সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ
সর্বমোট আয়াত ১৬৫
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَجَعَلَ الظُّلُمَاتِ وَالنُّورَ ۖ ثُمَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بِرَبِّهِمْ يَعْدِلُونَ
বাংলা অর্থ:
১। সমস্ত প্রশাংসা আল্লাহরই জন্য, যিনি আসমানসমূহ ও যমীন কে সৃষ্টি করিয়াছেন এবং আঁধার ও আলোক বানাইয়াছেন ; তবুও কাফেররা (এবাদতে) নিজ পরওয়ারদেগারের সমতুল্য (অন্যকে) সাব্যস্ত করে।
هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن طِينٍ ثُمَّ قَضَىٰ أَجَلًا ۖ وَأَجَلٌ مُّسَمًّى عِندَهُ ۖ ثُمَّ أَنتُمْ تَمْتَرُونَ
বাংলা অর্থ:
২। তিনি এমন-যিনি তোমাদিগকে সৃষ্টি করিয়াছেন মৃত্তিকা হইতে অত:পর নির্দিষ্ট করিয়া দিয়াছেন (মৃত্যুর জন্য) এক সময়; এবং আরও একটি নির্দিষ্ট সময় (অর্থাৎ পুনরুস্থান হওয়ার সময়) খাছ আল্লাহরই নিকট রহিয়াছে তথাপিও তোমরা সন্দেহ কর।
وَهُوَ اللَّهُ فِي السَّمَاوَاتِ وَفِي الْأَرْضِ ۖ يَعْلَمُ سِرَّكُمْ وَجَهْرَكُمْ وَيَعْلَمُ مَا تَكْسِبُونَ
বাংলা অর্থ:
৩। আর তিনিই বরহক মা‘বুদ-আসমানেও এবং যমীনেও; তিনি তোমাদের গোপনীয় অবস্থাকেও জানেন, এবং তোমাদের প্রকাশ্য অবস্থাকেও জানেন, আর তোমরা যাহাকিছু অর্জন কর, তাহাও জানেন।
وَمَا تَأْتِيهِم مِّنْ آيَةٍ مِّنْ آيَاتِ رَبِّهِمْ إِلَّا كَانُوا عَنْهَا مُعْرِضِينَ
বাংলা অর্থ:
৪। আর তাহাদের নিকট তাহাদের প্রতিপালকের নিদর্শনসমূহ হইতে যে কোন নিদর্শনই আসে তাহারা উহা হইতে বিমুখই থাকে।
فَقَدْ كَذَّبُوا بِالْحَقِّ لَمَّا جَاءَهُمْ ۖ فَسَوْفَ يَأْتِيهِمْ أَنبَاءُ مَا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِئُونَ
বাংলা অর্থ:
৫। অনন্তর তাহারা এই সত্য কিতাবকেও মিথ্যা প্রতিপন্ন করিয়াছে, যখন ইহা তাহাদের নিকট পৌঁছিয়াছে; সুতরাং সংবাদ সত্বরই তাহাদের নিকট পৌঁছিবে, যাহার সহিত তাহারা উপহাস করিতেছিল।
أَلَمْ يَرَوْا كَمْ أَهْلَكْنَا مِن قَبْلِهِم مِّن قَرْنٍ مَّكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ مَا لَمْ نُمَكِّن لَّكُمْ وَأَرْسَلْنَا السَّمَاءَ عَلَيْهِم مِّدْرَارًا وَجَعَلْنَا الْأَنْهَارَ تَجْرِي مِن تَحْتِهِمْ فَأَهْلَكْنَاهُم بِذُنُوبِهِمْ وَأَنشَأْنَا مِن بَعْدِهِمْ قَرْنًا آخَرِينَ
বাংলা অর্থ:
৬। তাহারা কি দেখে নাই যে, আমি তাহাদের পূর্বে কত সম্প্রদায়কে ধ্বংস করিয়া দিয়াছি? যাহাদিগকে আমি পৃথিবীতে এমন শক্তি দান করিয়াছিলাম, যেই শক্তি তোমাদিগকে প্রদান করি নাই এবং আমি তাহাদের উপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করিয়াছি এবং আমি তাহাদের (ক্ষেত ও বাগানসমূহের) পাদদেশে নহর সমূহ প্রবাহিত করিয়াছি, অনন্তর আমি তাহাদিগকে ধ্বংস করিয়া দিয়াছি তাহাদের পাপের দরুন এবং তাহাদের পরে সৃষ্টি করিয়াছি অন্য সম্প্রদায়কে।
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। হুযূর (দঃ) বলিয়াছেন, পৃথিবীর সর্বত্র হইতে এক মুষ্টি মাটি লইয়া আল্লাহ্ আদমকে সৃষ্টি করিয়াছেন এই কারণেই তাঁহার সন্তান-গণ বিভিন্ন প্রকারের, বিভিন্ন স্বভাবের ও বিভিন্ন বর্ণের হইয়াছে। কাফেরেরা পুনরুস্থানের কথা শুনিয়া বিস্ময়ের সহিত বলিল, আমাদের হাড়সমূহ মাটি হইয়া যাওয়ার পর আমরা কেমন করিয়া পুনরায় সৃষ্ট হইব? তাহাদের মত পরিবর্তন ও বিশ্বাস জন্মাইবার জন্য আল্লাহ্ এই আয়াতটি নাযিল করিয়াছেন। অর্থাৎ, হাড়গুলি পচিয়া তদ্রপ মাটিই তো হইবে, যে মাটি দ্বারা আল্লাহ্ এমন একটি পুতুল ‘‘আদম’’ নিমার্ণ করিয়াছেন, যাহা হইতে কোটি কোটি আদম-সন্তান পয়দা হইতেছে। মহামহিমাম্বিত আল্লাহ্ যদি সেই মাটি হইতে পৃথক পৃথক মানুষ তৈয়ার করিয়া তাহাতে প্রাণ সংযোগ করিয়া দেন, তবে বিস্ময়ের কি আছে? (ই:কা)
وَلَوْ نَزَّلْنَا عَلَيْكَ كِتَابًا فِي قِرْطَاسٍ فَلَمَسُوهُ بِأَيْدِيهِمْ لَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا إِنْ هَـٰذَا إِلَّا سِحْرٌ مُّبِينٌ
বাংলা অর্থ:
৭। আর যদি আমি কাগজে লিখিত কোন কিতাব আপনার প্রতি নাযিল করিতাম, অত:পর ইহারা উহাকে নিজ হস্ত দ্বারা স্পর্শও করিত, তথাপিও এসব কাফেররা ইহাই বলিত যে, ইহা স্পষ্ট জাদু ভিন্ন আর কিছুই নহে।
وَقَالُوا لَوْلَا أُنزِلَ عَلَيْهِ مَلَكٌ ۖ وَلَوْ أَنزَلْنَا مَلَكًا لَّقُضِيَ الْأَمْرُ ثُمَّ لَا يُنظَرُونَ
বাংলা অর্থ:
৮। আর ইহারা এইরূপ(-ও) বলে যে, তাঁহার নিকট কোন ফেরেশতা কেন প্রেরণ করা হয় নাই? আর যদি আমি কোন ফেরেশতা প্রেরণ করিতাম, তবে সমস্ত বিষয়েরই সমাপ্তি ঘটিত, অত:পর তাহাদিগকে একটু অবকাশও দেওয়া হইত না ।
وَلَوْ جَعَلْنَاهُ مَلَكًا لَّجَعَلْنَاهُ رَجُلًا وَلَلَبَسْنَا عَلَيْهِم مَّا يَلْبِسُونَ
বাংলা অর্থ:
৯। আর যদি আমি তাঁহাকে মনোনীত করিতাম কোন ফেরেশতা, তবে আমি তাহাকে (আকৃতিতে) মানুষই বানাইতাম এবং তাহার ইহার পরেও সেই সংশয়েই থাকিত, যে সংশয়ে বর্তমানে রহিয়াছে।
وَلَقَدِ اسْتُهْزِئَ بِرُسُلٍ مِّن قَبْلِكَ فَحَاقَ بِالَّذِينَ سَخِرُوا مِنْهُم مَّا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِئُونَ
বাংলা অর্থ:
১০। আর বাস্তবিকই আপনার পূর্বে যে সকল নবী অতীত হইয়াছেন তাঁহাদের সঙ্গেও বিদ্রুপ করা হইয়াছে, অনন্তর যাহারা তাঁহাদের সহিত বিদ্রুপ করিয়াছিল তাহাদিগকে ঐ আযাব পরিবেষ্টিত করিয়া লইল যাহার প্রতি তাহারা বিদ্রুপ করিত।
قُلْ سِيرُوا فِي الْأَرْضِ ثُمَّ انظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ
বাংলা অর্থ:
১১। আপনি বলুন, পৃথিবীতে একটু ভ্রমণ কর, অত:পর প্রত্যক্ষ কর, মিথ্যা আরোপকারীদের কি পরিণাম হইয়াছে।
قُل لِّمَن مَّا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ قُل لِّلَّهِ ۚ كَتَبَ عَلَىٰ نَفْسِهِ الرَّحْمَةَ ۚ لَيَجْمَعَنَّكُمْ إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ لَا رَيْبَ فِيهِ ۚ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنفُسَهُمْ فَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ
বাংলা অর্থ:
১২। আপনি বলুন, যাহাকিছু আসমানসমূহে ও যমীনে রহিয়াছে এ সমস্তের স্বত্ব কাহার? আপনি বলিয়া দিন, সব কিছুরই স্বত্ব (একমাত্র) আল্লাহর ; এবং আল্লাহ্ অনুগ্রহ করাকে নিজের জন্য কর্তব্য করিয়া লইয়াছেন; আল্লাহ্ তোমাদিগকে কিয়ামত দিবসে একত্রিত করিবেন, ইহাতে কোন সন্দেহ নাই; যাহারা নিজদিগকে বিনষ্ট করিয়াছে, অতএব, তাহারা ঈমান আনিবে না ।
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। কাফেরেরা বলিল, পয়গম্বর ফেরেশতা কেন হয় না ? এই প্রশ্নের উত্তরে আল্লাহ্ এই আয়াতটি নাযিল করিয়াছেন। (মু:কো: )
২। ফেরেশতা আসিলে ও মানুষের আকৃতিতে আসিত, কেননা, ফেরেশতার নূরানী শরীর দেখার সাধ্য মানুষের নাই। কাজেই সেই সন্দেহ থাকিয়াই যাইত। (ব: কো:)
৩। নযর ইবনে হারেছ এবং আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমাইয়া ও কতিপয় মুশরিক হুযূর (দ:)-কে একদিন বলিল, আমাদের নিকট আল্লাহ্ যদি এই মর্মে এক খন্ড কাগজ লিখিয়া পাঠান যে, ‘‘আপনি সত্য নবী, ইহাতে কোন সন্দেহ নাই।’’ এবং চারিজন ফেরেশতা উক্ত কাগজ লইয়া আসিয়া উহার সত্যতা প্রতিপাদন করে যে, ইহা স্বয়ং আল্লাহর লিখিত, তবে আমরা আপনার উপর ঈমান আনিতে পারি । এই সম্বন্ধে এই আয়াতটি নাযিল হয়। (ই:কা:)
وَلَهُ مَا سَكَنَ فِي اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ ۚ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
বাংলা অর্থ:
১৩। আর সবকিছুই আল্লাহর স্বত্বে রহিয়াছে যাহাকিছু রাত্রিতে ও দিবাভাগে অবস্থিত; এবং তিনিই অতি শ্রবণকারী, মহা জ্ঞাতা।
قُلْ أَغَيْرَ اللَّهِ أَتَّخِذُ وَلِيًّا فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ يُطْعِمُ وَلَا يُطْعَمُ ۗ قُلْ إِنِّي أُمِرْتُ أَنْ أَكُونَ أَوَّلَ مَنْ أَسْلَمَ ۖ وَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِينَ
বাংলা অর্থ:
১৪। আপনি বলিয়া দিন, আমি কি সেই আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাহাকেও মা’বুদ সাব্যস্ত করিব ? যিনি আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টিকর্তা এবং তিনি (সকলকে) আহার দান করেন আর তাঁহাকে কেহ আহার প্রদান করে না; আপনি বলিয়া দিন, আমাকে এই আদেশ দেওয়া হইয়াছে যে, আমি সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করি এবং (আরও বলা হইয়াছে,) আপনি কখনও মুশরেকদের দলভুক্ত হইবেন না ।
قُلْ إِنِّي أَخَافُ إِنْ عَصَيْتُ رَبِّي عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ
বাংলা অর্থ:
১৫। আপনি বলিয়া দিন যে, আমি যদি আমার প্রতিপালকের আদেশ অমান্য করি, তবে এক মহা দিবসের শাস্তির ভয় করি।
مَّن يُصْرَفْ عَنْهُ يَوْمَئِذٍ فَقَدْ رَحِمَهُ ۚ وَذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْمُبِينُ
বাংলা অর্থ:
১৬। সেই দিন যে -ব্যক্তি হইতে ঐ আযাব সরাইয়া লওয়া হইবে, তবে তো তাহার প্রতি আল্লাহ্ তা‘আলা অশেষ করুণা করিলেন ; আর ইহাই স্পষ্ট সফলতা।
وَإِن يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ ۖ وَإِن يَمْسَسْكَ بِخَيْرٍ فَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
বাংলা অর্থ:
১৭। আর যদি আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাকে কোন কষ্ট দেন, তবে তিনি ব্যতীত আর কেহ উহা বিদুরিত করিতে পারিবে না ; আর যদি তোমার কোন কল্যাণ করেন, তবে ( কেহ প্রতিরোধ করিতে পারিবে না ) তিনি সর্ববিষয়ে পূর্ণ ক্ষমতাবান।
وَهُوَ الْقَاهِرُ فَوْقَ عِبَادِهِ ۚ وَهُوَ الْحَكِيمُ الْخَبِيرُ
বাংলা অর্থ:
১৮। আর আল্লাহর স্বীয় বান্দাদের উপর ক্ষমতাবান, পরাক্রান্ত; ও তিনিই প্রজ্ঞাময়, পূর্ণ অবহিত।
قُلْ أَيُّ شَيْءٍ أَكْبَرُ شَهَادَةً ۖ قُلِ اللَّهُ ۖ شَهِيدٌ بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ ۚ وَأُوحِيَ إِلَيَّ هَـٰذَا الْقُرْآنُ لِأُنذِرَكُم بِهِ وَمَن بَلَغَ ۚ أَئِنَّكُمْ لَتَشْهَدُونَ أَنَّ مَعَ اللَّهِ آلِهَةً أُخْرَىٰ ۚ قُل لَّا أَشْهَدُ ۚ قُلْ إِنَّمَا هُوَ إِلَـٰهٌ وَاحِدٌ وَإِنَّنِي بَرِيءٌ مِّمَّا تُشْرِكُونَ
বাংলা অর্থ:
১৯। আপনি জিজ্ঞাসা করুন, সাক্ষ্যরূপে কোন বস্তু সর্বাধিক শ্রেষ্ঠ? আপনি বলুন, আমার এবং তোমাদের মধ্যে আল্লাহই সাক্ষী আছেন এবং আমার নিকট এই কোরআন ওহীরূপে প্রেরিত হইয়াছে যেন আমি এই কোরআন দ্বারা তোমাদিগকে এবং যাহাদের নিকট এই কোরআন পৌঁছিবে, সকলকে ভর প্রদর্শন করি; তোমরা সত্যই কি এই সাক্ষ্যই দিবে যে, আল্লাহর সহিত অন্য আরও মা‘বুদ রহিয়াছে? আপনি বলিয়া দিন, আমি তো সাক্ষ্য দিতেছি না, আপনি বলিয়া দিন, তিনিই তো একক মা‘বুদ আর নিশ্চয় আমি তোমাদের শরীক সাব্যস্ত করা হইতে পবিত্র ।
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। ক্বোরাইশ সম্প্রদায়ের কাফেরেরা হুযুর (দ:) -কে বলিল, আমরা বুঝিতে পারিয়াছি দারিদ্র্য এবং অভাবই তোমাকে এই কার্যের প্রতি অনুপ্রাণিত করিয়াছে, যাহা তুমি করিতেছ। যদি তুমি এই নূতন ধর্ম প্রচার হইতে বিরত থাক, তবে তোমাকে সর্বাধিক ধনী করিয়া দেওয়া হইবে। তৎসম্বন্ধে উক্ত আয়াতটি নাযিল হয়। (মু:কো:)
২। ক্বোরাইশ কাফেরেরা বলিল, হে মুহাম্মাদ ! (দ:) আমরা তো কোন জ্ঞানী লোককে দেখিতেছি না যে, সত্য নবী মনে করিয়া তোমার উপর ঈমান আনিয়াছে। আমরা ইহুদী আলেমদিগকে তাওরাতে তোমার কোন পরিচয় আছে কিনা জিজ্ঞাসা করিয়াছি। সকলেই অস্বীকার করিয়াছে। এখন এমন নিদর্শন দেখাও যদ্দারা তোমার পয়গম্বরী প্রমাণিত হয়। এতদ্সম্পর্কে এই আয়াতটি নাযিল হয়। (মু:কো:)
الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَعْرِفُونَهُ كَمَا يَعْرِفُونَ أَبْنَاءَهُمُ ۘ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنفُسَهُمْ فَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ
বাংলা অর্থ:
২০। যাহাদিগকে আমি কিতাব প্রদান করিয়াছি তাহারা রাসূলকে চিনে, যেরূপে নিজেদের পুত্রদিগকে চিনে। যাহারা নিজদিগকে বিনষ্ট করিয়া ফেলিয়াছে,-সুতরাং তাহারা ঈমান আনিবে না।
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أَوْ كَذَّبَ بِآيَاتِهِ ۗ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُونَ
বাংলা অর্থ:
২১। আর সে ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক যালেম কে হইবে, যে-ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে কিংবা আল্লাহর আয়াতগুলিকে মিথ্যা বলিয়া সাব্যস্ত করে? ইহা সুনিশ্চিয় যে, এইরূপ যালেমরা নাজাত পাইবে না।
وَيَوْمَ نَحْشُرُهُمْ جَمِيعًا ثُمَّ نَقُولُ لِلَّذِينَ أَشْرَكُوا أَيْنَ شُرَكَاؤُكُمُ الَّذِينَ كُنتُمْ تَزْعُمُونَ
বাংলা অর্থ:
২২। আর সেই সময় টুকুও স্মরণীয় যে-দিন আমি সমস্ত সৃষ্টিকে একত্রিত করিব, অত:পর আমি মুশরেকদিগকে বলিব-তোমাদের সেই শরীকরা কোথায় গেল যাহাদিগের মা‘বুদ হওয়ার দাবী তোমরা করিতে ।
ثُمَّ لَمْ تَكُن فِتْنَتُهُمْ إِلَّا أَن قَالُوا وَاللَّهِ رَبِّنَا مَا كُنَّا مُشْرِكِينَ
বাংলা অর্থ:
২৩। অত:পর তাহাদের শিরকের পরিণাম ইহা ব্যতীত আর কিছুই হইবে না যে, তাহারা এইরূপ বলিবে, – আমাদের প্রতিপালক আল্লাহর কসম-আমরা মুশরেক ছিলাম না ।
انظُرْ كَيْفَ كَذَبُوا عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ ۚ وَضَلَّ عَنْهُم مَّا كَانُوا يَفْتَرُونَ
বাংলা অর্থ:
২৪। একটু দেখ তো! তাহারা নিজেদের আত্মার উপর কিরূপে মিথ্যা বলিল! আর তাহারা যে -সমস্ত বস্তুকে মিছামিছি রচনা করিত উহা সমস্তই অদৃশ্য হইয়া গেল।
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। অর্থাৎ কোরআনের অলৌকিকতা গুণ দ্বারা ও তন্মাধ্যস্থিত বিষগুলি দ্বারা তাওহীদ ও আমরা সত্যতা সম্বন্ধে সাক্ষ্য পাওয়া যাইতেছ্ তাওহীদের শ্রেষ্ঠতম সাক্ষ্যের পরেও কি তোমরা এই সাক্ষ্যই দিবে যে, আল্লাহর শরীক রহিয়াছে? যদি এত করিয়া বুঝানোর পরেও তাহারা হঠকারিতা করে, তবে তাহাদের সহিত আলোচনা করাই বৃথা। (ব:কো:)
২। কেননা পুত্রের আকৃতি দেখিয়া স্বভাবত: কাহারও মনে সন্দেহ হয় না যে , এই ব্যক্তি কে ? তГপ কোরআনে ও তাওরাতে বর্ণিত আকৃতি, প্রকৃতি হুযূরের নি:সন্দেহ পরিচয়।(ব:কো:)
৩। অর্থাৎ , আজ তাহারা যাহা সত্য মনে করিতেছে, কাল নিজেরাই উহাকে বাতেল বুঝিতে পারিবে।(ব:কো:)
وَمِنْهُم مَّن يَسْتَمِعُ إِلَيْكَ ۖ وَجَعَلْنَا عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ أَكِنَّةً أَن يَفْقَهُوهُ وَفِي آذَانِهِمْ وَقْرًا ۚ وَإِن يَرَوْا كُلَّ آيَةٍ لَّا يُؤْمِنُوا بِهَا ۚ حَتَّىٰ إِذَا جَاءُوكَ يُجَادِلُونَكَ يَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُوا إِنْ هَـٰذَا إِلَّا أَسَاطِيرُ الْأَوَّلِينَ
বাংলা অর্থ:
২৫। আর তাহাদের মধ্যে কতিপয় এমনও আছে যে, (আপনি কোরআন তেলাওয়াতকালে) আপনার দিকে কর্ণপাত করে, আর আমি উহা (অর্থাৎ , কোরআন) হৃদয়ঙ্গম করা হইতে তাহাদের অন্তসমূহের উপর পর্দা ফেলিয়া রাখিয়াছি। এবং তাহাদের কর্ণসমূহে ছিপি দিয়া রাখিয়াছি, আর যদি সমস্ত প্রমাণাদি (-ও) প্রত্যক্ষ করিয়া লয় , তবুও তাহারা উহাতে ঈমান আনবে না ; এমন কি যখন ইহারা আপনার নিকট উপস্থিত হয় , তখন আপনার সহিত অনর্থক ঝগড়া করে, এই কাফেরেরা বলে যে, ইহা তো প্রাচীনদের ভিত্তিহীন কাহিনী ব্যতীত আর কিছুই নহে।
وَهُمْ يَنْهَوْنَ عَنْهُ وَيَنْأَوْنَ عَنْهُ ۖ وَإِن يُهْلِكُونَ إِلَّا أَنفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ
বাংলা অর্থ:
২৬। আর ইহারা উহা হইতে অন্যকেও বিরত রাখে এবং নিজেরাও দূরে থাকে, বস্তুত: ইহারা নিজদিগকে ধ্বংস করিতেছে, অথচ কোন খবর রাখে না ।
وَلَوْ تَرَىٰ إِذْ وُقِفُوا عَلَى النَّارِ فَقَالُوا يَا لَيْتَنَا نُرَدُّ وَلَا نُكَذِّبَ بِآيَاتِ رَبِّنَا وَنَكُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ
বাংলা অর্থ:
২৭। আর যদি আপনি সেই সময় প্রত্যক্ষ করেন, যখন তাহাদিগকে পুনরায় পাঠান হইত, আর যদি এইরূপ হইয়া যায়, তবে আমরা স্বীয় প্রতিপালকের নিদর্শনসমূহকে অসত্য বলিব না এবং আমরা ঈমান ওয়ালাদের দলভুক্ত হইয়া যাইব।
بَلْ بَدَا لَهُم مَّا كَانُوا يُخْفُونَ مِن قَبْلُ ۖ وَلَوْ رُدُّوا لَعَادُوا لِمَا نُهُوا عَنْهُ وَإِنَّهُمْ لَكَاذِبُونَ
বাংলা অর্থ:
২৮। বরং যাহা তাহারা ইহার পূর্বে গোপন করিত উহা(আজ) তাহাদের সম্মুখে উপস্থিত হইয়াছে ; আর যদি তাহাদিগকে পুনরায় পাঠানও হয়, তবুও তাহারা সেই কাজই করিবে যাহা করিতে নিষেধ করা হইয়াছিল, আর নিশ্চয় ইহারা সম্পূর্ণ মিথ্যাবাদী।
وَقَالُوا إِنْ هِيَ إِلَّا حَيَاتُنَا الدُّنْيَا وَمَا نَحْنُ بِمَبْعُوثِينَ
বাংলা অর্থ:
২৯। আর তাহারা বলে , জীবন তো আর কোথাও নহে-শুধু বর্তমান জীবনই এবং আমরা পুনর্জীবিত হইব না।
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। আবু সুফিয়ান, ওলীদ , শায়বা, ওতবা, উবাই ইবনে খালাফ এবং নাযার ইবনে হারেছ কা‘বা শরীফে একত্রিত হইয়া হুযুরের কোরআন পাঠ শুনিত। নাযার ইবনে হারেছকে কেহ জিজ্ঞাসা করিল, মুহাম্মাদ(দ:) কি বলে ? সে বলিল, আমি জানি না, কি বলে। ঠোঁট নাড়ে এবং প্রাচীন যুগের কাহিনী-সমূহ পাঠ করে। এই সম্পর্কে এই আয়াতটি নাযিল হয় । (ম: কো:)
২। কোন কোন মুফাসসির বলেন, এই আয়াতটি আবু তালেব সম্বন্ধে নাযিল হইয়াছে। হুযূরের দাদার এন্তেকালের পর এবং নুবুওয়াতের পরেও তাঁহার পিতৃব্য এই আবূ তালেবই সর্বাবস্থায় যাবতীয় আপদ-বিপদে তাঁহার সহায় ছিলেন, কিন্তু আবূ তালেব নিজে ঈমান আনেন নাই। তাহাই বলা হইয়াছে। (ম:কো:)
وَلَوْ تَرَىٰ إِذْ وُقِفُوا عَلَىٰ رَبِّهِمْ ۚ قَالَ أَلَيْسَ هَـٰذَا بِالْحَقِّ ۚ قَالُوا بَلَىٰ وَرَبِّنَا ۚ قَالَ فَذُوقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنتُمْ تَكْفُرُونَ
বাংলা অর্থ:
৩০। আর যদি আপনি সেই সময় প্রত্যক্ষ করেন, যখন তাহাদিগকে তাহাদের রব্বের সম্মুখে দাঁড় করান হইবে। আল্লাহ্ বলিবেন, ইহা কি বাস্তব বিষয় নহে? তাহারা বলিবে, শপথ আমাদের পরওয়ারদেগারের, নি:সন্দেহে আল্লাহ্ তা‘আলাা বলিবেন, তবে এখন নিজেদের কুফরের বিনিময়ে শাস্তির স্বাদ গ্রহণ কর।
قَدْ خَسِرَ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِلِقَاءِ اللَّهِ ۖ حَتَّىٰ إِذَا جَاءَتْهُمُ السَّاعَةُ بَغْتَةً قَالُوا يَا حَسْرَتَنَا عَلَىٰ مَا فَرَّطْنَا فِيهَا وَهُمْ يَحْمِلُونَ أَوْزَارَهُمْ عَلَىٰ ظُهُورِهِمْ ۚ أَلَا سَاءَ مَا يَزِرُونَ
বাংলা অর্থ:
৩১। নি:সন্দেহে তাহারাই ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে যাহারা আল্লাহর সহিত সাক্ষাৎ হওয়াকে অসত্য বলিয়াছে; এমনকি যখন সেই নির্দিষ্ট সময় তাহাদের প্রতি অকস্মাৎ আসিয়া পৌঁছিবে, বলিবে-হায় ! আফসোস আমাদের ক্রটির উপর যাহা এসম্বন্ধে ঘটিয়াছে, আর তাহাদের অবস্থা এই হইবে যে , তাহারা নিজেদের (গুনাহর) বোঝা নিজেদের কটিদেশে বহন করিবে; উত্তম রূপে শুনিয়া লও, মন্দ হইবে ঐ বস্তু যাহা তাহারা বহন করিবে ।
وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا لَعِبٌ وَلَهْوٌ ۖ وَلَلدَّارُ الْآخِرَةُ خَيْرٌ لِّلَّذِينَ يَتَّقُونَ ۗ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
বাংলা অর্থ:
৩২। আর পার্থিব জীবন তো খেল ও তামাশা ব্যতীত কিছুই নহে ; আর মুত্তাক্কীদের জন্য পরকালের বাসস্থানই উত্তম; তোমরা কি ভাবিয়া দেখ না ?
قَدْ نَعْلَمُ إِنَّهُ لَيَحْزُنُكَ الَّذِي يَقُولُونَ ۖ فَإِنَّهُمْ لَا يُكَذِّبُونَكَ وَلَـٰكِنَّ الظَّالِمِينَ بِآيَاتِ اللَّهِ يَجْحَدُونَ
বাংলা অর্থ:
৩৩। আমি অবশ্যই জানি যে, তাহাদের উক্তিসমূহ আপনাকে ব্যথিত করে, বস্তুত: উহারা তো আপনাকে মিথ্যাবাদী বলিতেছে না, বরং এই যালেমরা তো আল্লাহর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করিতেছে।
وَلَقَدْ كُذِّبَتْ رُسُلٌ مِّن قَبْلِكَ فَصَبَرُوا عَلَىٰ مَا كُذِّبُوا وَأُوذُوا حَتَّىٰ أَتَاهُمْ نَصْرُنَا ۚ وَلَا مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِ اللَّهِ ۚ وَلَقَدْ جَاءَكَ مِن نَّبَإِ الْمُرْسَلِينَ
বাংলা অর্থ:
৩৪। এবং বহু পয়গম্বর যাঁহারা আপনার পূর্বে অতীত হইয়াছেন তাঁহাদিগকেও মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা হইয়াছিল, তবুও তাঁহারা ছবরই করিয়াছিলেন তাঁহাদিগকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা ও তাঁহাদিগকে যাতনা দেওয়ার প্রতি যে পর্যন্ত না তাঁহাদের নিকট আমার সাহায্য পৌছিয়াছিল, বস্তুত আল্লাহর বাণীসমূহের কোন পরিবর্তনকারী নাই, আর আপনার নিকট পয়গম্বরগণের কতিপয় ইতিবৃত্ত পৌঁছিয়াছে।
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। অর্থাৎ ,পূর্বভাষ সূচক ঘটনাবলীসহ অকস্মাৎ ক্বিয়ামত আসিয়া পৌঁছিবে, যদিও মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই অবিশ্বাস এবং মিথ্যা প্রতিপাদনের সমাপ্তি ঘটিবে। কিন্তু ক্বিয়ামতের দিন যেহেতু তাহা পূর্বাভাবে প্রকাশ পাইবে, সুতরাং ক্বিয়ামতকেই ইহার শেষ সীমা বলিয়া নিধারণ করা হইয়াছে। কাশশাফ প্রণেতা বলেন, মৃত্যু ও ক্বিয়ামতের সূচনাবলীল অন্তর্ভুক্ত বটে। অতএব , ইহাই ক্বিয়ামতের তুল্যই হইবে।(ব:কো:)
২। পার্থিব জীবনকেই খেলা-ধুলার বস্তু বলা উদ্দেশ্য নহে; বরং যেই সমস্ত কার্য-কলাপ পরকালের উদ্দেশ্যে নহে এবং সহায়ও নহে, শুধু সেগুলিকেই খেলা-ধূলার বস্তু বলা হইয়াছে। (ব: কো:)
৩। একদিন আবূ জাহাল হুযূর (দ:) -কে বলিল, আমরা অবশ্য আপনাকে অবিশ্বাস করি না , কিন্তু আপনি যেই ধর্ম ও কিতাব আনিয়াছেন, তাহা আমরা বিশ্বাস করিতে পারি না। এ সম্বন্ধে এই আয়াতটি নাযিল হয় ।(আসবাবুননুযূল)
وَإِن كَانَ كَبُرَ عَلَيْكَ إِعْرَاضُهُمْ فَإِنِ اسْتَطَعْتَ أَن تَبْتَغِيَ نَفَقًا فِي الْأَرْضِ أَوْ سُلَّمًا فِي السَّمَاءِ فَتَأْتِيَهُم بِآيَةٍ ۚ وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ لَجَمَعَهُمْ عَلَى الْهُدَىٰ ۚ فَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الْجَاهِلِينَ
বাংলা অর্থ:
৩৫। আর যদি তাহাদের বিমুখতা আপনার নিকট অসহনীয় হয়, তবে যদি আপনার এইরূপ ক্ষমতা থাকে-যমীনে (প্রবেশ করার) কোন সুড়ঙ্গ অথবা আসমানে (আরোহণ করার) কোন সোপান অন্বেষণ করিয়া লইতে অত:পর (ইহার সাহায্যে গমনপূর্বক তথা হইতে) কোন মু‘জেযা আনয়ন করিতে পারেন, তবে আনয়ন করুন; আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করিতেন, তবে তাহাদের সকলকে সরল পথে একত্রিত করিয়া দিতেন, অতএব, আপনি নির্বোধ লোকদের দলভুক্ত হইবেন না।
إِنَّمَا يَسْتَجِيبُ الَّذِينَ يَسْمَعُونَ ۘ وَالْمَوْتَىٰ يَبْعَثُهُمُ اللَّهُ ثُمَّ إِلَيْهِ يُرْجَعُونَ
বাংলা অর্থ:
৩৬। তাহারাই কবূল করে যাহারা (সত্যানুসন্ধানের জন্য ) শ্রবণ করে; আর মৃতদিগকে আল্লাহ (কিয়ামত দিবসে) জীবিত করিয়া উঠাইবেন, অনন্তর সকলেই আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তিত হইবে।
وَقَالُوا لَوْلَا نُزِّلَ عَلَيْهِ آيَةٌ مِّن رَّبِّهِ ۚ قُلْ إِنَّ اللَّهَ قَادِرٌ عَلَىٰ أَن يُنَزِّلَ آيَةً وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ
বাংলা অর্থ:
৩৭। আর এ সমস্ত লোক বলে যে, তাঁহার প্রতি কোন মু‘জেযা কেন অবতরণ করা হয় না-তাঁহার রব্বের তরফ হইতে? আপনি বলিয়া দিন, নিশ্চয় এ বিষয়ে আল্লাহর পূর্ণ ক্ষমতা রহিয়াছে যে, তিনি মু‘জেযা অবতীর্ণ করিতে পারেন, কিন্তু তাহাদের অধিকাংশ বে-খবর ।
وَمَا مِن دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا طَائِرٍ يَطِيرُ بِجَنَاحَيْهِ إِلَّا أُمَمٌ أَمْثَالُكُم ۚ مَّا فَرَّطْنَا فِي الْكِتَابِ مِن شَيْءٍ ۚ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّهِمْ يُحْشَرُونَ
বাংলা অর্থ:
৩৮। আর যত প্রকার প্রাণী ভূপৃষ্ঠে বিচরণ করে এবং যত প্রকার পাখী স্বীয় ডানাদ্বয়ের সাহায্যে উড়ে তন্মধ্যে কোন প্রকারই এই রূপ নাই যাহারা (কিয়ামত দিবসে) তোমাদের ন্যায় (সমবেত) দল হইবে না; আমি কিতাবে কোন কিছুই ছাড়ি নাই অত:পর সকলকে স্বীয় পরওয়ারদেগারের সমীপে সমবেত করা হইবে।
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। কাফেরদের ফরমাইশী মু‘জেযাহ সম্বন্ধে আল্লাহ বলেন, উহা অনাবশ্যক ও ক্ষতিকর বিবেচনায় আমি তাহাদের আবদার পূরণ করি নাই। আপনি যদি ইহাই চাহেন যে, যে কোন উপায়ে ইহারা মুসলমান হইয়া যাউক, তবে আপনিই ইহার ব্যবস্থা করুন । (ব: কো:)
২। অথচ ফরমাইশী মু‘জেযাহ্ নাযিল করার পরও যদি ঈমান না আনে, তবে তাহাদের ধ্বংস অনিবার্য। মোটকথা, পূর্বে যেই সমস্ত মু‘জেযাহ নাযিল করা হইয়াছে, তাহাই যথেষ্ট। আর ইহা আমার জানা আছে যে, পূর্ব মু‘জেযাহর প্রতি ইহারা যেমন ঈমান আনে নাই, তদ্রুপ এই ফরমাইশী মু‘জেযাহ নাযিল করিলেও ইহারা ঈমান আনিবে না। (ব: কো:)
وَالَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا صُمٌّ وَبُكْمٌ فِي الظُّلُمَاتِ ۗ مَن يَشَإِ اللَّهُ يُضْلِلْهُ وَمَن يَشَأْ يَجْعَلْهُ عَلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
বাংলা অর্থ:
৩৯। আর যাহারা আমার আয়াতগুলিকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে তাহারা তো বধির ও বোবা সাজিতেছে (এবং) নানা বিধ অন্ধকারে (লিপ্ত); আল্লাহ তা ‘আলা যাহাকে ইচ্ছা বিপথগামী করেন; এবং যাহাকে ইচ্ছা সকল পথে চালিত করেন।
قُلْ أَرَأَيْتَكُمْ إِنْ أَتَاكُمْ عَذَابُ اللَّهِ أَوْ أَتَتْكُمُ السَّاعَةُ أَغَيْرَ اللَّهِ تَدْعُونَ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ
বাংলা অর্থ:
৪০। আপনি বলুন, আচ্ছা বল তো ! যদি তোমাদের উপর আল্লাহর কোন আযাব আসিয়া পৌঁছে কিংবা তোমাদের উপর কিয়ামতই আসিয়া পৌঁছে , তবে কি আল্লাহ ভিন্ন আর কাহাকেও ডাকিবে? যদি তোমরা সত্য বাদী হও ।
بَلْ إِيَّاهُ تَدْعُونَ فَيَكْشِفُ مَا تَدْعُونَ إِلَيْهِ إِن شَاءَ وَتَنسَوْنَ مَا تُشْرِكُونَ
বাংলা অর্থ:
৪১। বরং তাঁহাকেই ডাকিতে থাক, অতএব, যে উদ্দেশ্য তোমরা ডাক-যদি তিনি চাহেন, তবে তাহা বিদূরিত করিতে ও পারেন আর যেগুলিকে তোমরা শরীক সাব্যস্ত করিতেছে সেগুলি ভুলিয়া যাও।
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا إِلَىٰ أُمَمٍ مِّن قَبْلِكَ فَأَخَذْنَاهُم بِالْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ لَعَلَّهُمْ يَتَضَرَّعُونَ
বাংলা অর্থ:
৪২। আর আমি আপনার পূর্বে অন্যান্য উম্মতের নিকটও পয়গম্বর প্রেরণ করিয়াছিলাম, অনন্তর আমি তাহাদিগকে অভাব-অনটন ও পীড়া দ্বারা ধূত করিয়াছিলাম, যেন বিনীত হইয়া পড়ে।
فَلَوْلَا إِذْ جَاءَهُم بَأْسُنَا تَضَرَّعُوا وَلَـٰكِن قَسَتْ قُلُوبُهُمْ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
বাংলা অর্থ:
৪৩। সুতরাং যখন তাহাদের উপর আমার শাস্তি পৌছিয়াছিল, তখনও কেন বিনীত হইল না ? বরং তাহাদের অন্তরগুলি কঠিনই রহিল, আর শয়তান তাহাদের কর্মগুলিকে তাহাদের কল্পনাতে সুসজ্জিত করিতেছিল।
فَلَمَّا نَسُوا مَا ذُكِّرُوا بِهِ فَتَحْنَا عَلَيْهِمْ أَبْوَابَ كُلِّ شَيْءٍ حَتَّىٰ إِذَا فَرِحُوا بِمَا أُوتُوا أَخَذْنَاهُم بَغْتَةً فَإِذَا هُم مُّبْلِسُونَ
বাংলা অর্থ:
৪৪। অত:পর যখন তাহারা ভুলিয়া রহিল, যে সম্বন্ধে তাহাদিগকে নসীতহ করা হইত, তখন আমি তাহাদের প্রতি উন্মুক্ত করিয়া দিলাম সকল বস্তুর দ্বার ; এমন কি, যখন তাহারা গর্বিত হইয়া পড়িল উহার দরুন , যাহা তাহারা প্রাপ্ত হইয়াছিল যথন তাহাদিগকে অকস্মাৎ ধৃত করিলাম, অতপর তাহারা সম্পূর্ণ হতাশ হইয়া পড়িল।
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। যেমন, জল-প্লাবন, ঘূর্ণিবাত, ভূমিকম্প ইত্যাদি । (ব:কো:)
২। পার্থিব বিপদ তো দূর করা না করা উভয় সম্ভবনাই রহিয়াছে। পক্ষান্তরে পারলৌকিক বিপদে কেবল এক জায়গায় তাহাদের প্রার্থনা মনযূর করা হইবে। হাশরের মাঠে মু‘মিন কাফের সকলেই সমবেত হইবে। কিন্তু সেই দিবসের দীর্ঘস্থায়ী কষ্ট যখন অসহনীয় হইয়া পড়িবে সূর্যের উত্তাপে সকলে অতিষ্ঠ হইয়া উঠিবে, তখন মু‘মিন কাফের সকলে মিলিয়া হুযূর (দ: ) -কে অনুরোধ করিবে, আপনি আল্লাহর নিকট সুফারিশ করিয়া আমাদের হিসাব শেষ করাইয়া দিন। তাঁহার সুফারিশে সত্বর হিসাব হইয়া যাইবে। ইহার নাম ‘‘শাফা’আতে কোবরা” । এই সুফারিশ টি হইব হাশরের দিনের দীর্ঘতা লাঘব করার জন্য । অতএব, এই খানে কাফেরদের অনুরোধেও শ্রুত হইল। ইহা ছাড়া আর কোন অনুরোধই শ্রুত হইবে না । (বা: কো:)
فَقُطِعَ دَابِرُ الْقَوْمِ الَّذِينَ ظَلَمُوا ۚ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
বাংলা অর্থ:
৪৫। অনন্তর যালেমদের মূল কর্তিত হইল; আর আল্লাহর শোকর – যিনি সকল বিশ্বের প্রতিপালক ।
قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَخَذَ اللَّهُ سَمْعَكُمْ وَأَبْصَارَكُمْ وَخَتَمَ عَلَىٰ قُلُوبِكُم مَّنْ إِلَـٰهٌ غَيْرُ اللَّهِ يَأْتِيكُم بِهِ ۗ انظُرْ كَيْفَ نُصَرِّفُ الْآيَاتِ ثُمَّ هُمْ يَصْدِفُونَ
বাংলা অর্থ:
৪৬। আপনি বলুন, আচ্ছা বল তো যদি আল্লাহ তোমাদের শ্রবণশক্তি ও দর্শনশক্তি সম্পূর্ণরূপে লইয়া লন এবং তোমাদের অন্তরসমূহের উপর মোহর করিয়া দেন, তবে আল্লাহ ভিন্ন আর কোন মা‘বুদ আছে, যে ইহা তোমাদিগকে পুনরায় দিবে? আপনি বলুন! আমি কি রূপে প্রমাণসমূহকে বিভিন্ন ধরনে বর্ণনা করিতেছি, তবুও তাহারা পরাক্ষমুখ হইতেছে।
قُلْ أَرَأَيْتَكُمْ إِنْ أَتَاكُمْ عَذَابُ اللَّهِ بَغْتَةً أَوْ جَهْرَةً هَلْ يُهْلَكُ إِلَّا الْقَوْمُ الظَّالِمُونَ
বাংলা অর্থ:
৪৭। আপনি বলুন, আচ্ছা ইহা তো বল যদি তোমাদের উপর আল্লাহর আযাব আসিয়া পড়ে চাই আকস্মিকভাবে অথবা অবহিত ভাবে, তবে অনাচারী ব্যতীত অন্য কাহাকেও ধ্বংস করা হইবে কি।
وَمَا نُرْسِلُ الْمُرْسَلِينَ إِلَّا مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ ۖ فَمَنْ آمَنَ وَأَصْلَحَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
বাংলা অর্থ:
৪৮। আর আমি রাসূলদিগকে শুধু এই জন্যই প্রেরণ করি যে, তাঁহারা সুসংবাদ দেন ও ভয় প্রদর্শন করেন, অনন্তর যে -ব্যক্তি ঈমান আনিবে এবং সংশোধন করিয়া লইবে, তবে তাহাদের কোন ভয় নাই এবং বিষণও হইবে না ।
وَالَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا يَمَسُّهُمُ الْعَذَابُ بِمَا كَانُوا يَفْسُقُونَ
বাংলা অর্থ:
৪৯। আর যাহারা আমার নিদর্শনগুলিকে অসত্য বলে, তাহাদিগকে আযাব স্পর্শ করে এই কারণে যে, তাহারা (ঈমানের) গন্ডি হইতে বাহির হইয়া যায়।
قُل لَّا أَقُولُ لَكُمْ عِندِي خَزَائِنُ اللَّهِ وَلَا أَعْلَمُ الْغَيْبَ وَلَا أَقُولُ لَكُمْ إِنِّي مَلَكٌ ۖ إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَىٰ إِلَيَّ ۚ قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الْأَعْمَىٰ وَالْبَصِيرُ ۚ أَفَلَا تَتَفَكَّرُونَ
বাংলা অর্থ:
৫০। আপনি বলুন, আমি তোমাদিগকে একথা বলি না যে, আমার নিকট আল্লাহর খাযীনা রহিয়াছে, আর না আমি সমস্ত গায়েব সম্বন্ধে অবগত আছি, আর না আমি তোমাদিগকে একথাও বলি যে, আমি ফেরেশতা, আমার নিকট যে ওহী আসে, আমি তো শুধু উহারই অনুসরণ করি, আপনি বলুন, অন্ধ ও চক্ষুম্মান কি সমতুল্য হইতে পারে ? তবুও কি ভাবিয়া দেখ না?
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। অর্থাৎ প্রাচীন যুগের কাফের সম্প্রদায়গুলির ন্যায় সকল যুগের মানুষের উপর শাস্তি কেবল যুলুমের জন্যই হইবে। যেমন, আল্লাহ বলিয়াছেন, ‘এই শাস্তি তো কেবল অনাচারীদের জন্য নির্দিষ্ট। সুতরাং আসমানী শাস্তি কেবল কাফেরদের জন্যই নির্দিষ্ট, মুসলমানগণ উহা হইতে রক্ষা পাইবে। যেমন, আল্লাহ বলিতেছেন, আমরা দায়িত্ব -আমি মু‘মিন গণকে নাজাত দিয়া থাকি। (ব: কো:)
২। পয়গম্বরদিগকে এই জন্য প্রেরণ করি না যে, তোমরা যেই সমস্ত অর্থহীন মু‘জেযাহ্ প্রকাশের জন্য ফরমাইশ করিয়া থাক, তাহা তাঁহারা পূরণ করিবেন। তোমাদের এই সমস্ত অন্যায় আবদার তো হিংসা ছাড়া আর কিছুই নহে। (ব:কো:)
وَأَنذِرْ بِهِ الَّذِينَ يَخَافُونَ أَن يُحْشَرُوا إِلَىٰ رَبِّهِمْ ۙ لَيْسَ لَهُم مِّن دُونِهِ وَلِيٌّ وَلَا شَفِيعٌ لَّعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ
বাংলা অর্থ:
৫১। আর কোরআন দ্বারা এরূপ লোকদিগকে ভয় দেখান, যাহারা ইহার ভয় পোষণ করে যে, তাহাদিগকে স্বীয় প্রতিপালকের সমীপে এইরূপ অবস্থায় সমবেত করা হইবে যে, গায়রুল্লাহ হইতে কেহই তাহাদের সাহায্যকারী হইবে না এবং সুফারিশকারীও হইবে না, এই আশায় যে, তাহারা ভীত হইবে।
وَلَا تَطْرُدِ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُم بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ ۖ مَا عَلَيْكَ مِنْ حِسَابِهِم مِّن شَيْءٍ وَمَا مِنْ حِسَابِكَ عَلَيْهِم مِّن شَيْءٍ فَتَطْرُدَهُمْ فَتَكُونَ مِنَ الظَّالِمِينَ
বাংলা অর্থ:
৫২। আর তাহাদিগকে (আপনার মজলিস হইতে) বাহির করিবেন না, যাহারা প্রাতে ও সন্ধ্যাায় স্বীয় রব্বের এবাদত করে- শুধু তাঁহারাই সন্তুষ্টি কামনা করে ;তাহাদের হিসাবের কিছুই আপনার দায়িত্বে নহে, এবং আপনার হিসাব একটুও তাহাদের দায়িত্বে নহে – যদ্দরুন তাহাদিগকে বাহির করিয়া দিবেন, অন্যথায় আপনি অনাচারীদের অন্তর্ভুক্ত হইবেন।
وَكَذَٰلِكَ فَتَنَّا بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لِّيَقُولُوا أَهَـٰؤُلَاءِ مَنَّ اللَّهُ عَلَيْهِم مِّن بَيْنِنَا ۗ أَلَيْسَ اللَّهُ بِأَعْلَمَ بِالشَّاكِرِينَ
বাংলা অর্থ:
৫৩। আর এইরূপে আমি এক (দল) -কে অপর (দল) -এর দ্বারা পরীক্ষার মধ্যে ফেলিয়া রাখিয়াছি, যেন তাহারা বলে- ইহারাই নাকি? আমাদের মধ্যে যাহাদের প্রতি আল্লাহ করুণা করিয়াছেন; ইহা নয় কি যে, আল্লাহ সত্য উপলব্ধি কারীদিগকে খুব জানেন ।
إِذَا جَاءَكَ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِآيَاتِنَا فَقُلْ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ ۖ كَتَبَ رَبُّكُمْ عَلَىٰ نَفْسِهِ الرَّحْمَةَ ۖ أَنَّهُ مَنْ عَمِلَ مِنكُمْ سُوءًا بِجَهَالَةٍ ثُمَّ تَابَ مِن بَعْدِهِ وَأَصْلَحَ فَأَنَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
বাংলা অর্থ:
৫৪। আর যখন ঐ সমস্ত লোক আপনার নিকট আসে- যাহারা আমার আয়াত সমূহের উপর ঈমান রাখে, তখন এরূপ বলিয়া দিন যে, তোমাদের উপর শাস্তি রহিয়াছে, তোমাদের প্রতিপালক অনুগ্রহ করাকে নিজের জিম্মায় নিধারিত করিয়া লইয়াছেন, তোমাদের মধ্য হইতে যে -ব্যক্তি অজ্ঞতাবশত: কোন মন্দ কাজ করিয়া বসে অত:পর সে উহার পর তওবা করিয়া লয় এবং সংশোধন করিয়া লয়, তবে আল্লাহর শান এই যে-তিনি অতি ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়।
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। কতিপয় নেতৃস্থানীয় ক্বোরাইশী কাফেরগণ আসিয়া হুযূর সমীপে নিবেদন করিল, বেলাল, আম্মার এবং সালেম নিম্ন স্তরের লোক আমরা আপনার সহিত দেখা করিতে আসাকালে, তাহারা যেন আপনার মজলিসে না থাকে। কেননা, এমন হীন ও নীচ লোকদের সঙ্গে এক মজলিসে বসা আমরা আমাদের মর্যাদাহানী মনে করি। যেহেতু সামাজিক উচ্চ মর্যাদা এবং নেতৃত্ব অপেক্ষা আল্লাহর নিকট অকপট ও খাঁটি নিয়তই অধিক প্রিয় এবং এই দরিদ্র মুসলমানগণ সর্বদা খাঁটি মহব্বতের সহিত হুযূরের মজলিসে হাযির থাকিতেন, সুতরাং এই সমস্ত নেতৃস্থানীয় ক্বোরাইশী লোকদের কথায় কর্ণপাত করিতে নিষেধ করিয়া আল্লাহ এই আয়াতটি নাযিল করিয়াছেন। (আসবাবুননুযূল)
وَكَذَٰلِكَ نُفَصِّلُ الْآيَاتِ وَلِتَسْتَبِينَ سَبِيلُ الْمُجْرِمِينَ
বাংলা অর্থ:
৫৫। আর এই রূপে আমি আয়াতসমূহের বিস্তারিত বর্ণনা করিয়া থাকি, আর যেন অপরাধীদের পন্থা প্রকাশ পায়।
قُلْ إِنِّي نُهِيتُ أَنْ أَعْبُدَ الَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ ۚ قُل لَّا أَتَّبِعُ أَهْوَاءَكُمْ ۙ قَدْ ضَلَلْتُ إِذًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُهْتَدِينَ
বাংলা অর্থ:
৫৬। আপনি বলিয়া দিন, আমাকে ইহা নিষেধ করা হইয়াছে যে, উহাদের এবাদত করি-তোমরা আল্লাহকে ছাড়িয়া যাহাদের এবাদত করিতেছ; আপনি বলিয়া দিন, আমি তোমাদের মনোবৃত্তিগুলি অনুসরণ করিব না, অন্যথায় আমি তো বিপথগামী হইয়া যাইব এবং হেদায়ত প্রাপ্তদের মধ্যে থাকিব না ।
قُلْ إِنِّي عَلَىٰ بَيِّنَةٍ مِّن رَّبِّي وَكَذَّبْتُم بِهِ ۚ مَا عِندِي مَا تَسْتَعْجِلُونَ بِهِ ۚ إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ ۖ يَقُصُّ الْحَقَّ ۖ وَهُوَ خَيْرُ الْفَاصِلِينَ
বাংলা অর্থ:
৫৭। আপনি বলিয়া দিন যে, আমার নিকট তো একটি প্রমাণ রহিয়াছে আমার রব্বের পক্ষ হইতে অথচ উহাকে অসত্য বলিতেছ: তোমরা যে বিষয়ের তাকাযা করিতেছ, তাহা আমার নিকট নাই; হুকুম কাহারও নহে আল্লাহ ব্যতীত; তিনি বাস্তব কথা বর্ণনা করেন এবং তিনিই সর্বাপেক্ষা উত্তম মীমাংসাকারী।
قُل لَّوْ أَنَّ عِندِي مَا تَسْتَعْجِلُونَ بِهِ لَقُضِيَ الْأَمْرُ بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ ۗ وَاللَّهُ أَعْلَمُ بِالظَّالِمِينَ
বাংলা অর্থ:
৫৮। আপনি বলিয়া দিন, যদি আমার নিকট সেই বস্তু (আযাব) থাকিত, তোমরা যাহার তাকাযা করিতেছ, তবে আমার ও তোমাদের মধ্যকার বিষয়টি মীমাংসিত হইয়া যাইত ; আর আল্লাহ্ যালেমদিগকে খুব জানেন।
وَعِندَهُ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَا إِلَّا هُوَ ۚ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ ۚ وَمَا تَسْقُطُ مِن وَرَقَةٍ إِلَّا يَعْلَمُهَا وَلَا حَبَّةٍ فِي ظُلُمَاتِ الْأَرْضِ وَلَا رَطْبٍ وَلَا يَابِسٍ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ
বাংলা অর্থ:
৫৯। আর আল্লাহরই নিকট আছে সমস্ত গুপ্ত বস্তুর ভান্ডার, আল্লাহ্ ভিন্ন অপর কেহই উহা অবগত নহে ; এবং তিনি সমস্তই অবগত আছেন যাহাকিছু স্থলে এবং সমুদ্রে রহিয়াছে ; এবং তাহার জ্ঞাতসার ব্যতীত কোন পাতা ঝড়ে না, আর কোন বীজ যমীনের অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন আর্দ্র শুষ্ক বস্তুও পতিত হয় না , কিন্তু এই সমস্তই উজ্জ্বল কিতাবে লিপিবদ্ধ রহিয়াছে।
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। হুযূর (দ:) ‘‘সমস্ত গুপ্ত বিষয়ের ভান্ডার ” শব্দের ব্যাখ্যায় পাঁচটি বিষয় উল্লেখ করিয়াছেন। ক্বিয়ামত কখন হইবে, বৃষ্টি কখন বর্ষিবে, গর্ভিণীর পেটে কি সন্তান আছে, মানুষ আগামী কল্য কি করিবে এবং কে কোথায় মরিবে। হাদীসে আসিয়াছে যে, গায়েবী এলমের কোন কোন বিষয় আল্লাহ নবীগণকে ওহী দ্বারা এবং ওলিগণকে এলহাম ও স্বপ্ন দ্বারা জানাইয়া দেন। যেমন, নবীগণ কবরের আযাব, হাশরের আযাব, দোযখের ভয়াবহ অবস্থা এবং বেহেশতের শান্তির বিষয় যাহা গায়েবী এলমের অন্তর্ভুক্ত , পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করিয়াছেন । ঈসা(আ:) মানুষের ঘরে রক্ষিত দ্রব্যসমূহের কথা বলিয়া দিতেন। হযরত ইউসুফ (আ:) একজন কয়েদীর মুক্তি পাওয়ার এবং অপরজনের শূলী হওয়ার কথা পূর্বেই বলিয়া দিয়াছিলেন। কোন কোন ওলীরও এরূপ কারামত ছিল যে, ভবিষ্যতের কথা বলিয়া দিতেন । (ই:কা:)
وَهُوَ الَّذِي يَتَوَفَّاكُم بِاللَّيْلِ وَيَعْلَمُ مَا جَرَحْتُم بِالنَّهَارِ ثُمَّ يَبْعَثُكُمْ فِيهِ لِيُقْضَىٰ أَجَلٌ مُّسَمًّى ۖ ثُمَّ إِلَيْهِ مَرْجِعُكُمْ ثُمَّ يُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ
বাংলা অর্থ:
৬০। আর তিনি এমন যে, রাত্রিকালে তোমাদের রূহ কে এক প্রকার কবজ (অকেজো)করিয়া দেন এবং তোমরা দিবসে যাহাকিছু কর তাহাও তিনি জানেন, অত:পর দিবাভাগে তোমাদিগকে জাগ্রত করেন, যেন নির্দিষ্ট সীমাকাল পূর্ণ হইয়া যায়, অত:পর তাহারই দিকে তোমাদিগকে ফিরিতে হইবে, তৎপর জানাইয়া দিবেন, যাহাকিছু তোমরা করিতেছিলে।
وَهُوَ الْقَاهِرُ فَوْقَ عِبَادِهِ ۖ وَيُرْسِلُ عَلَيْكُمْ حَفَظَةً حَتَّىٰ إِذَا جَاءَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ تَوَفَّتْهُ رُسُلُنَا وَهُمْ لَا يُفَرِّطُونَ
বাংলা অর্থ:
৬১। আর তিনিই বান্দাদের উপর ক্ষমতাবান, পরাক্রান্ত এবং তোমাদের প্রতি রক্ষকদিগকে পাঠান ; ঐ পর্যন্ত যখন তোমাদের কাহারও মৃত্যু উপস্থিত হয়, (তখন) আমার প্রেরিত (অপর ফেরেশতা)-গণ তাহার রূহ কবয করে এবং তাহারা একটুও ক্রটি করে না।
ثُمَّ رُدُّوا إِلَى اللَّهِ مَوْلَاهُمُ الْحَقِّ ۚ أَلَا لَهُ الْحُكْمُ وَهُوَ أَسْرَعُ الْحَاسِبِينَ
বাংলা অর্থ:
৬২। ইত:পর সকলেই মালিকে বরহক্ক সমীপে নীত হইবে ; ভালরূপে শুনিয়া লও, মীমাংসার অধিকার কেবল আল্লাহরই । এবং তিনি সত্বরই হিসাব লইবেন।
قُلْ مَن يُنَجِّيكُم مِّن ظُلُمَاتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ تَدْعُونَهُ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً لَّئِنْ أَنجَانَا مِنْ هَـٰذِهِ لَنَكُونَنَّ مِنَ الشَّاكِرِينَ
বাংলা অর্থ:
৬৩। আপনি বলুন, সে ব্যক্তি কে ? যিনি তোমাদিগকে স্থলভাগের ও সমুদ্রের অন্ধকার হইতে এইরূপ অবস্থায় মুক্তি প্রদান করেন, যখন তোমরা তাঁহাকে মিনতি সহকারে ও চুপি চুপি ডাকিতে থাক, -যদি আপনি আমাদিগকে ইহা হইতে মুক্তি প্রদান করেন, তবে নিশ্চয়ই আমরা সত্য উপলব্ধিকারীদের অন্তর্ভুক্ত হইয়া যাইব।
قُلِ اللَّهُ يُنَجِّيكُم مِّنْهَا وَمِن كُلِّ كَرْبٍ ثُمَّ أَنتُمْ تُشْرِكُونَ
বাংলা অর্থ:
৬৪। আপনি বলিয়া দিন, আল্লাহ্ই তোমাদিগকে উহা হইতে মুক্তি প্রাদান করেন এবং সমস্ত দু:খ হইতেও , তথাপিও তোমরা শিরক করিতে থাক ।
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। এই নিদ্রা ও জাগরণের প্রতি লক্ষ্য করিলে মানুষ সহজে বুঝিতে পারে যে, পরকালের পুনরুস্থান মোটেই অসম্ভব নহে। (ব:কো:)
২। অর্থাৎ রক্ষণাবেক্ষণকারী ফেরেশতাগণকে । তাহারা সারা জীবন তোমাদের যাবতীয় কার্যকলাপ লিপিবদ্ধ করিতে থাকেন এবং তোমাদের প্রাণের রক্ষণাবেক্ষণ ও করেন। (ব:কো:)
৩। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে যে, রূহ কবয করিবার সময় কিছু সংখ্যক ফেরেশতা আয্রাঈল(আ:) -এর সাহায্যকারী থাকেন। সাতজন আযাবের ফেরেশতা এবং সাতজন রহমতের ফেরেশতা । আযরাঈল (আ:) রূহ করয করিয়া মু‘মিনের রূহ রহমতের ফেরেশতার হাতে এবং কাফেরের রূহ আযাবের ফেরেশতার হাতে দিয়া দেন। (মু:কো:)
قُلْ هُوَ الْقَادِرُ عَلَىٰ أَن يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عَذَابًا مِّن فَوْقِكُمْ أَوْ مِن تَحْتِ أَرْجُلِكُمْ أَوْ يَلْبِسَكُمْ شِيَعًا وَيُذِيقَ بَعْضَكُم بَأْسَ بَعْضٍ ۗ انظُرْ كَيْفَ نُصَرِّفُ الْآيَاتِ لَعَلَّهُمْ يَفْقَهُونَ
বাংলা অর্থ:
৬৫। আপনি বলিয়া দিন, ইহাতেও তিনিই ক্ষমতাবান যে, তোমাদের প্রতি কোন আযাব তোমাদের ঊধ্বদেশ হইতে প্রেরণ করেন কিংবা তোমাদের পদতলস্থ (যমীন) হইতে কিংবা তোমাদিগকে দলে দলে বিচ্ছিন্ন করিয়া সকলকে যুদ্ধোন্মাদ করিয়া দেন এবং তোমাদের এককে অপরের যুদ্ধের স্বাদ গ্রহণ করান ; আপনি দেখুন তো ! আমি কিরূপে প্রমাণসমূহকে বিভিন্ন ধরনে বর্ণনা করিতেছি, হয়ত তাহারা বুঝিয়া লইবে।
وَكَذَّبَ بِهِ قَوْمُكَ وَهُوَ الْحَقُّ ۚ قُل لَّسْتُ عَلَيْكُم بِوَكِيلٍ
বাংলা অর্থ:
৬৬। আর আপনার কাওম ইহাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করিতেছে, অথচ উহা বরহক্ক ; আপনি বলিয়া দিন, আমি তোমাদের উপর উকীলরূপে নিযুক্ত হই নাই।
لِّكُلِّ نَبَإٍ مُّسْتَقَرٌّ ۚ وَسَوْفَ تَعْلَمُونَ
বাংলা অর্থ:
৬৭। প্রত্যেক সংবাদ সংঘটিত হওয়ার একটা (নির্দিষ্ট) সময় আছে এবেং অচিরেই তোমরা জানিতে পারিবে।
وَإِذَا رَأَيْتَ الَّذِينَ يَخُوضُونَ فِي آيَاتِنَا فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ حَتَّىٰ يَخُوضُوا فِي حَدِيثٍ غَيْرِهِ ۚ وَإِمَّا يُنسِيَنَّكَ الشَّيْطَانُ فَلَا تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرَىٰ مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ
বাংলা অর্থ:
৬৮। আর যখন তুমি তাহাদিগকে দেখিতে পাও যাহারা আমার আয়াতে দোষান্বেষণ করে, তখন তাহাদিগ হইতে দূরে থাক, যে পর্যন্ত না তাহারা অন্য আলোচনায় প্রবৃত্ত হয় ; আর যদি শয়তান তোমাকে ভুলাইয়া দেয়, তবে স্মরণ হওয়ার পর পুনরায় এমন অনাচারীদের সঙ্গে বসিও না ।
وَمَا عَلَى الَّذِينَ يَتَّقُونَ مِنْ حِسَابِهِم مِّن شَيْءٍ وَلَـٰكِن ذِكْرَىٰ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ
বাংলা অর্থ:
৬৯। আর যাহারা মুত্তাক্কী তাহাদের উপর উহাদের হিসাবের কোন প্রতিক্রিয়া হইবে না, কিন্তু তাহাদের দায়িত্ব হইল সদুপদেশ দেওয়া, হয়ত তাহারাও সংযমী হইবে।
وَذَرِ الَّذِينَ اتَّخَذُوا دِينَهُمْ لَعِبًا وَلَهْوًا وَغَرَّتْهُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا ۚ وَذَكِّرْ بِهِ أَن تُبْسَلَ نَفْسٌ بِمَا كَسَبَتْ لَيْسَ لَهَا مِن دُونِ اللَّهِ وَلِيٌّ وَلَا شَفِيعٌ وَإِن تَعْدِلْ كُلَّ عَدْلٍ لَّا يُؤْخَذْ مِنْهَا ۗ أُولَـٰئِكَ الَّذِينَ أُبْسِلُوا بِمَا كَسَبُوا ۖ لَهُمْ شَرَابٌ مِّنْ حَمِيمٍ وَعَذَابٌ أَلِيمٌ بِمَا كَانُوا يَكْفُرُونَ
বাংলা অর্থ:
৭০। আর এইরূপ লোকদিগ হইতে সম্পূর্ণ দূরে থাক যাহারা নিজেদের ধর্মকে খেল ও তামাশা বানাইয়া রাখিয়াছে, অথচ পার্থিব জীবনই তাহাদিগকে ধোকায় ফেলিয়া রাখিয়াছে , আর এই কোরআন দ্বারা উপদেশ ও প্রদান করিতে থাক , যেন কেহ স্বীয় কৃতকর্মের দরুন (আযাবে ) এমনিভাবে জড়িত হইয়া না পড়ে যে- না কোন গায়রুল্লাহ্ তাহার সাহায্যকারী হইবে আর না সুফারিশকারী হইবে,আর অবস্থা এইরূপ হইবে- যদি সে বিশ্বের সকল বিনিময়ও প্রদান করে তথাপি তাহার নিকট হইতে উহা গ্রহণ করা হইবে না ; উহারা এইরূপ যে, স্বীয় কৃতকর্মের দরুন (আযাবে) লিপ্ত হইয়া পড়িয়াছে, তাহাদিগের পান করার জন্য অতি উত্তপ্ত পানি থাকিবে ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হইবে স্বীয় কুফরের দরুন।
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। অর্থাৎ তোমাদের শিরকের কারণে তোমাদের প্রতি যেই আযাব আসে, উহার কোনটি উপরের দিক হইতে অ সে, যেমন, প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টি প্রস্তর বৃষ্টি অগ্নি-বৃষ্টি প্রভৃতি। আবার কোন কোনটি তোমাদের পায়ের নিম্নবর্তী ভূমি হইতে আসে, যেমন, ভূমিকম্প , ভূমি ধ্বসাইয়া বা উল্টাইয়া দেওয়া ইত্যাদি। (বঃকোঃ)
২। কাফেরগণ মুসলমানদের মজলিসে বসিয়া কোরআন ও ইসলামের সমালোচনা ও বিদ্রুপ করিয়া থাকে। হুযূর (দ:) বলিলেন, তাহাদিগকে এইরূপ করিতে দেখিলে তোমরা সেই মজলিস হইতে উঠিযা যাইও। সাহবাগণ বলিলেন, কা‘বার তাওয়াফ এবং মসজিদে হারামে অবস্থান করা আমাদের যরূরী কাজ। তাহারা কোরআনের বিদ্রুপ করিলেও আমরা এই সমস্ত এবাদত ত্যাগ করিতে পারি না । আমরা কি ইহাতে গুনাহগার হইব? তখন এই আয়াতগুলি নাযিল হয় । (মু:কো:)
قُلْ أَنَدْعُو مِن دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنفَعُنَا وَلَا يَضُرُّنَا وَنُرَدُّ عَلَىٰ أَعْقَابِنَا بَعْدَ إِذْ هَدَانَا اللَّهُ كَالَّذِي اسْتَهْوَتْهُ الشَّيَاطِينُ فِي الْأَرْضِ حَيْرَانَ لَهُ أَصْحَابٌ يَدْعُونَهُ إِلَى الْهُدَى ائْتِنَا ۗ قُلْ إِنَّ هُدَى اللَّهِ هُوَ الْهُدَىٰ ۖ وَأُمِرْنَا لِنُسْلِمَ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ
বাংলা অর্থ:
৭১। আপনি বলিয়া দিন, আমি কি আল্লাহকে ছাড়িয়া এমন বস্তুর এবাদত করিব- যে আমাদের উপকারও করিতে পারে না এবং আমাদের অপকাও করিতে পারে না ।ঐ ব্যক্তির ন্যায় শয়তানরা যাহাকে প্রান্তরে পথহারা করিয়া দেয় , আর সে দিশাহারা অবস্থায় ঘুরিতে থাকে, (অথচ) তাহার কতিফয় সঙ্গীও ছিল যাহারা তাহাকে সীঠক পথের দিকে আহবান করিতেছে যে, – আমাদের দিকে আস; আপনি বলিয়া দিন , নিশ্চয় সরল পথ শুধু আল্লাহরই পথ ; আর আমরা আদিষ্ট হইয়াছি যে, আমরা বিশ্বপালকের পূর্ণ অনুগত হই।
وَأَنْ أَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَاتَّقُوهُ ۚ وَهُوَ الَّذِي إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ
বাংলা অর্থ:
৭২। আর ইহাও নামাযের পাবন্দী কর এবং তাঁহাকে ভয় কর ; আর তিনিই (আল্লাহ) যাঁহার সমীপে তোমাদের সকলকে একত্রিত করা হইবে।
وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ ۖ وَيَوْمَ يَقُولُ كُن فَيَكُونُ ۚ قَوْلُهُ الْحَقُّ ۚ وَلَهُ الْمُلْكُ يَوْمَ يُنفَخُ فِي الصُّورِ ۚ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ ۚ وَهُوَ الْحَكِيمُ الْخَبِيرُ
বাংলা অর্থ:
৭৩। আর তিনিই (সেই আল্লাহ)যিনি আসমানসমূহ এবং যমীনকে উপকারার্থে সৃষ্টি করিয়াছেন ; আর যে – দিন আল্লাহ এতটুকু বলিবেন যে, হইয়া যাও, অমনি উহা হইয়া যাইবে; তাঁহার বাণী সক্রিয় ; আর যে – দিন সিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া হইবে, সর্বময় কর্তৃত্ব একমাত্র তাঁহারই হইবে ; এবং তিনি গোপন ও প্রকাশ্য বিষয়সমূহ পরিজ্ঞাত; এবং তিনিই অতীব প্রজ্ঞাময়, সর্ববিদিত।
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। অর্থাৎ, উপকার বা অপকার করিতে সক্ষম হইবে না । ফলকথা, আমি কি মিথ্যা দেবতাদের উপাসনা করিবে ? কেননা, এই সমস্ত দেবতাদের কোন কোনটির তো মোটেই কোন ক্ষমতা নাই । যেমন, প্রস্তর মূর্তি । আর কোন কোনটির কিছু কিছু ক্ষমতা আছে বটে ; যেমন, মানুষ । কিন্তু এই ক্ষমতা নিজস্ব নহে ; বরং আল্লাহ তা‘আলার প্রদত্ত। অথচ মা‘বুদের মধ্যে অন্তত:পক্ষে অক্ষুগতদের উপকার এবং অবাধ্যদের অপকার করার ক্ষমতা থাকা আবশ্যক। তবে কি আমরা এমন অক্ষমের এবাদত করিব ? (ব:কো:)
২। কিন্তু সে যেহেতু অস্থিরতার চরম সীমায় যাইয়া পৌছিয়াছে, অতএব, সে এই আহবানের সারমর্ম বুঝিতে পারে না। তাহাদের আহবানে সাড়া দেয় না । (ব: কো:)
৩। আসমান ও যমীনের সৃষ্টি দ্বারা স্রষ্টার অস্তিত্ব এবং একত্ববাদের উপর প্রমাণ পাওয়া যায় । (ব: কো:)
وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ لِأَبِيهِ آزَرَ أَتَتَّخِذُ أَصْنَامًا آلِهَةً ۖ إِنِّي أَرَاكَ وَقَوْمَكَ فِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ
বাংলা অর্থ:
৭৪। আর সেই সময়টুকাও স্মরণীয় যখন ইবরাহীম স্বীয়য় পিতা আযরকে বলিলেন, তুমি কি মূতিগুলিকে মা‘বুদ সাব্যস্ত করিতেছে ? নিশ্চয় আমি তোমাকে ও তোমার গোটা সম্প্রদায়কে স্পষ্ট ভ্রান্তির মধ্যে দেখিতেছি।
وَكَذَٰلِكَ نُرِي إِبْرَاهِيمَ مَلَكُوتَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلِيَكُونَ مِنَ الْمُوقِنِينَ
বাংলা অর্থ:
৭৫। আর আমি এইরূপেই ইব্রাহীকে আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টিসমূহ প্রদর্শন করিয়াছি, যেন তিনি আরেফ হন, আর যেন পূর্ণ প্রত্যয়শীলদের অন্তর্ভুক্ত হইয়া যান।
فَلَمَّا جَنَّ عَلَيْهِ اللَّيْلُ رَأَىٰ كَوْكَبًا ۖ قَالَ هَـٰذَا رَبِّي ۖ فَلَمَّا أَفَلَ قَالَ لَا أُحِبُّ الْآفِلِينَ
বাংলা অর্থ:
৭৬। অত:পর যখন রাত্রির অন্ধকার তাঁহাকে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলিল , তখন তিনি একটি তারকা দেখিতে পাইলেন- বলিলেন, ( তোমাদের মতে) ইহা আমার প্রতিপালক, অনন্তর যখন উহা অস্তমিত হইল, তখন তিনি বলিলেন, আমি অস্তগামীদিগকে ভালবাসি না।
فَلَمَّا رَأَى الْقَمَرَ بَازِغًا قَالَ هَـٰذَا رَبِّي ۖ فَلَمَّا أَفَلَ قَالَ لَئِن لَّمْ يَهْدِنِي رَبِّي لَأَكُونَنَّ مِنَ الْقَوْمِ الضَّالِّينَ
বাংলা অর্থ:
৭৭। অত:পর যখন দেখিলেন চন্দ্রকে দীপ্যমান, তখন বলিনেন, ইহা আমার প্রতিপালক, অনন্তর যখন ইহা অস্তমিত হইল, তখন তিনি বলিলেন, যদি আমাকে আমার প্রতিপালক পথপ্রদর্শন করিতে না থাকেন, তাহলে আমিও পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হইয়া যাইব।
فَلَمَّا رَأَى الشَّمْسَ بَازِغَةً قَالَ هَـٰذَا رَبِّي هَـٰذَا أَكْبَرُ ۖ فَلَمَّا أَفَلَتْ قَالَ يَا قَوْمِ إِنِّي بَرِيءٌ مِّمَّا تُشْرِكُونَ
বাংলা অর্থ:
৭৮। অত:পর যখন সূর্যকে দেখিলেন প্রদীপ্ত অবস্থায় , বলিলেন , ইহা আমার প্রতিপালক, ইহা সর্বাপেক্ষা বৃহৎ , অনন্তর যখন ইহা অস্তমিত হইল , তিনি বলিলেন, হে আমার সম্প্রদায় ! নিশ্চয় আমি তোমাদের অংশীবাদের প্রতি অসন্তুষ্ট।
إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ حَنِيفًا ۖ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ
বাংলা অর্থ:
৭৯। আমি একাগ্রতার সহিত স্বীয় মুখমন্ডল তাঁহারই দিকে ফিরাইতেছি যিনি আসমানসমূহ ও যমীনকে সৃষ্টি করিয়াছেন, এবং আমি মুশরেকদিগের অন্তর্ভুক্ত নহি।
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। আল্লাহ্ ইব্রাহীম (আ:) -কে একটি উচ্চ পাথরের উপর দাঁড় করাইয়া আরশের কার্ণিশ হইতে তাহতাছ্ছারা পর্যন্ত সমস্ত আসমান যমীন দেখাইলেন। ইহা দেখিয়া ইব্রাহীম (আ:) আল্লাহর অসীম ক্ষমতার বিশ্বাস স্থাপন করিলেন। (মু:কো:)
২। হযরত ইব্রাহীম (আ:) স্বীয় ক্বওমকে বুঝাইবার জন্য তাহাদেরই আক্বীদা মত যুক্তি দ্বারা তাহাদের কে বুঝইতে চেষ্টা করিতে ছিলেন । বলিলেন , আচ্ছা, মানিয়া নিলাম নক্ষত্র, চন্দ্র ও সূর্যই আমার এবং তোমাদের খোদা। কিন্তু যখন দেখা গেল উহারা প্রত্যেকে আলোর পর অন্ধকারে ডুবিয়া যায় এবং পরিবর্তনশীল , তখন বুঝা গেল যে, ইহারা খোদা হইতে পারে না । কেননা, খোদার মধ্যে স্থায়িত্ব নিশ্চয়ই থাকিতে হইবে। অথচ অস্তমিত হইবে। নিছক অক্ষমতা ও পরিবর্তনশীলতা । কাজেই ইহারা খোদা নয় । (ব:কো:)
وَحَاجَّهُ قَوْمُهُ ۚ قَالَ أَتُحَاجُّونِّي فِي اللَّهِ وَقَدْ هَدَانِ ۚ وَلَا أَخَافُ مَا تُشْرِكُونَ بِهِ إِلَّا أَن يَشَاءَ رَبِّي شَيْئًا ۗ وَسِعَ رَبِّي كُلَّ شَيْءٍ عِلْمًا ۗ أَفَلَا تَتَذَكَّرُونَ
বাংলা অর্থ:
৮০। আর তাঁহার সম্প্রদায় তাঁহার সহিত তর্ক জুড়িয়া দিল ; তিনি বলিলেন, তোমরা কি আল্লাহ্ সম্বন্ধে আমার সহিত তর্ক করিতেছ ? অথচ তিনি আমাকে পথ দেখাইয়াছেন ; আর তোমরা আল্লাহর সহিত যেগুলিকে শরীক স্থির করিতেছ, আমি সেগুলিকে ভয় করি না। হ্যাঁ , তবে যদি আমার প্রতিপালকই কোনকিছু ইচ্ছা করেন; আমার পরওয়ারদেগার প্রত্যেক বস্তুকে স্বীয় জ্ঞানের মধ্যে বেষ্টন করিয়া আছেন। তবুও কি তোমরা খেয়াল কর না।
وَكَيْفَ أَخَافُ مَا أَشْرَكْتُمْ وَلَا تَخَافُونَ أَنَّكُمْ أَشْرَكْتُم بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ عَلَيْكُمْ سُلْطَانًا ۚ فَأَيُّ الْفَرِيقَيْنِ أَحَقُّ بِالْأَمْنِ ۖ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
বাংলা অর্থ:
৮১। আর আমি এগুলিকে ভয় করিব, যেগুলিকে তোমরা শরীক সাব্যস্ত করিয়াছ , অথচ এ বিষয়ে কোন ভয় করিতেছ না যে , আল্লাহর সহিত এমন বস্তুকে শরীক করিয়াছ যেগুলি সম্বন্ধে তিনি তোমাদের প্রতি কোন প্রমাণ অবতারণ করেন নাই। ; সুতরাং এতদুভয় দলের মধ্যে নিরাপত্তার অধিকতর হক্কদার কাহারা ? যদি তোমরা খরব রাখ।
الَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُم بِظُلْمٍ أُولَـٰئِكَ لَهُمُ الْأَمْنُ وَهُم مُّهْتَدُونَ
বাংলা অর্থ:
৮২। যাহারা ঈমান আনিয়াছে এবং নিজেদের ঈমানকে শিরকের সহিত মিশ্রিত করে না , এমন লোকদের জন্যই নিরাপত্তা রহিয়াছে এবং ইহারাই সঠিক পথের যাত্রী।
وَتِلْكَ حُجَّتُنَا آتَيْنَاهَا إِبْرَاهِيمَ عَلَىٰ قَوْمِهِ ۚ نَرْفَعُ دَرَجَاتٍ مَّن نَّشَاءُ ۗ إِنَّ رَبَّكَ حَكِيمٌ عَلِيمٌ
বাংলা অর্থ:
৮৩। আর ইহা আমার (প্রদত্ত) প্রমাণ ছিল, ইহা আমি ইবরাহীমকে তাঁহার স্বগোত্রের মুকাবেলায় দিয়াছিলাম ; আমি যাহাকে ইচ্ছা বিবিধ মর্যাদায় সমুন্নত করি ; নিশ্চয় আপনার রব্ব প্রজ্ঞাময়, মহাজ্ঞানী।
وَوَهَبْنَا لَهُ إِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ ۚ كُلًّا هَدَيْنَا ۚ وَنُوحًا هَدَيْنَا مِن قَبْلُ ۖ وَمِن ذُرِّيَّتِهِ دَاوُودَ وَسُلَيْمَانَ وَأَيُّوبَ وَيُوسُفَ وَمُوسَىٰ وَهَارُونَ ۚ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ
বাংলা অর্থ:
৮৪। আর আমি তাঁহাকে দান করিয়াছি ইসহাক ও ইয়াকুব; এবং আমি প্রত্যেককে হেদায়ত করিয়াছি, এবং (ইবরাহীমের) পূর্বে আমি নূহ কে হেদায়ত করিয়াছিলাম এবং তাঁহার সন্তানগণের মধ্যে হইতে ; দাঊদকে এবং সুলায়মানকে এবং আইয়ূবকে এবং ইউসূফকে এবং মূসাকে এবং হারূনকেও ; এবং এইরূপে আমি নেক্কারদেরকে বিনিময় প্রদান করিয়া থাকি।
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। মুশরিকেরা দেবতাদের ভয় দেখাইল , ইব্রাহীম (আ:) বলিলেন, ইহারা আমার কোন ক্ষতি করিতে পারিবে বলিয়া আমি ভয় করি না । কেননা, ইহাদের কোন ক্ষমতাই নাই। কোন কোনটির কিছু কিছু ক্ষমতা থাকিলেও তাহা নিজস্ব নহে ; বরং খোদার দেওয়া হাঁ, তবে যদি আমার প্রভুই কোন ক্ষতি করার ইচ্ছা করেন, তাহা তো হইয়া যাইবে। ইহাতে তো তোমাদের বাতেল মা‘বুদের ক্ষমতা প্রমাণিত হয় না । অতএব, ইহাদিগতে ভয় করার আবশ্যকতাও নাই। বরং দুই কারণে তোমাদেরই তো ভীত হওয়া উচিত । প্রথমত:ভয়ের প্রধান কারণ, তোমরা শিরক করিয়াছ। ইহার জন্য ভীষণ শাস্তি নির্ধারিত রহিয়াছে। দ্বিতীয়ত: তোমরা জানিতে পারিয়াছ যে, আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ ও সর্বক্ষম। মোটকথা , ভয় করা উচিত ছিল তোমাদের। তাহা না করিয়া উল্টা আমাকে ভয় দেখাইতেছ।(ব:কো:)
وَزَكَرِيَّا وَيَحْيَىٰ وَعِيسَىٰ وَإِلْيَاسَ ۖ كُلٌّ مِّنَ الصَّالِحِينَ
বাংলা অর্থ:
৮৫। আরও যাকারিয়াকে এবং ইয়াহউয়াকে এবং ঈসাকে এবং ইলইয়াসকে হেদায়ত করিয়াছি) ; সকলেই ছালেহীনদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
وَإِسْمَاعِيلَ وَالْيَسَعَ وَيُونُسَ وَلُوطًا ۚ وَكُلًّا فَضَّلْنَا عَلَى الْعَالَمِينَ
বাংলা অর্থ:
৮৬। আরও ইসমাঈলকে এবং আলইয়াসা‘কে এবং উউনুসকে এবং লূতকে (হেদায়ত করিয়াছি) ; আর আমি প্রত্যেককে মর্যাদা দান করিয়াছি বিশ্ববাসীর উপর।
وَمِنْ آبَائِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْ وَإِخْوَانِهِمْ ۖ وَاجْتَبَيْنَاهُمْ وَهَدَيْنَاهُمْ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
বাংলা অর্থ:
৮৭। আরও তাঁহাদের পিতৃবর্গের কতিপয় এবং সন্ততিবর্গের কতিপয় এবং ভ্রাতৃবর্গের কতিপয়কে ও আর আমি তাঁহাদিগকে মকবূল করিয়াছি এবং আমি তাঁহাদিগকে সরল পথ প্রদর্শন করিয়াছি।
ذَٰلِكَ هُدَى اللَّهِ يَهْدِي بِهِ مَن يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ ۚ وَلَوْ أَشْرَكُوا لَحَبِطَ عَنْهُم مَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ
বাংলা অর্থ:
৮৮। আল্লাহর হেদায়েত তাহা ইহাই (অর্থাৎ এই ধর্ম) নিজ বান্দাগণের মধ্যে হইতে যাহাকে ইচ্ছা উহার হেদায়ত করেন ; আর যদি ধরিয়া লওয়া হয় যে, তাঁহারা ও শিরক করিতেন, তবে তাঁহারা যে আমল করিতেন উহা তাগাদিগ হইতে সমস্তই পন্ড হইয়া যাইত।
أُولَـٰئِكَ الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ ۚ فَإِن يَكْفُرْ بِهَا هَـٰؤُلَاءِ فَقَدْ وَكَّلْنَا بِهَا قَوْمًا لَّيْسُوا بِهَا بِكَافِرِينَ
বাংলা অর্থ:
৮৯। তাঁহারা এমন ছিলেন যে , আমি তাঁহাদিগকে কিতাব এবং হেকমত এবং নুবুওয়াত দান করিয়াছিলাম, সুতরাং যদি ইহারা (আপনার) নুবুওয়াতকে অস্বীকার করে, তবে আমি ইহার জন্য এমন বহু লোক নির্ধারণ করিয়া দিয়াছি যাহারা ইহার প্রত্যাখ্যানকারী নহে।
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। অর্থাৎ ইহারা যদি আল্লাহর এবাদতে কাহাকেও শরীক করিত, তবে ইহাদের যাবতীয় এবাদত বিফল হইয়া যাইত। কেননা, শিরকের সহিত কোন এবাদতই কবূল হয় না , তাহা যত ভাল কাজই হউক না কেন। ইহা হইতেছে শিরকের উপর কঠোর শাস্তির ধমক। (হা:মু‘জেযনমা)
২। মক্কার ক্বোরাইশী কাফেরেরা কিংবা সমগ্র বিশ্বের কেহ যদি এই কথাগুলি অমান্য করে, তবে আমি মুহাজির ও আনছারদের একদল লোক কায়েম করিয়াছি, তাহারা এবং তাহাদের অনুবতী গণ ক্বিয়ামত পর্যন্ত এই কথাগুলি অমান্য করিবে না (ব:কো:)
৩। হেদায়েতের অর্থ তাওহীদ । কেহ কেহ বলিয়াছেন, ইহাতে পূর্ববর্তী সকল নবীর গুণাবলীর প্রতি লক্ষ্য করিতে ইঙ্গিত করা হইয়াছে। অর্থাৎ তাহাদের মধ্যে পৃথক পৃথক ভাবে যেই সমস্ত সৎ গুণাবলী রহিয়াছে , তৎসমুদয় আপনার মধ্যে একত্রিত করিয়া লউন। (তাইসীরুল বয়ান)
أُولَـٰئِكَ الَّذِينَ هَدَى اللَّهُ ۖ فَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهْ ۗ قُل لَّا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا ۖ إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرَىٰ لِلْعَالَمِينَ
বাংলা অর্থ:
৯০। ইহারা এইরূপ ছিলেন, যাঁহাদিগকে আল্লাহ তা‘আলা হেদায়ত করিয়াছিলেন সুতরাং আপনিও তাঁহাদের পথ অনুসরণ করুন; আপনি বলিয়া দিন, আমি ইহার জন্য তোমাদের নিকট কোন বিনিময় চাহি না; ইহা তো শুধু বিশ্ববাসীদের জন্য একটি উপদেশ মাত্র।
وَمَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ إِذْ قَالُوا مَا أَنزَلَ اللَّهُ عَلَىٰ بَشَرٍ مِّن شَيْءٍ ۗ قُلْ مَنْ أَنزَلَ الْكِتَابَ الَّذِي جَاءَ بِهِ مُوسَىٰ نُورًا وَهُدًى لِّلنَّاسِ ۖ تَجْعَلُونَهُ قَرَاطِيسَ تُبْدُونَهَا وَتُخْفُونَ كَثِيرًا ۖ وَعُلِّمْتُم مَّا لَمْ تَعْلَمُوا أَنتُمْ وَلَا آبَاؤُكُمْ ۖ قُلِ اللَّهُ ۖ ثُمَّ ذَرْهُمْ فِي خَوْضِهِمْ يَلْعَبُونَ
বাংলা অর্থ:
৯১। আর ইহারা আল্লাহ তা‘আলার মর্যাদা সেরূপভাবে উপলব্ধি করে নাই। যে রূপে উপলব্ধি করা কর্তব্য ছিল, যখন তাহারা এইরূপ বলিয়া ফেলিল যে-আল্লাহ কোন মানুষের প্রতি কোন বস্তুই নাযিল করেন নাই। আপনি বলুন; সেই কিতাবটি কে নাযিল করিয়াছে ? যাহা মূসা আনয়ন করিয়াছিলেন- যাহার অবস্থা এই যে, উহা নূর এবং মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক, যাহাকে তোমরা বিভিন্ন পত্রে রাখিয়াছ তাহা (-র কিছু) প্রকাশ করিয়া থাক এবং অনেক বিষয় গোপন কর , এবং তোমাদিগকে এমন অনেক বিষয় শিক্ষা দেওয়া হইয়াছে, যাহা তোমরা ও জানিতে না এবং তোমাদের পূর্ব পুরুষরাও না ; আপনি বলিয়া দিন, আল্লাহ নাযিল করিয়াছেন, অত:পর তাহাদিগকে তাহাদের নিজ নিজ অনর্থক কর্মে লিপ্ত থাকিতে দিন।
وَهَـٰذَا كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ مُّصَدِّقُ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَلِتُنذِرَ أُمَّ الْقُرَىٰ وَمَنْ حَوْلَهَا ۚ وَالَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ يُؤْمِنُونَ بِهِ ۖ وَهُمْ عَلَىٰ صَلَاتِهِمْ يُحَافِظُونَ
বাংলা অর্থ:
৯২। আর ইহাও এমনই কিতাব যাহা নাযিল করিয়াছি- যাহা অতিশয় বরকতবিশিষ্ট (এবং) স্বীয় পূর্ববর্তী কিতাব সমূহের সত্যতা প্রমাণকারী , আর এই জন্য যে , আপনি ভয় প্রদর্শন করেন মক্কাবাসী ও তৎপার্শ্ববর্তী লোকদিগকে ; আর যাহারা আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস রাখে তাহারাই ইহার প্রতি ঈমান আনে এবং তাহারা নিজেদের নামাযে নিরবিচ্ছিন্নতা রক্ষা করে।
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। মালেক ইবনে সাইফ নামে একজন ইহুদী একদা রসূলুল্লাহর খেদমতে উপস্থিত হইয়া ধর্ম বিষয়ক আলোচনা প্রসঙ্গে বলিয়া ফেলিল যে, কোন মানুষের উপরই আল্লাহ কোন কিতাব নাযিল করেন নাই। অন্য এক রেওয়ায়েত মতে ইহুদী এইরূপ বলিয়াছিল যে, ‘‘আল্লাহর শপথ আকাশ হইতে আল্লাহ তা‘আলা কোন কিতাব নাযিল করেন নাই। ”তখন এই আয়াতটি নাযিল হয় । (লু: নু:)
২। মোটকথা, তাহারা নিজেদের মতে স্বার্থনুসারে তাওরাতের বিষয়গুলিকে বিভিন্নভাগে বিভক্ত করিয়া রাখিত এবং তন্মাধ্যে কোন কোন বিষয়কে যেমন, হযরত মুহাম্মদ (দ:) এর সম্বন্ধীয় বর্ণনা এইরূপে গোপন করিত যে, উহার অন্যরূপ ব্যাখ্যা করিত। (ব:কো:)
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أَوْ قَالَ أُوحِيَ إِلَيَّ وَلَمْ يُوحَ إِلَيْهِ شَيْءٌ وَمَن قَالَ سَأُنزِلُ مِثْلَ مَا أَنزَلَ اللَّهُ ۗ وَلَوْ تَرَىٰ إِذِ الظَّالِمُونَ فِي غَمَرَاتِ الْمَوْتِ وَالْمَلَائِكَةُ بَاسِطُو أَيْدِيهِمْ أَخْرِجُوا أَنفُسَكُمُ ۖ الْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ الْهُونِ بِمَا كُنتُمْ تَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ غَيْرَ الْحَقِّ وَكُنتُمْ عَنْ آيَاتِهِ تَسْتَكْبِرُونَ
বাংলা অর্থ:
৯৩। আর সেই ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক যালেম কে হইবে, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে ? অথবা এইরূপ বলে যে, আমার নিকট ওহী আসে, অথচ তাহার নিকট কোন বিষয়েই ওহী আসে নাই,আর যে ব্যক্তি এইরূপ বলে যে, যে রূপ কালাম আল্লাহ নাযিল করিয়াছেন তদ্রুপ কালাম আমিও আনয়ন করি ; আর যদি আপনি সেই সময়ে দেখেন যখন এই যালেমরা মৃত্যু-যন্ত্রণায় (অভিভূত) হইবে এবং ফেরেশতাগণ স্বীয় হস্ত প্রসারিত করিতে থাকবে, (এবং বলিবে) নিজেদের প্রাণগুলি বাহির কর ; আজ তোমাদিগকে অবমাননাকর শাস্তি দেওয়া হইবে- এই কারণে যে, তোমরা আল্লাহর প্রতি অসত্য বলিতে এবং তোমরা আল্লাহর আয়াতসমূহ (কবূল করা) হইতে অহংকার করিতে।
وَلَقَدْ جِئْتُمُونَا فُرَادَىٰ كَمَا خَلَقْنَاكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَتَرَكْتُم مَّا خَوَّلْنَاكُمْ وَرَاءَ ظُهُورِكُمْ ۖ وَمَا نَرَىٰ مَعَكُمْ شُفَعَاءَكُمُ الَّذِينَ زَعَمْتُمْ أَنَّهُمْ فِيكُمْ شُرَكَاءُ ۚ لَقَد تَّقَطَّعَ بَيْنَكُمْ وَضَلَّ عَنكُم مَّا كُنتُمْ تَزْعُمُونَ
বাংলা অর্থ:
৯৪। আর তোমরা আমার নিকট একক এককভাবে আসিয়াছ, যেভাবে আমি প্রথমবার তোমাদিগকে সৃষ্টি করিয়াছিলাম, আর যাহাকিছু আমি তোমাদিগকে দিয়াছিলাম তাহা নিজেদের পশ্চাতেই ছাড়িয়া আসিয়াছ, আর আমি তো তোমাদের সঙ্গে তোমাদের সেই সুফারিশ কারীদিগকে দেখিতেছি না যাহাদের সম্বন্ধে তোমরা দাবী করিতে যে, তাহারা তোমাদের কাজে কর্মে (আমার) শরীক; বাস্তবিকই তোমাদের পরস্পরের সম্পর্ক তো বিচ্ছিন্ন হইয়া গিয়াছে এবং তোমাদের সে সমস্ত দাবী তোমাদিগ হইতে ব্যর্থ হইয়া গিয়াছে।
إِنَّ اللَّهَ فَالِقُ الْحَبِّ وَالنَّوَىٰ ۖ يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَمُخْرِجُ الْمَيِّتِ مِنَ الْحَيِّ ۚ ذَٰلِكُمُ اللَّهُ ۖ فَأَنَّىٰ تُؤْفَكُونَ
বাংলা অর্থ:
৯৫। নি:সন্দেহে আল্লাহ তা‘আলা বীজ ও আঁটি গুলিকে বিদীর্ণকারী ; তিনি নির্জীব হইতে সজীবকে বাহির করিয়া থাকেন, তিনি সজীব হইতে নির্জীবকে বাহির করেন; তিনিই আল্লাহ সুতরাং তোমরা কোথায় বিপরীত দিকে চলিয়াছ ?
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। আব্দুল্লাহ্ ইবনে সা‘আদ যে কাতেবে ওহী ছিনল। যখন এই মর্মে আয়াত নাযিল হয় যে, আমি মানুষকে খাঁটি মৃত্তিকা হইতে সৃষ্টি করিয়াছি, অত:পর জমাট রক্ত হইতে, অত:পর মাংসপিন্ড হইতে। তখন ওহী লেখক বিস্ময়ের সহিত বলিয়া উঠিল, ‘ফাতাবারাকাল্লাহ আহসানুল খালেক্বীন’। হযরত (দ:) বলিলেন, হাঁ লেখ, সামনের দিকে ইহাই আছে। ইহাতে আব্দুল্লাহর সন্দেহ হইল এবং মরতাদ হইয়া বলিতে লাগিল, মুহাম্মাদ যদি সত্য নবী হয়, তবে তো আমার প্রতি ওহী আসিতেছে। আমি যাহা বলিলাম , সেও তো তাহাই বলে। এই সম্পর্কে এই আয়াতটি নাযিল হয় । (মু:কো:)
২। একদিন নাযর ইবনে হারেছ বলিল, আমার কিসের পরোয়া ? লাত এবং মানাত দেবতাদ্বয় আমার জন্য খোদার দরবারে সুফারিশ করিবে, তখন আয়াতটি নাযিল হয় । (ব: কো:)
فَالِقُ الْإِصْبَاحِ وَجَعَلَ اللَّيْلَ سَكَنًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ حُسْبَانًا ۚ ذَٰلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ
বাংলা অর্থ:
৯৬। তিনি প্রভাতের বিকাশকারী, আর তিনি রাত্রিকে বিশ্রামকাল এবং সূযর্ ও চন্দ্র (-এর গতি) -কে হিসাব নিরূপক বানাইয়াছেন ; ইহা সেই সত্তার নির্ধারিত বিষয় যিনি ক্ষমতাবান, মহাজ্ঞানী ।
وَهُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ النُّجُومَ لِتَهْتَدُوا بِهَا فِي ظُلُمَاتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ ۗ قَدْ فَصَّلْنَا الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ
বাংলা অর্থ:
৯৭। আর তিনি এমন যে, যিনি তোমাদের জন্য নক্ষত্ররাজিকে সৃষ্টি করিয়াছেন-যেন তোমরা উহাদের সাহায্য অন্ধাকারে পথের সন্ধান পাইতে পার, স্থলভাগেও এবং সমুদ্রেও ; নিশ্চয় আমি প্রমাণসমূহ খুব বিশদভাবে বর্ণনা করিয়া দিয়াছি ঐ সকল লোকের জন্য যাহারা জ্ঞান রাখে।
وَهُوَ الَّذِي أَنشَأَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ فَمُسْتَقَرٌّ وَمُسْتَوْدَعٌ ۗ قَدْ فَصَّلْنَا الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَفْقَهُونَ
বাংলা অর্থ:
৯৮। আর তিনি এমন যে, যিনি তোমাদিগকে এক ব্যক্তি (আদম) হইতে সৃজন করিয়াছেন, অনন্তর একটি স্থান অধিক দিন (মাতৃগর্ভে) আর একটি স্থান অল্প দিন (পিতৃ ঔরসে) থাকিবার জন্য রহিয়াছে ; নিশ্চয়ই আমি প্রমাণসমূহ বিশদরূপে বর্ণনা করিয়াছি ঐ সকল লোকের জন্য যাহারা বুঝে ।
وَهُوَ الَّذِي أَنزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَأَخْرَجْنَا بِهِ نَبَاتَ كُلِّ شَيْءٍ فَأَخْرَجْنَا مِنْهُ خَضِرًا نُّخْرِجُ مِنْهُ حَبًّا مُّتَرَاكِبًا وَمِنَ النَّخْلِ مِن طَلْعِهَا قِنْوَانٌ دَانِيَةٌ وَجَنَّاتٍ مِّنْ أَعْنَابٍ وَالزَّيْتُونَ وَالرُّمَّانَ مُشْتَبِهًا وَغَيْرَ مُتَشَابِهٍ ۗ انظُرُوا إِلَىٰ ثَمَرِهِ إِذَا أَثْمَرَ وَيَنْعِهِ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكُمْ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
বাংলা অর্থ:
৯৯। আর তিনি এমন যে, যিনি আকাশ হইতে পানি বর্ষণ করিয়াছেন, অনন্তর আমি তদ্দরা সর্বপ্রকার উদ্ভিদ উদগত করিয়াছি, অত:পর আমি উহা হইতে সবুজ গাছগুলি বাহির করিয়াছি, যাহা হইতে আমি একে অন্যের উপর সংস্থাপিত দানা বাহির করি এবং খেজুর বৃক্ষ হইতে অর্থাৎ , উহার মাথি হইতে ছড়া (বাহির ) হয় যাহা নিম্ন দিকে ঝুলিয়া পড়ে এবং আঙ্গুরের উদ্যানসমূহ এবং যাইতুন ও আনার (বৃক্ষ উৎপন্ন করিয়াছি) যাহা (রং ও আকারে কতক) একে অন্যের সদৃশ এবং (কতক) অসাদৃশ্য ; প্রত্যেক বৃক্ষের ফলের প্রতি তো লক্ষ্য কর, যখন উহা ফলবান হয়, আর উহা পাকিবার সময় (-ও) লক্ষ্য কর ;এই সমুদয়ের মধ্যে প্রমাণসমূহ রহিয়াছে ঐ সকল লোকের জন্য যাহারা ঈমান রাখে।
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। অর্থাৎ চন্দ্র-সূর্যের গতিবিধি সর্বব্যাপী ক্ষমতাবান মহান সত্তার নির্ধারণ। কাজেই তিনি ইহাদিগকে এই রূপ সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করিতে সক্ষম এবং তিনি মহাজ্ঞানী, সুতরাং এই ধরনের গতির উপকারিতা ও রহস্য অবগত আছেন । তাই উহাদের গতির এই নিয়ম নির্ধারণ করিতে দিয়াছেন । (ব: কো:)
২। তিনটি উদ্দেশ্যে তারকারাজিকে অবলম্বন করা যায় (ক) আসমানের সৌন্দর্য স্বরূপ (খ) শয়তানের জন্য ঢিল স্বরূপ (গ) পথের দিশারী স্বরূপ । (ব: কো:)
৩। মারফূ‘ হাদীসে আছে, আল্লাহ আদমকে নিজের সামনে দাঁড় করাইয়া তাহার বাম বাহুর উপর আঘাত করিলেন । তাহাতে সন্তান বাহির হইয়া সমগ্র ভূপৃষ্ট ভরিয়া গেল। (ফতহুল বয়ান) ।
وَجَعَلُوا لِلَّهِ شُرَكَاءَ الْجِنَّ وَخَلَقَهُمْ ۖ وَخَرَقُوا لَهُ بَنِينَ وَبَنَاتٍ بِغَيْرِ عِلْمٍ ۚ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَىٰ عَمَّا يَصِفُونَ
বাংলা অর্থ:
১০০। আর (মুশরেক) লোকেরা শয়তানদেরকে আল্লাহর শরীক স্থির করিয়া রাখিয়াছে, অথচ তাহাদেরকে তিনি সৃষ্টি করিয়াছেন, আর ইহারা আল্লাহর জন্য পুত্র ও কন্যাগণ প্রমাণ ব্যতিরেকে কল্পনা করিয়া রাখিয়াছে; তিনি ঐ সমস্ত উক্তি হইতে পবিত্র ও বহু ঊধ্বে , যাহা তাহারা বর্ণনা করিতেছে।
بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ أَنَّىٰ يَكُونُ لَهُ وَلَدٌ وَلَمْ تَكُن لَّهُ صَاحِبَةٌ ۖ وَخَلَقَ كُلَّ شَيْءٍ ۖ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ
বাংলা অর্থ:
১০১। তিনি আকাশ সমূহ এবং যমীনের মূজেদ ; আল্লাহর সন্তান হইবে কি করিয়া ? অথচ তাঁহারা তো কোন বিবি নাই; এবং তিনি প্রত্যেক বস্তুকে সৃষ্টি করিয়াছেন, এবং তিনি প্রত্যেক বস্তুকে জানেন।
ذَٰلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ ۖ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ فَاعْبُدُوهُ ۚ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ وَكِيلٌ
বাংলা অর্থ:
১০২। ইনিই আল্লাহ – তোমাদের রব্ব, তিনি ভিন্ন কেহ এবাদতের যোগ্য নহে তিনি প্রত্যেক বস্তুর স্রষ্টা , অতএব, তাঁহার এবাদত কর, বস্তুত: তিনি সকল বিষয়ের কার্য সম্পাদক।
لَّا تُدْرِكُهُ الْأَبْصَارُ وَهُوَ يُدْرِكُ الْأَبْصَارَ ۖ وَهُوَ اللَّطِيفُ الْخَبِيرُ
বাংলা অর্থ:
১০৩। তাঁহাকে তো কাহারও দুষ্টি পরিবেষ্টন করিতে পারে না এবং তিনি সকল দুষ্টিকেই পরিবেষ্টন করিয়া আছেন, এবং তিনিই অতিশয় সূক্ষদর্শী, সর্বজ্ঞ।
قَدْ جَاءَكُم بَصَائِرُ مِن رَّبِّكُمْ ۖ فَمَنْ أَبْصَرَ فَلِنَفْسِهِ ۖ وَمَنْ عَمِيَ فَعَلَيْهَا ۚ وَمَا أَنَا عَلَيْكُم بِحَفِيظٍ
বাংলা অর্থ:
১০৪। (বলিয়া দিন) নিশ্চয়, তোমাদের নিকট তোমাদের রব্বের পক্ষ হইতে সত্য দর্শনের উপায়সমূহ পৌছিয়াছে, সুতরাং যে (সত্যকে) দেখিয়া লইবে সে নিজের উপকার করিবে , আর যে অন্ধ থাকিবে সে নিজেরই অনিষ্ট করিবে ; এবং আমি তোমাদের পর্যবেক্ষক নহি।
وَكَذَٰلِكَ نُصَرِّفُ الْآيَاتِ وَلِيَقُولُوا دَرَسْتَ وَلِنُبَيِّنَهُ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ
বাংলা অর্থ:
১০৫। আর আমি এইরূপে প্রমাণসমূহকে বিভিন্ন দিক দিয়া বর্ণনা করি, যেন আপনি সকলকে পৌছাইয়া দেন, আর যেন ইহারা (বিদ্বেষাপন্ন হইয়া) এরূপ বলে যে, আপনি কাহারও নিকট পড়িয়া লইয়াছেন এবং যেন আমি ইহাকে জ্ঞানীদের জন্য স্পষ্টরূপে প্রকাশ করিয়া দেই।
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। এই আয়াত শিরকো খন্ডন করা হইয়াছে। মানুষ আল্লাহর সঙ্গে অন্যান্যকে ও জিনকে এবাদতে শরীক করিত। আল্লাহ্ তাহাদের এই কুফর ও শিরক হইতে বহু ঊধ্বে । কেহ যদি বলে যে, কাফেরেরা তো জিনকে পূজা করে নাই, তাহারা আম্বিয়া ও আউলিয়াদের পূজা করিত। ইহাদের উত্তরে বলা যাইবে যে, জিন জাতি তাহাদিগেকে এইরূপ নির্দেশ দিত বলিয়াই তাহারা নবী ও ওলীদের পূজা করিত। সুতরাং জিনের পূজাই কর হইল। (ই:কা:)
২। অর্থাৎ কোরআন নাযিল করার উপকারিতা তিনটি (ক) আপনি তাবলীগের সওয়াবপান,(খ) প্রত্যাখ্যানকারীদের উপর সমধিক অপরাধ সাব্যস্ত হয়(গ) বুদ্ধিমান ও সত্যাম্বেষীদের জন্য সত্য প্রকাশিত হইয়া যায়। অতএব, কে মানিল, কে মানিল না আপনি সে দিকে দৃকপাত করিবেন না। (ব:কো:)
اتَّبِعْ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ ۖ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ وَأَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِينَ
বাংলা অর্থ:
১০৬। আপনি স্বয়ং ঐ পথের অনুসরণ করিতে থাকুন যে সম্বন্ধে আপনার প্রতিপালকের পক্ষ হইতে আপনার নিকট ওহী আসিয়াছে, আল্ল্হা তা‘আলা ব্যতীত কেহ এবাদতের যোগ্য নহে, আর মুশরেকদের প্রতি লক্ষ্য করিবেন না।
وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا أَشْرَكُوا ۗ وَمَا جَعَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ حَفِيظًا ۖ وَمَا أَنتَ عَلَيْهِم بِوَكِيلٍ
বাংলা অর্থ:
১০৭। আর যদি আল্লাহর অভিপ্রেত হইত, তবে ইহারা র্শিক করিত না ; আর আমি আপনাকে ইহাদের পর্যবেক্ষক করি নাই , এবং আপনি তাহাদের উপর ক্ষমতাপ্রাপ্তও নহেন।
وَلَا تَسُبُّوا الَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ فَيَسُبُّوا اللَّهَ عَدْوًا بِغَيْرِ عِلْمٍ ۗ كَذَٰلِكَ زَيَّنَّا لِكُلِّ أُمَّةٍ عَمَلَهُمْ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّهِم مَّرْجِعُهُمْ فَيُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
বাংলা অর্থ:
১০৮। আর ইহারা আল্লাহ্ ব্যতীত যাহাদের এবাদত করে, তাহাদিগকে গালি দিও না । কেননা , তাহা হইলে ইহারা মূর্খতাবশত: সীমালঙ্ঘন পূর্বক আল্লাহর শানে বে-আদবী করিবে; আমি এইরূপেই প্রত্যেক উম্মতের নিকট তাহাদের কার্যকলাপকে সুশোভিত করিয়া রাখিয়াছি, অত:পর স্বীয় প্রতিপালকের নিকটই তাহাদিগকে যাইতে হইবে, তখন তিনি তাহাদিগকে জানাইয়া দিবেন, যাহাকিছু তাহারা করিত।
وَأَقْسَمُوا بِاللَّهِ جَهْدَ أَيْمَانِهِمْ لَئِن جَاءَتْهُمْ آيَةٌ لَّيُؤْمِنُنَّ بِهَا ۚ قُلْ إِنَّمَا الْآيَاتُ عِندَ اللَّهِ ۖ وَمَا يُشْعِرُكُمْ أَنَّهَا إِذَا جَاءَتْ لَا يُؤْمِنُونَ
বাংলা অর্থ:
১০৯। আর তাহারা (কাফেররা) শপথসমূহে খুব দৃঢ়তার সহিত আল্লাহর নামে শপথ করিল যে, যদি তাহাদের নিকট কোন নিদর্শন উপস্থিত হয় , তবে তাহারা অবশ্যই উহার প্রতি ঈমান আনিবে; আপনি বলিয়া দিন, নিদর্শনগুলি সমস্তই আল্লাহর অধিকারে এবং তোমাদের উহার কি খবর যে, এই নিদর্শনগুলি যখন উপস্থিত হইবে তখনও তাহারা ঈমান আনিবে না।
وَنُقَلِّبُ أَفْئِدَتَهُمْ وَأَبْصَارَهُمْ كَمَا لَمْ يُؤْمِنُوا بِهِ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَنَذَرُهُمْ فِي طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُونَ
বাংলা অর্থ:
১১০। আর আমিও ইহাদের অন্তরসমূহকে এবং চক্ষুসমূহকে ফিরাইয়া দিব যেরূপভাবে ইহারা তৎপ্রতি প্রথমবার ঈমান আনয়ন করে নাই এবং আমি ইহাদিগকে ইহাদের অবাধ্যতার মধ্যে দিশাহারা অবস্থায় থাকিতে দিব।
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। এক রেওয়ায়েতে আছে, মুসলমানগণ কাফেরদের সম্মুখে তাহাদের দেবতাকে গালি দিত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যাহারা গালির যোগ্য তাহাদিগকেও গালি দিও না । অন্যথায় যিনি গালির যোগ্য নহেন, ইহারা তাঁহাকেও গালি দিবে। (মু:কো:)
২। কাফেরেরা বলিল, হে মুহাম্মাদ ! তুমি বলিয়া থাক, মূসা লাঠি দ্বারা পাথরের উপর আঘাত করিলে বারটি ঝর্ণা প্রবাহিত হইত। ঈসা ফুঁ দিয়া মুর্দাকে যিন্দা করিতেন। তুমিও অনুরূপ কোন মু‘জেযাহ্ দেখাইলে আমরা ঈমান আনিব । হুযূর বলিলেন, কি মু‘জেযাহ চাও? তাহারা বলিল, ছাফা পাহাড়াকে স্বর্ণে পরিণত কর। হুযূর বলিলেন, তাহা হইলে ঈমান আনিবে তো? তাহারা কসম করিয়া প্রতিশ্রুতি দিল। হুযূর দো‘আ করিতে উদ্যত হইলে জিবরাঈল (আ:) বলিলেন এই মু‘জেযাহ না মানিলে তাহারা সমূলে ধ্বংস হইবে। (মু:কো:)
وَلَوْ أَنَّنَا نَزَّلْنَا إِلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةَ وَكَلَّمَهُمُ الْمَوْتَىٰ وَحَشَرْنَا عَلَيْهِمْ كُلَّ شَيْءٍ قُبُلًا مَّا كَانُوا لِيُؤْمِنُوا إِلَّا أَن يَشَاءَ اللَّهُ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ يَجْهَلُونَ
বাংলা অর্থ:
১১১। আর যদি আমি ফেরেশতাগণকে তাহাদের নিকট পাঠাইতাম এবং মৃতগণ তাহাদের সহিত কথা বলিত এবং আমি সমস্ত বস্তুকে তাহাদের নিকট তাহাদের চোখের সম্মুখে একত্রিত করিয়া দিতাম, তবুও ইহারা কখনও ঈমান আনিত না , অবশ্য যদি আল্লাহ্ চাহেন, তবে ভিন্ন কথা , কিন্তু তাহাদের অধিকাংশ লোকেই মুর্খোচিত কথা বলে।
وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوًّا شَيَاطِينَ الْإِنسِ وَالْجِنِّ يُوحِي بَعْضُهُمْ إِلَىٰ بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُورًا ۚ وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ مَا فَعَلُوهُ ۖ فَذَرْهُمْ وَمَا يَفْتَرُونَ
বাংলা অর্থ:
১১২। আর এমনি ভাবে আমি প্রত্যেক নবীর শক্র বহু শয়তান সৃষ্টি করিয়াছি- কতক মানুষ, কতক জিন, যাহাদের কতিপয় অপর কতিপয়কে মনভুলানো বাক্য দ্বারা কুমন্ত্রনা দিত- প্রতারনার উদ্দেশ্যে ; আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করিতেন, তবে তাহারা এরূপ কাজ করিত না , অতএব, তাহাদিগকে এবং তাহারা যে মিথ্যা রটনা করিতেছে উহা (-র চিন্তা)ছাড়িয়া দিন।
وَلِتَصْغَىٰ إِلَيْهِ أَفْئِدَةُ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ وَلِيَرْضَوْهُ وَلِيَقْتَرِفُوا مَا هُم مُّقْتَرِفُونَ
বাংলা অর্থ:
১১৩। আর যেন ইহার (কুমন্ত্রণার) প্রতি তাহাদের অন্তরগুলি আকৃষ্ট হইয়া পড়ে যাহারা আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে না , আর যেন তাহারা ইহাকে পছন্দ করিয়া লয় এবং যেন লিপ্ত হইয়া পড়ে ঐসকল কাজে যাহাতে তাহারা লিপ্ত ছিল।
أَفَغَيْرَ اللَّهِ أَبْتَغِي حَكَمًا وَهُوَ الَّذِي أَنزَلَ إِلَيْكُمُ الْكِتَابَ مُفَصَّلًا ۚ وَالَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَعْلَمُونَ أَنَّهُ مُنَزَّلٌ مِّن رَّبِّكَ بِالْحَقِّ ۖ فَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الْمُمْتَرِينَ
বাংলা অর্থ:
১১৪। (আপনি বলুন) তবে কি আল্লাহ্ ভিন্ন অন্য কোন মীমাংসাকারীকে অনুসন্ধান করিব ? অথচ তিনি এমন যে, তোমাদের নিকট একটি পূর্ণাঙ্গ কিতাব নাযিল করিয়াছেন যাহার বিষয়সমূহ বিশদরূপে বর্ণিত হইয়াছে ; আর যাহাদিগকে আমি কিতাব দান করিয়াছি তাহারা একথাটি নিশ্চিতরূপে জানে যে, ইহা আপনার রব্বের তরফ হইতে বাস্তবানুসারে প্রেরিত হইয়াছে, অতএব, আপনি সন্দেহকারীদের অন্তর্ভুক্ত হইবেন না ।
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। পূর্ববতী আয়াতে বর্ণিত হইয়াছে যে, কাফেরেরা হুযূরের নিকট তাঁহার সত্রতার নিদর্শন প্রকাশের জন্য ফরমাইশ করিয়াছেন। তদুত্তরে আল্লাহ্ এই আয়াতে বলিতেছেন, ফরমাইশী নিদর্শন কেন , যদি আসমান হইতে ফেরেশতারা আসিয়া বা কবর হইতে তাহাদের পূর্ব -কালের সমস্ত উম্মতেরা জীবিত হইয়া আসিয়া তাহাদের সম্মুখে দাঁড়ায় এবং আপনার সত্রতার প্রমাণ দেয় , তবুও তাহারা সত্যকে স্বীকার করিবে না । তবে যদি অ আল্লাহ্ যবরদস্তী তাহাদের দ্বারা স্বীকার করাইয়া লন, তাহা স্বতন্ত্র কথা । কিন্তু শাসন ও শৃঙ্খলার খাতিরে তিনি তাহা করিবেন না । (ব: কো:)
২। অর্থাৎ শয়তানেরা একে অন্যকে অলীক ও মিথ্যা সাজান কথা শিখাইয়া থাক্ দুনিয়ার প্রতি আশক্ত নাফরমান লোকেরা ইহা শুনিয়া শয়তানের এই সাজান কথার প্রতি ঝুঁকিয়া পড়ে এবং উহাই তাহাদের ভাল লাগে। কুফর ও ফিসক হইতে বিরত হয় না। (ফাওয়ায়েদে ওসমানী)
وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ صِدْقًا وَعَدْلًا ۚ لَّا مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِهِ ۚ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
বাংলা অর্থ:
১১৫। আর আপনার রব্বের বাণী বাস্তবতা ও মধ্য পস্থার দিক দিয়া পরিপূর্ণ ; তাঁহার বাণীর কোন পরিবর্তনকারী নাই, এবং তিনি খুব শুনোন, খুব জানেন।
وَإِن تُطِعْ أَكْثَرَ مَن فِي الْأَرْضِ يُضِلُّوكَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ ۚ إِن يَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ وَإِنْ هُمْ إِلَّا يَخْرُصُونَ
বাংলা অর্থ:
১১৬। আর দুনিয়ার অধিকাংশ লোক এমন যে, যদি আপনি তাহাদের অনুসরণ করেন , তবে তাহারা আপনাকে আল্লাহর পথ হইতে বিপথগামী করিয়া দিবে; তাহারা কেবল অমূলক ধারনার অনুসরণ করে এবং সম্পূর্ণ কাল্পনিক কথা বলে।
إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ مَن يَضِلُّ عَن سَبِيلِهِ ۖ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ
বাংলা অর্থ:
১১৭। নিশ্চয়, আপনার রব্ব তাহাদিগকে উত্তমরূপে জানেন যাহারা তাঁহার পথ হইতে বিপথগামী হইয়া যায়, এবং তিনি তাহাদিগকে ও উত্তমরূপে জানেন যাহারা তাঁহার পথে চলে।
فَكُلُوا مِمَّا ذُكِرَ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ إِن كُنتُم بِآيَاتِهِ مُؤْمِنِينَ
বাংলা অর্থ:
১১৮। অতএব, যে- জীবের উপর (যবাহ্ কালে) আল্লাহর নাম উচ্চারিত হয়, তাহা হইতে খাও, যদি তোমরা তাঁহার নির্দেশাবলীর প্রতি ঈমান রাখ।
وَمَا لَكُمْ أَلَّا تَأْكُلُوا مِمَّا ذُكِرَ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ وَقَدْ فَصَّلَ لَكُم مَّا حَرَّمَ عَلَيْكُمْ إِلَّا مَا اضْطُرِرْتُمْ إِلَيْهِ ۗ وَإِنَّ كَثِيرًا لَّيُضِلُّونَ بِأَهْوَائِهِم بِغَيْرِ عِلْمٍ ۗ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِالْمُعْتَدِينَ
বাংলা অর্থ:
১১৯। আর যে-জীবের উপর আল্লাহর নাম উচ্চারিত হইয়াছে, উহা হইতে না খাওয়ার তোমাদের কি কারণ থাকিতে পারে ? অথচ আল্লাহ্ ঐ সকল জীবের বিস্তারিত বর্ণনা করিয়া দিয়াছেন , যেগুলি তোমাদের জন্য হারাম করিয়াছেন, কিন্তু তাহাও তোমাদের একান্ত প্রয়োজন হইলে হালাল ; আর ইহা সুনিশ্চিত যে, অনেকে স্বীয় ভ্রান্ত ধারণা অনুসারে বিভ্রান্ত করিতে থাকে প্রমাণ ব্যতিরেকে ; ইহাতে কোন সন্দেহ নাই যে আল্লাহ্ সীমালঙ্ঘনকারীদিগকে খুব জানেন।
وَذَرُوا ظَاهِرَ الْإِثْمِ وَبَاطِنَهُ ۚ إِنَّ الَّذِينَ يَكْسِبُونَ الْإِثْمَ سَيُجْزَوْنَ بِمَا كَانُوا يَقْتَرِفُونَ
বাংলা অর্থ:
১২০ । আর তোমরা বর্জন কর প্রকাশ্য পাপও এবং অপ্রকাশ্য পাপও ; নি:সন্দেহে যাহারা গুণাহ্ করিতেছে, তাহারা স্বীয় কৃতকর্মের শাস্তি সত্বরই প্রাপ্ত হইবে।
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। পারস্য দেশীয় অগ্নি-পূজক কাফেরদের সহিত মক্কার কাফেরদের বন্ধুত্ব ছিল। তাহারা মক্কায় লিখিয়া পাঠাইল, তোমাদের সেই নিরক্ষর নবীকে জিজ্ঞাসা কর, “এটা কেমন ধর্ম! নিজেদের যবাহ্কৃত জীব খাইতেছে , আর আল্লাহ্ যে জীকে মারেন, তাহা খায় না। এই সম্বন্ধে আল্লাহ এই আয়াতগুলি নাযিল করেন। আল্লাহর নামে যবাহ্কৃত জীব তাঁহার নামের বরকতে ও প্রবাহিত রক্ত নি:সরণে পাক ও হালাল। স্বাভাবিক মৃত্যুতে রক্ত নি:সরণ হয় না, আর দেবদেবীর নামে বলী দেওয়া জীবে আল্লাহর নাম থাকে না , সুতরাং ইহা হারাম। (মু: কো:)
وَلَا تَأْكُلُوا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُ لَفِسْقٌ ۗ وَإِنَّ الشَّيَاطِينَ لَيُوحُونَ إِلَىٰ أَوْلِيَائِهِمْ لِيُجَادِلُوكُمْ ۖ وَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُونَ
বাংলা অর্থ:
১২১। আর এমন জীব হইতে ভক্ষণ করিও না যাহার উপর আল্লাহর নাম উচ্চারিত হয় নাই, এবং নি:সন্দেহে উহা গুনাহের কাজ; আর নিশ্চয় শয়তানরা স্বীয় বন্ধুদিগকে শিক্ষা দিতেছে, যেন ইহারা তোমাদের সহিত (অযথা) বিতর্ক করে, আর যদি তোমরা ইহাদের অনুসরণ করিতে থাক, তবে নিশ্চয়ই মুশরেক হইয় যাইবে।
أَوَمَن كَانَ مَيْتًا فَأَحْيَيْنَاهُ وَجَعَلْنَا لَهُ نُورًا يَمْشِي بِهِ فِي النَّاسِ كَمَن مَّثَلُهُ فِي الظُّلُمَاتِ لَيْسَ بِخَارِجٍ مِّنْهَا ۚ كَذَٰلِكَ زُيِّنَ لِلْكَافِرِينَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
বাংলা অর্থ:
১২২। এমন ব্যক্তি, যে পূর্বে মৃত (অর্থাৎ গোমরাহ্) ছিল , অত:পর আমি তাহাকে জীবিত (অর্থাৎ মুসলামন) করিয়াছি এবং তাহাকে এমন এক নূর (ঈমান) দিয়াছি, যাহা লইয়া সে মানুষের মধ্যে চলাফেরা করে, এমন ব্যক্তি কি সেই ব্যক্তির ন্যায় হইতে পারে যাহার অবস্থা এই যে, সে অন্ধকারপুঞ্জে রহিয়াছে (এবং) বাহির হইতে পারিতেছে না ; এই রূপে কাফেরদের নিকট নিজেদের কার্যকলাপ সুশোভন বোধ হয়।
وَكَذَٰلِكَ جَعَلْنَا فِي كُلِّ قَرْيَةٍ أَكَابِرَ مُجْرِمِيهَا لِيَمْكُرُوا فِيهَا ۖ وَمَا يَمْكُرُونَ إِلَّا بِأَنفُسِهِمْ وَمَا يَشْعُرُونَ
বাংলা অর্থ:
১২৩। আর এইরূপে আমি প্রত্যেক জনপদে তথাকার নেতৃস্থানীয় লোকদিগকেই (প্রথমত:) পাপে লিপ্ত করাইয়াছি, যেন তাহারা তথায় শঠতা করিতে থাকে ; বস্তুত: তাহারা নিজেদের সঙ্গেই শঠতা করিতেছে, অথচ তাহারা মোটেই অনুভব করিতেছে না।
وَإِذَا جَاءَتْهُمْ آيَةٌ قَالُوا لَن نُّؤْمِنَ حَتَّىٰ نُؤْتَىٰ مِثْلَ مَا أُوتِيَ رُسُلُ اللَّهِ ۘ اللَّهُ أَعْلَمُ حَيْثُ يَجْعَلُ رِسَالَتَهُ ۗ سَيُصِيبُ الَّذِينَ أَجْرَمُوا صَغَارٌ عِندَ اللَّهِ وَعَذَابٌ شَدِيدٌ بِمَا كَانُوا يَمْكُرُونَ
বাংলা অর্থ:
১২৪। আর যখন তাহাদের নিকট কোন আয়াত সমাগত হয় তখন এরূপ বলে- আমরা কিছুতেই ঈমান আনব না যে-পর্যন্ত আমাদিগকে ও তেমনি বস্তু (ওহী) না দেওয়া হয় যাহা আল্লাহর রাসূলগণকে দেওয়া হয় । সেই যোগ্য পাত্রকে তো আল্লাহ্ই উত্তমরূপে জানেন যেখানে তিনি স্বীয় পয়গাম প্রেরণ করেন; অচিরেই এসমস্ত লোক যাহারা এ অপরাধ করিয়াছে, আল্লাহর পৌঁছিয়া অপমানিত হইবে এবং কঠিন শাস্তি (-ও হইবে) তাহাদের শঠতার বিনিময়ে ।
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। একদিন আবূ জাহাল নামাযের অবস্থায় হুযূরের মাথার উপর গোবর নিক্ষেপ করিল। হাম্যা (রা:) শিকার হইতে ফিরিয়া আসিলে হুযূর (দ:) এই ঘটনা তাঁহার নিকট বলিনেন। তিনি ক্রোধে অধীর হইয়া তৎক্ষনাৎ আবূ জাহালের নিকট গেলেন এবং ধনুক দ্বারা তাহার মাথায় জোরে আঘাত করিলেন ও কাফেরদের দেবতাদিগকে খুব গালি দিলেন্ এই সম্বন্ধে এই আয়াতটি নাযিল হয়।
২। আবূ জাহাল বলিত, নুবুওয়াত আমাদের বংশে মুহাম্মাদের উপর নাযিল হইয়াছে ? যে পর্যন্ত আমরাও তাহার ন্যায় ওহী প্রাপ্ত না হইব, আমরা ও তাহার প্রতি সন্তুষ্ট হইব না । ওলীদ ইবনে মুগীরা বলিল, মুহাম্মাদের চেয়ে তো আমি বয়সেও বড়,ধন দৌলতও আমার বেশী । আমারই তো নবী হওয়া সমীচীন ছিল। এতদসম্পর্কে এই আয়াতটি নাযিল হয়। (মু:কো:)
فَمَن يُرِدِ اللَّهُ أَن يَهْدِيَهُ يَشْرَحْ صَدْرَهُ لِلْإِسْلَامِ ۖ وَمَن يُرِدْ أَن يُضِلَّهُ يَجْعَلْ صَدْرَهُ ضَيِّقًا حَرَجًا كَأَنَّمَا يَصَّعَّدُ فِي السَّمَاءِ ۚ كَذَٰلِكَ يَجْعَلُ اللَّهُ الرِّجْسَ عَلَى الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ
বাংলা অর্থ:
১২৫। অতএব, আল্লাহ্ যাহাকে হেদায়ত করিতে ইচ্ছা করেন তাহারা অন্তরকে ইসলামের জন্য উম্মুক্ত করিয়া দেন, এবং যাহাকে বিপথে রাখিতে চাহেন , তাহার অন্তরকে সঙ্কীর্ন -যেমন কেহ আসমানে আরোহণ করিতেছে; এভাবেই আল্লাহ্ লা‘নত করিয়া থাকেন তাহাদিগকে যাহারা ঈমান আনয়ন করে না।
وَهَـٰذَا صِرَاطُ رَبِّكَ مُسْتَقِيمًا ۗ قَدْ فَصَّلْنَا الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَذَّكَّرُونَ
বাংলা অর্থ:
১২৬। আর ইহাই তোমার প্রতিপালকের (প্রদর্শিত) সরল পথ; আমি উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য এই আয়াতগুলিকে স্পষ্টরূপে বর্ণনা করিয়া দিয়াছি।
لَهُمْ دَارُ السَّلَامِ عِندَ رَبِّهِمْ ۖ وَهُوَ وَلِيُّهُم بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
বাংলা অর্থ:
১২৭। তাহাদের জন্য তাহাদের প্রতিপালকের নিকট রহিয়াছে দারুস্সালাম (বেহেশত) এবং আল্লাহ্ তা‘আলা তাহাদের সহিত ভালবাসা রাখেন তাহাদের আমলের দরুন।
وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ جَمِيعًا يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ قَدِ اسْتَكْثَرْتُم مِّنَ الْإِنسِ ۖ وَقَالَ أَوْلِيَاؤُهُم مِّنَ الْإِنسِ رَبَّنَا اسْتَمْتَعَ بَعْضُنَا بِبَعْضٍ وَبَلَغْنَا أَجَلَنَا الَّذِي أَجَّلْتَ لَنَا ۚ قَالَ النَّارُ مَثْوَاكُمْ خَالِدِينَ فِيهَا إِلَّا مَا شَاءَ اللَّهُ ۗ إِنَّ رَبَّكَ حَكِيمٌ عَلِيمٌ
বাংলা অর্থ:
১২৮। আর যেদিন আল্লাহ্ সমস্ত সৃষ্ট জীবকে একত্রে সমবেত করিবেন (এবং তিরস্কার করিয়া বলিবেন) হে জিন সম্প্রদায়! তোমরা মানব (-কে পথভ্রষ্ট করা)- এর মধ্যে প্রচুর অংশগ্রহণ করিয়াছ , আর যে সমস্ত মানুষ তাহাদের সহিত সংস্রব রাখিত তাহারা বলিবে – হে আমাদের পরওয়ারদেগার ! আমাদের মধ্যে একে অপর হইতে উপকার প্রাপ্ত হইয়াছি এবং আমরা নিজেদের সেই নির্দিষ্ট সীমাকাল-(কিয়ামত) পর্যন্ত পৌঁছিয়াছি , যাহা আপনি আমাদের জন্য নিধারিত করিয়াছেন ; আল্লাহ্ বলিবেন তোমাদের সকলেরই ঠিকানা দোযখ – যাহাতে তোরা চিরকাল থাকিবে , হাঁ যদি আল্লাহরই অভিপ্রায় হয়, তবে স্বতন্ত্র কথা ; নিশ্চয় আপনার প্রতিপালক অতীব প্রজ্ঞাময়, মহাজ্ঞানী ।
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। সাহাবাদের মধ্যে কেহ হুযূর (দ:) -কে জিজ্ঞাসা করিলেন , “বুদ্ধিমান মু‘মিন কে ?” তিনি বলিলেন, ‘যে ব্যক্তি মৃত্যুকে খুব বেশী স্মরণ করে এবং মৃত্যুর পরবতী কালের জন্য খুব প্রস্তুতি নেয়” আবার জিজ্ঞাসা করা হইল, বক্ষ প্রশস্ত হয় কিরূপে ? বলিলেন ‘সীনার মধ্যেএক নূরের উদ্ভব হয়, তাহাতে সীনা প্রশস্ত ও মুক্ত হইয়া যায়” আবার কেহ জিজ্ঞাসা করিলেন, “ইহার কোন লক্ষণ আছে কি? যদ্দারা সেই নূরের উৎপত্তি বুঝা যায়্ ” বলিলেন , আখেরাতের প্রতি আকর্ষণ দুনিয়া হইতে বিকর্ষণ এবং মৃত্যুর পূর্বেই মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি, ইহার লক্ষ। আর “বৃক্ষ সঙ্কীর্ণ হওয়ার” অর্থ হেদায়েতের প্রতি সীনা মুক্ত না হওয়া আর ঈমান উহার মধ্যে না যাওয়া। (ই:কা:)
২। পথভ্রষ্ট লোকেরা কুফর ও শিরকের মধ্যে রিপু চরিতার্থ জনিত উপভোগ করে এবং প্ররোচক শয়তান ও আনন্দিত হইয়া থাকে। (ব: কো:)
وَكَذَٰلِكَ نُوَلِّي بَعْضَ الظَّالِمِينَ بَعْضًا بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ
বাংলা অর্থ:
১২৯। আর এভাবেই আমি (দোযখে) কাফেরদের কতিপয়কে কতিপয়ের নিকটে রাখিব তাহাদের কার্যকলাপের দরুণ।
يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ أَلَمْ يَأْتِكُمْ رُسُلٌ مِّنكُمْ يَقُصُّونَ عَلَيْكُمْ آيَاتِي وَيُنذِرُونَكُمْ لِقَاءَ يَوْمِكُمْ هَـٰذَا ۚ قَالُوا شَهِدْنَا عَلَىٰ أَنفُسِنَا ۖ وَغَرَّتْهُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَشَهِدُوا عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ أَنَّهُمْ كَانُوا كَافِرِينَ
বাংলা অর্থ:
১৩০। হে জিন ও মানব সম্প্রদায়! তোমাদের নিকট কি তোমাদের মধ্য হইতে রাসূলগন আসেন নাই। যাহারা তোমাদের নিকট আমার বিধানসমূহ বর্ণনা করিতেন এবং তোমাদিগকে আজিকার এই দিনের সংবাদ প্রদান করিতেন? তাহারা সকলে বলিবে- আমরা নিজেদের (অপরাধ) স্বীকার করিতেছি, আর তাহাদিগকে পার্থিব জীবন ভ্রমে ফেলিয়া রাখিয়াছে, আর ইহারা স্বীকারোক্তিকারী হইবে যে, তাহারা কাফের ছিল।
ذَٰلِكَ أَن لَّمْ يَكُن رَّبُّكَ مُهْلِكَ الْقُرَىٰ بِظُلْمٍ وَأَهْلُهَا غَافِلُونَ
বাংলা অর্থ:
১৩১। ইহা (রাসূলদিগের প্রেরণ) এই জন্য যে, আপনার প্রতিপালক কোন জনপদের অধিবাসীকে কুফরীর কারণে এমন অবস্থায় ধ্বংস করেন না যে, উক্ত অধিবাসীরা বে-খবর থাকে।
وَلِكُلٍّ دَرَجَاتٌ مِّمَّا عَمِلُوا ۚ وَمَا رَبُّكَ بِغَافِلٍ عَمَّا يَعْمَلُونَ
বাংলা অর্থ:
১৩২। আর প্রত্যেকের জন্য তাহাদের আমল অনুসারে শ্রেণী হইবে; আর আপনার রব্ব তাহাদের কার্যকলাপ সম্বন্ধে বে-খবর নহেন।
وَرَبُّكَ الْغَنِيُّ ذُو الرَّحْمَةِ ۚ إِن يَشَأْ يُذْهِبْكُمْ وَيَسْتَخْلِفْ مِن بَعْدِكُم مَّا يَشَاءُ كَمَا أَنشَأَكُم مِّن ذُرِّيَّةِ قَوْمٍ آخَرِينَ
বাংলা অর্থ:
১৩৩। আর আপনার প্রতিপালক সম্পূর্ণ বেনিয়ায, দয়াশীল ; যদি তিনি ইচ্ছা করেন, তবে তোমাদের সকলকে অকস্মাৎ পৃথিবী হইতে অপসারিত করিতে পারেন এবং তোমাদের পরে যাহাকে ইচ্ছা তোমাদের স্থলাভিষিক করিতে পারেন, যেমন তোমাদিগকে অন্য এক কাওমের বংশ হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন ।
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। যদিও আল্লাহ্ পূর্ণরূপেই জানেন যে, হুযূর (দ:) জিন এবং মানুষ উভয় জাতির প্রতিই প্রেরিত হইয়াছেন এবং তাঁহার কর্তব্য যথারীতি পালন করিয়াছেন, তথাপি ক্বিয়ামতের দিন বিষয়টিকে কেবল সপ্রমাণিত করার জন্যই আল্লাহ্ জিন ও মানুষ জাতীয় কাপেরদিগকে এইরূপ প্রশ্ন করিয়া তিরষ্কার ও ধমকী দিবেন । (ই: কা:)
২। ক্বিয়ামতের দিন মানুষ ও জিন জাতীয় কাফেরেরা স্বীকার করিবে যে, নবীগণ তাহাদের নিকট আসিয়া যথারীতি আল্লাহর আদেশ ও বিষেধাবলী পৌঁছাইয়াছেন, কিন্তু তাহারা তাঁহাদের কথা মানে নাই। অন্য আয়াতে দেখা যায় , কাফেরেরা অস্বীকার করিবে, অতএব, অত্র আয়াতের সঙ্গে বিরোধ ঘটে ইহার অর্থ এই যে, ক্বিয়ামতের দিনটি খুবই দীর্ঘ হইবে। ফলে কোন সময় নিজেদের শিরকের কথা স্বীকার করিবে, আবার কোন সময় স্বীকার করিবে না । (ফতহুল বয়ান)
إِنَّ مَا تُوعَدُونَ لَآتٍ ۖ وَمَا أَنتُم بِمُعْجِزِينَ
বাংলা অর্থ:
১৩৪। তোমাদের সহিত যে বিষয়ের ওয়াদা করা হইতেছে উহা অবশ্যই আগমনকারী বস্তু এবং তোমরা (আল্লাহ্কে) অক্ষম করিতে পারিবে না ।
قُلْ يَا قَوْمِ اعْمَلُوا عَلَىٰ مَكَانَتِكُمْ إِنِّي عَامِلٌ ۖ فَسَوْفَ تَعْلَمُونَ مَن تَكُونُ لَهُ عَاقِبَةُ الدَّارِ ۗ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُونَ
বাংলা অর্থ:
১৩৫। আপনি বলিয়া দিন, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা নিজ অবস্থায় আমল করিতে থাক আমি ও আমল করিতেছি, অত:পর সত্বরই জানিতে পারিবে যে, ইহ জগতের কর্মফল কাহার জন্য কল্যাণকর হইব; ইহা নিশ্চিয় যে, হক নষ্টকারীরা কখনও সফলকাম হইবে না ।
وَجَعَلُوا لِلَّهِ مِمَّا ذَرَأَ مِنَ الْحَرْثِ وَالْأَنْعَامِ نَصِيبًا فَقَالُوا هَـٰذَا لِلَّهِ بِزَعْمِهِمْ وَهَـٰذَا لِشُرَكَائِنَا ۖ فَمَا كَانَ لِشُرَكَائِهِمْ فَلَا يَصِلُ إِلَى اللَّهِ ۖ وَمَا كَانَ لِلَّهِ فَهُوَ يَصِلُ إِلَىٰ شُرَكَائِهِمْ ۗ سَاءَ مَا يَحْكُمُونَ
বাংলা অর্থ:
১৩৬। আর আল্লাহ্ যে-সব শস্য ও পশু সৃষ্টি করিয়াছেন তাহারা (মশরেকরা) উহার কিছু অংশ আল্লাহর ওয়াস্তে নির্দিষ্ট করে এবং নিজেদের ধারণা মতে বলে, ইহা তো আল্লাহর, আর ইহা আমাদের দেবতাদের, অনন্তর যে অংশ তাহাদের দেবতাদের হয়, উহা তো আল্লাহর দিকে পৌঁছে না, আর যে অংশ আল্লাহর (নামে) হয় উহা তাহাদের দেবতাদের দিকে পৌছিয়া যায় ; তাহারা কতই না মন্দ ব্যবস্থা করিয়া রাখিয়াছে।
وَكَذَٰلِكَ زَيَّنَ لِكَثِيرٍ مِّنَ الْمُشْرِكِينَ قَتْلَ أَوْلَادِهِمْ شُرَكَاؤُهُمْ لِيُرْدُوهُمْ وَلِيَلْبِسُوا عَلَيْهِمْ دِينَهُمْ ۖ وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا فَعَلُوهُ ۖ فَذَرْهُمْ وَمَا يَفْتَرُونَ
বাংলা অর্থ:
১৩৭। আর এইরূপে বহু মুশরেকদিগকে দৃষ্টি তাহাদের দেবতাগণ তাহাদের সন্তান হত্যাকে সুশোভন করিয়া রাখিয়াছে, যেন উহারা ইহাদিগকে বিনষ্ট করিয়া দেয় এবং তাহাদের রীতি-নীতিকে গোলমেলে করিয়া দেয়; আর আল্লাহ্ চাহিতেন, তবে ইহারা এরূপ করিত না, সুতরাং আপনি তাহাদিগকে এবং তাহাদের ভ্রান্ত উক্তিগুলিকে ছাড়িয়া দিন।
وَقَالُوا هَـٰذِهِ أَنْعَامٌ وَحَرْثٌ حِجْرٌ لَّا يَطْعَمُهَا إِلَّا مَن نَّشَاءُ بِزَعْمِهِمْ وَأَنْعَامٌ حُرِّمَتْ ظُهُورُهَا وَأَنْعَامٌ لَّا يَذْكُرُونَ اسْمَ اللَّهِ عَلَيْهَا افْتِرَاءً عَلَيْهِ ۚ سَيَجْزِيهِم بِمَا كَانُوا يَفْتَرُونَ
বাংলা অর্থ:
১৩৮। আর তাহারা নিজেদের ধারণা মতে বলে যে, এই চতুষ্পদ জন্তু ও ক্ষেত্র , ইহা কাহারও জন্য বৈধ নহে, উহা কেহই ভক্ষণ করিতে পারিবে না কিন্তু আমরা যাহাকে ইচ্ছা করি, আর কতকগুলি পশু যাহাদের উপর আরোহণ বা বোঝা চাপান হারাম করা হইয়াছে, আর কতকগুলি পশু যাহাদের উপর ইহারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে না, (এ-সব কথা) কেবল আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করার উদ্দেশ্যে (বলে); অচিরেই আল্লাহ্ তা‘আলা তাহাদিগকে মিথ্যা অপবাদের শাস্তি প্রদান করিবেন।
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। আরবের মুশরিকেরা উৎপন্ন শস্যের অর্ধেক আল্লাহর জন্য এবং অপর অর্ধাংশ দেবতার জন্য নিধারণ করিত। এইরূপে গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তুও ভাগ করিয়া কতক খোদার জন্য এবং কতক দেবতার জন্য নিধারণ করিত। খোদার অংশ মেহমান এবং গরীরদিগকে দান করিত। আর দেবতার অংশ প্রতিবেশী ও চাকর -–নকরদিগকে দিত। খোদার অংশ উত্তম হলে দেবতার অংশের সহিত বদল করিত। আর দেবতার অংশ উত্তম হইলে তদবস্থায়ই রাখিত এবং বলিত, খোদা ধনী ; তাঁহার অংশ নিকৃষ্ট হইলে ক্ষতি নাই। আর খোদার অংশ হইতে কিছু জিনিস দেবতার অংশের সহিত মিশিয়া গেলে সবটুকুই দেবতার জন্য রাখিত এবং বলিত, ইহারা অভাবী।তাহাদের এই আচরণই আল্লাহ্ এই আয়াতে ব্যক্ত করিয়াছেন। (ব:কো:)
وَقَالُوا مَا فِي بُطُونِ هَـٰذِهِ الْأَنْعَامِ خَالِصَةٌ لِّذُكُورِنَا وَمُحَرَّمٌ عَلَىٰ أَزْوَاجِنَا ۖ وَإِن يَكُن مَّيْتَةً فَهُمْ فِيهِ شُرَكَاءُ ۚ سَيَجْزِيهِمْ وَصْفَهُمْ ۚ إِنَّهُ حَكِيمٌ عَلِيمٌ
বাংলা অর্থ:
১৩৯। আর তাহারা বলে, এই পশুগুলির গর্ভে যাহাকিছু রহিয়াছে উহা শুধু আমাদের পুরুষদের জন্য (বৈধ) এবং আমাদের নারীদের জন্য হারাম, আর যদি উহা মৃত হয়, তবে তাহাতে সকলে সমান; অচিরেই আল্লাহ্ তা‘আলা তাহাদিগকে তাহাদের মিথ্যা উক্তিগুলির শাস্তি দিবেন; নিশ্চয়ই তিনি প্রজ্ঞাময়, মহাজ্ঞানী।
قَدْ خَسِرَ الَّذِينَ قَتَلُوا أَوْلَادَهُمْ سَفَهًا بِغَيْرِ عِلْمٍ وَحَرَّمُوا مَا رَزَقَهُمُ اللَّهُ افْتِرَاءً عَلَى اللَّهِ ۚ قَدْ ضَلُّوا وَمَا كَانُوا مُهْتَدِينَ
বাংলা অর্থ:
১৪০। বাস্তবিক ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে তাহারা যাহারা নিজেদের সন্তানদিগকে নিছক নিবোধের ন্যায় প্রমাণ ব্যতিরেকে হত্যা করিয়াছে এবং যে-সকল বস্তু আল্লাহ তাহাদিগকে পানাহারের জন্য দিয়াছিলেন তাহা হারাম করিয়া লইয়াছে, কেবল আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করিয়া; নিশ্চয় ইহারা গোমরাহীতে পতিত হইয়াছে এবং কখনও সুপথগামী হয় নাই।
وَهُوَ الَّذِي أَنشَأَ جَنَّاتٍ مَّعْرُوشَاتٍ وَغَيْرَ مَعْرُوشَاتٍ وَالنَّخْلَ وَالزَّرْعَ مُخْتَلِفًا أُكُلُهُ وَالزَّيْتُونَ وَالرُّمَّانَ مُتَشَابِهًا وَغَيْرَ مُتَشَابِهٍ ۚ كُلُوا مِن ثَمَرِهِ إِذَا أَثْمَرَ وَآتُوا حَقَّهُ يَوْمَ حَصَادِهِ ۖ وَلَا تُسْرِفُوا ۚ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ
বাংলা অর্থ:
১৪১। আর তিনিই সেই সত্তা, যিনি বাগানসমূহ সৃষ্টি করিয়াছেন -যেগুলি জাফরি অবলম্বী এবং উহাও যেগুলি জাফরি অবলম্বী নয়, এবং খেজুর বৃক্ষ ও শস্যক্ষেত্র, যাহাতে বিভিন্ন প্রকারের খাদ্যবস্তু উৎপন্ন হয়, এবং যাইতুন ও দাড়িম্ব – যাহা পরস্পর সাদৃশ্যও হয় অসাদৃশ্যও হয়; এইগুলির ফল ভক্ষণ কর যখন উহা ধরে, আর উহার (নিধারিত) হক্ব প্রদান কর উহা কাটার দিনে, এবং সীমালঙ্ঘন করিও না; নিশ্চয় তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদিগকে পছন্দ করেন না।
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। বাহারী, সায়েবা, হামী, ওয়াসীলঅ, প্রভুতি কতিপয় গৃহপালিত পশুর উপর আরোহণ করা, দোহন করা, এবং যবাহ করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা কাফেরেরা নিষিদ্ধ মনে করিত এবং সতর্কতা সহকারে উক্ত কাজের সময় আল্লাহর নাম ত্যাগ করিত। অত্র আয়াতে তাহাদের সেই অবস্থাই বর্ণিত হইয়াছে। ( ব:কো:)
২। কাফেরদের আর একটি রীতি এই ছিল যে, দেবতার নামে উৎসর্গিত উক্ত পশুগুলির পেট হইতে জীবিত শাবক বাহির হইলে তাহা কেবল পুরুষদের জন্য হালাল, কিন্তু মৃত বাহির হইলে উভয়ের জন্যই হালাল। এইরূপ মনগড়া প্রথার প্রচলন করা কঠিন গুনাহ। ইসলামে এই ব্যাপারে স্ত্রী- পুরুষের মধ্যে কোন প্রভেদ নাই। (মু:কো:)
৩। দরিদ্রতা ও বিবাহে যৌতুক দেওয়ার ভয়ে কাফেরেরা মেয়েদিগকে হত্যা করিয়া ফেলিত। (মু:কো:)
وَمِنَ الْأَنْعَامِ حَمُولَةً وَفَرْشًا ۚ كُلُوا مِمَّا رَزَقَكُمُ اللَّهُ وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ ۚ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ
বাংলা অর্থ:
১৪২। আর চতুষ্পদগুলির মধ্যে উচ্চাকৃতি ও খর্বাকৃতির ; যাহাকিছু আল্লাহ্ তোমাদিগকে প্রদান করিয়াছেন, তাহা ভক্ষন কর, আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করিও না; নি:সন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
ثَمَانِيَةَ أَزْوَاجٍ ۖ مِّنَ الضَّأْنِ اثْنَيْنِ وَمِنَ الْمَعْزِ اثْنَيْنِ ۗ قُلْ آلذَّكَرَيْنِ حَرَّمَ أَمِ الْأُنثَيَيْنِ أَمَّا اشْتَمَلَتْ عَلَيْهِ أَرْحَامُ الْأُنثَيَيْنِ ۖ نَبِّئُونِي بِعِلْمٍ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ
বাংলা অর্থ:
১৪৩। (তিনি সৃষ্টি করিয়াছেন) আটটি নর ও মাদী, অর্থাৎ ভেড়া (ও দুম্বা) – এর মধ্যে দুই প্রকার, এবং বকরীর মধ্যে দুই প্রকার; আপনি বুলন, আল্লাহ তা‘আলা কি এতদুভয় নরকে হারাম বলিয়াছেন, অথবা উভয় মাদীকে, অথবা উহাকে , যাহা উভয় মাদী গর্ভে ধারণ করিয়া আছে ? তোমরা আমাকে প্রমাণ সহকারে তো বল , যদি তোমরা সত্যবাদী হও ।
وَمِنَ الْإِبِلِ اثْنَيْنِ وَمِنَ الْبَقَرِ اثْنَيْنِ ۗ قُلْ آلذَّكَرَيْنِ حَرَّمَ أَمِ الْأُنثَيَيْنِ أَمَّا اشْتَمَلَتْ عَلَيْهِ أَرْحَامُ الْأُنثَيَيْنِ ۖ أَمْ كُنتُمْ شُهَدَاءَ إِذْ وَصَّاكُمُ اللَّهُ بِهَـٰذَا ۚ فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا لِّيُضِلَّ النَّاسَ بِغَيْرِ عِلْمٍ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
বাংলা অর্থ:
১৪৪। আর উটের মধ্যে দুই প্রকার ও গরুর মধ্যে দুই প্রকার (নর ও মাদী); আপনি বলুন, আল্লাহ্ কি এতদুভয় নরকে হারাম বলিয়াছেন, অথবা উভয় মাদীকে? অথবা উহাকে যাহা উভয় মাদী গর্ভে ধারণ করিয়া আছে। তোমরা কি উপস্থিত ছিলে যখন আল্লাহ তা‘আলা তোমাদিগকে ইহার (অবৈধতা ও বৈধতার) আদেশ করেন ? তবে তাহার চেয়ে অধিক যালেম আর কে হইবে, যে- ব্যক্তি বিনা প্রমাণে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে লোকদিগকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে; নিশ্চয় আল্লাহ পাক যালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করিবেন না।
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। এই আয়াতটি ছদকা সম্বন্ধীয়, যাকাত সম্বন্ধীয় নহে। কেননা , যাকাতের আয়াত মদীনায় নাযিল হইয়াছে । আর এই আয়াতটি মক্কায় নাযিল হইয়াছে । ছাবেত ইবনে কায়স সাহাবী পাঁচশত খেজুর বৃক্ষের মালিক ছিলেন। সমস্ত খেজুর কাটিয়া ছদকা করিয়া দিলে তদুপলক্ষ্যে এই আয়াতটি নাযিল হয় । (মু:কো:)
২। আউফ ইবনে মালেক হুযূরের সমীপে আসিয়া বলিন, আমাদের পূর্ব পুরুষেরা যাহা হারাম করিয়াছেন, আপনিও কি তাহাই হারাম করিয়াছেন? হুযূর (দ:) বলিলেন পূর্ব পুরুষেরা হারাম করিলে হারাম হয় না । অত:পর এই আয়াত নাযিল হয়। তখন হুযূর (দ:) আউফকে বলিলেন চতুষ্পদ জন্তুগলিকে আল্লাহ মানুষের খাওয়া ও উপকার লাভের জন্য সৃষ্টি করিয়াছেন। তোমরা উহার কতকগুলিকে হারাম করিয়া লইয়াছ। তোমরা কি এইগুলিকে নর, মাদী বা পেট হইতে নির্গত বাচ্চা হওয়ার কারণে হারাম করিয়াছ ? আউফ নীরব হইয়া গেল । (মু: কো:)
قُل لَّا أَجِدُ فِي مَا أُوحِيَ إِلَيَّ مُحَرَّمًا عَلَىٰ طَاعِمٍ يَطْعَمُهُ إِلَّا أَن يَكُونَ مَيْتَةً أَوْ دَمًا مَّسْفُوحًا أَوْ لَحْمَ خِنزِيرٍ فَإِنَّهُ رِجْسٌ أَوْ فِسْقًا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ ۚ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلَا عَادٍ فَإِنَّ رَبَّكَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
বাংলা অর্থ:
১৪৫। আপনি বলিয়া দিন, যে সমস্ত আহকাম ওহীর মাধ্যমে আমার নিকট পৌঁছিয়াছে উহাতে তো আমি কোন হারাম খাদ্য দেখিতেছি না কোন ভক্ষণকারীর জন্য যে উহা ভক্ষণ করে, কিন্তু মৃত (জীব) কিংবা প্রবহমান রক্ত কিংবা শূকরের মাংস (হারাম) কেননা, শূকর সম্পর্ণ না পাক, অথবা যাহা শিরকের উপকরণ- আল্লাহ ব্যতীত কাহারও নামে যে-গুলি উৎসর্গ করা হইয়াছে (এইগুলি সমস্তই হারাম) অনন্তর যে-ব্যক্তি (ক্ষুধায়) অনন্যোপায় হউয়া পড়ে এই শর্তে যে, সে স্বাদ গ্রহণেচ্ছুক না হয় এবং সীমা অতিক্রমকারীও না হয়, তবে অবশ্যই আপনার প্রতিপালক অতীব মার্জনাকারী, পরম দয়ালু।
وَعَلَى الَّذِينَ هَادُوا حَرَّمْنَا كُلَّ ذِي ظُفُرٍ ۖ وَمِنَ الْبَقَرِ وَالْغَنَمِ حَرَّمْنَا عَلَيْهِمْ شُحُومَهُمَا إِلَّا مَا حَمَلَتْ ظُهُورُهُمَا أَوِ الْحَوَايَا أَوْ مَا اخْتَلَطَ بِعَظْمٍ ۚ ذَٰلِكَ جَزَيْنَاهُم بِبَغْيِهِمْ ۖ وَإِنَّا لَصَادِقُونَ
বাংলা অর্থ:
১৪৬। আর আমি ইহুদীদের জন্য সকল নখর বিশিষ্ট জীব হারাম করিয়া দিয়াছিলাম এবং গরু ও ছাগল হইতে তাহাদের জন্য উভয়ের চর্বি হারাম করিয়াছিলাম, কিন্তু যাহা উহাদের পিঠের উপর অথবা অন্ত্রের সহিত জড়িত অথবা হাড়ের সহিত মিলিত থাকে; তাহাদের দুষ্টামির দরুন তাহাদিগকে এই শাস্তি দিয়াছিলাম, আর আমি নিশ্চয়ই সত্যবাদী।
فَإِن كَذَّبُوكَ فَقُل رَّبُّكُمْ ذُو رَحْمَةٍ وَاسِعَةٍ وَلَا يُرَدُّ بَأْسُهُ عَنِ الْقَوْمِ الْمُجْرِمِينَ
বাংলা অর্থ:
১৪৭। অত:পর যদি ইহারা আপনাকে মিথ্যাবাদী বলে, তবে আপনি বলিয়া দিন, তোমাদের প্রতিপালক সুপ্রশস্ত করুণাবান, এবং তাঁহার শাস্তি অপরাধীদের হইতে টলিবে না ।
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। পূবোক্ত আয়াতে সর্বশেস শবদ “ক্বওমায যোয়ালিমীন ” বলিতে এইখানে আমার ইবনে লোহাই উদ্দেশ্য । এই হারাম ও হালালের মিথ্যা নিয়ম সেই নিধারণ করিয়ছিল। হুযূর (দ:) বলিয়াছেন, আমি আমরকে দোযখের মধ্যে দেখিয়াছি। তাহারা দগ্ধিভূত অন্ত্রের দুর্গন্ধে দোযখবাসীদের খুব কষ্ট হইতেছে। চতুষ্পদ জন্তুর হারাম বা হালাল সম্বন্ধীয় উপরোক্ত আয়াতটি শনিয়া বলিয়া উঠিল সব জন্তুই তো হালাল হইয়া গেল, আর হারাম রহিল কোনটি ? এই সম্বন্ধে পরবর্তী আয়াতটি নাযিল হয় (মু:কো:)
২। কাফেরেরা বলিত, আমরা যে দেবদেবীল পূজা করিতেছি এবং কতিপয় বস্তুকে হারাম রূপে গণ্য করিতেছি , তাহা যদি খোদার অপছন্দনীয় হইত, তবে তিনি আমাদিগবে এ কাজ করিতে দিতেন না (মু:কো:)
سَيَقُولُ الَّذِينَ أَشْرَكُوا لَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا أَشْرَكْنَا وَلَا آبَاؤُنَا وَلَا حَرَّمْنَا مِن شَيْءٍ ۚ كَذَٰلِكَ كَذَّبَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ حَتَّىٰ ذَاقُوا بَأْسَنَا ۗ قُلْ هَلْ عِندَكُم مِّنْ عِلْمٍ فَتُخْرِجُوهُ لَنَا ۖ إِن تَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ وَإِنْ أَنتُمْ إِلَّا تَخْرُصُونَ
বাংলা অর্থ:
১৪৮। এই মুশরেকরা এরূপ বলিতে উদ্যত যে, যদি আল্লাহর মঞ্জর হইত, তবে আমরাও শিরক করিতাম না এবং আমাদের পূর্ব পুরুষরাও না, আর আমরা কোন বস্তুকে হারামও বলিতে পারিতাম না । এইরূপে ইহাদের পূর্ববর্তীরাও (রাসূলগণকে) মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করিয়াছিল, যে পর্যন্ত না তাহারা আমার আযাবের আস্বাদ গ্রহণ করিয়াছিল; আপনি বলুন, তোমাদের নিকট কোন প্রমাণ আছে কি, যে তাহা আমাদের নিকট প্রকাশ করিবে? তোমরা কেবল অলীক কল্পনার পিছনেই চলিতেছ এবং তোমরা সম্পূর্ণ অনুমানের উপরই বলিতেছ।
قُلْ فَلِلَّهِ الْحُجَّةُ الْبَالِغَةُ ۖ فَلَوْ شَاءَ لَهَدَاكُمْ أَجْمَعِينَ
বাংলা অর্থ:
১৪৯। আপনি বলুন, পূর্ণ যুক্তি -প্রমাণ কেবল আল্লাহরই রহিয়াছে, অনন্তর যদি তিনি চাহিতেন, তবে তোমাদের সকলকে পথে আনয়ন করিতেন।
قُلْ هَلُمَّ شُهَدَاءَكُمُ الَّذِينَ يَشْهَدُونَ أَنَّ اللَّهَ حَرَّمَ هَـٰذَا ۖ فَإِن شَهِدُوا فَلَا تَشْهَدْ مَعَهُمْ ۚ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا وَالَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِالْآخِرَةِ وَهُم بِرَبِّهِمْ يَعْدِلُونَ
বাংলা অর্থ:
১৫০। আপনি বলুন, নিজেদের সাক্ষীদিগকে আন যাহারা ইহার সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ তা‘আলা এই বস্তুগুলিকে হারাম করিয়াছেন, অনন্তর যদি তাহারা সাক্ষ্য প্রদানও করে, তবুও আপনি সেই সাক্ষ্য গ্রহণ করিবেন না, এবং এইরূপ লোকদের অমূলক ধারণার অনুসরণ করিবেন না যাহারা আমার আয়াতগুলিকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে, এবং যাহারা আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখে না, আর তাহারা স্বীয় প্রতিপালকের সমকক্ষ অন্যকে সাব্যস্ত করে।
قُلْ تَعَالَوْا أَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَيْكُمْ ۖ أَلَّا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا ۖ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا ۖ وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُم مِّنْ إِمْلَاقٍ ۖ نَّحْنُ نَرْزُقُكُمْ وَإِيَّاهُمْ ۖ وَلَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ ۖ وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ ۚ ذَٰلِكُمْ وَصَّاكُم بِهِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
বাংলা অর্থ:
১৫১। আপনি বলুন আস, আমি তোমদিগকে ঐ সকল বিষয়গুলি পড়িয়া শুনাই যেগুলি তোমাদের রব্ব তোমাদের জন্য হারাম করিয়া দিয়াছেন, তাহা এই যে, আল্লাহ তা‘আলা র সহিত কোন বস্তুকে শরীক স্থির করিও না আর পিতা-মাতার সহিত সদ্ব্যবহার করিবে এবং নিজেদের সন্তানদিগকে দারিদ্রের কারণে হত্যা করিও না; আমি ইহাদিগকে এবং তোমাদিগকে রিযক দান করিব, এবং লজ্জাহীনতার যত পন্থা আছে উহার নিকটেও যাইও না তাহা প্রকাশ্যই হউক আর গোপনই হউক, আর যাহাকে হত্যা করা আল্লাহ হারাম করিয়াছেন, তাহাকে হত্যা করিও না কিন্তু হক্কভাবে (শরীঅতানুযায়ী ) এবিষয়ে তোমাদিগকে তাকীদাী নির্দেশ দিয়াছেন, যেন তোমরা উপলব্ধি কর।
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। অর্থাৎ তোমাদের দাবির অসারতা ও অনর্থকতা প্রমাণিত হইয়াগিয়াছে । তোমাদের নিকট কোন প্রমাণ নাই। তথাপি যখন সত্যকে মান না , তখন বুঝা গেল যে, তোরাদের ভাগ্যে হেদায়েত নাই। (মু: কো:)
২। ওবাদা উবনুছ ছামেতের হাদীসে বর্ণিত আছে, হুযূর (দ:) বলিয়াছেন, তিনটি কথার উপর আমার হাতে তোমরা কে বাইআত করিবে? অত:পর এই আয়াতটি পাঠ করিলেন । পাঠ শেষ করিয়া বলিলেন , এই বাইআত যে ব্যক্তি পালন করিবে, তাহার পুরস্কার আল্লাহর হাতে। আর যে ব্যক্তি উহাতে কিছু ক্রটি করে এবং দুনিয়াতেই আল্লাহ তাহাকে শাস্তি দেন, তাহা সেই ক্রটিরই দন্ড। (ই:কা:)
৩। অর্থাৎ , তাহারা তোমাদের ভাগ্য নিধারিত রিযিকের মধ্যে অংশীদর হইবে না । তাহারা নিজেদের ভাগ্য নিধারিত রিযিকই ভোগ করিবে। তবে কেন তোমরা অনর্থক সন্তান বধ করিতেছ? (ব:কো:)
وَلَا تَقْرَبُوا مَالَ الْيَتِيمِ إِلَّا بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ حَتَّىٰ يَبْلُغَ أَشُدَّهُ ۖ وَأَوْفُوا الْكَيْلَ وَالْمِيزَانَ بِالْقِسْطِ ۖ لَا نُكَلِّفُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا ۖ وَإِذَا قُلْتُمْ فَاعْدِلُوا وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبَىٰ ۖ وَبِعَهْدِ اللَّهِ أَوْفُوا ۚ ذَٰلِكُمْ وَصَّاكُم بِهِ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ
বাংলা অর্থ:
১৫২। এতীমের ধন-সম্পত্তির নিকটও যাইও না, কিন্তু এইরূপে যাহা উত্তম হয় – যে পর্যন্ত না তাহারা সাবালক হয়, আর পরিমাপও ওযন ঠিক ঠিকভাবে সম্পন্ন করিও ন্যায়ের সহিত আমি কোন মানুষকে তাহার সাধ্যাতীত কষ্ট প্রদান করি না, আর যখন তোমরা (সাক্ষ্য বা মীমাংসার ) কথা বল, তখন ন্যায়ের প্রতি লক্ষ্য রাখিও যদি ব্যক্তি আত্মীয়ও হয়, আর আল্লাহর সহিত যে অঙ্গীকার কর উহা পূর্ণ করিও; এই (সকল) বিষয়ে আল্লাহ পাক তোমাদের প্রতি তাকীদী নির্দেশ দিয়াছেন, যেন তোমরা স্মরণ রাখ।
وَأَنَّ هَـٰذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ ۖ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَن سَبِيلِهِ ۚ ذَٰلِكُمْ وَصَّاكُم بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
বাংলা অর্থ:
১৫৩। আর ইহা (-ও বরূন) যে, এই ধর্ম আমার পথ-যাহা সোজা, অতএব, এই পথের অনুসরণ কর, এবং অন্যসব পথের অনুসরণ করিও না, কেননা ঐ সকল পথ তোমাদিগকে আল্লাহর পথ হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া ফেলিবে; এই সকল বিষয়ে তোগাদিগকে আল্লাহ তকীদী নির্দেশ দিয়াচেন, যেন তোমরা মুত্তাক্কী হইয়া যাও।
ثُمَّ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ تَمَامًا عَلَى الَّذِي أَحْسَنَ وَتَفْصِيلًا لِّكُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً لَّعَلَّهُم بِلِقَاءِ رَبِّهِمْ يُؤْمِنُونَ
বাংলা অর্থ:
১৫৪। অত:পর আমি মূসাকে কিতাব দান করিয়াছিলাম, যাহাতে উত্তমরূপে আমলকারীদের প্রতি আমার নেয়ামত পূর্ণ হয় এবং সমস্ত বিধানের বিস্তারিত বর্ণনা হয় এবং পথ প্রদর্শক হয় এবং রহমত হয়, যেন তাহারা নিজ রব্বের সহিত সাক্ষাতের প্রতি বিশ্বাসী হয় ।
وَهَـٰذَا كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ فَاتَّبِعُوهُ وَاتَّقُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
বাংলা অর্থ:
১৫৫। আর ইহা (কোরআন) একটি কিতাব, যাহা আমি নাযিল করিয়াছি, অতিশয় কল্যাণময়, অতএব ইহার অনুসরণ কর এবং ভয় কর, যেন তোমাদের প্রতি বরকত হয়।
أَن تَقُولُوا إِنَّمَا أُنزِلَ الْكِتَابُ عَلَىٰ طَائِفَتَيْنِ مِن قَبْلِنَا وَإِن كُنَّا عَن دِرَاسَتِهِمْ لَغَافِلِينَ
বাংলা অর্থ:
১৫৬ । তোমরা হয়ত বলিতে পার যে, কিতাব তো শুধু আমাদের পূর্বে যে দুই সম্প্রদায় ছিল, তাহাদের প্রতি নাযিল হইয়াছিল, আর আমরা তো উহার পঠন ও পাঠন হইতে সম্পূর্ণ বে-খবর ছিলাম।
أَوْ تَقُولُوا لَوْ أَنَّا أُنزِلَ عَلَيْنَا الْكِتَابُ لَكُنَّا أَهْدَىٰ مِنْهُمْ ۚ فَقَدْ جَاءَكُم بَيِّنَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ ۚ فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن كَذَّبَ بِآيَاتِ اللَّهِ وَصَدَفَ عَنْهَا ۗ سَنَجْزِي الَّذِينَ يَصْدِفُونَ عَنْ آيَاتِنَا سُوءَ الْعَذَابِ بِمَا كَانُوا يَصْدِفُونَ
বাংলা অর্থ:
১৫৭। অথবা এইরূপ বলিতে পার যে, যদি আমাদের প্রতি কোন কিতাব নাযিল হইত, তবে আমরা তাহাদের অপেক্ষাও অধিক সুপথে থাকিতাম, অতএব, এখন তোমাদের নিকট তোমাদের রব্বের তরফ হইতে একটি সুস্পষ্ট কিতাব এবং হেদায়তের উপকরণ ও রহমত সমাগত হইয়াছে, সুতরাং সে ব্যক্তি হইতে অধিক যালেম কে হইবে, যে আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে এবং উহা হইতে (অন্যকেও) প্রতিরোধ করে ? আমি শীঘ্রই উহাদিগকে – যাহারা আমার আয়াতসমূহ হইতে (অন্যকে) প্রতিরোধ করে, তাহাদের এই প্রতিরোধের কারণে কঠোর শাস্তি দিব।
هَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا أَن تَأْتِيَهُمُ الْمَلَائِكَةُ أَوْ يَأْتِيَ رَبُّكَ أَوْ يَأْتِيَ بَعْضُ آيَاتِ رَبِّكَ ۗ يَوْمَ يَأْتِي بَعْضُ آيَاتِ رَبِّكَ لَا يَنفَعُ نَفْسًا إِيمَانُهَا لَمْ تَكُنْ آمَنَتْ مِن قَبْلُ أَوْ كَسَبَتْ فِي إِيمَانِهَا خَيْرًا ۗ قُلِ انتَظِرُوا إِنَّا مُنتَظِرُونَ
বাংলা অর্থ:
১৫৮ । ইহারা কেবল এই প্রতীক্ষায় রহিয়াছে যে, তাহাদের নিকট ফেরেশতা পৌঁছিবে অথবা রব্ব আগমন করিবেন অথবা আপনার রব্বের একটি বড় নিদর্শন আসিবে; (শুনিয়া রাখুন) যেদিন আপনার প্রতিপালকের বড় নিদর্শন আসিয়া পৌঁছিবে, (সে-দিন) কোন ব্যক্তির ঈমান তাহার কাজে আসিবে না, যে ব্যক্তি পূর্ব হইতে ঈমানদার ছিল না, অথবা (ঈমানদার তো ছিল, কিন্তু) সে স্বীয় ঈমানের মধ্যে কোন সৎকাজ করে নাই আপনি বলিয়া দিন, তোমরা প্রতীক্ষায় থাক, আমি ও প্রতীক্ষায় রহিলাম।
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। উক্ত দুই সম্প্রদায় অর্থাৎ ইহুদী ও নাছারার উপর নাযিলকৃত কিতাব যথাক্রমে তাওরাত ও ইঞ্জীল । অবারবী ভাষায় আরবদের পক্ষে তাহা দুবোধ্য ছিল। কাজেই আরবের কাফেরেরা বলিতে পারিত, আমরা আমাদের পূর্ববতী কিতাবদ্বয়ের ভাষা সম্বন্ধে অজ্ঞ বলিয়া আমরা আল্লাহর আদেশ নিষেধ পালন করিতে পারি নাই। কাজেই আল্লাহ আরবী ভাষায় কোরআন নাযিল করিয়াছেন। (ই: কা:)
২। উক্ত বড় নিদর্শন টি হইল পশ্চিম দিক হইতে সূর্য উদিত হওয়া । পশ্চিমাকাশে সূর্যোদয়ের পূবে যাহারা ঈমান আনে নাই, তাহাদের ঈমান কবূল হইবে না। সেই সময় কাহারও তওবা ও কবূব হইবে না । ইহার কারণ এই যে, পশ্চিমে সূর্যোদয় হইলে ঊধ্ব জগতের স্বাভাবিক নিয়ম- বৈষম্য দৃষ্টহয় । সুতরাং আর “গায়েবের প্রতি ঈমান আনা” রহিল না । (ব: কো:)
إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ ۚ إِنَّمَا أَمْرُهُمْ إِلَى اللَّهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُوا يَفْعَلُونَ
বাংলা অর্থ:
১৫৯। নিশ্চয় যাহারা নিজেদের ধর্মকে খন্ডে খন্ডে বিভক্ত করিয়া ফেলিয়াছে এবং দলে দলে বিভক্ত হইয়াছে, তাহাদের সহিত আপনার কোন সংস্রাব নাই; তাহাদের বিষয়দি আল্লাহ তা‘আলা হাওয়ালায় রহিয়াছে, অত:পর তিনি তাহাদিগকে তাহাদের কৃতকর্মগুলি জানাইয়া দিবেন।
مَن جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا ۖ وَمَن جَاءَ بِالسَّيِّئَةِ فَلَا يُجْزَىٰ إِلَّا مِثْلَهَا وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ
বাংলা অর্থ:
১৬০। যে ব্যক্তি নেক কাজ সম্পাদন করিবে, সে উহার দশ গুণ প্রাপ্ত হইবে, আর যে- ব্যক্তি মন্দ কাজ করিবে, সুতরাং সে তাহার কর্ম পরিমাণই শাস্তি প্রাপ্ত হইবে এবং তাহাদের প্রতি যুলম করা হইবে না।
قُلْ إِنَّنِي هَدَانِي رَبِّي إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ دِينًا قِيَمًا مِّلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا ۚ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ
বাংলা অর্থ:
১৬১। আপনি বলিয়া দিন, আমার রব্ব আমাকে একটি সরল পথ প্রদর্শন করিয়াছেন, ইহা একটি সুদৃঢ় ধর্ম, যাহা ইব্রাহীমের তরীকা-যাহাতে একটুও বক্রতা নাই, তিনি মুশরেকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
বাংলা অর্থ:
১৬২। আপনি বলিয়া দিন, নিশ্চয় আমার নামায এবং আমার সকল এবাদত এবং আমার জীবন এবং আমার মরণ এই সমুদয় একমাত্র আল্লাহরই জন্য, যিনি সমগ্র বিশ্বের অধিপতি ।
ا شَرِيكَ لَهُ ۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ
বাংলা অর্থ:
১৬৩। তাঁহার কোন শরীক নাই, এবং আমার প্রতি ইহারই আদেশ হইয়াছে এবং আমি সমস্ত অনুগতদের মধ্যে (অনুগত)।
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। হযরত ইবনে আব্বাস বলেন , আয়াতে উক্ত ব্যক্তিরা হইতেছেন ইহুদী ও নাছারা । হাসান (রা:) বলেন ইহারা মুশরিক সম্প্রদায়। কেননা, ইহাদের মধ্যেও বহুদল রহিয়াছে । যেমন অগ্নিপূজক, নক্ষত্র – পূর্জকম প্রতিমা- পূজক ইত্যাদি। (ব:কো:)
২। দুররে মানসুর নামক তফসীরে উল্লেখ আছে যে, ঈমান ও নেকাজরে মধ্যে গণ্য। কেননা, বিশ্বাস, আনুগত্য এবং স্বীকারোক্তি এই তিনের সমষ্টিই ঈমান। সুতারাং ঈমান ও একটি নেককাজ । সুতরাং বাহ্যন্দ্রিয়ের দ্বারা সম্পন্ন নেককাজের ন্যায় ঈমানের জন্য দশগুণ সওয়াব পাওয়া যাইবে। অর্থাঃৎ ঈমান আনার জন্য যে রহমত প্রদানের ওয়াদা দেওয়া হইয়াছে, কেহ ঈমান আনিলে উহার দশগুণ পাওয়া যাবে।
قُلْ أَغَيْرَ اللَّهِ أَبْغِي رَبًّا وَهُوَ رَبُّ كُلِّ شَيْءٍ ۚ وَلَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ إِلَّا عَلَيْهَا ۚ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ ۚ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّكُم مَّرْجِعُكُمْ فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ
বাংলা অর্থ:
১৬৪। আপনি বলিয়া দিন, আমি কি আল্লাহ ভিন্ন অপর কাহাকেও প্রতিপালকরূপে অন্বেষণ করিব? অথচ তিনি সকল বস্তুর মালিক; আর প্রত্যেক ব্যক্তিই যাহাকিছু করে, তাহা তাহারই উপর বর্তায়, এবং কেহ অন্য কাহারও (গুনাহর) বোঝা বহন করিবে না, পরিশেষে তোমাদের সকলকে স্বীয় রব্বের সমীপে যাইতে হইবে, অনন্তর তিনি তোমাদিগকে জানাইয়া দিবেন, যে যে বিষয়ে তোমরা মতভেদ করিতেছিলে।
وَهُوَ الَّذِي جَعَلَكُمْ خَلَائِفَ الْأَرْضِ وَرَفَعَ بَعْضَكُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِّيَبْلُوَكُمْ فِي مَا آتَاكُمْ ۗ إِنَّ رَبَّكَ سَرِيعُ الْعِقَابِ وَإِنَّهُ لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ
বাংলা অর্থ:
১৬৫। আর তিনি এমন, যিনি তোগাদিগকে ভূ-পৃষ্ঠে ক্ষমতাবান বানাইয়াছেন এবং একের মর্যাদা অন্যের উপর বৃদ্ধি করিয়াছেন, যেন তোমাদিগকে পরীক্ষা করিয়া লন ঐ সকল বস্তুর মধ্যে যাহা তোমাদিগকে প্রদান করিয়াছেন; নিশ্চয় আপনার রব্ব ত্বরিত শাস্তি প্রদানকারী, আর নি:সন্দেহে তিনিই প্রকৃতপক্ষে অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম দয়াময়।
সূরা আনআম বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। কাফেরেরা হুযূর (দ:) কে এবং মুসলামানদিগকে নিজেদের ভ্রান্ত মতের দিকে আহবান করিত। তাহারা বলিত, আমাদের ধর্ম ও মতাবাদ গ্রহণ করিলে যদি তোমাদের পাপ হয় বলিয়া মনে কর, তবে আমরা তোমাদের সেই পাপের ভার গ্রহণ করতে রাযী আছি। (ব: কো:)
২। পরীক্ষার উপায় এই যে, কাহারা এই দানগুলির কদর করিয়া দাতার আনুগত্য প্রকাশ করে , আর কাহারা ইহার বিপরীত করে দেখা যাইবে। ফলত: এক শ্রেণীর লোক অনুগত এবং অপর এক শ্রেণী অবাধ্য হইল। উভয় শ্রেণীর প্রতি তাহাদের কাজের অনুরূপ যথাযোগ্য ব্যবহার করা হইবে। অর্থাৎ , নাফরমানদিগকে শাস্তি এবং ফরমাঁবরদারদিগকে শান্তি প্রদান করিবেন। (ব:কো:)
৩। অর্থাৎ যাহারা তোমাদিগকে পথভ্রষ্ট করে, যেমন মানুষ ও জিন জাতীয় শয়তান গণ (ব:কো:)
সূরা আন-নিসা বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা আল-মায়েদা বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
আমাদের, ফেসবুক পেইজে লাইক, শেয়ার এবং কমেন্টস করে আমাদের সাথেই থাকুন।