সূরা আনফাল এর বাংলা অনুবাদ
সর্বমোট আয়াত-৭৫
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু
يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْأَنفَالِ ۖ قُلِ الْأَنفَالُ لِلَّهِ وَالرَّسُولِ ۖ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَصْلِحُوا ذَاتَ بَيْنِكُمْ ۖ وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
বাংলা অর্থ:
১। তাহারা আপনার নিকট গনীমতসমূহের বিধান জিজ্ঞাসা করিতেছে; আপনি বলিয়া দনি, এই গনীমতসমূহ আল্লাহ্ ও রাসূলের জন্য অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের সংশোধন কর, আর আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলের অনুসরণ কর, যািদ তোমরা ঈমানদার হও।
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَىٰ رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ
বাংলা অর্থ:
২। নিশ্চয়, ঈমানদারগণ তো এইরূপই হয় যে, যখন (তাহাদের সম্মুখে) আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়, তখন তাহাদের অন্তরসমূহ ভীত হইয়া পড়ে, আর যখন তাহাদিগকে আল্লাহর আয়াতসমূহ পড়িয়া শুনান হয়, তখন সেই আয়াতসমূহ তাহাদের ঈমানকে আরও বৃদ্ধি করিয়া দেয়, আর তাহারা নিজেদের পরওয়ারদেগারের উপর নির্ভর করে।
الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ
বাংলা অর্থ:
৩। (আর) যাহারা নামাযের পাবন্দী করে এবং আমি যাহাকিছু তাহাদিগকে দিয়াছি উহা হইতে ব্যয় করে।
أُولَـٰئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا ۚ لَّهُمْ دَرَجَاتٌ عِندَ رَبِّهِمْ وَمَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ
বাংলা অর্থ:
৪। ইহারাই সত্যিকারের ঈমানদার; ইহাদের জন্য রহিয়াছে উচ্চ পদসমূহ তাহাদের রব্বের সন্নিধানে, আর ক্ষমা ও সম্মানজনক রিযক।
كَمَا أَخْرَجَكَ رَبُّكَ مِن بَيْتِكَ بِالْحَقِّ وَإِنَّ فَرِيقًا مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ لَكَارِهُونَ
বাংলা অর্থ:
৫। -যেইরূপ আপনার রব্ব আপনাকে আপনার গুহ হইতে (বদরের দিকে) যথাযথ ভাবে বাহির করিলেন, আর মুসলমানদের একটি দল ইহাকে দুর্বহ মনে করিতেছিল।
সূরা আনফাল বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। বদরের যুদ্ধে যুবকেরা শক্র বধ করিয়া গনীমতের মাল সংগ্রহ করে আর বৃদ্ধেরা পশ্চাদ্দিক রক্ষা করে। যুবকের গনীমতের মালে বেশী অংশ দাবি করিলে উভয় দলের মধ্যে বচসা হয়। হযূরের নিকট ব্যাপারটি উপস্থাপিত হইলে এই আয়াত নাযিল হয়। (ব:কো:)
২। আবূ সুফিয়ানের নেতৃত্বে মক্কায় কাফের বণিকদল দেশে ফিরিতেছিল। হুযূর ৩১৩ জন সাহাবী লইয়া ওয়াদী-কেরানে পৌছিলেন। আবূ সুফিয়ান ইহা টের পাইয়া মক্কায় সাহায্য চাহিয়া পাঠাইল। আবূ জাহাল ৯৫০ জন সৈন্য লইয়া বদরে পৌঁছিল। হুযূর সঙ্গীদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, কাফেলা লুন্ঠন করিবে না যুদ্ধ করিবে? কেহ কেহ বলিল, যুদ্ধের জন্য আমরা অপ্রস্তুত, কাফেলা লুন্ঠন করাই ভাল। হুযূর নারায হইলেন। অত:পর হুযূর (দ:) বদরের দিকে রওয়ানা হইলেন। (মু:কো:)
يُجَادِلُونَكَ فِي الْحَقِّ بَعْدَمَا تَبَيَّنَ كَأَنَّمَا يُسَاقُونَ إِلَى الْمَوْتِ وَهُمْ يَنظُرُونَ
বাংলা অর্থ:
৬। সেই যর্থাথ বিষয় প্রকাশ হওয়ার পরও উহাতে তাহারা আপনার সঙ্গে এইরূপ বিবাদ করিতেছিল, যেন কেহ তাহাদিগকে মৃত্যুর দিকে হাকাইয়া লইয়া যাইতেছে, আর তাহারা প্রত্যেক্ষ করিতেছে;
وَإِذْ يَعِدُكُمُ اللَّهُ إِحْدَى الطَّائِفَتَيْنِ أَنَّهَا لَكُمْ وَتَوَدُّونَ أَنَّ غَيْرَ ذَاتِ الشَّوْكَةِ تَكُونُ لَكُمْ وَيُرِيدُ اللَّهُ أَن يُحِقَّ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَيَقْطَعَ دَابِرَ الْكَافِرِينَ
বাংলা অর্থ:
৭। আর তোমরা সেই সময়টিকে স্মরণ কর, যখন আল্লাহ্ তোমাদেরকে সেই দুইটি দলের মধ্য হইতে একটি সম্বন্ধে প্রতিশ্রুতি দিতেছিলেন যে, উহা তোমাদের করতলগত হইবে, আর তোমরা এই অভিপ্রায়ে ছিলে, যেন নিরস্ত্র দলটি তোমাদের আয়ত্তে আসিয়া পড়ে, আর আল্লাহর ইচ্ছা ছিল এই যে, আপন নির্দেশাবলী দ্বারা সত্যকে সত্যরূপে প্রতিপন্ন করিয়া দেন এবং সেই কাফেরদের মূলকে কর্তন করিয়া দেন,
لِيُحِقَّ الْحَقَّ وَيُبْطِلَ الْبَاطِلَ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ
বাংলা অর্থ:
৮। যেন সত্যকে সত্যরূপে এবং অসত্যরূপে প্রমাণিত করিয়া দেন, যদিও এই অপরাধীরা অপ্রীতিকরই মনে করে,
إِذْ تَسْتَغِيثُونَ رَبَّكُمْ فَاسْتَجَابَ لَكُمْ أَنِّي مُمِدُّكُم بِأَلْفٍ مِّنَ الْمَلَائِكَةِ مُرْدِفِينَ
বাংলা অর্থ:
৯। সেই সময়টি (-ও) স্মরণ কর, যখন তোমরা নিজ প্রতিপালকের সমীপেফরিয়াদ করিতেছিলে, তৎপর আল্লাহ্ তোমাদের (ফরিয়াদ) -কে কবূল করিলেন যে, আমি তোমাদিগকে এক হাজার ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করিব, যাহারা ক্রমান্বয়ে চলিয়া আসবে।
وَمَا جَعَلَهُ اللَّهُ إِلَّا بُشْرَىٰ وَلِتَطْمَئِنَّ بِهِ قُلُوبُكُمْ ۚ وَمَا النَّصْرُ إِلَّا مِنْ عِندِ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
বাংলা অর্থ:
১০। আর আল্লাহ্ এই সাহায্য কেবল খোশ-খবরীর জন্যই করিয়াছিলেন, আর যেন তোমাদের অন্তরসমূহ শান্ত হইয়া যায়, আর সাহায্য কেবল আল্লাহরই পক্ষ হইতে হয়; তিনি যবরদস্ত হেকমতওয়ালা।
إِذْ يُغَشِّيكُمُ النُّعَاسَ أَمَنَةً مِّنْهُ وَيُنَزِّلُ عَلَيْكُم مِّنَ السَّمَاءِ مَاءً لِّيُطَهِّرَكُم بِهِ وَيُذْهِبَ عَنكُمْ رِجْزَ الشَّيْطَانِ وَلِيَرْبِطَ عَلَىٰ قُلُوبِكُمْ وَيُثَبِّتَ بِهِ الْأَقْدَامَ
বাংলা অর্থ:
১১। সেই সময়কে স্মরণ কর, যখন আল্লাহ্ তোমাদেরকে স্বীয় সন্নিধান হইতে শান্তি প্রদানের জন্য তন্দ্রাচ্ছন্ন করিতেছিলেন, আর তোমাদের উপর আসমান হইতে পানি বর্ষণ করিতেছিলেন যেন সেই পানি দ্বারা তোমাদিগকে পবিত্র করিয়া দেন, আর তোমাদিগ হইতে শয়তানের ওয়াসওয়াসা দূরীভূত করিয়া দেন এবং তোমাদের অন্তরসমূহকে দৃঢ় করিয়া দেন, আর যেন তোমাদের পদসমূহকে স্থিতিশীল করিয়া দেন;
সূরা আনফাল বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। অর্থাৎ হে মুহাম্মাদ (দ:) জিহাদ ফরয বলিয়া প্রকাশিত হওয়ার পর আপনার সঙ্গীরা জিহাদ সম্বন্ধে আপনার সঙ্গে মতভেদ করিতে ছিল। (মু:কো:)
২। অর্থাৎ আল্লাহ্ যখন তোমাদের সহিত ওয়াদা করিয়াছিলেন যে, কাফেলা লুন্ঠন অথবা যুদ্ধ জয়, এতদুভয়ের একটি তোমাদের হস্তগত হইবে। কাফেরদের সৈন্য ছিল ৯৫০ আর কাফেলার ছিল ৪০ জন্য ঘোড় সওয়ার, সুতরাং কাফেলার শক্তি কম ছিল বলিয়া তোমরা তাহাদিগকে লুন্ঠন করাই সহজ মনে করিয়াছিলে। (মু:কো:)
৩। যুদ্ধের পূর্ব রাত্রিতে সাহাবীগণ আশংকা করিয়াছিলেন, আমাদের দিক বালুময় ভূমি, পা ডাবিয়া যায়, এদিকে পানিও নাই। আল্লাহ্ সাহাবীদের নিদ্রাচ্ছন্ন করিয়া দিলেন। কতিপয় সাহাবীর স্বপ্ন দোষ হইল। তখনই বৃষ্টি বর্ষিত হইল। সকলে পাক হইয়া খাওয়ার পানি লইল। যমীনও শক্ত হইল, পক্ষান্তরে কাফেরের দিক কর্দমাক্ত হইয়া গেল। (মু:কো:)
إِذْ يُوحِي رَبُّكَ إِلَى الْمَلَائِكَةِ أَنِّي مَعَكُمْ فَثَبِّتُوا الَّذِينَ آمَنُوا ۚ سَأُلْقِي فِي قُلُوبِ الَّذِينَ كَفَرُوا الرُّعْبَ فَاضْرِبُوا فَوْقَ الْأَعْنَاقِ وَاضْرِبُوا مِنْهُمْ كُلَّ بَنَانٍ
বাংলা অর্থ:
১২। সেই সময়টি স্মরণ করুন, যখন আপনার পরওয়ারদেগার ফেরেশতাদিগকে আদেশ দিতেছিলেন যে, আমি তোমাদের সঙ্গে আছি, সুতরাং তোমরা ঈমানদারদের সাহস বাড়াও ; আমি সত্বরই কাফেরদের অন্তরসমূহে আতঙ্ক বিস্তার করিয়া দিতেছি, অতএব, তোমরা (কাফেরদের) গর্দানসমূহের উপর আঘাত হন, আর আঘাত কর তাহাদের অঙ্গুলীসমূহের প্রত্যেক জোড়ায় জোড়ায় ;
ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ شَاقُّوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ ۚ وَمَن يُشَاقِقِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَإِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
বাংলা অর্থ:
১৩। ইহা এই অপরাধের শাস্তি যে, তাহারা আল্লাহ ও তাঁহার রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করিয়াছে, আর যাহারা আল্লাহ্ ও আল্লাহর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তবে আল্লাহ্ তা‘আলা তাহাদের শাস্তি প্রদান করেন।
ذَٰلِكُمْ فَذُوقُوهُ وَأَنَّ لِلْكَافِرِينَ عَذَابَ النَّارِ
বাংলা অর্থ:
১৪। অতএব, এই শাস্তির স্বাদ আস্বাদন কর, আর জানিয়া রাখ যে কাফেরদেরই জন্য দোযখের নির্ধারিত রহিয়াছে।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا لَقِيتُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا زَحْفًا فَلَا تُوَلُّوهُمُ الْأَدْبَارَ
বাংলা অর্থ:
১৫। হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা কাফেরদের সহিত মুখামুখি যুদ্ধে লিপ্ত হও, তখন তাহাদের দিকে পিঠ ফিরাইও না ,
وَمَن يُوَلِّهِمْ يَوْمَئِذٍ دُبُرَهُ إِلَّا مُتَحَرِّفًا لِّقِتَالٍ أَوْ مُتَحَيِّزًا إِلَىٰ فِئَةٍ فَقَدْ بَاءَ بِغَضَبٍ مِّنَ اللَّهِ وَمَأْوَاهُ جَهَنَّمُ ۖ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ
বাংলা অর্থ:
১৬। আর সেই সময়ে যে ব্যক্তি তাহাদের দিকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করিবে -কি‘ হাঁ, যে ব্যক্তি যুদ্ধের জন্য কৗশল অবলম্বন করে কিংবা যে ব্যক্তি স্বদলের নিকট আশ্রয় লইতে আসে তাহার কথা স্বতন্ত্র, এতদ্ব্যতীত আর যেব্যক্তি এইরূপ করিবে, সে আল্লাহর গযবে পতিত হইবে এবং তাহার ঠিকানা হইবে দোযখ; আর উহা মন্দ আবাসস্থল।
সূরা আনফাল বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। অর্থাৎ আপনার সাহায্যার্থে প্রেরিত ফেরেশতাদিগকে আমি বলিয়াছিলাম, “আমি তোমাদের সঙ্গে আছি, তোমরা মুনলমানদিগকে সাহস দাও। ” ফলে তাহারা মানবাকারে ঘুরিয়া ঘুরিয়া বলিত, তোমাদের জন্য খোশ-খবর, তোমরা রাযী হইবে, আল্লাহ্ তোমাদের সহায়, তোমরা সাহসের সহিত যুদ্ধ কর, শক্র তোমাদের তুলনায় খুবই কম। তোমাদের জয় সুনিশ্চিত। (মু:কো:)
২। ফেরেশতারা মারিতে জানেন না, তাই আল্লাহ্ তা“আলা শিখাইয় দিতেছেন, “তাহাদের ঘাড়ে এবং আঙ্গুলের গ্ড়োায় ও জোড়ায় জোড়ায় আঘাত কর ” (মু:কো:)
৩। ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় নির্দেশ ছিল একজন মুসলমান দশজন কাপেরের মোকাবেলা করিবে। দশগুণের সম্মুখ হইতে পলায়ন করা হারাম ছিল। বর্তমানে নির্দেশ এই যে, দ্বিগুণ কাফেরের মোকাবেলা হইতে পলায়ন করা হারাম। (মু:কো:)
فَلَمْ تَقْتُلُوهُمْ وَلَـٰكِنَّ اللَّهَ قَتَلَهُمْ ۚ وَمَا رَمَيْتَ إِذْ رَمَيْتَ وَلَـٰكِنَّ اللَّهَ رَمَىٰ ۚ وَلِيُبْلِيَ الْمُؤْمِنِينَ مِنْهُ بَلَاءً حَسَنًا ۚ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
বাংলা অর্থ:
১৭। বস্তুত: তোমরা তাহাদিগকে নিহত কর নাই, পরস্ত তাহাদিগকে নিহত করিয়াছেন, আর আপনি (তাহাদের প্রতি) মৃত্তিকা-মুষ্টি নিক্ষেপ করেন নাই, পরন্ত আল্লাহ্ উহা নিক্ষেপ করিয়াছেন, আর যেন মুসলামনদিগকে স্বীয় সন্নিধান হইত উত্তম পুরস্কার প্রদান করেন; নি:শ্চয় আল্লাহ্ অতিশয় শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।
ذَٰلِكُمْ وَأَنَّ اللَّهَ مُوهِنُ كَيْدِ الْكَافِرِينَ
বাংলা অর্থ:
১৮। এই তো হইল একটি কথা, আর দ্বিতীয় কথ এই যে, আল্লাহর উদ্দেশ্য ছিল কাফেরদের দুরভিসন্ধিকে শিথিল করিয়া দেওয়া।
إِن تَسْتَفْتِحُوا فَقَدْ جَاءَكُمُ الْفَتْحُ ۖ وَإِن تَنتَهُوا فَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ ۖ وَإِن تَعُودُوا نَعُدْ وَلَن تُغْنِيَ عَنكُمْ فِئَتُكُمْ شَيْئًا وَلَوْ كَثُرَتْ وَأَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُؤْمِنِينَ
বাংলা অর্থ:
১৯। (হে কাফেরগণ!) যদি তোমরা মীমাংসা চাও তবে সেই মীামংসা তো তোমাদের সম্মুখে আসিয়া পৌঁছিয়াছে, আর যদি বিরত থাক তবে ইহা তোমাদের জন্য অতি উত্তম, আর যদি তোমরা পুনরায় ঐ কাজই কর তবে আমি ও আবার এই কাজই করিব, আর তোমাদের দলবল তোমাদের কোনই কাজে আসিবে না যদিও সংখ্যায় অধিক হয়, আর বাস্তব কথা এই যে, আল্লাহ্ ঈমানদারদের সঙ্গে আছেন।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَا تَوَلَّوْا عَنْهُ وَأَنتُمْ تَسْمَعُونَ
বাংলা অর্থ:
২০। হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলার আদেশ পালন কর আর তাঁহার রাসূলের (-ও), আর সেই আদেশ পালনে বিমুখ হইও না অথচ তোমরা তো শ্রবণ করিয়াই থাক,
وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ قَالُوا سَمِعْنَا وَهُمْ لَا يَسْمَعُونَ
বাংলা অর্থ:
২১। আর তোমরা সেই সকল লোকের ন্যায় হইও না যাহারা দাবী তো করে যে, আমরা শ্রবণ করিয়াছি, বস্তুত: তাহারা মোটেই শুনে না।
إِنَّ شَرَّ الدَّوَابِّ عِندَ اللَّهِ الصُّمُّ الْبُكْمُ الَّذِينَ لَا يَعْقِلُونَ
বাংলা অর্থ:
২২। নিশ্চয়ই সৃষ্টির নিকৃষ্টতম জীব আল্লাহর নিকট ঐ সমস্ত লোক যাহারা বধির, মূক, (আর) যাহারা একটুও বুঝে না।
সূরা আনফাল বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। যুদ্ধ আরম্ভ হওয়া মাত্র কাফেরেরা এক সঙ্গে আক্রমণ করিল, তখন হুযূর জিব্রাঈল (আ:) এর নির্দেশে এক মুষ্টি বালু কাফেরদের প্রতি নিক্ষেপ করেন, কাফেরদের চোখে মুখে ঐ বালু পড়িতেই তাহার বেশামাল হইয়া পড়িল। যুদ্ধে কাফেরদের ৭০ ব্যক্তি নিহত ও ৭০ ব্যক্তি বন্দী হইল। যুদ্ধশেষে মুসলমানেরা পরস্পর মৃত ও মৃতদের হন্তা ও ধর্তা সম্বন্ধে বলাবলি করিতে লাগিলে এই আয়াতটি নাযিল হইয়াছে । (মু:কো:)
২। অর্থাৎ কাফেরেরা যদি যুদ্ধে পরাজিত না হইয়া গায়েবী কুদরতে পরাভূত হইত, তবে তাহারা মুসলমানদের শক্তির পরিচয় পাইত না। (ব:কো:)
৩। বদর যুদ্ধে যাত্রাকালে আবূ জাহাল ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ কাবাঘরে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করিল, হে খোদা! সত্যকে জয়ী এবং অসত্যকে পরাজিত করিও। তখন এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (মু:কো:)
وَلَوْ عَلِمَ اللَّهُ فِيهِمْ خَيْرًا لَّأَسْمَعَهُمْ ۖ وَلَوْ أَسْمَعَهُمْ لَتَوَلَّوا وَّهُم مُّعْرِضُونَ
বাংলা অর্থ:
২৩। আর যদি আল্লাহ্ তা‘আলা তাহাদের মধ্যে কোন কল্যাণ দেখিতেন, তবে তাহাদিগকে শুনিবার সামর্থ্য দান করিতেন; আর যদি তাহাদিগকে এখন (-ও) শুনাইয়া দেন, তবে তাহারা অবশ্যই ফিরিয়া যাইবে বিমুখ হইয়া।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَجِيبُوا لِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُمْ لِمَا يُحْيِيكُمْ ۖ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يَحُولُ بَيْنَ الْمَرْءِ وَقَلْبِهِ وَأَنَّهُ إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ
বাংলা অর্থ:
২৪। হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্ ও রাসূলের হুকুম তামিল করিও যখন রাসূল তোমাদিগকে তোমাদের জীবন- সঞ্চারক বস্তুর দিকে আহবান করেন, আর জানিয়া রাখ যে, আল্লাহ্ তা‘আলা মানুষ ও তাহার অন্তরের মধ্যস্থলে আড়াল হইয়া থাকেন। এবং নি:সন্দেহ তোমাদের সকলকে আল্লাহ তা‘আলার সমীপে সমবেত হইতে হইবে।
وَاتَّقُوا فِتْنَةً لَّا تُصِيبَنَّ الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنكُمْ خَاصَّةً ۖ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ
বাংলা অর্থ:
২৫। আর তোমরা এইরূপ ফেৎনা হইতে বাঁচিয়া রাখ যে, আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।
وَاذْكُرُوا إِذْ أَنتُمْ قَلِيلٌ مُّسْتَضْعَفُونَ فِي الْأَرْضِ تَخَافُونَ أَن يَتَخَطَّفَكُمُ النَّاسُ فَآوَاكُمْ وَأَيَّدَكُم بِنَصْرِهِ وَرَزَقَكُم مِّنَ الطَّيِّبَاتِ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
বাংলা অর্থ:
২৬। আর সেই অবস্থানকে স্মরণ কর, যখন তোমরা স্বল্প সংখ্যক ছিলে (এবং) ভূ পৃষ্ঠে দুর্বল বলিয়া পরিগণিত হইতে, (আর) এই আশঙ্কায় থাকিতে যে, লোকেরা নাকি তোমাদিগকে ছোঁ মারিয়া লইয়া যায়, অনন্তর আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদিগকে (মদীনায় নিরাপদ) আবাসস্থল প্রদান করিলেন এবং তোমাদিগকে আপন সাহায্যের দ্বারা শক্তিশালী করিলেন, আর তোমাদিগকে উত্তম বস্তুসমুহ দান করিলেন, যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَخُونُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ وَتَخُونُوا أَمَانَاتِكُمْ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ
বাংলা অর্থ:
২৭। হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্ ও রাসূলের হক্কসমূহের ব্যতিক্রম করিও না, আর নিজেদের রক্ষণযোগ্য বস্তুগুলিতে খেয়ানত করিও না অথচ তোমরা তে অবগত আছ।
সূরা আনফাল বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। অর্থাৎ তাহাদের মনে সত্য উপলব্ধি করার স্পৃহা দেখিতে পাইলে আল্লাহ্ তাহাদের মনে বিশ্বাস জন্মাইয়া দিতেন; কিন্তু তাহাদের মনেস সত্য উপলব্ধির সেই স্পৃহাই নাই। এমতাবস্থায় তাহাদিগকে সত্যের বিবরণযুক্ত আয়াত শুনাইলে তাহারা সেদিকে ভ্রুক্ষেপ বা কর্ণপাত করিবে না। (ব:কো:)
২। অর্থাৎ আল্লাহর হুকুম পালনে বিলম্ব করিও না। হয়ত একটু পরে মনের এই অবস্থা থাকিবে না। মনের উপর মানুষের কোন হাত নাই, সম্পূর্ণ আল্লাহর হাত তিনি উহাকে যেদিকে ইচ্ছা ঘুরাইতে পারেন। অবশ্য প্রথমেই তিনি ফিরান না, কিংবা মনের উপর মোহর মারেন না, তবে মানুষ আল্লাহর আদেশ পালনে শিথিলতা করিতে থাকিলে উহার প্রতিফলস্বরূপ তিনি মনকে বিপথের দিকে ফিরান এবং না ফরমানীতে অভ্যস্থ হইয়া পড়িলে তখন মোহরই মারিয়া দেন। (মু:কো:)
وَاعْلَمُوا أَنَّمَا أَمْوَالُكُمْ وَأَوْلَادُكُمْ فِتْنَةٌ وَأَنَّ اللَّهَ عِندَهُ أَجْرٌ عَظِيمٌ
বাংলা অর্থ:
২৮। আর তোমরা এ কথা জানিয়া রাখ যে, তোমাদের ধন-সম্পদসমূহ এবং তোমাদের সন্তানাদি একটা পরীক্ষার বস্তু মাত্র, আর এ কথাও জানিয়া রাখ যে, আল্লাহ্ তা‘আলা র নিকট মহান পুরস্কার রহিয়াছে।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن تَتَّقُوا اللَّهَ يَجْعَل لَّكُمْ فُرْقَانًا وَيُكَفِّرْ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ۗ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ
বাংলা অর্থ:
২৯। হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা আল্লাহ্কে ভয় করিতে থাক, তবে তিনি তোমাদিগকে একটি (হক্ক ও বাতেলের) মীমাংসার বস্তু দান করিবেন, আর তোমাদিগ হইতে তোমাদের পাপসমূহ মোচন করিয়া দিবেন এবং তোমাদিগকে ক্ষমা করিয়া দিবেন; আর আল্লাহ্ মহা অনুগ্রহশীল ।
وَإِذْ يَمْكُرُ بِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا لِيُثْبِتُوكَ أَوْ يَقْتُلُوكَ أَوْ يُخْرِجُوكَ ۚ وَيَمْكُرُونَ وَيَمْكُرُ اللَّهُ ۖ وَاللَّهُ خَيْرُ الْمَاكِرِينَ
বাংলা অর্থ:
৩০। আর সেই ঘটনাও স্মরণ করুন যখন কাফেরগণ আপনার সম্বন্ধে দুরভিসন্ধি চিন্তা করিতেছিল যে, আপনাকে বন্দী করিয়া রাখিবে অথবা আপনাকে নিহত করিয়া ফেলিবে কিংবা আপনাকে দেশান্তর করিয়া দিবে; আর তাহারা তো নিজেদের তদবীর করিতেছিল এবং আল্লাহ্ আপন তদবীর করিতেছিলেন; আর আল্লাহ্ হইতেছেন সর্বাধিক দৃঢ় তদবীরকারক।
وَإِذَا تُتْلَىٰ عَلَيْهِمْ آيَاتُنَا قَالُوا قَدْ سَمِعْنَا لَوْ نَشَاءُ لَقُلْنَا مِثْلَ هَـٰذَا ۙ إِنْ هَـٰذَا إِلَّا أَسَاطِيرُ الْأَوَّلِينَ
বাংলা অর্থ:
৩১। আর যখন তাহাদের সম্মুখে আমার আয়াতসমূহ পঠিত হয়, তখন তাহারা বলে যে, আমরা শুনিয়াছি, যদি ইচ্ছা করি, তবে আমরাও ইহার অনুুরূপ বলিতে পারি, ইহা কতকগুলি ভিত্তিহীন কাহিনী ব্যতীত আর কিছুই নহে, যাহা প্রাচীন লোকগণ হইতে বর্ণিত হইয়া আসিতেছে।
وَإِذْ قَالُوا اللَّهُمَّ إِن كَانَ هَـٰذَا هُوَ الْحَقَّ مِنْ عِندِكَ فَأَمْطِرْ عَلَيْنَا حِجَارَةً مِّنَ السَّمَاءِ أَوِ ائْتِنَا بِعَذَابٍ أَلِيمٍ
বাংলা অর্থ:
৩২। আর যখন তাহারা বলিল যে, আয় আল্লাহ্! যদি কোরআন বাস্তবিকই আপনার পক্ষ হইতে হইয়া থাকে তবে আমাদের উপর আসমান হইতে প্রস্তর বর্ষণ করুন অথবা আমাদের উপর কোন যনন্ত্রণাদায়ক শাস্তি অবতীর্ণ করুন।
সূরা আনফাল বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। কোন কোন সাহাবী রসূলুল্লাহর দরবারের খবর বাহিরে প্রকাশ করিত। মুনাফিকেরা জাতিতে পারিয়া কাফেরদিগকে সাবধান করিয়া দিত। এ সম্বন্ধে এই আায়াতটি নাযিল হয়। (মু:কো:)
২। হিজরতের অনুমতি হওয়া মাত্র হুযূরের সঙ্গে কেবল হযরত আবূ বকর ও আলীকে রাখিয়া মুসলমানেরাপ প্রায় সকলেই মদীনায় চলিয়া গেল। ইহা দেখিয়া ক্বোরাইশগন মন্ত্রনা গৃহে একত্রিত হইল। বিভিন্ন মত-বিনিময়ের পর আবূ জাহাল স্থির করিল, আজ রাত্রেই প্রত্যেক গোত্রের এক একজন লইয়া দল গঠিত হইবে এবং তাহারা আজই কাজ শেষ করিবে। হযরত জিব্রাঈল আসিয়া হুযূরকে খবর দিলেন। তিনি আলীকে নিজের বিছানায় শোয়াইয়া আবূ বকরকে সঙ্গে লইয়া ছাওর নামক গুহায় যাইয়া আশ্রয় লইলেন। এই সম্বন্ধে এই আয়াতটিতে উল্লেখ হইয়াছে। (মু:কো:)
৩। নাযার ইবনে হারেস বাণিজ্য করিবার জন্য পারস্য দেশে গিয়াছিল। তথা হইতে রুস্তম ও উস্ফেন্দিয়ারের কিসসার বই খরিদ করিয়া আনিয়া আরবী বাষায় অনুবাদ করিল এবং বলিল যে, এই কিসসাটি মুহাম্মাদ কর্তৃক বর্ণিত কিসসাসমূহ হইতে অধিক মধুর। এই সমন্ধে এই আয়াতটি নাযিল হয়। (মু:কো:)
وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنتَ فِيهِمْ ۚ وَمَا كَانَ اللَّهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ
বাংলা অর্থ:
৩৩। আর আল্লাহ্ তা‘আলা এইরূপ করিবেন না যে, আপনি তাহাদের মধ্যে বিদ্যমান থাকা অবস্তায় তাহাদিগকে শাস্তি প্রদান করেন; আর আল্লাহ্ তা‘আলা এই অবস্থায়ও তাহাদিগকে শাস্তি প্রদান করিবেন না যে, তাহারা ক্ষমা প্রার্থনা করিতে থাকে।
وَمَا لَهُمْ أَلَّا يُعَذِّبَهُمُ اللَّهُ وَهُمْ يَصُدُّونَ عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَمَا كَانُوا أَوْلِيَاءَهُ ۚ إِنْ أَوْلِيَاؤُهُ إِلَّا الْمُتَّقُونَ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ
বাংলা অর্থ:
৩৪। আর তাহাদের কি যুক্তি আছে যে, আল্লাহ্ তা‘আলা তাহাদিগকে শাস্তি প্রদান না করেন? এই অবস্থায় যে, তাহারা মসজিদে হারাম হইতে (পয়গম্বর ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুসলমানগণকে) প্রতিরোধ করে অথচ তাহারা সেই মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক)-ও) নহে; উহার তত্ত্ববধায়ক তো খোদাভীরুগণ ব্যতীত আর কেহই নহে, কিন্তু তাহাদের অনেকেই অবগত নহে।
وَمَا كَانَ صَلَاتُهُمْ عِندَ الْبَيْتِ إِلَّا مُكَاءً وَتَصْدِيَةً ۚ فَذُوقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنتُمْ تَكْفُرُونَ
বাংলা অর্থ:
৩৫। আর তাহাদের নামায-কা‘বা শরীফের নিকট এই ছিল-কেবল দেওয়া ও করতালি দেওয়া; অতএব এই শাস্তির স্বাদ আস্বাদন কর নিজেদের কুফরের দরুন।
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ لِيَصُدُّوا عَن سَبِيلِ اللَّهِ ۚ فَسَيُنفِقُونَهَا ثُمَّ تَكُونُ عَلَيْهِمْ حَسْرَةً ثُمَّ يُغْلَبُونَ ۗ وَالَّذِينَ كَفَرُوا إِلَىٰ جَهَنَّمَ يُحْشَرُونَ
বাংলা অর্থ:
৩৬। নিশ্চয়ই, এই কাফেররা নিজেদের ধন-সম্পদসমূহ এই জন্য ব্যয় করিতেছে যেন আল্লাহ্ তা‘আলার পথ হইতে লোকদিগকে প্রতিরোধ করে; অতএব তাহারা তো নিজেদের মাল ব্যয় করিতেই থাকিবে, (কিন্তু) পরিণামে সেই মাল তাহাদের পক্ষে অনুশোচনার কারণ হইয়া পড়িবে অনন্তর তাহার পরাভূত হইয়া যাইবে। আর কাফেরদিগকে দোযখের দিকে সমবেত করা হইবে।
সূরা আনফাল বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। হযরত আলী (কা:) বলিয়াছেন, দুনিয়াতে আল্লাহর আযাব নাযিল হওয়ার প্রতিবন্ধক ছিল দুইটি। (১) রসূলুল্লাহর অস্তিত্ব (২) এস্তেগফার শেষটি মাত্র এখনও আছে। (মু: কো:)
২। বদরের যুদ্ধে যোগদানের জন্য কাফেরেরা মক্কা হইতে বাহির হইলে বারজন নেতৃস্থানীয় কাফের সৈন্য-দলের খাদ্য সরবরাহ করিবার দায়িত্ব গ্রহণ করিল। তাহারা প্রত্যেক নিজের নির্দিষ্ট দিনে দশটি উট যবাহ করিয়া সেনা দলকে খাওয়াইত। তৎসম্বন্ধে এই আয়াতটি নাযিল হয়। (মু:কো:)
لِيَمِيزَ اللَّهُ الْخَبِيثَ مِنَ الطَّيِّبِ وَيَجْعَلَ الْخَبِيثَ بَعْضَهُ عَلَىٰ بَعْضٍ فَيَرْكُمَهُ جَمِيعًا فَيَجْعَلَهُ فِي جَهَنَّمَ ۚ أُولَـٰئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ
বাংলা অর্থ:
৩৭। যেন আল্লাহ তা‘আলা অপবিত্র (লোকদের) কে পবিত্র (লোকদের) হইতে পৃথক করিয়া দেন এবং অপবিত্রদিগকে পরস্পরের সহিত মিলিত করেন, অর্থাৎ তাহাদের সকলকে স্তূপীকৃত করিয়া দেন, অত:পর তাহাদের সকলকে দোযখে নিক্ষেপ করেন; এই রূপ লোকেরাই পূর্ণ ক্ষতির মধ্যে রহিয়াছে।
قُل لِّلَّذِينَ كَفَرُوا إِن يَنتَهُوا يُغْفَرْ لَهُم مَّا قَدْ سَلَفَ وَإِن يَعُودُوا فَقَدْ مَضَتْ سُنَّتُ الْأَوَّلِينَ
বাংলা অর্থ:
৩৮। আপনি সেই সকল লোকদিগকে যাহারা কুফর করিয়াছে, বলিয়া দিন যে, যদি তাহারা (কুফর হইতে) নিবৃত্ত হয়, তবে তাহাদের অতীতের সকল পাপ ক্ষমা করা হইবে, আর যদি তাহারা নিজেদের সেই (কুফরের) অভ্যাসই রাখে তবে পূর্ববতী কাফেরদের সম্বন্ধে (আমার) বিধান প্রবর্তিত রহিয়াছে।
وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّهِ ۚ فَإِنِ انتَهَوْا فَإِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
বাংলা অর্থ:
৩৯। আর তোমরা তাহাদের বিরুদ্ধে সেই পর্যন্ত যুদ্ধ করিতে থাক, যে পর্যন্ত না তাহাদের হইতে ফেতনা (শিরক) বিলুপ্ত হইয়া যায় এবং (তাহাদের) ধর্ম (কেবল) আল্লাহ্ তা‘আলার ই হইয়া যায়, অনন্তর যদি তাহারা নিবৃত্ত হয়, তবে আল্লাহ্ তাহাদের কার্যকলাপ উত্তমরূপে দেখিতেছেন ।
وَإِن تَوَلَّوْا فَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَوْلَاكُمْ ۚ نِعْمَ الْمَوْلَىٰ وَنِعْمَ النَّصِيرُ
বাংলা অর্থ:
৪০। আর যদি তাহারা বিমুখ থাকে, তবে দৃঢ় বিশ্বাস রাখ যে, আল্লাহ্ তা‘আলা হইতেছেন তোমাদের সাথী; তিনি অতি উত্তম সাথী এবং অতি উত্তম মদদগার।
সূরা আনফাল বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। ইহা কোরআনের একটি মু‘জেযাহ। ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পূর্বেই যেসংবাদ দিয়াছে, পরে তাহাই ঘটিয়াছে। অর্থাৎ মক্কা বিজয়ের দিন কাফেরেরা অক্ষম ও পর্যুদস্ত হইয়াছে। (মু:কো:)
২। অর্থাৎ দুনিয়াতে তাহার ধ্বংসপ্রাপ্ত হইয়াছে এবং আখেরাতে আযাব ভোগ করিবে। তোমাদের বেলায়ও সেই নিয়মই চলিবে। বস্তুত: আরবের কাফেরদের বেলায় দুনিয়ার শাস্তি শুধু হত্যা, অন্য কোন বিধান নাই। কিন্তু বহিরাগত কাফেরদের বেলায় “যিম্মী” বানাইয়া রাখার ও বিধান আছে। যিম্মীরূপে জীবন-যাপন করাও জাতীয় স্বাধীন সত্তার পক্ষে ধ্বংস প্রাপ্তিই বটে। (ব:কো:)
৩। এজন্ম কাপের এবং মুরতাদ উভয়েরই এই ওয়াদা। এই ওয়াদা কেবল খোদার হক সম্বন্ধেই কর হইয়াছে। (ব:কো:)
وَاعْلَمُوا أَنَّمَا غَنِمْتُم مِّن شَيْءٍ فَأَنَّ لِلَّهِ خُمُسَهُ وَلِلرَّسُولِ وَلِذِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينِ وَابْنِ السَّبِيلِ إِن كُنتُمْ آمَنتُم بِاللَّهِ وَمَا أَنزَلْنَا عَلَىٰ عَبْدِنَا يَوْمَ الْفُرْقَانِ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ ۗ وَاللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
বাংলা অর্থ:
৪১। আর এই বিষয় লও যে, যাহা কিছ গনীমতস্বরূপ তোমাদের হস্তগত হয়, তবে উহার বিধান এই যে, সম্পূর্ন মালের এক-পঞ্চমাংশ হইতেছে আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলের জন্য এবং রাসূলের আত্মীয়-স্বজনের জন্য, আর এতীমদের ও দরিদ্রদের এবং মুসাফেরদের জন্য, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখ, আর সেই বিষয়ের প্রতি যাহা আমি আমার বান্দার উপর নাযিল করিয়াছিলাম মীমাংসার দিন, যে দিন উভয়দল পরস্পর সম্মুখীন হইয়াছিল; আর আল্লাহ্ই হইতেছেন সর্ববিষয়োপরি পূর্ণ ক্ষমতাবান।
إِذْ أَنتُم بِالْعُدْوَةِ الدُّنْيَا وَهُم بِالْعُدْوَةِ الْقُصْوَىٰ وَالرَّكْبُ أَسْفَلَ مِنكُمْ ۚ وَلَوْ تَوَاعَدتُّمْ لَاخْتَلَفْتُمْ فِي الْمِيعَادِ ۙ وَلَـٰكِن لِّيَقْضِيَ اللَّهُ أَمْرًا كَانَ مَفْعُولًا لِّيَهْلِكَ مَنْ هَلَكَ عَن بَيِّنَةٍ وَيَحْيَىٰ مَنْ حَيَّ عَن بَيِّنَةٍ ۗ وَإِنَّ اللَّهَ لَسَمِيعٌ عَلِيمٌ
বাংলা অর্থ:
৪২। ইহা সেই সময় ছিল, যখন তোমরা সেই ময়দানের এই দিকের (মদীনার নিকটবতী) প্রান্তে ছিলে এবং তাহারা ময়দানের ঐদিকের (মদীনার দূরবতী) প্রান্তে ছিল, আর সেই (কুরাইশদের) কাফেররা ছিল তোমাদের নিম্ন ভূমিতে; আর যদি তোমরা এবং তাহারা (যুদ্ধের জন্য) কোন সিন্ধান্ত করিতে, তবে অবশ্যই সেই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তোমাদের মধ্যে মতভেদ দেখা দিত, কিন্তু-যে কাজ করা আল্লাহর ইচ্ছা ছিল, যেন তাহা সমাপন করিয়া দেন অথাৎ যে ব্যক্তি ধ্বংস হওয়ার, যেন সে নির্দশন আসার পর ধ্বংস হয়, আর যে ব্যক্তি জীবিত হওয়ার, সেও নিদর্শন আসার পর জীবিত হয়; আর নি:সন্দেহে আল্লাহ্ খুব শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী!
إِذْ يُرِيكَهُمُ اللَّهُ فِي مَنَامِكَ قَلِيلًا ۖ وَلَوْ أَرَاكَهُمْ كَثِيرًا لَّفَشِلْتُمْ وَلَتَنَازَعْتُمْ فِي الْأَمْرِ وَلَـٰكِنَّ اللَّهَ سَلَّمَ ۗ إِنَّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ
বাংলা অর্থ:
৪৩। সেই সময়ও স্মরণীয়, যখন আল্লাহ্ আপনাকে আপনার স্বপ্নে তাহাদেরে কম দেখাইলেন; আর যদি আল্লাহ্ আপনাকে তাহাদের বহু সংখ্যক দেখাইতেন তবে তোমরা সাহস হারা হইয়া পড়িতে এবং এই বিষয়ে তোমাদের মধ্যে পরস্পর বিবাদ ঘটিত কিন্তু আল্লাহ্ তা‘আলা রক্ষা করিয়া লইলেন; নিশ্চয় তিনি অন্তরসমূহের কথাগুলি খুব জানেন।
সূরা আনফাল বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। তা‘যীম ও বরকতের জন্য আল্লাহর নাম উল্লেখ করা হইয়াছে, বস্তুত: গনীমতেরা মাল প্রথমে পাঁচভাগে বিভক্ত করিয়া চারি ভাগ মুজাহিদগণের প্রাপ্য বাকি পঞ্চমাংশ কে আবার পাঁচভাগ করিয়া ইহার একভাগ নবী (দ:) এর, এক ভাগ তাঁহার আত্মীয়দের, এক ভাগ এতীমদের, এক ভাগ মিসকীনদের, আর এক ভাগ মুসাফিরদের প্রাপ্য। নবী (দ:) এর এন্তেকালের পর উক্ত এক পঞ্চমাংশ সমানাংশে শেষোক্ত তিন দলের প্রাপ্য। (মু:কো:)
২। মীমাংসার দিন অর্থ-বদরের যুদ্ধের দিন, কেননা, এই দিন হক্ব ও বাতিলের মধ্যে চুড়ান্ত মীমাংসা সূচিত হইয়াছে। (ব:কো:)
৩। অর্থাৎ, তোমাদের আক্রমণ হইতে আত্মরক্ষার জন্য কাফেলা সমুদ্রতট ধরিয়া মক্কার দিকে যাইতেছিল। (ব:কো:)
৪। এই স্বপ্ন দেখার পর হুযূর (দ:) সাহাবীদিগকে স্বপ্নবৃত্তান্ত শুনাইলে তাঁহাদের সাহস দ্বিগুণ বাড়িয়া গেল । (ব:কো:)
وَإِذْ يُرِيكُمُوهُمْ إِذِ الْتَقَيْتُمْ فِي أَعْيُنِكُمْ قَلِيلًا وَيُقَلِّلُكُمْ فِي أَعْيُنِهِمْ لِيَقْضِيَ اللَّهُ أَمْرًا كَانَ مَفْعُولًا ۗ وَإِلَى اللَّهِ تُرْجَعُ الْأُمُورُ
বাংলা অর্থ:
৪৪। আর সেই সময়টি স্মরণ কর, যখন তোমাদের সম্মুখীন হওয়ার সময় আল্লাহ্ তোমাদিগকে তোমাদের দৃষ্টিতে তাহাদিগকে কম করিয়া দেখাইতেছিলেন এবং তাহাদের দৃষ্টিতে তোমাদিগকে কম করিয়া দেখাইতেছিলেন, যেন আল্লাহ্ তা‘আলা সেই কাজ সমাপন করিয়া দেন যাহা করা তাঁহাদের অভিপ্রায় ছিল আর সমস্ত ব্যাপার আল্লাহ্ তা‘আলারই দিকে রুজু করা হইবে।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا لَقِيتُمْ فِئَةً فَاثْبُتُوا وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
বাংলা অর্থ:
৪৫। হে ঈমানদারগণ! যখন তোমাদেরকে (জেহাদে) কোন দলের সহিত সম্মুখীন হইতে হয়, তখন দৃঢ়পদ থাকিবে এবং আল্লাহ্কে অধিক পরিমাণে স্বরণ করিবে, আশা যে, তোমরা সফলকাম হইবে।
وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَا تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ ۖ وَاصْبِرُوا ۚ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ
বাংলা অর্থ:
৪৬। আর আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলের আনুগত্য করিতে থাকিবে এবং আপোষ বিবাদ করিবে না অন্যথায় সাহস হারা হইয়া পড়িবে এবং তোমাদের প্রভাব বিনষ্ট হইয়া যাইবে, আর ধৈর্যধারণ কর নিশ্চয় আল্লাহ্ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।
وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ خَرَجُوا مِن دِيَارِهِم بَطَرًا وَرِئَاءَ النَّاسِ وَيَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ ۚ وَاللَّهُ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ
বাংলা অর্থ:
৪৭। আর সেই সকল লোকদের ন্যায় হইও না যাহারা নিজেদের গৃহসমূহ হইতে সদর্পে এবং লোকদিগকে (স্বীয় শক্তি) প্রদর্শন করত বাহির হইয়াছিল এবং লোকদিগকে আল্লাহর পথ হইতে বিরত রাখিতেছিল, আর আল্লাহ্ তাহাদের কার্যসমূহকে বেষ্টন করিয়া আছেন।
وَإِذْ زَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ وَقَالَ لَا غَالِبَ لَكُمُ الْيَوْمَ مِنَ النَّاسِ وَإِنِّي جَارٌ لَّكُمْ ۖ فَلَمَّا تَرَاءَتِ الْفِئَتَانِ نَكَصَ عَلَىٰ عَقِبَيْهِ وَقَالَ إِنِّي بَرِيءٌ مِّنكُمْ إِنِّي أَرَىٰ مَا لَا تَرَوْنَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ ۚ وَاللَّهُ شَدِيدُ الْعِقَابِ
বাংলা অর্থ:
৪৮। আর সেই সময়টি তাহাদের নিকট বর্ণনা করুন যখন শয়তান তাহাদিগকে তাহাদের কার্যসমূহ সুশোভন করিয়া দেখাইয়াছিল, আর বলিয়াছিল, আজ কেহই তোমাদের উপর বিজয়ী হইতে পারিবে না, আর আমি তোমাদের সহায়ক আছি, অনন্তর যখন উভয়দল পরস্পর সম্মুখীন হইল তখন সে পশ্চাৎপদ হইয়া পলায়ন করিল এবং এই বলিল যে, তোমাদের সহিত আমার কোন সম্পর্ক নাই, আমি সে সকল বস্তু দেখিতেছি যাহা তোমাদের দৃষ্টিগোচর হইতেছে না আমি তো আল্লাহ্কে ভয় করি; আর আল্লাহ্ কঠোর শাস্তি প্রদানকারী।
সূরা আনফাল বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। আল্লাহ্ কেবল স্বপ্নযোগে নবী (দ:) কে কাফেরদের সংখ্যা কম দেখাইয়াই ক্ষান্ত হন নাই; বরং সংঘর্ষ কালে উভয় দলের দৃষ্টিতে প্রতিপক্ষের সংখ্যা কম দেখাইয়া যুদ্ধে প্রবৃত্ত করার ব্যবস্থা করিয়া দিলেন। (ব:কো:)
২। ক্বোরাইশদের ও বনী কেনানাদের মধ্যে মতবাদ চলিতেছিল। ক্বোরাইশরা বদর অভিমুখে যাত্রা করিয়া বনী কেনানার বস্তির নিকট পৌঁছিলে তাহাদের শক্রতার ভয়ে ফিরিয়া যাইত উদ্যত হইল। তৎক্ষণাৎ শয়তান বনী কেনানার সবদার সোরাকার আকৃতি ধরিয়া তাহাদের সমমুখে আসিয়া বলিল, বনী কেনানার তরফ হইতে তোমাদের নিরাপত্তার বার আমি গ্রনণ করিলাম, মুসলমানেরা আমাদেরও শত্রু। চল আমি ও তোমাদের সঙ্গে যাইতেছি। এই বলিয়া একদল শয়তানের ফৌজ লইয়া বদর পর্যন্ত পৌছাইল। এই আয়াতটিতে আল্লাহ্ তাহাই বর্ণনা করিতেছেন। (মু:কো:)
إِذْ يَقُولُ الْمُنَافِقُونَ وَالَّذِينَ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ غَرَّ هَـٰؤُلَاءِ دِينُهُمْ ۗ وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَإِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
বাংলা অর্থ:
৪৯। আর সেই সময়টিও স্মরণীয়, যখন মুনাফেকরা এবং যাহাদের অন্তরে পীড়া ছিল। তাহারা এইরূপ বলিতেছিল যে, এসব লোকদিগকে তাহাদের ধর্ম ভ্রমে ফেলিয়া রাখিয়াছে আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলার উপর নির্ভর করে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ্ যবরদস্ত, হেকমতওয়ালা।
وَلَوْ تَرَىٰ إِذْ يَتَوَفَّى الَّذِينَ كَفَرُوا ۙ الْمَلَائِكَةُ يَضْرِبُونَ وُجُوهَهُمْ وَأَدْبَارَهُمْ وَذُوقُوا عَذَابَ الْحَرِيقِ
বাংলা অর্থ:
৫০। আর যদি আপনি দেখিতেন, যখন ফেরেশতাগণ এই কাফেরদের জান কবয করিতে থাকে, (এবং) তাহাদের চেহারায় ও তাহাদের পিঠে মারিতে থাকে এবং এই বলিতে থাকে যে, অগ্নির শাস্তি ভোগ কর।
ذَٰلِكَ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيكُمْ وَأَنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِظَلَّامٍ لِّلْعَبِيدِ
বাংলা অর্থ:
৫১। এই শাস্তি সে সকল কর্মের দরুন যাহা তোমরা স্বহস্তে কুড়াইয়াছ, আর ইহা সুনিশ্চিত যে, আল্লাহ্ তা‘আলা বান্দাদের উপর অত্যাচারী নহেন।
كَدَأْبِ آلِ فِرْعَوْنَ ۙ وَالَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ ۚ كَفَرُوا بِآيَاتِ اللَّهِ فَأَخَذَهُمُ اللَّهُ بِذُنُوبِهِمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ قَوِيٌّ شَدِيدُ الْعِقَابِ
বাংলা অর্থ:
৫২। তাহাদের অবস্থা এইরূপ-যেইরূপ ফেরআঊন-সম্প্রদায় এবং তাহার পূর্ববর্তী লোকদের অবস্থা ছিল; তাহারা আল্লাহ্ তা‘আলার আয়াত সমূহকে অমান্য করিল সুতরাং আল্লাহ্ তা‘আলা তাহাদিগকে তাহাদের দরুন পাকড়াও কলিলেন নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা অতিশয় ক্ষমতাবান, কঠোর শাস্তি প্রদানকারী ।
সূরা আনফাল বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। রেওয়ায়েতে আছে যে, শয়তান বোরাকার আকৃতিতে হারেস ইবনে হিশামের হাত ধরিয়া দাঁড়াইয়ছিল, ফেরেশতার ফৌজ দেখিয়া হারেসের হাত ছাড়িয়া পশ্চাদপসারণ করিতে লাগিল, হারেস বলিল হে সোরাকা এমন মুহূর্তে আমাদিগকে ছাড়িয়া যাইতেছ? শয়তান হারেসের বুকে হাত মারিয়া বলিল, তোমাদের সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নাই।
২। অর্থাৎ মদীনার মুনাফেকেরা এবং মক্কার কাফেরেরা বলাবলি করিতেছিল, মুসলমানেরা নিজেদের ধর্মকে সত্য মনে করিতেছে, এবং এই ভরসায়ই তাহারা এত বড় বিপদের সম্মুখীন হইয়াছে। ইহার উত্তরে আল্লাহ্ বলেন, খোদার প্রতি নির্ভরশীল লোকেরা জয়লাভই করিয়া থাকে। (ব: কো:)
৩। তাঁহার প্রতিপক্ষে এমন শক্তিধর নাই যে, তাঁহার শাস্তি কে প্রতিরোধ করিতে পারে। (ব:কো:)
ذَٰلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ لَمْ يَكُ مُغَيِّرًا نِّعْمَةً أَنْعَمَهَا عَلَىٰ قَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنفُسِهِمْ ۙ وَأَنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
বাংলা অর্থ:
৫৩। ইহা এই কারণে যে, আল্লাহ্ এমন কোন নেয়ামতেকে যাহা কোন জাতিকে দিয়াছেন, পরিবর্তন করে না, যে পর্যন্ত না তাহারা নিজেদের কার্যকলাপকে পরিবর্তন করিয়া ফেলে, আর একথা স্থির নিশ্চয় যে, আল্লাহ্ তা‘আলা অতিশয় শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।
كَدَأْبِ آلِ فِرْعَوْنَ ۙ وَالَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ ۚ كَذَّبُوا بِآيَاتِ رَبِّهِمْ فَأَهْلَكْنَاهُم بِذُنُوبِهِمْ وَأَغْرَقْنَا آلَ فِرْعَوْنَ ۚ وَكُلٌّ كَانُوا ظَالِمِينَ
বাংলা অর্থ:
৫৪। তাহাদের অবস্থা ফেরআঊন-সম্প্রদায়, এবং তাহাদের পূর্ববতীদের অবস্থার ন্যায়; তাহারা আপন প্রতিপালকের আয়াতগুলিকে মিথ্যা সাব্যস্ত করিয়াছিল সুতরাং আমি তাহাদিগকে তাহাদের পাপসমূহের কারনে ধ্বংস করিয়া দিলাম এবং ফেরআঊন-সম্প্রদায়কে নিমজ্জিত করিয়া দিলাম, আর তাহারা সকলেই যালেম ছিল।
إِنَّ شَرَّ الدَّوَابِّ عِندَ اللَّهِ الَّذِينَ كَفَرُوا فَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ
বাংলা অর্থ:
৫৫। নিশ্চয় সৃষ্টির নিকৃষ্টতম জীব হইতেছে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট এই কাফেররা, অতএব তাহারা ঈমান আনিবে না।
الَّذِينَ عَاهَدتَّ مِنْهُمْ ثُمَّ يَنقُضُونَ عَهْدَهُمْ فِي كُلِّ مَرَّةٍ وَهُمْ لَا يَتَّقُونَ
বাংলা অর্থ:
৫৬। যাহাদের অবস্থা এই যে, আপনি তাহাদিগ হইতে (কয়েকবার) প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করিয়াছেন, অনন্তর তাহারা প্রত্যেকবারই নিজেদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করিয়া ফেলিতেছে, আর তাহারা ভয় করে না।
فَإِمَّا تَثْقَفَنَّهُمْ فِي الْحَرْبِ فَشَرِّدْ بِهِم مَّنْ خَلْفَهُمْ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ
বাংলা অর্থ:
৫৭। সুতরাং আপনি যদি যুদ্ধে তাহাদেররে কাবু করিতে পারেন, তবে তাহাদের (উপর আক্রমণ করত সেই আক্রমণ) দ্বারা তাহাদের ব্যতীত অন্যান্য লোকদিগকে ছত্র ভঙ্গ করিয়া দিন, যেন তাহারা বুঝিতে পারে।
وَإِمَّا تَخَافَنَّ مِن قَوْمٍ خِيَانَةً فَانبِذْ إِلَيْهِمْ عَلَىٰ سَوَاءٍ ۚ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْخَائِنِينَ
বাংলা অর্থ:
৫৮। আর যদি কোন সম্প্রদায় সম্বন্ধে আপনার আশঙ্কা হয় বিশ্বাসঘাতকতার তবে আপনি সেই চুক্তি তাহাদিগকে এইভাবে ফিরাইয়া দিন, যেন তাহারা এবং আপনি (সন্ধি রহিত হওয়ার অবগতি সম্পর্কে) সমান হইয়া যান; নি:সন্দেহে আল্লাহ্ বিশ্বাসঘাতকদিগকে পছন্দ করেন না।
সূরা আনফাল বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। বনী কুরাইবা গোত্রের ইহুদীরা হুযূর (দ:) এর সহিত অঙ্গীকারাবদ্ধ হইয়াছিল যে, তাহারা হুযূরের বিপক্ষে কাফেরদিগকে সাহায্য করিবে না। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তাহারা সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করিয়া আহযাবের যুদ্ধে বিপক্ষীয় মুশরিকদিগকে সাহায্য করে, ইতিপূর্বেও তাহারা কয়েকবার বিশ্বাসঘাতকতা করিয়াছিল। এই আয়াতগুলিতে বনী কুরাইযার সহিত যুদ্ধ করিবার জন্য আদেশ করা হয়। (লো: নু:)
২। অর্থাৎ এই ইহুদীদের উপর জয়লাভ করিলে যদি তাহারা আপনার কবলে আসে, তবে ইহাদিগকে এমনভাবে হত্যা করিবেন যে, ভয়ে ইহাদের পৃষ্ঠ পোষকরা ছত্রভঙ্গ হইয়া পলায়ন কর, উপদেশ গ্রহন করে। (মু: কো:)
৩। অর্থাৎ সন্ধি-সূত্রে আবদ্ধ কোন সম্প্রদায় হইতে বিশ্বাসঘাতকতার আশংকা দেখিলে পূর্বাহ্নে সংবাদ দিয়া আপনিও সঙ্গীর শর্ত ভঙ্গ করিয়া লন। (ব:কো:)
وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا سَبَقُوا ۚ إِنَّهُمْ لَا يُعْجِزُونَ
বাংলা অর্থ:
৫৯। আর কাফেররা যেন নিজেদের সম্পর্কে এরূপ ধারণা না করে যে, তাহারা বাঁচিয়া গিয়াছে; কিছুতেই তাহারা (আল্লাহ্ তা‘আলাকে) অক্ষম করিতে পারিবে না।
وَأَعِدُّوا لَهُم مَّا اسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍ وَمِن رِّبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدُوَّ اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ وَآخَرِينَ مِن دُونِهِمْ لَا تَعْلَمُونَهُمُ اللَّهُ يَعْلَمُهُمْ ۚ وَمَا تُنفِقُوا مِن شَيْءٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنتُمْ لَا تُظْلَمُونَ
বাংলা অর্থ:
৬০। আর এই কাফেরদের (সহিত মকাবেলার) জন্য তোমাদের সাধ্যানুযায়ী অস্ত্রাদি দ্বারা এবং প্রতিপালিত অশ্বাদি দ্বারা সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখ, যদ্দারা তোমরা প্রভাব বিস্তার করিয়া রাখিতে পার সেই সকল লোকদের উপর যাহারা আল্লাহ্ তা‘আলাার শত্রু এবং তোমাদেরও শত্রু এবং ইহাদের ব্যতীত অন্যান্য লোকদের উপরও, যাহাদিগকে তোমরা জান না, উহাদিগকে আল্লাহ্ই জানেন; আর তোমরা আল্লাহর রাস্তায় যাহাকিছুই ব্যয় করিবে, উহা (-র সওয়াব) তোমাদিগকে পুরাপুরি দেওয়া হইবে এবং তোমাদের জন্য একটুও কম করা হইবে না ।
وَإِن جَنَحُوا لِلسَّلْمِ فَاجْنَحْ لَهَا وَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ ۚ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
বাংলা অর্থ:
৬১। আর যদি তাহারা সন্ধির দিকে অগ্রসর হয়, তবে আপনিও অগ্রসর হউন এবং আল্লাহ্ তা‘আলার উপর ভরসা রাখুন; নিশ্চয় তিনি খুব শ্রবনকারী, মহাজ্ঞানী।
وَإِن يُرِيدُوا أَن يَخْدَعُوكَ فَإِنَّ حَسْبَكَ اللَّهُ ۚ هُوَ الَّذِي أَيَّدَكَ بِنَصْرِهِ وَبِالْمُؤْمِنِينَ
বাংলা অর্থ:
৬২। আর যদি তাহারা আপনাকে ধোঁকা দিতে চায়, তবে আল্লাহ্ তা‘আলা আপনার জন্য যথেষ্ট; তিনিই সেই সত্তা যিনি আপনাকে নিজের সাহায্য দ্বারা এবং মুসলমানদের দ্বারা শক্তি দান করিয়াছেন।
وَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ ۚ لَوْ أَنفَقْتَ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا مَّا أَلَّفْتَ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ وَلَـٰكِنَّ اللَّهَ أَلَّفَ بَيْنَهُمْ ۚ إِنَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
বাংলা অর্থ:
৬৩। আর তাহাদের অন্তরসমূহের একতা সৃষ্টি করিয়া দিয়াছেন; যদি আপনি দুনিয়ার সম্পদসমূহ সমস্তই ব্যয় করিতেন, তবুও তাহাদের অন্তর সমূহে একতা সৃষ্টি করিতে পারিতেন না। কিন্তু আল্লাহ্ তা‘আলাই তাহাদের মধ্যে পরস্পর ঐক্য সৃষ্টি করিয়া দিয়াছেন; নিশ্চয় তিনি হইতেছেন মহা পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়।
সূরা আনফাল বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। অর্থাৎ যুদ্ধক্ষেত্র হইতে কাফেরদের কেহ কেহ বাঁচিয়া গেলেও খোদার হাত হইতে কোন কালেও রক্ষা পাইবে না।
২। যেমন পারস্য, সিরিয়া ও অন্যান্য দেশের অধিবাসী কাফেরেরা।
৩। অর্থাৎ ভবিয়া দেখুন তাহাদের মধ্যে একতা স্তাপিত না হইলে তাহার ধর্মের খেদমত কিছুই করিতে পারিত না। আবহমান কাল হইতে আরববাসীদের মধ্যে আত্মকলহ, হিঙসা, বিদ্বেষ চলিয়া আসিতেছিল। এমতাবস্থায় ইহাদের মধ্যে ঐক্য স্থাপন করা খুবই কঠিন কাজ ছিল। সারা বিশ্বের ধন-সম্পদ ব্যয় করিলেন আপনি ইহাদের মধ্যে একতা উৎপাদন করিতে পারিতেন না। কিন্তু আল্লাহ্ই এই বিষয়ে কেবল ক্ষমতাবান। কাজেই তিনি তাহাদের মধ্যে পরস্পর বন্ধুত্ব ভাব উৎপাদন করিয়া দিয়াছেন। (ব:কো:)
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ حَسْبُكَ اللَّهُ وَمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ
বাংলা অর্থ:
৬৪। হে নবী আপনার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট এবং যে মু‘মেনগণ আপনার অনুসরণ করিয়াছে তাহারাই যথেষ্ট।
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ حَرِّضِ الْمُؤْمِنِينَ عَلَى الْقِتَالِ ۚ إِن يَكُن مِّنكُمْ عِشْرُونَ صَابِرُونَ يَغْلِبُوا مِائَتَيْنِ ۚ وَإِن يَكُن مِّنكُم مِّائَةٌ يَغْلِبُوا أَلْفًا مِّنَ الَّذِينَ كَفَرُوا بِأَنَّهُمْ قَوْمٌ لَّا يَفْقَهُونَ
বাংলা অর্থ:
৬৫। হে নবী আপনি মু‘মেনদিগকে জেহাদের উৎসাহ দান করুণ। (এবং তৎসম্পর্কে ইহাও বলিয়া দিন যে) যদি তোমাদের মধ্যকার বিশ ব্যক্তি দৃঢ়পদ থাকে, তবে তাহারা দুই শতের উপর জয় লাভ করিবে, আর যদি (অনুরূপ ভাবে) তোমাদের মধ্যকার এক শত ব্যক্তি থাকে, তবে এক সহস্য কাফেরের উপর জয় লাব করিবে, এই কারণে যে তাহারা এমন লোক, যাহারা (সত্য ধর্মের ) জ্ঞান রাখে না।
الْآنَ خَفَّفَ اللَّهُ عَنكُمْ وَعَلِمَ أَنَّ فِيكُمْ ضَعْفًا ۚ فَإِن يَكُن مِّنكُم مِّائَةٌ صَابِرَةٌ يَغْلِبُوا مِائَتَيْنِ ۚ وَإِن يَكُن مِّنكُمْ أَلْفٌ يَغْلِبُوا أَلْفَيْنِ بِإِذْنِ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ مَعَ الصَّابِرِينَ
বাংলা অর্থ:
৬৬। এখন আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের হইতে (ভার) লঘু করিয়া দিলেন এবং জানিয়া লইলেন যে, তোমাদের মধ্যে সাহসের অভাব রহিয়াছে; অতএব, যদি তোমাদের মধ্যকার এক শত জন দৃঢ়পথ থাকে, তবে তাহারা দুই শতের উপর জয় লাভ করিবে। আর যদি তোমাদের মধ্যকার এক সহস্র লোক হয়, তবে তাহারা আল্লাহর হুকুমে দুই সহস্রের উপর বিজয়ী হইবে; আর আল্লাহ্ তা‘আলা ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।
مَا كَانَ لِنَبِيٍّ أَن يَكُونَ لَهُ أَسْرَىٰ حَتَّىٰ يُثْخِنَ فِي الْأَرْضِ ۚ تُرِيدُونَ عَرَضَ الدُّنْيَا وَاللَّهُ يُرِيدُ الْآخِرَةَ ۗ وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
বাংলা অর্থ:
৬৭। নবীর পক্ষে শোভনীয় নহে যে, তাঁহার বন্দী জীবিত থাকে (বরং হত্যা করিয়া ফেলা চাই) যে-পর্যন্ত তিনি ভূপৃষ্ঠে উত্তমরূপে কাফেরদের রক্তপাত না করেন; তোমরা তো দুনিয়ার ধন-সম্পদ চাহিতেছ, আর আল্লাহ চাহিতেছেন পরকাল; আর আল্লাহ্ অতি পরাক্রমশীল প্রজ্ঞাময়।
সূরা আনফাল বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। কেননা, আল্লাহ্ তা‘আলা ফেরশতাদের সাহায্যে আপনাকে গুপ্তভাবে এবং মুসলমানদের প্রকাশ্যভাবে সাহায্য করিয়াছেন। (ব:কো:)
২। ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় সৈন্য সংখ্যা কম থাকার কারণে ইসলাম ও নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজন প্রত্যেকের মনে উৎসাহের প্রাবল্য ছিল। পরে তাহাদের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে উক্ত উৎসাহ স্বভাবত: হ্রাস পায়। দূরের মানসূল কিতাবে উল্লেখ হইয়াছে দশ গুণ শক্র সৈন্যের সহিত যুদ্ধ করার নির্দেশটি পূর্ববর্তী কালের জন্য। (ব:কো:)
৩। বদর যুদ্ধের বন্দীদের সম্বন্ধে কি করা হইবে এই বিষয়ে হুযূর (দ:) সাহাবায়ে কেরামের পরামর্শ চাহিলে কেহ কেহ তাহাদিগকে হত্যা করার পরামর্শ দিলেন, আর কেহ কেহ ফিদিয়া গ্রহণপূর্বক ছাড়িয়া দেওয়ার পরামর্শ দিলেন। এই সম্বন্ধে উক্ত আয়াত নাযিল হয়। (ব:কো:)
لَّوْلَا كِتَابٌ مِّنَ اللَّهِ سَبَقَ لَمَسَّكُمْ فِيمَا أَخَذْتُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
বাংলা অর্থ:
৬৮। যদি আল্লাহ তা‘আলার লিখন নিধারিত হইয়া না থাকিত তবে যে –ব্যবস্থা তোমরা অবলম্বন করিয়াছ তৎসম্বন্ধে তোমাদের উপর কোন বড় শাস্তি আসিয়া পড়িত।
فَكُلُوا مِمَّا غَنِمْتُمْ حَلَالًا طَيِّبًا ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
বাংলা অর্থ:
৬৯। অতএব তোমরা যাহা কিছু (ফিদিয়াস্বরূপ) লইয়াছ উহাকে হালাল পাক ভাবিয়া খাও, আর আল্লাহকে ভয় করিতে থাক; নিশ্চয় আল্লাহ্ অতি ক্ষমাশীল, দয়াময়।
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُل لِّمَن فِي أَيْدِيكُم مِّنَ الْأَسْرَىٰ إِن يَعْلَمِ اللَّهُ فِي قُلُوبِكُمْ خَيْرًا يُؤْتِكُمْ خَيْرًا مِّمَّا أُخِذَ مِنكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
বাংলা অর্থ:
৭০। হে নবী! আপনার অধিকারে যে সমস্ত বন্দী রহিয়াছে, আপনি তাহাদিগকে বলিয়া দিন যে, যদি আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের অন্তরে ঈমান দেখিতে পান, তবে তোমাদের নিকট হইতে যাহাকিছু গ্রহণ করা হইয়াছে, তদপেক্ষা উত্তম বস্তু তোমাদিগকে প্রদান করিবেন এবং তোমাদিগকে ক্ষমা করিবেন। আর আল্লাহ্ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
وَإِن يُرِيدُوا خِيَانَتَكَ فَقَدْ خَانُوا اللَّهَ مِن قَبْلُ فَأَمْكَنَ مِنْهُمْ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
বাংলা অর্থ:
৭১। আর যদি তাহারা আপনার সহিত বিশ্বাসঘাতকতা করার ইচ্ছা রাখে, তবে ইহার পূর্বে আল্লাহর সহিত (-ও) তাহারা বিশ্বাসঘাতকতা করিয়াছিল, অত:পর আল্লাহ্ তাহাদিগকে বন্দী করাইয়া দিলেন। আর আল্লাহ্ মহাজ্ঞানী, বড় হেকমতওয়ালা।
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِينَ آوَوا وَّنَصَرُوا أُولَـٰئِكَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ ۚ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يُهَاجِرُوا مَا لَكُم مِّن وَلَايَتِهِم مِّن شَيْءٍ حَتَّىٰ يُهَاجِرُوا ۚ وَإِنِ اسْتَنصَرُوكُمْ فِي الدِّينِ فَعَلَيْكُمُ النَّصْرُ إِلَّا عَلَىٰ قَوْمٍ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُم مِّيثَاقٌ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
বাংলা অর্থ:
৭২। নি:সন্দেহে যাহারা ঈমান আনিয়াছে এবং হিজরতও করিয়াছে এবং নিজেদের ধন ও প্রাণ দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় জেহাদও করিয়াছে, আর যাহারা (মুহাজেরদের কে) আশ্রয় দান করিয়াছে এবং সাহায্য করিয়াছে, ইহারা পরস্পর একে অন্যের ওয়ারিস হইবে। আর যাহারা ঈমান তে আনিয়াছে অথচ হিজরত করে নাই, তাহাদের সহিত তোমাদের উত্তরাধিকারিত্বের কোন সংস্রব নাই, যে পর্যন্ত না তাহারা হিজরত করে, আর যদি তাহারা তোমাদের নিকট ধমীয় ব্যাপারে সাহায্য চাহে, তবে তোমাদের জিম্মায় সাহায্য করা ওয়াজেব, কিন্তু ঐ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নহে তোমাদের মধ্যে এবং তাহাদের মধ্যে পরস্পর (সন্ধির) অঙ্গীকার রহিয়াছে, আর আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের সকল কার্যকলাপ দেখেন।
সূরা আনফাল বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। অর্থাৎ যদি লওহে মাহফুযে এই কথা লিখিত বা থাকিত যে বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী দিগকে আযাব করা হইবে না এবং গণীমতের মাল তোমাদের জন্য হালাল তবে এই বন্দীদিগকে ফিদিয়া লইয় মুক্তি দেওয়ার কারণে ভীষণ শাস্তি নাযিল হইত। (ব: কো:)
২। হুযূরের চাচা আব্বাসও বদরের বন্দীদের মধ্যে ছিলেন। হুযূর তাঁহাকে বলিলেন, আপনার নিজের এবং দুই ভাতিজা আকীল ও নওফেলের ফিদিয়া আদায় করুন। আব্বাস বলিলেন, আমি এত অর্থ কোথায় পাইব? হুযূর বলিলেন, উম্মুল ফযলের নিকট যে স্বর্ণ রাখিয়া আসিয়াছেন, তাহা কি হইল? আব্বাস বলিলেন এই খবর তুমি কিরূপে জানিলে? হুযূর বলিলেন, আমার খোদা আমাকে জান্ইায়া দিয়াছেন। অত:পর তিনজনের ফিদিয়া আব্বাস (রা:) আদায় করিয়া দিলেন। (মু:কো:)
وَالَّذِينَ كَفَرُوا بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ ۚ إِلَّا تَفْعَلُوهُ تَكُن فِتْنَةٌ فِي الْأَرْضِ وَفَسَادٌ كَبِيرٌ
বাংলা অর্থ:
৭৩। আর যাহারা কাফের তাহারা পরস্পর এক অন্যের উত্তরাধিকার; যদি ইহার (অর্থাৎ, এই বিধানের) উপর আমল না কর তবে ভূপৃষ্ঠে বড় ফেতনা ও মহা বিশৃঙ্খলা ছাড়াইয়া পড়িবে।
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِينَ آوَوا وَّنَصَرُوا أُولَـٰئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا ۚ لَّهُم مَّغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ
বাংলা অর্থ:
৭৪। আর যাহারা মুসলমান হইয়াছে, এবং হিজরত করিয়াছে এবং আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করিয়া আসিতেছে আর যাহারা নিজেদের নিকট আশ্রয় দান করিয়াছে এবং তাহাদের সাহায্য করিয়াছে, ইহারাই হইতেছে ঈমানের পূর্ণ হক্ক আদায়কারী; তাহাদের জন্য রহিয়াছে ক্ষমা ও অতি সম্মানজনক রিযক।
وَالَّذِينَ آمَنُوا مِن بَعْدُ وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا مَعَكُمْ فَأُولَـٰئِكَ مِنكُمْ ۚ وَأُولُو الْأَرْحَامِ بَعْضُهُمْ أَوْلَىٰ بِبَعْضٍ فِي كِتَابِ اللَّهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ
বাংলা অর্থ:
৭৫। আর যাহারা মহানবী (দ:)-এর হিজরতের পরবতী কালে ঈমান আনয়ন করিয়াছে এবং হিজরত করিয়াছে এবং তোমাদের সঙ্গে একত্রে জেহাদ করিয়াছে, বস্তুত: উহারা তোমাদেরই অন্তর্ভুক্ত; আর যাহারা (পরস্পর) আত্মীয় তাহারা (অনাত্মীয়দের তুলনায়) একে অন্যের (মীরাসের) অধিক হক্কদার আল্লাহর কিতাব (অর্থাৎ শরীঅতের বিধান) মতে; নিশ্চয় আল্লাহ্ তা“আলা প্রত্যেক বস্তুকে ভালভাবে জানেন।
সূরা আনফাল বাংলা অনুবাদ শানে নুযূল:
১। অর্থাৎ পরে হিজরত কারীরা ফযীলতের দিক দিয়া তোমাদের প্রাথমিক মুহাজিরদের সমকাষ না হইলেও আংশিক তাহারা তোমাদেরই শ্রেনীভুক্ত তোমরা যথাসময়ে হিজরত করিয়াছ বলিয়া হিজরতের পূর্ণ ফযীলত লাভ করিয়াছ। আর ইহারা পরে করিয়াছে বলিয়া আংর্শিক ফযীলত লাভ করিয়াছে। কিন্তু উত্তরাধিকারীত্ব ব্যাপরে তাহারা তোমাদের সমকক্ষই থাকিবে। ফযীলতের মধ্যে আংশিক পার্থক্য হওয়ার দরুন উত্তারাধিকারীত্ব ইত্যাদি আহকারেম মধ্যে প্রভেদ হওয়ার কারণ নাই। (ব:কো:)
২। অর্থাৎ আনছার ও মুহাজিরদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের কারণে ওয়ারিসী হক্ব পাওয়া একটি শর্তে শর্তাধীন, তাহা এই যে মৃত ব্যক্তির কোন বংশগত আত্মীয় থাকিলে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ ব্যক্তি ওয়ারিসী হক্ব পাইবে না। (ব: কো:)
সূরা আরাফ এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা আনআম এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা আল-মায়েদা এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা আন-নিসা এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
আমাদের, ফেসবুক পেইজে লাইক, শেয়ার এবং কমেন্টস করে আমাদের সাথেই থাকুন।