সূরা ইউসুফ বাংলা অনুবাদ
সর্বমোট আয়াত-১১১
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু
الر ۚ تِلْكَ آيَاتُ الْكِتَابِ الْمُبِينِ
বাংলা অর্থ:
১। আলিফ- লাম -রা। এইগুলি হইতেছে সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত।
إِنَّا أَنزَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
বাংলা অর্থ:
২। আমি ইহাকে নাযিল করিয়াছি কোরআনরূপে আরবী ভাষায়, যেন তোমরা বুঝিতে পার।
نَحْنُ نَقُصُّ عَلَيْكَ أَحْسَنَ الْقَصَصِ بِمَا أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ هَـٰذَا الْقُرْآنَ وَإِن كُنتَ مِن قَبْلِهِ لَمِنَ الْغَافِلِينَ
বাংলা অর্থ:
৩। আমি যে এই কোরআন আপনার প্রতি প্রেরণ করিয়াছি, ইহা দ্বারা আমি এক অতি উত্তম ঘটনা আপনার নিকট বর্ণনা করিতেছি আর আপনি ইহার পূর্বে (এই ঘটনা সম্বন্ধে) একেবারেই অনবহিত ছিলেন ।
সূরা ইউসুফ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। হক্ব বা সততা কোরআনের সমস্ত আয়াতেরই অবিচ্ছেদ্য গুণ। তদুপরি এই আয়াতগুলিতে অতিরিক্ত গুণ এইযে, ইহা শ্রোতৃমন্ডলীর জন্য উপদেশ এবং স্মৃতি বিজড়িত্ অতএব, এই আয়াতগুলি উপদেশ হিসাবে শ্রোতাদের মনে ভয়ের উদ্রেক করিতেছে এবং স্মারক হিসাবে তাহাদের সম্মুখে ভবিষ্যতের কর্মপস্থা পেশ করিতেছে। (ব: কো 🙂
২। ইবনে আব্বাস (রা:) কর্তৃক বণিত আছে যে, কতিফয় সাহাবী হুযূরের সমীপে আসিয়া কিছছা শনিতে চাহিলে তথন সূরা ইউসুফ নাযিল হয়। ইবেনে আব্বাস (রা:) আরও বলিয়াছেন, ইহুদীরা পরিক্ষামূলক ভাবে হুযূরকে ইউসুফ ও তাঁহার ভাইদের ঘটনা জিজ্ঞাসা করিলে এই সুরাটি নাযিল হয়। (ব: কো:)
৩। ইহাতে পরস্পর সম্পর্ক বিশিষ্ট কতিপয় বিষয়ের সমাবেশ হইয়াছে। এই জন্য ইহাকে “আহসানুল কাছাছ” বলা হইয়াছে (ব: কো:)
إِذْ قَالَ يُوسُفُ لِأَبِيهِ يَا أَبَتِ إِنِّي رَأَيْتُ أَحَدَ عَشَرَ كَوْكَبًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ رَأَيْتُهُمْ لِي سَاجِدِينَ
বাংলা অর্থ:
৪। সেই সময়টি। উল্লেখযোগ্য, নিজ পিতার নিকট বলিলেন, আব্বা! আমি (স্বপ্নে) এগারটি তারকা এবং সূর্য ও চন্দ্র কে দেখিয়াছি- উহাদিগকে দেখিয়াছি আমার সম্মুখে সজ্দা করিতে।
قَالَ يَا بُنَيَّ لَا تَقْصُصْ رُؤْيَاكَ عَلَىٰ إِخْوَتِكَ فَيَكِيدُوا لَكَ كَيْدًا ۖ إِنَّ الشَّيْطَانَ لِلْإِنسَانِ عَدُوٌّ مُّبِينٌ
বাংলা অর্থ:
৫। তিনি বলিলেন, হে বৎস! তোমার এই স্বপ্ন নিজের ভাইদের নিকট ব্যক্ত করিও না, অন্যথায় তাহারা তোমার জন্য কোন বিশেষ দুরভিসন্ধি করিবে; নিশ্চয়ই, শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু।
وَكَذَٰلِكَ يَجْتَبِيكَ رَبُّكَ وَيُعَلِّمُكَ مِن تَأْوِيلِ الْأَحَادِيثِ وَيُتِمُّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكَ وَعَلَىٰ آلِ يَعْقُوبَ كَمَا أَتَمَّهَا عَلَىٰ أَبَوَيْكَ مِن قَبْلُ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْحَاقَ ۚ إِنَّ رَبَّكَ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
বাংলা অর্থ:
৬। আর এইরূপেই তোমার রব্ব তোমাকে (নবী রূপে) মনোনীত করিবেন এবং তোমাকে স্বপ্ন তত্ত্ব জ্ঞান শিক্ষা দিবেন, আর স্বীয় নেয়ামতকে পূর্ণ করিয়া দিবেন, তোমার উপর এবং ইয়াকুবের বংশধরের উপর, যেমন ইহার পূর্বে নিজ নেয়ামতকে পূর্ণ করিয়া দিয়াছিলেন তোমার পিতামহ, প্রপিতামহ অর্থাৎ ইবরাহীম ও ইসহাকের উপর; নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক অসীম জ্ঞানী প্রজ্ঞাময়।
لَّقَدْ كَانَ فِي يُوسُفَ وَإِخْوَتِهِ آيَاتٌ لِّلسَّائِلِينَ
বাংলা অর্থ:
৭। ইউসুফ ও তাহার ভাইদের ঘটনাতে (আপনার নুবুওয়াতের) প্রমাণসমূহ রহিয়াছে ঐ সমস্ত লোকদের জন্য যাহারা জিজ্ঞাসা করে।
إِذْ قَالُوا لَيُوسُفُ وَأَخُوهُ أَحَبُّ إِلَىٰ أَبِينَا مِنَّا وَنَحْنُ عُصْبَةٌ إِنَّ أَبَانَا لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ
বাংলা অর্থ:
৮। সেই সময়টি উল্লেখযোগ্য, যখন সেই ভাইয়েরা বলাবলি করেত লাগিল, (দেখ!) ইউসুফ ও তাহার (সহোদর) ভাই আমাদের পিতার নিকট আমাদের চেয়ে অধিক প্রিয় অথচ আমরা হইতেছি পূণৃ একটি জমাআত; বাস্তবিকই আমাদের ডেতা স্পষ্ট ভ্রমের মধ্যে রহিয়াছেন।
সূরা ইউসুফ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। কেননা নবীর বংশধর হেতু একাদশ নক্ষত্র অর্থ- একাদশ ভ্রাতা, সূর্য অর্থ – পিতা এবং চন্দ্র অর্থ মাতা। আর ইহাদের সিজদা করার অর্থ- একদিন তোমার মযাদা অতিশয় উন্নত হইবে। ইহাতে তাহারা হিংসা পরবশ হইয়া তোমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করিবে। বেন- ইয়ামিন ছিল ইউসুফের সহোদর ভাই এবং বাকি দশজন ছিল তাঁহার বৈমাত্রেয় ভাই। কথা প্রসঙ্গে প্রকাশ করিয়া দিতে পারেন এই আশংকায় বেনইয়ামিনকেও স্বপ্ন সম্পর্কে অনবহিত রাখা হইয়া ছিল। (ব: কো:)
২। কেননা, এমন নিরাশ্রয় ও নি:সম্বল অবস্থা হইতে উন্নীত করিয়া হযরত ইউসুফকে রাজ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত করা একমাত্র খোদারই কাজ। রসূলুল্ল্হ (দ:) এর নিকট হইতে এই কিছছটি শুনিয়া মুসলমানদের ঈমান দৃঢ় হয়।আর ইহুদীদের জন্য ইহা তাঁহার নুবুওয়াতের প্রমাণ হইতে পারে।
اقْتُلُوا يُوسُفَ أَوِ اطْرَحُوهُ أَرْضًا يَخْلُ لَكُمْ وَجْهُ أَبِيكُمْ وَتَكُونُوا مِن بَعْدِهِ قَوْمًا صَالِحِينَ
বাংলা অর্থ:
৯। হয়ত ইউসুফকে মারিয়া ফেল অথবা তাহাকে কোন (দূরবতী) স্থানে ফেলিয়া আস, তাহা হইলে তোমাদের পিতার দৃষ্টি শুধু তোমাদের দিকে হইয়া যাইবে এবং তোমাদের সকল উদ্দেশ্য সফল হইয়া যাইবে।
قَالَ قَائِلٌ مِّنْهُمْ لَا تَقْتُلُوا يُوسُفَ وَأَلْقُوهُ فِي غَيَابَتِ الْجُبِّ يَلْتَقِطْهُ بَعْضُ السَّيَّارَةِ إِن كُنتُمْ فَاعِلِينَ
বাংলা অর্থ:
১০। তাহাদের মধ্য হইতে একজন বক্তা বলিল, ইউসুফকে হত্যা করিও না বরং তাহাকে কোন অন্ধকূপে ফেলিয়া দাও, হয়ত কোন পথিক তাহাকে বাহির করিয়া লইয়া যাইবে, যদি তোমাদের কিছু করিতে হয়।
قَالُوا يَا أَبَانَا مَا لَكَ لَا تَأْمَنَّا عَلَىٰ يُوسُفَ وَإِنَّا لَهُ لَنَاصِحُونَ
বাংলা অর্থ:
১১। সকলে (সম্বলিতভাবে পিতার নিকট) বলিল, আব্বা! ইহার কারণ কি যে, ইউসূফ সম্বন্ধে আপনি আমাদিগকে বিশ্বাস করেন না অথচ আমরা তাহার হিতাকাংক্ষী ।
أَرْسِلْهُ مَعَنَا غَدًا يَرْتَعْ وَيَلْعَبْ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ
বাংলা অর্থ:
১২। আপনি আগামীকল্য তাহাকে আমাদের সহিত পাঠাইয়া দিন, যাহাতে সে খাওয়া-পিয়া করিবে ও খেলাধুলা করিবে, আর আমরা পূর্ণরূপে তাহার হেফাযত করিব।
قَالَ إِنِّي لَيَحْزُنُنِي أَن تَذْهَبُوا بِهِ وَأَخَافُ أَن يَأْكُلَهُ الذِّئْبُ وَأَنتُمْ عَنْهُ غَافِلُونَ
বাংলা অর্থ:
১৩। ইয়াকুব বলিলেন, ইহা আমাকে চিন্তাম্বিত করিয়া তুলিতেছে যে, তোমরা তাহাকে লইয়া যাইবে, আর আমি, এই আশংকা করিতেছি যে, তাহাকে কোন নেকড়ে বাঘ খাইয়া ফেলে এবং তোমরা তাহা হইতে অমনোযাগী থাক।
قَالُوا لَئِنْ أَكَلَهُ الذِّئْبُ وَنَحْنُ عُصْبَةٌ إِنَّا إِذًا لَّخَاسِرُونَ
বাংলা অর্থ:
১৪। তাহারা বলিল, যদি তাহাকে নেকড়ে বাঘ খাইয়া ফেলে অথচ আমরা পূর্ণ একটি দল (বিদ্যমান ) রহিয়াছি, তবে তো আমরা একেবারেই অপদার্থ সাব্যস্ত হইব।
فَلَمَّا ذَهَبُوا بِهِ وَأَجْمَعُوا أَن يَجْعَلُوهُ فِي غَيَابَتِ الْجُبِّ ۚ وَأَوْحَيْنَا إِلَيْهِ لَتُنَبِّئَنَّهُم بِأَمْرِهِمْ هَـٰذَا وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ
বাংলা অর্থ:
১৫। অনন্তর যখন তাহারা তাহাকে লইয়া গেল এবং সকলে দৃঢ় সংকল্প করিল যে, তাহাকে কোন অন্ধকূপে ফেলিয়া দিবে (অত:পর তাহারা সংকল্পকে কাজে পরিণত করিল), তখন আমি তাঁহার নিকট ওহী পাঠাইলাম যে, তুমি (একদিন) উহাদেরকে এই বিবরণ জানাইয়া দিবে অথচ তাহারা তোমাকে চিনিতেও পারিবে না।
সূরা ইউসুফ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। অর্থাৎ আমাদের পিতা ইউসুফ কে অধিক ¯েœহ করেন। কাজেই ইউসুফ থাকিতে আমাদের প্রতি পিতার মনোভাবের পরিবর্তনের কোনই আশা নাই্ এই কন্টক দূর করিতেই হইবে, তবে পিতার ¯েœহ ও আমাদের মতলব হাছিল হইবে। (ব: কো:)
২। ভ্রাতাদের মধ্যে একজন বলিল, তাহাকে হত্যা করিও না ্ অবশ্য তাহাকে দূর দেশে ফেলিয়া আসিতে পার। এই উদ্দেশ্যে সম্প্রতি তাহাকে লোক চলাচল – পথের ধারে স্বল্প পানিবিশিষ্ট কোন গভীর কূপে ফেলিয়া আস। সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত করিয়া তাহারা পিতার নিকট গমন করিল এবং ইউসুফকে তাহাদের সঙ্গে বেড়াইতে যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করিল । তিনি রাযী হইলেন না। অবশেষে তাহারা উউসুফকে প্রলুব্ধ করিলে তিনি ভাইদের সঙ্গে যাওয়ার জন্য পিতাকে পীড়াপীড়ি করিলেন। অগত্যা ইয়াকুব (আ:) ইউসুফ-কে অনুমতি দিলেন। (ব:কো:)
وَجَاءُوا أَبَاهُمْ عِشَاءً يَبْكُونَ
বাংলা অর্থ:
১৬। আর তাহারা নিজেদের পিতার নিকট এশার সময় কাঁদিতে কাঁদিতে আসিয়া পৌছিল।
قَالُوا يَا أَبَانَا إِنَّا ذَهَبْنَا نَسْتَبِقُ وَتَرَكْنَا يُوسُفَ عِندَ مَتَاعِنَا فَأَكَلَهُ الذِّئْبُ ۖ وَمَا أَنتَ بِمُؤْمِنٍ لَّنَا وَلَوْ كُنَّا صَادِقِينَ
বাংলা অর্থ:
১৭। বলিতে লাগিল, আব্বা! আমরা তো সকলে পরস্পর দৌড়াদৌড়িতে লাগিয়া গেলাম এবং ইউসুফকে আমাদের আসবাবপত্রের নিকট রাখিয়া গিয়াছিলাম, ইতাবসরে একটি নেকড়ে বাঘ তাহাকে খাইয়া ফেলিল, আর আপনি কেনই বা আমাদর কথায় বিশ্বাস করিতে যাইবেন, আমরা যতই সত্যবাদী হই না কেন।
وَجَاءُوا عَلَىٰ قَمِيصِهِ بِدَمٍ كَذِبٍ ۚ قَالَ بَلْ سَوَّلَتْ لَكُمْ أَنفُسُكُمْ أَمْرًا ۖ فَصَبْرٌ جَمِيلٌ ۖ وَاللَّهُ الْمُسْتَعَانُ عَلَىٰ مَا تَصِفُونَ
বাংলা অর্থ:
১৮। আর তাহারা ইউসুফের জামা- কাপড়ে মিছামিছি রক্তও মাখিয়া আনিয়াছিল; ইয়াকুব বলিলেন যে- বরং তোমরা নিজেদের মন হইতে একটি কথা গড়িয়া লইয়াছ; অতএব ছবরই করিব, যাহাতে অভিযোগের নাম-গন্ধও না থাকে; এবং যেসমস্ত কথা তোমরা প্রকাশ করিতেছ, তৎসম্বন্ধে আল্লাহই সাহায্য করুন।
وَجَاءَتْ سَيَّارَةٌ فَأَرْسَلُوا وَارِدَهُمْ فَأَدْلَىٰ دَلْوَهُ ۖ قَالَ يَا بُشْرَىٰ هَـٰذَا غُلَامٌ ۚ وَأَسَرُّوهُ بِضَاعَةً ۚ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِمَا يَعْمَلُونَ
বাংলা অর্থ:
১৯। আর (মিসরগামী) একটি কাফেলা আসিয়া উপস্তিত হইল, তাহারা নিজেদের লোককে পানি আনার জন্য (উক্ত কূপের দিকে) পাঠাইল এবং সে নিজের বালতি (কূপে) ফেলিল; (তখন) বালিতে লাগিল, ওহো! কি আনন্দের কথা, ইহা তো একটি উত্তম বালক; এবং তাহাকে পণ্যরূপে গোপন করিয়া রাখিল; আর আল্লাহ তাহাদের সকলের কাযকলাপ সম্বন্ধে অবহিত ছিলেন।
وَشَرَوْهُ بِثَمَنٍ بَخْسٍ دَرَاهِمَ مَعْدُودَةٍ وَكَانُوا فِيهِ مِنَ الزَّاهِدِينَ
বাংলা অর্থ:
২০। অনন্তর (তাঁহার ভ্রাতাগণ) তাঁহাকে বিক্রয় করিয়া ফেলিল অতি নগন্য মূল্যে, মাত্র কয়েকটি দেরহামের বিনিময়ে, আর তাহারা তো তাঁহার কদরদান ছিলই না।
সূরা ইউসুফ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। অর্থাৎ কূপে পতিত হওয়ার পর আল্লাহ ওহী দ্বারা ইউসুফকে সান্ত¡না দিলেন, তুমি চিন্তা করিও না। আমি সত্বরই তোমাকে উদ্ধার করিয়া অতি উচ্চ পদে উন্নীত করিব এবং একদিন তুমি ইহাদিগকে আজকার এই অত্যাচার কাহিনী বলিবে; কিন্তু তাহারা তোমাকে চিনিতে পারিবে না। (ব: কো:)
২। অর্থাৎ গায়ের জামা খুলিয়া তাহারা ইউসুফকে কূপে ফেলিয়া দিল এবং দুম্বা যবাহ করিয়া উহার রক্তে জামাটি রঞ্জিত করিয়া পিতার নিকট আসিয়া বলিল, তাহাকে বাঘে খাইয়াছে। পিতা প্রথমে বিশ্বাস করিলেন, পরে জামা অক্ষত দেখিয়া বলিলেন, ইহা তো তোমাদের সাজান মিথ্যা কথা। (মু:কো:)
৩। লোকটির নাম ছিল মালেক। সে কূপে বালতি ফেলিতেই বালতিতে চড়িয়া ইউসুফ (আ:) উপরে উঠিয়া আসিলেন। ভাইয়েরা আসিয়া দাবি করিল, এইটি আমাদের পলাতক গোলাম, তোমরা কিনিয়া নিতে পার। অবশেষে মাত্র ১৭ দেরহামের পরিবর্তে তাহারা ইউসূফকে খরিদ করিয়া নিল। (ব: কো:)
وَقَالَ الَّذِي اشْتَرَاهُ مِن مِّصْرَ لِامْرَأَتِهِ أَكْرِمِي مَثْوَاهُ عَسَىٰ أَن يَنفَعَنَا أَوْ نَتَّخِذَهُ وَلَدًا ۚ وَكَذَٰلِكَ مَكَّنَّا لِيُوسُفَ فِي الْأَرْضِ وَلِنُعَلِّمَهُ مِن تَأْوِيلِ الْأَحَادِيثِ ۚ وَاللَّهُ غَالِبٌ عَلَىٰ أَمْرِهِ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
বাংলা অর্থ:
২১। আর মিসরে যেব্যক্তি তাহাকে ক্রয় করিয়াছিল, সে নিজের স্ত্রীকে বলিল, ইহাকে সম্ভ্রমের সহিত রাখিও, বিচিত্র নহে যে, আমাদের উপকারে আসিবে অথবা আমরা তাহাকে পুত্ররূপে গন্য করিব এবং এইরূপে আমি ইউসুফকে সেই ভূখন্ডে (মিসর) অতিশয় শক্তি (রাজত্ব) দান করিলাম, আর এই উদ্দেশ্যে যে, আমি তাহােেক স্বপ্ন ফল বর্ণনা শিক্ষা দিব; আর আল্ল্হা তা‘আলা হইতেছেন নিজ কার্যে প্রবল, কিন্তু অধিকাংশ লোক অবগত নহে।
وَلَمَّا بَلَغَ أَشُدَّهُ آتَيْنَاهُ حُكْمًا وَعِلْمًا ۚ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ
বাংলা অর্থ:
২২। আর যখন তিনি স্বীয় যৌবনে পৌছিলেন, আমি তাঁহাকে হেকমত ও এলমদান করিলাম; আর এইরূপ্ইে আমি নেককারদিগকে পুরস্কৃত করিয়া থাকি।
وَرَاوَدَتْهُ الَّتِي هُوَ فِي بَيْتِهَا عَن نَّفْسِهِ وَغَلَّقَتِ الْأَبْوَابَ وَقَالَتْ هَيْتَ لَكَ ۚ قَالَ مَعَاذَ اللَّهِ ۖ إِنَّهُ رَبِّي أَحْسَنَ مَثْوَايَ ۖ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُونَ
বাংলা অর্থ:
২৩। আর যেই রমণীর (যোলায়খার) গৃহে ইউসুফ অবস্থান করিতেছিলেন, সে তাঁহার নিকট হইতে নিজ উদ্দেশ্যে সাধনের জন্য তাঁহাকে ফুসলাইতে লাাগিল এবং সমস্ত দরজা বন্ধ করিয়া দিল, আর বলিতে লাগিল, আস! তোমাকেই বলিতেছি, ইউসুফ বলিলেন, আল্লাহ রক্ষা করুণ। তিনি (তোমার স্বামী) আমার মুরুব্বী, আমাকে কত উত্তমভাবে রাখিয়াছেন; এমন অকৃতজ্ঞদের সাফল্য লাভ হয় না।
وَلَقَدْ هَمَّتْ بِهِ ۖ وَهَمَّ بِهَا لَوْلَا أَن رَّأَىٰ بُرْهَانَ رَبِّهِ ۚ كَذَٰلِكَ لِنَصْرِفَ عَنْهُ السُّوءَ وَالْفَحْشَاءَ ۚ إِنَّهُ مِنْ عِبَادِنَا الْمُخْلَصِينَ
বাংলা অর্থ:
২৪। আর সেই মহিলার অন্তরে তো তাঁহার বাসনা বদ্ধমূল হইতেই ছিল, এবং তাঁহারও সেই রমণীর খেয়াল কিছু কিছু হইতেছিল, যদি না তিনি নিজ পরওয়ারদেগারের দলীল প্রত্যক্ষ করিতেন, তবে অধিক বাসনা হওয়া বিচিত্র ছিল না। আমি, এইরূপেই তাঁহাকে জ্ঞান দান করিলাম, যেন আমি তাঁহা হইতে ছগীরা ও কবীরা গুনাহসমূহকে দূরে রাখ; তিনি আমার বাঞ্ছিত বান্দাদের অন্তভুক্ত ছিলেন।
সূরা ইউসুফ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। কথিত আছে যে, আযীযে মিসরের কোন সন্তান ছিল না। কাজেই সে স্বীয় পত্মীর নিকট এই সংকল্প জ্ঞাপন করে। (ব: কো:)
২। অর্থাৎ ইউসুফকে ভাইদের কুচক্র এবং গভীর কূপ হইতে রক্ষা করার এক উদ্দেশ্যে হইল তাহাকে রাজত্ব দান করা আর একটি উদ্দেশ্যে হইল স্বপ্ন- ফল বর্ণনা শ্ক্ষিা দেওয়া। (ব:কো:)
৩। ফলকথা ইউসুফ (আ:) আযীযে মিসরের গৃহে সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে বাস করিতে লাগিলেন। ইতিমধ্যে তাহার স্ত্রী যুলায়খা তাহার প্রতি আসক্ত হইয়া কমাতুর প্রেম নিবেদন করি। ইউসুফ বলিলেন ইহা একটি গুরুতর পাপ, আর তোমার স্বামী আমার প্রতিপালনকারী, তাহার সহিত বিশ্বাস ঘাতকতা করা অকৃতজ্ঞতা (ব: কো:)
৪। সেই দলীল এই ছিল যে, খোদা- প্রদত্ত দিব্যজ্ঞান দ্বারা তিনি যেনার কদর্যতা ও নিষিদ্ধতা বুঝিতে পারিয়াছিলেন, কিংবা সেই প্রমান যাহা তিনি স্বয়ং যুলায়খার সম্মুখে উপস্থিত করিয়াছিলেন। (ব: কো:)
وَاسْتَبَقَا الْبَابَ وَقَدَّتْ قَمِيصَهُ مِن دُبُرٍ وَأَلْفَيَا سَيِّدَهَا لَدَى الْبَابِ ۚ قَالَتْ مَا جَزَاءُ مَنْ أَرَادَ بِأَهْلِكَ سُوءًا إِلَّا أَن يُسْجَنَ أَوْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
বাংলা অর্থ:
২৫। আর উভয়ে আগে পিছে হইয়া দরজার দিকে দৌড়িল এবং সেই রমণী তাহার জামার পিছন দিক হইতে ছিড়িয়া ফেলিল এবং উভয়ে সেই রমণীর স্বামীকে দরজার নিকট দাড়ানো অবস্থায় পাইল; স্ত্রী লোকটি বলিল, যেই ব্যক্তি তোমার স্ত্রী সহিত অপকর্মের ইচ্ছা করে, তাহার শাস্তি ইহাছাড়া আর কি হইতে পারে যে, তাহাকে কারাগারে পাঠান হয় অথবা অন্য কোন যন্ত্রণাময় শাস্তি দেওয়া হয়।
قَالَ هِيَ رَاوَدَتْنِي عَن نَّفْسِي ۚ وَشَهِدَ شَاهِدٌ مِّنْ أَهْلِهَا إِن كَانَ قَمِيصُهُ قُدَّ مِن قُبُلٍ فَصَدَقَتْ وَهُوَ مِنَ الْكَاذِبِينَ
বাংলা অর্থ:
২৬। ইউসুফ বলিলেন, সে-ই তো আমা হইতে স্বীয় উদ্দেশ্যে সাধনের জন্য আমাকে ফুসলাইতেছিল, এবং (এই অবস্থায়) সেই রমণীর পরিজনবর্গের জনৈক সাক্ষী দিল যে, যদি তাহার জামাটি সম্মুখ দিক হইতে ছেঁড়া থাকে তবে রমণী সত্যবাদিনী আর ইনি মিথ্যাবাদী।
وَإِن كَانَ قَمِيصُهُ قُدَّ مِن دُبُرٍ فَكَذَبَتْ وَهُوَ مِنَ الصَّادِقِينَ
বাংলা অর্থ:
২৭। আর যদি সেই জাামাটি পশ্চাৎদিক হইতে ছেঁড়া থাকে তবে স্ত্রীলোকটি মিথ্যা বাদিনী, আর ইনি সত্যবাদী।
فَلَمَّا رَأَىٰ قَمِيصَهُ قُدَّ مِن دُبُرٍ قَالَ إِنَّهُ مِن كَيْدِكُنَّ ۖ إِنَّ كَيْدَكُنَّ عَظِيمٌ
বাংলা অর্থ:
২৮। অত:পর যখন (আযীয) তাঁহার জামাটি পশ্চাৎদিক হ্ইতে ছেঁড়া দেখিল বলিতে লাগিল, ইহা তো তোমাদের স্ত্রী জাতির চক্রান্ত; নিশ্চয় তোমাদের চক্রান্তও অতি ভয়ংকর হইয়া থাকে।
يُوسُفُ أَعْرِضْ عَنْ هَـٰذَا ۚ وَاسْتَغْفِرِي لِذَنبِكِ ۖ إِنَّكِ كُنتِ مِنَ الْخَاطِئِينَ
বাংলা অর্থ:
২৯। হে ইউসুফ! এই প্রসঙ্গটা ছাড়িয়া দাও, আর হে রমণী, তুমি নিজ পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর নিশ্চয় তুমিই আগাগোড়া অপরাধিনী।
সূরা ইউসুফ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। অর্থাৎ ইউসুফ কে আমি যেনা হইতে দুরে রাখিলাম। বর্ণিত আছে যে, হযরত ইউসুফের মনে খ্দোা ভয় আসামাত্র তিনি তথা হইতে দৌড়াউয়া পলাইলেন। যুলায়খাও পাছ্ েপাছে দৌড়াইল পলাইলেন। প্রত্যেকটি দরজা নিকট পৌছিতেই উহার তালা খুলিয়া যাইত। অবশেষে দরজার নিকটে পৌছিতেই যুলায়খা পাছের দিক হইতে তাঁহার জামার আঁচল ধরিয়া ফেলিল এবং ইউসুফ সজোরে নিজেকে মুক্ত করিতেই ্উহা ছিড়িয়া গেল। তিনি বাহির হইতেই উভয়ে দ্বারের নিকট আযীযকে দেখিতে পাইল। আযীয উভয়কে সচকিত দেখিয়া সন্দেহ করিল। (মু: কো:)
২। এই সাক্ষীটি ছিল যুলায়খারই বংশের জনৈক শিশু। সে হযরত ইউসুফের নির্দোসিতার সাক্ষ্য দিল। (ব: কে:)
৩। উক্ত সাক্ষের পর আযীযের মিসর যুলায়খাকে বলিল যে ইহা তোমাদের স্ত্রী- জাতির চক্রান্ত। (ব:কো:)
৪। অর্থাৎ ইহার চর্চা হইতে দিও না অথবা ইহা তুমি মনে রাখিও না। (ব:কো:)
وَقَالَ نِسْوَةٌ فِي الْمَدِينَةِ امْرَأَتُ الْعَزِيزِ تُرَاوِدُ فَتَاهَا عَن نَّفْسِهِ ۖ قَدْ شَغَفَهَا حُبًّا ۖ إِنَّا لَنَرَاهَا فِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ
বাংলা অর্থ:
৩০। আর কতিপয় স্ত্রীলোক যাহারা নগরে বাস করিত, একথা বলিল যে, আযীযের স্ত্রী স্বীয় দাসকে ফুসলাইতেছে, তাহা হইতে স্বীয় (অবৈধ) কামনা সিদ্ধির জন্য, সেই গোলামের প্রেম তাহার হৃদয়ে বদ্ধমূল হইয়া পড়িয়াছে; আমরা তাহাকে তো স্পষ্ট ভ্রান্তিতে দেখিতেছি।
فَلَمَّا سَمِعَتْ بِمَكْرِهِنَّ أَرْسَلَتْ إِلَيْهِنَّ وَأَعْتَدَتْ لَهُنَّ مُتَّكَأً وَآتَتْ كُلَّ وَاحِدَةٍ مِّنْهُنَّ سِكِّينًا وَقَالَتِ اخْرُجْ عَلَيْهِنَّ ۖ فَلَمَّا رَأَيْنَهُ أَكْبَرْنَهُ وَقَطَّعْنَ أَيْدِيَهُنَّ وَقُلْنَ حَاشَ لِلَّهِ مَا هَـٰذَا بَشَرًا إِنْ هَـٰذَا إِلَّا مَلَكٌ كَرِيمٌ
বাংলা অর্থ:
৩১। অনন্তর আযীয-পতœী যখন সেই স্ত্রীলোকদের কুৎসাবাক্য-এর সংবাদ শুনিল, তখন সে কাহারও দ্বারা তাহাদিগকে ডাকিয়া পাঠাইল। এবং তাহাদের জন্য মসনদ তাকিয়ার ব্যবস্থা করিল এবং তাহাদের প্রত্যেককে একটি করিয়া ছুরি দিল এবং (ইউসুফকে) বলিল, একটু ইহাদের সামনে তো ্আস অনন্তর যখন নারীরা তাহাকে দেখিল তখন তাহারা (তাহার সৌন্দর্যে) সম্মোহিত হইয়া গেল এবং নিজেদের হাত কাটিয়া ফেলিল, আর বলিতে লাগিল, আল্লাহ পবিত্র! এই ব্যক্তি তো মানুষ নহে; এ তো কোন সম্ভ্রন্ত ফেরেশতা।
قَالَتْ فَذَٰلِكُنَّ الَّذِي لُمْتُنَّنِي فِيهِ ۖ وَلَقَدْ رَاوَدتُّهُ عَن نَّفْسِهِ فَاسْتَعْصَمَ ۖ وَلَئِن لَّمْ يَفْعَلْ مَا آمُرُهُ لَيُسْجَنَنَّ وَلَيَكُونًا مِّنَ الصَّاغِرِينَ
বাংলা অর্থ:
৩২। সেই মহিলা বলিল, বস্তুত: এই সেই ব্যক্তি, যাহার সম্বন্ধে তোমরা আমরা প্রতি দোষারোপ করিতেছিলে আর নিশ্চয় আমি এই ব্যক্ত্ িহইতে নিজ কামনা পূর্ণ করিতে চাহিয়া ছিলাম, কিন্তু সে পাক – পবিত্র রহিল; আর যদি সে ভবিষ্যতে আমার কথা পালন না করে, তবে নিশ্চয় তাহাকে কারাগারে প্রেরণ করা হইবে এবং লাঞ্ছিতও হইবে।
قَالَ رَبِّ السِّجْنُ أَحَبُّ إِلَيَّ مِمَّا يَدْعُونَنِي إِلَيْهِ ۖ وَإِلَّا تَصْرِفْ عَنِّي كَيْدَهُنَّ أَصْبُ إِلَيْهِنَّ وَأَكُن مِّنَ الْجَاهِلِينَ
বাংলা অর্থ:
৩৩। ইউসুফ দোআ করিলেন হে আমার রব্ব! এই স্ত্রীলোকগণ যাহার প্রতি আমাকে আহবান করিতেছে, তাহা হইতে কারাগার বরণ করাই আমার নিকট অধিক পছন্দনীয়, আর যদি আপনি তাহাদের কুচক্রকে আমা হইতে রোধ না করেন, তবে আমি তাহাদের প্রতি আকৃষ্ট হইয়া পড়িব এবং মুখোচিত কাজ করিয়া বসিব।
সূরা ইউসুফ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। সঙ্গে সঙ্গে এই কথাও বলিয়া পাঠাইল যে, আজ এখানে তোমাদের সকলের খাওয়্রা দাওয়াত রহিল ।
২। কেননা, আমন্ত্রিত মহিলাদের জন্য আয়োজিত খাদ্য- দ্রব্যের মধ্যে ফলমূল ও ছিল, যাহা কাটিবার জন্য ছুরির ও প্রয়োজন হইত। (ব: কো:)
৩। অর্থাৎ উপস্থিত মহিলাগণও যুলায়খার পক্ষ হইয়া ইউসুফকে বুঝাইতে লাগিল। যে এমন দয়াবতী মনিরেব প্রতি এমন অবহেলা করা উচিত নহে। তাহার কামনা পূরণ করা উচিত। ইউসুফ (আ:) তাহাদের কথা শুনিয়া প্রামদ গণিলেন, অত:পর খোদার দরবারে এইরূপ প্রার্থনা করিলেন। (ব: কো:)
৪। হযরত ইউসুফ স্বীয় পবিত্রতার ভবিষ্যত সম্বন্ধে সন্দিহান ছিলেন না, তবে তাঁহার এইরূপ দোআ করার কারণ এইযে, পয়গম্বরদের চির নিষ্পাপ হওযা খোদার ইচ্ছা এবং আল্লাহর সাহায্যের উপরই নির্ভর করে। তাহারা অনুগ্রহই ভিত্তিস্থলের উপর নির্ভর করিয়াই পয়গম্বরগণ নত মস্তক থাকেন। কখনও কখনও নিজের ক্ষমতাগর্বের গর্বিত হন না। কাজেই তিনি এইরূপ দোআ করিয়া ছিলেন। (ব: কো:)
فَاسْتَجَابَ لَهُ رَبُّهُ فَصَرَفَ عَنْهُ كَيْدَهُنَّ ۚ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
বাংলা অর্থ:
৩৪। অনন্তর তাহার প্রতিপালক তাহার দোআ কবুল করিলেন এবং তাহা হইতে স্ত্রীলোকদের চক্রান্তকে অপসারিত করিয়া দিলেন নি:সন্দেহে তিনি অতিশয় শ্রবণকারী অত্যন্ত জ্ঞানী।
ثُمَّ بَدَا لَهُم مِّن بَعْدِ مَا رَأَوُا الْآيَاتِ لَيَسْجُنُنَّهُ حَتَّىٰ حِينٍ
বাংলা অর্থ:
৩৫। অত:পর বিভিন্ন নিদর্শনাবলী দেখার পর তাহাদের নিকট ইহাই যুক্তিযুক্ত মনে হইল, যে তাঁহাকে এক (নির্দিষ্ট) সময় পর্যন্ত কারাগারে রাখা হউক।
وَدَخَلَ مَعَهُ السِّجْنَ فَتَيَانِ ۖ قَالَ أَحَدُهُمَا إِنِّي أَرَانِي أَعْصِرُ خَمْرًا ۖ وَقَالَ الْآخَرُ إِنِّي أَرَانِي أَحْمِلُ فَوْقَ رَأْسِي خُبْزًا تَأْكُلُ الطَّيْرُ مِنْهُ ۖ نَبِّئْنَا بِتَأْوِيلِهِ ۖ إِنَّا نَرَاكَ مِنَ الْمُحْسِنِينَ
বাংলা অর্থ:
৩৬। আর ইউসুফের সহিত (বাদশাহের) আরও দুইজন দাস কারাগারে ঢুকিল; তাহাদের একজন বলিল, আমি নিজেকে স্বপ্নে দেখি যে, শরাব নি:সারণ করিতেছি, এবং অপরজন বলিল, আমি নিজকে এমন অবস্থায় দেখি যে, রুটি মাথায় করিয়া লইয়া যাইতেছি, উহা হইতে পাখীরা খাইতেছে; আমাদিগকে এই স্বপ্নের তাবীর বলিয়া দিন, আপনাকে আমাদের নিকট ধার্মিক বলিয়া মনে হইতেছে।
قَالَ لَا يَأْتِيكُمَا طَعَامٌ تُرْزَقَانِهِ إِلَّا نَبَّأْتُكُمَا بِتَأْوِيلِهِ قَبْلَ أَن يَأْتِيَكُمَا ۚ ذَٰلِكُمَا مِمَّا عَلَّمَنِي رَبِّي ۚ إِنِّي تَرَكْتُ مِلَّةَ قَوْمٍ لَّا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَهُم بِالْآخِرَةِ هُمْ كَافِرُونَ
বাংলা অর্থ:
৩৭। ইউসুফ বলিলেন, যেই খাদ্য তোমাদের নিকট আসে, যাহা তোমরা খাওয়ার জন্য পাও তাহা তোমাদের নিকট আসার পূর্বেই আমি তোমাদিগকে উহার হাকীকত বলিয়া দিয়া থাকি। এই বলিয়া দেওয়া সেই বিদ্যারই কল্যাণে, যাহা আমার রব্ব আমাকে শিক্ষা দিয়াছেন; আমি উহাদের ধর্মমতকে (পূর্বেই) বর্জন করিয়াছি, যাহারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে না এবং তাহারা পরকালকেও স্বীকার করে না।
وَاتَّبَعْتُ مِلَّةَ آبَائِي إِبْرَاهِيمَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ ۚ مَا كَانَ لَنَا أَن نُّشْرِكَ بِاللَّهِ مِن شَيْءٍ ۚ ذَٰلِكَ مِن فَضْلِ اللَّهِ عَلَيْنَا وَعَلَى النَّاسِ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَشْكُرُونَ
বাংলা অর্থ:
৩৮। আর আমি অনুসরণ করিয়াছি আমার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম ও ইসহাক এবং ইয়াকূবের ধর্মমতকে; আমাদের পক্ষে কিছুতেই শোভনীয় নহে যে, আল্লাহ্র সঙ্গে অন্য কোন কিছুকে শরীক সাব্যস্ত করি। ইহা হইতেছে আমাদের প্রতি এবং অন্যান্য মানুষের প্রতিও আল্লাহর এক অনুগ্রহ, কিন্তু অধিকাংশ লোকই বৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।
সূরা ইউসুফ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। অনন্তর সর্বসাধারণের মুখের সমালোচনা বন্ধ করার জন্য এবং যুলায়খার দুর্নাম ঘুচাইবার উদ্দেশ্যে তাঁহাকে এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কারারুদ্ধ রাখাই সঙ্গত মনে করিল। (ব: কো:)
২। তাহাদের একজন ছিল সাক্বী, দ্বিতীয় জন ছিল পাচক। তাহাদের প্রতি এই অভিযোগ ছিল যে, তাহারা খাদ্য- পানীয় বিষ মিশাইয়া বাদশাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করিয়া ছিল। বিচার সাপেক্ষে তাহাদিগকে জেলে রাখা হইয়াছিল। হযরত ইউসুফের মধ্যে বুযুগীর লক্ষণ দেখিয়া তাহারা তাহার নিকট নিজেদের স্বপ্ন ফল জিজ্ঞাসা করিল। (ব: কো:)
৩। অর্থাৎ হযরত ইউসুফ বলিলেন যখন এই লোক দুইটি আমার প্রতি ভক্তি রাখে তখন প্রথমেই তাহাদিগকে ইসলামের প্রতি আহবান করা উচিত। কাজেই নিজের নুবুওয়াত প্রমাণের উদ্দেশ্যে একটি ম‘ুজেযাহ প্রকাশ করার মানসে বলিলেন জেলখানায় তোমাদের খাদ্য আগমনের পূর্বেই আমি বলিয়া দিতে পারিযে, তোমাদের জন্য আজ কি কি খাদ্য আসিবে। (ব:কো:)
يَا صَاحِبَيِ السِّجْنِ أَأَرْبَابٌ مُّتَفَرِّقُونَ خَيْرٌ أَمِ اللَّهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ
বাংলা অর্থ:
৩৯। হে কারা বন্ধুগণ! বিভিন্ন উপাস্য কি উত্তম না এক বরহক্ব মা‘বুদ ? যিনি পরম পরাক্রান্ত।
مَا تَعْبُدُونَ مِن دُونِهِ إِلَّا أَسْمَاءً سَمَّيْتُمُوهَا أَنتُمْ وَآبَاؤُكُم مَّا أَنزَلَ اللَّهُ بِهَا مِن سُلْطَانٍ ۚ إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ ۚ أَمَرَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ ۚ ذَٰلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
বাংলা অর্থ:
৪০। তোমরা তো আল্লাহকে ছাড়িয়া কেবলমাত্র কতিপয় অবাস্তব নামের পূজা করিতেছ-যাহা দিগকে তোমরা এবং তোমাদের পিতৃপুরুষরা সাব্যস্ত করিয় লইয়াছ, আল্লাহ তো সেইগুলি সম্বন্ধে কোন প্রমাণ পাঠান নাই, হুকুম (প্রদানের অধিকার শুধু) আল্লাহরই; তিনি এই হুকুম দিয়াছেন যে, তিনি ব্যতীত তোমার আর কাহারও এবাদত করিও না; ইহাই হইতেছে সরল পথ। কিন্তু অধিকাংশ লোকই অবগত নহে।
يَا صَاحِبَيِ السِّجْنِ أَمَّا أَحَدُكُمَا فَيَسْقِي رَبَّهُ خَمْرًا ۖ وَأَمَّا الْآخَرُ فَيُصْلَبُ فَتَأْكُلُ الطَّيْرُ مِن رَّأْسِهِ ۚ قُضِيَ الْأَمْرُ الَّذِي فِيهِ تَسْتَفْتِيَانِ
বাংলা অর্থ:
৪১। হে কারা বন্ধুগণ! তোমাদের মধ্যকার এক ব্যক্তি তো স্বীয় মনিবকে মদ্য পান করাইবে, এবং অপর ব্যক্তি, শূলবিদ্ধ হইবে এবং তাহার মস্তক পাখীরা (ঠোকরাইয়া) খাইবে; তোমরা যে বিষয় জিজ্ঞাসা করিতেছিল উহা এইরূপেই নিধারিত হইয়া রহিয়াছে।
وَقَالَ لِلَّذِي ظَنَّ أَنَّهُ نَاجٍ مِّنْهُمَا اذْكُرْنِي عِندَ رَبِّكَ فَأَنسَاهُ الشَّيْطَانُ ذِكْرَ رَبِّهِ فَلَبِثَ فِي السِّجْنِ بِضْعَ سِنِينَ
বাংলা অর্থ:
৪২। আর যে ব্যক্তি মুক্তি পাইবে বলিয়া ধারণা ছিল তাহাকে ইউসুফ বলিলেন তোমার মনিবের নিকট আমার (বিষয়)-ও উল্লেখ করিও কিন্তু শয়তান তাহাকে তাহার মনিবের নিকট উল্লেখ করিতে ভুলাইয়া দিল, অতএব আরও কয়েক বৎসর তাহাকে কারাগারে থাকিতে হইল।
সূরা ইউসুফ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। অর্থাৎ এই তাওহীদ ও এবাদত ব্যাপারে কেবলমাত্র খোদার বশ্যতা স্বীকার করাই হইলণ সরল পথ। (ব: কো:)
২। বস্তুত: মোকদ্দমা বর্ণিত স্বপ্ন-পলানুযায়ীই ঘটিল। এক ব্যক্তি নির্দোষ প্রামণিত হওয়াই মুক্তি পাইল এবং অপরজন দোষী সাব্যস্ত হইল এবং তাহাকে শূলে চড়ান হইল। (ব: কো:)
৩। উভয়কে জেলখানা হইতে বাহিরে আনার সময় নির্দোষ বলিয়া ধারণাকৃত লোকটিকে হযরত ইউসুফ বলিলেন, স্বীয় প্রভুর নিকট আমার কথা উল্লেখ করিও যে, একটি নিরাপরাধ লোক জেলখানায় পচিতেছে। লোকটি এই কথায় অঙ্গীকার করিল ; কিন্তু শয়তান তাহাকে ইহা হইতে ভুলাইয়া রাখিল। ফলে বন্দীখানায় তাহাকে আরও কয়েক বৎসর থাকিতে হইল। (ব: কো:)
وَقَالَ الْمَلِكُ إِنِّي أَرَىٰ سَبْعَ بَقَرَاتٍ سِمَانٍ يَأْكُلُهُنَّ سَبْعٌ عِجَافٌ وَسَبْعَ سُنبُلَاتٍ خُضْرٍ وَأُخَرَ يَابِسَاتٍ ۖ يَا أَيُّهَا الْمَلَأُ أَفْتُونِي فِي رُؤْيَايَ إِن كُنتُمْ لِلرُّؤْيَا تَعْبُرُونَ
বাংলা অর্থ:
৪৩। আর (মিসরের) বাদশাহ বলিল, আমি (স্বপ্নে) দেখি যে, সাতটি হৃষ্টপুষ্ট গাভী যাহাদিগকে সাতটি জীর্ণ- শীর্ণ গাভী খাইয়া ফেলিতেছে, আর সাতটি তাজা শস্য – গুচ্ছ রহিয়াছে এবং উহা ব্যতীত আর ও সাতটি রহিয়াছে যাহা শুষ্ক; হে পারিষদ বৃন্দ! আমাকে আমার এই স্বপ্ন সম্বন্ধে উত্তর দাও, যদি তোমরা স্বপ্ন- ব্যাখ্যা বর্ণনা করিতে সক্ষম হও।
قَالُوا أَضْغَاثُ أَحْلَامٍ ۖ وَمَا نَحْنُ بِتَأْوِيلِ الْأَحْلَامِ بِعَالِمِينَ
বাংলা অর্থ:
৪৪। তাহারা বলিতে লাগিল, ইহা তো হইতেছে এমনি বিক্ষিপ্ত কল্পনাসমূহ, আর আমরা স্বপ্নের তা‘বীর সম্বন্ধে জ্ঞান ও রাখি না।
وَقَالَ الَّذِي نَجَا مِنْهُمَا وَادَّكَرَ بَعْدَ أُمَّةٍ أَنَا أُنَبِّئُكُم بِتَأْوِيلِهِ فَأَرْسِلُونِ
বাংলা অর্থ:
৪৫। আর সেই বন্দীদ্বয়ের মধ্য হইতে যেই ব্যক্তি মুক্তি পাইয়াছিল এবং বহু দিন পর তাহার স্মরণ হইল- সে বলিল, আমি ইহার তা‘বীরের সংবাদ আনিয়া দিতেছি আপনারা আমাকে একটু যাইতে অনুমতি দিন।
يُوسُفُ أَيُّهَا الصِّدِّيقُ أَفْتِنَا فِي سَبْعِ بَقَرَاتٍ سِمَانٍ يَأْكُلُهُنَّ سَبْعٌ عِجَافٌ وَسَبْعِ سُنبُلَاتٍ خُضْرٍ وَأُخَرَ يَابِسَاتٍ لَّعَلِّي أَرْجِعُ إِلَى النَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَعْلَمُونَ
বাংলা অর্থ:
৪৬। (অত:পর যাইয়া বলিল) হে ইউসুফ, হে সত্যের প্রতীক ! আপনি আমাদিগকে ইহার জবাব বলিয়া দিনযে, সাতটি হৃষ্টপুষ্ট গাভী যাহাদিগকে খাইয়া ফেলিতেছে সাতটি জীণ- শীর্ণ গাভী, আর সাতটি তাজা শস্য – গুচ্ছ রহিয়াছে এবং উহা ব্যতীত (সাতটি) শুষ্ক ও রহিয়াছে, যেন আমি সেই লেকাদের নিকট ফিরিয়া যাইতে পারি যাহাতে তাহারাও জানিতে পারে।
قَالَ تَزْرَعُونَ سَبْعَ سِنِينَ دَأَبًا فَمَا حَصَدتُّمْ فَذَرُوهُ فِي سُنبُلِهِ إِلَّا قَلِيلًا مِّمَّا تَأْكُلُونَ
বাংলা অর্থ:
৪৭। তিনি বলিলেন, তোমরা ক্রমান্বয়ে সাত বৎসর শস্য বপন করিবে, অত:পর যে শস্য কর্তন করিবে উহা তাহার শীষে রাখিয়া দিবে, অবশ্য সামান্য পরিমাণ ব্যতীত যাহা তোমাদের খাওয়ার জন্য লাগিবে।
সূরা ইউসুফ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। তাহারা বাদশাহর প্রশ্নের দুইটি জবাব দিল প্রথমত: আপনি যাহা দেখিয়াছেন তাহা স্বপ্নই নহে। ইহা বিক্ষিপ্ত কল্পনা বটে। অতএব , ইহাতে চিন্তিত হওয়ার কিছুই নাই। দ্বিতীয়ত: আমরা রাজনীতি সম্বন্ধে বিজ্ঞ রাজ্য পরিচালনার কাজই আমরা জানি না (ব: কো:)
২। অর্থাৎ তাহাকে দরবার হইতে অনুমতি দেওয়া হইল এবং সে সোজাসুজি হযরত ইউসুফের নিকট জেলখানায় যাইয়া উপস্থিত হইল এবং বলিতে লাগিল। (ব: কো:)
৩। অর্থাৎ স্বপ্ন- তাৎপর্য জানিতে পারিলে তাহারা এ ব্যাপারে নিজেদের কর্তব্য ও কর্মপন্থা নিরুপণ করিতে পারিবে। হয়ত আপনার মুক্তি লাভের কোন উপায় হইয়া য্ইাতে পারে। (ব: কো:)
৪। তিনি বলিলেন, সেই সাতটি হৃষ্টপুষ্ট গাভী ও সাতটি সবুজ শীস অর্থ – সাতটি সুবৃষ্টির ও সুফলার বৎসর (ব:কো:)
৫। শীর্ণ সাতটি শীস ও শীর্ণ সাতটি গাভী দুভিক্ষময় সাত বৎসর বুঝাইতেছে। (ব: কো:)
ثُمَّ يَأْتِي مِن بَعْدِ ذَٰلِكَ سَبْعٌ شِدَادٌ يَأْكُلْنَ مَا قَدَّمْتُمْ لَهُنَّ إِلَّا قَلِيلًا مِّمَّا تُحْصِنُونَ
বাংলা অর্থ:
৪৮। অনন্তর ইহার পর আরও সাতটি বৎসর এমন কঠিন আসিবে যাহা সেই (সমস্ত) সঞ্চিত শস্যকে খাইয়া ফেলিবে যেইগুলি তোমরা এই কয়েক বৎসরের জন্য সঞ্চয় করিয়া রাখিবে কিন্তু সামান্য পরিমাণ যাহা (বীজের জন্য) রাখিয়া দিবে।
ثُمَّ يَأْتِي مِن بَعْدِ ذَٰلِكَ عَامٌ فِيهِ يُغَاثُ النَّاسُ وَفِيهِ يَعْصِرُونَ
বাংলা অর্থ:
৪৯। অনন্তর ইহার পর এমন একটি বৎসর আসিবে যাহাতে মানুষের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত হইবে এবং উহাতে (প্রচুর আঙ্গুর উৎপন্ন হইবে এবং) রসও নি:সারণ করিবে।
وَقَالَ الْمَلِكُ ائْتُونِي بِهِ ۖ فَلَمَّا جَاءَهُ الرَّسُولُ قَالَ ارْجِعْ إِلَىٰ رَبِّكَ فَاسْأَلْهُ مَا بَالُ النِّسْوَةِ اللَّاتِي قَطَّعْنَ أَيْدِيَهُنَّ ۚ إِنَّ رَبِّي بِكَيْدِهِنَّ عَلِيمٌ
বাংলা অর্থ:
৫০। আর বাদশাহ আদেশ দিলেন, তাহাকে আমার নিকট লইয়া আস, অত:পর যখন তাঁহার নিকট দূত পৌছিল তিনি বলিলেন যে, তুমি স্বীয় মনিবের নিকট ফিরিয়া যাও, তৎপর তাঁহাকে জিজ্ঞাসা কর, সেই রমণীদের কি অবস্থা যাহারা নিজেদের হাত কটিয়া ফেলিয়াছিল? আমার রব্ব এই নারীজাতির চক্রান্ত উত্তমরূপে অবগত আছেন।
قَالَ مَا خَطْبُكُنَّ إِذْ رَاوَدتُّنَّ يُوسُفَ عَن نَّفْسِهِ ۚ قُلْنَ حَاشَ لِلَّهِ مَا عَلِمْنَا عَلَيْهِ مِن سُوءٍ ۚ قَالَتِ امْرَأَتُ الْعَزِيزِ الْآنَ حَصْحَصَ الْحَقُّ أَنَا رَاوَدتُّهُ عَن نَّفْسِهِ وَإِنَّهُ لَمِنَ الصَّادِقِينَ
বাংলা অর্থ:
৫১। তিনি (নারীদেরকে) জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমাদের ব্যাপার কি? যখন তোমরা ইউসুফের নিকট নিজেদের মতলব সিদ্ধির কামনা করিয়াছিলে রমনীরা উত্তর করিল, পবিত্রতা আল্লাহরই জন্য! তাহার মধ্যে সামান্য মাত্রও দোষ ছিল বলিয়া তো আমাদের মনে হয় নাই; আযীযের স্ত্রী বলিল, এখন তো সত্য কথা প্রকাশ হইয়াই পড়িল, আমিই তাঁহার নিকট স্বীয় উদ্দেশ্যে সিদ্ধির কামনা করিয়াছিলাম এবং নিশ্চয় তিনিই সত্যবাদী ।
ذَٰلِكَ لِيَعْلَمَ أَنِّي لَمْ أَخُنْهُ بِالْغَيْبِ وَأَنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي كَيْدَ الْخَائِنِينَ
বাংলা অর্থ:
৫২। ইউসুফ বলিলেন, এইসব আয়োজন কেবল এই উদ্দেশ্যে, যেন আযীয দৃঢ় বিশ্বাসের সহিত অবহিত হন যে, আমি তাঁহার অনুপস্থিতিতে তাঁহার কুল- মর্যাদায় হস্তক্ষেপ করি নাই এবং ইহাও যে, আল্লাহ তা‘আলা বিশ্বাস ঘাতকদের চক্রান্ত সফল করেন না।
সূরা ইউসুফ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। অথাৎ বাদশার নিকট নিজের নির্দোষিতা প্রমাণের জন্য তিনি দূতকে বলিলেন, আমি যে অপবাদের জন্য করারুদ্ধ হইয়াছি, উহা হইতে আমাদের নির্দোষিতা প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত আমি জেলখানা হইতে বাহির হইব না। অতএব, তুমি ফিরিয়া যাইয়া তোমার প্রভুকে বল, তিনি যেন সেই নারীদিগকে ডাকাইয়া আমার কারারুদ্ধ হওয়ার গোড়ার কথা সম্বন্ধে তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা করেন। (ব: কো:)
وَمَا أُبَرِّئُ نَفْسِي ۚ إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ إِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّي ۚ إِنَّ رَبِّي غَفُورٌ رَّحِيمٌ
বাংলা অর্থ:
৫৩। আর আমি তো নিজের নফসকে নির্দোষ বলি না, নফস তো মন্দ কাজেরই প্ররোচনা দিয়া থাকে সেই নফস ব্যতীত যাহার প্রতি আমার প্রতিপালক রহম করেন; নিশ্চয় আমার রব্ব অতিশয় ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়াবান।
وَقَالَ الْمَلِكُ ائْتُونِي بِهِ أَسْتَخْلِصْهُ لِنَفْسِي ۖ فَلَمَّا كَلَّمَهُ قَالَ إِنَّكَ الْيَوْمَ لَدَيْنَا مَكِينٌ أَمِينٌ
বাংলা অর্থ:
৫৪। আর বাদশাহ আদেশ করিলেন, তাঁহাকে আমার নিকট লইয়া আস, আমি তাঁহাকে বিশেষভাবে নিজের (কাজের) জন্য রাখিব, অনন্তর বাদশাহ যখন তাঁহার সহিত বাক্যালাপ করিলেন তখন বাদশাহ বলিলেন, আজ আপনি আমাদের নিকট অতিশয় সম্মানী এবং বিশ্বাসী।
قَالَ اجْعَلْنِي عَلَىٰ خَزَائِنِ الْأَرْضِ ۖ إِنِّي حَفِيظٌ عَلِيمٌ
বাংলা অর্থ:
৫৫। ইউসুফ বলিলেন, দেশের রাজকোষের উপর আমাকে নিযুক্ত করুন, আমি (উহার) রক্ষণাবেক্ষণ করিব, আমি বেশ ওয়াকিফ আছি।
وَكَذَٰلِكَ مَكَّنَّا لِيُوسُفَ فِي الْأَرْضِ يَتَبَوَّأُ مِنْهَا حَيْثُ يَشَاءُ ۚ نُصِيبُ بِرَحْمَتِنَا مَن نَّشَاءُ ۖ وَلَا نُضِيعُ أَجْرَ الْمُحْسِنِينَ
বাংলা অর্থ:
৫৬। আর এইরূপে আমি ইউসুফ কে দেশের উপর ক্ষমতাবান করিয়া দিলাম, যেন সে উহাতে যেখানে ইচ্ছা বসবাস করিতে পারে। আমি যাহাকে ইচ্ছা স্বীয় অনুগ্রহ দান করি এবং নেককরদের কর্মফল বিনষ্ট করি না।
وَلَأَجْرُ الْآخِرَةِ خَيْرٌ لِّلَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ
বাংলা অর্থ:
৫৭। এবং আখেরাতের পুরস্কার ঈমানদার ও ধর্মপরায়ন লোকদের জন্য অনেক বেশি।
وَجَاءَ إِخْوَةُ يُوسُفَ فَدَخَلُوا عَلَيْهِ فَعَرَفَهُمْ وَهُمْ لَهُ مُنكِرُونَ
বাংলা অর্থ:
৫৮। আর (দুভিক্ষ হওয়ার পর) ইউসুফের ভ্রাতা গণও শস্য খরিদ করার জন্য (মিসর) আগমন করিল, অত:পর ইউসুফের নিকট উপস্থিত হইল, তখন ইউসুফ তাহাদিগকে চিনিয়া ফেলিলেন, কিন্তু তাহারা ইউসুফকে চিনিতে পারিল না।
وَلَمَّا جَهَّزَهُم بِجَهَازِهِمْ قَالَ ائْتُونِي بِأَخٍ لَّكُم مِّنْ أَبِيكُمْ ۚ أَلَا تَرَوْنَ أَنِّي أُوفِي الْكَيْلَ وَأَنَا خَيْرُ الْمُنزِلِينَ
বাংলা অর্থ:
৫৯। আর যখন ইউসুফ তাহাদের সামগ্রী (শস্য) প্রস্তুত করিয়া তখন বলিলেন, তোমাদের বৈমাত্রের ভ্রাতাকেও (সঙ্গে) আনিও তোমরা কি দেখিতেছ না যে, আমি (প্রত্যেকের অংশ) পুরাপুরি মাপিয়া দেই? এবং আমি সবাধিক অতিথি সেবাকারী।
সূরা ইউসুফ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। হযরত ইউসুফের একথার তাৎপর্য এই যে, নবী হিসাবে আমার নাফস পবিত্র হইলেও ইহাতে আমার গর্বিত হওয়ার কিছু নাই। কেনা, পবিত্রতা কেবল আল্ল্াহর অনুগ্রহের ফল, অন্যথায় মানুষ হিসাবে আমার ও অন্যান্যেল প্রবৃত্তি সমান। (ব: কো:)
২। হযরত ইউসুফ (আ:) নিজেই এই পদ প্রার্থনা করায় বুঝ যায়, কোন কাজের যোগ্যতা নিজের মধ্যে সিমাবদ্ধ দেখিলে জনসেবাথে উত্ত পদের জন্য আবেদন করা জায়েয। (ব:কো:)
৩। কেননা, ভ্ইাদের অবস্থার বিশেষ কোন পরিবর্তন ঘটে নাই। পক্ষান্তরে হযরত ইউসুফ এখন যুবক এবং রাজসিংহাসনে অধিষ্ঠিত। (ব: কো:)
৪। হযরত ইউসুফের নিয়ম ছিল, আগত লোকদের প্রত্যেককে এক উট বোঝাই শস্য দিতেন। সেই নিয়মে ভাইদিগকে গণিয়া মাপিয়া দিলে তাহারা বলিল, আমাদের একজন বেমাত্রেয় ভ্রাতা আছে, তাহার রেশনও দিতে হবে। (ব: কো:)
فَإِن لَّمْ تَأْتُونِي بِهِ فَلَا كَيْلَ لَكُمْ عِندِي وَلَا تَقْرَبُونِ
বাংলা অর্থ:
৬০। আর যদি তোমরা তাহাকে আমার নিকট না আন, তবে আমার নিকট তোমাদের বাঁটের শস্যও পাইবে না এবং তোমরা আমার নিকটও আসিও না।
قَالُوا سَنُرَاوِدُ عَنْهُ أَبَاهُ وَإِنَّا لَفَاعِلُونَ
বাংলা অর্থ:
৬১। তাহারা বলিল, তাহাকে তাহার পিতার নিকট চাহিব এবং নিশ্চয় আমরা এই কাজ (করার চেষ্টা) করিব।
وَقَالَ لِفِتْيَانِهِ اجْعَلُوا بِضَاعَتَهُمْ فِي رِحَالِهِمْ لَعَلَّهُمْ يَعْرِفُونَهَا إِذَا انقَلَبُوا إِلَىٰ أَهْلِهِمْ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
বাংলা অর্থ:
৬২। এবং ইউসুফ নিজ ভৃত্যদিগকে বলিয়া দিলেন যে, তাহাদের পুঁজি তাহাদেরই আসবাবের মধ্যে রাখিয়া দাও, যখন তাহারা নিজ গৃহে ফিরিবে, তখন যেন উহা চিনিতে পারে হয়ত (ইহা দেখিয়া) তাহারা পূর্ণবার আসিবে।
فَلَمَّا رَجَعُوا إِلَىٰ أَبِيهِمْ قَالُوا يَا أَبَانَا مُنِعَ مِنَّا الْكَيْلُ فَأَرْسِلْ مَعَنَا أَخَانَا نَكْتَلْ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ
বাংলা অর্থ:
৬৩। ফলকথা, যখন তাহারা নিজেদের পিতার নিকট ফিরিয়া আসিল তখন বলিল, হে আমাদের পিতা! আমাদের জন্য শস্য নিষিদ্ধি করা হইয়াছে, অতএব আপনি আমাদের ভাইকে আমাদের সঙ্গে পাঠাইয়া দিন, যেন আমরা শস্য আনিতে পারি, এবং আমরা তাহাকে পূর্ণ হেফাযতে রাখিব।
قَالَ هَلْ آمَنُكُمْ عَلَيْهِ إِلَّا كَمَا أَمِنتُكُمْ عَلَىٰ أَخِيهِ مِن قَبْلُ ۖ فَاللَّهُ خَيْرٌ حَافِظًا ۖ وَهُوَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ
বাংলা অর্থ:
৬৪। ইয়াকুব বলিলেন আমি তাহার ব্যাপারেও তোমাদেরকে সেইরূপ বিশ্বাস করিতেছি যেইরূপ ইহার পূর্বে তাহার ভাই (ইউসুফ) এর ব্যাপারে তোমাদের কে বিশ্বাস করিয়াছি। বস্তুত: আল্লাহই সর্বোত্তম রক্ষক এবং তিনি সকল দয়াবান অপেক্ষা অধিক দয়ালু।
وَلَمَّا فَتَحُوا مَتَاعَهُمْ وَجَدُوا بِضَاعَتَهُمْ رُدَّتْ إِلَيْهِمْ ۖ قَالُوا يَا أَبَانَا مَا نَبْغِي ۖ هَـٰذِهِ بِضَاعَتُنَا رُدَّتْ إِلَيْنَا ۖ وَنَمِيرُ أَهْلَنَا وَنَحْفَظُ أَخَانَا وَنَزْدَادُ كَيْلَ بَعِيرٍ ۖ ذَٰلِكَ كَيْلٌ يَسِيرٌ
বাংলা অর্থ:
৬৫। আর যখন তাহারা নিজেদের আসবাব খুলিল, তখন (উহাতে) তাহরা নিজেদের মূলধন (-ও) পাইল, যাহা তাহাদিগকে ফিরাইয়া দেওয়া হইয়াছে; বলিতে লাগিল, আব্বা! আমাদের আর কি চাই! এই যে আমাদের মূলধন ও তো আমাদিগকে ফিরাইয়া দেওয়া হইয়াছে, আর আমাদের পরিজনের জন্য (আরও) রসদ আনিব। এবং আমরা আমাদের ভাইকে উত্তমরূপে হেফাযত করিব, এবং আরও এক উটের বোঝা শস্য অতিরিক্ত আনিব; ইহা তো সামান্য শস্য মাত্র।
সূরা ইউসুফ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। অর্থাৎ, আগামী বারে তোমাদের সেই ছোট ভাইটিকেও লইয়া আসিবে। তাহাকেও পুরাপুরি রেশন দিব। (ব:কো:)
২। কেননা, বেনইয়ামিনকে না আনিলে আমি বুঝিব যে, তোমরা আমাকে ধোঁকা দিতে চাহিয়াছিলে। (ব: কো:)
৩। হযরত ইউসুফ চাহিতেছিলেন যে তাহার ভাইয়েরা আবার আসে এবং বেন ইয়ামিনকেরও সঙ্গে আনে। এই জন্য তিনি প্রথমত: প্রতিশ্রুতি দিলেন। তাহাকে লইয়া আসিলে তাহার শস্য দেওযা হইবে। দ্বিতীয়ত: অন্যথায় তোমাদের নামের শস্যও দেওয়া হইবে না। তৃতীয়ত: মূলধন অর্থাৎ শস্য বিনিময় ফিরাইয়া দিলেন, যেন তাহার বদান্যতা প্রকাশ পায় এবং ইহাতে তাহারা পুনরায় আসিতে আগ্রহাম্বিত হয়। বিশেষত: এই ধারণাও হইয়া থাকিবে যে, তাহাদের আর মূলধন নাও থাকিতে পারে। ফলে পুনারায় আসিতে অপারাগ হইবে। (ব: কো:)
قَالَ لَنْ أُرْسِلَهُ مَعَكُمْ حَتَّىٰ تُؤْتُونِ مَوْثِقًا مِّنَ اللَّهِ لَتَأْتُنَّنِي بِهِ إِلَّا أَن يُحَاطَ بِكُمْ ۖ فَلَمَّا آتَوْهُ مَوْثِقَهُمْ قَالَ اللَّهُ عَلَىٰ مَا نَقُولُ وَكِيلٌ
বাংলা অর্থ:
৬৬। ইয়াকুব বলিলেন, সেই সময় পর্যন্ত কিছুতেই তাহাকে তোমদের সঙ্গে পাঠাইব না, যেই পর্যন্ত না তোমরা আল্লাহর শপথ করিয়া আমাকে এই পাকা কথা দাও যে তোমরা তাহাকে অবশ্যই ফিরাইয়া আনিবে, অবশ্য যদি কোথাও বিপন্নই হইয়া পড় তবে তো নিরুপায়, অত:পর যখন তাহারা কমস করিয়া নিজেদের পিতাকে কথা দিল তখন তিনি বলিলেন, আমরা যে কথা বার্তা বলিতেছি তাহা সমস্তই আল্লাহর সপর্দ রহিল ।
وَقَالَ يَا بَنِيَّ لَا تَدْخُلُوا مِن بَابٍ وَاحِدٍ وَادْخُلُوا مِنْ أَبْوَابٍ مُّتَفَرِّقَةٍ ۖ وَمَا أُغْنِي عَنكُم مِّنَ اللَّهِ مِن شَيْءٍ ۖ إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ ۖ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ ۖ وَعَلَيْهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُتَوَكِّلُونَ
বাংলা অর্থ:
৬৭। এবং (রওয়ানার সময়) তিনি বলিলেন হে আমার পুত্রগণ! তোমরা সকলে (মিসর শহরে ) এক দরজা দিয়া প্রবেশ করি ও না বরং পৃথক পৃথক দরজা দিয়া প্রবেশ করিও ; আর আমি আল্লাহর হুকুমকে তোমাদের উপর হইতে টলাইতে পারি না; হুকুম তো কেবলমাত্র আল্লাহরই রহিয়াছে তাহারই উপর ভরসা রাখি এবং তাঁহারই উপর অপর ভরসাকারীদেরও ভরসা করা উচিত।
وَلَمَّا دَخَلُوا مِنْ حَيْثُ أَمَرَهُمْ أَبُوهُم مَّا كَانَ يُغْنِي عَنْهُم مِّنَ اللَّهِ مِن شَيْءٍ إِلَّا حَاجَةً فِي نَفْسِ يَعْقُوبَ قَضَاهَا ۚ وَإِنَّهُ لَذُو عِلْمٍ لِّمَا عَلَّمْنَاهُ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
বাংলা অর্থ:
৬৮। এবং যেইভাবে তাহাদের পিতা বলিয়া ছিলেন যখন তাহার সেইভাবে প্রবেশ করিল তখন পিতার ইচ্ছা পূর্ণ হইল; আল্লাহর হুকুম টলাইয়া দেওয়া তাহাদের পিতার উদ্দেশ্য ছিল না কিন্তু ইয়াকুবের মনে একটি বাসনা উদয় হইয়াছিল তাহাই তিনি প্রকাশ করিয়া দিলেন আর নি:সন্দেহে তিনি বড় জ্ঞানী ছিলেন এই কারণে যে আমিই তাহাকে এলম দান করিয়াছিলাম, কিন্তু অধিকাংশ লোকই উহা অবগত নহে।
সূরা ইউসুফ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। অর্থাৎ এইরূপ বলার উদ্দেশ্য হইল আল্লাহকে হাযির নাযির জানিয়া তাহারা যেন অঙ্গীকার পালনে উৎসাহী হয়। (ব:কো:)
২। ইহা বদ নযর ইত্যাদির উপদ্রব হইতে রক্ষা পাওয়ার জন্য ব্যর্থ উপায় অবলম্বন ছাড়া আর কিছুই নহে। কিন্তু তকদীরের লেখা বদ করিবার উপায় নাই। কাজেই আমি খোদার হুকুমকে টলাইতে পারি না।(ব: কো:)
৩। অর্থাৎ তাহার প্রতি এইরূপ প্রশ্ন আসিতে পারে না যে, তিনি তাওয়াক্কুল কেন বর্জন করিলেন। কেননা, বাহ্য উপকরণর প্রতি সম্পূর্ণ নির্ভর করা তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী। তিনি তাহা করেন নাই। তাঁহার এইরূপ বলার উদ্দেশ্যে তাওয়াক্কুল বর্জন করা নহে ; বরং তদবীর ও বাহ্য উপলক্ষ্যস্বরূপ একটি কথা তাঁহার মনে জাগিয়ছিল, তাহাই তিনি প্রকাশ করিলেন। শরীঅত মত এইরূপ করা নির্দোষ বরং প্রশংসনীয় কাজ। কিন্তু অধিকাংশ লোক মূর্খতা বশত: মনে করে যে, কেবল তদবীরের দ্বারাই কাজ হাছিল হয় । (ব: কো:)
وَلَمَّا دَخَلُوا عَلَىٰ يُوسُفَ آوَىٰ إِلَيْهِ أَخَاهُ ۖ قَالَ إِنِّي أَنَا أَخُوكَ فَلَا تَبْتَئِسْ بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
বাংলা অর্থ:
৬৯। আর যখন তাহারা ইউসুফের নিকট পৌছিল, তিনি স্বীয় ভ্রাতাকে নিজের কাছে রাখিলেন, (এবং নির্জনে) বলিলেন আমি তোমার ভাই (ইউসুফ) সুতরাং তাহারা যে ব্যবহার করিয়া আসিতেছে তৎপ্রতি দু:খ করিও না।
فَلَمَّا جَهَّزَهُم بِجَهَازِهِمْ جَعَلَ السِّقَايَةَ فِي رَحْلِ أَخِيهِ ثُمَّ أَذَّنَ مُؤَذِّنٌ أَيَّتُهَا الْعِيرُ إِنَّكُمْ لَسَارِقُونَ
বাংলা অর্থ:
৭০। অনন্তর ইউসুফ যখন তাহাদের (শস্য এবং বিদায়ের) আসববা তৈয়ার করিয়া দিলেন তখন পানি পান করার পাত্রটি নিজ ভ্রাতার আসবাবের মধ্যে রাখিয়া দিলেন, অত:পর এক ঘোষণাকারী ঘোষণা করিল যে, হে কাফেলার লোকগণ! নিশ্চয় তোমরা চোর।
قَالُوا وَأَقْبَلُوا عَلَيْهِم مَّاذَا تَفْقِدُونَ
বাংলা অর্থ:
৭১। তাহারা উহাদের দিকে ফিরিয়া বলিতে লাগিল, তোমাদের কি বস্তু হারাইয়াছে ?
قَالُوا نَفْقِدُ صُوَاعَ الْمَلِكِ وَلِمَن جَاءَ بِهِ حِمْلُ بَعِيرٍ وَأَنَا بِهِ زَعِيمٌ
বাংলা অর্থ:
৭২। তাহারা বলিল, আমরা শাহী পেয়ালা পাইতেছি না এবং যে ব্যক্তি উহা আনিয়া দিবে সে এক উটের বোঝা শস্য পাইবে, আর আমি উহার যামিন রহিলাম।
قَالُوا تَاللَّهِ لَقَدْ عَلِمْتُم مَّا جِئْنَا لِنُفْسِدَ فِي الْأَرْضِ وَمَا كُنَّا سَارِقِينَ
বাংলা অর্থ:
৭৩। তাহারা বলিল, আল্লাহর কসম, তোমরা ভাল করিয়াই জানযে, আমরা দেশে ফ্যাসাদ বিস্তার করিতে আসি ন্ইা এবং আমরা চুরি করার পাত্র ও নহি।
قَالُوا فَمَا جَزَاؤُهُ إِن كُنتُمْ كَاذِبِينَ
বাংলা অর্থ:
৭৪। অন্বেষণকারীরা বলিল, আচ্ছা যদি তোমরা মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হও, তবে তাহার কি শাস্তি হইবে?
قَالُوا جَزَاؤُهُ مَن وُجِدَ فِي رَحْلِهِ فَهُوَ جَزَاؤُهُ ۚ كَذَٰلِكَ نَجْزِي الظَّالِمِينَ
বাংলা অর্থ:
৭৫। তাহারা উত্তর করিল, তাহার শাস্তি এইযে, যাহার আসবাবের মধ্যে উহা পাওয়া যাইবে, সে নিজেই নিজের শাস্তি (-স্বরূপ গোলাম বনিবে) আমরা অনাচারীদের এইরূপ শাস্তিই দিয়া থাকি।
সূরা ইউসুফ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা এখন আমাদিগকে মিলিত করাতে আমাদের দু:খের অবসান হইল। অতএব, পাছের কথা আমাদের ভুলিয়া যাওয়া উচিত। বেনইয়ামিনের প্রতি তাহার স্বতন্ত্র অত্যাচার না করিয়া থাকিলেও ইউসুফের বিরহ যাতনা তাহার পক্ষে কম যন্ত্রণাদায়ক ছিল না। হয়ত তাহারা বেনইয়ামিনকেও অন্য প্রকারে নির্যাতিত করিয়া থাকিবে।
২। একথার অর্থ এই যে, স্বয়ং চোরও যদি দ্রব্যটি আনিয়া উপস্থিত করে, তবে চুরির অপরাধ ক্ষমা করার পর তাহাকে পুরস্কারও প্রদান করা হইবে। (ব:কো:)
৩। অর্থাৎ চুরির বিনিময়ে মালের মালিক চোকে গোলাম করিয়া রাখিবে , ইয়াকুব (আ:) ্এর শরীঅতের বিধানও এইরূপই । (ব:কো:)
فَبَدَأَ بِأَوْعِيَتِهِمْ قَبْلَ وِعَاءِ أَخِيهِ ثُمَّ اسْتَخْرَجَهَا مِن وِعَاءِ أَخِيهِ ۚ كَذَٰلِكَ كِدْنَا لِيُوسُفَ ۖ مَا كَانَ لِيَأْخُذَ أَخَاهُ فِي دِينِ الْمَلِكِ إِلَّا أَن يَشَاءَ اللَّهُ ۚ نَرْفَعُ دَرَجَاتٍ مَّن نَّشَاءُ ۗ وَفَوْقَ كُلِّ ذِي عِلْمٍ عَلِيمٌ
বাংলা অর্থ:
৭৬। অত:পর ইউসূফ নিজ ভ্রাতার থলিয়া তালাশ করিবার পূর্বে সর্বপ্রথম অপর ভ্রাতাদের থলিয়া হইতে তল্লাশি আরম্ভ করিলেন, পরে উহা স্বীয় থলিয়া হইতে বাহির করিয়া লইলেন, আমি ইউসুফের খাতিরে (বিনইয়ামীনকে রাখার) এইরূপ তদবীর করিলাম; ইউসুফ নিজ ভ্রাতাকে সেই বাদশাহের আইনানুসারে রাখিতে পারিতেন না কিন্তু কথা হইল এই যে, (ইহা) আল্লাহরই ইচ্ছা ছিল; আমি যাহাকে ইচ্ছা করি বিশিষ্ট মর্যাদার উন্নত করিয়া দেই; এবং সমস্ত জ্ঞানী উপর রহিয়াছেন এক মহাজ্ঞানী (আল্লাহ)।
قَالُوا إِن يَسْرِقْ فَقَدْ سَرَقَ أَخٌ لَّهُ مِن قَبْلُ ۚ فَأَسَرَّهَا يُوسُفُ فِي نَفْسِهِ وَلَمْ يُبْدِهَا لَهُمْ ۚ قَالَ أَنتُمْ شَرٌّ مَّكَانًا ۖ وَاللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا تَصِفُونَ
বাংলা অর্থ:
৭৭। তাহারা বলিল, যদি সে চুরি করিয়া থাকে, তবে তাহার এক ভ্রাতাও ইতিপূর্বে চুরি করিয়াছে। ইউসুফ এই কথাটিকে নিজ অন্তরে গোপন রাখিলেন এবং উহা তাহাদের নিকট প্রকাশ করিলেন না অর্থাৎ এইরূপ বলিলেন এই ব্যাপারে তোমরা তো আরও অধিক মন্দ আর যাহা তোমরা বর্ণনা করিতেছ উহা (-র হাকীকত) আল্ল্হা তা‘আলাই সমধিক অবগত আছেন।
قَالُوا يَا أَيُّهَا الْعَزِيزُ إِنَّ لَهُ أَبًا شَيْخًا كَبِيرًا فَخُذْ أَحَدَنَا مَكَانَهُ ۖ إِنَّا نَرَاكَ مِنَ الْمُحْسِنِينَ
বাংলা অর্থ:
৭৮। তাহারা বলিল হে আযীয! ইহার এক অতি বৃদ্ধ পিতা আছেন (ইহাকে অত্যন্ত ¯েœহ করেন) সুতরাং তাহার স্থলে আমাদের একজনকে রাখিয়া দিন, আমরা আপনাকে সদাচারী দেখিতেছি।
قَالَ مَعَاذَ اللَّهِ أَن نَّأْخُذَ إِلَّا مَن وَجَدْنَا مَتَاعَنَا عِندَهُ إِنَّا إِذًا لَّظَالِمُونَ
বাংলা অর্থ:
৭৯। ইউসুফ বলিলেন, এমন কাজ হইতে আল্লাহ রক্ষা করুন যে, আমরা যাহার নিকট নিজেদের জিনিস পাইয়াছি তাহাকে ছাড়িয়া অপরকে বন্দী করিয়া রাখি, এই অবস্থায় তে আমরা বড় অবিচারী বলিয়া গণ্য হইব।
সূরা ইউসুফ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। কেননা, বাদশাহর আইনে এইরূপ অপরাধে সাজা ও জারিমানা করার নিয়ম ছিল। (ব: কো:)
২। প্রকৃতপক্ষে এইস্থলে বেনইয়ামিনকে ক্রীতদাস করা হয় নাই। বরং তাহার সন্তুষ্টি ও অনুমতিক্রমে তাহাকে আটকাইয়া রাখার একটা কৌশল মাত্র। (ব: কো:)
৩। চুরি করার কথাটি অবশ্য ঠিক নহে। তবে এই সম্বন্ধে তাহার বাল্যকালের একটি ঘটনা কথিত আছে যে তিনি তাহার এক ফুফুর নিকট প্রতিপালিত হইতেছিলেন। ইয়াকুব (আ:) কিছুকাল পরে তাহাকে লইয়া যাইতে চাহিলে ফুফু তাহাতে দু:খীত হন এবং চক্রান্ত করিয়া তাহার কাপড়ের নীচে কটিদেশে একটি পেটি বাধিয়া দিয়া প্রকাশ করিলেন যে, আমার একটি পেটি হারাইয়া গিয়াছে। পরে তাহা ইউসুফের কটিদেশ হইতে বাহির হইলে তৎকালীন শরীঅত অনুসারে তাহাকে ফুফুর নিকটই মৃত্যু পর্যন্ত থাকিতে হইল। (ব: কো:)
فَلَمَّا اسْتَيْأَسُوا مِنْهُ خَلَصُوا نَجِيًّا ۖ قَالَ كَبِيرُهُمْ أَلَمْ تَعْلَمُوا أَنَّ أَبَاكُمْ قَدْ أَخَذَ عَلَيْكُم مَّوْثِقًا مِّنَ اللَّهِ وَمِن قَبْلُ مَا فَرَّطتُمْ فِي يُوسُفَ ۖ فَلَنْ أَبْرَحَ الْأَرْضَ حَتَّىٰ يَأْذَنَ لِي أَبِي أَوْ يَحْكُمَ اللَّهُ لِي ۖ وَهُوَ خَيْرُ الْحَاكِمِينَ
বাংলা অর্থ:
৮০। অনন্তর যখন ইউসুফ হইতে তাহাদের কোন আশাই রহিল না তখন তাহার পৃথক হইয়া নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করিতে লাগিল; তাহাদের মধ্যে যে বড় ছিল সে বলিল, তোমাদের কি জানা নাই যে, তোমাদের পিতা তোমাদিগ হইতে আল্লাহর শপথ লইয়া দৃঢ় প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করিয়াছেন আর হইর পূর্বে ইউসুফের ব্যাপারে যে কত ক্রটি করিয়াই রাখিয়াছ, অতএব আমি তো এই দেশ হইতে নড়িব না, যে পর্যন্ত আমার পিতা আমাকে অনুমতি না দেন অথবা আল্লাহ তা‘আলা আমাকে এই সমস্যার সমাধান করিয়া না দেন, আর তিনিই উত্তম সমাধানকারী।
ارْجِعُوا إِلَىٰ أَبِيكُمْ فَقُولُوا يَا أَبَانَا إِنَّ ابْنَكَ سَرَقَ وَمَا شَهِدْنَا إِلَّا بِمَا عَلِمْنَا وَمَا كُنَّا لِلْغَيْبِ حَافِظِينَ
বাংলা অর্থ:
৮১। তোমরা নিজেদের পিতার নিকট ফিরিয়া যাও এবং বল যে, আব্বা! আপনার ছেলে চুরি করিয়াছে, এবং আমরা তো উহাই ব্যক্ত করিতেছি যাহা আমরা জানিতে পারিয়াছি। আর আমরা অদৃশ্য বিষয় তে জ্ঞাত ছিলাম না।
وَاسْأَلِ الْقَرْيَةَ الَّتِي كُنَّا فِيهَا وَالْعِيرَ الَّتِي أَقْبَلْنَا فِيهَا ۖ وَإِنَّا لَصَادِقُونَ
বাংলা অর্থ:
৮২। আর সেই জনপদের অধিবাসীদেগকে জিজ্ঞাসা করুন যেখানে আমরা ছিলাম এবং এই কাফেলার লোকদিগকেও জিজ্ঞাসা করুন যাহাদের শামিল হইয়া আমরা আসিয়াছি; আর বিশ্বাস করুন আমরা সম্পূর্ণ সত্য বলিতেছি।
قَالَ بَلْ سَوَّلَتْ لَكُمْ أَنفُسُكُمْ أَمْرًا ۖ فَصَبْرٌ جَمِيلٌ ۖ عَسَى اللَّهُ أَن يَأْتِيَنِي بِهِمْ جَمِيعًا ۚ إِنَّهُ هُوَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ
বাংলা অর্থ:
৮৩। ইয়াকূব বলিলেন, বরং তোমরা নিজেদের মন হইতে একটি কথা গড়িয়া লইয়াছ অতএব ছবরই করিব যাহাতে অভিযোগের নাম- গন্ধ থাকিবে না ; আল্লাহর দরবারে আশা রহিল যে তাহাদের সকলকে আমার নিকট পৌছইয়া দিবেন; তিনি সর্ববিদিত অতিশয় হেকমতওয়ালা।
وَتَوَلَّىٰ عَنْهُمْ وَقَالَ يَا أَسَفَىٰ عَلَىٰ يُوسُفَ وَابْيَضَّتْ عَيْنَاهُ مِنَ الْحُزْنِ فَهُوَ كَظِيمٌ
বাংলা অর্থ:
৮৪। আর তাহাদিগ হইতে অন্য দিকে মুখ ফিরাইলেন এবং বলিলেন, হায় ইউসুফ, আফসোস! আর শোকে তাহার চক্ষু সাদা হইয়া গেল এবং তিনি শোক সংবরণ করিতেছিলেন।
قَالُوا تَاللَّهِ تَفْتَأُ تَذْكُرُ يُوسُفَ حَتَّىٰ تَكُونَ حَرَضًا أَوْ تَكُونَ مِنَ الْهَالِكِينَ
বাংলা অর্থ:
৮৫। পুত্ররা বলিল, আল্লাহর কসম আপনি তো সদাসর্বদা ইউসুফের স্মরণে লাগিয়া থাকিবেন, এমন কি শীর্ণকায় হইয়া ওষ্ঠাগত প্রাণ হইয়া পড়িবেন অথবা একেবারে মরিয়াই যাইবেন।
সূরা ইউসুফ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। বড় ভ্ইায়েরা যখন দেখিল যে, বেনইয়ামিনকে মিসরে রাখিয়া যাওয়াই সকলের পরামর্শে স্থির হইল, তখন সে বলিল, তোমাদের কি স্মরণ নাই যে, তোমরা বেইয়ামিনকে দেশে ফিরাইয়া লইয়া যাইতে খোদার শপথপূর্বক প্রতিজ্ঞা করিয়ার্ছিলে। অতএব তাহাকে মুক্ত করার চেষ্টা করা আমাদের কর্তব্য। ইতিপূর্বে ইউসুফের ব্যাপারে একবার তোমরা পিতাকে প্রতারিত করিয়াছ। সেই পুরাতন লজ্জাই রাখিবার স্থান নাই। আবর নূতন লজ্জার বোঝা মাথায় লইয়া কেমন করিয়া তাহার সম্মুখে উপ¯িথত হইবে ? আমি তো পিতার অনুমতি বা আল্লাহর তাআলার কোন সমাধান ব্যতীত এই দেশ হইতে নড়িব না। সমস্যার সমাধান হইল, বেনইয়ামিনের মুক্তি লাভ। তাহা না হইলে পিতার অনুমতি পর্যন্ত আমাকে এইখানেই থাকিতে দাও। (ব: কো:)
قَالَ إِنَّمَا أَشْكُو بَثِّي وَحُزْنِي إِلَى اللَّهِ وَأَعْلَمُ مِنَ اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ
বাংলা অর্থ:
৮৬। ইয়াকূব বলিলেন, আমি আমার শোক ও দু:খের অভিযোগ কেবল আল্লাহর সমূপেই করিতেছি এবং আল্লাহ তাআলা কথাগুলি যে পরিমাণ আমি জানি তাহা তোমরা জানি না।
يَا بَنِيَّ اذْهَبُوا فَتَحَسَّسُوا مِن يُوسُفَ وَأَخِيهِ وَلَا تَيْأَسُوا مِن رَّوْحِ اللَّهِ ۖ إِنَّهُ لَا يَيْأَسُ مِن رَّوْحِ اللَّهِ إِلَّا الْقَوْمُ الْكَافِرُونَ
বাংলা অর্থ:
৮৭। হে আমার পুত্রগণ! যাও এবং ইউসুফ ও তাহার ভ্রাতার অনুসন্ধান কর, আর আল্লাহ তা‘আলার রহমত হইতে নিরাশ হইও না ; নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলার রহমত হইতে কেবল সেই সকল লোকেরাই নিারশ হয় যাহারা কাফের।
فَلَمَّا دَخَلُوا عَلَيْهِ قَالُوا يَا أَيُّهَا الْعَزِيزُ مَسَّنَا وَأَهْلَنَا الضُّرُّ وَجِئْنَا بِبِضَاعَةٍ مُّزْجَاةٍ فَأَوْفِ لَنَا الْكَيْلَ وَتَصَدَّقْ عَلَيْنَا ۖ إِنَّ اللَّهَ يَجْزِي الْمُتَصَدِّقِينَ
বাংলা অর্থ:
৮৮। আবার যখন তাহারা ইউসুফের নিকট পৌছিল, বলিতে লাগিল হে আযীয! আমাদের এবং আমাদের পরিবারবর্গের বড় কষ্ট হইতেছে আর আমরা এই সামান্য বস্তু আনিয়াছি সুতরাং আপনি পুরাপুরি শস্য দিয়া দিন এবং আমাদিগকে খয়রাত (মনে করিয়া) দিন নি:সন্দেহে আল্লাহ খয়রাত প্রদানকারীদেরকে পুরস্কৃত করিয়া থাকেন।
قَالَ هَلْ عَلِمْتُم مَّا فَعَلْتُم بِيُوسُفَ وَأَخِيهِ إِذْ أَنتُمْ جَاهِلُونَ
বাংলা অর্থ:
৮৯। ইউসুফ বলিলেন উহা কি তোমাদের স্মরণ আছে, তোমরা ইউসুফ ও তাঁহার ভ্রাতার সঙ্গে যে ব্যবহার করিয়াছিলে যখন তোমরা অজ্ঞতার অবস্থায় ছিলে?
قَالُوا أَإِنَّكَ لَأَنتَ يُوسُفُ ۖ قَالَ أَنَا يُوسُفُ وَهَـٰذَا أَخِي ۖ قَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَيْنَا ۖ إِنَّهُ مَن يَتَّقِ وَيَصْبِرْ فَإِنَّ اللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجْرَ الْمُحْسِنِينَ
বাংলা অর্থ:
৯০। তাহারা বলিল, তবে সত্য- সত্যই কি তুমি ইউসুফ? তিনি বলিলেন আমি ইউসুফ এবং এইটি আমার (সহোদর) ভাই আমাদের প্রতি আল্লাহ বড় অনুগ্রহ করিয়াছেন; বাস্তবিক যেই ব্যক্তি গুনাহ হইতে বাঁচিয়া থাকে এবং ধৈর্য অবলম্বন করে আল্লাহ তা‘আলা এমন নেককারদের কর্মফলকে বিনষ্ট করেন না।
সূরা ইউসুফ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। ইয়াকূব (আ:) ওহী মারফত অথবা জিব্রাঈল (আ:) মারফৎ জানিতে পারিয়াছিলেন যে, ইউসুফ জীবিত আছেন অথবা বিশ্বাস ছিল যে ইউসুফের স্বপ্ন নিশ্চয়ই বাস্তবায়িত হইবে। আমরা তাহাকে সিজদা করিব। (মু:কো:)
২। ছেলেরা মিসরাভিমুখে যাত্রা করিবার সময় ইয়াকূব (আ:) মিসররাজের নামে চিঠি লিখিয়া দিলেন যে, আমার একান্ত প্রিয় ও সুদর্শন পুত্র ইউসুফকে হারাইয়া কাঁদিতে কাঁদিতে এখন আমি অন্ধ। তাহার ছোট ভাই বেনইয়ামিনকে কাছে রাখিয়া কিছুটা সান্ত¡না লাভ করিতাম। তাহাকেও আপনি চুরির অপরাধে বন্দী করিয়াছেন। তাহাকে মুক্তি করিয়া দিলে আপনার মঙ্গল হইবে অন্যথায় আপনার জন্য আমি বদ- দোআ করিব। ইউসুফ (আ:) পত্র পাইয়া ভাইদিগকে বলিলেন, তোমাদের কি স্মরণ আছে, তোমরা ইউসুফ ও তাহার ভাইয়ের সঙ্গে কি করিয়াছ? (মু:কো:)
قَالُوا تَاللَّهِ لَقَدْ آثَرَكَ اللَّهُ عَلَيْنَا وَإِن كُنَّا لَخَاطِئِينَ
বাংলা অর্থ:
৯১। তাহারা বলিল, আল্লাহ্র কসম! নি:সন্দেহে আল্লাহ্ তা আলা আমাদের উপর তোমাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করিয়াছেন আর অবশ্যই আমরা অপরাধী ছিলাম।
قَالَ لَا تَثْرِيبَ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ ۖ يَغْفِرُ اللَّهُ لَكُمْ ۖ وَهُوَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ
বাংলা অর্থ:
৯২। ইউসুফ বলিলেন, না আজ তোমাদের উপর কোন অভিযোগ নাই; আল্লাহ্ তা আলা তোমাদের ক্রটি মাফ করিবেন এবং তিনি সকল মোহেরবানের চেয়ে অধিক মেহেরবান।
اذْهَبُوا بِقَمِيصِي هَـٰذَا فَأَلْقُوهُ عَلَىٰ وَجْهِ أَبِي يَأْتِ بَصِيرًا وَأْتُونِي بِأَهْلِكُمْ أَجْمَعِينَ
বাংলা অর্থ:
৯৩। এখন তোমরা আমার এই জামা লইয়া যাও এবং ইহা আমার পিতার মুখের উপর রাাখিয়া দাও, তাঁহার চক্ষু জ্যোতি প্রাপ্ত হইয়া যাইবে, (এবং তিনি চলিয়া আসিবেন) আ্র তোমাদের পরিজন সকলকে আমার এখানে লইয়া আসিও।
وَلَمَّا فَصَلَتِ الْعِيرُ قَالَ أَبُوهُمْ إِنِّي لَأَجِدُ رِيحَ يُوسُفَ ۖ لَوْلَا أَن تُفَنِّدُونِ
বাংলা অর্থ:
৯৪। আর যখন (মিসর হইতে) কাফেলা চলিল, তখন তাহাদের পিতা বলিতে লাগিলেন যে, যদি তোমরা আমাকে বাধ্যক্যজনিত প্রলাপোক্তিকারী বলিয়া মনে না কর তবে একটি কথা বলিতে চাই যে আমার কাছে তো ইউসুফের ঘ্রান আসিতেছে।
قَالُوا تَاللَّهِ إِنَّكَ لَفِي ضَلَالِكَ الْقَدِيمِ
বাংলা অর্থ:
৯৫। তাহারা বলিতে লাগিল, শপথ আল্লাহ্র, আপনি তো আপনার সেই পুরাতন ভ্রমেই লিপ্ত আছেন।
فَلَمَّا أَن جَاءَ الْبَشِيرُ أَلْقَاهُ عَلَىٰ وَجْهِهِ فَارْتَدَّ بَصِيرًا ۖ قَالَ أَلَمْ أَقُل لَّكُمْ إِنِّي أَعْلَمُ مِنَ اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ
বাংলা অর্থ:
৯৬। অত:পর যখন সুসংবাদবাহক আসিয়া পৌছিল, (এবং) সে সেই জামা তাহার মুখের উপর রাাখিয়া দিল, তখনই তাহার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়া আসিল, তিনি বলিলেন, কেমন! আমি কি তোমাদিগকে বলি নাই যে, আল্লাহ্র বিষয়গুলি আমি যতটুকু জানি তোমরা তা জান না।
قَالُوا يَا أَبَانَا اسْتَغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا إِنَّا كُنَّا خَاطِئِينَ
বাংলা অর্থ:
৯৭। ছেলেরা সকলে বলিয়া উঠিল, হে আমাদের পিতা! আমাদের জন্য আমাদের গুনাহগুলি মোচনের দো‘আ করুন নিশ্চয় আমরা অপরাধী ছিলাম।
সূরা ইউসুফ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। ছহীহ মত এই যে, জামাটি হযরত ইউসুফের গায়ের সাধারণ জামা ছিল। (ব: কো:)
২। ইউসুফের সঙ্গে কথাবার্তা শেষ করিয়া তাহার ভাইগণ জামা লইয়্ াকেনআন যাত্রা করিল। শহর ছাড়াইয়া প্রান্তরে পৌছিলে বায়ু জামা হইতে ইউসুফের ঘ্রাণ নিয়া ইয়াকূবের নাকে পৌছাইল। (ব: কো:)
৩। এই কারণেই আমি তোমাদিগকে অন্বষণে পাঠাইয়া ছিলাম। খোদা আশা পূর্ণ করিল, তোমরা ইউসুফের সন্ধান লইয়া আসিলে। (ব: কো:)
৪। অর্থাৎ ইউসুফের ব্যাপারে আমরা যে কষ্ট দিয়াছি, তাহাতে আমরা নিশ্চয় পাপচারী হইয়াছি। অতএব, আপনিও আমাদিগকে মাফ করুন এবং আল্লাহ্র দরবারেও আমাদের পাপ মুক্তির জন্য দো‘আ করুন। (ব: কো:)
قَالَ سَوْفَ أَسْتَغْفِرُ لَكُمْ رَبِّي ۖ إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
বাংলা অর্থ:
৯৮। ইয়াকূব বলিলেন, অতি শীঘ্র তোমাদের জন্য নিজ প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করিব নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।
فَلَمَّا دَخَلُوا عَلَىٰ يُوسُفَ آوَىٰ إِلَيْهِ أَبَوَيْهِ وَقَالَ ادْخُلُوا مِصْرَ إِن شَاءَ اللَّهُ آمِنِينَ
বাংলা অর্থ:
৯৯। অনন্তর যখন তাঁহারা সকলে ইউসুফের নিকট পৌছিলেন, তখন তিনি স্বীয় পিতা মাতাকে নিজের কাছে স্থান দিলেন এবং বলিলেন, সকলে মিসরে চলুন, আল্লাহ তো সুখ-শান্তিতে থাকিবেন।
وَرَفَعَ أَبَوَيْهِ عَلَى الْعَرْشِ وَخَرُّوا لَهُ سُجَّدًا ۖ وَقَالَ يَا أَبَتِ هَـٰذَا تَأْوِيلُ رُؤْيَايَ مِن قَبْلُ قَدْ جَعَلَهَا رَبِّي حَقًّا ۖ وَقَدْ أَحْسَنَ بِي إِذْ أَخْرَجَنِي مِنَ السِّجْنِ وَجَاءَ بِكُم مِّنَ الْبَدْوِ مِن بَعْدِ أَن نَّزَغَ الشَّيْطَانُ بَيْنِي وَبَيْنَ إِخْوَتِي ۚ إِنَّ رَبِّي لَطِيفٌ لِّمَا يَشَاءُ ۚ إِنَّهُ هُوَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ
বাংলা অর্থ:
১০০। এবং নিজ পিতামাতাকে উচ্চাসনে বসাইলেন ্এবং সকলে তাঁহার সম্মুখে অবনত হইলেন, এবং ইউসুফ বলিলেন, আব্বা! ইহাই আমার স্বপ্নের তা‘বীর যাহা বিগতকালে দেখিয়াছিলাম, আমার প্রতিপালক তাহা বাস্তবায়িত করিয়া দিলেন, আর আমার প্রতি অনুকম্পা প্রদর্শন করিলেন তখন, যখন আমাকে কারাগার হইতে বাহির করিলেন, আর (আমার রব্ব) আপনাদের সকলকে বাহির হইতে (এখানে) নিয়া আসিলেন- শয়তান আমার ও আমার ভাইদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার পর; নি:সন্দেহে আমার রব্ব য্হাা করিতে চাহেন উহার সূক্ষ¥ উপায় বাহির করিয়া দেন; নিশ্চয় তিনি মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
رَبِّ قَدْ آتَيْتَنِي مِنَ الْمُلْكِ وَعَلَّمْتَنِي مِن تَأْوِيلِ الْأَحَادِيثِ ۚ فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ أَنتَ وَلِيِّي فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ۖ تَوَفَّنِي مُسْلِمًا وَأَلْحِقْنِي بِالصَّالِحِينَ
বাংলা অর্থ:
১০১। হে আমার পরওয়ারদেগার, আপনি আমাকে রাজত্বের বিরাট অংশ দান করিয়াছেন এবং আমাকে স্বপ্ন- ফল বর্ণনা শিক্ষা দিয়াছেন, হে আসমানসমূহের ও যমীনের সৃষ্টিকর্তা! আপনি আমার কার্যনির্বাহক দুনিয়াতে ও এবং আখেরাতে ও, আমাকে পূর্ণ আনুগত্যের অবস্থায় দুনিয়া হইতে উঠাইয়া লউন এবং আমাকে বিশিষ্ট নেক বান্দাগণের অন্তর্ভুক্ত করুন।
সূরা ইউসুফ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। একদিন হযরত ইয়াকূব (আ:) পুত্রদর্শন মানসে মিসর যাত্রা করিয়াছেন, অপরদিকে সংবাদ পাইয়া ইউসুফ (আ:) তাঁহাদের ইস্তেকাবালের জন্য মিসরের উপকন্ঠে আসিয়া প্রতিক্ষা করিতে লাগিলেন। আগন্তুকরা আসিয়া পৌছিলে ইউসুফ (আ:) পিতা- মাতা কে সম্মানার্থে নিজের কাছে স্থান দিলেন। প্রাথমিক কথাবার্তার পর বলিলেন, সকলে মিসরে চলুন আল্লাহ বিরহ- যাতনা দূর করিয়াছেন।(ব: কো: )
২। অর্থাৎ শহরে আসিয়া ইউসফের উন্নত অবস্থা ও উচ্চ মর্যাদা দেখিয়া সকলের মনে তাঁহার মর্যাদা জাগিল এবং সকলে তাঁহার সম্মুখে সিজদায় পতিত হইল এই সিজদা নিছক সম্মান প্রদর্শনের জন্য ছিল। তৎকালের শরীঅতে ইহা জায়েয ছিল। তিনি যেহেতু স্বপ্ন যোগে জানিতে পারিয়াছিলেন যে, এই সিজদা আল্লাহর ইচ্ছার প্রতিকূলে পিতা-মাতা কে সিজদা করিতে বারণ করেন নাই। (ব: কো:)
ذَٰلِكَ مِنْ أَنبَاءِ الْغَيْبِ نُوحِيهِ إِلَيْكَ ۖ وَمَا كُنتَ لَدَيْهِمْ إِذْ أَجْمَعُوا أَمْرَهُمْ وَهُمْ يَمْكُرُونَ
বাংলা অর্থ:
১০২। ইহা হইতেছে অদৃশ্য সংবাদ সমূহের একটি কাহিনী, যাহা আমি ওহী মারফত আপনাকে শিক্ষা দিতেছি, আর আপনি তখন তাহাদের নিকট উপস্থিত ছিলেন না-যখন তাহারা নিজেদের ইচছা সুদৃঢ় করিয়াছিল এবং তাহারা ষড়যন্ত্র করিতেছিল।
وَمَا أَكْثَرُ النَّاسِ وَلَوْ حَرَصْتَ بِمُؤْمِنِينَ
বাংলা অর্থ:
১০৩। আর (নুবুওয়াতের প্রমাণ পাওয়া সত্ত্বেও) অধিকাংশ লোক ঈমান আনে না, আপনি যতই আকাঙক্ষা করেন না কেন।
وَمَا تَسْأَلُهُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ ۚ إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرٌ لِّلْعَالَمِينَ
বাংলা অর্থ:
১০৪। আর আপনি তাহাদের নিকট ইহার বিনিময় তো কিছু চাহিতেছেন না ইহা তো সমগ্র বিশ^বাসীর জন্য কেবল একটি নসীহত।
وَكَأَيِّن مِّنْ آيَةٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَمُرُّونَ عَلَيْهَا وَهُمْ عَنْهَا مُعْرِضُونَ
বাংলা অর্থ:
১০৫। আর (তাওহীদের) অনেক নিদর্শন রহিয়াছে আসমানসমূহে এবং যমীনে যাহার উপর তাহাদের যাতায়াত হইয়া থাকে অথচ তাহারা উহার প্রতি মনোনিবেশ করে না।
وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُم بِاللَّهِ إِلَّا وَهُم مُّشْرِكُونَ
বাংলা অর্থ:
১০৬। আর অধিকাংশ লোক যাহারা আল্লাহকে মানিয়া ও থাকে, কিন্তু এইভাবে যে, তাহারা শিকরও করিতে থাকে।
أَفَأَمِنُوا أَن تَأْتِيَهُمْ غَاشِيَةٌ مِّنْ عَذَابِ اللَّهِ أَوْ تَأْتِيَهُمُ السَّاعَةُ بَغْتَةً وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ
বাংলা অর্থ:
১০৭। তবে কি তাহারা ইহা হইতে নিশ্চন্ত হইয়া বসিয়া রহিয়াছে যে, তাহাদের কে আল্লাহর কোন আযাব আসিয়া ঘিরিয়া ফেলিবে অথবা তাহাদের প্রতি আকস্মাৎ কিয়ামত আসিয়া পড়িবে, আর তাহাদের খবরও হইবে না।
সূরা ইউসুফ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। আপনি কখনও কাহারও নিকট এই ঘটনা শ্রবণ করেন নাই। ইহাতে স্পষ্টই বুঝা যায় যে, আপনি ওহীর সাহায্যেই ইহা জানিতে পারিয়াছেন, সুতরাং আপনি নবী। (ব: কো:)
২। কিন্তু কেবল খোদাকে মানিলে কি হইবে ? একত্ববাদ স্বীকার না করিলে এই মানা না মানার শামিল। অতএব, বুঝিতে হইবে যে, ইহারা খোদার প্রতিও কুফর করিতেছে এবং নুবুওয়াতের প্রতিও কুফর করিতেছে। (ব: কো:)
৩। মোটকথা, কুফরীর ফলে তাহাদের আযাব ভোগ করা অনিবার্য। এই আযাব দুনিয়াতে ও দেখা নিতে পারে, আখেরাতে তো অবধারিতই আছে। অতএব, তাহদের ভীত হওয়া এবং কুফর ছাড়িয়া দেওয়া একান্ত কর্তব্য।(ব: কো:)
৪। অর্থাৎ উপরে একত্ববাদ ও তাওহীদ সম্বন্ধে যাহাকিছু হইতেছে আমার পথ। এখন সম্মুখের দিকে উহার সারমর্ম বলিয়া দেওয়া হইতেছে । (ব: কো:)
قُلْ هَـٰذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ ۚ عَلَىٰ بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي ۖ وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ
বাংলা অর্থ:
১০৮। আপনি বলিয়া দিন, ইহা হইতেছে আমার পথ, আমি আল্লাহর দিকে এইভাবে আহবান করি যে, প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত রহিয়াছি আমি এবং আমার অনুসারীরাও আর আল্লাহ পবিত্র এবং আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নহি।
وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ إِلَّا رِجَالًا نُّوحِي إِلَيْهِم مِّنْ أَهْلِ الْقُرَىٰ ۗ أَفَلَمْ يَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَيَنظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ ۗ وَلَدَارُ الْآخِرَةِ خَيْرٌ لِّلَّذِينَ اتَّقَوْا ۗ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
বাংলা অর্থ:
১০৯। আর আমি আপনার পূর্বে যতসংখ্যক (রাসূল) প্রেরণ করিয়াছি বিভিন্ন জনপদের অধিবাসীদের হইতে, তাঁহারা সকলে মানুষই ছিলেন- যাহাদের নিকট ওহী প্রেরণ করিতাম ; তবে কি ইহার ভূপৃষ্ঠে বিচরণ করে নাই যাহাতে তাহারা দেখিতে পাইত যে, তাহাদের পূর্ববতীগণের পরিণাম কিরূপ হইয়াছিল; আর নিশ্চয়ই আখেরাতের বাসস্থান সেই লোকদের জন্য অতি উত্তম, যাহারা পরহেযগার ; তবে কি তোমরা এতটুকুও বুঝ না।
حَتَّىٰ إِذَا اسْتَيْأَسَ الرُّسُلُ وَظَنُّوا أَنَّهُمْ قَدْ كُذِبُوا جَاءَهُمْ نَصْرُنَا فَنُجِّيَ مَن نَّشَاءُ ۖ وَلَا يُرَدُّ بَأْسُنَا عَنِ الْقَوْمِ الْمُجْرِمِينَ
বাংলা অর্থ:
১১০। (আযাব আসিতে গৌণ দেখিয়া সংশয় করিও না, কেননা, পূর্ববতী নাফরমান কাওমকে ও বহু অবকাশ দেওয় হইয়াছিল) অবশেষে যখন পয়গম্বরগণ নিরাশ হইয়া পড়িলেন এবং (আযাবের প্রতিশ্রুত সময় নিধারণ ব্যাপারে) তাহাদের ধারণা জন্মিল যে, আমাদের বুঝের ভুল হইয়াছে, (তখন) তাহাদের নিকট আমার সাহায্য আসিয়া পৌছিল, অনন্তর আমি যাহাকে বাঁচাইতে ইচ্ছা করিলাম, সে রক্ষা পাইল, আর আমার আযাব অপরাধীদের হইতে টলে না।
لَقَدْ كَانَ فِي قَصَصِهِمْ عِبْرَةٌ لِّأُولِي الْأَلْبَابِ ۗ مَا كَانَ حَدِيثًا يُفْتَرَىٰ وَلَـٰكِن تَصْدِيقَ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيلَ كُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ
বাংলা অর্থ:
১১১। উহাদের কাহিনীসমূহে বুদ্ধিমান লোকদের জন্য উপদেশের উপাদান রহিয়াছে ; এই কোরআন কোন মনগড়া কথা তো নহে বরং ইহা তো সেই সমস্ত কিতাবের তছদীকাকারী যাহা পূর্বে (নাযিল) হইয়াছে এবং প্রত্যেক বিষয়ের সবিস্তর বর্ণনা কারী, এবং ঈমানদারদের জন্য হেদায়ত ও রহমতস্বরূপ।
সূরা ইউসুফ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। অর্থাৎ আমার নিকট তাওহীদ এবং রিসালতের প্রমাণ রহিয়াছে। আমার সঙ্গীরা ও প্রমাণ দৃষ্টে আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করিয়াছে। (বা: কো:)
২। অর্থাৎ কাফেরেরা মনে করিত, নুবুওয়াতের জন্য ফেরেশতা হওয়া আবশ্যক। বস্তুত: তাহাদের এই ধারণা অহেতুক ও অমূলক। কেননা ইতপূর্বে আমি যত নবী পাঠাইয়াছি, তাহার সকলে মানুষই তো ছিল, কেহই তো ফেরেশতা ছিল না। (বা: কো:)
৩। কেননা, আল্লাহ তাআলা তো আযাব আসার কোন সময় নির্দিষ্ট করেন নাই। অবস্থা দৃষ্টে আমরাই তো ধারণা করিয়া ছিলাম অমুক সময়ে আযাব আসিবে বা আযাব নিকটবর্তী হইয়া পড়িয়াছে, কাজেই আামদেরই তো ভুল হইয়াছে। (বা: কো:)
সূরা হুদ এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা ইউনুস এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা আত-তাওবা এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা আনফাল এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা আরাফ এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা আনআম এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা আল-মায়েদা এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা আন-নিসা এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
আমাদের, ফেসবুক পেইজে লাইক, শেয়ার এবং কমেন্টস করে আমাদের সাথেই থাকুন।