সূরা-আন-নিসা বাংলা অর্থ (আয়াত ৪১-৫৪)

আয়াত-১৭৬

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু

فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِن كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَىٰ هَـٰؤُلَاءِ شَهِيدًا

বাংলা অর্থ:

৪১। সুতরাং ঐ সময়েই বা কি অবস্থা হইবে? যখন আমি প্রত্যেক উম্মত হইতে এক একজন সাক্ষী উপস্থাপিত করিব এবং আপনাকে তাহাদের উপর সাক্ষীরূপে উপস্থিত করিব।

يَوْمَئِذٍ يَوَدُّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَعَصَوُا الرَّسُولَ لَوْ تُسَوَّىٰ بِهِمُ الْأَرْضُ وَلَا يَكْتُمُونَ اللَّهَ حَدِيثًا

বাংলা অর্থ:

৪২। যাহারা কুফর করিয়াছে এবং রাসূলের কথা অমান্য করিয়াছে-তাহারা ঐ দিন কামনা করিবে যে, হায় ! যদি আমরা মাটির সহিত বিলীন হইয়া যাইতাম; আর তাহারা আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট কোন কথা গোপন করিতে পারিবে না।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَأَنتُمْ سُكَارَىٰ حَتَّىٰ تَعْلَمُوا مَا تَقُولُونَ وَلَا جُنُبًا إِلَّا عَابِرِي سَبِيلٍ حَتَّىٰ تَغْتَسِلُوا ۚ وَإِن كُنتُم مَّرْضَىٰ أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِّنكُم مِّنَ الْغَائِطِ أَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَفُوًّا غَفُورًا

বাংলা অর্থ:

৪৩। হে ঈমানদারগণ ! তোমরা নামাযের নিকটেও যাইও না নেশার অবস্থায়- যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা নিজেদের মুখের কথাগুলি উপলব্ধি করিতে পার এবং জানাবতের আবস্থায়ও-তোমাদের মুসাফেরী অবস্থা ব্যতীত, যে পর্যন্ত না গোসল করিয়া লও; আর যদি তোমরা পীড়িত হও অথবা মুসাফেরী অবস্থায় থাক অথবা তোমাদের মধ্যে কেহ এস্তেন্জা হইতে আসে অথবা তোমরা স্ত্রী-সঙ্গম করিয়া থাক, ইতঃপর তোমরা পানি না পাও, তবে পাক মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করিয়া লও, অর্থাৎ, স্বীয় মুখ মন্ডল ও হস্তদ্বয়ের মস্হে কর; নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা অতিশয় মার্জনাকারী, মহা ক্ষমাপরায়ণ।

أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ أُوتُوا نَصِيبًا مِّنَ الْكِتَابِ يَشْتَرُونَ الضَّلَالَةَ وَيُرِيدُونَ أَن تَضِلُّوا السَّبِيلَأَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ أُوتُوا نَصِيبًا مِّنَ الْكِتَابِ يَشْتَرُونَ الضَّلَالَةَ وَيُرِيدُونَ أَن تَضِلُّوا السَّبِيلَ

বাংলা অর্থ:

৪৪। তুমি কি তাহাদিগকে লক্ষ্য কর নাই ! যাহাদেরকে কিতাবের এক বড় অংশ প্রদত্ত হইয়াছে, তাহারা গোমরাহীকে গ্রহণ করিতেছে এবং কামনা করে যে, তোমরা (-ও সরল) পথ হইতে পথহারা হইয়া যাও।

শানে নুযূল

১) অর্থাৎ, হাশরের দিন পাপীরা দোষ অস্বীকার করিবে, তখন নবীগণ তাহাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবেন। যে যাহা করিয়াছিল সবকিছুই তাঁহারা প্রকাশ করিবেন। হুযূর (দঃ)-কেও অন্যান্য নবীগণের ন্যায় স্বীয় উম্মতদের অবস্থা বর্ণনা করার জন্য এবং সাক্ষ্যরূপে উপস্থিত করা হইবে। (হাঃ শায়খুল্হিন্দ)

২) শরাব হারাম হওয়ার পূর্বে একদিন আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ) এক নিমন্ত্রণে স্বীয় মেহ্মানদিগকে শরাব পান করাইয়া ছিলেন। তখন মাগরিবের সময় ছিল। সকলেই নামাযে দাঁড়াইলেন। হযরত আলী ইমামত করিতে ছিলেন। নেশার ঘোরে নামাযে তাঁহার মুখ হইতে তৌহিদের পরিপন্থী একটি কালাম বাহির হইয়া পড়িল। (অব্যশক ইহা অনিচ্ছাকৃত ছিল)। এই প্রসঙ্গে এই আয়াতটি নাযিল হয়। ইহাতে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামায পড়িতে নিষেধ করা হইয়াছে। (বঃ কোঃ)

وَاللَّهُ أَعْلَمُ بِأَعْدَائِكُمْ ۚ وَكَفَىٰ بِاللَّهِ وَلِيًّا وَكَفَىٰ بِاللَّهِ نَصِيرًا

বাংলা অর্থ:

৪৫। আর আল্লাহ্ তোমাদের শত্রুদিগকে পূর্ণরূপে জানেন; এবং আল্লাহ্ ওলী হিসাবে যথেষ্ট, এবং আল্লাহ্ মদদগার হিসাবেও যথেষ্ট।

مِّنَ الَّذِينَ هَادُوا يُحَرِّفُونَ الْكَلِمَ عَن مَّوَاضِعِهِ وَيَقُولُونَ سَمِعْنَا وَعَصَيْنَا وَاسْمَعْ غَيْرَ مُسْمَعٍ وَرَاعِنَا لَيًّا بِأَلْسِنَتِهِمْ وَطَعْنًا فِي الدِّينِ ۚ وَلَوْ أَنَّهُمْ قَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا وَاسْمَعْ وَانظُرْنَا لَكَانَ خَيْرًا لَّهُمْ وَأَقْوَمَ وَلَـٰكِن لَّعَنَهُمُ اللَّهُ بِكُفْرِهِمْ فَلَا يُؤْمِنُونَ إِلَّا قَلِيلًا

বাংলা অর্থ:

৪৬। এই (বর্ণিত) ব্যক্তিরা ইহুদীদের মধ্যকার লোক-কালাম (তাওরাত)-কে উহার স্থান হইতে (শব্দ বা অর্থের দিক দিয়া) অন্য দিকে ফিরাইয়া দেয়, আর (রাসূলুল্লাহর সঙ্গে) এই বাক্যগুলি ব্যবহার করে…….এবং …….এবং ….এইভাবে যে, নিজেদের ভাষা (ভঙ্গি) বদলাইয়া এবং (অন্তরে) ধর্মের প্রতি দোষারোপের ইচ্ছায়; আর যদি তাহারা ……..এবং ………এই বাক্যগুলি ব্যবহার করিত, তবে ইহা তাহাদের জন্য উত্তম এবং স্থানোপযোগী কথা হইত, কিন্তু আল্লাহ্ ইহাদিগকে ইহাদের কুফরীর দরুন স্বীয় করুণা হইতে দূরে নিক্ষেপ করিয়াছেন, অতএব, তাহারা ঈমান আনিবে না অল্প কয়েকজন ব্যতীত।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ آمِنُوا بِمَا نَزَّلْنَا مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَكُم مِّن قَبْلِ أَن نَّطْمِسَ وُجُوهًا فَنَرُدَّهَا عَلَىٰ أَدْبَارِهَا أَوْ نَلْعَنَهُمْ كَمَا لَعَنَّا أَصْحَابَ السَّبْتِ ۚ وَكَانَ أَمْرُ اللَّهِ مَفْعُولًا

বাংলা অর্থ:

৪৭। হে কিতাব প্রাপ্ত লোকগণ ! তোমরা ঐ কিতাবের প্রতি ঈমান আন যাহা আমি নাযিল করিয়াছি-এইরূপে যে, উহা তোমাদের নিকটস্থ কিতাবের সত্যতা সমর্থন করে-ইহার পূর্বে যে, (আমি তোমাদের) চেহারাগুলিকে নিশ্চহ্ন করিয়া দেই, বস্তুতঃ ইহাদের বিপরীত দিকের ন্যায় করিয়া দেই অথবা আমি ইহাদের প্রতি এইরূপ অভিসম্পাত করি যেইরূপ অভিসম্পাত শনিবার পালনকারীদের প্রতি করিয়াছিলাম; আর আল্লাহর আদেশ সুসম্পন্ন হইয়াই থাকে।

إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَ‌ٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ ۚ وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَىٰ إِثْمًا عَظِيمًا

বাংলা অর্থ:

৪৮। নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁহার সহিত শরীক স্থির করার অপরাধ ক্ষমা করিবেন না এবং ইহা ব্যতীত অন্যান্য পাপগুলি তিনি যাহাকে ইচ্ছা ক্ষমা করিয়া দিবেন; আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সহিত অংশী সাব্যস্ত করে, সে গুরুতর পাপে পাপী হইল।

শানে নুযূল

১) এই শব্দগুলি দ্ব্যর্থবোধক …….এর ভাল অর্থ-আমরা আপনার আদেশ শুনিয়াছি, যাহারা আপনার বিরুদ্ধে প্ররোচনা দেয় তাহাদের কথা মানি নাই। কদর্থ-আমরা আপনার আদেশ শুনিয়াছি, মানিব না।…….ভাল অর্থ, “আপনার মতবিরোধী কথা আপনাকে শুনানো না হউক। আপনি যাহা কিছু বলেন তদুত্তরে সকলেই যেন আপনার সপক্ষে বলে”। কদর্থ, “আপনাকে কোন ভালো কথা শুনানো না হউক। আপনার কথার বিরূপ উত্তরই আপনার কর্ণগোচর হউক ”।…..শব্দের ভালো অর্থ, আমাদের প্রতি লক্ষ্য করুন। ইহার কদর্থ, ইহুদীদের ভাষায় একটি গালি। কাফের ও ইহুদীরা এসকল শব্দের কদর্থই গ্রহণ করিত। (বঃ কোঃ)

২) সুতরাং, তোমাদের ঈমান না আনাতে যদি আল্লাহ্ মুখমন্ডল বিকৃত করার বা বানরের আকৃতিতে পরিণত করার আদেশ দেন, তবে ইহা নিশ্চয়ই হইয়া যাইবে। (বঃ কোঃ)

أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يُزَكُّونَ أَنفُسَهُم ۚ بَلِ اللَّهُ يُزَكِّي مَن يَشَاءُ وَلَا يُظْلَمُونَ فَتِيلًا

বাংলা অর্থ:

৪৯। তুমি কি তাহাদিগকে লক্ষ্য কর নাই ! যাহারা নিজদিগকে পবিত্র বলিয়া প্রকাশ করে; বরং আল্লাহ্ যাহাকে ইচ্ছা পবিত্র করেন, আর তাহাদের প্রতি সূত্র পরিমাণও জুলুম করা হইবে না।

انظُرْ كَيْفَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ ۖ وَكَفَىٰ بِهِ إِثْمًا مُّبِينًا

বাংলা অর্থ:

৫০। লক্ষ্য কর ! তাহারা আল্লাহর প্রতি কিরূপ মিথ্যা অপবাদ দিতেছে; এবং ইহাই স্পষ্ট অপরাধী হওয়ার জন্য যথেষ্ট।

أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ أُوتُوا نَصِيبًا مِّنَ الْكِتَابِ يُؤْمِنُونَ بِالْجِبْتِ وَالطَّاغُوتِ وَيَقُولُونَ لِلَّذِينَ كَفَرُوا هَـٰؤُلَاءِ أَهْدَىٰ مِنَ الَّذِينَ آمَنُوا سَبِيلًا

বাংলা অর্থ:

৫১। তুমি কি তাহাদিগকে লক্ষ্য কর নাই, যাহাদেরকে কিতাবের এক বড় অংশ প্রদত্ত হইয়াছে, তাহারা জিব্ত (মূর্তি) ও শয়তানকে মান্য করে, আর তাহারা কাফেরদের সম্বন্ধে বলে, ইহারা মুসলমানদের তুলনায় অধিকতর সঠিক পথে রহিয়াছে।

أُولَـٰئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللَّهُ ۖ وَمَن يَلْعَنِ اللَّهُ فَلَن تَجِدَ لَهُ نَصِيرًا

বাংলা অর্থ:

৫২। ইহারাই সে সকল লোক, আল্লাহ্ যাহাদিগকে লা’নত করিয়াছেন; আর আল্লাহ্ যাহাকে লা’নত করেন তাহার জন্য কোনই সাহায্যকারী পাইবে না।

أَمْ لَهُمْ نَصِيبٌ مِّنَ الْمُلْكِ فَإِذًا لَّا يُؤْتُونَ النَّاسَ نَقِيرًا

বাংলা অর্থ:

৫৩। তবে কি তাহাদের নিকট রাজত্বের কোন অংশ রহিয়াছে ? তবে এমতাবস্থায় তো তাহারা লোকদিগকে সামান্য বস্তুও দিত না।

أَمْ يَحْسُدُونَ النَّاسَ عَلَىٰ مَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ ۖ فَقَدْ آتَيْنَا آلَ إِبْرَاهِيمَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَآتَيْنَاهُم مُّلْكًا عَظِيمًا

বাংলা অর্থ:

৫৪। নাকি তাহারা অন্য লোকদের (যেমন রাসূল্লাহর) প্রতি হিংসায় জ্বলিয়া মরিতেছে ঐ সমস্ত বস্তুর দরুন যাহা আল্লাহ্ স্বীয় অনুগ্রহে তাহাদিগকে প্রদান করিয়াছেন, সুতরাং (আপনার এইরূপ বস্তু প্রাপ্ত হওয়া কোন নূতন বিষয় নয়, কেননা) আমি (ইতিপূর্বে) ইব্রাহীমের বংশধরকে কিতাবও দান করিয়াছি এবং জ্ঞান দান করিয়াছি, আর আমি ইহাদিগকে সুবিশাল রাজ্যও প্রদান করিয়াছি।

শানে নুযূল

১) ইহুদীরা বাছুর পুজিত, হযরত উযাইর (আঃ)- কে খোদার পুত্র বলিত। উপরোক্ত আয়াত দ্বারা যখন তাহারা জানিতে পারিল যে, র্শিক মহা পাপ, ইহা কখনও ক্ষমা করা হইবে না। তখন বলিত লাগিল, “আমরা র্শিক করি না; বরং আমরা আল্লাহর প্রিয় বান্দা। আমরা পয়গম্ব-রের সন্তান। পয়গম্বরী আমাদের উত্তরাধীকার।” আল্লাহ্ তা‘আলা তাহাদের এই অহংকার পছন্দ করিলেন না। আয়াতটি এই সম্বন্ধেই নাযিল হইয়াছে। (মুঃ কোঃ)

২) ক্বোরাইশ সম্প্রদায়ের কাফেরেরা ইহুদী আলেমদিগকে জিজ্ঞাসা করিল, আমাদের ধর্ম ভাল না মুহাম্মাদের (দঃ) অনুগামীদের ধর্ম ভাল? আমরা হাজীদের এবং কা‘বা শরীফের খেদ্মত করিয়া থাকি। তদুত্তরে ইহুদী আলেমরা বলিল, তোমাদের ধর্ম ভাল। তোমরা তাহাদের চেয়ে অধিক সুপথ প্রাপ্ত। এতদ্সম্বন্ধে এই আয়াতটি নাযিল হয়। (বঃ কোঃ)

সূরা-আন-নিসা, এর আয়াত ২৩ হতে ৪০ পর্যন্ত বাংলা অর্থ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
আমাদের, ফেসবুক পেইজে লাইক, শেয়ার এবং কমেন্টস করে আমাদের সাথেই থাকুন।