সূরা নহল বাংলা অনুবাদ ও শানে নযুল

সূরা নহল বাংলা অনুবাদ
সর্বমোট আয়াত-১২৮

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু

أَتَىٰ أَمْرُ اللَّهِ فَلَا تَسْتَعْجِلُوهُ ۚ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَىٰ عَمَّا يُشْرِكُونَ

বাংলা অর্থ:

১। আল্লাহ্ তা‘আলার হুকুম আসিয়া পৌঁছিয়াছে, সুতরাং, হে অবিশ্বাসীরা!) তোমরা উহাতে ত্বরা করিও না; তিনি লোকদের শিরক হইতে পবিত্র এবং উর্ধ্বে।

يُنَزِّلُ الْمَلَائِكَةَ بِالرُّوحِ مِنْ أَمْرِهِ عَلَىٰ مَن يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ أَنْ أَنذِرُوا أَنَّهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنَا فَاتَّقُونِ

বাংলা অর্থ:

২। তিনি ফেরেশতাদিগকে ওহী অর্থাৎ, স্বীয় আদেশ সহকারে আপন বান্দাদের মধ্যে যাহার প্রতি অবতীর্ণ যে, তোমরা (লোকদিগকে) সতর্ক করিয়া দাওÑআমি ব্যতীত কেহই উপাস্য হওয়ার যোগ্য নাই, সুতরাং, আমাকে ভয় করিতে থাক।

خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ ۚ تَعَالَىٰ عَمَّا يُشْرِكُونَ

বাংলা অর্থ:

৩। তিনি আসমানসমূহ ও যমীনকে সৃষ্টি করিয়াছেন হেকমতের সহিত; তিনি তাহাদের শিরকী কার্যকলাপ হইতে পবিত্র।

خَلَقَ الْإِنسَانَ مِن نُّطْفَةٍ فَإِذَا هُوَ خَصِيمٌ مُّبِينٌ

বাংলা অর্থ:

৪। তিনি মানুষকে বীর্য বিন্দু হইতে পয়দা করিয়াছেন, অতঃপর তাহারা অকস্মাৎ খোলাখুলি ভাবে বিতর্ক করিতে লাগলো।

وَالْأَنْعَامَ خَلَقَهَا ۗ لَكُمْ فِيهَا دِفْءٌ وَمَنَافِعُ وَمِنْهَا تَأْكُلُونَ

বাংলা অর্থ:

৫। আর তিনিই চতুষ্পদ জন্তুগুলিকে সৃষ্টি করিয়াছেন, উহাদের মধ্যে তোমাদের জন্য শীতের সম্বলও রহিয়াছে, আরও বহু উপকারিতাও রহিয়াছে, এবং উহাদের মধ্যে হইতে তোমরা ভক্ষণও করিয়া থাক।

সূরা নহল বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ

১। অর্থাৎ, মৃত্যু-মুহুর্ত পর্যন্ত আল্লাহ্ তা‘আলার স্বরণ ও এবাদতে রত থাকুন। ইহাতে আল্লাহর আদেশ পালন কার্যের বিনিময় লাভ ব্যতীত আরও একটি বৈশিষ্ট্য হইল মনকে নিবদ্ধকরিয়া দিলে মনের অন্যান্য আকর্ষণ, যাহা অন্তরকে সঙ্কীর্ণ করে তাহা দূরীভূত ও পরাভূত হইয়া যায়। (বঃকোঃ)
২। কাফেররা বলিত, যদি আযাব বলিতে কিছু থাকে, তবে তাহা শীঘ্রই আসুক। আল্লাহ্ বলেন, হে কাফেররা! যত বিলম্ব হয়; ততই তোমাদের জন্য মঙ্গল। কেননা, তাহাতে তোমরা তওবা ও সংশোধনের অবকাশ পাইবে। আযাবের আগমন সুনিশ্চিত। কাজেই দ্রুত আযাব আগমনের কামনা করিয়া লাভ নাই। (বঃকোঃ)
৩। অর্থাৎ, আমি তো মানুষকে এসমস্ত নেয়ামত প্রদান করিতেছি। আর মানুষ এইরূপ অকৃতজ্ঞতা প্রদর্শন করিতেছে। (বঃকোঃ)

وَلَكُمْ فِيهَا جَمَالٌ حِينَ تُرِيحُونَ وَحِينَ تَسْرَحُونَ

বাংলা অর্থ:

৬। আর সেইগুলিতে তোমাদের জন্য সৌন্দর্যও রহিয়াছে, যখন সন্ধায় গৃহে আনয়ন কর, আর যখন সকালে (মাঠে) ছাড়িয়া দাও।

وَتَحْمِلُ أَثْقَالَكُمْ إِلَىٰ بَلَدٍ لَّمْ تَكُونُوا بَالِغِيهِ إِلَّا بِشِقِّ الْأَنفُسِ ۚ إِنَّ رَبَّكُمْ لَرَءُوفٌ رَّحِيمٌ

বাংলা অর্থ:

৭। এবং উহারা তোমাদের বোঝাও এমন নগরে বহন করিয়া লইয়া যায়, যেখানে তোমরা নিজদিগকে শ্রমক্লিষ্ট করা ব্যতীত পৌঁচিতে পারিতে না; বাস্তবিক তোমাদের রব্ব অত্যন্ত কৃপাবান, দয়াশীল।

وَالْخَيْلَ وَالْبِغَالَ وَالْحَمِيرَ لِتَرْكَبُوهَا وَزِينَةً ۚ وَيَخْلُقُ مَا لَا تَعْلَمُونَ

বাংলা অর্থ:

৮। এবং তিনি সৃষ্টি করিয়াছেন ঘোড়া ও খচ্চর এবং গাধাকেও, যেন তোমরা উহাদের সম্বন্ধে তোমরা খবরও রাখ না।

وَعَلَى اللَّهِ قَصْدُ السَّبِيلِ وَمِنْهَا جَائِرٌ ۚ وَلَوْ شَاءَ لَهَدَاكُمْ أَجْمَعِينَ

বাংলা অর্থ:

৯। এবং সরল পথ আল্লাহ্ তা‘আলা পর্যন্তই পৌছে, এবং কোন কোন পথ বক্রও আছে; আর যদি আল্লাহ্ চাহিতেন, তবে তোমাদের সকলকে লক্ষস্থলে পৌঁছাইয়া দিতেন।

هُوَ الَّذِي أَنزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً ۖ لَّكُم مِّنْهُ شَرَابٌ وَمِنْهُ شَجَرٌ فِيهِ تُسِيمُونَ

বাংলা অর্থ:

১০। তিনি এমন যিনি তোমাদের জন্য আসমান হইতে পানি বর্ষণ করিয়াছেন, যাহা হইতে তোমরা পান করিতে পাও, এবং তদ্দারা উদ্ভিদসমূহ (উৎপন্ন) হয়, যাহাতে তোমরা (জন্তুগুলিকে) চরিবার জন্য ছাড়িয়া দাও।

يُنبِتُ لَكُم بِهِ الزَّرْعَ وَالزَّيْتُونَ وَالنَّخِيلَ وَالْأَعْنَابَ وَمِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ ۗ إِنَّ فِي ذَ‌ٰلِكَ لَآيَةً لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ

বাংলা অর্থ:

১১। তিনি উহা দ্বারা তোমাদের জন্য শস্য এবং যয়তুন ও খেজুর ও আঙ্গুর এবং সর্বপ্রকার ফল উৎপাদন করেন; নিঃসন্দেহে ইহার মধ্যে চিন্তাশীল লোকদের জন্য প্রমাণ রহিয়াছে।

সূরা নহল বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ

১। এই জন্তুগুলির কোন কোনটির চর্ম দ্বারা চামড়ার কোট আর কোন কোন জন্তুর পশম দ্বারা কম্বল প্রস্তুত হয়। (বঃকোঃ)
২। কোন কোন জন্তুর দুধও পান করা হয়, কোন কোনটি আরোহনের কাজেও ব্যবহৃত হয় এবং কোন কোনটি দ্বারা হাল চাষ ইত্যাদি করা হয়। (বঃকোঃ)
৩। কেননা, তিনি দয়া করিয়া তোমাদের জন্য কত সুন্দর উপাদান সৃষ্টি করিয়াছেন। (বঃকোঃ)
৪। অথচ তদ্দারা তোমরা উপকৃত হইতেছ। আর এরূপ দ্রব্য প্রচুর পরিমাণে রহিয়াছে। যেমন কোন অনিষ্টকর প্রানীর বংশ বাড়িয়া গেলে আল্লাহ্ তা‘আলা যমীনের মধ্যে এমন কোন বিষাক্ত দ্রব্য সৃষ্টি করিয়া দেন, যাহাতে উহারা ধ্বংস প্রাপ্ত হইয়া যায়। অথচ সর্বসাধারন তাহার খবরও রাখে না। ইত্যাকার অনেক কিছুই রহিয়াছে। (বঃকোঃ)

وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ وَالنُّجُومُ مُسَخَّرَاتٌ بِأَمْرِهِ ۗ إِنَّ فِي ذَ‌ٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ

বাংলা অর্থ:

১২। আর তিনি বশীভূত করিয়াছেন তোমাদের জন্য রাত্র ও দিবসকে, এবং সূর্য ও চন্দ্রকে (স্বীয় কুদরতে), আর তারকাসমূহ বশীভূত রহিয়াছে তাঁহার আদেশে; নিঃসন্দেহে জ্ঞানবান লোকদের জন্য উহাতে কয়েকটি প্রমাণ রহিয়াছে।

وَمَا ذَرَأَ لَكُمْ فِي الْأَرْضِ مُخْتَلِفًا أَلْوَانُهُ ۗ إِنَّ فِي ذَ‌ٰلِكَ لَآيَةً لِّقَوْمٍ يَذَّكَّرُونَ

বাংলা অর্থ:

১৩। আর সেই সকল জিনিসকেও (বশীভূত করিয়াছেন) যেইগুলিকে তোমাদের জন্য এইভাবে সৃষ্টি করিয়াছেন যে, উহাদের প্রকার বিভিন্ন; নিঃসন্দেহে বুদ্ধিমান লোকদের জন্য উহাতে প্রমাণ রহিয়াছে।

وَهُوَ الَّذِي سَخَّرَ الْبَحْرَ لِتَأْكُلُوا مِنْهُ لَحْمًا طَرِيًّا وَتَسْتَخْرِجُوا مِنْهُ حِلْيَةً تَلْبَسُونَهَا وَتَرَى الْفُلْكَ مَوَاخِرَ فِيهِ وَلِتَبْتَغُوا مِن فَضْلِهِ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

বাংলা অর্থ:

১৪। আর তিনি এমন, যিনি সমুদ্রকে (নিজ কুদরতের) বশীভূত করিয়া বানাইয়াছেন, যেন উহা হইতে তাজা গোশত খাইতে পাও, এবং উহা হইতে (মুর্তির) অলংকার বাহির কর যাহা তোমরা পরিধান কর, আর তুমি জলযানসমূহকে দেখিতেছ যে, উহারা জলরাশি বিদীর্ণ করিয়া চলিয়া যাইতেছে, আর যেন তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলা প্রদত্ত জীবিকা অন্বেষণ কর, এবং যেন শোকর কর।

وَأَلْقَىٰ فِي الْأَرْضِ رَوَاسِيَ أَن تَمِيدَ بِكُمْ وَأَنْهَارًا وَسُبُلًا لَّعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ

বাংলা অর্থ:

১৫। এবং তিনি পৃথিবীতে পাহাড়সমূহ স্থাপন করিয়াছেন, যেন উহা তোমাদিগকে লইয়া দুলিতে না থাকে, এবং তিনি নহরসমূহ ও রাস্তাসমূহ বানাইয়াছেন, যেন গন্তব্য স্থান পর্যন্ত পৌঁছিতে পার।

وَعَلَامَاتٍ ۚ وَبِالنَّجْمِ هُمْ يَهْتَدُونَ

বাংলা অর্থ:

১৬। আর বহু চিহৃ বানাইয়াছেন; এবং নক্ষত্ররাশির সাহায্যেও তাহারা পথের নির্দেশ পায়।

أَفَمَن يَخْلُقُ كَمَن لَّا يَخْلُقُ ۗ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ

বাংলা অর্থ:

১৭। তবে কি যিনি সৃষ্টি করেন, তিনি কি তাহার মত-যে সৃষ্টি করিতে পারে না? তবুও কি তোমরা বুঝিতেছ না।

وَإِن تَعُدُّوا نِعْمَةَ اللَّهِ لَا تُحْصُوهَا ۗ إِنَّ اللَّهَ لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ

বাংলা অর্থ:

১৮। আর যদি তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলার নিয়ামতসমূহ গণনা করিতে আরম্ভ কর, তবে উহার সংখ্যা নির্ণয় করিতে পারিবে না; বাস্তবিক আল্লাহ্ তা‘আলা অতিশয় ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়ালু।

সূরা নহল বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ

১। ইহাতে সর্বপ্রকারের প্রানী ও উদ্ভিদ এবং সর্বপ্রকারের সংযুক্ত ও অসংযুক্ত নির্জীব পদার্থসমূহ শামিল রহিয়াছে। (বঃকোঃ)
২। এই আয়াতটি সম্বন্ধে বলা যায় যে, লোনা পানির সমুদ্রেই সাধারনতঃ মনি-মুক্তার উৎপত্তি হইয়া থাকে। যদি এখন মানিয়া লওয়া যাই, তবে অত্ত আয়াতে সমুদ্র বলিতে নির্দিষ্টরূপে লোনা পানির সমুদ্রই উদ্দেশ্যে হইবে। অন্যথায় লোনা ও মিঠা উভয়বিধ পানির সমুদ্রই উদ্দেশ্যে হইবে। (বঃকোঃ)
৩। যাহার ফলে তোমরা উভয়কেই উপাস্য মনে করিতেছ। ইহাতে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ তা‘আলাকে অপমান করা হয়। কেননা, তাঁহাকে মুর্তি সমূহের সমপর্যায়ভুক্ত মনে করিয়া ফেলিয়াছ। (বঃকোঃ)
৪। অর্থাৎ, একত্বের প্রমাণ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা‘আলা নিজের যেসমস্ত নেয়ামতের উল্লেখ করিয়াছেন, এগুলি তো তাঁহার সেই অনন্ত নেয়ামতের এক ক্ষুদ্রাংশ মাত্র। (বঃকোঃ)

وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تُسِرُّونَ وَمَا تُعْلِنُونَ

বাংলা অর্থ:

১৯। আর আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের গোপনীয় ও প্রকাশ্য অবস্থা সমস্তই অবগত আছেন।

وَالَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ لَا يَخْلُقُونَ شَيْئًا وَهُمْ يُخْلَقُونَ

বাংলা অর্থ:

২০। আর ইহারা আল্লাহ্কে ছাড়িয়া যেইগুলির উপাসনা করে, উহারা কিছুই সৃষ্টি করিতে পারে না বরং উহারা নিজেরাই হইতেছে সৃষ্ট।

أَمْوَاتٌ غَيْرُ أَحْيَاءٍ ۖ وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ

বাংলা অর্থ:

২১। উহারা মৃত, জীবিত নহে, এবং তাহাদের (সেই উপাস্যদের) জানা নাই যে, মৃতগণ কখন পুনরুত্থিত হইবে।

إِلَـٰهُكُمْ إِلَـٰهٌ وَاحِدٌ ۚ فَالَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ قُلُوبُهُم مُّنكِرَةٌ وَهُم مُّسْتَكْبِرُونَ

বাংলা অর্থ:

২২। তোমাদের সত্যিকারের উপাস্য হইতেছেন একই মা’বুদ, অতএব, যাহারা পরকালের প্রতি ঈমান আনে না, তাহাদের অন্তরসমূহ (যুক্তিসংগত কথাও) অমান্য করিতেছে, এবং তাহারা অহংকার করিতেছে।

لَا جَرَمَ أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا يُسِرُّونَ وَمَا يُعْلِنُونَ ۚ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْتَكْبِرِينَ

বাংলা অর্থ:

২৩। নিশ্চিত সত্য এই যে, আল্লাহ্ তাহাদের গোপনীয় ও প্রকাশ্যে অবস্থাই অবগত আছেন; নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা অহংকারীদিগকে পছন্দ করেন না।

وَإِذَا قِيلَ لَهُم مَّاذَا أَنزَلَ رَبُّكُمْ ۙ قَالُوا أَسَاطِيرُ الْأَوَّلِينَ

বাংলা অর্থ:

২৪। আর যখন তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হয়-তোমাদের রব্ব কি বস্তু নাযিল করিয়াছেন? তখন বলে, উহা তো কেবল কতকগুলি ভিত্তিহীন কথা যাহা পূর্ববর্তী লোকগণ হইতে চলিয়া আসিতেছে।

لِيَحْمِلُوا أَوْزَارَهُمْ كَامِلَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۙ وَمِنْ أَوْزَارِ الَّذِينَ يُضِلُّونَهُم بِغَيْرِ عِلْمٍ ۗ أَلَا سَاءَ مَا يَزِرُونَ

বাংলা অর্থ:

২৫। উহার পরিনাম এই হইবে যে, এই লোকদিগকে কিয়ামতের দিন বহন করিতে হইবে নিজেদের গুনাহের পূর্ন বোঝা, এবং তাহাদের গুনাহেরও কিছু বোঝা যাহাদিগকে তাহারা অজ্ঞতার দরুন পথভ্রষ্ট করিতেছিল; মনে রাখিও, যে পাপ-ভার ইহারা নিজেদের উপর চাপাইতেছে উহা নির্কৃষ্ট বোঝা।

সূরা নহল বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ

১) অর্থাৎ, মুশরিকরা যাহাদিগকে আল্লাহ্ তা‘আলার শরীক সাব্যস্ত করিয়া থাকে, তাহাদের কতক তো আসলেই নির্জীব। যেমন তাহাদের পূজিত মূর্তিসমূহ। কিংবা এককালে জীবিত থাকিলেও এখন মৃত। যেমন ইহুদীরা ওযাইর (আঃ) কে খোদার পুত্র বলিত। তিনি এখন মৃত। আর কতক এখন পর্যন্ত জীবিত থাকিলেও ভবিষ্যতে মরিবে-যেমন হযরত ঈসাকে নাছারারা খোদার বেটা বলিয়া থাকে, তিনিও একদিন দিবেন। আবার কেহ কেহ ফেরেশতাদের পূজা করিয়া থাকে। তাহারা এখন জীবিত থাকিলেও ভবিষ্যতে মরিবে। তদ্রুপ জিন জাতিও মরিবে। মোটকথা কোন দেবতাই জীবিত থাকিবার নহে। সৃষ্টিকর্তা হওয়া তো দূরেরই কথা। (বঃকোঃ)

قَدْ مَكَرَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ فَأَتَى اللَّهُ بُنْيَانَهُم مِّنَ الْقَوَاعِدِ فَخَرَّ عَلَيْهِمُ السَّقْفُ مِن فَوْقِهِمْ وَأَتَاهُمُ الْعَذَابُ مِنْ حَيْثُ لَا يَشْعُرُونَ

বাংলা অর্থ:

২৬। যাহারা ইহাদের পূর্বে অতীত হইয়াছে, তাহারাও বড় বড় ষড়যন্ত্র অবলম্বন করিয়াছিল, কিন্তু আল্লাহ্ তা‘আলা তাহাদের তৈয়ারী ভিত্তিমূলে বিধ্বষÍ করিয়া দিলেন, ইতঃপর তাহাদের উপর ছাদ ধসিয়া পড়িল উপর হইতে, এবং আযাব তাহাদের উপর এইভাবে আসিল যাহা তাহাদের ধারনাও ছিল না।

ثُمَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُخْزِيهِمْ وَيَقُولُ أَيْنَ شُرَكَائِيَ الَّذِينَ كُنتُمْ تُشَاقُّونَ فِيهِمْ ۚ قَالَ الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ إِنَّ الْخِزْيَ الْيَوْمَ وَالسُّوءَ عَلَى الْكَافِرِينَ

বাংলা অর্থ:

২৭। অতঃপর ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলা তাহাদিগকে লাঞ্ছিত করিবেন, এবং বলিবেন যে, আমার সেই অংশীদাররা কোথায়? যাহাদের সম্বন্ধে তোমরা লড়াই-ঝগড়া করিতে; যাহাদিগকে (সত্যের) জ্ঞান দান করা হইয়াছিল তাঁহারা বলিবে, আজ পূর্ণ লাঞ্ছনা ও আযাব কাফেরদের উপর।

الَّذِينَ تَتَوَفَّاهُمُ الْمَلَائِكَةُ ظَالِمِي أَنفُسِهِمْ ۖ فَأَلْقَوُا السَّلَمَ مَا كُنَّا نَعْمَلُ مِن سُوءٍ ۚ بَلَىٰ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ

বাংলা অর্থ:

২৮। ফেরেশতাগণ যাহাদের প্রাণ কুফরের অবস্থায় বাহির করিয়াছিলেন, পরিশেষে কাফেররা (উক্ত প্রশ্নের উত্তরে) সন্ধির প্রস্তাব আনয়ন করিবে যে, আমরা তো কোন মন্দ কাজ করিতেছিলাম না; (আল্লাহ্ তা‘আলা বলিবেন) অবশ্যই (করিতেছিলে), নিশ্চয়ই, আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের সকল কার্যকলাপের পূর্ণ খবর রাখেন।

فَادْخُلُوا أَبْوَابَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا ۖ فَلَبِئْسَ مَثْوَى الْمُتَكَبِّرِينَ

বাংলা অর্থ:

২৯। অতএব, দোযখের দ্বারসমূহে প্রবেশ কর, উহাতে অনন্তকাল থাক; বস্তুতঃ উহা হইতেছে অহংকারীদের নিকৃষ্ট নিবাস।

وَقِيلَ لِلَّذِينَ اتَّقَوْا مَاذَا أَنزَلَ رَبُّكُمْ ۚ قَالُوا خَيْرًا ۗ لِّلَّذِينَ أَحْسَنُوا فِي هَـٰذِهِ الدُّنْيَا حَسَنَةٌ ۚ وَلَدَارُ الْآخِرَةِ خَيْرٌ ۚ وَلَنِعْمَ دَارُ الْمُتَّقِينَ

বাংলা অর্থ:

৩০। আর যেই সমস্ত লোক অংশীবাদ হইতে বাঁচিয়া চলে, তাহাদিগকে বলা হয় যে, তোমাদের রব্ব কি বস্তু নাযিল করিয়াছেন? তাহারা বলে, মহা কল্যাণ নাযিল করিয়াছেন; যাহারা সৎকার্য করিয়াছে তাহাদের জন্য এই দুনিয়াতেও মঙ্গল রহিয়াছে; এবং পরজগত তো আরও উত্তম; আর বাস্তবিকই উহা শিরক হইতে আত্মসংযমকারীদের জন্য উত্তম বাসস্থান।

সূরা নহল বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ

১) অর্থাৎ, ছাদ ধসিয়া পড়িয়া যেমন উহার নীচের সবকিছুই চাপা পড়িয়া যায়, তদ্রুপ ইহারাও সম্পূর্নরূপে বিফলকাম এবং ক্ষতি গ্রস্ত হইয়া তাহাদের সমস্ত উদ্দেশ্যে চাপা পড়িল। (বঃকোঃ)
২) আয়াতটির সারমর্মÑ“তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তী কাফেরদের উভয় জগতের ক্ষতিগ্রস্থতা ও শাস্তির কথা শুনিতে পাইলে, তোমরাও সত্য ধর্মের বিপক্ষে অপচেষ্টা ও ষড়যন্ত্র করিতেছ এবং মানুষকে বিপথগামী করার চেষ্টা করিতেছ। অতএব, তোমাদের পরিণামও এইরূপই হইবে। (বঃকোঃ)
৩) এখানে সৎকার্য বলিতে সর্বপ্রকারের নেক কাজ। (বঃকোঃ)
৪) ইহজগতের মঙ্গল এই যে, তাহাদিগকে ইহলোকেই প্রতিশ্রুতি ও সুসংবাদ দেওয়া হইয়াছে যে, আখেরাতে তাহারা তাহাদের কাজের সওয়াব লাভ করিবে। আর পরলোকে উক্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হওয়াকেই আরও উত্তম বলা হইয়াছে। (বঃকোঃ)

جَنَّاتُ عَدْنٍ يَدْخُلُونَهَا تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ۖ لَهُمْ فِيهَا مَا يَشَاءُونَ ۚ كَذَ‌ٰلِكَ يَجْزِي اللَّهُ الْمُتَّقِينَ

বাংলা অর্থ:

৩১। উহা হইবে চিরস্থায়ী বসবাসির উদ্যান, যাহাতে তাহারা প্রবেশ করিবে, সেই উদ্যানসমূহের নি¤œদেশ দিয়া নহরসমূহ বহিতে থাকিবে, তাহারা তথায় যাহাকিছু চাহিবে তাহাই পাইবে; এই রকমেরই বিনিময় আল্লাহ্ তা‘আলা শিরক হইতে আতশরক্ষাকারীদের সকলকে দিবেন।

الَّذِينَ تَتَوَفَّاهُمُ الْمَلَائِكَةُ طَيِّبِينَ ۙ يَقُولُونَ سَلَامٌ عَلَيْكُمُ ادْخُلُوا الْجَنَّةَ بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ

বাংলা অর্থ:

৩২। ফেরেশতাগণ যাহাদের প্রাণ এই অবস্থায় বাহির করে যে, তাহারা (শিরক হইতে) পবিত্র থাকে, (এবং) বলিতে থাকেÑআসসালামু আলাইকুম, তোমরা বেহেশতে চলিয়া যাও, নিজেদের আমলের দরুন।

هَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا أَن تَأْتِيَهُمُ الْمَلَائِكَةُ أَوْ يَأْتِيَ أَمْرُ رَبِّكَ ۚ كَذَ‌ٰلِكَ فَعَلَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ ۚ وَمَا ظَلَمَهُمُ اللَّهُ وَلَـٰكِن كَانُوا أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ

বাংলা অর্থ:

৩৩। ইহারা (Ñকাফেররা) শুধূ এই প্রতীক্ষায় আছে, যেন তাহাদের নিকট (মৃত্যুর) ফেরেশতা আসিয়া পড়েন, অথবা আপনার রব্বের আদেশ(-কিয়ামত) আসিয়া পড়ে; তাহাদের পূর্বে যেই সমস্ত লোক ছিল তাহারাও এইরূপই করিয়াছিল; এবং তাহাদের প্রতি আল্লাহ্ বিন্দু মাত্রও যুলুম করেন নাই, কিন্তু তাহারা নিজেরাই নিজেদের উপর যুলুম করিতেছিল।

فَأَصَابَهُمْ سَيِّئَاتُ مَا عَمِلُوا وَحَاقَ بِهِم مَّا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِئُونَ

বাংলা অর্থ:

৩৪। অবশেষে, তাহারা তাহাদের অসৎ কর্মসমূহের শাস্তি পাইল, এবং যেই আযাবের প্রতি তাহারা হাস্য করিত, উহাই আসিয়া তাহাদিগকে বেষ্টন করিয়া ফেলিল।

وَقَالَ الَّذِينَ أَشْرَكُوا لَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا عَبَدْنَا مِن دُونِهِ مِن شَيْءٍ نَّحْنُ وَلَا آبَاؤُنَا وَلَا حَرَّمْنَا مِن دُونِهِ مِن شَيْءٍ ۚ كَذَ‌ٰلِكَ فَعَلَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ ۚ فَهَلْ عَلَى الرُّسُلِ إِلَّا الْبَلَاغُ الْمُبِينُ

বাংলা অর্থ:

৩৫। এবং অংশীবাদীরা এইরূপ বলে যে, যদি আল্লাহর অভিপ্রায় হইত,তবে না আমরা আল্লাহ ভিন্ন অন্য কাহারও এবাদত করিতাম,আর না আমাদের বাপ দাদাগণ, আর না তাঁহার (আদেশ) ছাড়া কোন বস্তুকে হারাম বলিতে পারিতাম; যেই সমস্ত লোক ইহাদের পূর্বে গত হইয়াছে তাহারাও এইরূপ আচরণই করিয়াছিল, কাজেই রসুলগণের দায়িত্ব তো কেবল স্পষ্টরূপে (নির্দেশাবলী) পৌঁছাইয়া দেওয়া।

সূরা নহল বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ

১) অর্থাৎ, মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই নেককারের রূহ, বেহেশতে প্রবেশ করিয়া বিচরণ করিবে এবং হিসাব নিকাশের পর তাহারা সশরীরে বেহেশতে প্রবেশ করিবে। (বঃকোঃ)
২) অত্র আয়াতে আমলকেই বেহেশত লাভের কারন বলা হইয়াছে। অর্থাৎ, আমল বেহেশত লাভের স্বাভাবিক কারণ। আসলে প্রকৃত উপলক্ষ্যে আল্লাহর রহমত। (বঃকোঃ)
৩) অর্থাৎ, তাহারা এই প্রতীক্ষায় রহিয়াছে যে, মৃত্যুক্ষণে অথবা কিয়ামতের দিন ঈমান আনয়ন করিবে। অথচ তখন ঈমান গৃহীত হইবে না। (বঃকোঃ)
৪) অর্থাৎ, মুশরিকরা বলে, আমরা অংশীবাদকে ধর্ম মনে করিতেছি এবং কতিপয় বস্তুকে হারাম করিয়া লইয়াছি। ইহা যদি আল্লাহর অভিপ্রায় না হইত, তবে আমরা এগুলি করিতেই পারিতাম না। হে মুহাম্মদ (দঃ)! আপনি এসব কথায় চিন্তিত হইবেন না। ইহা তাহাদের অর্থহীন ঝগড়া। (বঃকোঃ)

وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ ۖ فَمِنْهُم مَّنْ هَدَى اللَّهُ وَمِنْهُم مَّنْ حَقَّتْ عَلَيْهِ الضَّلَالَةُ ۚ فَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَانظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ

বাংলা অর্থ:

৩৬। আর আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে কোন না কোন নবী পাঠাইয়া আসিতেছি যেÑতোমরা আল্লাহর এবাদত কর এবং শয়তান হইতে বাঁচিয়া চল, অতঃপর তাহাদের মধ্যে হইতে কতক লোক এমন হইল যে, যাহাদিগকে আল্লাহ্ তা‘আলা হেদায়েত দান করিলেন, আর তাহাদের মধ্যেকার কতক লোক এমন হইল যে, যাহাদের জন্য গোমরাহী সাব্যস্ত হইল; সুতরাং ভূপৃষ্টে বিচরণ কর, অতঃপর দেখ যে, মিথ্যা সাব্যস্তকারীদের কিরূপ পরিণাম হইয়াছে।

إِن تَحْرِصْ عَلَىٰ هُدَاهُمْ فَإِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي مَن يُضِلُّ ۖ وَمَا لَهُم مِّن نَّاصِرِينَ

বাংলা অর্থ:

৩৭। যদি আপনি তাহাদের সুপথে আসিবার আকাঙ্কা করেন, তবে (কোন ফল হইবে না,কেননা) আল্লাহ্ এইরূপ লোককে হেদায়েত করেন না, যাহাকে পথভ্রষ্ট করেন, এবং কেহই তাহাদের সহায়ক হইবে না।

وَأَقْسَمُوا بِاللَّهِ جَهْدَ أَيْمَانِهِمْ ۙ لَا يَبْعَثُ اللَّهُ مَن يَمُوتُ ۚ بَلَىٰ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ

বাংলা অর্থ:

৩৮। আর ইহারা খুব জোরে শোরে আল্লাহর কসম খায় যে, যেই ব্যক্তি মরিয়া যায়, আল্লাহ্ তা‘আলা তাহাকে কখনও পুনঃজীবিত করিবেন না; জীবিত করিবেন না কেন? এই ওয়াদাকে তো আল্লাহ্ তা‘আলা নিজের উপর অবশ্য করণীয় করিয়া রাখিয়াছেন, কিন্তু অধিকাংশ লোকই বিশ^াস স্থাপন করে না।

لِيُبَيِّنَ لَهُمُ الَّذِي يَخْتَلِفُونَ فِيهِ وَلِيَعْلَمَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّهُمْ كَانُوا كَاذِبِينَ

বাংলা অর্থ:

৩৯। (পুনর্জীবন এইজন্য হইবে,ধর্ম সম্বন্ধে) যেই বিষয়ে তাহাা মতভেদ করিত, যেন উহা তাহাদের সম্মুখে প্রকাশ করিয়া দেন, এবং কাফেররা যেন নিশ্চিতরূপে জানিতে পারে যে, বাস্তবিক, তাহারাই মিথ্যাবাদী।

সূরা নহল বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ

১) অর্থাৎ, কাফের এবং নবীদের মধ্যে এরূপ ব্যবহার প্রাচীন কাল হইতে চলিয়া আসিতেছে এবং হেদায়েত ও ভ্রষ্টকরণ সম্বন্ধে আল্লাহর কাজও এভাবেই চলিয়া আসিতেছে। মোটকথা, বাকবিতন্ডা করা কাফেরদের চিরন্তন রীতি। নবীদের শিক্ষা প্রদানও চিরন্তন নীতি, সকল মানুষ হেদায়েত গ্রহণ না করাও চিরকালীন নিয়ম। তবে আপনার চিন্তা কেন? (বঃকোঃ)
২) ৩৪ নং আয়াতে উদ্ধৃত কাফেরদের উক্তিটি পথভ্রষ্টতাই বটে। এই আয়াতে বলা হইয়াছে “যদি এই উক্তি পথভ্রষ্টতা বলিয়া মনে না কর, তবে ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণ করিয়া দেখ, নবীদের অবাধ্য সম্প্রদায়ের কি পরিণতি হইয়াছিল? তখন দেখিবে, তাহা পথভ্রষ্টতা না হইলে উক্ত সম্প্রদায়গুলির প্রতি আযাব কেন আসিয়াছিল। তবুও কি তাহা আসমানী আযাব হওয়াতে সন্দেহ আছে? (বঃকোঃ)

إِنَّمَا قَوْلُنَا لِشَيْءٍ إِذَا أَرَدْنَاهُ أَن نَّقُولَ لَهُ كُن فَيَكُونُ

বাংলা অর্থ:

৪০। আমি যেই বস্তুকে (সৃষ্টির) ইচ্ছা করি, উহার উদ্দেশ্যে কেবল আমার এতটুকু বলাই যথেষ্ট হয় যে, (পয়দা) হইয়া যাও, অমনি উহা হইয়া যায়।

وَالَّذِينَ هَاجَرُوا فِي اللَّهِ مِن بَعْدِ مَا ظُلِمُوا لَنُبَوِّئَنَّهُمْ فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً ۖ وَلَأَجْرُ الْآخِرَةِ أَكْبَرُ ۚ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ

বাংলা অর্থ:

৪১। আর যাহারা আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিজেদের মাতৃভূমি (-মক্কা) পরিত্যাগ করিয়াছে (কাফের কর্র্তৃক) নির্যাতিত হওয়ার পর, আমি অবশ্যই তাহাদিগকে দুনিয়ায় উত্তম বাসস্থান দিব; আর পরকালের সওয়াব বহু শ্রেষ্ঠ। হায়! যদি তাহাদের খবর হইত।

الَّذِينَ صَبَرُوا وَعَلَىٰ رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ

বাংলা অর্থ:

৪২। তাহারা এমন যাহারা ধৈর্য ধারণ করে এবং নিজ রব্বের উপর ভরসা রাখে।

وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ إِلَّا رِجَالًا نُّوحِي إِلَيْهِمْ ۚ فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِن كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ

বাংলা অর্থ:

৪৩। এবং আমি আপনার পূর্বেও কেবল মাত্র মানুষকেই রাসুলরূপেই পাঠাইয়াছিÑযাহাদের প্রতি ওহী পাঠাইতাম, সুতরাং অভিজ্ঞ লোকদের নিকট জিজ্ঞাসা করিয়া দেখ, যদি তোমাদের জানা না থাকে।

بِالْبَيِّنَاتِ وَالزُّبُرِ ۗ وَأَنزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ

বাংলা অর্থ:

৪৪। (সেই নবীগণকে প্রেরণ করিয়াছি) মু’জেযা ও কিতাবসমূহ দিয়া; আর আপনার প্রতিও এই কোরআন নাযিল করিয়াছি, যেন আপনি সেই সমস্ত বিষয় মানুষের নিকট প্রকাশ করিয়া দেন যাহা তাহাদের জন্য পাঠান হইয়াছে, আর যেন তাহারা ভাবিয়া দেখে।

أَفَأَمِنَ الَّذِينَ مَكَرُوا السَّيِّئَاتِ أَن يَخْسِفَ اللَّهُ بِهِمُ الْأَرْضَ أَوْ يَأْتِيَهُمُ الْعَذَابُ مِنْ حَيْثُ لَا يَشْعُرُونَ

বাংলা অর্থ:

৪৫। যেই সমস্ত লোক (সত্য ধর্মকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে) নানা বিধহীন চক্রান্ত করে, সেই সমস্ত লোক তবুও কি এই কথা হইতে নিশ্চিত রহিয়াছে যে, আল্লাহ্ তাহাদিগকে মাটিতে পুঁতিয়া ফেলেন, অথবা এমন স্থান হইতে তাহাদের প্রতি আযাব আসিয়া পড়ে যাহার ধারণাও তাহাদের ছিল না।

أَوْ يَأْخُذَهُمْ فِي تَقَلُّبِهِمْ فَمَا هُم بِمُعْجِزِينَ

বাংলা অর্থ:

৪৬। কিংবা তাহাদিগকে পাকড়াও করেন তাহাদের চলাফেরার অবস্থায় (কোন বিপদে), সুতরাং তাহারা আল্লাহ্কে অক্ষম করিতে পারিবে না।

সূরা নহল বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ

১) কাফেররা কিয়ামত হওয়া দুরূহ বলিয়া মনে করিত। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, আমার পক্ষে কিয়ামত ঘটান এমন কি কঠিন কাজ! আমি কোন বস্তু সৃষ্টির ইচ্ছা করিলেই উহা হইয়া যায়। (বঃকোঃ)
২) যাহারা আবিসিনিয়ার দিকে হিজরত করিয়াছিল। তাহাদিগকে আমি মদীনায় পৌঁছাইয়া শান্তি ও নিরাপত্তা প্রদাণ করিব। (বঃকোঃ)
৩) যেমন জন্মভূমি ত্যাগ করা কষ্টকর হইলেও ধর্মকর্মের নিরাপত্তার জন্য ধৈর্যধারন করত হিজরত করেন। (বঃকোঃ)
৪) সুতরাং হিজরত কালে পানাহার সম্বন্ধে একটুও চিন্তা করেন নাই। (বঃকোঃ)
৫) অর্থাৎ, ইহুদী ও নাছারাদের নিকট জিজ্ঞাসা কর। মানুষ নবী হওয়া সম্বন্ধে কিতাবীদের সঙ্গে মুশরিকদের বিরোধ থাকিলেও চির প্রচলিত ব্যাপারে তাহাদের সাক্ষ্য প্রামাণ্য হইতে কোন বাধা নাই। (বঃকোঃ)

أَوْ يَأْخُذَهُمْ عَلَىٰ تَخَوُّفٍ فَإِنَّ رَبَّكُمْ لَرَءُوفٌ رَّحِيمٌ

বাংলা অর্থ:

৪৭। অথবা তাহাদিগকে পাকড়াও করিবেন (দূর্ভিক্ষ বা মহামারীতে) ক্ষয় করিতে করিতে; বস্তুতঃ তোমাদের রব্ব পরম ¯েœহশীল, বড় মেহেরবান।

أَوَلَمْ يَرَوْا إِلَىٰ مَا خَلَقَ اللَّهُ مِن شَيْءٍ يَتَفَيَّأُ ظِلَالُهُ عَنِ الْيَمِينِ وَالشَّمَائِلِ سُجَّدًا لِّلَّهِ وَهُمْ دَاخِرُونَ

বাংলা অর্থ:

৪৮। তাহারা কি আল্লাহ্ তা‘আলার সেই সৃষ্ট পদার্থসমূহ দেখে নাÑযাহাদের ছায়া কখনও এক দিকে কখনও অপর দিকে ঢলিয়া পড়ে আল্লাহর (আদেশের) বশীভূত হইয়া, আর সেই বস্তুগুলিও বিনীত।

وَلِلَّهِ يَسْجُدُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ مِن دَابَّةٍ وَالْمَلَائِكَةُ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُونَ

বাংলা অর্থ:

৪৯। আর আসমানসমূহ ও ভূ-পৃষ্ঠে চলমান যত বস্তু বিদ্যমান আছে, সকলই আল্লাহর অনুগত, এবং ফেরেশতাগণও, আর তাহারা অহঙ্কার করে না।

يَخَافُونَ رَبَّهُم مِّن فَوْقِهِمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ

বাংলা অর্থ:

৫০। তাহারা স্বীয় পরওয়ারদিগারকে ভয় করে, যিনি তাহাদের উপর ক্ষমতাবান, এবং তাহাদিগকে যে আদেশ করা হয়, তাহারা তাহা পালন করে।

وَقَالَ اللَّهُ لَا تَتَّخِذُوا إِلَـٰهَيْنِ اثْنَيْنِ ۖ إِنَّمَا هُوَ إِلَـٰهٌ وَاحِدٌ ۖ فَإِيَّايَ فَارْهَبُونِ

বাংলা অর্থ:

৫১। আর আল্লাহ্ তা‘আলা বলিয়াছেন, দুই (বা ততোধিক) মা’বূদ গ্রহণ করিও না, শুধু তিনি তো হইতেছেন একক মা’বূদ, সুতরাং তোমরা কেবল আমাকেই ভয় করিতে থাক।

وَلَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلَهُ الدِّينُ وَاصِبًا ۚ أَفَغَيْرَ اللَّهِ تَتَّقُونَ

বাংলা অর্থ:

৫২। আর তাঁহারই অধিকারে সমস্ত বস্তুÑযাহাকিছু আসমানসমূহে এবং পৃথিবীতে আছে, এবং অবশ্যপালনীয়রূপে আনুগত্য তাঁহারই প্রাপ্য; তবুও কি তোমরা আল্লাহ্ ভিন্ন অন্যকে ভয় কর?

وَمَا بِكُم مِّن نِّعْمَةٍ فَمِنَ اللَّهِ ۖ ثُمَّ إِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فَإِلَيْهِ تَجْأَرُونَ

বাংলা অর্থ:

৫৩। আর তোমাদের নিকট যেই কোন নেয়ামত আছে, উহা সমস্তই হইতেছে আল্লাহরই সন্নিধান হইতে, আবার যখন তোমাদিগকে দুঃখ কষ্ট করে, তখন তাঁহারই নিকট ফরিয়াদ করিতে থাক।

সূরা নহল বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ

১) যেমন দুর্ভিক্ষ বা মহামারী উপস্থিত হয় এবং তিলে তিলে তাহারা লয় প্রাপ্ত হয়। মোটকথা, তাহাদের পক্ষে নির্ভীক ও দুঃসাহসী হওয়া অনুচিত। (বঃকোঃ)
২) অর্থাৎ, উপাস্য যেহেতু একমাত্র আমিই; এবং ইহার আনুসঙ্গিক যাবতীয় গুনাবলী যথা পূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী হওয়া প্রভৃতি একমাত্র আমারই জন্য নির্দিষ্ট। অতএব, প্রতিশোধ গ্রহণের এবং শাস্তির জন্য একমাত্র আমাকেই ভয় কর। আর আমার শরীক সাব্যস্ত করিও না; করিলে অবশ্যই আমি শাস্তি দিব। (বঃকোঃ)
৩) অর্থাৎ, তোমাদিগকে কোন দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করিলে উহা দূর করার জন্য একমাত্র আল্লাহ্কে ডাক এবং তাহারই নিকট ফরিয়াদ করিতে থাক এবং অপর কোন দেবতার স্মরণ কর না। তোমাদের তখনকার অবস্থা দ্বারা বুঝা যায়, একত্ববাদ সত্য এবং একমাত্র আল্লাহ্ই উপাস্য। (বঃকোঃ)

ثُمَّ إِذَا كَشَفَ الضُّرَّ عَنكُمْ إِذَا فَرِيقٌ مِّنكُم بِرَبِّهِمْ يُشْرِكُونَ

বাংলা অর্থ:

৫৪। অতঃপর যখন (আল্লাহ্) তোমাদিগ হইতে সেই কষ্ট বিদূরিত করেন, তখন তোমাদের মধ্যেকার এক দল স্বীয় রব্বের সহিত শিরক করিতে আরম্ভ করে।

لِيَكْفُرُوا بِمَا آتَيْنَاهُمْ ۚ فَتَمَتَّعُوا ۖ فَسَوْفَ تَعْلَمُونَ

বাংলা অর্থ:

৫৫। যাহার সারমর্ম এই হয় যে, তাহারা আমার প্রদত্ত নেয়ামতের না-শোকরী করে; তবে কতকদিন উপভোগ করিয়া লও। অচিরেই তোমরা জানিতে পারিবে।

وَيَجْعَلُونَ لِمَا لَا يَعْلَمُونَ نَصِيبًا مِّمَّا رَزَقْنَاهُمْ ۗ تَاللَّهِ لَتُسْأَلُنَّ عَمَّا كُنتُمْ تَفْتَرُونَ

বাংলা অর্থ:

৫৬। আর ইহারা তাহাদের (Ñদেবতাদের) জন্য অংশ নির্দিষ্ট করে, আমার প্রদত্ত বস্তুসমূহ হইতে, যেইগুলির (মা’বূদ হওয়া) সম্পর্কে তাহাদের কোন জ্ঞান নাই; আল্লাহর শপথ! তোমাদের এই মিথ্যা রচনার জন্য তোমাদের নিকট নিশ্চয়ই কৈফিয়ত তলব করা হইবে।

وَيَجْعَلُونَ لِلَّهِ الْبَنَاتِ سُبْحَانَهُ ۙ وَلَهُم مَّا يَشْتَهُونَ

বাংলা অর্থ:

৫৭। আর তাহারা আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করে কন্যাসমূহÑসোবহানাল্লাহ্! এবং নিজেদের জন্য অভিলষিত বস্তু (অর্থাৎ পুত্র)।

وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُم بِالْأُنثَىٰ ظَلَّ وَجْهُهُ مُسْوَدًّا وَهُوَ كَظِيمٌ

বাংলা অর্থ:

৫৮। আর যখন তাহাদের কাহাকেও কন্যা হওয়ার সংবাদ দেওয়া হয়, তখন সমস্ত দিন তাহার মুখমন্ডল মলিন থাকে, এবং সে মর্মাহত হইয়া পড়ে।

يَتَوَارَىٰ مِنَ الْقَوْمِ مِن سُوءِ مَا بُشِّرَ بِهِ ۚ أَيُمْسِكُهُ عَلَىٰ هُونٍ أَمْ يَدُسُّهُ فِي التُّرَابِ ۗ أَلَا سَاءَ مَا يَحْكُمُونَ

বাংলা অর্থ:

৫৯। তাহাকে যে বিষয়ের সংবাদ দেওয়া হইল উহার লজ্জায় লোক সমাজ হইতে পলাইয়া বেড়ায়; (ভাবিতে থাকে যে,) অপমান সহিয়া ইহাকে রাখিবে, না কি উহাকে মাটিতে পুঁতিয়া ফেলিবে? উত্তমরূপে শুনিয়া রাখ তাহাদের এই ব্যবস্থা নিতান্ত জঘন্য।

لِلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ مَثَلُ السَّوْءِ ۖ وَلِلَّهِ الْمَثَلُ الْأَعْلَىٰ ۚ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ

বাংলা অর্থ:

৬০। যাহারা পরকালের প্রতি ঈমান রাখে না তাহাদের অবস্থা নিকৃষ্টতর, এবং আল্লাহ তা‘আলার জন্য তো অতি উচ্চতম গুনাবলী বিদ্যমান রহিয়াছে; আর তিনি মহা পরাক্রান্ত, অতিশয় প্রজ্ঞাময়।

সূরা নহল বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ

১) এখানে একদল এই জন্য বলা হইয়াছে যে, তাহাদের মধ্যে একটি ক্ষুদ্র দল এমনও আছে, যাহারা এরূপ অবস্থা দেখিয়া একত্ববাদ ও ঈমানের উপর প্রতিষ্ঠিত হইয়া যায়। (বঃকোঃ)
২) এখানে আল্লাহ্ তা‘আলা মুশরিকদের অন্য প্রকারের একটি বোকামীর উল্লেখ করিতেছেন, তাহারা ফেরেশতাগণকে আল্লাহর বেটীঁ বলিত। আর নিজেদের কন্যা হইলে ছয় বৎসর উত্তীর্ণ হওয়া মাত্র জঙ্গলের মধ্যে গর্ত করিয়া কন্যাকে সঙ্গে লইয়া তথায় যাইয়া বলিত, এই গর্তের মধ্যে কি আছে দেখ। কন্যা উহাতে উকি মারিতেই ধাক্কা দিয়া উহাতে ফেলিয়া দিত এবং মাটি চাপা দিয়া তাহাকে পুঁতিয়া ফেলিত। (বঃকোঃ)
৩) কেননা প্রথমতঃ খোদার জন্য সন্তান সাব্যস্ত করাই বড় জঘন্য কথা। আবার সেই সন্তানও কেমন যাহাকে তাহারা লজ্জাকর মনে করিত। (বঃকোঃ)

وَلَوْ يُؤَاخِذُ اللَّهُ النَّاسَ بِظُلْمِهِم مَّا تَرَكَ عَلَيْهَا مِن دَابَّةٍ وَلَـٰكِن يُؤَخِّرُهُمْ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى ۖ فَإِذَا جَاءَ أَجَلُهُمْ لَا يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً ۖ وَلَا يَسْتَقْدِمُونَ

বাংলা অর্থ:

৬১। আর যদি আল্লাহ্ তা‘আলা মানুষদিগকে পাকড়াও করিতেন তাহাদের অত্যাচারের কারণে, তবে ভূ-পৃষ্ঠে কোন চলমানকে ছাড়িয়া দিতেন না, কিন্তু তিনি তাহাদিগকে এক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত (তওবার) অবকাশ দিতেছেন, অবশেষে যখন তাহাদের নির্দিষ্ট কাল আয়িা পৌঁছিবে, তখন উহা হইতে এক মুহূর্তও না পিছে হটিতে পারিবে, আর না আগে বাড়িতে পারিবে।

وَيَجْعَلُونَ لِلَّهِ مَا يَكْرَهُونَ وَتَصِفُ أَلْسِنَتُهُمُ الْكَذِبَ أَنَّ لَهُمُ الْحُسْنَىٰ ۖ لَا جَرَمَ أَنَّ لَهُمُ النَّارَ وَأَنَّهُم مُّفْرَطُونَ

বাংলা অর্থ:

৬২। আর তাহারা আল্লাহর জন্য সেই বিষয়গুলি সাব্যস্ত করে, যেইগুলিকে নিজেরা (নিজেদের জন্য) না পছন্দ করে, এবং নিজেদের মুখে মিথ্যা দাবী করিতে থাকে যে, (যদি কিয়ামত হয়, তবে) তাহাদের জন্যই সর্বপ্রকার মঙ্গল রহিয়াছে; নির্ঘাত কথা যে, তাহাদের জন্য দোযখ রহিয়াছে, এবং নিঃসন্দেহে তাহারা সকলের পূর্বে (দোযখে) প্রেরিত হইবে।

تَاللَّهِ لَقَدْ أَرْسَلْنَا إِلَىٰ أُمَمٍ مِّن قَبْلِكَ فَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ فَهُوَ وَلِيُّهُمُ الْيَوْمَ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

বাংলা অর্থ:

৬৩। আল্লাহর কসম! আপনার পূর্বে যেই সমস্ত সম্প্রদায় গত হইয়াছে, তাহাদের নিকটেও আমি রাসুল পাঠাইয়াছিলাম, অনন্তর শয়তান তাহাদিগকে তাহাদের কার্যকলাপগুলি পছন্দনীয় করিয়া দেখাইয়াছ, সুতরাং সে আজও তাহাদের বন্ধু এবং তাহাদের জন্যই যন্ত্রণাময় শাস্তি রহিয়াছে।

وَمَا أَنزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ إِلَّا لِتُبَيِّنَ لَهُمُ الَّذِي اخْتَلَفُوا فِيهِ ۙ وَهُدًى وَرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ

বাংলা অর্থ:

৬৪। এবং আমি আপনার প্রতি এই কিতাবখানা কেবল এই উদ্দেম্যে নাযিল করিয়াছি যে, যেই সমস্ত বিষয়ে লোকেরা মতভেদ করিতেছে, যেন আপনি তাহাদের নিকট উহা প্রকাশ করিয়া দেন, আর (নাযিল করিয়াছি) মূ’মিন সম্প্রদায়ের হেদায়েত এবং রহমতের উদ্দেশ্যে।

وَاللَّهُ أَنزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَحْيَا بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا ۚ إِنَّ فِي ذَ‌ٰلِكَ لَآيَةً لِّقَوْمٍ يَسْمَعُونَ

বাংলা অর্থ:

৬৫। আর আল্লাহ্ তা‘আলা আসমান হইতে পানি বর্ষণ করিলেন, তৎপর উহা দ্বারা যমীনকে সজীব করিয়া দিলেন উহার মৃত্যু (-শুষ্ক) হওয়ার পর; ইহাতে বড় প্রমাণ রহিয়াছে এমন লোকদের জন্যÑযাহারা শুনে।

সূরা নহল বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ

১) ‘আল্লাহ্ তা‘আলা যালিমদিগকে যুলুমের জন্য ধর-পাকড় করিলে যমীনের কোন চলমান প্রানীই রক্ষা পাইত না।’ (বঃকোঃ)
২) অর্থাৎ, সমস্ত মানুষকে হেদায়েত করার দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হয় নাই। যদ্দরুন আপনি চিন্তিত হইবেন। আমি কোরআন তো কেবল এই জন্য নাযিল করিয়াছি যে, একত্ববাদ, হাশর-নশর ও হালাল-হারাম সম্বন্ধীয় আহকামের ন্যায় যে বিষয়ে মানুষ মতভেদ করিতেছে, আপনি তাহা প্রকাশ করেন। আর বিশেষ করিয়া মুমিনদের হেদায়েতের জন্য। আর এই সকল উদ্দেশ্যে তো কোরআন দ্বারা ঠিক ভাবে চলিতেছে। তবে আপনি চিন্তিত হইবেন কেনো? (বঃকোঃ)

وَإِنَّ لَكُمْ فِي الْأَنْعَامِ لَعِبْرَةً ۖ نُّسْقِيكُم مِّمَّا فِي بُطُونِهِ مِن بَيْنِ فَرْثٍ وَدَمٍ لَّبَنًا خَالِصًا سَائِغًا لِّلشَّارِبِينَ

বাংলা অর্থ:

৬৬। আর চতুষ্পদ পশুগুলির মধ্যেও তোমাদের জন্য শিক্ষাপ্রদ বিষয় রহিয়াছে; উহাদের উদরে যে মল ও রক্ত আছে, আমি তোমাদিগকে উহার মধ্যেস্থল হইতে বিশুদ্ধ দুধ পান করিতে দেই, যাহা সহজে পানকারীদের গলা দিয়া নামে।

وَمِن ثَمَرَاتِ النَّخِيلِ وَالْأَعْنَابِ تَتَّخِذُونَ مِنْهُ سَكَرًا وَرِزْقًا حَسَنًا ۗ إِنَّ فِي ذَ‌ٰلِكَ لَآيَةً لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ

বাংলা অর্থ:

৬৭। আর খেজুর ও আঙ্গুর ফলের মধ্যেও শিক্ষাপ্রদ বিষয় আছে যে, উহা হইতে তোমরা মাদকদ্রব্য ও উত্তম খাদ্যদ্রব্যসমূহ প্রস্তুত কর; নিঃসন্দেহে ইহাতে সেই লোকদের জন্য বড় প্রমাণ রহিয়াছে যাহারা জ্ঞান রাখে।

وَأَوْحَىٰ رَبُّكَ إِلَى النَّحْلِ أَنِ اتَّخِذِي مِنَ الْجِبَالِ بُيُوتًا وَمِنَ الشَّجَرِ وَمِمَّا يَعْرِشُونَ

বাংলা অর্থ:

৬৮। আর আপনার রব্ব মৌমাছির অন্তরে এই কথা জন্মাইয়া দিলেন যে, তুমি গৃহ (মৌচাক) নির্মাণ করিয়া লওÑপাহাড়ে, বৃক্ষসমূহে এবং মানুষ যে সমস্ত অট্টালিকা নির্মাণ করে (উহাতেও)।

ثُمَّ كُلِي مِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ فَاسْلُكِي سُبُلَ رَبِّكِ ذُلُلًا ۚ يَخْرُجُ مِن بُطُونِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاءٌ لِّلنَّاسِ ۗ إِنَّ فِي ذَ‌ٰلِكَ لَآيَةً لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ

বাংলা অর্থ:

৬৯। অতঃপর সর্বপ্রকারের ফল হইতে চোষণ করিয়া বেড়াও, তৎপর (মৌচাকের দিকে ফিরিবার জন্য) নিজ রব্বের পথে চলÑযাহা (চলার ও স্মরণ রাখার পক্ষে) সহজ; উহার উদর হইতে পানীয় বস্তু (-মধু) নির্গত হয়, যাহার রং বিভিন্ন হইয়া থাকে, উহাতে মানুষের জন্য আরোগ্য রহিয়াছে; ইহাতে বড় প্রমাণ রহিয়াছে সেই লোকদের জন্য যাহারা চিন্তা করে।

সূরা নহল বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ

১) আয়াতটির অর্থ এই নহে যে, পশুর পেটে একদিকে রক্ত এবং অপর দিকে গোবর আর উহাদের মধ্যস্থলে দুগ্ধ থাকে; বরং পেটের মধ্যে যে খাদ্য থাকে উহাতে এমন অংশ আছে, যাহা ক্রমে গোবরে পরিনত হয় এবং এমনও অংশ আছে, যাহা পরে দুগ্ধে পরিনত হয় এবং উক্ত উভয় অংশই খাদ্যে মিশ্রিত অবস্থায় রহিয়াছে। মোটকথাÑদুগ্ধের উপাদান রক্তেরই এক অংশ বটে, হযমের পর পর পৃথক করিয়া গুণের স্বাভাবিক ক্রিয়া দ্বারা উহার রং পরিবর্তন পূর্বক দুগ্ধে পরিনত করা হয়। (বঃকোঃ)
২) যেমন শুষ্ক খোরমা, কিসমিস, শরবত, সিরকা সিরাপ ইত্যাদি। (বঃকোঃ)
৩) অর্থাৎ, মৌমাছিরা দূর-দূরান্তে গমণ করিয়া ফুলে ফুলে মধু আহরণ পূর্বক আল্লাহর নির্দিষ্ট পথে অতি সহজে নিজ নিজ মৌচাকে ফিরিয়া আসে। কখনও তাহাদের ভুল হয় না। (বঃকোঃ)

وَاللَّهُ خَلَقَكُمْ ثُمَّ يَتَوَفَّاكُمْ ۚ وَمِنكُم مَّن يُرَدُّ إِلَىٰ أَرْذَلِ الْعُمُرِ لِكَيْ لَا يَعْلَمَ بَعْدَ عِلْمٍ شَيْئًا ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ قَدِيرٌ

বাংলা অর্থ:

৭০। আর আল্লাহ্ তোমাদিগকে পয়দা করিয়াছেন অতঃপর তোমাদের প্রাণ বাহির করিয়া লন,এবং তোমাদের মধ্যে কতক লোক এইরূপও আছে যাহাদিগকে অকর্মন্য বয়স পর্যন্ত পৌঁছান হয়, যাহার ফলে তাহারা কোন বস্তু সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করার পর আবার তাহার অজানা হইয়া যায়; নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ অতিশয় জ্ঞানবান, মহা ক্ষমতাশীল।

وَاللَّهُ فَضَّلَ بَعْضَكُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ فِي الرِّزْقِ ۚ فَمَا الَّذِينَ فُضِّلُوا بِرَادِّي رِزْقِهِمْ عَلَىٰ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَهُمْ فِيهِ سَوَاءٌ ۚ أَفَبِنِعْمَةِ اللَّهِ يَجْحَدُونَ

বাংলা অর্থ:

৭১। আর আল্লাহ্ তোমাদের মধ্যে কতককে অন্য কতকের উপর রিযিকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করিয়াছেন, অনন্তর যাহাদিগকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হইয়াছে তাহারা নিজেদের অংশের সম্পদ আপন দাসদিগকে এইভাবে কখনও দিতে প্রস্তুত হয় না যেন তাহারা (প্রভূ এবং দাস) সকলে উহাতে সমান হইয়া যায়; তবুও কি তাহারা আল্লাহর নেয়ামতকে অস্বীকার করে?

وَاللَّهُ جَعَلَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا وَجَعَلَ لَكُم مِّنْ أَزْوَاجِكُم بَنِينَ وَحَفَدَةً وَرَزَقَكُم مِّنَ الطَّيِّبَاتِ ۚ أَفَبِالْبَاطِلِ يُؤْمِنُونَ وَبِنِعْمَتِ اللَّهِ هُمْ يَكْفُرُونَ

বাংলা অর্থ:

৭২। আর আল্লাহ্ তোমাদেরই মধ্যে হইতে তোমাদের জন্য পতœীগণকে বানাইয়াছেন, এবং সেই পতœীদের হইতে তোমাদের জন্য পুত্র ও পৌত্রগণকে পয়দা করিয়াছেন, আর তোমাদিগকে খাইতে দিয়েছে উত্তম খাদ্য; তারপরও কি তাহারা ভিত্তিহীন বিষয়ের প্রতি বিশ^াস রাখিবে, এবং আল্লাহ্ তা‘আলার নেয়ামতসমূহের না-শোকরী করিতে থাকিবে।

وَيَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَمْلِكُ لَهُمْ رِزْقًا مِّنَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ شَيْئًا وَلَا يَسْتَطِيعُونَ

বাংলা অর্থ:

৭৩। আর আল্লাহ্কে ছাড়িয়া এমন বস্তুসমূহের এবাদত করিতে থাকিবে যেইগুলি না তাহাদিগকে আসমান হইতে জীবিকা পৌঁছাইবার সামর্থ্য রাখে, আর না যমীন হইতে, এবং তাহারা কোন ক্ষমতাও রাখে না।

সূরা নহল বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ

১) ‘অকর্মন্য বয়স’ বলিতে ঐ বয়স উদ্দেশ্যে; যখন শারীরিক শক্তিও থাকে না, বোধশক্তিও না। (বঃকোঃ)
২) যেমন বৃদ্ধদিগকে দেখা যায়, একটি কথা বলিয়া দেওয়া মাত্রই তাহারা তাহা ভূলিয়া গিয়া পুনরায় জিজ্ঞাসা করে। (বঃকোঃ)
৩) অর্থাৎ, আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের কাহাকেও দাস-দাসীর প্রভূ ও তাহাদের জীবিকা সরবরাহকারী বানাইয়াছেন, আর কাহাকেও চাকর এবং তাহার জীবিকা প্রভূ হইতে পৌঁছিয়া থাকে। (বঃকোঃ)
৪) এখানে শিরকের চরম নিন্দাবাদ রহিয়াছে। আল্লাহ্ যেন তাহাদিগকে বলিতেছেন যে, তোমাদের দাস যখন তোমাদের সম্পদের শরীক হইতে পারে না, তখন খোদার দাস কিরূপে তাঁহার শরীক হইতে পারে? (বঃকোঃ)
৫) অর্থাৎ, মূর্তিসমূহ অন্যান্য দেব-দেবী ইত্যাদির উপর যাহাদের উপাস্য হওয়ার কোনই প্রমাণ নাই। বরং বিরুদ্ধ প্রমাণই বিদ্যমান রহিয়াছে। (বঃকোঃ)

فَلَا تَضْرِبُوا لِلَّهِ الْأَمْثَالَ ۚ إِنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ

বাংলা অর্থ:

৭৪। অতএব, আল্লাহর জন্য উপমাসমূহ গড়িও না; আল্লাহ্ তা‘আলা (ভালভাবে) জানেন এবং তোমরা জান না।

ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا عَبْدًا مَّمْلُوكًا لَّا يَقْدِرُ عَلَىٰ شَيْءٍ وَمَن رَّزَقْنَاهُ مِنَّا رِزْقًا حَسَنًا فَهُوَ يُنفِقُ مِنْهُ سِرًّا وَجَهْرًا ۖ هَلْ يَسْتَوُونَ ۚ الْحَمْدُ لِلَّهِ ۚ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ

বাংলা অর্থ:

৭৫। আল্লাহ্ একটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করিতেছেন যে, (কাহারও) একটি সত্বাধিকারভুক্ত দাস আছে যে কোন কিছুরই ক্ষমতা রাখে না, আর এক ব্যক্তি আছে যাহাকে আমি স্বীয় সন্নিধান হইতে প্রচুর জীবিকা প্রদান করিয়াছি, অনন্তর সে উহা হইতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে; এইরূপ লোকেরা কি পরস্পর সমান হইতে পারে? সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই জন্য রহিয়াছে; কিন্তু তাহাদের অধিকাংশ লোকই জানে না।

وَضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا رَّجُلَيْنِ أَحَدُهُمَا أَبْكَمُ لَا يَقْدِرُ عَلَىٰ شَيْءٍ وَهُوَ كَلٌّ عَلَىٰ مَوْلَاهُ أَيْنَمَا يُوَجِّههُّ لَا يَأْتِ بِخَيْرٍ ۖ هَلْ يَسْتَوِي هُوَ وَمَن يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ ۙ وَهُوَ عَلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ

বাংলা অর্থ:

৭৬। এবং আল্লাহ্ আরও একটি দৃষ্টান্ত বর্ণনা করিতেছেন যে, এমন দুই ব্যক্তি আছে যাহাদের মধ্যে এক জন তো (দাস,অধিকন্তু সে) বোবা (ও), কোন কাজই করিতে পারে না, এবং সে মনিবের গলগ্রহ, সে তাহাকে যেখানে পাঠায় কোন কাজ সমাধা করিয়া আসিতে পারে না; এই (বোবা) ব্যক্তি এবং এমন ব্যক্তি কি পরস্পর সমান হইতে পারে? যেই ব্যক্তি ভালো কথা শিক্ষা দেই এবং সে নিজেও ন্যায় পথে (চলিয়া) থাকে।

وَلِلَّهِ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ وَمَا أَمْرُ السَّاعَةِ إِلَّا كَلَمْحِ الْبَصَرِ أَوْ هُوَ أَقْرَبُ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

বাংলা অর্থ:

৭৭। আর আসমানসমূহ এবং যমীনের সমস্ত গোপন বিষয় (-এর অবগতি) একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলার জন্যই নির্দিষ্ট; আর কিয়ামতের ব্যাপার এইরূপ হইবে, যেমন চোখের পলক ফেলা, বরং তাহা হইতেও দ্রুততর; নিশ্চিতরূপে আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক বিষয়ের উপর পূর্ণ ক্ষমতা রাখেন।

সূরা নহল বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ

১) যেমন তোমরা বলিয়া থাক যে, আল্লাহর দৃষ্টান্ত দুনিয়ার রাজা বাদশার ন্যায়। সাধারন লোক রাজদরবারে নিজে নিজের অভাব অভিযোগ পেশ করিতে পারে না। রাজ প্রতিনিধির সাহায্যে পেশ করিয়া থাকে। তদ্রƒপ আমরাও মূর্তিসমূহকে এইজন্য পূজা করি, যেন আমাদিগকে আল্লাহর সন্নিধানে পৌঁছায় এবং হাশরের দিন ইহারা আমাদের জন্য সুফারিশ করে। (বঃকোঃ)
২) যখন পৃথিবীর প্রভূ এবং ভৃত্য পরষ্পর সমান হইতে পারে না, তখন প্রকৃত প্রভূ এবং সত্যিকারের দাস কিরূপে সমান হইবে?
৩) ক্বিয়ামতের ব্যাপার বলিতে মৃতদের মধ্যে জীবন সঞ্চার করা উদ্দেশ্যে তাহা যে খুব দ্রুতই সম্পন্ন হইবে ইহা তো স্পষ্ট কথা। কেননা চক্ষুর পলক মারিতে অন্ততঃ একটু নড়াচড়ার প্রয়োজন। কিন্তু পুনর্জীবন দান করা তো কেবল আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। তাহা অধিকতর দ্রুত অবশ্যই হইবে। (বঃকোঃ)

وَاللَّهُ أَخْرَجَكُم مِّن بُطُونِ أُمَّهَاتِكُمْ لَا تَعْلَمُونَ شَيْئًا وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَالْأَفْئِدَةَ ۙ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

বাংলা অর্থ:

৭৮। আর আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদিগকে বাহির করিয়াছেন তোমাদের মাতৃগর্ভ হইতে এমন অবস্থায় যে, তোমরা কিছুই জানিতে না, এবং তিনিই তোমাদিগকে দিয়াছেন কর্ণ ও চক্ষু এবং হৃদয়সমূহ, যেন তোমরা (তাঁহার) শোকর কর।

أَلَمْ يَرَوْا إِلَى الطَّيْرِ مُسَخَّرَاتٍ فِي جَوِّ السَّمَاءِ مَا يُمْسِكُهُنَّ إِلَّا اللَّهُ ۗ إِنَّ فِي ذَ‌ٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ

বাংলা অর্থ:

৭৯। মানুষ কি পক্ষীকুলকে দেখে নাই যে, উহারা আসমানের (নীচে) শূন্য মন্ডলে (আল্লাহরই) বশীভূত হইয়া আছে;উহাদিগকে কেহই ধরিয়া রাখে না আল্লাহ্ ব্যতীত; ইহার মধ্যে ঈমানদারদের জন্য (আল্লাহর অসীম ক্ষমতার) প্রমাণসমূহ রহিয়াছে।

وَاللَّهُ جَعَلَ لَكُم مِّن بُيُوتِكُمْ سَكَنًا وَجَعَلَ لَكُم مِّن جُلُودِ الْأَنْعَامِ بُيُوتًا تَسْتَخِفُّونَهَا يَوْمَ ظَعْنِكُمْ وَيَوْمَ إِقَامَتِكُمْ ۙ وَمِنْ أَصْوَافِهَا وَأَوْبَارِهَا وَأَشْعَارِهَا أَثَاثًا وَمَتَاعًا إِلَىٰ حِينٍ

বাংলা অর্থ:

৮০। আর আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য তোমাদের গৃহসমূহে থাকিবার স্থান করিয়া দিয়াছেন, এবং তোমাদের জন্য পশুচর্মের গৃহ (-তাবূ) নির্মাণ করিয়াছেন, যেইগুলিকে তোমরা যাত্রার দিনে এবং অবস্থানের দিনে হালকা বোধ কর, আর উহাদের পশম ও উহাদের লোম ও উহাদের চুল দ্বারা গৃহ-সরঞ্জামাদি এবং উপকারের দ্রব্যাদি এক নির্দিষ্ট কালের জন্য তৈয়ার করিয়াছেন।

وَاللَّهُ جَعَلَ لَكُم مِّمَّا خَلَقَ ظِلَالًا وَجَعَلَ لَكُم مِّنَ الْجِبَالِ أَكْنَانًا وَجَعَلَ لَكُمْ سَرَابِيلَ تَقِيكُمُ الْحَرَّ وَسَرَابِيلَ تَقِيكُم بَأْسَكُمْ ۚ كَذَ‌ٰلِكَ يُتِمُّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تُسْلِمُونَ

বাংলা অর্থ:

৮১। আর আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য নিজ নিজ কতক সৃষ্টি (-বৃক্ষ ইত্যাদি)-র ছায়া বানাইয়াছেন, এবং তোমাদের জন্য পর্বতসমূহে বহু আশ্রয়স্থল বানাইয়া দিয়াছেন, এবং তোমাদের জন্য এমন জামাসমূহ বানাইয়াছেন যাহা তোমাদিগকে তাপ হইতে রক্ষা করে, আর এমন জামাসমূহ বানাইয়া দিয়াছেন যাহা তোমাদের যুদ্ধে (অস্ত্রের আঘাত হইতে) তোমাদিগকে রক্ষা করে; আল্লাহ্ এইভাবেই পূর্ণ করিয়া দেন তোমাদের উপর নিজের নেয়ামতসমূহ, যেন তোমরা ফরমাবরদার হইয়া থাক।

সূরা নহল বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ

১) একটি ব্যাপারের মধ্যে কয়েকটি প্রমাণের কথা এইজন্য বলা হইয়াছে যে, পক্ষীকূলকে এইরূপ এক বিশেষ গঠনে সৃষ্টি করা, যাহার ফলে উড়ন সম্ভব হইতেছেÑইহা একটি প্রমাণ। (আবার শূন্য মন্ডলকে এমনভাবে সৃষ্টি করা হইয়াছে যাহার মধ্যে উড়ন সম্ভব হইতেছে। ইহা একটি প্রমাণ।) আবার সেই উড়ন কার্যটি বাস্তবরূপ গ্রহণ করা আর একটি প্রমাণ। এতদ্ব্যতীত উড়ার ব্যাপারে যত প্রকার উপাদান রহিয়াছে, আল্লাহর মহীমা এ সমস্ত উপাদানের উপর উড়ান কার্যটি প্রতিষ্ঠিত করিয়াছেন। অতএব, এই একটি ব্যাপারে আল্লাহর অপার ক্ষমতার বহুবিধ প্রমাণ রহিয়াছে। (বঃকোঃ)
২) যদিও এ সমস্ত নেয়ামতের মধ্যে কতক মানুষের সৃষ্টও রহিয়াছে; কিন্তু উহার মূল পদার্থ এবং নির্মাণ পদ্ধতি তো আল্লাহর ই সৃষ্ট। অতএব, প্রকৃত নেয়ামতদাতা তিনিই। (বঃকোঃ)

فَإِن تَوَلَّوْا فَإِنَّمَا عَلَيْكَ الْبَلَاغُ الْمُبِينُ

বাংলা অর্থ:

৮২। এতদসত্বেও যদি এই লোকেরা বিমুখ হইয়া যায়, তবে আপনার জিম্মায় তো কেবল স্পষ্টরূপে পৌঁছাইয়া দেওয়াই।

يَعْرِفُونَ نِعْمَتَ اللَّهِ ثُمَّ يُنكِرُونَهَا وَأَكْثَرُهُمُ الْكَافِرُونَ

বাংলা অর্থ:

৮৩। তাহারা আল্লাহর নেয়ামতকে চিনে, তৎপরও উহা অস্বীকার করে, আর তাহাদের অধিকাংশই হইতেছে অকৃতজ্ঞ।

وَيَوْمَ نَبْعَثُ مِن كُلِّ أُمَّةٍ شَهِيدًا ثُمَّ لَا يُؤْذَنُ لِلَّذِينَ كَفَرُوا وَلَا هُمْ يُسْتَعْتَبُونَ

বাংলা অর্থ:

৮৪। আর যেই দিন আমি প্রত্যেক উম্মত হইতে এক এক জন সাক্ষী খাড়া করিব, তৎপর সেই কাফেরদিগকে (ওযর পেশ করার) অনুমতি দেওয়া হইবে না, আর না তাহাদিগকে আল্লাহরই সন্তুষ্টি বিধানের আদেশ দেওয়া হইবে।

وَإِذَا رَأَى الَّذِينَ ظَلَمُوا الْعَذَابَ فَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُمْ وَلَا هُمْ يُنظَرُونَ

বাংলা অর্থ:

৮৫। আর যখন অনাচারী লোকেরা আযাব প্রত্যক্ষ করিবে, তখন এই আযাব না তাহাদিগ হইতে হালকা করা হইেেব, আর না তাহাদিগকে কোনও অবকাশ দেওয়া হইবে।

وَإِذَا رَأَى الَّذِينَ أَشْرَكُوا شُرَكَاءَهُمْ قَالُوا رَبَّنَا هَـٰؤُلَاءِ شُرَكَاؤُنَا الَّذِينَ كُنَّا نَدْعُو مِن دُونِكَ ۖ فَأَلْقَوْا إِلَيْهِمُ الْقَوْلَ إِنَّكُمْ لَكَاذِبُونَ

বাংলা অর্থ:

৮৬। আর যখন মুশরিকরা নিজেদের (স্থিরীকৃত) উপাস্যদিগকে দেখিতে পাইবে, তখন (অপরাধ স্বীকার করার ছলে) বলিবে, হে আমাদের প্রতিপালক! ইহারাই হইতেছে আমাদের সেইসব উপাস্য, যাহাদেরকে আমরা পূজা করিতাম আপনাকে ছাড়িয়া, অনন্তর তাহারা (-সেই উপাস্যগুলি) তাহাদের প্রতি এই বাক্য প্রয়োগ করিবে যে, তোমরা মিথ্যাবাদী।

وَأَلْقَوْا إِلَى اللَّهِ يَوْمَئِذٍ السَّلَمَ ۖ وَضَلَّ عَنْهُم مَّا كَانُوا يَفْتَرُونَ

বাংলা অর্থ:

৮৭। আর এইসব লোকেরা সেই দিন আল্লাহর সমীপে আনুগত্যের কথা বলিতে থাকিবে, এবং (পৃথিবীতে) যাহাকিছু মিথ্যা উদ্ভাবন করিত, তৎসমুদয় উধাও হইয়া যাইবে।

সূরা নহল বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ

১) অর্থাৎ, প্রত্যেক উম্মতের কার্যের উপর সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য উক্ত উম্মতের নিকট প্রেরিত নবীকে সাক্ষী সরূপ খাড়া করানো হইবে। (বঃকোঃ)
২) অর্থাৎ, তাহাদিগকে বলা হইবে না যে, তোমরা তওবা কিংবা অন্য কোন প্রকার কার্য করিয়া আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করিয়া লও। কেননা, পরলোক পৃথিবীর কৃতকার্যসমূহের বিনিময় লাভের স্থান, কাজ করার স্থান, কাজ করার স্থান নহে। (বঃকোঃ)
৩) যদিও কাফেররা তাহাদিগকে সত্যই পূজা করিত, তথাপি এই কথাটি বলিয়া শরীকেরা প্রমাণ করিতে চাহিবে যে, আমাদের সহিত তোমাদের কোন সম্পর্ক নাই। ইহার উদ্দেশ্যে হইল তাহাদের আত্মরক্ষা করা। তাহাদের পূজিতগণ ফেরেশতা হইলে অবশ্য একথার দ্বারা তাহাদের আত্মরক্ষা হইবে। কিন্তু শয়তান হইলে একথায় আত্মরক্ষা হইবে না। কেননা, এই অংশীবাদের মূল পথ প্রদর্শক তো সে। (বঃকোঃ)

الَّذِينَ كَفَرُوا وَصَدُّوا عَن سَبِيلِ اللَّهِ زِدْنَاهُمْ عَذَابًا فَوْقَ الْعَذَابِ بِمَا كَانُوا يُفْسِدُونَ

বাংলা অর্থ:

৮৮। যাহারা কুফর করিত এবং (অপরকেও) আল্লাহর পথ হইতে ফিরাইয়া রাখিত, আমি তাহাদের জন্য এক শাস্তির উপর (অন্য) আর এক শাস্তি বর্ধিত করিয়া দিব, তাহাদের ফ্যাসাদ বিস্তারের বিনিময়ে।

وَيَوْمَ نَبْعَثُ فِي كُلِّ أُمَّةٍ شَهِيدًا عَلَيْهِم مِّنْ أَنفُسِهِمْ ۖ وَجِئْنَا بِكَ شَهِيدًا عَلَىٰ هَـٰؤُلَاءِ ۚ وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِّكُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً وَبُشْرَىٰ لِلْمُسْلِمِينَ

বাংলা অর্থ:

৮৯। আর যেইদিন আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যে তাহাদের মধ্যকার এক এক জন সাক্ষী তাহাদের বিরুদ্ধে খাড়া করিব এবং ইহাদের সকলের মোকাবেলায় আপনাকে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করিব; আর আপনার প্রতি (আপনার রসুল হওয়ার প্রমাণস্বরূপ) এই কোরআন নাযিল করিয়াছিÑযাহা (ধর্মের) সকল বিষয়ের বর্ণনাকারী, (বিশেষ করিয়া) মুসলমানদের জন্য বড় হেদায়েত ও বড় রহমত এবং সুসংবাদ জ্ঞাপক।

إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالْإِحْسَانِ وَإِيتَاءِ ذِي الْقُرْبَىٰ وَيَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ وَالْبَغْيِ ۚ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ

বাংলা অর্থ:

৯০। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তা‘আলা ন্যায়-নিষ্ঠা ও পরোপকার করা এবং আত্মীয় স্বজনকে দান করার আদেশ করিতেছেন, আর স্পষ্ট পাপ ও সমস্ত মন্দ কাজ এবং (কাহারও প্রতি) অত্যাচার করা হইতে নিষেধ করিতেছেন, আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদিগকে এই জন্য নছীহত করেন, যেন তোমরা নছীহত গ্রহণ কর।

وَأَوْفُوا بِعَهْدِ اللَّهِ إِذَا عَاهَدتُّمْ وَلَا تَنقُضُوا الْأَيْمَانَ بَعْدَ تَوْكِيدِهَا وَقَدْ جَعَلْتُمُ اللَّهَ عَلَيْكُمْ كَفِيلًا ۚ إِنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا تَفْعَلُونَ

বাংলা অর্থ:

৯১। এবং তোমরা পূর্ণ কর আল্লাহর (-শরীয়ত সম্মত) প্রতিজ্ঞাকে, যখন তোমরা উহা নিজেতের যিম্মায় গ্রহণ কর, এবং তোমরা নিজেদের কসমগুলি ভঙ্গ করিও না, উহা দৃঢ় করিবার পর, অথচ তোমরা আল্লাহ্কে সাক্ষীও বানাইয়াছ; নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ অবগত আছেন যাহাকিছু তোমরা করিতেছ।

সূরা নহল বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ

১) অর্থাৎ, নিজেরা সত্যকে অবিশ^াস করার এক শাস্তি আর অপরকে আল্লাহর পথ হইতে বিভ্রান্ত করার আর এক শাস্তি। অথবা এক শাস্তি পাপ কার্যের আর এক শাস্তি উহা অভ্যাসে পরিণত করার। (বঃকোঃ)
২) হাদীস শরীফে আছে, প্রত্যেক উম্মতের আমল হুযুর (দঃ) এর সামনে পেশ করা হয়। তিনি নেক আমলগুলি দেখিয়া আল্লাহর শুকর করেন, আর বদ আমলগুলি দেখিয়া তাহাদের জন্য ইস্তেগফার করেন। (বঃকোঃ)
৩) এখানে সমুদয় কার্য বলিতে শুধু ধর্মীয় কার্য। আর বর্ণনা কারী বলিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয় প্রকার অর্থ গ্রহণ করিলে এই সন্দেহ থাকে না যে, কোরআনে পার্থিব বিষয়ের বর্ণনাই বা কোথায় এবং ধর্মীয় সকল বিষয়ের বর্ণনাই বা কোথায়। যেমন আল্লাহ্ বলেন, রাসুল তোমাদিগকে যাহা নির্দেশ দেন, তাহা গ্রহণ কর এবং যাহা নিষেধ করেন, তাহা হইতে নিবৃত্ত থাক। ইহাতে বুঝা যায় যে, রাসুলের কথা কোরআনেরই কথা। (বঃকোঃ)

وَلَا تَكُونُوا كَالَّتِي نَقَضَتْ غَزْلَهَا مِن بَعْدِ قُوَّةٍ أَنكَاثًا تَتَّخِذُونَ أَيْمَانَكُمْ دَخَلًا بَيْنَكُمْ أَن تَكُونَ أُمَّةٌ هِيَ أَرْبَىٰ مِنْ أُمَّةٍ ۚ إِنَّمَا يَبْلُوكُمُ اللَّهُ بِهِ ۚ وَلَيُبَيِّنَنَّ لَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَا كُنتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ

বাংলা অর্থ:

৯২। আর তোমরা সেই (উম্মাদিনী) স্ত্রীলোকের অনুরূপ হইও না, যে নিজের সুতা কাটার পর টুকরা টুকরা করিয়া ছিড়িয়া ফেলিল; (তাহার ন্যায়) তোমরা (ও) নিজেদের কসমগুলিকে (ভাঙ্গিয়া) পরস্পর বিবাদ সুষ্টির উপকরণ বানাইতে আরম্ভ কর, শুধু এই কারনে যে, এক সম্প্রদায় অন্য সম্প্রদায় হইতে অধিকতর উন্নত হইয়া যাইবে; ইহা দ্বারা আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদিগকে আযমাইশ করেন মাত্র; আর যেই সমস্ত বিষয়ে তোমরা মতভেদ করিতেছ, ক্বিয়ামতের দিন সেই সমস্ত বিষয় তোমাদের সম্মুখে প্রকাশ করিয়া দিবেন।

وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ لَجَعَلَكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَلَـٰكِن يُضِلُّ مَن يَشَاءُ وَيَهْدِي مَن يَشَاءُ ۚ وَلَتُسْأَلُنَّ عَمَّا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ

বাংলা অর্থ:

৯৩। আর যদি আল্লাহ্ তা‘আলা চাহিতেন, তবে তোমাদের সকলকে একই উম্মত করিয়া দিতেন, কিন্তু তিনি যাহাকে চাহেন বিপথগামী করেন, এবং যাহাকে চাহেন সুপথে পরিচালিত করেন; আর নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট তোমাতেদর কৃতকর্মের কৈফিয়ত তলব করা হইবে।

وَلَا تَتَّخِذُوا أَيْمَانَكُمْ دَخَلًا بَيْنَكُمْ فَتَزِلَّ قَدَمٌ بَعْدَ ثُبُوتِهَا وَتَذُوقُوا السُّوءَ بِمَا صَدَدتُّمْ عَن سَبِيلِ اللَّهِ ۖ وَلَكُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ

বাংলা অর্থ:

৯৪। আর তোমরা তোমাদের কসমগুলিকে নিজেদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি উপকরণ বানাইও না, হয়ত (উহা দেখিয়া) অন্য কাহারও পদস্থলিত হইয়া যাইতে পারে উহা সুদৃঢ় হওয়ার পর, এবং এই কারে তোমাদিগে কষ্ট ভোগ করিতে হইবে যে, তোমরা আল্লাহর পথ হইতে বাধা প্রদানকারী হইলে, এবং তোমাদের কঠোর আযাব হইবে।

وَلَا تَشْتَرُوا بِعَهْدِ اللَّهِ ثَمَنًا قَلِيلًا ۚ إِنَّمَا عِندَ اللَّهِ هُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ

বাংলা অর্থ:

৯৫। আর তোমরা আল্লাহর অঙ্গীকারের বিনিময়ে নগণ্য মূল্য গ্রহণ করিও না; বস্তুতঃ আল্লাহর নিকট যে জিনিস আছে তাহা তোমাদের জন্য বহু গুণে উত্তম, যদি তোমরা বুঝিতে চাও।

সূরা নহল বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ

১) আরব দেশে একটি উম্মাদিনী স্ত্রীলোক ছিল তাহার কতকগুলি দাসী ছিল। সারাদিন সে দাসীদিগকে লইয়া সুতা পাকাইত এবং দিবাশেষে সুতার পাক খুলিয়া ফেলিতে আদেশ করিত। (বঃকোঃ)
২) কেননা, প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করায় স্বপক্ষীয়গণের মনে আস্থাহীনতা এবং শত্রুপক্ষের মনে উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং ইহাই বিবাদের মূল উৎস। (বঃকোঃ)
৩) অর্থাৎ, এই শক্তি বৃদ্ধি ও উন্নত অবস্থা দ্বারা আল্লাহ্ তোমাদের পরীক্ষা করেন যে, তোমরা প্রতিশ্রুতি বা সন্ধিশর্ত পালন কর, না শক্তি ও উন্নতি দেখিয়া সে দিকে ঝুকিয়া পড়। (বঃকোঃ)
৪) অর্থাৎ, অন্যান্য লোকেরাও তোমাদের অনুসরন করিয়া প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করিতে আরম্ভ করিতে পারে। (বঃকোঃ)
৫) কেননা ওয়াদা রক্ষা করা খোদার পথ। তোমরা তাহা ভঙ্গের কারণ হইয়াছিলে, যাহা অপরকেও ওয়াদা ভঙ্গকারী বানাইয়াছো। (বঃকোঃ)

مَا عِندَكُمْ يَنفَدُ ۖ وَمَا عِندَ اللَّهِ بَاقٍ ۗ وَلَنَجْزِيَنَّ الَّذِينَ صَبَرُوا أَجْرَهُم بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

বাংলা অর্থ:

৯৬। আর যাহাকিছু তোমাদের নিকট আছে তাহা নিঃশেষ হইয়া যাইবে, আর যাহা আল্লাহর নিকট আছে, তাহা চিরন্তন থাকিবে; আর যাহারা অটল থাকিবে, আমি অবশ্যই তাহাদিগকে তাহাদের পুরষ্কার প্রদান করিব, তাহাদের ভালকাজের বিনিময়ে।

مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِّن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً ۖ وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُم بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

বাংলা অর্থ:

৯৭। যে ব্যক্তি নেক কাজ করিবে, সে পুরুষই হউক, অথবা নারীই হউক, যদি সে ঈমানদার হয়, তবে আমি তাহাকে এক শান্তিময় জীবন দান করিব, এবং তাহাদের ভাল কাজের বিনিময়ে তাহাদেরকে পুরষ্কার প্রদান করিব।

فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ

বাংলা অর্থ:

৯৮। অনন্তর যখন আপনি কোরআন পাঠ করিতে চাহেন, তখন বিতাড়িত শয়তান (-এর ক্ষতি সাধন) হইতে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করিয়া লইবেন।

إِنَّهُ لَيْسَ لَهُ سُلْطَانٌ عَلَى الَّذِينَ آمَنُوا وَعَلَىٰ رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ

বাংলা অর্থ:

৯৯। নিশ্চয়ই, তাহার ক্ষমতা এইরূপ লোকদের উপর চলে না, যাহারা ঈমান আয়িাছে, এবং নিজ রব্বের উপর (অন্তরের সহিত) ভরসা করিয়া থাকে।

إِنَّمَا سُلْطَانُهُ عَلَى الَّذِينَ يَتَوَلَّوْنَهُ وَالَّذِينَ هُم بِهِ مُشْرِكُونَ

বাংলা অর্থ:

১০০। অবশ্য তাহার ক্ষমতা কেবল উহাদের উপরেই চলে, যাহারা তাহার সহিত সংশ্রব রাখে, আর কেবল উহাদের উপর-যাহারা আল্লাহর সহিত শিরক করে।

وَإِذَا بَدَّلْنَا آيَةً مَّكَانَ آيَةٍ ۙ وَاللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا يُنَزِّلُ قَالُوا إِنَّمَا أَنتَ مُفْتَرٍ ۚ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ

বাংলা অর্থ:

১০১। আর যখন আমি কোন এক আয়াতকে অন্য আয়াতের স্থলে পরিবর্তন করিÑঅথচ আল্লাহ্ যেই হুকুম পাঠান, উহা (যথাযোগ্য হওয়া,) তিনিই উত্তমরূপে অবগত আছেনÑতখন ইহারা বলে যে, আপনি মিথ্যা রচনাকারী;বরং তাহাদের অধিকাংশ লোকই জাহেল।

সূরা নহল বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ

১) অর্থাৎ, আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট তোমাদের নেক আমলের যে বিনিময় সঞ্চিত রহিয়াছে, তাহা চিরস্থায়ী, কাজেই আখেরাতে প্রাপ্য বিনিময় ইহা অপেক্ষা বহুগুণে উত্তম। (বঃকোঃ)
২) “শান্তিময় জীবন দান করিব” কথার অর্থ এই নহে যে, মুসলমানগণ কখনও দারিদ্র কিংবা অন্য কোন প্রকার কষ্ট ভোগ করিবে না, বরং অর্থ এই যে, আল্লাহর আনুগত্যের বরকতে তাহাদের অন্তরে এমন এক জ্যোতির উৎপত্তি হইবে যাহার ফলে তাহারা সকল অবস্থাতেই ধৈর্যশীল, কৃতজ্ঞ এবং তকদীরে বিশ^াসী এবং খোদার নিকট আত্মসমর্পণকারী থাকিবে। বস্তুতঃ ইহাই শান্তির মূল। (বঃকোঃ)
৩) মু’মিনদের উপর শয়তানের ক্ষমতা চলে না। ইহার অর্থ শয়তান তাহাদের দ্বারা পাপ কার্য করাইতে সক্ষম হয়না। আর কাফেরদের উপর ক্ষমতা চলে অর্থ তাহাদিগকে সে পাপ কার্যে প্রলুব্ধ করিতে সক্ষম হয়। (বঃকোঃ)

قُلْ نَزَّلَهُ رُوحُ الْقُدُسِ مِن رَّبِّكَ بِالْحَقِّ لِيُثَبِّتَ الَّذِينَ آمَنُوا وَهُدًى وَبُشْرَىٰ لِلْمُسْلِمِينَ

বাংলা অর্থ:

১০২। আপনি বলিয়া দিন যে, ইহা রুহুলক¦ুদুস (-জিবরাঈল) আপনার পরওয়ারদিগারের তরফ হইতে যথাযথ ভাবেই আনয়ন করিয়াছেন যেন, ঈমানদারদিগকে দৃঢ়পদ রাখে, এবং মুসলমানদের জন্য হেদায়েত ও সুসংবাদ হয়।

وَلَقَدْ نَعْلَمُ أَنَّهُمْ يَقُولُونَ إِنَّمَا يُعَلِّمُهُ بَشَرٌ ۗ لِّسَانُ الَّذِي يُلْحِدُونَ إِلَيْهِ أَعْجَمِيٌّ وَهَـٰذَا لِسَانٌ عَرَبِيٌّ مُّبِينٌ

বাংলা অর্থ:

১০৩। আর আমার জানা আছে যে, উহারা ইহাও বলে, তাঁহাকে তো মানুষেই শিক্ষা দিয়া থাকে; তাহারা যাহার প্রতি এই শিক্ষা দেওয়ার ইঙ্গিত করে, তাহার ভাষা তো আজমী (অর্থাৎ আরবী নয়), অথচ এই কোরআন সুস্পষ্ট আরবী ভাষায়।

إِنَّ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِآيَاتِ اللَّهِ لَا يَهْدِيهِمُ اللَّهُ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

বাংলা অর্থ:

১০৪। নিশ্চয়ই যাহারা আল্লাহ্ তা‘আলার আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান আনে না, তাহাদিগকে আল্লাহ্ কখনও সৎপথ প্রদর্শন করিবেন না, এবং তাহাদের জন্য যন্ত্রণাময় শাস্তি রহিয়াছে।

إِنَّمَا يَفْتَرِي الْكَذِبَ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِآيَاتِ اللَّهِ ۖ وَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْكَاذِبُونَ

বাংলা অর্থ:

১০৫। মিথ্যা উদ্ভাবনকারী তো কেবল তাহারাই, যাহারা আল্লাহ্ তা‘আলার আয়াতসমূহের উপর ঈমান রাখে না, এবং উহারাই হইতেছে সম্পূর্ণ মিথ্যাবাদী।

مَن كَفَرَ بِاللَّهِ مِن بَعْدِ إِيمَانِهِ إِلَّا مَنْ أُكْرِهَ وَقَلْبُهُ مُطْمَئِنٌّ بِالْإِيمَانِ وَلَـٰكِن مَّن شَرَحَ بِالْكُفْرِ صَدْرًا فَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ مِّنَ اللَّهِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ

বাংলা অর্থ:

১০৬। যাহারা ঈমান আনার পর পুনরায় আল্লাহ্ তা‘আলার সহিত কুফর করে, সেই ব্যক্তি ছাড়াÑযাহার প্রতি (কুফর করার জন্য) জবরদস্তি করা হয়, অথচ তাহার অন্তঃকরণ ঈমানে অবিচলিত থাকেÑকিন্তু হ্যাঁ, যে ব্যক্তি খুলিয়া কুফর করে, তবে এইরূপ লোকদের উপর আল্লাহ্ তা‘আলার গযব অবতীর্ণ হইবে, এবং তাহাদের ভীষণ শাস্তি হইবে।

সূরা নহল বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ

১) আয়াতটির সারমর্ম এই যে, আল্লাহ্ তা‘আলা এক আদেশ রহিত করিয়া তদস্থলে অন্য আদেশ প্রদান করেন, ইহার হেকমত তিনিই জানেন। অর্থাৎ মানুষের অবস্থার প্রতি লক্ষ্য করিয়া এক যুক্তিতে পূর্ববর্তী আদেশ প্রদান করিয়াছিলেন, তৎপর অন্য যুক্তিতে পরবর্তী আদেশ প্রদান করিয়াছেন। কিন্তু এ সমস্ত লোক এই পরিবর্তনের কারনে ইহাকে আল্লাহর কালাম বলিয়া স্বীকার করে না এবং আপনাকে মিথ্যাবাদী বলে। (বঃকোঃ)
২) দুররে মানসুর কিতাবে দেখা যায়, বালআম অথবা মাক্কীস নামক এক রোমান খ্রীস্টান গোলাম বা কর্মকার ছিলেন। সে মনোযোগের সহিত হুযুরের (দঃ) কথা শ্রবণ করিত। কাজেই হুযুর (দঃ) সময় সময় তাহার নিকট বসিতেন, সে ইঞ্জীল সম্বন্ধে কিছু জ্ঞান রাখিত। এই কারনে কাফেররা প্রচার করিত, এই ব্যক্তিই হযরতকে শিখাইয়া দেয়। (বঃকোঃ)

ذَ‌ٰلِكَ بِأَنَّهُمُ اسْتَحَبُّوا الْحَيَاةَ الدُّنْيَا عَلَى الْآخِرَةِ وَأَنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ

বাংলা অর্থ:

১০৭। ইহা এই জন্য হইবে যে, তাহারা পার্থিব জীবনকে পরকালের তুলনায় অতিশয় ভালবাসিয়াছে, আর এই কারনে হইবে যে, আল্লাহ্ তা‘আলা এইরূপ কাফেরদিগকে হেদায়েত করেন না।

أُولَـٰئِكَ الَّذِينَ طَبَعَ اللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ وَسَمْعِهِمْ وَأَبْصَارِهِمْ ۖ وَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْغَافِلُونَ

বাংলা অর্থ:

১০৮। ইহারা ঐ লোক, আল্লাহ্ তা‘আলা যাহাদের অন্তঃকরণসমূহে এবং কর্ণসমূহে ও চক্ষুসমূহে মোহর লাগাইয়া দিয়াছেন, আর ইহারা তো (স্বীয় পরিণাম সম্বন্ধে) একেবারেই গাফেল।

لَا جَرَمَ أَنَّهُمْ فِي الْآخِرَةِ هُمُ الْخَاسِرُونَ

বাংলা অর্থ:

১০৯। এই কথা অনিবার্য যে, ক্ষতিগ্রস্ত থাকিবে।

ثُمَّ إِنَّ رَبَّكَ لِلَّذِينَ هَاجَرُوا مِن بَعْدِ مَا فُتِنُوا ثُمَّ جَاهَدُوا وَصَبَرُوا إِنَّ رَبَّكَ مِن بَعْدِهَا لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ

বাংলা অর্থ:

১১০। অতঃপর নিঃসন্দেহে আপনার প্রতিপালক এইরূপ লোকদের জন্য যাহারা কুফরে লিপ্ত থাকার পর (ঈমান আনিয়া) হিজরত করিয়াছে, অতঃপর জেহাদ করিয়াছে এবং (ঈমানে) অটল রহিয়াছে, তবে অবশ্যই রব্ব ইহার পর (এই সমস্ত লোকদের জন্য) অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

يَوْمَ تَأْتِي كُلُّ نَفْسٍ تُجَادِلُ عَن نَّفْسِهَا وَتُوَفَّىٰ كُلُّ نَفْسٍ مَّا عَمِلَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ

বাংলা অর্থ:

১১১। যেই দিন প্রত্যেক মানুষ নিজেরই পক্ষ সমর্থনে কথা বলিবে এবং প্রত্যেক ব্যক্তি তাহার কৃতকর্মের পূর্ণ বিনিময় পাইবে, আর তাহাদের প্রতি অত্যাচারও করা হইবে না।

সূরা নহল বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ

১) পূর্ণ আয়াতটির সারমর্ম এই, যাহারা ঈমান আনয়নের পর আবার আল্লাহ্ ও রসুলের সহিত কুফর করে, তাহাদের উপর আল্লাহর গযব নাযিল হইবে এবং কঠোর শাস্তি হইবে। কিন্তু কাফেররা যদি কোন মু’মিনের প্রতি বল প্রয়োগ করিয়া অর্থাৎ, হত্যার ভয় দেখাইয়া তাহার দ্বারা কুফরী বাক্য উচ্চারন করায় সে ঈমানের উপর দৃঢ় ও অবিচলিত থাকিয়া কুফর কে অন্তরের সহিত ঘৃণা করে, তবে এরূপ ব্যক্তি প্রাণের ভয়ে কুফরী বাক্য মুখে উচ্চারণ করিলে তাহার প্রতি আল্লাহর গযবও হইবে না এবং তাহার শাস্তিও হইবে না। (বঃকোঃ)
২) মোটকথা, ঈমান এবং নেক আমলের বরকতে তাহাদের অতীত কালের কুফর ইত্যাদি যাবতীয় পাপ মার্জিত হইয়া যাইবে এবং আল্লাহর অনুগ্রহে তাহারা বেহেশতে প্রবেশ করিবে ও উচ্চ মর্যাদা লাভ করিবে। (বঃকোঃ)

وَضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا قَرْيَةً كَانَتْ آمِنَةً مُّطْمَئِنَّةً يَأْتِيهَا رِزْقُهَا رَغَدًا مِّن كُلِّ مَكَانٍ فَكَفَرَتْ بِأَنْعُمِ اللَّهِ فَأَذَاقَهَا اللَّهُ لِبَاسَ الْجُوعِ وَالْخَوْفِ بِمَا كَانُوا يَصْنَعُونَ

বাংলা অর্থ:

১১২। আর আল্লাহ্ তা‘আলা এক জনপদের অধিবাসীদের বিচিত্র অবস্থা বর্ণনা করিতেছেন যে, তাহারা নিরাপদ ও নিশ্চিত ছিল, তাহাদের পানাহারের দ্রব্যাদি প্রচুর পরিমানে সর্বদিক হইতে তাহাদের নিকট পৌঁছিত, কিন্তু তাঁহারা আল্লাহর নেয়ামতসমূহের না-শোকরী করিল,অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলা তাহাদিগকে এই সমস্ত আচরণের কারনে এক সর্বগ্রাসী দুর্ভিক্ষ ও ত্রাসের মজা চাখাইলেন।

وَلَقَدْ جَاءَهُمْ رَسُولٌ مِّنْهُمْ فَكَذَّبُوهُ فَأَخَذَهُمُ الْعَذَابُ وَهُمْ ظَالِمُونَ

বাংলা অর্থ:

১১৩। আর তাহাদের নিকট তাহাদেরই মধ্যে হইতে একজন রাসুলও আসিলেন, অনন্তর তাহারা তাঁহকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করিল, অতঃপর তাহাদিগকে আযাব পাকড়াও করিল, যখন তাহারা পূর্ণ উদ্যমে অত্যাচার করিতে লাগিল।

فَكُلُوا مِمَّا رَزَقَكُمُ اللَّهُ حَلَالًا طَيِّبًا وَاشْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ

বাংলা অর্থ:

১১৪। অনন্তর যেই সমস্ত জিনিস আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদিগকে হালাল ও পবিত্ররূপে দান করিয়াছেন, সেইগুলি খাও, এবং আল্লাহর নেয়ামতের শোকর কর, যদি তোমরা (প্রকৃত পক্ষে) তাঁহারই এবাদত কর।

إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنزِيرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ ۖ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلَا عَادٍ فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

বাংলা অর্থ:

১১৫। তোমাদের প্রতি তো কেবল মাত্র হারাম করিয়াছেন মৃতজন্তুকে এবং রক্তকে, আর শূকরের মাংসকে, আর ঐ জিনিসকে যাহা খোদা ভিন্ন অন্য কাহারও নামে উৎসর্গ করা হইয়াছে, অতঃপর যে ব্যক্তি (ক্ষুধায়) সম্পূর্ণরূপে অস্থির পড়ে, যদি সে স্বাদ গ্রহণেচ্ছু না হয় এবং সীমা লঙ্ঘনকারীও না হয়, তবে আল্লাহ্ অতিশয় ক্ষমাশীল, দয়াবান।

সূরা নহল বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ

১) পূর্বকালের বহু জনপদের এই দশা হইয়া ছিল যে, বাহ্যিক নেয়ামত, নিরাপত্তা এবং জীবিকার সুব্যবস্থা ছিল এবং আভ্যন্তরীণ নেয়ামত তথা রসুলগণের আগমনও হইয়া ছিল। তাহা সত্বেও তাহারা বিধর্মাচরণ করিয়াছিল এবং দন্ডিত হইয়াছিল। সুতরাং মক্কাবাসীদিগকে সেই জনপদগুলির অবস্থা শুনাইতেছেন যে, তোমরা যদি সেরূপ কর, তবে তোমাদের অবস্থাও তদ্রুপ হইবে। (বঃকোঃ)
২) ইসলামের পূর্বে আরববাসীরা ঐ সমস্ত জন্তুর অধিকাংশগুলিকে হালাল বা হারাম জানিত। যেগুলিকে আমরা হালাল জানিয়া ভক্ষণ করিতেছি। তাহারা প্রবাহমান রক্ত ও শুকর এবং দেবদেবীর নামে উৎসর্গিত জন্তুকে হালাল মনে করিয়া ভক্ষণ করিত। আল্লাহ্ এ সমস্ত বস্তু হারাম করিয়া দিয়াছেন। কিন্তু জীবন রক্ষার জন্য অন্য উপায় না থাকিলে অনুমতি দিয়াছেন। (ইঃকাঃ)

وَلَا تَقُولُوا لِمَا تَصِفُ أَلْسِنَتُكُمُ الْكَذِبَ هَـٰذَا حَلَالٌ وَهَـٰذَا حَرَامٌ لِّتَفْتَرُوا عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ ۚ إِنَّ الَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ لَا يُفْلِحُونَ

বাংলা অর্থ:

১১৬। আর যে সমস্ত জিনিস সম্বন্ধে কেবল তোমাদের মৌখিক মিথ্যা দাবী রহিয়াছে, উহাদের সম্বন্ধে এইরূপ বলিও না যে, অমুক জিনিস হালাল এবং অমুক জিনিস হারাম, ইহার সারমর্ম এই হয় যে, তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ কর; নিঃসন্দেহে যেই সকল লোক আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে, তাহারা সফলতা লাভ করিবে না।

مَتَاعٌ قَلِيلٌ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

বাংলা অর্থ:

১১৭। ইহা (দুনিয়ার) কতক দিনের সুখ সম্পদ মাত্র, অতঃপর তাহাদের জন্য যন্ত্রণাময় শাস্তি রহিয়াছে।

وَعَلَى الَّذِينَ هَادُوا حَرَّمْنَا مَا قَصَصْنَا عَلَيْكَ مِن قَبْلُ ۖ وَمَا ظَلَمْنَاهُمْ وَلَـٰكِن كَانُوا أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ

বাংলা অর্থ:

১১৮। আর আমি কেবল ইহুদীদের প্রতি ঐ দ্রব্যগুলি হারাম করিয়াছিলেন, যেইগুলি সম্বন্ধে আমি ইপিূর্বে আপনার সিকট বর্ণনা করিয়াছি, এবং আমি তাহাদের প্রতি কোন অবিচার করি নাই, কিন্তু তাহারা নিজেরাই নিজেদের উপর অত্যাচার করিত।

ثُمَّ إِنَّ رَبَّكَ لِلَّذِينَ عَمِلُوا السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ تَابُوا مِن بَعْدِ ذَ‌ٰلِكَ وَأَصْلَحُوا إِنَّ رَبَّكَ مِن بَعْدِهَا لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ

বাংলা অর্থ:

১১৯। অনন্তর আপনার প্রতিপালক এইরূপ লোকদের জন্য, যাহারা মূর্খতা বশতঃ মন্দ কাজ করিয়া ফেলিয়াছে, আবার উহার পরে তওবা করিয়াছে, এবং নিজেদের আমল সংশোধন করিয়াছে, তবে নিশ্চয় আপনার প্রতিপালক ইহার পরে অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

إِنَّ إِبْرَاهِيمَ كَانَ أُمَّةً قَانِتًا لِّلَّهِ حَنِيفًا وَلَمْ يَكُ مِنَ الْمُشْرِكِينَ

বাংলা অর্থ:

১২০। নিঃসন্দেহে ইবরাহীম শ্রেষ্ঠ অনুসরণীয় ছিলেন, আল্লাহ্ তা‘আলার (পূর্ণ) অনুগত ছিলেন, সম্পূর্ণরূপে এক (আল্লাহর) দিকে (আকৃষ্ট) ছিলেন; এবং তিনি অংশীবাদীদেদর অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না।

شَاكِرًا لِّأَنْعُمِهِ ۚ اجْتَبَاهُ وَهَدَاهُ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ

বাংলা অর্থ:

১২১। আল্লাহ্ তা‘আলার নেয়ামতসমূহ শোকরগোযার ছিলেন; আল্লাহ্ তাঁহাকে পছন্দ করিয়াছিলেন, এবং তাঁহাকে সরল পথে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিলেন।

وَآتَيْنَاهُ فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً ۖ وَإِنَّهُ فِي الْآخِرَةِ لَمِنَ الصَّالِحِينَ

বাংলা অর্থ:

১২২। আর আমি তাঁহাকে ইহলোকেও মহৎ গুণাবলী দান করিয়াছিলাম; এবং তিনি পরলোকেও উত্তম লোকদের অন্তর্ভূক্ত হইবেন।

সূরা নহল বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ

১) অর্থাৎ, তাহারা বলিত, দেবদেবীর নামে উৎসর্গিত উষ্টীগুলির গর্ভস্থ বাচ্চা আমাদের পুরুষদের জন্য হালাল এবং আমাদের নারীদের জন্য হারাম করা হইয়াছে। এরূপ মিথ্যা উক্তি কখনও করিও না। (মুঃকোঃ)
২) অর্থাৎ, ইবরাহীম (আঃ) নবী ছিলেন এবং এক বিরাট সম্প্রদায়ের অগ্রণী ছিলেন বলিয়া তোমরাও মান, তিনি কখনও নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করিতেন না, তবে তোমরা বিনা প্রমাণে হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল মনে করিয়া স্বীয় প্রবৃত্তির বশীভূত হইতেছ কেন? তিনি কখনও মিরক ও কুফর করেন নাই, তবে তোমরা কেন শিরক করিতেছ? (বঃকোঃ)
৩) সুতরাং এমন প্রিয় ব্যক্তির পন্থা যাহা হইবে, তাহাই প্রিয় এবং গ্রহণীয় হইবে। তাহাই তোমাদেরও গ্রহণ ও অবলম্বন করা উচিত। আর সেই পন্থা হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর শরীয়তে রহিয়াছে। (বঃকোঃ)

ثُمَّ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ أَنِ اتَّبِعْ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا ۖ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ

বাংলা অর্থ:

১২৩। অতঃপর আমি ওহী প্রেরণ করিলাম আপনার প্রতি যে, অনুসরণ করিয়া চলুন ইবরাহীমের পন্থার উপর, যিনি সম্পূর্ণরূপে এক (আল্লাহর) দিকে আকৃষ্ট ছিলেন; আর তিনি অংশীবাদীদের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না।

إِنَّمَا جُعِلَ السَّبْتُ عَلَى الَّذِينَ اخْتَلَفُوا فِيهِ ۚ وَإِنَّ رَبَّكَ لَيَحْكُمُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ

বাংলা অর্থ:

১২৪। শনিবারের সম্মান তো কেবল তাহাদের উপরই অবশ্য পালনীয় করিয়া দেওয়া হইয়াছিল, যাহারা ইহাতে বিরোধিতা করিয়াছিল; নিঃসন্দেহে আপনার রব্ব ক্বিয়ামতের দিন ইহাদের পরস্পরের মধ্যে মীমাংসা করিয়া দিবেন, যেই বিষয়ে তাহারা মতভেদ করিত।

ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ ۖ وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ ۖ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ

বাংলা অর্থ:

১২৫। আপনি আপনার প্রতিপালকের পথের দিকে আহ্বান করুন জ্ঞান-গর্ভ কথা ও উত্তম উপদেশ সমূহের দ্বারা, এবং তাহাদের সহিত উত্তম পদ্ধতিতে বিতর্ক করুন; আপনার রব্ব সেই ব্যক্তিকেও জানেন, যে তাঁহার পথ হইতে ভ্রষ্ট হইয়া গিয়াছে, এবং তিনিই সুপথগামীদেরকেও উত্তমরূপে জানেন।

وَإِنْ عَاقَبْتُمْ فَعَاقِبُوا بِمِثْلِ مَا عُوقِبْتُم بِهِ ۖ وَلَئِن صَبَرْتُمْ لَهُوَ خَيْرٌ لِّلصَّابِرِينَ

বাংলা অর্থ:

১২৬। আর যদি তোমরা প্রতিশোধ গ্রহণ করিতে উদ্যত হও, তবে ঐ পরিমাণই প্রতিশোধ গ্রহণ কর, যেই পরিমাণ তোমরা অত্যাচারিত হইয়াছ; আর যদি ছবর কর, তবে উহা ছবরকারীদের জন্য অতি উত্তম কাজ।

وَاصْبِرْ وَمَا صَبْرُكَ إِلَّا بِاللَّهِ ۚ وَلَا تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ وَلَا تَكُ فِي ضَيْقٍ مِّمَّا يَمْكُرُونَ

বাংলা অর্থ:

১২৭। আর আপনি ধৈর্য ধরুন, এবং আপনার ধৈর্য ধারণ হইবে কেবল আল্লাহ্ তা‘আলার সাহায্যে, আর তাহাদের (বিরোধিতার) উপর দুঃখিত হইবেন না, এবং তাহারা যে সমস্ত চক্রান্ত করিতেছে উহার দরুন সংকীর্ণমনা হইবেন না।

إِنَّ اللَّهَ مَعَ الَّذِينَ اتَّقَوا وَّالَّذِينَ هُم مُّحْسِنُونَ

বাংলা অর্থ:

১২৮। নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা এমন লোকদের সহিত আছেন যাহারা পরহেয করিয়া চলে এবং যাহারা নেক-কার হয়।

সূরা নহল বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ

১) যেহেতু মক্কার মুশরিকদের ন্যায় ইহুদী নাছারারাও হযরত ইবরাহীমের অনুসরন করার দাবীদার ছিল। সুতরাং পুনর্বার বলিতেছেন, “তিনি মুশরিক ছিলেন না” ইহাতে মুশরিকদের ন্যায় ইহুদী ও নাছারাদের বর্তমান পন্থাও বাতিল বলিয়া সাব্যস্ত হইল। (বঃকোঃ)
২) “জ্ঞান গর্ভ কথা সমূহ” অর্থাৎ, যাহাতে আপনার নুবুওয়্যাতের দাবী সপ্রমাণ করাই উদ্দেশ্যে হয়। আর উত্তম উপদেশমূহ অর্থাৎ, যাহাতে উৎসাহ প্রদান, ভীতি প্রদর্শন এবং কঠিন অন্তরকে নরম করা উদ্দেশ্যে হয়।
৩) অর্থাৎ, কাফেররা বিতর্কের সীমা অতিক্রম করিয়া যদি প্রত্যক্ষ যুদ্ধে উপনীত হয় এবং হস্ত ও মুখ দ্বারা উৎপূড়ন করিতে অগ্রসর হয়, তবে আপনারা প্রতিশোধ গ্রহণ করিতে পারেন। কিন্তু সম-পরিমান। আর ধৈর্য ধরিতেও পারেনÑতাহাতে বিরুদ্ধ দলের উপর প্রভাব বিস্তৃত হইবে। (বঃকোঃ)

সূরা হিজর এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা ইব্রাহিম এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা রা’দ এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা ইউসুফ এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা হুদ এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা ইউনুস এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা আত-তাওবা এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা আনফাল এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা আরাফ এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা আনআম এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা আল-মায়েদা এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা আন-নিসা এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
আমাদের, ফেসবুক পেইজে লাইক, শেয়ার এবং কমেন্টস করে আমাদের সাথেই থাকুন।