সুরা-বাকারাহ্
আয়াত-২৮৬
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অসীম দয়াল
وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَإِسْمَاعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا ۖ إِنَّكَ أَنتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
(১২৭) আর যখন নির্মাণ করিতেছিলেন ইবরাহীম কা’বাগৃহের প্রাচীর এবং (সহায়ক রূপে) ইসমাঈলও, (বলিলেন) হে, আমার প্রভু! আমাদের পক্ষ হইতে কবুল করুন; নিঃসন্দেহ,আপনি খুব শ্রবণকারী মহাজ্ঞানী।
(১২৮) হে আমাদের প্রভু! আর আমাদিগকে আপনার আরও অধিক অনুগত বানাইয়া লউন এবং আমাদের বংশধর হইতেও আপনার অনুগত একদল লোক পয়দা করুন, আর আমাদিগকে আমাদের হজ্জের আহ্কামও বলিয়া দিন এবং আমাদের অবস্থার প্রতি (কৃপা) দৃষ্টি রাখুন, আর প্রকৃতপক্ষে আপনিই বিশেষ যত্নবান ও মেহেরবান।
(১২৯) হে আমাদের প্রভু! তাহাদের মধ্যে হইতে এমন এক রাসুল নির্দিষ্ট করিয়া দিন যিনি তাহাদিগকে আপনার আয়াতসমূহ পড়িয়া শুনাইবেন এবং তাহাদিগকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দিবেন এবং তাহাদিগকে পবিত্র করিবেন, নিশ্চয় আপনিই প্রবল ক্ষমতাবান পূর্ণ সংবিধানকারী।
وَمَن يَرْغَبُ عَن مِّلَّةِ إِبْرَاهِيمَ إِلَّا مَن سَفِهَ نَفْسَهُ ۚ وَلَقَدِ اصْطَفَيْنَاهُ فِي الدُّنْيَا ۖ وَإِنَّهُ فِي الْآخِرَةِ لَمِنَ الصَّالِحِينَ
(১৩০) ইবরাহিমী ধর্ম হইতে ঐ ব্যক্তি মুখ ফিরাইবে, যে মূলেই নির্বোধ; আর আমি তাঁহাকে দুনিয়ায় নির্বাচিত করিয়াছি এবং তিনি আখেরাতের অতি মহৎ লোকদের মধ্যে পরিগণিত।
(১৩১) যখন তাঁহাকে তাঁহার প্রভু বলিলেন, অনুগত হও, তিনি বলিলেন, আমি অনুগত হইলাম বিশ্বপালকের।
(১৩২) আর ইহারই হুকুম করিয়া গিয়াছেন ইবরাহীম নিজ সন্তানদিগকে এবং ইয়াকুবও, হে আমার সন্তানগন! আল্লাহ্ এই ধর্মকে তোমাদের জন্য মনোনীত করিয়াছেন সুতরাং তোমরা ইসলাম ব্যতীত আর কোন অবস্থায় মরিও না।
শানে নুযুল:
১। এই রাসুল আমাদের হযরত মোহাম্মদ (দঃ) ই। কেননা এই দোয়া হযরত ইব্রাহীম ও তদীয় পুত্র হযরত ইসমাঈল (আঃ) উভয়েই এক সঙ্গে করিয়াছিলেন। কাজেই এই সম্প্রদায় তাঁহাদের উভয়ের বংশধরগণের মধ্যে হইতে হইবে এবং সেই সম্প্রদায় বনী-ইসরাঈলই হইবেন। বনী ইসরাঈল বংশে হুযুর (দঃ) ভিন্ন আর কোন পয়গম্বর আসেন নাই। (বঃকোঃ)
২। হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে সালাম ইহুদী ধর্ম পরিত্যাগ করিয়া ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং স্বীয় ভ্রতুষ্পুত্র সালমা ও মুহাজেরকে বলিলেনঃ তোমরা তওরাত হইতে অবগত হইয়াছ যে, ইসমাঈল বংশে একজন নবী আসিবেন। হযরত (দঃ) সেই নবীই। তাঁহার প্রতি ঈমান আন। ইহা শুনিয়া সালমা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করিলেন এবং মোহাজের অস্বীকার করিল। (বঃকোঃ)
أَمْ كُنتُمْ شُهَدَاءَ إِذْ حَضَرَ يَعْقُوبَ الْمَوْتُ إِذْ قَالَ لِبَنِيهِ مَا تَعْبُدُونَ مِن بَعْدِي قَالُوا نَعْبُدُ إِلَـٰهَكَ وَإِلَـٰهَ آبَائِكَ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ إِلَـٰهًا وَاحِدًا وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ
(১৩৩) তোমারা কি স্বয়ং উপস্থিত ছিলে? যখন ইয়াকুবের মৃত্যুকাল উপনীত হইয়াছিল, যখন তিনি নিজ সন্তানদের বলিলেন, তোমরা আমার পরে কিসের ইবাদত করিবে? তাহারা বলিল, আমরা তাঁহারই ইবাদত করিব আপনি ও আপনার পূর্ব পুরুষ ইব্রাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাক যাঁহার ইবাদত করিয়া আসিতেছেন অর্থাৎ এক ও অদ্বিতীয় মা’বুদের; আর আমরা তাঁহারই অনুগত থাকিব।
(১৩৪) ইহা একটি জমাআত ছিল যাহা অতীত হইয়া গিয়াছে,উহাদের কৃতকর্ম উহাদের কাজে আসিবে, তোমাদের কৃত-কর্ম তোমাদের কাজে আসিবে, তাহাদের কৃত-কর্ম সম্বন্ধে তোমাদিগকে জিজ্ঞাসাও তো করা হইবে না।
وَقَالُوا كُونُوا هُودًا أَوْ نَصَارَىٰ تَهْتَدُوا ۗ قُلْ بَلْ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا ۖ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ
(১৩৫) আর ইহারা বলে, তোমরা ইহুদী হও কিংবা নাছারা হও তোমরাও সৎ পথ পাইবে; আপনি বলুন, আমরা তো ইব্রাহীমী ধর্মের উপর থাকিব যাহাতে বক্রতার নামও নাই; আর ইব্রাহীম মুশ্রিকও ছিলেন না।
(১৩৬) হে মুসলমানগন!) বলিয়া দাও যে, আমরা ঈমান রাখি আল্লার প্রতি,আর যাহা আমাদের প্রতি অবতারিত হইয়াছে। আর উহার (বিধানের) প্রতিও যাহা নাযিল হইয়াছে ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক এবং ইয়াকূব এবং তাঁহার আওলাদের প্রতি, আর উহার প্রতিও যাহা মূসা ও ঈসাকে প্রদান করা হইয়াছে, আর উহার উপরও যাহা অন্যান্য নবীগনকে প্রদান করা হইয়াছে তাঁহাদের রবের তরফ হইতে; এইভাবে যে, আমরা তাঁহাদের মধ্যে কাহাকেও কোন পার্থক্য করি না; এবং আমরা আল্লাহর ফরমাঁবর্দার।
শানে নুযুল:
১। ইহুদীদের বিশ্বাস ছিল, মাতা-পিতার পাপের জন্য তাহাদের সন্তানগণ দায়ী হইবে এবং সন্তানেরা মাতা-পিতার সওয়াবের অংশীদার হইবে। ইহা একটি ভ্রান্ত ধারণা। আল্লাহ্ এই আয়াতে ইহাই বর্ণনা করিয়াছেন। (মুঃকোঃ)
২। প্রচলিত ইহুদী ও খৃষ্টান ধর্মে শিরক থাকায় তাহা গ্রহনযোগ্য নহে। অথচ তাহারা মিল্লাতে ইব্রাহীমীর অনুষ্ঠিত খৎনা, হজ্জ প্রভৃতি কোন কোন কাজ পালন করার দরুন নিজদিগকে মিল্লাতে ইব্রাহীমীর অনুসরনকারী বলিয়া মনে করিত। তাই ইহুদী ও নাছারাদের সহিত আরব মুশরিকদেরও প্রতিবাদে বলা হইল, তোমাদের ও হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর মধ্যে যখন শিরক ও তওহীদের পার্থক্য রহিয়াছে, তখন কেবল কোন কোন আনুষ্ঠানিক কার্য পালন করিয়াই তোমরা কি প্রকারে মিল্লাতে ইব্রাহীমীর দাবী করিতে পার? (বঃকোঃ)