণসমূহের অর্ন্তর্ভূক্ত এবং জ্ঞানগর্ভ বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত।

إِنَّ مَثَلَ عِيسَىٰ عِندَ اللَّهِ كَمَثَلِ آدَمَ ۖ خَلَقَهُ مِن تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهُ كُن فَيَكُونُ

৫৯। নিশ্চয়, ঈসার আশ্চর্য অবস্থা আল্লাহর নিকট আদমের আশ্চর্য অবস্থার ন্যায়। তাঁহাকে মাটি দ্বারা তৈয়ার করিলেন, তৎপর তাঁহা (র-কালেব) কে বলিলেন, (সজীব) হইয়া যাও, তখনই তাহা (সজীব) হইয়া গেল।

الْحَقُّ مِن رَّبِّكَ فَلَا تَكُن مِّنَ الْمُمْتَرِينَ

৬০। এই বাস্তব ঘটনা আপনার প্রতিপালকের পক্ষ হইতে; সুতরাং আপনি সংশয়ীদের অন্তর্ভূক্ত হইবেন না।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১। অর্থাৎ, আল্লাহ্ তা‘আলা আদমকে পিতা ও মাতা ব্যতীত পয়দা করিয়াছেন। তাঁহাকে ইহারা খোদার পুত্র বলে না। আর যিনি শুধু পিতা ব্যতীত পয়দা হইয়াছেন তাঁহাকে কেমন করিয়া খোদার পুত্র বলিতেছে? আল্লাহ্ তো মাতা-পিতা উভয়কে ব্যতীতই মানুষ পয়দা করিবার ক্ষমতা রাখেন, তবে শুধু পিতা ছাড়া পয়দা করাতে আশ্চর্যের কি আছে? (মুঃকোঃ)
২। নাছারারা হুযুরের (দঃ) সহিত এ বিষয়ে ঝগড়া করিতেছিল যে, হযরত ঈসা (আঃ) আল্লাহর বান্দা নহে বরং আল্লাহর পুত্র। আর যদি ঈসা আল্লাহর পুত্র না হন, তবে আপনিই বলুন কাহার পুত্র? দুনিয়াতে কি পিতা ব্যতীত কাহারও জন্ম হইতে পারে? ইহারই উত্তরে এই আয়াতটি নাযিল হয়। (মুঃকোঃ)

فَمَنْ حَاجَّكَ فِيهِ مِن بَعْدِ مَا جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَاءَنَا وَأَبْنَاءَكُمْ وَنِسَاءَنَا وَنِسَاءَكُمْ وَأَنفُسَنَا وَأَنفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَل لَّعْنَتَ اللَّهِ عَلَى الْكَاذِبِينَ

৬১। অতএব, যে-ব্যক্তি ঈসা সম্বন্ধে আপনার সহিত বিতর্ক করে, আপনার নিকট জ্ঞান আসিবার পর, তবে আপনি বলিয়া দিন, আস আমরা ডাকিয়া লই আমাদের সন্তানগণকে এবং তোমাদের সন্তানগণকে, আর আমাদের নারীগণকে ও তোমাদের নারীগণকে এবং আমাদিগকে এবং স্বয়ং তোমাদিগকে, অতঃপর আমরা খুব আন্তরিকতার সহিত এইরূপে প্রার্থনা করি যে, আল্লাহর লা‘নত দেই অসত্যপন্থীদের উপর।

إِنَّ هَـٰذَا لَهُوَ الْقَصَصُ الْحَقُّ ۚ وَمَا مِنْ إِلَـٰهٍ إِلَّا اللَّهُ ۚ وَإِنَّ اللَّهَ لَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

৬২। নিশ্চয়, এই সব যাহাকিছু বর্ণিত (হইল) ইহাই সত্য বিবরণ। আর কেহই নাই মা’বুদ হওয়ার যোগ্য আল্লাহ্ ব্যতীত। আর নিঃসন্দেহে, আল্লাহ্ই পরাক্রমশালী, মহা জ্ঞানী।

فَإِن تَوَلَّوْا فَإِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِالْمُفْسِدِينَ

৬৩। ইতঃপর যদি তাহারা বিমূখ থাকে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ্ খুব জানেন অশান্তিকারীদের।

قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا إِلَىٰ كَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلَّا نَعْبُدَ إِلَّا اللَّهَ وَلَا نُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا وَلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللَّهِ ۚ فَإِن تَوَلَّوْا فَقُولُوا اشْهَدُوا بِأَنَّا مُسْلِمُونَ

৬৪। আপনি বলুন, হে আহলে কিতাব! আস, এমন এক কথার দিকে, যাহা আমাদের ও তোমাদের মধ্যে (স্বীকার্য হওয়ার দিক দিয়া) সমান। (তাহা এই) আমরা এবাদত করিব না আল্লাহ্ ব্যতীত কাহারও এবং আল্লাহর সহিত কাহাকেও অংশী স্থির করিব না এবং স্থির করিব না আমাদের মধ্যে হইতে কেহ অন্য কাহাকেও রব আল্লাহ্কে পরিত্যাগ করিয়া। ইতঃপর যদি তাহারা বিমুখ থাকে, তবে তোমরা বলিয়া দাও, তোমরা এই সাক্ষী থাকও যে, আমরা মান্যকারী।

يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لِمَ تُحَاجُّونَ فِي إِبْرَاهِيمَ وَمَا أُنزِلَتِ التَّوْرَاةُ وَالْإِنجِيلُ إِلَّا مِن بَعْدِهِ ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ

৬৫। হে আহলে কিতাব! কেন বিতর্ক করিতেছ ইব্রাহীম সম্বন্ধে? অথচ নাযিল করা হয় নাই তাওরাত এবং ইঞ্জীল- কিন্তু তাঁহার পর; তবুও কি তোমরা বুঝ না?

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১। হুযুর (দঃ) নাজরানের খৃষ্টানদিগকে ইসলামের দাওয়াত দিয়া বলিয়া পাঠাইলেন যে, হয় ইসলাম গ্রহণ কর, নতুবা জিযিয়া কর দাও, অন্যথায় যুদ্ধ কর। কিন্তু তাহারা ধর্ম সম্বন্ধে বিতর্ক করার জন্য শুরাহ্বীলের নেতৃত্ব তিনজন আলেমকে পাঠাইল। হযরত ঈসা সম্বন্ধেও আলোচনা হইল। তাহারা হুযুরের কোন দলীর-প্রমাণই মানিল না। এ সম্বন্ধে আল্লাহ্ এই আয়াতটি নাযিল করিলেন। হুযুর (দঃ) তাহাদিগকে বলিলেন, তোমরা যখন আমার কোন কথাই বিশ্বাস করিলে না, অতএব, চল আয়াতের মর্মানুসারে আমরা উভয় পক্ষ সপরিবারে মিথ্যাবাদীর উপর আল্লাহর অভিসম্পাদের প্রার্থনা করি। হুযুর (দঃ) কন্যা, জামাতা ও দৌহিত্রদ্বয়কে সঙ্গে লইয়া মোবাহালার জন্য প্রস্তুত হইলেন। শুরাহবীল ইহা দেখিয়া সঙ্গীদেরকে বলিলেন, তোমরা জান ইনি সত্য নবী, নবীর সঙ্গে মোবাহালা করিলে আমাদের ধ্বংস অনিবার্য। অতএব, আমরা তাঁহার সঙ্গে আপোষ করি। পরিশেষে জিযিয়া প্রদানে সম্মত হইয়া তাহারা সন্ধি করিল। (মুঃকোঃ)

هَا أَنتُمْ هَـٰؤُلَاءِ حَاجَجْتُمْ فِيمَا لَكُم بِهِ عِلْمٌ فَلِمَ تُحَاجُّونَ فِيمَا لَيْسَ لَكُم بِهِ عِلْمٌ ۚ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ

৬৬। হাঁ, তোমরা এমন যে, এইরূপ বিষয়ে তো তর্ক-বিতর্ক করিয়াইছিলে, যাহাতে তোমাদের কথঞ্চিত জ্ঞান ছিল। কিন্তু এমন বিষয়ে কেন তর্ক-বিতর্ক করিতেছ যাহাতে তোমাদের মোটেই জ্ঞান নাই? আর আল্লাহ্ তা‘আলা জানেন অথচ তোমরা জান না।

مَا كَانَ إِبْرَاهِيمُ يَهُودِيًّا وَلَا نَصْرَانِيًّا وَلَـٰكِن كَانَ حَنِيفًا مُّسْلِمًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ

৬৭। ইব্রাহীম ইহুদীও ছিলেন না এবং নাছারাও ছিলেন না; বরং (নিশ্চয়) সরলপন্থী (অর্থাৎ) মুসলমান ছিলেন; এবং মুশরিকদের অন্তর্গত ছিলেন না।

إِنَّ أَوْلَى النَّاسِ بِإِبْرَاهِيمَ لَلَّذِينَ اتَّبَعُوهُ وَهَـٰذَا النَّبِيُّ وَالَّذِينَ آمَنُوا ۗ وَاللَّهُ وَلِيُّ الْمُؤْمِنِينَ

৬৮। নিশ্চয়, মানুষের মধ্যে ইব্রাহীমের সঙ্গে সর্বপেক্ষা অধিক বৈশিষ্ট্য রক্ষাকারী নিশ্চিতরূপে তাহারাই ছিল, যাহারা তাঁহার অনুসরণ করিয়াছিল, আর এই নবী (মোহাম্মদ দঃ) এবং এই মু’মিনগণ (উম্মতে মোহাম্মাদী)। আর আল্লাহ্ তা‘আলা মু’মিনদের সাহায্যকারী।

وَدَّت طَّائِفَةٌ مِّنْ أَهْلِ الْكِتَابِ لَوْ يُضِلُّونَكُمْ وَمَا يُضِلُّونَ إِلَّا أَنفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ

৬৯। অন্তরের সহিত কামনা করে আহলে কিতাবদের এক দল, যেন তোমাদিগকে পথভ্রষ্ট করিয়া দেয়; আর তাহারা কাহাকেও বিপথগামী করিতে পারে না কিন্তু নিজেরাই নিজদিগকে (বিভ্রান্তির শাস্তিতে নিপতিত করিতেছ); অথচ তাহারা খবর রাখে না।

يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لِمَ تَكْفُرُونَ بِآيَاتِ اللَّهِ وَأَنتُمْ تَشْهَدُونَ

৭০। হে আহলে কিতাব! কেন কুফর করিতেছ আল্লাহর আয়াতসমূহের সঙ্গে? অথচ তোমরা স্বীকার করিতেছ।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১। ইহুদীরা বলিত, ইব্রাহীম (আঃ) ইহুদী ছিলেন, নাছারারা বলিত, নাছারা ছিলেন। আল্লাহ্ বলেন, তাওরাত ও ইঞ্জীল ইব্রাহীম (আঃ) এর অনেক পরে নাযিল হইয়াছে। অতএব, তিনি পরবর্তী নবীদের ধর্মালম্বী কেমন করিয়া হইবেন? (মুঃকোঃ)
২। তোমাদের কিতাবে ইব্রাহীম সম্বন্ধে বর্ণনা নাই যে, তিনি ইহুদী ছিলেন কি নাছারা ছিলেন, সুতরাং তোমরা জ্ঞাত নও যে, তিনি কোন ধর্মবলম্বী ছিলেন, তবে কেন অজ্ঞাত বিষয় লইয়া তর্ক করিতেছ? (সুঃকোঃ)
৩। তোমরা স্বীকার কর যে, তাওরাত ও ইঞ্জীল আল্লাহর কিতাব, তবে উহাতে আখেরী যমানার নবী মোহাম্মদ (দঃ) এর যে পরিচয় রহিয়াছে কেমন করিয়া উহা অবিশ্বাস করিতেছ? (মুঃকোঃ)

يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لِمَ تَلْبِسُونَ الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُونَ الْحَقَّ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ

৭১। হে আহলে কিতাব! কেন মিশ্রিত করিতেছ বাস্তবকে অবাস্তবের সঙ্গে, আর (কেন) গোপন করিতেছ সত্যকে? অথচ তোমরা জান।

وَقَالَت طَّائِفَةٌ مِّنْ أَهْلِ الْكِتَابِ آمِنُوا بِالَّذِي أُنزِلَ عَلَى الَّذِينَ آمَنُوا وَجْهَ النَّهَارِ وَاكْفُرُوا آخِرَهُ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ

৭২। আর আহলে কিতাবদের কেহ কেহ (মুসলমানদিগকে তাহাদের স্বীয় ধর্ম হইতে বিচ্যুত করার উদ্দেশ্যে বলিল যে, ঈমান আন উহার প্রতি যাহা নাযিল করা হইয়াছে মুসলমানদের উপর, দিনের প্রথমাংশে এবং প্রত্যাখ্যান করিয়া বস দিনের শেষ ভাগে। বিচিত্র নহে যে, তাহারা (স্বীয় ধর্ম হইতে) ফিরিয়া যাইবে।

وَلَا تُؤْمِنُوا إِلَّا لِمَن تَبِعَ دِينَكُمْ قُلْ إِنَّ الْهُدَىٰ هُدَى اللَّهِ أَن يُؤْتَىٰ أَحَدٌ مِّثْلَ مَا أُوتِيتُمْ أَوْ يُحَاجُّوكُمْ عِندَ رَبِّكُمْ ۗ قُلْ إِنَّ الْفَضْلَ بِيَدِ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ

৭৩। এবং অন্য কাহারও সম্মুখে স্বীকার করিও না তোমাদের ধর্মের অনুসারী ব্যতীত। হে মোহাম্মদ! আপনি বলিয়া দিন, নিশ্চয়ই হেদায়েত আল্লাহর হেদায়েত। তোমরা এইরূপ ব্যবহার এই জন্য কর যে, অন্যকেও তেমন বস্তু দেওয়া হইতেছে যাহা তোমাদিগকে দেওয়া হইয়াছিল। অথবা অন্য লোক তোমাদের উপর বিজয়ী হইয়া যাইবে তোমাদের প্রতিপালকের নিকট। আপনি বলিয়া দিন, নিশ্চয় অনুগ্রহ আল্লাহরই অধিকারে। তিনি ইহা প্রদান করেন যাহাকে ইচ্ছা; আর আল্লাহ্ প্রশস্ততার মালিক, মহা জ্ঞানী।

يَخْتَصُّ بِرَحْمَتِهِ مَن يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ

৭৪। নির্দিষ্ট করিয়া দেন স্বীয় অনুগ্রহের সহিত যাহাকে ইচ্ছা। আর আল্লাহ্ তা‘আলা অতিশয় অনুগ্রহশীল।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১। অর্থাৎ, খায়বারের কতিপয় ইহুদী পরস্পর পরামর্শ করিল যে, প্রাতঃকালে কোরআনের উপর ঈমান আনিয়া সন্ধাকালে ফিরিয়া যাও এবং বল, তাওরাত কিতাবে শেষ নবীর যে-সমস্ত নিদর্শন দেখিয়াছি, মোহাম্মদের মধ্যে তাহা নাই। এই কারনেই আমরা ইসলাম গ্রহণ করিয়াও ত্যাগ করিয়াছি। এই ষড়যন্ত্রের ফলে মুসলমানরা মনে করিবে, “ইহারাও তো সত্য কিতাবেরই অনুসারী। হয়ত আমাদের ধর্মে প্রবেশ করিয়া এমন কোন ভুল পাইয়াছে, যদ্দরুন এই ধর্ম ত্যাগ করিয়াছে। হয়ত ইহার ফলে তাহারা ইসলাম ত্যাগ করিয়া ইহুদী হইয়া যাইবে। আল্লাহ্ তা‘আলা হুযুরকে ইহাদের এই ষড়যন্ত্রের কথা আয়াতটিতে জানাইয়া দিলেন। (মুঃকোঃ)

وَمِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ مَنْ إِن تَأْمَنْهُ بِقِنطَارٍ يُؤَدِّهِ إِلَيْكَ وَمِنْهُم مَّنْ إِن تَأْمَنْهُ بِدِينَارٍ لَّا يُؤَدِّهِ إِلَيْكَ إِلَّا مَا دُمْتَ عَلَيْهِ قَائِمًا ۗ ذَ‌ٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا لَيْسَ عَلَيْنَا فِي الْأُمِّيِّينَ سَبِيلٌ وَيَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ وَهُمْ يَعْلَمُونَ

৭৫। আর আহলে কিতাবদের মধ্যে কেহ এইরূপ যে, যদি তুমি তাহার নিকট রাশি রাশি ধনও গচ্ছিত রাখ, তবুও সে উহা তোমার নিকট ফিরাইয়া দিবে। আর তাহাদের কেহ এইরূপ যে, যদি তুমি তাহার নিকট একটি মাত্র দীনারও গচ্ছিত রাখ, তবে সে তাহাও তোমাকে ফিরাইয়া দিবে না যে পর্যন্ত না তুমি তাহার শিরোপরি দাঁড়াইয়া থাক। ইহা (গচ্ছিত ধন ফেরৎ না দেওয়া) এই জন্য যে-তাহারা বলে, আমাদের উপর আহলে কিতাব ছাড়া অন্য কাহারও (ধন-সম্পদ) সম্বন্ধে (ধর্মতঃ) কোনরূপ অভিযোগ নাই। এবং তাহারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে, অথচ তাহারাও জানে।

بَلَىٰ مَنْ أَوْفَىٰ بِعَهْدِهِ وَاتَّقَىٰ فَإِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِينَ

৭৬। অভিযোগ কেন হইবে না?–যে ব্যক্তি স্বীয় প্রতিশ্রুতি পূরণ করে এবং আল্লাহ্কে ভয় করে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ্ ভালোবাসেন (এমন) পরহেযগারগণকে।

إِنَّ الَّذِينَ يَشْتَرُونَ بِعَهْدِ اللَّهِ وَأَيْمَانِهِمْ ثَمَنًا قَلِيلًا أُولَـٰئِكَ لَا خَلَاقَ لَهُمْ فِي الْآخِرَةِ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ وَلَا يَنظُرُ إِلَيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

৭৭। নিশ্চয় যাহারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতির এবং স্বীয় শপথসমূহের পরিবর্তে সামান্য বিনিময় গ্রহণ করে, তাহারা পরকালে কোন অংশ পাইবে না। আর আল্লাহ্ তাহাদের সঙ্গে কথাও বলিবেন না, এবং দৃষ্টিপাতও করিবেন না তাহাদের প্রতি ক্বিয়ামত দিবসে, এবং তাহাদিগকে পবিত্রও করিবেন না, আর তাহাদের জন্য যন্ত্রণাময় শাস্তি রহিয়াছে।

وَإِنَّ مِنْهُمْ لَفَرِيقًا يَلْوُونَ أَلْسِنَتَهُم بِالْكِتَابِ لِتَحْسَبُوهُ مِنَ الْكِتَابِ وَمَا هُوَ مِنَ الْكِتَابِ وَيَقُولُونَ هُوَ مِنْ عِندِ اللَّهِ وَمَا هُوَ مِنْ عِندِ اللَّهِ وَيَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ وَهُمْ يَعْلَمُونَ

৭৮। আর নিশ্চয়, তাহাদের মধ্যে কেহ কেহ এমন যে, বক্র করে নিজেদের ভাষাকে কিতাব (পাঠ)-এর মধ্যে, যেন তোমরা উহাকে মনে কর কিতাবের অংশ, অথচ উহা কিতাবের অংশ নহে। এবং তাহারা বলে যে, ইহা আল্লাহর নিকট হইতে, অথচ ইহা (কিছুতেই) আল্লাহর নিকট হইতে নহে। আর তাহারা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে, অথচ তাহারা জানে।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১। ইহুদী আলেম আবদুল্লাহ্ ইবনে-সালাম এর নিকট কেহ বার শত ঊকিয়া স্বর্ণ আমানত রাখিয়াছিল, তিনি তাহা যথাযতভাবে ফেরৎ দিয়াছিলেন। পক্ষান্তরে ফাখ্খাছ ইবনে-আছুরা নামক ইহুদীর নিকট জনৈক মূর্খ কোরেশ একটিমাত্র দীনার আমানত রাখিয়াছিল, সে তাহা আত্মসাৎ করিয়াছিল। এই সম্বন্ধে এই আয়াতটি নাযিল হয়। (বঃকোঃ)
২। ইহুদীরা বলে, তাওরাতে বর্ণিত আছে, মূর্খ, আহ্মক ও বিধর্মীদের মাল যে কোন উপায়ে আত্মসাৎ করা জায়েয। তাহারা ইহা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলিতেছ, বরং তাহাদিক হইতে আল্লাহ্ এই ওয়াদাই লইয়াছেন যে, আমানত প্রত্যার্পণ করিবে এবং হারাম মাল হইতে দূরে থাকিবে। (বঃকোঃ)

مَا كَانَ لِبَشَرٍ أَن يُؤْتِيَهُ اللَّهُ الْكِتَابَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ ثُمَّ يَقُولَ لِلنَّاسِ كُونُوا عِبَادًا لِّي مِن دُونِ اللَّهِ وَلَـٰكِن كُونُوا رَبَّانِيِّينَ بِمَا كُنتُمْ تُعَلِّمُونَ الْكِتَابَ وَبِمَا كُنتُمْ تَدْرُسُونَ

৭৯। কোন মানুষের পক্ষে ইহা সম্ভব নহে যে, আল্লাহ্ তা‘আলা তাহাকে কিতাব এবং জ্ঞান ও নুবুওয়্যাত প্রদান করেন, অতঃপর সে লোকদিগকে বলিবেন, আমার বান্দা হইয়া যাও, আল্লাহকে ত্যাগ করিয়া! বরং সে বলিবে, তোমরা আল্লাহ্ওয়ালা হইয়া যাও, এই জন্য যে, তোমরা কিতাব শিক্ষা দাও এবং এই জন্য যে, তোমরা উহা পাঠ কর।

وَلَا يَأْمُرَكُمْ أَن تَتَّخِذُوا الْمَلَائِكَةَ وَالنَّبِيِّينَ أَرْبَابًا ۗ أَيَأْمُرُكُم بِالْكُفْرِ بَعْدَ إِذْ أَنتُم مُّسْلِمُونَ

৮০। আর একথারও নির্দেশ করিবেন না যে, তোমরা ফেরেশতাদিগকে এবং নবীদিগকে রব স্থির করিয়া লও। তিনি কি তোমাদিগকে কুফরী কথা বলিয়া দিবেন? ইহার পর যে, তোমরা মুসলমান হইয়াছ।

وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ النَّبِيِّينَ لَمَا آتَيْتُكُم مِّن كِتَابٍ وَحِكْمَةٍ ثُمَّ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مُّصَدِّقٌ لِّمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنصُرُنَّهُ ۚ قَالَ أَأَقْرَرْتُمْ وَأَخَذْتُمْ عَلَىٰ ذَ‌ٰلِكُمْ إِصْرِي ۖ قَالُوا أَقْرَرْنَا ۚ قَالَ فَاشْهَدُوا وَأَنَا مَعَكُم مِّنَ الشَّاهِدِينَ

৮১। আর যখন আল্লাহ্ তা‘আলা প্রতিশ্রুতি লইলেন নবীগণ হইতে যে, আমি যাহাকিছু তোমাদিগকে–কিতাব ও জ্ঞান দান করি, অতঃপর যখন তোমাদের নিকট কোন নবী আসেন, যিনি সত্যতা প্রতিপাদনকারী হন উহার যাহা তোমাদের নিকট রহিয়াছে, তখন তোমরা অবশ্য সেই রাসুলের প্রতি ঈমান আনয়ন করিও, এবং তাঁহার সাহায্যও করিবে। বলিলেন, তোমরা কি একরার করিলে এবং এই বিষয়ে আমার প্রতিশ্রুতি (নির্দেশ) কবূল করিলে? তাঁহারা (নবীগণ) বলিলেন, আমরা একরার করিলাম। (আল্লাহ্) বলিলেন, তবে সাক্ষী থাকও এবং আমি (-ও) উহার প্রতি তোমাদের সঙ্গে সাক্ষীদের অন্তর্ভূক্ত রহিলাম।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১। নাজরারের নাছারারা রাসুলুল্লাহ (দঃ) এর খেদমতে উপস্থিত হইলে তিনি তাহাদিগকে ইসলামের প্রতি আহ্বান করিলেন। উত্তরে আবু রাফেকারাযী বলিল, আপনি কি চান যে, আমরা আপনার ইবাদত করি? যদ্রুপ নাছারারা ঈসা (আঃ) এর এবাদত করিত। হুযুর (দঃ) বলিলেন, নাউযুবিল্লাহ! কখনই নহে। সেই সম্বন্ধে আয়াতটি নাযিল হয়। (লুঃনুঃ)
২। এখানে অন্যান্য মুশরিক সম্প্রদায়ের ভ্রান্ত আকীদার প্রতি ইঙ্গিত করা হইয়াছে। কারণ, তাহাদের মধ্যে কেহ ফেরেশতাকে কেহবা পয়গম্বরকে আবার কেহ কেহ কোন মহান ব্যক্তি বা বস্তুকে এবাদতের যোগ্য বলিয়া বিশ্বাস করে। (বঃকোঃ)
৩। এই প্রতিশ্রুতি প্রথমে আলমে আরউয়াহের মধ্যে লওয়া হইয়াছে, তৎপর পুনরায় ওহীর সাহায্যে দুনিয়াতেও লওয়া হইয়াছে। (বঃকোঃ)

فَمَن تَوَلَّىٰ بَعْدَ ذَ‌ٰلِكَ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ

৮২। সুতরাং যে-ব্যক্তি ফিরিয়া যাইবে ইহার পরে, তবে এইরূপ ব্যক্তিই অমান্যকারী।

أَفَغَيْرَ دِينِ اللَّهِ يَبْغُونَ وَلَهُ أَسْلَمَ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَإِلَيْهِ يُرْجَعُونَ

৮৩। তবে কি তাহারা আল্লাহর ধর্ম ব্যতীত অন্য কোন পন্থা অন্বেষণ করে? অথচ আল্লাহর সমীপে সমস্তই নতশির রহিয়াছে, যাহাকিছু আসমানসমূহে এবং যাহা যমিনে আছে স্বেচ্ছায় এবং অনিচ্ছায়। আর সমস্তকে খোদারই দিকে প্রত্যাবর্তিত করা হইবে।

قُلْ آمَنَّا بِاللَّهِ وَمَا أُنزِلَ عَلَيْنَا وَمَا أُنزِلَ عَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطِ وَمَا أُوتِيَ مُوسَىٰ وَعِيسَىٰ وَالنَّبِيُّونَ مِن رَّبِّهِمْ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ

৮৪। আপনি বলিয়া দিন, আমরা ঈমান রাখি আল্লাহর প্রতি আর উহার প্রতি যাহা আমাদের উপর নাযিল করা হইয়াছে, আর উহার প্রতি যাহা নাযিল করা হইয়াছে ইব্রাহীম ও ইসমাঈল ও ইসহাক ও ইয়াকুবের সন্তানদের প্রতি। আর উহার প্রতি যাহা দেওয়া হইয়াছে মূসা ও ঈসা এবং অন্যান্য নবীগণকে, তাঁহাদের রবের নিকট হইতে। আমরা তাঁহাদের কাহারও মধ্যে (ঈমান আনয়নে) পার্থক্য করি না, এবং আমরা তো আল্লাহরই অনুগত।

وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ

৮৫। আর যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম অন্বেষণ করিবে, তবে উহা তাহা হইতে গৃহীত হইবে না। আর সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হইবে।

كَيْفَ يَهْدِي اللَّهُ قَوْمًا كَفَرُوا بَعْدَ إِيمَانِهِمْ وَشَهِدُوا أَنَّ الرَّسُولَ حَقٌّ وَجَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ ۚ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ

৮৬। আল্লাহ্ কিরূপে হেদায়েত করিবেন এমন কাওমকে, যাহারা কাফের হইয়া গিয়াছে ঈমান আনার পর! এবং নিজেদের এই স্বীকৃতির পর যে, রাসুল সত্য এবং ইহার পর যে, তাহাদের নিকট উজ্জল প্রমাণসমূহ পৌঁছিয়াছিল। আর আল্লাহ্ তা‘আলা এমন যালেম কাওমকে হেদায়েত করেন না।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১। পূর্ববর্তী আয়াতে বলা হইয়াছে, নবী ও উম্মত সকলের নিকট হইতেই প্রতিশ্রুতি লওয়া হইয়াছে। অথচ এই আয়াতে কেবল উম্মতকে সম্বোধন করিয়া বলা হইতেছে। ইহার কারণ, কোন পয়গম্বর কর্তৃক প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা সম্ভব নহে, সুতরাং প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারীরা সকলেই উম্মত ছিল। (বঃকোঃ)
২। পূর্ববর্তী আয়াতে ইসলামের সত্যতার বর্ণনা ছিল। এখন এই আয়াতে হুযুর (দঃ) কে ইসলামের হাকীকতের সারমর্ম প্রকাশ করিয়া দিতে বলিতেছেন। (বঃকোঃ)

أُولَـٰئِكَ جَزَاؤُهُمْ أَنَّ عَلَيْهِمْ لَعْنَةَ اللَّهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ

৮৭। এইরূপ লোকের শাস্তি এই যে, তাহাদের প্রতি আল্লাহর লা’নত এবং ফেরেশতাদেরও আর মানুষেরও-সকলেরই।

خَالِدِينَ فِيهَا لَا يُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَلَا هُمْ يُنظَرُونَ

৮৮। তাহারা অনন্তকাল ইহাতে থাকিবে। তাহাদের উপর হইতে থাকিবে। তাহাদের উপর হইতে শাস্তি লাঘবও করা হইবে না এবং তাহাদিগকে অবসরও দেওয়া হইবে না।

إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا مِن بَعْدِ ذَ‌ٰلِكَ وَأَصْلَحُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

৮৯। হাঁ, যাহারা তওবা করে ইহার পরে এবং নিজেদিগকে সংশোধন করে, তবে নিশ্চয়, আল্লাহ্ মহা ক্ষমা পরায়ণ, অতীব করুণাময়।

إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بَعْدَ إِيمَانِهِمْ ثُمَّ ازْدَادُوا كُفْرًا لَّن تُقْبَلَ تَوْبَتُهُمْ وَأُولَـٰئِكَ هُمُ الضَّالُّونَ

৯০। নিশ্চয়, যাহারা কাফের হইয়াছে ঈমান আনার পর, অতঃপর অগ্রসর হইতে থাকে কুফরীতে, তাহাদের তওবা কখনও কবূল হইবে না, এবং এইরূপ লোক সম্পূর্ণ বিপথগামী।

إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَمَاتُوا وَهُمْ كُفَّارٌ فَلَن يُقْبَلَ مِنْ أَحَدِهِم مِّلْءُ الْأَرْضِ ذَهَبًا وَلَوِ افْتَدَىٰ بِهِ ۗ أُولَـٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ وَمَا لَهُم مِّن نَّاصِرِينَ

৯১। নিশ্চয়, যাহারা কাফের হইয়াছে আবার মৃত্যৃও হইয়াছে সেই কুফরের অবস্থায়ই, তবে কখনও ইহাদের কাহারও হইতে পৃথিবী-পূর্ণ স্বর্ণও গ্রহন করা হইবে না, যদিও তাহারা বিনিময়স্বরূপ ইহা দিতেও চায়। তাহাদের যন্ত্রণাময় শাস্তি হইবে এবং ইহাদের কোন সাহায্যকারীও হইবে না।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১। যাহারা পবিত্র ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর আবার কাফের হইয়া গিয়াছে তাহাদিগকে ‘মুরতাদ’ বলে। ইহাদের মধ্যে কেহ কেহ আজীবন কাফের থাকিয়া যায় এবং মনে করে, আল্লাহ্ আমাদিগকে এখন হেদায়েত দান করিয়াছেন। (বঃকোঃ)
২। মুরতাদ ব্যক্তির তওবা করার অর্থ পুনরায় ইসলাম গ্রহণ করা। (বঃকোঃ)
৩। মুরতাদ ব্যক্তির পুনরায় ইসলাম গ্রহণ ব্যতীত শুধু পাপ হইতে তওবা করিলে তাহা আল্লাহর নিকট কখনও কবূল হইবে না। (বঃকোঃ)
৪। ইহা সুবিদিত যে, হাশরের মাঠে কাহারও নিকট স্বর্ণও থাকবে না। আর যদি ধরিয়াও লওয়া হয় যে, তাহার নিকট রাশি রাশি স্বর্ণ থাকিবে, তবুও সে তদ্দারা উপকৃত হইতে পারিবে না। (বঃকোঃ)

لَن تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ ۚ وَمَا تُنفِقُوا مِن شَيْءٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ

৯২। তোমরা পূর্ণ ছওয়াব কখনও পাইবে না, যে পর্যন্ত না নিজেদের প্রিয় বস্তু ব্যয় করিবে, এবং যাহাকিছু ব্যয় করিবে, আল্লাহ্ তা‘আলা তাহাও খুব জানেন।

كُلُّ الطَّعَامِ كَانَ حِلًّا لِّبَنِي إِسْرَائِيلَ إِلَّا مَا حَرَّمَ إِسْرَائِيلُ عَلَىٰ نَفْسِهِ مِن قَبْلِ أَن تُنَزَّلَ التَّوْرَاةُ ۗ قُلْ فَأْتُوا بِالتَّوْرَاةِ فَاتْلُوهَا إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ

৯৩। তওরাত অবতীর্ণ হইবার পূর্বে ইয়া’কূব নিজের জন্য যাহা হারাম করিয়াছিলেন তাহা ব্যতীত আর সমস্ত খাদ্যবস্তুই বনী ইসরাঈলদের জন্য হালাল ছিল। আপনি বলিয়া দিন; তবে তওরাত আনয়ন কর, অতঃপর উহা পাঠ কর, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।

فَمَنِ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ مِن بَعْدِ ذَ‌ٰلِكَ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ

৯৪। সুতরাং যে ব্যক্তি ইতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলার উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে, তবে এই প্রকার লোক অত্যন্ত অন্যায়াচারী।

قُلْ صَدَقَ اللَّهُ ۗ فَاتَّبِعُوا مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ

৯৫। আপনি বলিয়া দিন, আল্লাহ্ সত্য বলিয়া দিয়াছেন, সুতরাং তোমরা ইব্রাহীমী ধর্মের অনুসরণ কর; যাহাতে বিন্দুমাত্রও বক্রতা নাই এবং তিনি মুশরিক ছিলেন না।

إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكًا وَهُدًى لِّلْعَالَمِينَ

৯৬। নিশ্চয়, যে ঘর সর্বপ্রথম মানব জাতীর জন্য নির্ধারিত করা হইয়াছে, তাহা সেই ঘর যাহা মক্কায় অবস্থিত। উহার অবস্থা এই যে, ইহা বরকতবিশিষ্ট এবং সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য পথ পদর্শক।

فِيهِ آيَاتٌ بَيِّنَاتٌ مَّقَامُ إِبْرَاهِيمَ ۖ وَمَن دَخَلَهُ كَانَ آمِنًا ۗ وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا ۚ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ

৯৭। তাহাতে প্রকাশ্য নিদর্শনসমূহ বিদ্যমান, তন্মধ্যে মাকামে ইব্রাহীম একটি; আর যে ব্যক্তি উক্ত গৃহে প্রবেশ করে, সে নিরাপদ হইয়া যায়। আর মানুষের দায়িত্ব (ফরয) আল্লাহর উদ্দেশ্যে এই গৃহের হজ্জ করা অর্থাৎ সেই ব্যক্তির জন্য, যে ঐ ঘর পর্যন্ত যাতায়াতের ব্যয়ভার বহনে সক্ষম। আর যে ব্যক্তি অমান্যকারী হয়, তবে নিশ্চয় আল্লাহ্ সমস্ত বিশ্ববাসী হইতে বে-নেয়ায।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১। ফঃ আয়াতটি হইতে বুঝা যায়, আল্লাহর রাস্তায় যে কোন হালাল মাল ব্যয় করিলেই সওয়াব পাওয়া যায়, কিন্তু প্রিয় বস্তু ব্যয় করিলে অধিক সওয়াব হইবে। (বঃকোঃ)
২। ইয়াহুদীরা বলিত, হে মোহাম্মদ! আপনি উটের গোশত ও দুধ খাইয়া থাকেন আর ইব্রাহীমের ধর্মের উপর আছেন বলিয়া দাবী করেন, অথচ ইহা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এমনকি হযরত নূহ (আঃ) এর সময় হইতেই হারাম। ইয়াহুদীদের এই দাবী খন্ডনের জন্য আল্লাহ্ এই আয়াতটি নাযিল করেন। (বঃকোঃ)
৩। ইয়াহুদীরা বাইতুল মোকাদ্দাসকে বাইতুল্লাহ্ অপেক্ষা উত্তম করিত। আর মুসলমানগণ বাইতুল্লাহকে উত্তম বলিত। এই বিতর্কে মুসলমানগণ যে সত্য পথে রহিয়াছে ইহারই উল্লেখ করতঃ এই আয়াতটি আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করেন। (বঃকোঃ)

قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لِمَ تَكْفُرُونَ بِآيَاتِ اللَّهِ وَاللَّهُ شَهِيدٌ عَلَىٰ مَا تَعْمَلُونَ

৯৮। আপনি বলিয়া দিন, হে আহলে কিতাব! তোমরা কেন অমান্য করিতেছ আল্লাহর বিধানসমূহ? অথচ আল্লাহ্ তোমাদের যাবতীয় কাজের খবর রাখেন।

قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لِمَ تَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ مَنْ آمَنَ تَبْغُونَهَا عِوَجًا وَأَنتُمْ شُهَدَاءُ ۗ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ

৯৯। আপনি বলুন, হে আহলে কিতাব! কেন ভ্রষ্ট কর আল্লাহর পথ হইতে এমন ব্যক্তিকে যে ঈমান আনিয়াছে? এইভাবে যে, উক্ত পথের জন্য বক্রতা অন্বেষন কর, অথচ তোমরা নিজেরাও অবগত আছ; আর আল্লাহ্ তোমাদের কর্ম সম্বন্ধে বে-খবর নহেন।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن تُطِيعُوا فَرِيقًا مِّنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ يَرُدُّوكُم بَعْدَ إِيمَانِكُمْ كَافِرِينَ

১০০। হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা উহাদের কোন সম্প্রদায়ের কথা মান্য কর, যাহাদিগকে কিতাব প্রদত্ত হইয়াছে, তবে তাহারা তোমাদের ঈমান আনয়নের পরÑতোমাদিগকে কাফির বানাইয়া দিবে।

وَكَيْفَ تَكْفُرُونَ وَأَنتُمْ تُتْلَىٰ عَلَيْكُمْ آيَاتُ اللَّهِ وَفِيكُمْ رَسُولُهُ ۗ وَمَن يَعْتَصِم بِاللَّهِ فَقَدْ هُدِيَ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ

১০১। আর কেমন করিয়া তোমরা কুফর করিতে পার? অথচ তোমাদিগকে আল্লাহর বিধানসমূহ পাঠ করিয়া শুনানো হয়, আর তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসুল বিদ্যমান। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে ধারন করে, তবে সে নিশ্চয়ই সরল পথ প্রদর্শিত হয়।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১। শাম্মাস ইবনে কায়েস নামক জনৈক ইয়াহুদী মুসলমানদের প্রতি ভীষন হিংসা পোষণ করিত। আওস্ ও খাযরাজ, এতদুভয় সম্প্রদায়কে একতাবদ্ধ ভাবে একই মজলিসে সমবেত দেখিয়া সে হিংসায় জ্বলিয়া উঠিল। অতএব, এতদুভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এক ব্যক্তিকে বলিল, এই উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ চলিতে থাকা কালের আত্ম-শ্লাঘামূলক বহু গাথা কবিতা রহিয়াছে, তুমি তাহাদের মজলিসে উপস্থিত হইয়া উহা হইতে কিছু কবিতা গাহিয়া আস। সে তাহাই করিল। কবিতা শ্রবণ করা মাত্র উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে পুরাতন হিংসাণল প্রজ্জলিত হইয়া উঠিল, অধিকন্তু যুদ্ধের স্থান ও সময় নির্ধারিত হইয়া গেল। এখান হইতে কয়েকটি আয়াত এই ঘটনা সম্বন্ধেই অবতীর্ণ হইয়াছে।
২। এখান হইতে মুসলমানদিগকে প্রবোধ দিতেছেন। (বঃকোঃ)

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسْلِمُونَ

১০২। হে মুমিন গণ ! আল্লহকে (এইরূপ ) ভয় কর যেরূপ ভয় করা উচিত, এবং ইসলাম ব্যতীত আর অন্য কোন অবস্থায় প্রাণ ত্যাগ করিও না।

وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا ۚ وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنتُمْ عَلَىٰ شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا ۗ كَذَ‌ٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ

১০৩। এবং তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে (দ্বীনের) দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এমনিভাবে যে, তোমরা পরস্পর একতাবদ্ধও থাক এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইও না, আর তোমাদের প্রতি আল্লাহর যে দান রহিয়াছে তাহা স্মরন কর, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের অন্তরে ভালবাসা সৃষ্টি করিয়া দিয়াছেন, ফলে তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহে পরস্পর ভাই ভাই হইয়া গিয়াছ, এবং তোমরা দোযখের গর্তের তীরে ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাদের উহা হইতে রক্ষা করিয়াছেন; এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে স্বীয় বিধানসমূহ পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করিয়া থাকেন, যেন তোমরা (সঠিক) পথে থাক।

وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ ۚ وَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

১০৪। আর তোমাদের মধ্যে এইরূপ থাকা একজন আবশ্যক, যেন তাহারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করে এবং নেক কাজের আদেশ করিতে ও মন্দ কাজ হইতে বারণ করিতে থাকে, আর এরূপলোক পূর্ণ সফলকাম হইবে।

وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ تَفَرَّقُوا وَاخْتَلَفُوا مِن بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ ۚ وَأُولَـٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ

১০৫। আর তোমরা ঐ সমস্ত লোকের মতো হইও না, যাহারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইয়া পড়িয়াছে এবং মতবিরোধ করিয়াছে, তাহাদের নিকট স্পষ্ট বিধান পৌছিবার পর; আর তাহাদের জন্য ভীষন শাস্তি রহিয়াছে।

يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوهٌ وَتَسْوَدُّ وُجُوهٌ ۚ فَأَمَّا الَّذِينَ اسْوَدَّتْ وُجُوهُهُمْ أَكَفَرْتُم بَعْدَ إِيمَانِكُمْ فَذُوقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنتُمْ تَكْفُرُونَ

১০৬। সেই দিন কতিপয় চেহারা সাদা হইবে এবং কতিপয় চেহারা কালো হইবে, সুতরাং যাহাদের চেহারা কালো হইবে তাহাদিগকে বলা হইবে। তোমরা কি কাফের হইয়া ছিলে ঈমাণ আনার পর? কাজেই এখন স্বীয় কুফরীর দরুন শাস্তির স্বাদ গ্রহন কর।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১) অর্থাৎ আল্লাহর ধর্মকে উহার মূলনীতি ও শাখা প্রশাখা সহ আকড়াইয়া ধর। একতাবদ্ধ থাকার নিদের্শ ও এই ধর্মে রহিয়াছে। (বঃ কোঃ)
২) অর্থাৎ ইসলাম গ্রহনের পূর্বে যেমন আওস ও খাযরাজ গোত্রদ্বয়ের মধ্যে দীর্ঘকাল যাবৎ যুদ্ধ বিগ্রহ চলিতেছিল। (বঃ কোঃ)
৩) অর্থাৎ কাফের হওয়ার দরুন দোযখের এত নিকটবর্তী হইয়াছিলে যে, দোযখে যাওয়ার জন্য কেবল মৃত্যুরই বিলম্ব ছিল। (বঃ কোঃ)
৪) অর্থাৎ ইসলাম গ্রহনের সৌভাগ্য দান করিয়াছেন। (বঃ কোঃ)
৫) সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করা সকল মুসলমারে জন্য অপরিহার্য কর্তব্য ।(বঃ কোঃ)
৬) ইহুদীরা হযরত মূসা (আঃ) এর এন্তেকালের অব্যবহিত ৫০০ বৎসর পরে এবং খৃষ্টানরা হযরত ঈসা (আঃ) এর আসমানে আহরনের ৩০ বৎসর পরে ধর্ম সম্বন্ধে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হইয়াছে। (মুঃ কোঃ)

وَأَمَّا الَّذِينَ ابْيَضَّتْ وُجُوهُهُمْ فَفِي رَحْمَةِ اللَّهِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

১০৭। আর যাহাদের চেহারা সাদা হইয়া যাইবে তাহারা আল্লাহর রহমতের মধ্যে থাকিবে; তাহারা ইহাতে অনন্তকাল অবস্থান করিবে।

تِلْكَ آيَاتُ اللَّهِ نَتْلُوهَا عَلَيْكَ بِالْحَقِّ ۗ وَمَا اللَّهُ يُرِيدُ ظُلْمًا لِّلْعَالَمِينَ

১০৮। ইহা আল্লাহর আয়াত সমূহ, যাহা আমি যথাযথভাবে পাঠ করিয়া আপনাকে শুনাইছি; আর আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি যুলুম করিতে চাহেন না।

وَلِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۚ وَإِلَى اللَّهِ تُرْجَعُ الْأُمُورُ

১০৯। আর আল্লাহরই স্বত্বাধিকার রহিয়াছে, যাহাকিছু আসমান সমূহে এবং যাহাকিছু যমিনে আছে; এবং আল্লাহরই দিকে সমস্ত বিষয় প্রত্যাবর্তিত হইবে।

كُنتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَتُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ ۗ وَلَوْ آمَنَ أَهْلُ الْكِتَابِ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُم ۚ مِّنْهُمُ الْمُؤْمِنُونَ وَأَكْثَرُهُمُ الْفَاسِقُونَ

১১০। তোমরা উত্তম সম্প্রদায়কে প্রকাশ করা হইয়াছে মানবমন্ডলীর জন্য, তোমরা নেক কাজে আদেশ কর এবং নিবিৃত্ত রাখ এবং আল্লাহর প্রতি ঈমাণ রাখ; আর যদি আহলে কিতাবরা ঈমাণ আনিত, তবে তাহাদের জন্য অধিক মঙ্গল হইত; ইহাদের মধ্যে কেহ কেহ তো মুসলমান, আর ইহাদের অধিকাংশ কাফের।

لَن يَضُرُّوكُمْ إِلَّا أَذًى ۖ وَإِن يُقَاتِلُوكُمْ يُوَلُّوكُمُ الْأَدْبَارَ ثُمَّ لَا يُنصَرُونَ

১১১। তাহারা কখনও তোমাদের ক্ষতি করিতে পারিবে না–সামান্য কিছু কষ্ট প্রদান ব্যতীত; আর তাহারা যদি তোমাদের সহিত যুদ্ধ করে, তবে তোমাদিগকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করতঃ পলাইয়া যাইবে। অতঃপর কাহারও পক্ষ হইতে ইহাদের সাহায্যও করা হইবে না।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১) সুতরাং বুঝা গেল, যাহার জন্য যে পুরষ্কার বা যে শাস্তি নির্ধারন করিয়াছেন, তাহা যথোপযোগী হইয়াছে। (বঃ কোঃ)
২) অতঃএব, সবকিছুই যখন তাহার স্বত্ব তখন তাহারই আনুগত্য ইহাদের প্রতি ওয়াজিব ছিল। (বঃ কোঃ)
৩) সমস্ত উম্মতে মুহাম্মাদীয়াকেই ব্যাপক ভাবে এখনে সম্বোধন করা হইয়াছে। কামালাইন কিতাবে উদ্ধত আছে হুযূর (দঃ) বলিয়াছেন, আমার উম্মতই শ্রেষ্ঠতম উম্মত। (বঃ কোঃ)
৪) এই আয়াতের বর্ণনা ভঙ্গিতে বুঝা যায়, সাহাবাগণকেই সম্বোধন করা হইয়াছে। ফলতঃ ইহুদী ও নাছারাগণ হুযুর (দঃ) এর যুগে কোন যুদ্ধে জয়লাভ করিতে পারে নাই। (বঃকোঃ)

ضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الذِّلَّةُ أَيْنَ مَا ثُقِفُوا إِلَّا بِحَبْلٍ مِّنَ اللَّهِ وَحَبْلٍ مِّنَ النَّاسِ وَبَاءُوا بِغَضَبٍ مِّنَ اللَّهِ وَضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الْمَسْكَنَةُ ۚ ذَ‌ٰلِكَ بِأَنَّهُمْ كَانُوا يَكْفُرُونَ بِآيَاتِ اللَّهِ وَيَقْتُلُونَ الْأَنبِيَاءَ بِغَيْرِ حَقٍّ ۚ ذَ‌ٰلِكَ بِمَا عَصَوا وَّكَانُوا يَعْتَدُونَ

১১২। তাহাদের প্রতি (বিশেষ) লাঞ্ছনার ছাপ লাগান হইয়াছে তাহারা যেখাইেন থাকুক না কেন, হাঁ, তবে এমন একটি উপায় এর দরুন যাহা আল্লাহর পক্ষ হইতে এবং অন্য এমন একটি উপায় এর দরুন যাহা মানুষের পক্ষ হইতে, আর তাহারা যোগ্য হইয়াছে আল্লাহর গযবের এবং তাহাদের উপর অবমাননার ছাপ লাগান ইহয়াছে, ইহা এই নিমিত্ত যে, তাহারা আল্লাহ বিধান সমূহ অমান্য করিত এবং পয়গম্বরদিগকে অন্যায়ভাবে হত্যা করিয়া ফেলিত; (আর) ইহা এই জন্য রহিয়াছে যে, ইহারা অনুগ্রত্য করিত না এবং সীমা ছাড়াইয়া যাইত।

لَيْسُوا سَوَاءً ۗ مِّنْ أَهْلِ الْكِتَابِ أُمَّةٌ قَائِمَةٌ يَتْلُونَ آيَاتِ اللَّهِ آنَاءَ اللَّيْلِ وَهُمْ يَسْجُدُونَ

১১৩। তাহারা সকলে সমান নহে। এই আহলে কিতাদের মধ্যে এক সম্প্রদায় তাহারাও যাহারা (সত্য ধর্মে ) সুপ্রতিষ্ঠিত; আল্লাহর আয়াত সমূহ রাত্রিকালে পাঠ করে, আর তাহারা নামায ও পড়িয়া থাকে।

يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَأُولَـٰئِكَ مِنَ الصَّالِحِينَ

১১৪। আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে, এবং নেক কাজের আদেশ করে ও মন্দ কাজ হইতে বিরত রাখে, আর নেক কাজের দিকে ধাবিত হয়। আর ইহারা সুসভ্য লোকের মধ্যে গণ্য।

وَمَا يَفْعَلُوا مِنْ خَيْرٍ فَلَن يُكْفَرُوهُ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِالْمُتَّقِينَ

১১৫। আর তাহারা যে নেক কাজ করিবে উহা হইতে তাহাদের বঞ্চিত করা হইবে না। আর আল্লাহ তা‘আলা পরহেযগারদিগকে খুব ভালোভাবে জানেন।

إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا لَن تُغْنِيَ عَنْهُمْ أَمْوَالُهُمْ وَلَا أَوْلَادُهُم مِّنَ اللَّهِ شَيْئًا ۖ وَأُولَـٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۚ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

১১৬। নিশ্চয়, যাহারা কাফের রহিয়াছে কখনও তাহাদের ধনরাশি এবং তাহাদের সন্তান সন্ততি আল্লাহ তা‘আলার (আযাবের) সম্মুখে বিন্দুমাত্রও তাহাদের কাজে আসিবে না। আর তাহারা দোযখী; তাহারা অনন্তকাল উহাতে থাকিবে।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১) আল্লাহর পক্ষ হইতে প্রাণের নিরাপত্তা লাভ হওয়ার উপায় এই যে, যদি কোন আহলে কিতাবে আল্লাহর এবাদতে মশগুল থাকে ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত না হয়, তবে তাহাকে হত্যা করা যাইবে না। অবশ্য তাহাদের এই এবাদত পরকালে কোনই কাজে আসিবে না। আহলে কিতাবদের মধ্যে অক্ষম, নাবালেক কিংবা স্ত্রী লোকদিগকেও হত্যা করা হইবে না । আর মানুষের পক্ষ হইতে নিরাপত্তার অর্থ হইল, কোন সম্প্রদায় তাহাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সংকল্প না করা। অথবা মুসলমানের সহিত সন্ধি রা চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়া।(বঃ কোঃ)
২) অর্থাৎ, তাহাদের উন্নত সাহস এবং উচ্চ সংকল্প লোপ পাইয়াছে, এতদ্ভিন্ন জিযিয়া কর এবং দেশান্তরকরণও অবমাননার অন্তরভূক্ত।(বঃ কোঃ)
৩) যে সমস্ত গুন উম্মতে মুহাম্মাদীয়ার শ্রেষ্ঠত্বের কারণ, সে সমস্ত গুণ সম্পন্ন ব্যাক্তিদের প্রশংসা করাই এই আয়াতের উদ্দেশ্য ।(বঃ কোঃ)

مَثَلُ مَا يُنفِقُونَ فِي هَـٰذِهِ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَثَلِ رِيحٍ فِيهَا صِرٌّ أَصَابَتْ حَرْثَ قَوْمٍ ظَلَمُوا أَنفُسَهُمْ فَأَهْلَكَتْهُ ۚ وَمَا ظَلَمَهُمُ اللَّهُ وَلَـٰكِنْ أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ

১১৭। তাহারা এই পার্থিব জীবনে যাহা কিছু ব্যয় করে, উহার অবস্থার অনুরূপ যে, এই রূপ বাতাস যাহাতে প্রচুন্ড হিম আছে, ঐ বাতাস এমন লোকের শষ্য ক্ষেত্র স্পর্শ করিল যাহারা নিজের ক্ষতি সাধন রাখিয়াছে। অনন্তর ঐ বাতাস উক্ত শষ্য ক্ষেত ধ্বংস করিয়া ফেলিল। আর আল্লাহ তাহাদের প্রতি যুলুম করেন নাই; বরং তাহারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি সাধন করিতেছিল।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا بِطَانَةً مِّن دُونِكُمْ لَا يَأْلُونَكُمْ خَبَالًا وَدُّوا مَا عَنِتُّمْ قَدْ بَدَتِ الْبَغْضَاءُ مِنْ أَفْوَاهِهِمْ وَمَا تُخْفِي صُدُورُهُمْ أَكْبَرُ ۚ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْآيَاتِ ۖ إِن كُنتُمْ تَعْقِلُونَ

১১৮। হে মুমিনগণ ! নিজেদের (লোক) ব্যতীত কাহাকে ও অন্তরঙ্গ বন্ধু বানাইও না, তাহারা তোমাদের সহিত দুষ্টামি করিতে বিন্দু মাত্রও ত্রুটি করে না। তোমাদের অনিষ্ট কামনা করে। বাস্তবিক, শত্রুতা তাহাদের মুখ হইতে প্রকাশ হইয়া পড়ে। আর যে পরিমাণ তাহাদের অন্তরে রহিয়াছে, সে তো অনেক কিছু। আমি লক্ষণসমূহ তোমাদের সম্মুখে প্রকাশ করিয়া দিয়াছি, যদি তোমরা বুদ্ধি রাখ।

هَا أَنتُمْ أُولَاءِ تُحِبُّونَهُمْ وَلَا يُحِبُّونَكُمْ وَتُؤْمِنُونَ بِالْكِتَابِ كُلِّهِ وَإِذَا لَقُوكُمْ قَالُوا آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْا عَضُّوا عَلَيْكُمُ الْأَنَامِلَ مِنَ الْغَيْظِ ۚ قُلْ مُوتُوا بِغَيْظِكُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ

১১৯। হাঁ, তোমরা তো এই রূপ যে, তাহাদের সঙ্গে ভালোবাসা রাখ, আর তাহারা তোমাদের সঙ্গে আদৌ ভালোবাসা রাখেনা; অথচ তোমরা সমস্ত কিতাবের প্রতি ঈমাণ রাখ। আর তাহারা তোমাদের সঙ্গে মিলিত হইলে বলে আমরা ঈমাণ আনিয়াছি, আর যখন পৃথক হইয়া যায়, তখন তোমাদের প্রতি ক্রোধে নিজেদের অঙ্গুলীসমূহ দংশন করে। আপনি বলিয়া দিন, তোমরা স্বীয় ক্রোধে মরিয়া যাও। নিশ্চয়, আল্লাহ অন্তরের কথা পরিজ্ঞাত।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১) তদ্রুপ কাফেরদের দানও পরকালে বিনিষ্ট হইয়া যাইবে। কেননা কুফরী দান কবূল হওয়ার পরিপন্থী। (বঃ কোঃ)
২) প্রচন্ড হিমপূর্ণ বায়ুতে ধার্মিক অধার্মিক সকলের শস্যই নষ্ট হয়, তথাপি যালিম ক্বওমের শস্যক্ষেত্র বলিয়া নিদিষ্ট করার তাৎপর্য এই যে, মুসলমানদের কোন পার্থিব ক্ষতি হইলে তাহারা পরলোকে উহার বিনিময় প্রাপ্ত হইবে, কিন্তু কাফেরেরা পরকালে উহার কোন বিনিময়ই প্রাপ্ত হবেনা।(বঃ কোঃ)
৩) অন্য ধর্মাবলম্বীকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহন করিতে এই আয়াতে নিষেধ করা হইয়াছে। তাহাদিগকে স্বীয় গুপ্ত বিষয়ের বিশ্বাসীরূপে গ্রহন না করা এবং শাসন ও শৃঙ্খলামূলক কার্যসমূহে হস্তক্ষেপের অধিকার না দেওয়াও উক্ত নিষেধের অন্তভূক্ত।(বঃ কোঃ)

إِن تَمْسَسْكُمْ حَسَنَةٌ تَسُؤْهُمْ وَإِن تُصِبْكُمْ سَيِّئَةٌ يَفْرَحُوا بِهَا ۖ وَإِن تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا لَا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا ۗ إِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ

১২০। যদি তোমাদের কোন মঙ্গলময় অবস্থার উপস্থিত হয়, তবে তাহাদের মনবেদনার কারণ হয়। আর যদি তোমাদের কোন অমঙ্গল জনক অবস্থার উপস্থিত হয়, তবে তাহারা উহাতে আনন্দিত হয় । আর যদি তোমরা অটল ও সংযমী হও, তবে তাহাদের চক্রান্ত তোমাদের কোন ক্ষতি করিতে পারিবে না। নিশ্চয়, আল্লাহ তাহাদের কার্যসমূহকে পরিবেষ্টন করিয়া আছেন।

وَإِذْ غَدَوْتَ مِنْ أَهْلِكَ تُبَوِّئُ الْمُؤْمِنِينَ مَقَاعِدَ لِلْقِتَالِ ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

১২১। আর যখন আপনি প্রভাতে বাহির হইলেন স্বীয় গৃহ হইতে, মুসলমানদিগকে যুদ্ধের জন্য যথাস্থানে সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান করিতেছিলেন। আর আল্লাহ সব (ই) শুনিতেছিলেন, জানিতেছিলেন।

إِذْ هَمَّت طَّائِفَتَانِ مِنكُمْ أَن تَفْشَلَا وَاللَّهُ وَلِيُّهُمَا ۗ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ

১২২। যখন তোমাদের মধ্যে হইতে দুটি দল মনে মনে ভগ্নোৎসাহ হওয়ার কল্পনা করিল, আর আল্লাহ তো ঐ উভয় দলের সহায়ক ছিলেন । আর মুসলমানদের তো আল্লাহর উপরই ভরসা করা উচিত।

وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ اللَّهُ بِبَدْرٍ وَأَنتُمْ أَذِلَّةٌ ۖ فَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

১২৩। আর ইহা সুনিশ্চিত যে, আল্লাহ তোমাদিগক বদরে(বদর যুদ্ধে) সাহায্য করিয়াছেন, অথচ তোমরা সহায়-সম্বলহীন ছিলে। সুতরাং আল্লাহকে ভয় করিতে থাক– যেন তোমরা শুকরগুযার হও।

إِذْ تَقُولُ لِلْمُؤْمِنِينَ أَلَن يَكْفِيَكُمْ أَن يُمِدَّكُمْ رَبُّكُم بِثَلَاثَةِ آلَافٍ مِّنَ الْمَلَائِكَةِ مُنزَلِينَ

১২৪। যখন আপনি মুসলমান দিগকে এইরূপ বলিতেছিলেন যে, তোমাদের কি ইহা যথেষ্ঠ হইবে না যে, তোমাদের রব্ব তিন সহস্র ফেরেশতা দ্বারা তোমাদের সাহায্য করিবেন? যাহারা (আসমান হইতে) অবতারিত হইবে।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১) হিজরীর তৃতীয় সনে মক্কার কাফেরগণ তিন সহস্র অশ্বারোহী ও পদাতিকের এক বাহিনী লইয়া মদিনা আক্রমণের উদ্দেশ্য যাত্রা করিল। হুযুর এই সংবাদ শুনিয়া সাহাবা গণের সহিত পরামর্শক্রমে মাঠে নামিয়া যুদ্ধ করাই স্থির করিলেন। মুহাজির ও আনছারদের এক সহস্র লোকের বাহিনী লইয়া ওহুদ প্রান্তে রওয়ানা হইলেন। এই বাহিনীতে মুনাফেক আবদুল্লাহ ইবনে উবাইও যোগ দিয়াছিল পথিমধ্যে অসন্তুষ্ট হইয়া সে তিনশত লোক লইয়া সরিয়া পড়িল। অবশিষ্ট সাতশত সাহাবি লইয়া হুযুর ওহুদ পাবর্তকে পিছনে রাখিয়া রণক্ষেত্রে দাড়াইলেন। এসম্বন্ধে আল্লাহ তা‘আলা পরবর্তী আয়াত গুলি নাযিল করিয়া মুসলমানদিগকে উৎসাহ প্রদান করিতেছেন। (বঃ কোঃ)

بَلَىٰ ۚ إِن تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا وَيَأْتُوكُم مِّن فَوْرِهِمْ هَـٰذَا يُمْدِدْكُمْ رَبُّكُم بِخَمْسَةِ آلَافٍ مِّنَ الْمَلَائِكَةِ مُسَوِّمِينَ

১২৫। হাঁ, কেন হইবে না? যদি (যুদ্ধে) অটল থাক এবং খোদাভীরু হও আর (যদি) তাহারা তোমাদের প্রতি নিমিষে আসিয়া পৌছে, তাহাহইলে তোমাদের প্রভু তোমাদিগকে এক বিশিষ্ট বেশধারী পাঁচ সহস্র ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করিবেন।

وَمَا جَعَلَهُ اللَّهُ إِلَّا بُشْرَىٰ لَكُمْ وَلِتَطْمَئِنَّ قُلُوبُكُم بِهِ ۗ وَمَا النَّصْرُ إِلَّا مِنْ عِندِ اللَّهِ الْعَزِيزِ الْحَكِيمِ

১২৬। আর এই সাহায্য আল্লাহ তা‘আলা শুধু এই জন্যই করিয়াছেন, যেন তোমাদের জন্য সুসংবাদ হয় আর তোমাদের মনে যেন স্থিরতা আসে। আর সাহায্য তো আল্লাহর তরফ হইতেই হইয়া থাকে, যিনি মহা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

لِيَقْطَعَ طَرَفًا مِّنَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَوْ يَكْبِتَهُمْ فَيَنقَلِبُوا خَائِبِينَ

১২৭। যেন কাফেরদের একদলকে ধ্বংস করিয়া দেন অথবা তাহাদিগকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করেন, ফলে তাহারা অকৃতকার্য হইয়া ফিরিয়া যায়।

لَيْسَ لَكَ مِنَ الْأَمْرِ شَيْءٌ أَوْ يَتُوبَ عَلَيْهِمْ أَوْ يُعَذِّبَهُمْ فَإِنَّهُمْ ظَالِمُونَ

১২৮। আপনার কোন অধিকার নাই, যে পর্যন্ত না আল্লাহ তা‘আলা হয়ত তাহাদের তাওবা কবূল করিবেন অথবা তাহাদিগকে কোন শাস্তি প্রদান করিবেন। কেননা, ইহারা জুলুমও ভীষন করিতেছে।

وَلِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۚ يَغْفِرُ لِمَن يَشَاءُ وَيُعَذِّبُ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

১২৯। আর যাহাকিছু আসমান সমূহে রহিয়াছে এবং যাহাকিছু যমিনে রহিয়াছে সবকিছুই আল্লাহরই স্বত্বাধীন; তিনি যাহাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যাহাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন। আর আল্লাহ তা‘আলা তো অতীব ক্ষমাশীল, পরম করুণাময় ।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا الرِّبَا أَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً ۖ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

১৩০। হে মুমিনগণ! সুদ খাইও না কয়েক গুণ অতিরিক্ত, এবং আল্লাহকে ভয় কর। আশা করা যায়, তোমরা সফলকাম হইবে।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১) ওহুদ প্রান্তরে যুদ্ধ আরম্ভ হইলে প্রথম আক্রমণেই কাফেদের পরাজয় ঘটিল। মুসলমানেরা পালায়নরত কাফেরদের আসবাবপত্র লুন্ঠন করিতে লাগিল গিরিপথরক্ষী সৈনগণ ইবনে জুবায়েরের নির্দেশ অমান্য করিতঃ লুন্ঠন করিতে লাগিল। এদিকে গিরিপথ খালি পাইয়া কাফেরেরা পশ্চাৎ দিক হইতে প্রবলবেগে আক্রমন করিয়া বসিল । ফলে ইবনে জুবাইর, হযরত হামজা প্রমুখ সাহাবাগণ শাহাদত বরণ করেন এবং হুযুর (দঃ) এর দান দান মোবারক ও চেহারা মোবারক আহত হন । অতঃপর প্রধান প্রধান সাহাবাগণ মুসলিম সৈন দিগকে ত্বরিৎ একত্রিত করিয়া বল- বিত্রুমে কাফেরদের উপর ঝাপাইয়া পড়েন ও তাহাদিগকে রণঙ্গন হইতে পালায়ন করিতে বাধ্য করেন । যুদ্ধ শেষে স্বীয় চাচা ও সাহাবাগণের লাস দর্শন করিয়া অতিশয় মর্মাহত হইয়া কাফেরদের উদ্দেশ্য বদদো‘আ করিতে উদ্যত হইলে এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। (মুঃ কোঃ)

وَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِي أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ

১৩১। আর তোমরা সেই আগুন হ্ইতে আত্মরক্ষা কর, যাহা (মূলতঃ) কাফেরদের জন্য তৈরি করা হইয়াছে।

وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ

১৩২। আর সানন্দে আল্লাহর ও রাসূলের আদেশ পালন কর; আশা করা যায় তোমরা অনুগৃহীত হইবে।

وَسَارِعُوا إِلَىٰ مَغْفِرَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ

১৩৩। আর ধাবন কর ক্ষমার দিকে, যাহা তোমার পরওয়ারদেগারের তরফ হইতে হয় –আর সেই বেহেস্তের দিকে যাহার প্রশস্ততা এইরূপ যেমন সমস্ত আসমান এবং যমীন। ইহা প্রস্তুত করা হইয়াছে মুত্তাকীদের জন্য।

الَّذِينَ يُنفِقُونَ فِي السَّرَّاءِ وَالضَّرَّاءِ وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ ۗ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ

১৩৪। এইরূপ লোক যাহারা সচ্ছলতা এবং অভাবের অবস্থায় (সৎ কাজে) ব্যায় করে এবং ক্রোধ সংবরণকারী ও লোকের (অপরাধ) ক্ষমাকারী । আর আল্লাহ এইরূপ সদাচারীদেরকেই ভালোবাসেন।

وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللَّهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوبِهِمْ وَمَن يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا اللَّهُ وَلَمْ يُصِرُّوا عَلَىٰ مَا فَعَلُوا وَهُمْ يَعْلَمُونَ

১৩৫। আর তাহারা এমন লোক যে, যখন এমন কোন কাজ করিয়া বসে যাহাতে অন্যায় হয়, অথবা নিজের ক্ষতি করিয়া বসে, তখন আল্লাহকে স্মরন করে অতঃপর নিজের গুনাহসমূহের ক্ষমা প্রার্থনা করিয়া থাকে। এবং আল্লাহ ভিন্ন আর কে আছে, গুনাহ মাফ করিবে ? আর তাহারা স্বীয় (মন্দ) কর্মে হঠকারিতা করে না এবং তাহারা অবগত আছে।

أُولَـٰئِكَ جَزَاؤُهُم مَّغْفِرَةٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَجَنَّاتٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ وَنِعْمَ أَجْرُ الْعَامِلِينَ

১৩৬। তাহাদের পুরস্কার হইবে মার্জনা তাহাদের প্রভুর নিকট হইতে এবং এমন উদ্যান যাহার তলদেশ দিয়া নহরসমূহ প্রবাহিত। তাহারা উহাতে অনন্তকাল অবস্থান করিবে, এবং (ইহা) উত্তম প্রতিদান ঐসব কর্মীদের।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

২) মূলধন হইতে কয়েকগুণ অতিরিক্ত হওয়া সুদ হারাম হওয়ার জন্য শর্ত নহে । সূরা বাক্বারার (১০৫পৃষ্ঠা দেখুন) আয়াতও এই আয়াত দ্বারা সর্বপ্রকার সুদ হারাম করা হইয়াছে। বর্তমান যুগের প্রবৃত্তি-পূজারিরা শুধু অতিরিক্ত হারে সুদ হারাম বলিয়া কদর্থ দ্বারা মানুষকে ধোকাই ফেলিতেছে। (বঃ কোঃ)
১) এখানে বেহেস্তের প্রশস্ততা ইহার চেয়ে অধিক হওয়ার কথা অস্বীকার করা হয় নাই। বস্তুতঃ বেহেস্তের প্রশস্ততা ইহার চেয়ে বেশি হওয়া অন্যত্র প্রমনিত আছে। (বঃ কোঃ)
২) অর্থাৎ ক্ষমা প্রার্থনার নিয়মঅনুযায়ী উভয় অবস্থায় আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনাতো করেই; পরন্ত অন্যের প্রতি অন্যায় করিয়া থাকিলে সেই দাবিদার ব্যাক্তি হইতেও উহা ক্ষমা করাইয়া লয়।(বঃ কোঃ)

قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِكُمْ سُنَنٌ فَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَانظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ

১৩৭। নিশ্চয়, তোমাদের বিভিন্ন পন্থা (অবলম্বী) অতীত হইয়াছে। অতএব, তোমরা পৃথিবীতে বিচরণ কর এবং দেখিয়া লও যে, অবিশ্বাসীদের পরিণাম কিরূপ হইয়াছে।

هَـٰذَا بَيَانٌ لِّلنَّاسِ وَهُدًى وَمَوْعِظَةٌ لِّلْمُتَّقِينَ

১৩৮। এই বর্ণনা যথেষ্ট সকল মানুষের জন্য এবং হেদায়েত ও নসীয়ত বিশেষ করিয়া পরহেযগারের জন্য।

وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ

১৩৯। আর তোমরা হিম্মত হারাইও না এবং বিষন্ন হইও না, বস্তুতঃ তোমরাই বিজয়ী থাকিবে যদি তোমরা পূর্ণ মু’মিন থাক।

إِن يَمْسَسْكُمْ قَرْحٌ فَقَدْ مَسَّ الْقَوْمَ قَرْحٌ مِّثْلُهُ ۚ وَتِلْكَ الْأَيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ النَّاسِ وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَيَتَّخِذَ مِنكُمْ شُهَدَاءَ ۗ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِينَ

১৪০। যদি তোমাদের আঘাত লাগিয়া থাকে, তবে সেই সম্প্রদায়ের ও তদ্রুপ আঘাত লাগিয়াছিল। আর আমি এই দিবসসমূহকে অদল বদল করিতে থাকি লোকদের মধ্যে। আর যেন আল্লাহ ঈমানদারদিগকে জানিয়া লন এবং তোমাদের মধ্যে কতিপয় শহিদ করিবার ছিল। আর আল্লাহ অত্যাচারীদিগকে ভালোবাসেন না।

وَلِيُمَحِّصَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَيَمْحَقَ الْكَافِرِينَ

১৪১। আর যেন আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদারদিগকে আবিলতা ও আবর্জনা হইতে নির্মল করিয়া দেন, এবং কাফেরদিগকে নিপাত করিয়া দেন।

أَمْ حَسِبْتُمْ أَن تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللَّهُ الَّذِينَ جَاهَدُوا مِنكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِينَ

১৪২। হাঁ, তোমরা এই ধারনা কর যে, বেহেশতে যাইয়া প্রবেশ করিবে? অথচ এখন পর্যন্ত আল্লাহ তাহাদিগকে তো দেখিয়ায় লন নাই যাহারা তোমারদের মধ্যে জেহাদ করিয়াছে এবং তাহাদিগকে ও দেখেন নাই, যাহারা (জেহাদে) দৃঢ়পদ থাকে।

وَلَقَدْ كُنتُمْ تَمَنَّوْنَ الْمَوْتَ مِن قَبْلِ أَن تَلْقَوْهُ فَقَدْ رَأَيْتُمُوهُ وَأَنتُمْ تَنظُرُونَ

১৪৩। আর তোমরা তো মৃত্যু কামনা করিতেছিলে — মৃত্যুর সম্মুখীন হওয়ার পূর্ব হইতে। অনন্তর ইহাকে তো তোমরা উম্মিলিত চক্ষে প্রত্যক্ষ করিয়াছ ।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১) তাহাতে মুসলমান ও ছিল কাফেরও ছিল । তাহাদের মধ্যে মতভেদ এবং য্দ্ধু-বিগ্রহ ও হইয়াছিল কিন্তু পরিনামে কাফেরেরাই ধ্বংস প্রাপ্ত হইয়াছিল। (বঃ কোঃ)
২) অর্থাৎ, এই বর্ণনা হইতে খোদাভীরুগণ হেদায়েত ও নসীহত লাভ করিয়া থাকে। হেদায়েত হইল সত্য এবং অসত্যকে অনুধাবন করা, আর নসীহত হইল তদনুযায়ী আমল করা। (বঃ কোঃ)
৩) অর্থাৎ, জয় এবং পরাজয় পরিবর্তনশীল। মুসলদিগকে সহীদ হবার সৌভাগ্য প্রদান করা ও মু‘মিন ও মুনাফেকের পরিচয় যাচায় করা এই যুদ্ধের উদ্দেশ্য ছিল মুসলমানদিগকে এই শিক্ষা দেওয়া যে,পয়গম্বরের আদেশ অমান্য করিলে এইরূপ পরিণতি হয় ।(মুঃ কোঃ)
৪) এই নিপাত দুই প্রকারে হইয়া থাকেঃ (১)যুদ্ধে জয় লাভ করিলে স্পর্ধা বাড়িয়া যায় এবং সংগ্রমে অগ্রসর হইয়া নিপাত হয়; (২) আর মুসলমানদের প্রতি অত্যাচার করিয়া আল্লাহর কোপে পতিত হইয় বিনষ্ট হয়।(বঃ কোঃ)

وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ الرُّسُلُ ۚ أَفَإِن مَّاتَ أَوْ قُتِلَ انقَلَبْتُمْ عَلَىٰ أَعْقَابِكُمْ ۚ وَمَن يَنقَلِبْ عَلَىٰ عَقِبَيْهِ فَلَن يَضُرَّ اللَّهَ شَيْئًا ۗ وَسَيَجْزِي اللَّهُ الشَّاكِرِينَ

১৪৪। আর মোহাম্মাদ তো শুধু রাসূলই। তাহার পূর্বে আরও অনেক রাসূল অতিত হইয়াছেন। অনন্তর তাহার মৃত্যু হয়, অথবা তিনি শহিদই হন, তবে কি তোমরা উল্টা ফিরিয়া যাইবে? আর যে ব্যাক্তি উল্টা ফিরিয়াও যায়, তবে আল্লাহর কোন অনিষ্ট করিতে পারিবে না। এবং আল্লাহ সত্বরই বিনিময় প্রদান করিবেন কৃতজ্ঞ বান্দাদিগকে।

وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَن تَمُوتَ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ كِتَابًا مُّؤَجَّلًا ۗ وَمَن يُرِدْ ثَوَابَ الدُّنْيَا نُؤْتِهِ مِنْهَا وَمَن يُرِدْ ثَوَابَ الْآخِرَةِ نُؤْتِهِ مِنْهَا ۚ وَسَنَجْزِي الشَّاكِرِينَ

১৪৫। আর কাহারও মৃত্যু আসা সম্ভব নহে আল্লাহর আদেশ ব্যতীত; এইভাবে যে, উহার নিদিষ্ট সময় লিখিত থাকে। আর যে ব্যক্তি পার্থিব ফল কামনা করে, আমি তাহাকে পার্থিব অংশ প্রদান করিয়া থাকি। আর যে ব্যক্তি পারলৌকিক ফল কামনা করে, আমি তাহাকে পারলৌকিক অংশ প্রদান করিব। এবং আমি সত্বরই বিনিময় প্রদান করিব কৃতজ্ঞ বান্দাদিগকে।

وَكَأَيِّن مِّن نَّبِيٍّ قَاتَلَ مَعَهُ رِبِّيُّونَ كَثِيرٌ فَمَا وَهَنُوا لِمَا أَصَابَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَمَا ضَعُفُوا وَمَا اسْتَكَانُوا ۗ وَاللَّهُ يُحِبُّ الصَّابِرِينَ

১৪৬। আর অনেক নবী হইয়াছেন, যাহাদের সাথি হইয়া বহু খোদা ভক্ত লোক জেহাদ করিয়াছেন। সুতরাং না সাহস হারাইয়াছেন তাহারা ঐ বিপদের কারণে যাহা আল্লাহর রাস্তায় তাহাদের উপর পতিত হইয়াছে, আর না তাহাদের শক্তি খর্ব হইয়াছে, আর না তাহারা দমিত হইয়াছেন। আর আল্লাহর এইরূপ দৃঢ় – চেতা লোকদিগকে ভালোবাসেন।

وَمَا كَانَ قَوْلَهُمْ إِلَّا أَن قَالُوا رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِي أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ

১৪৭। আর তাহাদের জবান হইতেও তো ইহা ব্যতিত আর কিছুই বাহির হয় না যে, তাহারা আরয করিল — হে আমাদের রব্ব! আমাদের গুনাহ সমূহ এবং আমাদের কর্মসমূহে আমাদের সীমা অতিক্রমকে মাফ করিয়া দিন, এবং আমাদিগকে দৃঢ়পদ রাখুন, আর আমাদিগকে কাফের সম্প্রদায়ের উপর বিজয়ী করুন।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১) পূর্ববতী বৎসর বদর যুদ্ধে কতিপয় সাহাবি শহিদ হন তাহাদের উচ্চ মর্যাদা সম্বন্ধে অবহিত হইয়া কেহ কেহ সুযোগ আসিলে সাহাদত বরন করার ইচ্ছা প্রকাশ করিয়াছিল, কিন্তু ওহুদের যুদ্ধে সমাগত হইলে তাহাদের মধ্যে অনেকেরই পদস্খলন হইল। তৎসম্বন্ধে এই আয়াতটি নাযিল হয়।(লোঃ নুঃ)
২) শানে নুযুলঃ ওহুহের যুদ্ধে যখন মুসলমানেরা ছত্রভঙ্গ হইয়া পড়িল এবং হুযুর (দঃ) আহত এক গর্তে পতিত হইলেন। তখন শত্রুপক্ষ হইতে সংবাদ রটিল, হুযুর শহিদ হইয়াছেন। এই সংবাদ শ্রবণ করিয়া অধিকাংশ সাহাবী ভগ্নমনোরথ হইয়া পড়িলেন এবং কেহ কেহ পশ্চাদপসরণে উদ্যত হইল। পূর্ববতী আয়াতে সে সম্বন্ধেই তিরষ্কার করা হইয়াছে অতঃপর তাহারা ওযরখাহী করিলেন, ‘‘আমরা হুযুুরের নিহত হওয়ার সংবাদ শ্রবণ করিয়া ভীত হইয়া পলায়ন করিয়ছিলাম’’। তখন আল্লাহ এই আয়াতটি নাযিল করেন। (মুঃ কোঃ)

فَآتَاهُمُ اللَّهُ ثَوَابَ الدُّنْيَا وَحُسْنَ ثَوَابِ الْآخِرَةِ ۗ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ

১৪৮। অনন্তর আল্লাহ তাহাদিগকে পার্থিব বিনিময়ও দিয়াছেন এবং পরকালে ও উত্তম বিনিময় দিয়াছেন । আর এইরূপ সদাচারীদেরকে আল্লাহ ভালোবাসেন ।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن تُطِيعُوا الَّذِينَ كَفَرُوا يَرُدُّوكُمْ عَلَىٰ أَعْقَابِكُمْ فَتَنقَلِبُوا خَاسِرِينَ

১৪৯। হে ঈমাণদারগণ! যদি তোমরা কাফেরদের কথা মানিয়া লও, তবে তাহারা তোমাদিগকে উল্টাদিকে ফিরিয়া দিবে, ফলে তোমরা অকৃতকার্য হইয়া যাইবে ।

بَلِ اللَّهُ مَوْلَاكُمْ ۖ وَهُوَ خَيْرُ النَّاصِرِينَ

১৫০। বরং আল্লাহ তোমাদের দোস্ত এবং তিনি সর্বোত্তম সাহায্যকারী।

سَنُلْقِي فِي قُلُوبِ الَّذِينَ كَفَرُوا الرُّعْبَ بِمَا أَشْرَكُوا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا ۖ وَمَأْوَاهُمُ النَّارُ ۚ وَبِئْسَ مَثْوَى الظَّالِمِينَ

১৫১। আমি এখনই ভীতির সৃষ্টি করিয়াদিতেছি কাফেরদের অন্তরে–এ কারণে যে, তাহারা আল্লাহর শরীক এমন বস্তুকে সাব্যস্ত করিয়াছে যাহার অনুকূলে আল্লাহ কোনই প্রমাণ নাযিল করেন নাই। এবং তাহাদের বাসস্থান জাহান্নাম। বস্তুতঃ উহা অনাচারীদের নিকৃষ্ট বাসস্থান।

وَلَقَدْ صَدَقَكُمُ اللَّهُ وَعْدَهُ إِذْ تَحُسُّونَهُم بِإِذْنِهِ ۖ حَتَّىٰ إِذَا فَشِلْتُمْ وَتَنَازَعْتُمْ فِي الْأَمْرِ وَعَصَيْتُم مِّن بَعْدِ مَا أَرَاكُم مَّا تُحِبُّونَ ۚ مِنكُم مَّن يُرِيدُ الدُّنْيَا وَمِنكُم مَّن يُرِيدُ الْآخِرَةَ ۚ ثُمَّ صَرَفَكُمْ عَنْهُمْ لِيَبْتَلِيَكُمْ ۖ وَلَقَدْ عَفَا عَنكُمْ ۗ وَاللَّهُ ذُو فَضْلٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ

১৫২। আর নিশ্চয়, আল্লাহ তো তোমাদের সহিত প্রতিশ্রতিকে সত্য করিয়া দেখাইয়াছিলেন, যখন তোমরা ঐ কাফেরদিগকে আল্লাহর হুকুমে হত্যা করিতেছিলে–অনন্তর তোমরা যখন নিজেরাই দুর্বল হইয়া পড়িলে, এবং পরস্পর আদেশ পালনে মতবিরোধ করিতে লাগিলে, এবং তোমরা নাফরমানী করিলে, তোমাদিগকে তোমাদের বঞ্ছিত বিষয় প্রদশন করাইবার পর। তোমাদের মধ্যে কেহ কেহ তো এইরূপ ছিল, যাহারা দুনিয়া কামনা করিতেছিল, এবং কেহ কেহ তোমাদের মধ্যে এইরূপ ছিল, যাহারা (শুধু) পরকালকামী ছিল। তৎপর আল্লাহ তোমাদিগকে সেই কাফেরগণ ( এর উপর বিজয়লাভ ) হইতে হটাইয়া দিলেন — তোমাদিগকে পরিক্ষা করার উদ্দেশ্য। দৃঢ়রূপে জানিয়া লও যে, আল্লাহ তোমাদিগকে ক্ষমা করিয়া দিয়াছেন। আর আল্লাহ অতি অনুগ্রহশীল মু’মিনদের প্রতি।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১) অর্থাৎ তোমরা বিবেচনা শক্তিকে দুর্বল হইয়া হুযুরের নিদের্শ অমান্য করিয়াছিলে। হুযুর ইবনে জুবাইরের নেতৃত্বে পঞ্চাশ জন সৈনকে সর্বদা গিরিপথ রক্ষা করিতে বলিয়াছিলেন। কিন্তু ইহাদের মধ্যে কেহ কেহ ভুল বশতঃ এই মত প্রকাশ করিলেন যে,পলায়ন নোন্মুখ কাফেরদের পশ্চাদ্ধবন করাই আমাদের পক্ষে সমীচীন । এখানে তাহাদের প্রতি তিরস্কার করা হইয়াছে। (বঃ কোঃ)

إِذْ تُصْعِدُونَ وَلَا تَلْوُونَ عَلَىٰ أَحَدٍ وَالرَّسُولُ يَدْعُوكُمْ فِي أُخْرَاكُمْ فَأَثَابَكُمْ غَمًّا بِغَمٍّ لِّكَيْلَا تَحْزَنُوا عَلَىٰ مَا فَاتَكُمْ وَلَا مَا أَصَابَكُمْ ۗ وَاللَّهُ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ

১৫৩। স্মরন কর, যখন তোমরা (পলায়নার্থে) আরোহণ করিতেছিলে, এবং কাহারও প্রতি ফিরিয়াও দেখিতেছিলে না, আর রাসূল পশ্চাৎ দিক হইতে তোমাদিগকে ডাকিতেছিলেন। অনন্তর আল্লাহ তোমাদিগকে তৎবিনিময়ে দুঃখ দিলেন, দুঃখ দেওয়ার দরুন; যেন তোমরা বিষন্ন না হও, না ঐ বস্তুর জন্য যাহা তোমাদের হাত ছাড়া হইয়া যায়, আর না উহার জন্য যে বিপদ তোমাদের উপর পতিত হয়। আর আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজের পূর্ণ খবর রাখেন।

ثُمَّ أَنزَلَ عَلَيْكُم مِّن بَعْدِ الْغَمِّ أَمَنَةً نُّعَاسًا يَغْشَىٰ طَائِفَةً مِّنكُمْ ۖ وَطَائِفَةٌ قَدْ أَهَمَّتْهُمْ أَنفُسُهُمْ يَظُنُّونَ بِاللَّهِ غَيْرَ الْحَقِّ ظَنَّ الْجَاهِلِيَّةِ ۖ يَقُولُونَ هَل لَّنَا مِنَ الْأَمْرِ مِن شَيْءٍ ۗ قُلْ إِنَّ الْأَمْرَ كُلَّهُ لِلَّهِ ۗ يُخْفُونَ فِي أَنفُسِهِم مَّا لَا يُبْدُونَ لَكَ ۖ يَقُولُونَ لَوْ كَانَ لَنَا مِنَ الْأَمْرِ شَيْءٌ مَّا قُتِلْنَا هَاهُنَا ۗ قُل لَّوْ كُنتُمْ فِي بُيُوتِكُمْ لَبَرَزَ الَّذِينَ كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقَتْلُ إِلَىٰ مَضَاجِعِهِمْ ۖ وَلِيَبْتَلِيَ اللَّهُ مَا فِي صُدُورِكُمْ وَلِيُمَحِّصَ مَا فِي قُلُوبِكُمْ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ

১৫৪। অনন্তর আল্লাহ সেই দুঃখের পর তোমাদের প্রতি নাযিল করিলেন শান্তি অর্থাৎ তন্দ্রা, যাহা তোমাদের একদলকে আচ্ছন্ন করিতেছিল, আর একদল উহারা ছিল যাহারা স্বীয় প্রাণেরই চিন্তায় বিব্রত ছিল, উহারা আল্লাহর সহিত অবাস্তব ধারনা করিতেছিল, যাহা ছিল মূর্খতাসুলভ ধানণা। উহারা এইরূপ বলিতেছিল–আমাদের কি কোন অধিকার আছে? আপনি বলিয়া দিন, সমস্ত অধিকার তো আল্লাহরই; তাহারা স্বীয় অনন্তর সমূহে এমন বিষয় গোপন রাখে, যাহা আপনাদের সমীপে প্রকাশ করে না। বলে, যদি আমাদের কোন এখতিয়ার চলিত, তবে আমরা এখানে নিহত হইতাম না। আপনি বলিয়া দিন, যদি তোমরা নিজেদের গৃহে থাকিতে, তথাপিও যাহাদের জন্য নিহত হওয়া নির্ধারিত ছিল, তাহারা বাহির হইয়া পড়িত ঐ স্থানের দিকে যে স্থানে তাহারা নিপতিত আছে। আর এসমস্ত যাহা কিছু ঘটিয়াছে, এই জন্য যেন আল্লাহ তোমাদের অন্তরের বিষয় পরিক্ষা করেন আর যেন তোমাদের অন্তরের বিষয় নির্মল করিয়া দেন। অবশ্য আল্লাহ তা‘আলা অন্তরের সমস্ত গোপনীয় বিষয় পূর্ণরূপে অবগত আছেন।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১) অর্থাৎ প্রথমে মুসলমনেরাই জয়ী ছিল, কাফেরেরা পলায়ন করিতে লাগিল এবং মুসলমান তাহাদিগকে দৌড়াইয়া দৌড়াইয়া হত্যা করিতে লাগিলেন। বিজয়ের চিহ্ন তাহাদের মুখমন্ডলে বিদ্যামান। কেহ গনীমতের মালের জন্য আনন্দিত, কেহ ইসলামের বিজয়ের জন্য আনন্দিত, কিন্তু গিরিপথ রক্ষী সৈন্য তাহাদের কর্তব্যে অবহেলা করিলে যুদ্ধের গতি বিরূপ আকার ধারন করিল। অর্থাৎ গিরিপথ ত্যাগ করিয়া লন্ঠনে প্রবৃত্ত হইলে সুযোগ পাইয়া শত্রুরা পশ্চাদ্দিক হইতে আক্রমণ করিল।যদ্দরুন মুসলমানগণ ছত্রভঙ্গ হইয়া পড়িল। (মুঃ কোঃ)

إِنَّ الَّذِينَ تَوَلَّوْا مِنكُمْ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ إِنَّمَا اسْتَزَلَّهُمُ الشَّيْطَانُ بِبَعْضِ مَا كَسَبُوا ۖ وَلَقَدْ عَفَا اللَّهُ عَنْهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ حَلِيمٌ

১৫৫। নিশ্চয়, তোমাদের মধ্যে হইতে যাহারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করিয়াছিল– যে দিন উভয় দল সম্মুখীন হইয়াছিল, ইহা ভিন্ন আর কিছুই নহে যে, শয়তান তাহাদেরকে পদস্থলিত করিয়া দিয়াছিল তাহাদের কতিপয় আমলের দরুন। এবং দৃঢ় বিশ্বাস রাখ যে, আল্লাহ তাহাদিগকে ক্ষমা করিয়া দিয়াছেন। নিশ্চয়, আল্লাহ মহা ক্ষমাপরায়ন, অতীব ধৈয্যশীল।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ كَفَرُوا وَقَالُوا لِإِخْوَانِهِمْ إِذَا ضَرَبُوا فِي الْأَرْضِ أَوْ كَانُوا غُزًّى لَّوْ كَانُوا عِندَنَا مَا مَاتُوا وَمَا قُتِلُوا لِيَجْعَلَ اللَّهُ ذَ‌ٰلِكَ حَسْرَةً فِي قُلُوبِهِمْ ۗ وَاللَّهُ يُحْيِي وَيُمِيتُ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ

১৫৬। হে ঈমানদারগণ! তোমরা তাহাদের মত হইও না যাহারা কাফের এবং নিজেদের ভাইদের সম্বন্ধে বলে– যখন তারা ভূপৃষ্ঠের কোথাও ভ্রমন করে, কিংবা কোথাও গাযী হয় (যুদ্ধে গমন করে)। যদি তাহারা আমাদের নিকট থাকিত, তবে মরিতও না এবং নিহতও হইত না। ফলে আল্লাহ এই উক্তিকে তাহাদের অন্তরে পরিতাপের কারণ করিয়া দেন। বস্তুতঃ আল্লাহই মারেন এবং বাঁচান এবং তোমরা যাহাকিছু কর আল্লাহ সবই দেখিতেছেন ।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১) অর্থাৎ যে পরিমান ক্ষতি হওয়া বহ্যিক ছিল। (বঃ কোঃ)
২) কেননা এই বিপদের সময় মুনাফেকদের মুনাফেকী ধরা পড়িয়াগিয়াছে এবং মু‘মিনদের ঈমান আরও মজবুত এবং পরিপক্ক হইয়াছে ।(বঃ কোঃ)
৩) অর্থাৎ তাহারা এমন কিছু অন্যায় ও পাপকার্য করিয়াছিল ,তদ্দরুন তাহাদের দ্বারা আরও কিছু পাপ কার্য করিয়ালইতে শয়তানের লোভ হইল। ঘটনাচত্রেু তাহার সেই লোভ পূর্ণ হইয়া গেল। (বঃ কোঃ)

وَلَئِن قُتِلْتُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَوْ مُتُّمْ لَمَغْفِرَةٌ مِّنَ اللَّهِ وَرَحْمَةٌ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ

১৫৭। আর যদি তোমরা আল্লাহর পথে নিহত হও কিংবা মৃত্যুবরণ কর, তবে নিশ্চয়, আল্লাহ হইতে প্রাপ্ত মার্জনা ও করুণা উহা হইতে উত্তম যাহা তাহারা সঞ্চয় করিতেছে।

وَلَئِن مُّتُّمْ أَوْ قُتِلْتُمْ لَإِلَى اللَّهِ تُحْشَرُونَ

১৫৮। আর যদি তোমরা (স্বভাবিকভাবে) মৃত্যুবরণ কর কিংবা নিহত হও, (তবুও) নিশ্চয়, তোমাদিগকে আল্লাহর সমীপে একত্রিত করা হইবে।

فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللَّهِ لِنتَ لَهُمْ ۖ وَلَوْ كُنتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ ۖ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ ۖ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ

১৫৯। ইতঃপর আল্লাহর করুণায় আপনি তাহাদের প্রতি বিনম্র রহিয়াছেন, আর যদি আপনি কর্কশ ও কঠোর স্বভাব হইতেন, তবে ইহারা সকলে আপনার নিকট হইতে বিক্ষিপ্ত হইয়া পড়িত। সুতরাং আপনি তাহাদিগকে মা’ফ করিয়া দিন এবং আপনি তাহাদিগের মাগফেরাতের জন্য প্রার্থনা করুণ, আর তাহাদের নিকট হইতে বিশেষ বিশেষ ব্যাপারে পরামর্শ নিতে থাকুন; অনন্তর যখন আপনি সংকল্প দৃঢ় করিয়া লন, তখন আল্লাহর প্রতি নির্ভর করুন। নিশ্চয়, আল্লাহ এমন নির্ভরশীলদিগকে ভালোবাসেন।

إِن يَنصُرْكُمُ اللَّهُ فَلَا غَالِبَ لَكُمْ ۖ وَإِن يَخْذُلْكُمْ فَمَن ذَا الَّذِي يَنصُرُكُم مِّن بَعْدِهِ ۗ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ

১৬০। যদি আল্লাহ তোমাদিগকে সাহায্য করেন, তবে তো কেহ তোমাদের উপর জয়ী হতে পারেনা, আর যদি তিনি তোমাদেরকে সাহায্য না করেন, তবে তাহার পর এমন কে আছে, যে তোমাদের সাহায্য করিবে? আর শুধু আল্লাহর উপর মু’মিনদের ভরসা রাখা চাই।

وَمَا كَانَ لِنَبِيٍّ أَن يَغُلَّ ۚ وَمَن يَغْلُلْ يَأْتِ بِمَا غَلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۚ ثُمَّ تُوَفَّىٰ كُلُّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ

১৬১। আর নবীর শাসন এই নয় যে, তিনি খেয়ানত করেন। অথচ যে ব্যক্তি খেয়ানত করিবে, সে ব্যক্তি নিজের এই খিয়ানতকৃত বস্তু কিয়ামতের দিন উপস্থিত করিবে। অতঃপর প্রত্যেকে তাহার কৃতকর্মের পূর্ণ বিনিময় প্রাপ্ত হইবে, এবং তাহাদের প্রতি মোটেই যুলুম করা হইবে না।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১) কোন অবস্থাতেই আল্লাহর সমীপে উপস্তিত হওয়া হইতে আত্মগোপন করিতে পারিবে না। বস্তুত ধর্ম পথে প্রাণদান করা মাগফেরাত ও রহমত লাভের কারণ বটে। কাজেই স্বাভাবিক মৃত্যু অপেক্ষা ধর্মপথে শহীদ হওয়াই সর্বতোভাবে শ্রেষ্ঠ বলিয়া প্রমাণিত হইল। (বঃ কোঃ)
২) বদরের যুদ্ধের গনীমতের মালের মধ্যে হইতে একটি চাদর হারাইয়া যায়।গনীমালের স্তুপ হইতে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী কিছু বাছিয়া উঠাইয়া লওয়ার অধিকার হুযুরের আছে। এই ভাবিয়া কোন একজন মুসলমান গাযী অথবা রাসূলের প্রতি আস্থাহীন কোন মোনফেক বলিল, হইত ইহা হুযুর নিয়াছেন । এতদ- সর্ম্পকে আয়াতটি নাযিল  হয় । ইহার সারর্মম এই যে, অধিকার থাকিলে ও গোপনে নেওয়া প্রকৃত পক্ষে খেয়ানত করার শামিল । বস্তুতঃ নবীর স্বভাব খেয়ানত করা হইতে পবিত্র। (বঃ কোঃ)

أَفَمَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَ اللَّهِ كَمَن بَاءَ بِسَخَطٍ مِّنَ اللَّهِ وَمَأْوَاهُ جَهَنَّمُ ۚ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ

১৬২। সুতরাং যে ব্যাক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির অনুগত, তিনি সেই ব্যক্তির সদৃশ হইতে পারেন, যে আল্লাহর গযবের যোগ্য? আর তাহার বাসস্থান জহান্নাম, এবং ইহা নিকৃষ্ট গন্তব্যস্থান।

هُمْ دَرَجَاتٌ عِندَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ بَصِيرٌ بِمَا يَعْمَلُونَ

১৬৩। এসমস্ত লোক মর্যদায় বিভিন্ন স্তরের হইবে আল্লাহর নিকট। আর আল্লাহ পূর্ণরূপে দেখেন তাহার আমলসমূহ।

لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ

১৬৪। বস্তুতঃ আল্লাহ মু’মিনদের প্রতি অনুগ্রহ করিয়াছেন, যখন তাহাদের প্রতি তাহাদের মধ্যে হইতে এমন এক নবী প্রেরণ করিয়াছেন, যিনি তাহাদিগকে আল্লাাহর আয়াত সমূহ তিলওয়াত করিয়া শুনান এবং তাহাদিগকে পরিশুদ্ধ করিতে থাকেন এবং কিতাব ও জ্ঞানের শিক্ষা দিতে থাকেন, এবং নিশ্চয় তাহারা পূর্ব হইতে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে ছিল।

أَوَلَمَّا أَصَابَتْكُم مُّصِيبَةٌ قَدْ أَصَبْتُم مِّثْلَيْهَا قُلْتُمْ أَنَّىٰ هَـٰذَا ۖ قُلْ هُوَ مِنْ عِندِ أَنفُسِكُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

১৬৫। আর যখন তোমাদের এইরূপ পরাজয় হইল যাহা অপেক্ষা দ্বিগুন তোমরা জয় লাভ করিয়া ছিলে, তবে কি এমন সময় তোমরা এইরূপ বলিতেছ যে, ইহা কোথা হইতে হইল? আপনি বলিয়া দিন, এই পরাজয় বিশেষ করিয়া তোমাদের পক্ষ হইতে হইয়াছে। নিশ্চয়; সর্ববিষয়োপরি আল্লাহ তা‘আলার পূর্ণ ক্ষমতা রহিয়াছে।

وَمَا أَصَابَكُمْ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ فَبِإِذْنِ اللَّهِ وَلِيَعْلَمَ الْمُؤْمِنِينَ

১৬৬। আর যে বিপদ তোমাদের উপর পতিত হইয়া ছিল–যে দিন উভয় দল পরস্পর মুখোমুখি হইয়াছিল। তাহা আল্লাহর ইচ্ছা ক্রমেই হইয়াছিল। এবং যেন তিনি মু’মিনদিগকে দেখিয়া লন।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১) বিশ্বাসঘাতক ব্যক্তি যাহা আত্মসাৎ করিয়াছে কিয়ামতের দিন তাহা লইয়া উপস্থিত হইবে। এসম্বন্ধে হাদীসে হুযুর (দঃ) বলিয়াছেন দেখ আমি যেন কিয়ামতে কাহাকেও এইরূপ আবস্থায় না দেখি যে, তাহার কাধে একটি উট চাপান রহিয়াছে, সে চিৎকার করিয়া আমার নিকট সাহায্য চাহিতেছে। আমি পরিস্কার বলিয়া দিতেছি যে, আমি এখন আর কিছু করিতে পারিব না। আমি তোমাদের নিকট আল্লাহর আদেশ পৌছাইয়া দিয়াছিলাম। (বঃ কোঃ)
২) অর্থাৎ তোমরা বদরের যুদ্ধে সত্তর জন কাফের হত্যা করিয়াছ এবং সত্তর জনকে বন্দী করিয়াছ। ওহুদের যুদ্ধে তোমাদের সত্তর জন শহীদ হইয়াছে তাহাতে দুঃখিত হইতেছে কেন? ইহা তো তোমাদেরকৃত ত্রুটিরই ফল। (মুঃ কোঃ)

وَلِيَعْلَمَ الَّذِينَ نَافَقُوا ۚ وَقِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا قَاتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَوِ ادْفَعُوا ۖ قَالُوا لَوْ نَعْلَمُ قِتَالًا لَّاتَّبَعْنَاكُمْ ۗ هُمْ لِلْكُفْرِ يَوْمَئِذٍ أَقْرَبُ مِنْهُمْ لِلْإِيمَانِ ۚ يَقُولُونَ بِأَفْوَاهِهِم مَّا لَيْسَ فِي قُلُوبِهِمْ ۗ وَاللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا يَكْتُمُونَ

১৬৭। আর ঐ সকল লোকদিগকেও দেখিয়া লন, যাহারা মুনাফেকীর কাজ করিয়াছে; এবং তাহাদিগকে এইরূপ বলা হইয়াছিল যে–আস, আল্লাহর পথে যুদ্ধ কর অথবা শত্রুদের প্রতিরোধকারী হইয়া যাও। তাহারা বলিল, যদি আমরা কোন নিয়ামত যুদ্ধ দেখিতাম, তবে অবশ্যই তোমাদের সঙ্গী হইয়া যাইতাম। এই মুনাফেকরা সেই দিন কুফরেরই অধিক নিকটবর্তী হইয়াগিয়াছিল ঈমানের নিকটবর্তী হওয়া অপেক্ষা। ইহারা মুখে এমন উক্তি করে, যাহা তাহাদের অন্তরে নাই। আর আল্লাহ সমধিক জ্ঞাত আছেন, যাহাকিছু তাহারা অন্তরে পোষন করে।

الَّذِينَ قَالُوا لِإِخْوَانِهِمْ وَقَعَدُوا لَوْ أَطَاعُونَا مَا قُتِلُوا ۗ قُلْ فَادْرَءُوا عَنْ أَنفُسِكُمُ الْمَوْتَ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ

১৬৮। ইহারা এমন লোক যাহারা স্বীয় ভাইদের সম্বন্ধে (গৃহে) বসিয়া সমালোচনা করে — যদি আমাদের কথা মানিত, তবে নিহত হইত না। আপনি বলিয়া দিন, আচ্ছা, তবে নিজেদের উপর হইতে মৃত্যুকে সরাইয়া দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হইয়া থাক।

وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا ۚ بَلْ أَحْيَاءٌ عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ

১৬৯। আর যাহা আল্লাহ তা‘আলার পথে নিহত হইয়াছে তাহাদিগকে (অন্যান্য মৃতের ন্যায়) মৃত ধারনা করিও না; বরং তাহারা জীবিত, স্বীয় রবের নৈকট্য প্রাপ্ত, তাহারা রেযেকও প্রাপ্ত হয়।

فَرِحِينَ بِمَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ وَيَسْتَبْشِرُونَ بِالَّذِينَ لَمْ يَلْحَقُوا بِهِم مِّنْ خَلْفِهِمْ أَلَّا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ

১৭০। তাহারা পরিতুষ্ট ঐ সমস্ত বস্তুতে যাহা তাহাদিগকে আল্লাহ তা‘আলার স্বীয় অনুগ্রহে দান করিয়াছেন, আর যাহারা তাহাদের নিকট পৌছে নাই, পিছনে (দুনিয়াতে) রহিয়া গিয়াছে, উহাদের এই আবস্থার প্রতিও তাহারা (শহীদানরা) সন্তুষ্ট হয় যে, তাহাদেরও কোনভয় (জনক অবস্থা) ঘটিবে না। এবং তাহারা বিষন্ন ও হইবে না।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১) ইহা যুদ্ধ নহে, কেননা শত্রু সৈন্য তোমাদের চেয়ে তিন চারি গুণ বেশি। তদুপরী তাহাদের সাজ সরঞ্জামও অধিক এমতা অবস্থায় যুদ্ধ করার অর্থ ধ্বংসের সম্মুখিন হওয়া ।ইহাকে নিয়মিত যুদ্ধ বলা যায় না (বঃ কোঃ)
২) কেননা প্রথম হইতেও ইহারা মু‘মিন ছিল না; কিন্তু মুসলমানদের সম্মুখে অনুকুল বলি আওড়াইত, সে দিন চক্ষু লজ্জা এইরূপে হারাইয়া বসিল যে, স্পষ্টরূপে বিরধিতা করিতে লাগিল অতএব তাহারা পূর্বে যেমন নিজেদিগকে ঈমাণের নিকটবর্তী মনে করিত আজ উহা কুফরের নিকটবর্তী অবস্থায় পরিবর্তীত হইল। (বঃ কোঃ)
৩) কেননা, তাহারা মনে মনে স্থির করিয়াছিল, নিয়মিত যুদ্ধ হইলে ও মুসলমানদের সাহায্য করিবেনা। (বঃ কোঃ)
৪) অর্থাৎ মৃত্যুকে কেহ কখন প্রতিরোধ করিতে পারে না। মৃত্যু ঘরে আসিবে। যুদ্ধ ক্ষেত্রেও আসিবে। অতএব যুদ্ধ ক্ষেত্র হইতে সরিয়া থাকিলে কি লাভ? (বঃ কোঃ)

يَسْتَبْشِرُونَ بِنِعْمَةٍ مِّنَ اللَّهِ وَفَضْلٍ وَأَنَّ اللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجْرَ الْمُؤْمِنِينَ

১৭১। তাহারা আনন্দিত হয় আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহের দরুন, আর এই জন্য যে, আল্লাহ মু’মিনদের আমলের প্রতিদান ব্যর্থ করেন না।

الَّذِينَ اسْتَجَابُوا لِلَّهِ وَالرَّسُولِ مِن بَعْدِ مَا أَصَابَهُمُ الْقَرْحُ ۚ لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا مِنْهُمْ وَاتَّقَوْا أَجْرٌ عَظِيمٌ

১৭২। যাহারা আল্লাহ ও তাহার রাসূলের ডাকে সারা দিয়াছে ইহার পর যে, তাহারা আঘাত প্রাপ্ত হইয়াছিল। তন্মধ্য যাহারা নেককার ও মুত্তাক্কী তাহাদের জন্য মহা পুরস্কার রহিয়াছে।

الَّذِينَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ إِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ إِيمَانًا وَقَالُوا حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ

১৭৩। তাহারা এমন লোক যে, (কোন কোন) মানুষ তাহাদিগকে বলিল, নিশ্চয়, তাহারা (কাফেরেরা) তোমাদের (বিরুদ্ধে যুদ্ধের) জন্য আয়োজন করিয়াছে, সুতরাং তোমাদের তাহাদিগকে ভায় করা উচিত। পরন্ত ইহা তাহাদের ঈমানকে আরও বর্ধিত করিয়া দিল, আর তাহারা বলিল যে, আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনিই যাবতীয় কর্ম সমর্পণের জন্য উত্তম।

فَانقَلَبُوا بِنِعْمَةٍ مِّنَ اللَّهِ وَفَضْلٍ لَّمْ يَمْسَسْهُمْ سُوءٌ وَاتَّبَعُوا رِضْوَانَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ ذُو فَضْلٍ عَظِيمٍ

১৭৪। সুতরাং তাহার প্রত্যাবর্তন করিল খোদার নেয়ামত এবং অনুগ্রহে পরিপুষ্ট হইয়া। তাহাদেরকে কোন অসুবিধা মোটেই স্পর্শ করে নাই এবং তাহারা আল্লাহর সন্তুষ্টির অনুগত রহিয়াছে; আর আল্লাহ অতি অনুগ্রহশীল।

إِنَّمَا ذَ‌ٰلِكُمُ الشَّيْطَانُ يُخَوِّفُ أَوْلِيَاءَهُ فَلَا تَخَافُوهُمْ وَخَافُونِ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ

১৭৫। উহারা শয়তান ভিন্ন আর কিছু নহে, সে (তোমাদিগকে) স্বীয় বন্ধুদের ভয় প্রদর্শন করে; সুতরাং তোমরা তাহাদিগকে ভয় করিও না, এবং আমাকেই ভয় কর, যদি তোমরা মু’মিন হও।

وَلَا يَحْزُنكَ الَّذِينَ يُسَارِعُونَ فِي الْكُفْرِ ۚ إِنَّهُمْ لَن يَضُرُّوا اللَّهَ شَيْئًا ۗ يُرِيدُ اللَّهُ أَلَّا يَجْعَلَ لَهُمْ حَظًّا فِي الْآخِرَةِ ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ

১৭৬। আর আপনার জন্য ঐ সমস্ত লোক চিন্তার কারণ না হওয়া উচিত, যাহারা দ্রুত কুফুরিতে লিপ্ত হয়, নিশ্চয়, তাহারা আল্লাহর (দ্বীনের) একটুও অনিষ্ট করিতে পারিবে না; আল্লাহর ইচ্ছা ইহাই যে, তাহাদিগকে পরকালে অদৌ কোন অংশ না দেন, এবং তাহাদের কঠোর শাস্তি হইবে।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১) ওহুদের যুদ্ধ হইতে প্রত্যাবর্তনকালে পথে কাফেরদের আক্ষেপ হইল, মুসলমানদিগকে পরাজিত করিয়া সমূলে বিনাশ করিলাম না, আবার চল শেষ করিয়া আসি । আল্লাহ যাহাদের অন্তরে ভয়ের সঞ্চর করিয়া দিলেন । অতএব তাহার মক্কাভীমুখে ফিরিয়া গেল, পথিমধ্যে কোন যাত্রীকে বলিয়া গেল, তোমরা মদীনায় পৌছিয়া কোন উপায়ে মুসলমানদের মনে আমাদের ভয় সঞ্চার করিও । হুযুর ওহী মারফত ইহা জানিতে পারিয়া সাহাবাগণসহ কাফেরদের পশ্চাদ্ধবন করিয়া হামরাউল আসাদ নামক স্থানে পৌছিয়াশিবির স্থাপন করিলেন। (বঃ কোঃ)
২) আবূ সুফিয়ান খবর পাঠাইল ক্বোরাইশগণ পুনরায় মদীনা আক্রমন করিবে। এই সংবাদ প্রাপ্ত হইয়া সাহাবাগণ বলিয়া উঠিলেন আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং উত্তম কার্যনির্বাহক। আমরা কোন ভয় করি না। (বঃ কোঃ)

إِنَّ الَّذِينَ اشْتَرَوُا الْكُفْرَ بِالْإِيمَانِ لَن يَضُرُّوا اللَّهَ شَيْئًا وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

১৭৭। নিশ্চয়, যাহারা ঈমানের স্থলে কুফরকে গ্রহন করিয়াছে,তাহারা আল্লাহর বিন্দমাত্র ক্ষতিও করিতে পারিবে না ,আর তাহাদের যন্ত্রনাময় শাস্তি হইবে।

وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّمَا نُمْلِي لَهُمْ خَيْرٌ لِّأَنفُسِهِمْ ۚ إِنَّمَا نُمْلِي لَهُمْ لِيَزْدَادُوا إِثْمًا ۚ وَلَهُمْ عَذَابٌ مُّهِينٌ

১৭৮। আর যাহারা কুফর করিতেছে তাহারা যেন কখনও এই ধারনা না করে যে, আামি তাহাদিগকে যে অবকাশ দিতেছি –ইহা তাহাদের জন্য মঙ্গলজনক! আমি ইহাদিগকে শুধু এই জন্য অবকাশ দিতেছি, যেন তাহাদের পাপ আরও বৃদ্ধি পায়। আর তাহাদের লাঞ্ছনাময় শাস্তি হইবে।

مَّا كَانَ اللَّهُ لِيَذَرَ الْمُؤْمِنِينَ عَلَىٰ مَا أَنتُمْ عَلَيْهِ حَتَّىٰ يَمِيزَ الْخَبِيثَ مِنَ الطَّيِّبِ ۗ وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَيْبِ وَلَـٰكِنَّ اللَّهَ يَجْتَبِي مِن رُّسُلِهِ مَن يَشَاءُ ۖ فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ ۚ وَإِن تُؤْمِنُوا وَتَتَّقُوا فَلَكُمْ أَجْرٌ عَظِيمٌ

১৭৯। আল্লাহ মুসলমানদিগকে এই অবস্থায় রাখিতে চাহেন না যে অবস্থায় তোমরা এখন (বর্তমান) আছ, যে পর্যন্ত না অপবিত্রকে পবিত্র হইতে পৃথক করেন; এবং আল্লাহ এইরূপ অদৃশ্য বিষয় তোমাদিগকে অবহিত করেন না, হাঁ, আল্লাহ স্বয়ং যাহাকে চাহেন তাহাকে (পরিজ্ঞাত করার জন্য) মনোনীত করেন–আর তাহারা আল্লাহর পয়গম্বর হইবেন। সুতরাং এখন আল্লাহর এবং তাহার সকল রাসূলের প্রতি ঈমান আন। আর যদি তোমরা ঈমান আন এবং পরহেয কর, তাহা হইলে তোমাদের জন্য মহা পুরস্কার রহিয়াছে।

وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ هُوَ خَيْرًا لَّهُم ۖ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّهُمْ ۖ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُوا بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۗ وَلِلَّهِ مِيرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ

১৮০। আর কখনও যেন ধারণা না করে এইরূপ লোক, যাহারা কৃপণতা করে ঐ বস্তুতে যাহা তাহাদিগকে আল্লাহ স্বীয় করুণায় দান করিয়াছেন– উহা তাহাদের জন্য মঙ্গলজনক হইবে; বরং তাহা উহাদের জন্য খুবই অমঙ্গলজনক। তাহাদিগকে কিয়ামতের দিন তওক পরাইয়া দেওয়া হইবে উহার (ঐ মালে) যাহাতে তাহারা কৃপণতা করিয়াছিল। বস্তুতঃ অবশেষে আসমান ও যমীন আল্লাহ তা‘আলারই থাকিয়া যাইবে। আর আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কর্মের পূর্ণ খবর রাখেন।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১) মুনফেকরা মুসলমানদিগকে একটু দুর্বল দেখিলেই কুফরী উক্তি আরাম্ভ করিত তাহাদের এই বিরোধিতা ইসলামের প্রগতিতে কোনরূপ প্রতিবদ্ধকতা আসিয়া পড়ে, এই আশাংকায় হুযুরের মনে কষ্ট হইত। সুতরাং এই আয়াতে হুযুরকে সান্তনা দেওয়া হইতেছে। (বঃ কোঃ)
২) কাফেরেরা বলিত আমরা এখানে সুখ শান্তিতে আছি, ইহাতে বুঝা যায়, আল্লাহ আমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট নহেন, অতএব পরকাল বলিয়া কিছু থাকিলে সেখানেও আমরা সুখেই থাকিব। (বঃ কোঃ)
৩) কাফেরেরা এইরূপ সন্দেহ করিতে পারে যে, মুসলমানেরা আল্লাহর মাকবূল বান্দা হইলে ওহুদের যুদ্ধে পরাজিত হইল কেন? এবং তাহাদের প্রতি বিপদ আপদই বা আসে কেন? আল্লাহ এই আয়াতে সকল বিপদ আপদে নিহিত রহ্যস্যাদি বর্ণনা করিয়া তাহাদের সন্দেহ দূর করিতেছেন। (বঃ কোঃ)

لَّقَدْ سَمِعَ اللَّهُ قَوْلَ الَّذِينَ قَالُوا إِنَّ اللَّهَ فَقِيرٌ وَنَحْنُ أَغْنِيَاءُ ۘ سَنَكْتُبُ مَا قَالُوا وَقَتْلَهُمُ الْأَنبِيَاءَ بِغَيْرِ حَقٍّ وَنَقُولُ ذُوقُوا عَذَابَ الْحَرِيقِ

১৮১। নিশ্চয়, আল্লাহ শ্রবণ করিয়াছেন ঐ সকল লোকের কথা যাহারা এইরূপ বলে –আল্লাহ দরিদ্র আর আমরা ধনবান। আমি তাহাদের উক্তি গুলোকে লিখিয়া রাখিব, এবং তাহাদেরও অন্যায়ভাবে নবীগণকে হত্যা করাকেও। আর আমি বলিব, স্বাদ গ্রহন কর আগুনের–আযাবের।

ذَ‌ٰلِكَ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيكُمْ وَأَنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيدِ

১৮২। ইহা ঐ কর্মসমূহের দরুন, যাহা তোমরা নিজ হস্তে সঞ্চয় করিয়াছিলে, আর ইহা সুপ্রমাণিত যে, আল্লাহ বান্দাদের প্রতি অত্যাচারী নহেন।

الَّذِينَ قَالُوا إِنَّ اللَّهَ عَهِدَ إِلَيْنَا أَلَّا نُؤْمِنَ لِرَسُولٍ حَتَّىٰ يَأْتِيَنَا بِقُرْبَانٍ تَأْكُلُهُ النَّارُ ۗ قُلْ قَدْ جَاءَكُمْ رُسُلٌ مِّن قَبْلِي بِالْبَيِّنَاتِ وَبِالَّذِي قُلْتُمْ فَلِمَ قَتَلْتُمُوهُمْ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ

১৮৩। তাহারা এমন লোক যে–বলে, আল্লাহ আমাদিগকে আদেশ করিয়াছিলেন, যেন আমরা কোন নবীর প্রতি ঈমান না আনি, যে পর্যন্ত না আমাদের সম্মুখে আল্লাহর জন্য কুরবানী করার মু‘জেযা প্রকাশ করে, যাহাকে আমি অগ্নি গ্রাস করিয়া লয়। আপনি বলিয়া দিন, নিশ্চয়, আমার পূর্বে তোমাদের প্রতি বহু রাসূল বহু প্রমাণাদিসহ আসিয়াছিলেন এবং হুবুহু তোমাদের কথিত মু‘জেযা সহও, তবে কেন তাহাদিগকে হত্যা করিয়াছিলে? যদি তোমরা সত্যবাদী হইয়া থাক।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১) এই বেড়ি পরাইবার কথা বোখারী শরীফে উল্লেখ আছে যে হুযুর বলিয়াছেন, কেহ আল্লাহ প্রদত্ত মালের যাকাত না দিলে, কিয়ামত দিবসে তাহার বিষাক্ত সর্পের বেড়ি রূপে তাহার গলায় পরাইয়া দেওয়া হইবে। উক্ত সর্প তাহার মুখের উভয় চোয়াল চাপিয়া ধরিয়া বলিবে, আমি তোমার পার্থিব ধন সম্পদ।(বঃ কোঃ)
২) শানে নুযুলঃ ইবনে আব্বাস (রা) হতে বর্ণিত আছে, ‘‘এমন ব্যক্তি কে আছে , যে আল্লাহ কে করযে হাসানা দিবে? ’’আয়াতটি নাযিল হইলে ইহুদীরা হুযুরের খেদমখে আসিয়া বলিল, হে মুহাম্মাদ! আপনার খোদা কি দরিদ্র হইয়া পড়িয়াছেন যে, বান্দার নিকট ভিক্ষা চাহিতেছেন? তখন আল্লাহ আয়াতটি নাযিল করেন। (লোঃ নুঃ)
৩) পূর্বকালে কোন কোন নবী (আঃ) এইরূপ মু’জেযাহ প্রদর্শন করিয়াছিলেন যে, কোন প্রাণী বা প্রাণীহীন বস্তু আল্লাহর নামে কোন ময়দানে বা পাহাড়ে রাখিয়াদিতেন, আকাশ ইহতে অগ্নি আসিয়া উহাকে গ্রাস করিয়া লইত। (বঃ কোঃ)

فَإِن كَذَّبُوكَ فَقَدْ كُذِّبَ رُسُلٌ مِّن قَبْلِكَ جَاءُوا بِالْبَيِّنَاتِ وَالزُّبُرِ وَالْكِتَابِ الْمُنِيرِ

১৮৪। সুতরাং যদি আপনাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করে, তবে বহু পয়গম্বরকে –যাহারা আপনার পূর্বে অতিত হইয়াছেন –মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা হইয়াছে; যাহারা আসিয়াছিলেন মু’জেযাসমূহ এবং ছহীফাসমূহ ও উজ্জল কিতাব লইয়া।

كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ ۗ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۖ فَمَن زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ ۗ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ

১৮৫। প্রত্যক প্রাণ (ধারী) কেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করিতে হইবে। আর নিশ্চয়, তোমরা তোমাদের পূর্ব প্রতিদান কিয়ামত দিবসে পাইবে। অতএব, যাহাকে দোযখ হইতে রক্ষা করা হইল, এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হইল, ফলতঃ সে সফলকাম হইল; এবং পার্থিব জীবন তো কিছুই নহে প্রতারণার সামগ্রী ব্যতীত ।

لَتُبْلَوُنَّ فِي أَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ وَلَتَسْمَعُنَّ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْلِكُمْ وَمِنَ الَّذِينَ أَشْرَكُوا أَذًى كَثِيرًا ۚ وَإِن تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ ذَ‌ٰلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ

১৮৬। অবশ্য ভবিষ্যতে তোমরা স্বীয় ধনসমূহে ও স্বীয় প্রাণ সমূহে আরও পরিক্ষিত হইবে। এবং ভবিষ্যতে আরও বহু বেদনাদায়ক কথা অবশ্য শুনিবে উহাদের নিকট হইতে যাহাদিগকে তোমাদের পূর্বে কিতাব প্রদত্ত হইয়াছে এবং উহাদের হইতে (ও) যাহারা মুশরেক; আর যদি তোমরা ধৈয্যধারন কর এবং পরহেয করিতে থাক, তবে (তোমাদের জন্য উত্তম কেননা,) ইহা তাকীদী নিদের্শাবলীর অন্তভূক্ত।

وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ لَتُبَيِّنُنَّهُ لِلنَّاسِ وَلَا تَكْتُمُونَهُ فَنَبَذُوهُ وَرَاءَ ظُهُورِهِمْ وَاشْتَرَوْا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا ۖ فَبِئْسَ مَا يَشْتَرُونَ

১৮৭। আর যখন আল্লাহ তা’আলা আহলে কিতাবদের নিকট হইতে এই অঙ্গিকার লইলেন যে, ঐ কিতাব জনগনের সম্মুখে প্রকাশ করিয়া দিবে এবং ইহা গোপন করিবে না, অনন্তর তাহারা ইহাকে স্বীয় পশ্চাতে নিক্ষেপ করিল এবং ইহার পরিবর্তে নগণ্য বিনিময় গ্রহন করিল; সুতরাং ইহা নিকৃষ্ট বস্তু যাহা তাহারা গ্রহন করিতেছে।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১) মুসলমানরা মক্কায় নিজেদের লোকজন ও ধন সম্পদ রাখিয়া মদীনায় চলিয়া আসিলে মক্কার কাফেররা যুলুম পূর্বক তাহাদের সম্পত্তি কাড়িয়া লইত, কোন মুসলমানকে হাতে পাইলে যন্ত্রণা দিয়া মারিয়া ফেলিত। অতএব আল্লাহ বলিতেছেন, বিপদ আপদে অধীর না হইয়া ধৈয্য ধারন করিতেই তোমাদের জন্য মঙ্গল নিহিত রহিয়াছে। (মুঃ কোঃ)
২) আহলে কিতাবগণ যে সমস্ত বিষয় গোপন করিত তম্মধ্যে রাসূলুল্লাহ (দঃ) এর মর্যাদার বিবরণই সমধিক গুরত্বপূর্ণ ছিল। যেহেতু তাহাদের নিজেদেরই ঈমান আনয়নের ইচ্ছা ছিল না। কাজেই তাহারা উহা অন্যান্য লোক হইতেও গোপন করিত। (বঃ কোঃ)

لَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَفْرَحُونَ بِمَا أَتَوا وَّيُحِبُّونَ أَن يُحْمَدُوا بِمَا لَمْ يَفْعَلُوا فَلَا تَحْسَبَنَّهُم بِمَفَازَةٍ مِّنَ الْعَذَابِ ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

১৮৮। যাহারা এইরূপ যে, স্বীয় (অসৎ) কর্মে আনন্দিত হয়, এবং যেই সৎ কাজ করে নাই তাহাতে প্রশংসিত হওয়ার বাসনা রাখে, সুতরাং এইরূপ লোক সম্বন্ধে কখনও ধারনা করিও না যে, তাহারা (দুনিয়ায়) বিশেষ রকমের আযাব হইতে পরিত্রান পাইবে, (কখনও নহে) বস্তুতঃ তাহাদের (আখিরাতে ও) যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হইবে।

وَلِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۗ وَاللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

১৮৯। আর আল্লাহরই জন্য রহিয়াছে আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব; এবং আল্লাহ তা’আলা সর্ববিয়োপরী পূর্ণ ক্ষমতাবান।

إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآيَاتٍ لِّأُولِي الْأَلْبَابِ

১৯০। নিঃসন্দেহে আসমানসমূহ ও যমীনের সৃজনে এবং পর্যায় ক্রমে দিবা রাত্রি গমনাগমনে নিদর্শনসমূহ রহিয়াছে জ্ঞানবানদের জন্য।

الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَىٰ جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَـٰذَا بَاطِلًا سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

১৯১। যাহাদের অবস্থা এইরূপ যে, তাহারা আল্লাহর যেকের করে দাঁড়াইয়াও, বসিয়াও, শয়ন করিয়াও, এবং আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টির ব্যাপারে চিন্তা করে। (বলে), হে আমাদের রব্ব! আপনি ইহাকে অনর্থক সৃষ্টি করেন নাই, আমরা আপনাকে (অনর্থক সৃষ্টি করা হইতে) পবিত্র মনে করি, সুতরাং আমাদিগকে জাহান্নামের আযাব হইকে রক্ষা করুন।

رَبَّنَا إِنَّكَ مَن تُدْخِلِ النَّارَ فَقَدْ أَخْزَيْتَهُ ۖ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ

১৯২। হে আমাদের রব! নিশ্চয় আপনি যাহাকে জাহান্নামে দাখিল করেন, তাহাকে বাস্তবেই লাঞ্ছিত করিয়া দিলেন; আর এইরূপ যালেমদের কোনও সাহায্যকারী নাই।

رَّبَّنَا إِنَّنَا سَمِعْنَا مُنَادِيًا يُنَادِي لِلْإِيمَانِ أَنْ آمِنُوا بِرَبِّكُمْ فَآمَنَّا ۚ رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ

১৯৩। হে আমাদের রব! আমরা এক আহ্বানকারী (রাসূলুল্লাহ) এর (আহ্বান) শুনিয়াছি, তিনি ঈমান আনয়নের জন্য আহ্বান করিতেছেন যে, তোমরা স্বীয় রবের প্রতি ঈমান আন, সুতরাং আমরা ঈমান আনিলাম। হে আমাদের রব! অতএব, আমাদের গুণাহসমূহকে মাফ করিয়াদিন এবং ত্রুটিগুলোকেও আমাদিগ হইতে মোচন করিয়া দিন এবং আমাদিগের মৃত্যু নেককারদের সহিত করুন।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১) ইহুদী আলেমগণ ভুল মাসাআলা রচনা করিয়া জনসাধারন হইতে অর্থ গ্রহন করিত এবং পয়গম্বর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিচয় গোপন রাখিত।ইহাতে নিজেরা মনে মনে আনন্দিত হইত যে, আমাদের চালাকি কেহ টের পায় না। (মুঃ কোঃ)
২) ক্বোরাইশরা হুযুরের খেদমতে আসিয়া বলিল, আপনি ছাফা পর্বতে স্বর্ণে পরিণত করিয়া দিন, তাহা হইলে আমরা আপনার উপর ঈমান আনিব। তদুত্তরে আল্লাহ এই আয়াতটি নাযিল করেন। (লোঃ নুঃ)

رَبَّنَا وَآتِنَا مَا وَعَدتَّنَا عَلَىٰ رُسُلِكَ وَلَا تُخْزِنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۗ إِنَّكَ لَا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ

১৯৪। হে আমাদের রব! আর আমাদিগকে উহাও দান করুন যাহার প্রতিশ্রুতি আপনি স্বীয় পয়গম্বদের মাধ্যমে আমাদিগকে দিয়াছেন, আর কিয়ামত দিবসে আমাদেরকে লাঞ্ছিত করিবেন না। নিশ্চয়, আপনি ওয়াদার খেলাপ করেন না।

فَاسْتَجَابَ لَهُمْ رَبُّهُمْ أَنِّي لَا أُضِيعُ عَمَلَ عَامِلٍ مِّنكُم مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَىٰ ۖ بَعْضُكُم مِّن بَعْضٍ ۖ فَالَّذِينَ هَاجَرُوا وَأُخْرِجُوا مِن دِيَارِهِمْ وَأُوذُوا فِي سَبِيلِي وَقَاتَلُوا وَقُتِلُوا لَأُكَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ وَلَأُدْخِلَنَّهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ثَوَابًا مِّنْ عِندِ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عِندَهُ حُسْنُ الثَّوَابِ

১৯৫। অনন্তর মঞ্জুর করিলেন তাহাদের প্রার্থনা তাহাদের পরওয়ারদেগার এই জন্য হইতে যে, আমি তোমাদের মধ্যে হইতে কোন আমলকারীর আমলকে বিফল করি না। চাই সেই পুরুষই হউক বা নারী, তোমরা একে অন্যের অংশ; সুতরাং যাহারা হিজরত করিয়াছে এবং নিজেদের ঘরবাড়ি হইতে বহিষ্কৃত হইয়াছে এবং আমার পথে নির্যাতিত হইয়াছে এবং জেহাদ করিয়াছে ও শহীদ হইয়াছে, নিশ্চয়, তাহাদের গুণাহসমূহ মাফ করিয়া দিব এবং নিশ্চয় আমি তাহাদিগকে এমন উদ্যানে (বেহেশতে)দাখিল করিব যাহার তলদেশে নহরসমূহ বহিতে থাকিবে। এই বিনিময় প্রাপ্ত হইবে আল্লাহরই তরফ হইতে; আর আল্লাহর নিকট উত্তম বিনিময় রহিয়াছে।

لَا يَغُرَّنَّكَ تَقَلُّبُ الَّذِينَ كَفَرُوا فِي الْبِلَادِ

১৯৬। (হে সত্যান্বেষশী!) তোমাকে যেন নগরসমূহে কাফেরদের গনাগমন প্রতারিত না করে।

مَتَاعٌ قَلِيلٌ ثُمَّ مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ ۚ وَبِئْسَ الْمِهَادُ

১৯৭। মাত্র কয়েকদিন উপভোগ, অতঃপর তাহাদের বাসস্থান হইবে দোযখ, এবং ইহা অত্যন্ত নিকৃষ্ট বাসস্থান।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১) অর্থাৎ, একই সঙ্গে আল্লাহর একত্ব এবং রাসূলের প্রেরিতত্বের প্রতি আমরা ঈমান আনিলাম (বঃ কোঃ)
২) অর্থাৎ, নেক আমলের সহিত আমাদের পার্থিব জীবনের আবসান হউক।(বঃ কোঃ)
৩) অর্থাৎ, যেমন কেহ কেহ প্রথমে পাপের শাস্তি ভোগ করিয়া পরে জান্নাতে প্রবেশ করিবে।আমাদিগকে তদ্রুপ লাঞ্ছিত না করিয়া প্রথমেই জান্নাতে দাখিল করুন। (বঃ কোঃ)
৪) হযরত বিবি উম্মেসালমা বলেন, আমি হুযুর (দঃ) কে জিজ্ঞাস করিলাম, ইয়া রসূলুল্লাহ! মুহাজির পুরুষদের সম্বন্ধে আল্লাহ অনেক স্থানেই প্রশংসা করিয়াছেন। কিন্তু মুহাজির নারীদের সম্বন্ধে কিছু বলেন নাই। আমরা কি হিযরতের কোন সওয়াব পাইব না? তখন আল্লাহ এই আয়াতটি নাযিল করেন। অর্থাৎ কোন আমলকারীর আমলই নষ্ট হইবে না। সে নারীই হউক আর পুরুষই হউক। (তইসীরুল বয়ান)

لَـٰكِنِ الَّذِينَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ لَهُمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا نُزُلًا مِّنْ عِندِ اللَّهِ ۗ وَمَا عِندَ اللَّهِ خَيْرٌ لِّلْأَبْرَارِ

১৯৮। কিন্তু যাহারা স্বীয় রব্বকে ভয় করে, তাহাদের জন্য উদ্যানসমূহ রহিয়াছে, যাহার নিম্নে নহরসমূহ বহিতে থাকিবে। তাহারা উহাতে অনন্তকাল থাকিবে, ইহা মেহমানী হইবে আল্লাহর তরফ হইতে; আর যাহা কিছু আল্লাহর নিকট রহিয়াছে উহা নেককারদের জন্য বহু গুনে উত্তম।

وَإِنَّ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ لَمَن يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَمَا أُنزِلَ إِلَيْكُمْ وَمَا أُنزِلَ إِلَيْهِمْ خَاشِعِينَ لِلَّهِ لَا يَشْتَرُونَ بِآيَاتِ اللَّهِ ثَمَنًا قَلِيلًا ۗ أُولَـٰئِكَ لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ سَرِيعُ الْحِسَابِ

১৯৯। আর নিশ্চয়, আহলে কিতাবদের মধ্যে কেহ কেহ অবশ্য এমনও আছে যাহারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং এই কিতাবের প্রতিও যাহা তোমাদের প্রতি প্রেরিত হইয়াছে এবং ঐ কিতাবের প্রতিও যাহা তাহাদের প্রতি প্রেরিত হইয়াছিল; এইরূপে যে, আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করে, আল্লাহ তা‘আলার আয়াত সমূহের পরিবর্তে তুচ্ছ বিনিময় গ্রহন করে না; এইরূপ লোকদের উত্তম বিনিময় মিলিবে তাহাদের প্রতিপালকের নিকট; নিঃসন্দেহে, আল্লাহ তা’আলা শীঘ্রই হিসাব করিয়া দিবেন।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا وَرَابِطُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

২০০। হে ঈমানদারগণ! স্বয়ং ধৈর্য্য অবলম্বন কর, ও জেহাদে ধৈর্য্য রাখ এবং জেহাদের জন্য প্রস্তত থাক। আর আল্লাহকে ভয় করিতে থাক, যেন তোমরা পূর্ণসফলকাম হও।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ

১) মক্কার কাফেরেরা স্বচ্ছল এবং মুসলমানগণ অভাবগ্রস্ত ছিলেন কাহারও কাহারও মনে কল্পনা উদয় হইল, মূর্তি পূজকেরা বেশ শান্তিতে আছে, পক্ষান্তরে আল্লাহর ফরমাবদার মুসলমানগণ দুঃখ কষ্টে দিন যাপন করিতেছে। ইহার সহস্য কি! অতএব তাহাদিগকে সান্তনা দেওয়ার উদ্দেশ্যে আল্লাহ এই আয়াতটি নাযিল করিলেন। (তাইসীরুল বয়ান)
২) আনাস (রা) রেওয়ায়েত করিয়াছেন আবিসিনিয়ার বাদশাহ নাজ্জাশীর এন্তেকাল হইলে হুযুর (দঃ) সাহাবাগণকে তাহার জন্য এস্তেগফার করিতে বলিলেন। সাহাবাগণ বলিলেন আপনি সুদৃঢ় হাবশা দেশের একজন খৃষ্টান মৃতের জন্য এস্তেগফার করিতে বলিতেছেন! হুযুর বলিলেন সে একজন মুসলমান,তোমাদের ভাই। এতদ- সম্পর্কে এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (হাদীস)

সূরা আত-তাওবা এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা আনফাল এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা আরাফ এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা আনআম এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা আল-মায়েদা এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা আন-নিসা এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
আমাদের, ফেসবুক পেইজে লাইক, শেয়ার এবং কমেন্টস করে আমাদের সাথেই থাকুন।

সূরা আল-ইমরান বাংলা শানে নুযুলঃ