সূরা-আল-ইমরান বাংলা অর্থ (আয়াত ০১-২৩)

সুরা-আল-ইমরান
আয়াত-২০০

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু

الم

১। আলিফ-লাম, মিম।

اللَّهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ

২। আল্লাহ্ এমন যে, তিনি ব্যতীত মা’বুদরূপে গ্রহণ করিবার যোগ্য আর কেহই নাই। তিনি চিরঞ্জীব, যাবতীয় বস্তুর সংরক্ষণকারী।

نَزَّلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ وَأَنزَلَ التَّوْرَاةَ وَالْإِنجِيلَ

৩। আল্লাহ্ আপনার প্রতি কোরআন নাযিল করিয়াছেন বাস্তব সত্যের সহিত এই প্রকারে যে, উহা পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের সমর্থন করে আর প্রেরণ করিয়াছিলেন তাওরাত ও ইঞ্জীল।

مِن قَبْلُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَأَنزَلَ الْفُرْقَانَ ۗ إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بِآيَاتِ اللَّهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيدٌ ۗ وَاللَّهُ عَزِيزٌ ذُو انتِقَامٍ

৪। ইহার পূর্বে জনগণের হেদায়েতের জন্য। আর আল্লাহ্ প্রেরণ করিয়াছেন মু’জেযাসমূহ। নিশ্চয়, যাহারা প্রত্যাখ্যান করিয়াছে আল্লার আয়াতসমূহকে, তাহাদের জন্য রহিয়াছে কঠোর শাস্তি। আর আল্লাহ্ মহা পরাক্রমশালী প্রতিশোধ গ্রহণকারী।

إِنَّ اللَّهَ لَا يَخْفَىٰ عَلَيْهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ

৫। নিশ্চয়ই, আল্লাহর নিকট কোন বিষয়ই গোপন নাই, না যমিনে আর না আসমানে।

هُوَ الَّذِي يُصَوِّرُكُمْ فِي الْأَرْحَامِ كَيْفَ يَشَاءُ ۚ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

৬। তিনি এমন সত্তা যে, জরায়ুর মধ্যে তোমাদের আকৃতি গঠন করিয়া থাকেন, যেরূপ ইচ্ছা করেন। কেহই মা’বুদ হওয়ার যোগ্য নহে তিনি ব্যতীত, তিনি পরাক্রমশালী,তত্ত্বজ্ঞ।

১। ফঃ প্রকৃত মা’বুদের ‘অমরত্ব’ এবং ‘যাবতীয়’ বস্তুর সংরক্ষনকারী গুণ দুইটি দ্বারা বুঝা যায়, যাবতীয় বাতেল মা’বুদগুলি মা’বুদই নহে। কেননা, ইহাদের মধ্যে এই দুইটি গুণ নাই। যে সর্বদা বিদ্যমান না থাকে এবং নিজের সংরক্ষনের জন্য পরের মুখাপেক্ষী,সে উপাস্য হওয়ার যোগ্য হইতে পারে না। (বঃকোঃ)
২। অর্থাৎ, কাহারও এক রকম অন্যজনের অন্য রকম আকৃতি গঠন করেন।
৩। শানে নুযুলঃ কতিপয় খৃষ্টান এক দিন হুযুর (দঃ) এর সমীপে আসিয়া ধর্মীয় আলোচনা আরম্ভ করে। তিনি বিস্তৃত আলোচনায় আল্লাহর অমরত্ব,পূর্ণ সংরক্ষণ ক্ষমতা, জ্ঞানের সীমাহীনতা এবং সৃষ্টির ক্ষমতা-নৈপুণ্যে অদ্বিতীয়তা বিশ্লেষন করিয়া খৃষ্টানদের তিন খোদার বিশ্বাস খন্ডন করিয়া দিলেন, ফলে তাহারা এই উপক্রমণিকাগুলি মানিতে বাধ্য হইল। (বঃকোঃ)

هُوَ الَّذِي أَنزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ آيَاتٌ مُّحْكَمَاتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ ۖ فَأَمَّا الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَاءَ تَأْوِيلِهِ ۗ وَمَا يَعْلَمُ تَأْوِيلَهُ إِلَّا اللَّهُ ۗ وَالرَّاسِخُونَ فِي الْعِلْمِ يَقُولُونَ آمَنَّا بِهِ كُلٌّ مِّنْ عِندِ رَبِّنَا ۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ

৭। তিনি এমন সত্তা, যিনি তোমাদের প্রতি কিতাব নাযিল করিয়াছেন, যাহার একাংশে ঐ আয়াতসমূহ রহিয়াছে, যাহা অস্পষ্ট মর্ম হইতে সংরক্ষিত। এই আয়াতগুলিই কিতাবের মূলভিত্তি, আর অন্যান্য আয়াতগুলি এইরূপ যে, যাহা অস্পষ্ট মর্মবিশিষ্ট। সুতরাং যাহাদের অন্তরে বক্রতা রহিয়াছে তাহারা ইহার ঐ অংশের পিছনে পড়ে যাহা অস্পষ্ট মর্মবিশিষ্ট, গোলযোগ অন্বেষণের উদ্দেশ্যে; এবং ইহার (মনগড়া) ব্যাখ্যা অন্বেষণের উদ্দেশ্যে। অথচ ইহার মর্ম আল্লাহ্ ভিন্ন আর কেহ অবগত নহে। আর যাহারা (ধর্মীয়) জ্ঞানে নিপুণ তাহারা বলে–আমরা ইহাতে দৃঢ়বিশ্বাস পোষণ করি, সবই আমাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে সমাগত, আর উপদেশ তাহারাই গ্রহণ করে, যাহারা বুদ্ধিমান।

رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً ۚ إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ

৮। হে আমাদের পরওয়ারদেগার! আমাদের অন্তরসমূহকে বক্র করিবেন না ইহার পর যে, আপনি আমাদের সুপথ প্রদর্শন করিয়াছেন, আর আমাদিগকে আপনার নিকট হইতে করুণা প্রদান করুন, নিশ্চয়, আপনি মহা দাতা।

رَبَّنَا إِنَّكَ جَامِعُ النَّاسِ لِيَوْمٍ لَّا رَيْبَ فِيهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ لَا يُخْلِفُ الْمِيعَادَ

৯। হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয়, আপনি সকল মানুষকে সমবেতকারী–ঐ দিনে যাহাতে কোন সন্দেহ নাই, নিঃসন্দেহ, আল্লাহ্ তা‘আলা ভঙ্গ করেন না (তাঁহার) ওয়াদা।

إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا لَن تُغْنِيَ عَنْهُمْ أَمْوَالُهُمْ وَلَا أَوْلَادُهُم مِّنَ اللَّهِ شَيْئًا ۖ وَأُولَـٰئِكَ هُمْ وَقُودُ النَّارِ

১০। নিশ্চয়, যাহারা কুফর করে, কখনও তাহাদের কাজে আসিবে না তাহাদের ধন আর তাহাদের সন্তান-সন্ততি আল্লাহর মোকাবিলায় সামান্য পরিমাণও; আর এই প্রকৃতির লোক জাহান্নামে ইন্ধন হইবে।

শানে নুযুলঃ

১। তবে যদি আল্লাহ স্বয়ং কোরআন অথবা রাসুলের হাদীস মাধ্যমে মর্ম স্পষ্টরূপে অথবা ইঙ্গিতে বলিয়া দেন, তবে যাহা বলিয়া দিবেন ততটুকুই লোকে অবগত হইতে পারিবে। (বঃকোঃ)
২। অর্থাৎ, হিতকর ও আবশ্যকীয় বিষয়ে মশগুল থাকা এবং ক্ষতিকর ও অনর্থক বিষয়ের পিছনে পড়িয়া না থাকায় বুদ্ধিমানের কাজ। (বঃকোঃ)
ফঃ খৃষ্টানগণ মারইয়ামকে আল্লাহর বিবী ও ঈসাকে আল্লাহর পুত্র বলিত। তাহাদের এই ভ্রান্ত ধারণা দূরীকরণের উদ্দেশ্যে আল্লাহ্ তা‘আলা এখানে বলিয়াছেনঃ আল্লাহ্ ত‘আলা প্রত্যেক কিতাবে অস্পষ্ট মর্মযুক্ত কতগুলি শব্দ রাখিয়াছেন। পথভ্রষ্ট লোকেরা নিজেদের মনগড়া মতে উহার অর্থ করিয়া লয়। কিন্তু ধর্মে ও জ্ঞানে অভিজ্ঞ লোকগণ মূল কিতাবের সহিত মিলাইয়া উহার অর্থ গ্রহণ করিয়া থাকে। (মুঃকোঃ)

كَدَأْبِ آلِ فِرْعَوْنَ وَالَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ ۚ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا فَأَخَذَهُمُ اللَّهُ بِذُنُوبِهِمْ ۗ وَاللَّهُ شَدِيدُ الْعِقَابِ

১১। যেমন আচরণ ছিল ফেরাউন সম্প্রদায়ের এবং ইহাদের পূর্ববর্তীদের-ইহারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করিয়াছে, তাই আল্লাহ্ তাহাদিগকে পাকড়াও করিয়াছেন তাহাদের অপরাধের জন্য; আর আল্লাহ্ কঠোর শাস্তিদাতা।

قُل لِّلَّذِينَ كَفَرُوا سَتُغْلَبُونَ وَتُحْشَرُونَ إِلَىٰ جَهَنَّمَ ۚ وَبِئْسَ الْمِهَادُ

১২। আপনি এই কাফিরদিগকে বলিয়া দিন যে, অচিরেই তোমরা পরাভ’ত হইবে এবং তোমাদিগকে সমবেত করিয়া জাহান্নামের দিকে লইয়া যাওয়া হইবে, আর উহা নিকৃষ্ট বাসস্থান ।

قَدْ كَانَ لَكُمْ آيَةٌ فِي فِئَتَيْنِ الْتَقَتَا ۖ فِئَةٌ تُقَاتِلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَأُخْرَىٰ كَافِرَةٌ يَرَوْنَهُم مِّثْلَيْهِمْ رَأْيَ الْعَيْنِ ۚ وَاللَّهُ يُؤَيِّدُ بِنَصْرِهِ مَن يَشَاءُ ۗ إِنَّ فِي ذَ‌ٰلِكَ لَعِبْرَةً لِّأُولِي الْأَبْصَارِ

১৩। নিশ্চয়, তোমাদের জন্য মহান নিদর্শন রহিয়াছে দুই দলের মধ্যে, যাহারা পরস্পর মুখামুখী হইয়াছিল। একদল তো আল্লাহর পথে যুদ্ধ করিতেছিল। আর অন্য দল ছিল কাফের। এই কাফেররা নিজদিগকে মুসলমানদের দ্বিগুণ দেখিতেছিল প্রত্যক্ষ দৃষ্টিতে। আর আল্লাহ্ স্বীয় সাহায্য দ্বারা যাহাকে ইচ্ছা শক্তি প্রদান করিয়া থাকেন। নিশ্চয়, ইহার মধ্যে মহান উপদেশ রহিয়াছে চক্ষুস্মান লোকদের জন্য।

زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاءِ وَالْبَنِينَ وَالْقَنَاطِيرِ الْمُقَنطَرَةِ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَالْخَيْلِ الْمُسَوَّمَةِ وَالْأَنْعَامِ وَالْحَرْثِ ۗ ذَ‌ٰلِكَ مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَاللَّهُ عِندَهُ حُسْنُ الْمَآبِ

১৪। সু-শোভিত মনে হয় মানুষের নিকট লোভনীয় বস্তুর মহব্বত, রমণী হউক, সন্তান-সন্ততি হউক, পুঞ্জীভ’ত স্বর্ণ এবং রৌপ্য হউক, চিহিৃত অথবা পালিত পশূু হইক, আর শস্যক্ষেত্রই হউক, এই সমুদয় পার্থিব জীবনের ব্যবহারিক বস্তু। আর পরিণামের শোভা তো আল্লারই নিকট রহিয়াছে।

শানে নুযুলঃ

১। বদরের যুদ্ধে জয় লাভের পর হুযুর (দঃ) কাইনুকা’র বাজারে ইহুদীগকে একত্রিত করিয়া বলিলেন, “কোরেশদের ন্যায় তোমাদের অবস্থা হওয়ার পূর্বে ইসলাম গ্রহণ কর”। ইহুদীরা বলিল, ‘কোরেশেরা ছিল যুদ্ধে অনভিজ্ঞ, তাহাদিগকে পরাস্ত করিয়াছো বলিয়া তুমি প্রতারিত হইও না, আল্লাহর শপথ আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ বাধিলে বুঝিতে পারিবে যুদ্ধ কাহাকে বলে। আমাদের ন্যায় যোদ্ধা সম্প্রদায়ের সঙ্গে এ যাবৎ তোমার মোকাবেলাই হয় নাই”। ইহার উত্তরেই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (লঃনুঃ)
২। বদরের যুদ্ধে মুসলমানদের সংখ্যা ছিল তিন শত তের জন। আর কাফেরদের সংখ্যা ছিল সাড়ে নয় শত। কিন্তু আল্লাহর অনুগ্রহে পরিশেষে কাফেরদেরই শোচনীয় পরাজয় হইয়াছিল। ইহাতে বুঝা যায়, জয় ও পরাজয় আল্লাহরই অধিকারে রহিয়াছে। (বঃকোঃ)

قُلْ أَؤُنَبِّئُكُم بِخَيْرٍ مِّن ذَ‌ٰلِكُمْ ۚ لِلَّذِينَ اتَّقَوْا عِندَ رَبِّهِمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَأَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ وَرِضْوَانٌ مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ بَصِيرٌ بِالْعِبَادِ

১৫। আপনি বলিয়া দিন, আমি কি তোমাদিগকে এমন বস্তুর কথা বলিয়া দিব, যাহা এই বস্তুসমূহ অপেক্ষা উত্তম, এইরূপ মানুষের জন্য যাহারা খোদাভীরু; তাহাদের রবের নিকট এরূপ উদ্দ্যান রহিয়াছে যাহার নিম্নদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত, উহাতে তাহারা অনন্তকাল অবস্থান করিবে, আর পাক পবিত্রা বিবিগণ রহিয়াছে, আর সন্তুষ্টি রহিয়াছে আল্লাহর তরফ হইতে, আর আল্লাহ্ খুব দেখেন বান্দাগণকে।

الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

১৬। (ইহারা) এইরূপ লোক যাহারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক। আমরা ঈমান আনিয়াছি, সুতরাং আমাদের গুনাসমূহ মা’ফ করিয়া দিন। এবং আমাদিগকে দোযখের আযাব হইতে বাঁচাইয়া লউন।

الصَّابِرِينَ وَالصَّادِقِينَ وَالْقَانِتِينَ وَالْمُنفِقِينَ وَالْمُسْتَغْفِرِينَ بِالْأَسْحَارِ

১৭। (তাহারা) সহিষ্ণু এবং সত্যপরায়ণ এবং বিনয়ী এবং দানশীল এবং শেষরাত্রে পাপমোচনের প্রার্থনাকারী।

شَهِدَ اللَّهُ أَنَّهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ وَالْمَلَائِكَةُ وَأُولُو الْعِلْمِ قَائِمًا بِالْقِسْطِ ۚ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

১৮। সাক্ষ্য প্রদান করিয়াছেন আল্লাহ্ তা‘আলা ইহার যে, ঐ (পাক) সত্ত্বাভিন্ন অন্য কেহই মা’বুদ হওয়ার যোগ্য নহে, আর ফেরেশতারাও এবং জ্ঞানবানগণও। আর মা’বুদও তিনি এইরূপ যে, ন্যায়ের সহিত শৃঙ্খলা রক্ষাকারী। তিনি ভিন্ন কেহই মা’বুদ হওয়ার যোগ্য নহে, তিনি পরাক্রমশালী–মহা জ্ঞানী।

إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ ۗ وَمَا اخْتَلَفَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ إِلَّا مِن بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْعِلْمُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ ۗ وَمَن يَكْفُرْ بِآيَاتِ اللَّهِ فَإِنَّ اللَّهَ سَرِيعُ الْحِسَابِ

১৯। নিঃসন্দেহে, ধর্ম (সত্য ও মনোনীত) আল্লার নিকট শুধু ইসলামই। আর আহলে কিতাবরা (ইসলাম সম্বন্ধে সন্দেহ বশতঃ নহে বরং) শুধু (মুসলমানদের প্রতি) পরস্পর যিদ্ ও হিংসা বশতঃ। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর আহকামকে প্রত্যাখ্যান করিবে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ্ অতি সত্বর ইহার হিসাব গ্রহণকারী।

১। ফঃ ইহুদী এবং নাছারাগণ তাওরাত ও ইঞ্জীল দেখিয়া বলিত, আখেরী যমানার পয়গম্বর আবির্ভুত হওয়ার সময় আসিয়াছে। তাঁহার প্রাপ্ত কোরআন এবং প্রচারিত ধর্ম ইসলাম সত্য হইবে। আমাদের বংশধর যাহারা তখন বিদ্যমান থকিবে, তাহারা যেন তাঁহার ধর্ম গ্রহণ করে। তাহাদের ধারনা ছিল,বনী ইসরাঈল বংশেই শেষ নবী জন্ম গ্র্রহণ করিবেন। কিন্তু হযরত মোহাম্মদ (দঃ) যখন বনী ইসরাঈল বংশে জন্মগ্রহণ করিলেন, তখন তাহাদের হিংসা হইল এবং ভাবিল, আমরা তাঁহার আনুগত্য অবলম্বন করিলে আমাদের সম্মান ও প্রতাপ বিলুপ্ত হইবে। এই কারনে তাহারা হুযুরের বর্ণনা সম্বলিত আয়াতগুলিকে বিকৃত ও পরিবর্তীত করিয়া ফেলিল, এবং হুযুরের বিরোধিতায় নিজেরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হইয়া গেল। (মুঃকোঃ)

فَإِنْ حَاجُّوكَ فَقُلْ أَسْلَمْتُ وَجْهِيَ لِلَّهِ وَمَنِ اتَّبَعَنِ ۗ وَقُل لِّلَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ وَالْأُمِّيِّينَ أَأَسْلَمْتُمْ ۚ فَإِنْ أَسْلَمُوا فَقَدِ اهْتَدَوا ۖ وَّإِن تَوَلَّوْا فَإِنَّمَا عَلَيْكَ الْبَلَاغُ ۗ وَاللَّهُ بَصِيرٌ بِالْعِبَادِ

২০। এর পরও যদি ইহারা আপনার সহিত বিতর্ক করে, তবে আপনি বলিয়া দিন, আমি তো আমার চেহারা একমাত্র আল্লাহর দিকে রুজু করিয়াছি, আর আমার অনুগামীরাও। আর বলুন, আহলে কিতাবকে এবং (মুশরেক) আরবদিগকে, তোমরাও কি ইসলাম গ্রহণ করিতেছ? ইতঃপর যদি তাহারা ইসলাম গ্রহণ করে, তবে তাহারাও পথে আসিয়া যাইবে, আর যদি তাহারা বিমুখই থাকে, তবে আপনার দায়িত্ব শুধু (আল্লাহর আহকাম) পৌঁছাইয়া দেওয়া মাত্র। আর আল্লাহ্ স্বয়ং দেখিয়া লইবেন বান্দাদিগকে।

إِنَّ الَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِآيَاتِ اللَّهِ وَيَقْتُلُونَ النَّبِيِّينَ بِغَيْرِ حَقٍّ وَيَقْتُلُونَ الَّذِينَ يَأْمُرُونَ بِالْقِسْطِ مِنَ النَّاسِ فَبَشِّرْهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٍ

২১। নিশ্চয়, যাহারা অমান্য করে আল্লার আয়াতসমূহকে এবং অন্যায়ভাবে হত্যা করে, এবং হত্যা করে এমন লোকদিগকে যাহারা ন্যায়পরায়ণতা শিক্ষা দেয়; সুতরাং এরূপ লোকদিগকে সংবাদ শুনাইয়া দিন এক যন্ত্রণাময় শাস্তির।

أُولَـٰئِكَ الَّذِينَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَمَا لَهُم مِّن نَّاصِرِينَ

২২। ইহারা ঐ লোক, যাহাদের যাবতীয় আমল বিনষ্ট হইয়া গিয়াছে, ইহলোক ও পরলোকে; আর তাহাদের কোন সাহায্যকারী হইবে না।

أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ أُوتُوا نَصِيبًا مِّنَ الْكِتَابِ يُدْعَوْنَ إِلَىٰ كِتَابِ اللَّهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ يَتَوَلَّىٰ فَرِيقٌ مِّنْهُمْ وَهُم مُّعْرِضُونَ

২৩। আপনি কি এইরূপ লোক প্রত্যক্ষ করেন নাই, যাহাদিগকে কিতাবের (তাওরাতের) এক অংশ প্রদান করা হইয়াছিল; আর সেই কিতাবুল্লার দিকে এই উদ্দেশ্যে তাহাদিগকে ডাকাও হয়, যেন ইহা তাহাদের মধ্যে মীমাংসা করিয়া দেয়; অতঃপর তাহাদের মধ্য হইতে কতক লোক ফিরিয়া যায় অবজ্ঞা করিয়া।

শানে নুযুলঃ

১। বনী ইসরাঈল সম্প্রদায় কোন এক রবিবারের প্রভাতে ৪৩ জন নবীকে এবং সেই দিনই ১০০ জন সৎ উপদেষ্টাকে হত্যা করিয়াছিল, যাঁহারা তাহাদিগকে মন্দ কাজ করিতে বারণ করিত। অথচ বনী ইসরাঈল সম্প্রদায় এই জঘন্য কার্যকেও ধর্মীয় কর্তব্য বলিয়া মনে করিত। তাহাদিগকে আল্লাহ্ তা‘আলা কঠোর শাস্তির কথা শুনাইতেছেন। (মুঃকোঃ)
২। একদা হুযুর (দঃ) ইহুদিগকে বলিলেন, তোমরা ঈমান আনো। ইহুদীরা বলিল, আমরা স্বীয় সম্প্রদায়ের আলেমদেরকে লইয়া ধর্ম সম্বন্ধে আপনার সঙ্গে বাহাস্ করিব। হুযুর বলিলেন, তাহলে সেই আয়াতগুলিও আনিও যাহাতে আমার সম্বন্ধে বিবরণ রহিয়াছে। কিন্তু তাহারা সেই আয়াতগুলিও আনিল না। এই সম্বন্ধেই আয়াতটি নাযিল হইয়াছে। (মুঃকোঃ)