সূরা হুদ বাংলা অনুবাদ
সর্বমোট আয়াত-১২৩
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু
الر ۚ كِتَابٌ أُحْكِمَتْ آيَاتُهُ ثُمَّ فُصِّلَتْ مِن لَّدُنْ حَكِيمٍ خَبِيرٍ
বাংলা অর্থ:
১। আলিফ -লাম-রা। ইহা (কোরআন) এমন কিতাব যাহার আয়াতগুলি (প্রমাণাদি দ্বারা) মযবুত করা ইহয়াছে, অত:পর বিশদভাবে বর্ণনা করা হইয়াছে প্রজ্ঞাময়, মহা জ্ঞাতা (আল্লাহ)- এর পক্ষ হইতে।
أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا اللَّهَ ۚ إِنَّنِي لَكُم مِّنْهُ نَذِيرٌ وَبَشِيرٌ
বাংলা অর্থ:
২। এই (উদ্দেশ্যে) যে, আল্লাহ্ ছাড়া কাহারও এবাদত করিও না। আামি আল্লাহর পক্ষ হইতে তোমাদিগকে ভয় প্রদর্শনকরী এবং সুসংবাদাতা।
وَأَنِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ يُمَتِّعْكُم مَّتَاعًا حَسَنًا إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى وَيُؤْتِ كُلَّ ذِي فَضْلٍ فَضْلَهُ ۖ وَإِن تَوَلَّوْا فَإِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ كَبِيرٍ
বাংলা অর্থ:
৩। আর এই (উদ্দেশ্যে) যে, তোমরা নিজেদের রব্বের নিকট হইতে গুনাহ মাফ করাও তৎপর তাহার প্রতি নিবিষ্ট থাক, তিনি তোমাদিগকে সুখ সম্ভোগ দান করিবেন নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত এবং প্রত্যেক অধিক আমলকারীকে অধিক সওয়াব দিবেন; আর যদি তোমরা মুখ ফিরাইতেই থাক, তবে আমি তোমাদের জন্য ভীষণ দিনের আযাবের আশঙ্কা করি।
إِلَى اللَّهِ مَرْجِعُكُمْ ۖ وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
বাংলা অর্থ:
৪। আল্লাহ্ইর নিকট তোমাদের যাইতে হইবে, এবং তিনি প্রত্যেক বস্তুর উপর পূর্ণ ক্ষমতা রাখেন।
أَلَا إِنَّهُمْ يَثْنُونَ صُدُورَهُمْ لِيَسْتَخْفُوا مِنْهُ ۚ أَلَا حِينَ يَسْتَغْشُونَ ثِيَابَهُمْ يَعْلَمُ مَا يُسِرُّونَ وَمَا يُعْلِنُونَ ۚ إِنَّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ
বাংলা অর্থ:
৫। স্মরণ রাখিও, তাহারা কুঞ্চিত করে নিজেদের বক্ষকে, যেন নিজেদের কথাগুলি আল্লাহ্ হইতে লুকাইতে পারে; স্মরণ রাখিও তাহারা যখন নিজেদের কাপড় (নিজেদের দেহে) জড়ায়, তিনি তখনও সব জানেন যাহাকিছু চুপে চুপে আলাপ করে এবং যাহাকিছু প্রকাশ্যে আলাপ করে, নিশ্চয় তিনি তো মনের ভিতরের কথাগুলি জানেন।
সূরা হুদ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। অর্থাৎ তোমরা আযাবকে অসম্ভব মনে করিও না। কেননা, তোমাদিগকে আল্লাহর দিকেই যাইতে হইবে। তিনি প্রত্যেক বস্তুর উপর ক্ষমতাবান । তবে আর আযাব আসতে আশ্চর্য কি? অবশ্য যদি খোদার দরবারে তোমাদের যাইতে না হইত, কিংবা “না‘উযুবিল্লাহ” খোদা অক্ষম হইতেন, তবে আযাব হওয়া বাস্তবিকই অসম্ভব ছিল । কাজেই ঈমান আনা ও তাওহীদ হইতে গাফেল থাকা উচিত নহে। (ব: কো:)
২। আখনাস ইবনে শোরাইক নামক জনৈক মুনাফেক অতিশয় মিষ্টভাষী ছিল, হুযূর (দ:) এর দরবারে আসিয়া খুব চাটুকারিতা করিত এবং তাঁহার প্রতি নিজের অনুরাগ দেখাইত; কিন্তু ভিতরে সে হাড়ে হাড়ে বদলোক ছিল। আল্লাহ এই আয়াতে তাহার কপটতার সংবাদ দিয়া বলিতেছেন, হেক তাহার বাহ্যিক ব্যবহারে ভুলিও না। (মু: কো:)
وَمَا مِن دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا ۚ كُلٌّ فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ
বাংলা অর্থ:
৬। আর ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী কোন প্রাণী এমন নাই যে, তাহার রিয্ক আল্লাহর যিম্মায় না রহিয়াছে, আর তিনি প্রত্যেকের দীর্ঘ অবস্থানের স্থান এবং অল্প অবস্থানের স্থানকে জানেন; সমস্তই কিতাবে মুবীনে (লওহে মাহফুযে) রহিয়াছে।
وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا ۗ وَلَئِن قُلْتَ إِنَّكُم مَّبْعُوثُونَ مِن بَعْدِ الْمَوْتِ لَيَقُولَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا إِنْ هَـٰذَا إِلَّا سِحْرٌ مُّبِينٌ
বাংলা অর্থ:
৭। আর তিনি এমন যে, সমস্ত আসমান ও যমীনকে পয়দা করিয়াছেন ছয় দিবসে এবং সেই সময় তাহার আর্শ পানির উপরে ছিল, যেন তোমাদিগকে পরীক্ষা করিয়া লন যে, তোমাদের মধ্যে উত্তম আমলকারী কে? আর যদি আপনি বলেন যে, নিশ্চয়ই তোমাদিগকে মৃত্যুর পর জীবিত করা হইবে, তখন যে সকল লোক কাফের তাহারা বলে, ইহা তো নিছক স্পস্ট জাদু।
وَلَئِنْ أَخَّرْنَا عَنْهُمُ الْعَذَابَ إِلَىٰ أُمَّةٍ مَّعْدُودَةٍ لَّيَقُولُنَّ مَا يَحْبِسُهُ ۗ أَلَا يَوْمَ يَأْتِيهِمْ لَيْسَ مَصْرُوفًا عَنْهُمْ وَحَاقَ بِهِم مَّا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِئُونَ
বাংলা অর্থ:
৮। আর যদি আমি কিছু দিনের জন্য তাহাদিগ হইতে আযাবকে মুলতবী করিয়া রাখি, তবে তাহারা বলিতে থাকে যে, সেই আযাবকে কিসে আটকাইয়া রাখিতেছে? স্মরণ রাখিও যেই দিন উহা তাহাদের উপর আসিয়া পড়িবে, তখন কাহারও নিবারণে কিছুতেই নিবারিত হইবে না আর যাহা (যে আযাব) লইয়া তাহারা উপহাস করিতেছিল, উহা আসিয়া তাহাদিগকে ঘিরিয়া লইবে।
وَلَئِنْ أَذَقْنَا الْإِنسَانَ مِنَّا رَحْمَةً ثُمَّ نَزَعْنَاهَا مِنْهُ إِنَّهُ لَيَئُوسٌ كَفُورٌ
বাংলা অর্থ:
৯। আর যদি আমি মানুষকে স্বীয় অনুগ্রহ আস্বাদন করাইয়া তাহা হইতে উহা ছিনাইয়া লই, তবে সে নিরাশ ও অকৃতজ্ঞ হইয়া পড়ে।
সূরা হুদ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। তফসীরে কাশশাফে আছে যে, আল্লামা যামখশরী বলেন “মুস্তাক্বার” শব্দের অর্থ ভূমন্ডলে, বায়ুমন্ডলে এবং পানিতে প্রাণী সমূহের বাসস্থান, আর “মুস্তাওদা” শব্দের অর্থ – ব্যাপারে ঐরষে, মায়ের গর্ভে এবং ডিমের ভিতরে প্রাণী সমূহের বাসস্থান। (মু: কো:)
২। সৃষ্টির প্রারম্ভে আল্লাহ তা‘আলা সবুজ বর্ণের ইয়াকৃত পাথর পয়দা করেন এবং গভীর ভাবে উহার প্রতি দৃষ্টি করিতেই উহা পানি হইয়া যায়। এই পানিকে বায়ুরাশির উপর স্থাপন করেন এবং আকাশের এই পানির উপর প্রতিষ্টিত করেন। (মু: কো:)
৩। ফলকথা, তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করিয়াছেন। ভূপৃষ্ঠে তোমাদের ভোগ্যবস্তু ও জীবন ধারণের পথে আবশ্যকীয় বস্তুসমূহ স্থাপন করিয়াছেন। যাহাতে এই সমস্ত সৃষ্টিলীলা অবলোকন করিয়া তোমরা খোদার অস্তিস্ত ক্ষমতাও একত্বের সন্ধান পাইতে পার (ব: কো:)
وَلَئِنْ أَذَقْنَاهُ نَعْمَاءَ بَعْدَ ضَرَّاءَ مَسَّتْهُ لَيَقُولَنَّ ذَهَبَ السَّيِّئَاتُ عَنِّي ۚ إِنَّهُ لَفَرِحٌ فَخُورٌ
বাংলা অর্থ:
১০। আর যদি তাহাকে কোন নেয়ামত আস্বাদন করাই – কোন কষ্টের পর যাহা তাহার উপর আপতিত হয়, তখন বলিতে আরম্ভ করে যে, আমার সকল দু:খ- কষ্ট দূর হইয়া গেল; (আর) সে গর্ব করিতে থাকে, আত্মপ্রশংসা করিতে থাকে।
إِلَّا الَّذِينَ صَبَرُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أُولَـٰئِكَ لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ كَبِيرٌ
বাংলা অর্থ:
১১। কিন্তু যাহারা ধীর স্বভার এবং নেক কাজ করে, তাহারা এইরূপ হয় না, এমন লোকদের জন্য রহিয়াছে ক্ষমা এবং বিরাট কর্মফল।
فَلَعَلَّكَ تَارِكٌ بَعْضَ مَا يُوحَىٰ إِلَيْكَ وَضَائِقٌ بِهِ صَدْرُكَ أَن يَقُولُوا لَوْلَا أُنزِلَ عَلَيْهِ كَنزٌ أَوْ جَاءَ مَعَهُ مَلَكٌ ۚ إِنَّمَا أَنتَ نَذِيرٌ ۚ وَاللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ وَكِيلٌ
বাংলা অর্থ:
১২। ফলে-হয়ত আপনি অংশবিশেষ বর্জন করিতে চাহেন সেই নির্দেশাবলী এত য্হাা আপনার প্রতি ওহীযোগে প্রেরিত হয়, আর আপনার মন সঙ্কুচিত হয় এই কথায় যে, তাহারা বলে- তাঁহার প্রতি কোণ ধণভান্ডার কেন নাযিল হইল না? অথবা তাহার সঙ্গে কোন ফেরেশতা কেন আসিল না? আপনি তো শুধু ভয় প্রদর্শক; আর আল্লাহই হইতেছেন প্রত্যেক বস্তুর উপর পূর্ণ অধিকারী।
أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ ۖ قُلْ فَأْتُوا بِعَشْرِ سُوَرٍ مِّثْلِهِ مُفْتَرَيَاتٍ وَادْعُوا مَنِ اسْتَطَعْتُم مِّن دُونِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ
বাংলা অর্থ:
১৩। তবে কি তাহারা এইরূপ বলে যে, ইহা আপনি নিজেই রচনা করিয়াছেন? আপনি বলিয়া দিন, তাহা হইলে তোমরাও তাহার অনুরূপ রচিত দশটি সূরা আনয়ন কর এবং (নিজ সাহায্যার্থে) যেই যেই গায়রুল্ল্হকে ডাকিতে পার ডাকিয়া আন, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।
فَإِلَّمْ يَسْتَجِيبُوا لَكُمْ فَاعْلَمُوا أَنَّمَا أُنزِلَ بِعِلْمِ اللَّهِ وَأَن لَّا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ ۖ فَهَلْ أَنتُم مُّسْلِمُونَ
বাংলা অর্থ:
১৪। অত:পর এই কাফেরেরা যদি তোমাদের ফরমায়েশ পূর্ণ করিতে না পারে তবে তোমরা দৃঢ় বিশ্বাস করিবে যে, এই কোরআন অবতীর্ণ হইয়াছে আল্লাহরই জ্ঞান (ও ক্ষমাত) দ্বারা, আর ইহাও মুসরমান হইবে কি?
مَن كَانَ يُرِيدُ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا نُوَفِّ إِلَيْهِمْ أَعْمَالَهُمْ فِيهَا وَهُمْ فِيهَا لَا يُبْخَسُونَ
বাংলা অর্থ:
১৫। যাহারা কেবল পার্থিব জীবন ও উহার জাঁকজমক কামনা করে, তবে আমি তাহাদিগকে তাহাদের কৃতকর্মগুলি (-র ফল) দুনিয়াতেই পরিপূর্ণরূপে প্রদান করিয়া দেই এবং দুনিয়াতে তাহাদের জন্য কিছুই কম হয় না।
সূরা হুদ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। মানুষের ফরমাইশ অনুযায়ী মু‘জেযাহ্ দেখান নবীর ক্ষমতা ধীন নহে। সুতরাং আপনি ইহাদের অন্যায় আবদার রক্ষা করার জন্য চিন্তিত হইবেন না । যেই কোন মু‘জেআহ দ্বারাই নবীর সত্যতা প্রমাণিত হইয়া যায়। আপনার বড় মু‘জেযাহ্ কোরআন শরীফ তো তাহাদের চোক্ষের সামনেই রহিয়াছে। তবে তাহারা মান্য না করার কী কারণ থাকিতে পারে ? (ব: কো:)
২। সূরা ইউনুস ও বাক্বারার ভাষ্যে একটি সূরার সহিত প্রতিযোগিতার আহবান করা হইয়াছে। এই দুইটি সূরা মদীনায় অবর্তীর্ণ হয়। বর্তমান আলোচ্য আয়াতটি মক্কায় অবতীর্ণ, ইহাতে দশটি সূরার প্রতিযোগিতার জন্য আহবান করা হইয়াছে। অতএব বুঝা যায়, প্রথমে মক্কায় দশটি সূরার প্রতিযোগিতার আহবান করা হইয়াছিল। অপারগ ক্ষেত্রে অন্তত : একটি সূরার প্রতি-যোগিতার জন্য ডাকা হইয়াছে। (ব: কো:)
أُولَـٰئِكَ الَّذِينَ لَيْسَ لَهُمْ فِي الْآخِرَةِ إِلَّا النَّارُ ۖ وَحَبِطَ مَا صَنَعُوا فِيهَا وَبَاطِلٌ مَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ
বাংলা অর্থ:
১৬। ইহারা এমন লোক যে, তাহাদের জন্য আখেরাতে দোযখ ভিন্ন আর কিছুই নাই, আর তাহারা যাহাকিছু করিয়াছিল, তাহা সমস্তই আখেরাতে অকেজো হইবে এবং যাহাকিছু করিতেছে তাহাও বিফল হইবে।
أَفَمَن كَانَ عَلَىٰ بَيِّنَةٍ مِّن رَّبِّهِ وَيَتْلُوهُ شَاهِدٌ مِّنْهُ وَمِن قَبْلِهِ كِتَابُ مُوسَىٰ إِمَامًا وَرَحْمَةً ۚ أُولَـٰئِكَ يُؤْمِنُونَ بِهِ ۚ وَمَن يَكْفُرْ بِهِ مِنَ الْأَحْزَابِ فَالنَّارُ مَوْعِدُهُ ۚ فَلَا تَكُ فِي مِرْيَةٍ مِّنْهُ ۚ إِنَّهُ الْحَقُّ مِن رَّبِّكَ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يُؤْمِنُونَ
বাংলা অর্থ:
১৭। কোরআন অমান্যকারী কি এমন ব্যক্তির সমান হইতে পারে, যে কায়েম আছে কোরআনের উপর- যাহা তাহার রব্বের তরফ হইতে আসিয়াছে এবং উহার সঙ্গে এক সাক্ষী তো উহাতেই বিদ্যামান, আর উহার পূর্বে মূসার কিতাব রহিয়াছে -যাহা অগ্রণী এবং রহমত স্বরূপ ; এমন লোকেরাই এই কোরআনের প্রতি ঈমান রাখে ; আর অন্যান্য সম্প্রদায়ের যে ব্যক্তি এই কোরআন অমান্য করিবে, তবে দোযখ হইবে তাহার প্রতিশ্রুত, অতএব, তুমি কোরআন সম্পর্কে সন্দেহে পতিত হইও না, নি:সন্দেহে উহা সত্য কিতাব তোমার রব্বের সন্নিধান হইতে; কিন্তু অধিকাংশ লোক ঈমান আনে না।
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا ۚ أُولَـٰئِكَ يُعْرَضُونَ عَلَىٰ رَبِّهِمْ وَيَقُولُ الْأَشْهَادُ هَـٰؤُلَاءِ الَّذِينَ كَذَبُوا عَلَىٰ رَبِّهِمْ ۚ أَلَا لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الظَّالِمِينَ
বাংলা অর্থ:
১৮। আর সেই ব্যক্তি হইতে অধিক যালেম কে হইবে, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে? এইরূপ লোকদিগকে পেশ করা হইবে তাহাদের রব্বের হুযূরে এবং সাক্ষী ফেরেশতাগণ বলিবে, ইহারা ঐ লোক যাহারা নিজেদের রব্বের সম্বন্ধে মিথ্যা আরোপ করিয়াছিল, শুনিয়া লও এমন যালেমদের উপর আল্লাহর লা‘নও ।
সূরা হুদ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। অর্থাৎ যাহারা নিজেদের সৎকর্ম দ্বারা ইহকালের সম্পদ জীবনের সৌন্দর্য লাভ করিতে চায় পরকালে সওয়ার প্রাপ্তি তাহাদের উদ্দেশ্য না হয় । তাহাদের কর্মস্থল আমি তাহাদিগকে দুনিয়াতেই দেই।দুনিয়াতে তাহাদের সুখ- শান্তি ও ভোগ বিলাসে কিছুই কম হয় না । অবশ্য তাহারা যদি ভাল -মন্দ উভয়বিধ কাজেই করে তবে কেবল ভাল কাজ মন্দ কাজ ইহতে প্রবল হওয়ার অবস্থায়ই তাহারা দুনিয়াতে উত্তম বির্নিময় প্রাপ্ত হইবে কিন্তু মন্দ কাজ প্রবল হইলে দুনিয়াতেও তাহারা ভাল কজের সুফল পাইবে না । (ব: কো:)
২। এই সাক্ষী হইতেছে কোরআনের অলৌকিকতা গুণ। রচনা-ভঙ্গী, ভাব- মাধুর্য ও ভাষা উচ্চামানের ক্ষমতার উর্ধ্বে হওয়া ।বিবেক বুদ্ধি পরিচালনা করিলে মানুষ ইহার দ্বারাই কোরআনের সত্যতার প্রকৃষ্ট প্রমাণ পাইতে পারে। (ব: কো:)
الَّذِينَ يَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ وَيَبْغُونَهَا عِوَجًا وَهُم بِالْآخِرَةِ هُمْ كَافِرُونَ
বাংলা অর্থ:
১৯। যাহারা অপর কে আল্লাহর পথ হইতে নিবৃত্ত রাখিত এবং উহাতে বক্রতা বাহির করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকিত; আর তাহারা পরকালেরও অমান্যকারী ছিল।
أُولَـٰئِكَ لَمْ يَكُونُوا مُعْجِزِينَ فِي الْأَرْضِ وَمَا كَانَ لَهُم مِّن دُونِ اللَّهِ مِنْ أَوْلِيَاءَ ۘ يُضَاعَفُ لَهُمُ الْعَذَابُ ۚ مَا كَانُوا يَسْتَطِيعُونَ السَّمْعَ وَمَا كَانُوا يُبْصِرُونَ
বাংলা অর্থ:
২০। ইহারা (সমগ্র) ভূপৃষ্ঠে আল্লাহকে অক্ষম করিতে পারে নাই, আর না তাহাদের জন্য আল্লাহ্ ব্যতীত কেহ সহায়কও হইল । এইরূপ লোকদের জন্য দ্বিগুণ শাস্তি হইবে; ইহারা (অবজ্ঞার কারণে আহ্কামসমূহ ) না শুনিতেও পারিতেছিল আর না তাহারা (সত্যপথ) দেখিতেছিল।
أُولَـٰئِكَ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنفُسَهُمْ وَضَلَّ عَنْهُم مَّا كَانُوا يَفْتَرُونَ
বাংলা অর্থ:
২১। ইহারা সেই লোক যাহারা নিজেরা নিজেদের সর্বনাশ করিয়া ফেলিয়াছে, আর যে সমস্ত উপাস্য (দেবতা) তাহারা গড়িয়া রাখিয়াছিল, তাহাদিগ হইতে উহারা সকলে ঊধাও হইয়া গিয়াছে।
لَا جَرَمَ أَنَّهُمْ فِي الْآخِرَةِ هُمُ الْأَخْسَرُونَ
বাংলা অর্থ:
২২। ইহা সুনিশ্চিত যে, আখেরাতে ইহারাই হইবে সবাধিক ক্ষতিগ্রস্ত।
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَأَخْبَتُوا إِلَىٰ رَبِّهِمْ أُولَـٰئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
বাংলা অর্থ:
২৩। নিশ্চয়, যাহারা ঈমান আনিয়াছে এবং নেক কাজগুলি সম্পন্ন করিয়াছে, আর নিজ প্রতিপালকের প্রতি ঝুঁকিয়াছে, এইরূপ লোকেরাই হইতেছে জান্নাতবাসী, (এবং) তাহারা উহাতে অনন্তকাল থাকিবে।
مَثَلُ الْفَرِيقَيْنِ كَالْأَعْمَىٰ وَالْأَصَمِّ وَالْبَصِيرِ وَالسَّمِيعِ ۚ هَلْ يَسْتَوِيَانِ مَثَلًا ۚ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ
বাংলা অর্থ:
২৪। উভয় সম্প্রদায়ের অবস্থা এইরূপ – যেমন এক ব্যক্তি যে অন্ধ এবং বধির, আর এক ব্যক্তি যে দেখিতেও পায় এবং শুনিতেও পায়; এই দুই ব্যক্তি কি তুলনায় সমান হইবে? (কখনও নয়,) তবুও কি তোমরা বুঝ না ।
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَىٰ قَوْمِهِ إِنِّي لَكُمْ نَذِيرٌ مُّبِينٌ
বাংলা অর্থ:
২৫। আর আমি নূহকে রাসূলরূপে তাঁহার কাওমের নিকট প্রেরণ করিয়াছি, (নূহ বলিলেন,) আমি তোমাদের জন্য স্পষ্ট ভয় প্রদর্শনকারী ।
সূরা হুদ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। এক শাস্তি তাহাদের কুফরী আচারণের আর দ্বিতীয় শাস্তি হইবে অপর লোকদিগকে কুফরীর পক্ষে আনয়নের অপচেষ্টার । (ব: কো:)
২। উপরের বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীরা পরিণামের বিবরণ ছিল । সম্মুখের আয়াতে উভয়ের তুলনা এইরূপ , যেমন , এক ব্যক্তি অন্ধ ও বধির ; কথাও শুনে না ইঙ্গিত ও দেখে না ।স্বভাবত: এমন ব্যক্তিকে বুঝাইবার কোন উপায়ই নাই। আর এক ব্যক্তি যে দেখিতে ও শুনিতে পায় । এমন ব্যক্তির পক্ষে কোন কিছু হৃদয়ঙ্গম করা সহজ কাজ । এই দুই ব্যক্তি কি অবস্থা হিসাবে সমান ? কখনই নহে; কাফের এবং মুসলমানের অবস্থাও তদ্রুপ। (ব:কো:)
৩। অর্থাৎ তোমরা আল্লাহকে ছাড়া ভুদ্দ, সুওয়া, ইয়াগূছ, নাছর ইত্যাদি যে সমস্ত উপদেবতা নির্ধারণ করিয়া রাখিয়াছ, উহাদিগকে বর্জন কর।এক আল্লাহ ব্যতীত আর কাহারও এবাদত করিও না । (ব: কো:) ।
أَن لَّا تَعْبُدُوا إِلَّا اللَّهَ ۖ إِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ أَلِيمٍ
বাংলা অর্থ:
২৬। তোমরা খোদা ব্যতীত আর কাহারও এবাদত করিও না; আমি তোমাদের উপর এক ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক দিনের আযাবের আশঙ্কা করিতেছি।
فَقَالَ الْمَلَأُ الَّذِينَ كَفَرُوا مِن قَوْمِهِ مَا نَرَاكَ إِلَّا بَشَرًا مِّثْلَنَا وَمَا نَرَاكَ اتَّبَعَكَ إِلَّا الَّذِينَ هُمْ أَرَاذِلُنَا بَادِيَ الرَّأْيِ وَمَا نَرَىٰ لَكُمْ عَلَيْنَا مِن فَضْلٍ بَلْ نَظُنُّكُمْ كَاذِبِينَ
বাংলা অর্থ:
২৭। অনন্তর তাহার সম্প্রদায়ের মধ্যে যে সমস্ত প্রধানবর্গ কাফের ছিল তাহারা বলিতে লাগিল, আমরা তো তোমাকে আমাদেরই মৃত মানুষ দেখিতে পাইতেছি, আর আমরা দেখিতেছি যে, কেবর সেই লোকেরাই তোমার অনুসরণ করিয়াছে, যাহারা আমাদের মধ্যে নিতান্ত রযীল, তাহাও আবার কেবল স্থ’ল বুদ্ধি অনুসারে, আর আমরা তোমাদের মধ্যে কোন বিষয় আমাদের চেয়ে অধিকও দেখিতেছি না, রবং আমরা তোমাকে মিথ্যাবাদী বলিয়া মনে করি।
قَالَ يَا قَوْمِ أَرَأَيْتُمْ إِن كُنتُ عَلَىٰ بَيِّنَةٍ مِّن رَّبِّي وَآتَانِي رَحْمَةً مِّنْ عِندِهِ فَعُمِّيَتْ عَلَيْكُمْ أَنُلْزِمُكُمُوهَا وَأَنتُمْ لَهَا كَارِهُونَ
বাংলা অর্থ:
২৮। নূহ বলিলেন, হে আমার কাওম !আচ্ছা বল তো, আমি যদি স্বীয় প্রতিপালকের পক্ষ হইতে প্রমাণের উপর (প্রতিষ্ঠিত হইয়া) থাকি এবং তিনি আমাকে নিজ সন্নিধান হইতে রহমত (নুবওয়াত) দান করিয়া থাকেন, অত:পর উহা তোমাদের বোধগম্য না হয়; তবে কি আমরা উহা তোমাদের গলদেশে জড়াইয়া দিব, অথচ তোমরা তাহা অবজ্ঞা করিতে থাক?
وَيَا قَوْمِ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مَالًا ۖ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَى اللَّهِ ۚ وَمَا أَنَا بِطَارِدِ الَّذِينَ آمَنُوا ۚ إِنَّهُم مُّلَاقُو رَبِّهِمْ وَلَـٰكِنِّي أَرَاكُمْ قَوْمًا تَجْهَلُونَ
বাংলা অর্থ:
২৯। হে আমর কাওম ! আমি ইহাতে তোমাদের নিকট কোন ধন- স্পদ চাহিন; আমার নিবিময় তো কেবল আল্লাহর যিম্মায়, আর আমি তো এই ঈমানদারদিগকে বাহির করিয়া দিতে পারি না; তাহারা নিজেদের রব্বের সমীপে গমনকারী, পরন্তু তোমাদিগকে দেখিতেছি যে, বোকামি করিতেছ।
وَيَا قَوْمِ مَن يَنصُرُنِي مِنَ اللَّهِ إِن طَرَدتُّهُمْ ۚ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ
বাংলা অর্থ:
৩০। আর হে আমার কাওম ! আমি যদি তাহাদিগকে বাহির করিয়াই দেই, তবে আল্লাহর ধৃত হইতে কে আমাকে বাঁচাইবে? তোমরা কি এতটুকু বুঝ না?
সূরা হুদ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। অর্থাৎ যাহারা তোমার তাবেদারী করিতেছে, একে তো তাহারা নিতান্ত বুদ্ধিহীন । দ্বিতীয়ত: এই বিষয়ে তাহারা মোটেই চিন্তাকরে নাই। কেবল খামখেয়ালীতে তোমরা অনুসরণ করিয়াছে। সুতরাং এই সমস্ত লোকের অনুসরণ তোমরা নুবুওয়াতের প্রমাণ হইতে পারে নআ ; বরং আমরর শরীফদের তোমরা অনুসরণ করার পক্ষে ইহা একটি অন্তরায় । (ব: কো:)
২। অর্থাৎ তোমরা বলিতেছ, মানুষের পক্ষে নবী হওয়া অসম্ভব । কিন্তু এই কথার কোন প্রমাণ তোমাদের নিকট নাই, অথচ আমার নিকট মুজেযাহ ইত্যাদি রহিয়াছে । যাহা নুবুওয়াতের সত্যতার প্রমাণ। আমি এই কথা বলি নাই যে, লোকের অনুগমন করা আমার নুবুওয়াতের প্রমাণ। অতএব, ইহা নুবুওয়াতের প্রমাণ হইতে না পারা সম্বন্ধে তোমরা ইে কূটতর্ক উঠাইয়াছ, তাহা ভিত্তিহীন।(ব: কো:)
৩। হযরত নূহের উপরোক্ত বিবৃতির ফলে কাফেরদের যাবতীয় কূটতর্কের অবসান ঘটিল। এখন উত্তরে আরও বলিতেছেন যে, আমর নবুওয়াতের পক্ষে যে, প্রমাণ রহিয়াছে তাহা সাব্যস্তহইয়া গেল ।সুতরাং তোমরা ইহাকে অসম্ভব বলাতে কোন ক্ষতি বৃদ্ধি নাই। কেননা প্রমাণের নিকট সম্ভবতা অসম্ভবতা কোন স্থান নাই। বস্তুত: আামি কোন বিচিত্র বিষয়ের দাবি করি নাই। তেমন হইলে অবশ্র অসম্ভব মনে করিয়া তৎপ্রতি অবিশ্বাস করা অশোভনীয় ইহত না; কিন্তু প্রমাণ স্থাপিত হওয়ার পর সেই ওযরও অচল । হাঁ, যদি অসম্ভবতার পক্ষে কোন দলীল থাকিত, তবে উহার অনুসরণ করা কর্তব্য হইত; কিন্তু তেমন কোন বিচিত্র অসম্ভব দাবি তো আমি করি নাই। (ব: কো:)
وَلَا أَقُولُ لَكُمْ عِندِي خَزَائِنُ اللَّهِ وَلَا أَعْلَمُ الْغَيْبَ وَلَا أَقُولُ إِنِّي مَلَكٌ وَلَا أَقُولُ لِلَّذِينَ تَزْدَرِي أَعْيُنُكُمْ لَن يُؤْتِيَهُمُ اللَّهُ خَيْرًا ۖ اللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا فِي أَنفُسِهِمْ ۖ إِنِّي إِذًا لَّمِنَ الظَّالِمِينَ
বাংলা অর্থ:
৩১। আর আমি তোমাদিগকে এই কথা বলি না যে, আমার নিকট আল্লাহর সকল ভান্ডার রহিয়াছে, আর না আমি সমস্ত গায়েবের কথা জানি আর না ইহাও বলি যে, আমি ফেরেশতা, আর যাহারা তোমাদের চক্ষে হীন, আমি তাহাদের সম্বন্ধে ইহা বলিতে পারি না যে, আল্লাহ তা‘আলা কখনও কখনও তাহাদিগকে সওয়াব দিবেন না তাহাদের অন্তরে যাহাকিছু আছে তাহা আল্লাহ তা‘আলাই উত্তমরূপে জানেন আমি তো এইরূপ বলিলে অন্যায়ই করিয়া ফেলিব।
قَالُوا يَا نُوحُ قَدْ جَادَلْتَنَا فَأَكْثَرْتَ جِدَالَنَا فَأْتِنَا بِمَا تَعِدُنَا إِن كُنتَ مِنَ الصَّادِقِينَ
বাংলা অর্থ:
৩২। তাহারা বলিল হে নূহ ! তুমি আমাদের সহিত বির্তক করিয়াছ, অনন্তর সেই বির্তক অনেক বেশী করিয়াছ, সুতরাং যে সম্বন্ধে তুমি আমাদিগকে ভয় দেখাইতেছ তাহা আমাদের সম্মুখে আন, যদি তুমি সত্য বাদী হও্।
قَالَ إِنَّمَا يَأْتِيكُم بِهِ اللَّهُ إِن شَاءَ وَمَا أَنتُم بِمُعْجِزِينَ
বাংলা অর্থ:
৩৩। তিনি(নূহ) বলিলেন, তাহা তো আল্লাহর তোমাদের সম্মুখে আনয়ন করিবেন তাহার ইচ্ছা হইলে এবং তোমরা তাহাকে অক্ষম করিতে পারিবে না।
وَلَا يَنفَعُكُمْ نُصْحِي إِنْ أَرَدتُّ أَنْ أَنصَحَ لَكُمْ إِن كَانَ اللَّهُ يُرِيدُ أَن يُغْوِيَكُمْ ۚ هُوَ رَبُّكُمْ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ
বাংলা অর্থ:
৩৪। আর আমার মঙ্গল কামনা (নসীহত) কর তোমাদের কাজে আসিতে পারে না আমি তোমাদের যতই মঙ্গল কামনা করিতে চাই না কেন, যখন আল্লাহরই তোমাদিগকে পথভ্রষ্ট করার ইচ্ছা হয়। তিনিই তোমাদের মালিক । আর তাঁহারই নিকট তোমাদিগকে ফিরিয়া যাইতে হইবে।
أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ ۖ قُلْ إِنِ افْتَرَيْتُهُ فَعَلَيَّ إِجْرَامِي وَأَنَا بَرِيءٌ مِّمَّا تُجْرِمُونَ
বাংলা অর্থ:
৩৫। তবে কি ইহারা (মক্কার কাফেরেরা) বলে, মোহাম্মদ এই কোরআন নিজেই রচনা করিয়া লইয়াছেন ? আপনি বলিয়া দিন, যদি আমি তাহা নিজে রচনা করিয়া থাকি, তবে আমার এই অপরাধ আমার উপর বর্তিবে, আর (যদি তোমরা অমূলক দাবী করিয়া থাক তবে) আমি তোমাদের এই অপরাধ হইতে সম্পূর্ণ নিদায়।
সূরা হুদ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। খোদার এইরূপ ইচ্ছা হওয়ার কারণ তোমাদের অন্তনিহিত হিংসা ও অহংকার । তোমরা নিজেরাই হিংসানল এবং অহংকাররূপ মারাত ব্যাধিকে পোষণ করিয়া নিজেদের সৌভাগ্যের পথ বন্ধ করিয়াছ । (ব: কো:)
وَأُوحِيَ إِلَىٰ نُوحٍ أَنَّهُ لَن يُؤْمِنَ مِن قَوْمِكَ إِلَّا مَن قَدْ آمَنَ فَلَا تَبْتَئِسْ بِمَا كَانُوا يَفْعَلُونَ
বাংলা অর্থ:
৩৬। আর নুহের প্রতি ওহী প্রেরিত হইল যে, যাহারা ঈমান আনিয়াছে তাহারা ব্যতীত তোমার কাওম হইতে আর কেহই ঈমান আনিবে না, অতএব, যাহা তাহারা করিতেছে তাহাতে মোটেই দু:খ করিও না।
وَاصْنَعِ الْفُلْكَ بِأَعْيُنِنَا وَوَحْيِنَا وَلَا تُخَاطِبْنِي فِي الَّذِينَ ظَلَمُوا ۚ إِنَّهُم مُّغْرَقُونَ
বাংলা অর্থ:
৩৭। আর তুমি আমার তত্ত্বাবধানে ও আমার নির্দেশক্রমে নৌকা নিমার্ণ করিয়া লও; আর আমার নিকট কাফেরদের সম্বন্ধে কোন কথা বলিও না তাহাদের সকলকে নিমজ্জিত করা হইব।
وَيَصْنَعُ الْفُلْكَ وَكُلَّمَا مَرَّ عَلَيْهِ مَلَأٌ مِّن قَوْمِهِ سَخِرُوا مِنْهُ ۚ قَالَ إِن تَسْخَرُوا مِنَّا فَإِنَّا نَسْخَرُ مِنكُمْ كَمَا تَسْخَرُونَ
বাংলা অর্থ:
৩৮। আর তিনি নৌকা তৈয়ার করিতে লাগিলেন। আর যখনই তাঁহার কাওমের প্রধানদিগের কোন দলের তাঁহার নিকট দিয়া যাতায়াত হইত, তখনই তাঁহার সহিত উপহাস করিত, তিনি বলিতেন যদি তোমরা আমাদিগকে উপহাস কর, তবে আমরাও তোমাদেরকে উপহাস করি, যেমন তোমরা আমাদের উপহাস করিতেছ ;
فَسَوْفَ تَعْلَمُونَ مَن يَأْتِيهِ عَذَابٌ يُخْزِيهِ وَيَحِلُّ عَلَيْهِ عَذَابٌ مُّقِيمٌ
বাংলা অর্থ:
৩৯। সুতরাং সত্বরই জানিতে পারিবে যে, সে কোন ব্যক্তি যাহার উপর এমন আযাব আসার উপক্রম হইয়াছে যাহা তাহাকে লাঞ্ছিত করিয়া দিবে এবং তাহার উপর চিরস্থায়ী আযাব নাযিল হইবে।
حَتَّىٰ إِذَا جَاءَ أَمْرُنَا وَفَارَ التَّنُّورُ قُلْنَا احْمِلْ فِيهَا مِن كُلٍّ زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ وَأَهْلَكَ إِلَّا مَن سَبَقَ عَلَيْهِ الْقَوْلُ وَمَنْ آمَنَ ۚ وَمَا آمَنَ مَعَهُ إِلَّا قَلِيلٌ
বাংলা অর্থ:
৪০। অবশেষে যখন আমার ফরমান আসিয়া পৌািছল এবং যমীন হইতে পানি উথালিয়া উঠিতে লাগিত আমি বলিলাম, প্রত্যেক শ্রেনী (-র প্রানী) হইতে এক একটি নর ও এক একটি মাদী অর্থাৎ দুই দুইটি করিয়া উহাতে উঠাইয়া লও এবং নিজ পরিবার বর্গকেও তাহাকে ছাড়া যাহার সম্বন্ধে পূর্বে নির্দেশ হইয়া গিয়াছে এবং অন্যান্য ঈমানদারদিগকেও আর অল্প কতকজন ব্যতীত কেহই তাহার সহিত ঈমান আনে নাই।
সূরা হুদ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। ইবনে আব্বাস (রা:)বলেন নৌকা কিরূপে নির্মাণ করিতে হয়, নূহ (আ:) তাহা জানিতেন না ।ওহী আসিল মুরগীর বুকের ন্যায় করিয়া বানাও । ওহী অনুযায়ী নৌকা নির্মাণের জন্য একটি শাল বৃক্ষ রোপন করিলেবিশ বৎসর তাহা এত বড় হইয়া গেল যে উহা দ্বারাই পূর্ণ নৌকা নির্মিত হইয়া গেল। এই বিশ বৎসরের মধ্যে সম্প্রদায়ে কোন শিশু জন্ম গ্রহন করে নাই পূর্বের শিশুরা ইতিমধ্যে বালেগ হইয়া নিজ নিজ পিতার অনুগামী হইল ।নূহ (আ:) উক্ত বৃক্ষ দ্বারা বার শত গজ লম্বা, সুগভীর একটি নৌকা নির্মাণ করিয়া ১ম তলায় পক্ষী ২য়তলায় জন্তু ৩য় তলায় আববাবপত্র সহ মানুষের স্থান করিয়া দিলেন। (মু: কো:)
২। নূহ (আ:) ময়দানে নৌকা নিমাণ করাকালে কাফেরেরা বিদ্রুপ করিয়া বলিত, প্রথম তো নবী সাজিলেন এখন ছুতার মিস্ত্রী হইলেন পানি নাই নৌকা নির্মান করিতেছেন ইত্যাদি। (মু: কো:)
وَقَالَ ارْكَبُوا فِيهَا بِسْمِ اللَّهِ مَجْرَاهَا وَمُرْسَاهَا ۚ إِنَّ رَبِّي لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ
বাংলা অর্থ:
৪১। আর নূহ বলিলেন এই নৌকায় আরোহণ কর, ইহার গতি ও ইহার স্থিতি আল্লাহরই নামে। নিশ্চয়, আমার রব অতি ক্ষমাশীল, দয়াবান।
وَهِيَ تَجْرِي بِهِمْ فِي مَوْجٍ كَالْجِبَالِ وَنَادَىٰ نُوحٌ ابْنَهُ وَكَانَ فِي مَعْزِلٍ يَا بُنَيَّ ارْكَب مَّعَنَا وَلَا تَكُن مَّعَ الْكَافِرِينَ
বাংলা অর্থ:
৪২। আর সেই নৌকাখানা তাহাদিগকে লইয়া পর্বততুল্য তরঙ্গের লাগিল। আর নূহ স্বীয় পুত্রকে ডাকিলেন এবং সে ছিল ভিন্ন স্থানে। হে আমার প্রিয় পুত্র! সওয়ার হইয়া যাও আমাদের সাথে এবং কাফেরদের সঙ্গে থাকিও না ।
قَالَ سَآوِي إِلَىٰ جَبَلٍ يَعْصِمُنِي مِنَ الْمَاءِ ۚ قَالَ لَا عَاصِمَ الْيَوْمَ مِنْ أَمْرِ اللَّهِ إِلَّا مَن رَّحِمَ ۚ وَحَالَ بَيْنَهُمَا الْمَوْجُ فَكَانَ مِنَ الْمُغْرَقِينَ
বাংলা অর্থ:
৪৩। সে বলিল, আমি এখনই কোন পাহাড়ে আশ্রয় গ্রহণ করিব যাহা আমাকে পানি হইতে রক্ষা করিবে; নূহ বলিলেন, আজ আল্লাহর কহর হইতে কেহই রক্ষাকারী নহে কিন্তু যাহার প্রতি তিনি রহম করেন, আর তাহাদের উভয়ের মধ্যে একটি তরঙ্গ অন্তরাল হইয়া পড়িল, অত:পর সে ডুবিয়া গেল।
وَقِيلَ يَا أَرْضُ ابْلَعِي مَاءَكِ وَيَا سَمَاءُ أَقْلِعِي وَغِيضَ الْمَاءُ وَقُضِيَ الْأَمْرُ وَاسْتَوَتْ عَلَى الْجُودِيِّ ۖ وَقِيلَ بُعْدًا لِّلْقَوْمِ الظَّالِمِينَ
বাংলা অর্থ:
৪৪। আর আদেশ হইল, হে যমীন! স্বীয় পানি চুষিয়া লও এবং হে আসমান ! থামিয়া যাও, তখন পানি কমিয়া গেল ও ঘটনার পরিসমাপ্তি ঘটিল, আর নৌকা জুদী(পাহাড়) এর উপর আসিয়া থামিল। আর বলা হইল যে, কাফেররা রহমত হইতে দূরে।
وَنَادَىٰ نُوحٌ رَّبَّهُ فَقَالَ رَبِّ إِنَّ ابْنِي مِنْ أَهْلِي وَإِنَّ وَعْدَكَ الْحَقُّ وَأَنتَ أَحْكَمُ الْحَاكِمِينَ
বাংলা অর্থ:
৪৫। আর নূহ নিজ রব্বকে ডাকিলেন এবং বলিলেন, হে আমার পরওয়ারদেগার ! আমার এই পুত্রটি আমার পরিবারবর্গেরই অন্তর্ভুক্ত, আর আপনার ওয়াদা ও সম্পূর্ণ সত্য এবং আপনি আহকামূল হাকিমীন।
সূরা হুদ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, নূহ (আ:) নৌকাটি থামাইতে ইচ্ছা করিলে বিসমিল্লাহ এবং চালাইতে চাহিলেও বিসমিল্লাহ বলিতেন। এইরূপ তিনি নিজের সঙ্গীদিগকে বিসমিল্লাহ শিখাইলেন । (মু: কো:)
২। নূহ পুত্র কেন – আন তখন নৌকার নিকটেই দন্ডায়মান ছিল। নূহ (আ:) তাহাকে ঈমানদার বলিয়া জানিতেন, এই জন্য বলিয়া ছিলেন, বৎস আমাদের সঙ্গে নৌকায় আহরন কর ছেলেটি আসলে মুনাফেকী করিত। (মু: কো:)
৩। নূহ (আ:) রজব মাসের দশ তারিখে নৌকায় আরোহন করেন । ছয় মাস কাল সারা বিশ্ব পরিভ্রমন করিয়া মুহাররম মাসের দশ তারিখ আশুরার দিন তাহার নৌকা সিরিয়া অথবা মূছেলের অন্তর্গত ‘জুদী” পাহাড়ের চূড়ায় মৃত্তিকা সংলগ্ন হয়। ইহাতে বুঝাা যায়, প্লাবনের পানি পর্বত চূড়ায় অতিক্রম করিয়া ছিল। (মু:কো:)
قَالَ يَا نُوحُ إِنَّهُ لَيْسَ مِنْ أَهْلِكَ ۖ إِنَّهُ عَمَلٌ غَيْرُ صَالِحٍ ۖ فَلَا تَسْأَلْنِ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ ۖ إِنِّي أَعِظُكَ أَن تَكُونَ مِنَ الْجَاهِلِينَ
বাংলা অর্থ:
৪৬। আল্লাহ বলিলেন, হে নূহ! এই ব্যক্তি তোমার পরিবারবগৃ হইতে নহে সে অসৎ কর্মপরায়ণ অতএব, আমার নিকট এমন বিষয়ের আবেদন করিও না যে সম্বেন্ধে তোমার জানা নাই; আমি তোমাকে নসীহত করিতেছি যে, তুমি অজ্ঞ লোকদের অন্তভুক্ত হইও না।
قَالَ رَبِّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَسْأَلَكَ مَا لَيْسَ لِي بِهِ عِلْمٌ ۖ وَإِلَّا تَغْفِرْ لِي وَتَرْحَمْنِي أَكُن مِّنَ الْخَاسِرِينَ
বাংলা অর্থ:
৪৭। তিনি আরয করিলেন, হে আমার রব্ব! আমি আপনার নিকট এমন বিষয়ের আবেদন করা হইতে পাহাহ্ চাহিতেছি, যে সম্বন্ধে আমর এলম নাই; আর যদি আপনি আমাকে ক্ষমা না করেন এবং আমার প্রতি দয়া না করেন, তবে আমি সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হইয়া যাইব।
قِيلَ يَا نُوحُ اهْبِطْ بِسَلَامٍ مِّنَّا وَبَرَكَاتٍ عَلَيْكَ وَعَلَىٰ أُمَمٍ مِّمَّن مَّعَكَ ۚ وَأُمَمٌ سَنُمَتِّعُهُمْ ثُمَّ يَمَسُّهُم مِّنَّا عَذَابٌ أَلِيمٌ
বাংলা অর্থ:
৪৮। বলা হইল যে, হে নূহ ! অবতরণ কর আমার পক্ষ হইতে সালাম ও বরকতসমূহ লইয়া – যাহা তোমার উপর নাযিল হইবে এবং সেই দলসমূহের উপর যাহারা তোমার সঙ্গে রহিয়াছে, আর অনেক দল এইরূপও হইবে যাহাদিগকে আমি কিছুকাল (দুনিয়ার ) সুখ- স্বাচ্ছন্দ্য দান করিব, তৎপর তাহাদের উপর পতিত হইবে আমার পক্ষ হইতে কঠোর শাস্তি।
تِلْكَ مِنْ أَنبَاءِ الْغَيْبِ نُوحِيهَا إِلَيْكَ ۖ مَا كُنتَ تَعْلَمُهَا أَنتَ وَلَا قَوْمُكَ مِن قَبْلِ هَـٰذَا ۖ فَاصْبِرْ ۖ إِنَّ الْعَاقِبَةَ لِلْمُتَّقِينَ
বাংলা অর্থ:
৪৯। উহা গায়েবী সংবাদসমূহের অন্তর্গত যাহা ওহী মারফত আপনাকে পৌছাই , ইতিপূর্বে উহা না আপনি জানিতেন আর না আপনার কাওম; অতএব, ধৈর্য ধরুন; নিশ্চয় শুভ- পরিণাম মুক্তাক্কীদের জন্যই।
وَإِلَىٰ عَادٍ أَخَاهُمْ هُودًا ۚ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـٰهٍ غَيْرُهُ ۖ إِنْ أَنتُمْ إِلَّا مُفْتَرُونَ
বাংলা অর্থ:
৫০। আর আ‘দ (সম্প্রদায) এর প্রতি তাহাদের ভাই হূদকে (রাসূলরূপে ) প্রেরণ করিলাম; তিনি বলিলেন: হে আমার কাওম ! তোমরা আল্লাহর এবাদত কর, তিনি ব্যতীত কেহ তোমাদের মা‘বুদ নাই; তোমরা কেবল মিথ্যা উদ্ভাবনকারী ।
يَا قَوْمِ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا ۖ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَى الَّذِي فَطَرَنِي ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
বাংলা অর্থ:
৫১। হে আমার কাওম ! আমি ইহার জন্য তোমাদের নিকট কোন বিনিময় চাই না, আমার বিনিময় কেবল তাঁহারই যিম্মায় রহিয়াছে যিনি আমাকে সৃষ্টি করিয়াছেন; তুবও কি বুঝ না ?
সূরা হুদ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। অর্থাৎ সে ঈমান পাত্র নহে। অতএব আমার নিকটএমন বিষয়ের অনুরোধ করিও না যাহা তোমার জ্ঞাত নহে। (ব: কো:)
২। নৌকা জুদী পাহাড়ের চূড়ায় কিছুদিন অবস্থানের পর যখন পানি কমিয়া গেল তখন আল্লাহ তাআলা বলিলেন, নৌকা হইতে যমীনের উপর অবতরণ কর । (ব: কো: )
৩। বলা বাহুল্য মুসলমানেরাই নৌকায় তাহার সঙ্গী ছিল মুসলমান হওয়ার কারণেই হযরত নূহের সঙ্গীদের প্রতি সালাম ও বরকত বর্ষিত হইয়াছিল সুতরাং ক্বিয়ামত পর্যন্তসমস্ত মুসলমানের প্রতিই খোদার পক্ষ হইতে যে সালাম ও বরকত বর্ষিত হইবে তাহা স্পষ্টই বুঝা যায় । নৌকায় আরোহী মুসলমানদের মধ্যে একমাত্র নূহ (আ:) ভিন্ন অন্য কাহারও বংশ অবশিষ্ট থাকে নাই। হযরত নূহের তিন পুত্রের বংশধরগনই পরবতী দুনিয়া আবাদ করিয়াছে। এই কারণে হযরত নূহকে দ্বিতীয় আদম বলা হয়। (ব: কো:)
وَيَا قَوْمِ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُم مِّدْرَارًا وَيَزِدْكُمْ قُوَّةً إِلَىٰ قُوَّتِكُمْ وَلَا تَتَوَلَّوْا مُجْرِمِينَ
বাংলা অর্থ:
৫২। আর হে আমার কাওম ! তোমরা নিজেদের পাপ নিজ রব্ব হইতে মাফ করাইয়া লও, অত:পর তাহারই পানে নিবিষ্ট হও; তিনি তোমাদের উপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করিবেন এবং তোমাদিগকে আরও শক্তি প্রদান করিয়া তোমাদের শক্তিকে বর্ধিত করিয়া দিবেন, আর মুখ ফিরাইও না পাপে লিপ্ত থাকিয়া ।
قَالُوا يَا هُودُ مَا جِئْتَنَا بِبَيِّنَةٍ وَمَا نَحْنُ بِتَارِكِي آلِهَتِنَا عَن قَوْلِكَ وَمَا نَحْنُ لَكَ بِمُؤْمِنِينَ
বাংলা অর্থ:
৫৩। তাহারা উত্তর করিল হে হূদ! আপনি আমাদের সম্মুখে কোন প্রমাণ তো উপস্থাপিত করেন নাই এবং আমরা আপনার কথায় তো আমাদের উপাস্য দেবতাদিগকে বর্জন করিতে পারি না এবং আমরা কিছুতেই আপনার প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী নহি।
إِن نَّقُولُ إِلَّا اعْتَرَاكَ بَعْضُ آلِهَتِنَا بِسُوءٍ ۗ قَالَ إِنِّي أُشْهِدُ اللَّهَ وَاشْهَدُوا أَنِّي بَرِيءٌ مِّمَّا تُشْرِكُونَ
বাংলা অর্থ:
৫৪। আমাদের কথা তো এই যে, আমাদের উপাস্য দেবতাদের মধ্যে হইতে কেহ আপনাকে দুদশায় ফেলিয়া দিয়াছে; হূদ বলিলেন, আমি আল্লাহকে সাক্ষী করিতেছি এবং তোমরাও সাক্ষী থাক, আমি ঐ সমস্ত বস্তুর প্রতি অসন্তুষ্ট যাহাদিগকে তোমরা শরীক সাব্যস্ত করিতেছ ।
مِن دُونِهِ ۖ فَكِيدُونِي جَمِيعًا ثُمَّ لَا تُنظِرُونِ
বাংলা অর্থ:
৫৫। আল্লাহকের ছাড়িয়া অনন্তর তোমরা সকলে মিীলয়া আমার বিরুন্ধে ষড়যন্ত্র চালাও, অত:পর আমাকে সামন্য অবকাশও দিও না ।
إِنِّي تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ رَبِّي وَرَبِّكُم ۚ مَّا مِن دَابَّةٍ إِلَّا هُوَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهَا ۚ إِنَّ رَبِّي عَلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
বাংলা অর্থ:
৫৬। আমি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করিয়াছি- যিনি আমারও রব্ব এবং তোমাদের ও রব্ব; ভূপৃষ্ঠে যত বিচরণকারী আছে সকলের ঝুটিই তাহার মুষ্টিতে আবদ্ধ; নিশ্চয় আমার রব্ব সকর পথে অবস্থিত।
সূরা হুদ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। সকল রসূলই স্বীয় সম্প্রদায়ের নিকট নিজের নি:স্বার্ধতা এবং নিলোভ হওয়ার কথা ঘোষণা করিয়া থাকেন, যেন লোকে তাহাদিগকে কোন অপবাদ নিতে না পারে এবং উপদেশ ও খাঁটি হয় । কেননা পার্থিব স্বার্থ বিজড়িত না হইলেই উপদেশ ফলপ্রদ হয় ।এই জন্যই হূদ (আ:) এই কথা ঘোষণা করিয়া ছিলেন ।(মু: কো:)
২। তাহাদের এই অপকর্মের শাস্তিস্বরূপ আল্লাহ্ তাআলা তিন বৎসর পর্যন্ত তাহাদের প্রতি বৃষ্টি বষণ বন্ধ করিয়া দিলেন।তাহাদের স্ত্রী ও পুরুষদিগকে বন্ধ্যা করিয়া দিলেন । হইরা কৃষিজীবি এবং শত্রু বেষ্টিত ছিল। সুতরাং আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত ও জনবল হীন হইয়া গেল (মু: কো:)
৩। অর্থাৎ কাফেরদের ধারনা, যেহেতু আপনি উহাদের অবমাননা করিয়াছেন, এইজন্য উহাদের কেহ আপনার মস্তিষ্ক বিগড়াইয়া দিয়াছে। কাজেই আপনি এইরূপ প্রলাপোক্তি করিতেছেন । (ব: কো:)
فَإِن تَوَلَّوْا فَقَدْ أَبْلَغْتُكُم مَّا أُرْسِلْتُ بِهِ إِلَيْكُمْ ۚ وَيَسْتَخْلِفُ رَبِّي قَوْمًا غَيْرَكُمْ وَلَا تَضُرُّونَهُ شَيْئًا ۚ إِنَّ رَبِّي عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ حَفِيظٌ
বাংলা অর্থ:
৫৭। অত:পর যদি তোমরা ফিরিয়া থাক, তবে আমাকে যে পয়গাম দিয়া তোমাদের প্রতি পাঠান হইয়াছে, আমি তো উহা তোমাদের নিকট পৌছিইয়াছি; আর আমার পয়ওয়াদেগার ভূপৃষ্ঠে তোমাদের স্থলে অন্য লোকদিগকে আবাদ করিয়া দিবেন, এবং তোমরা তাহার কিছু ক্ষতি করিতেছ না; নিশ্চয় আমার রব্ব প্রত্যেক বস্তুর নেগাহবানী করিয়া থাকেন।
وَلَمَّا جَاءَ أَمْرُنَا نَجَّيْنَا هُودًا وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ بِرَحْمَةٍ مِّنَّا وَنَجَّيْنَاهُم مِّنْ عَذَابٍ غَلِيظٍ
বাংলা অর্থ:
৫৮। আর যখন আমার (আযাবের ) হুকুম আসিয়া পৌছিল, তখন আমি হূদকে এবং যাহারা তাঁহার সঙ্গে ঈমানদার ছিল তাহাদিগকে স্বীয় অনুগ্রহে ক্ষমা করিলাম, আর তাহাদিগকে বাঁচাইয়া লইলাম অতি কঠিন আযাব হইতে।
وَتِلْكَ عَادٌ ۖ جَحَدُوا بِآيَاتِ رَبِّهِمْ وَعَصَوْا رُسُلَهُ وَاتَّبَعُوا أَمْرَ كُلِّ جَبَّارٍ عَنِيدٍ
বাংলা অর্থ:
৫৯। আর ইহারা ছিল আ‘দ সম্প্রদায় যাহারা নিজেদের রব্বে নিদর্শনগুলিকে অস্বীকার করিল এবং তাহার রাসূলগণের কথা মানিল না, পক্ষান্তরে তাহারা সর্ম্পর্ণরূপে এমন লোকদের কথা চলিতে লাগিল, যাহারা ছিল যালেম হঠকারী ।
وَأُتْبِعُوا فِي هَـٰذِهِ الدُّنْيَا لَعْنَةً وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ ۗ أَلَا إِنَّ عَادًا كَفَرُوا رَبَّهُمْ ۗ أَلَا بُعْدًا لِّعَادٍ قَوْمِ هُودٍ
বাংলা অর্থ:
৬০। আর এই দুনিয়াতে ও লা‘নত তাহাদের সঙ্গে সঙ্গে রহিল এবং কিয়ামতের দিনও; ভালরূপে শুনিয়া রাখ ! আ‘দ নিজ প্রতিপালকের সঙ্গে কুফর করিল; (আরও) শুনিয়া রাখ, দূরে পড়িয়া গেল রহমত হইতে আ‘দ যাহারা হূদের কাওম ছিল ।
وَإِلَىٰ ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَالِحًا ۚ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـٰهٍ غَيْرُهُ ۖ هُوَ أَنشَأَكُم مِّنَ الْأَرْضِ وَاسْتَعْمَرَكُمْ فِيهَا فَاسْتَغْفِرُوهُ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ ۚ إِنَّ رَبِّي قَرِيبٌ مُّجِيبٌ
বাংলা অর্থ:
৬১। আর আমি সামূদ (সম্প্রদায় ) এর নিকট তাহাদের ভ্রাতা ছালেহকে নবীরূপে প্রেরণ করিলাম । তিনি বলিলেন, হে আমার কাওম ! তোমরা আল্লাহর এবাদত করি, তিনি ব্যতীত কেহ তোমাদের মাবূদ নাই; তিনি তোমাদিগকে যমীন হইতে পয়দা করিয়াছেন এবং তোমাদিগকে তাহাতে আবাদ করিয়াছেন, অতএব তোমরা নিজেদের পাপ তাহা হইতে মাফ করাইয়া লও, অত:পর মনোনিবেশ কর তাহারই দিকে; নিশ্চয়ই আমার রব্ব নিকটে আছেন, (আবেদন) গ্রহণকারী ।
সূরা হুদ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। অর্থাৎ আদ সম্প্রদায় যখন হূদ (আ:) এর উপদেশ মানিল না, তখন প্রবল ঝঞ্ঝা বায়ু তাহাদের উপর পতিত হইল । কিংবা এখানে কঠোর আযাব বলিতে পারলৌকিক আযাব ও উদ্দেশ্য হইতে পারে । এই ক্বওমেরআযাব এইরূপ কঠোর ইহবে যে, দোযখের আগুনের তাপ তাহাদের গলদেশ দিয়া প্রবেশ করিয়া মস্তিষ্ক গলাইয়া, অঙ্গ – প্রত্যঙ্গ খসাইয়া ফেলিবে। (মু : কো:)।
২। এখানে বলা হইয়াছে, আদ সম্প্রদায় রসূলগণের কথা মান্য করে নাই । অথচ তাহাদের এক মাত্র নবী হূদ (আ:) ছিলেন। আসল কথা এই যে, সকল নবীর সকল নবীর শিক্ষার মূলগত বিষয় হইল তাওহীদ ।কাজেই এক রসূলকে অমান্য করিলে সকল রসূলকে অমান্য করা হয় । (ব: কো:)
৩। প্রথম আদ সম্প্রদায হযরত হূদের উম্মত ছিল । আর দ্বিতীয় আদ সম্প্রদায়, যাহারা আদে ইরাম নামে পরিচিত তাহারা সামূদ সম্প্রদায়ের সহিত ধ্বংস প্রাপ্ত হইয়াছিল (মু: কো:)
قَالُوا يَا صَالِحُ قَدْ كُنتَ فِينَا مَرْجُوًّا قَبْلَ هَـٰذَا ۖ أَتَنْهَانَا أَن نَّعْبُدَ مَا يَعْبُدُ آبَاؤُنَا وَإِنَّنَا لَفِي شَكٍّ مِّمَّا تَدْعُونَا إِلَيْهِ مُرِيبٍ
বাংলা অর্থ:
৬২। তাহারা বলিল, হে ছালেহ! তুমি তো ইতিপূর্বে আমাদের মধ্যে আশা-ভরসাস্থল ছিলে তুিম কি আমাদিগকে ঐ বস্তুুর উপাসনা করিতে নিষেধ করিতেছ – যাহাদের উপাসনা আমাদের পিতৃ-পুরুষেরা করিয়া আসিয়াছে ? আর যে ধর্মের দিকে তুমি আমাদিগকে ডাকিতেছ, বস্তুত: আমরা তো তৎসস্বন্ধে গভীর সন্দেহে আছি, যাহা আমাাদিগকে দ্বিধা – দ্বন্ধে ফেলিয়া রাখিয়াছে।
قَالَ يَا قَوْمِ أَرَأَيْتُمْ إِن كُنتُ عَلَىٰ بَيِّنَةٍ مِّن رَّبِّي وَآتَانِي مِنْهُ رَحْمَةً فَمَن يَنصُرُنِي مِنَ اللَّهِ إِنْ عَصَيْتُهُ ۖ فَمَا تَزِيدُونَنِي غَيْرَ تَخْسِيرٍ
বাংলা অর্থ:
৬৩। তিনি বলিলেন, হে আমার কাওম। আমি নিজ রব্বের পক্ষ হইতে প্রমাণের উপর থাকি এবং তিনি আমার প্রতি নিজের রহমত (নুবুওয়াত ) দান করিয়া থাকেন (অতএব ) আমি যদি আল্লাহর কথা না মানি তবে আমাকে আল্ল্হা (-র আযাব) হইতে কে রক্ষা করিবে ? তবে তো তোমরা কেবল আমার ক্ষতিই করিতেছ ।
وَيَا قَوْمِ هَـٰذِهِ نَاقَةُ اللَّهِ لَكُمْ آيَةً فَذَرُوهَا تَأْكُلْ فِي أَرْضِ اللَّهِ وَلَا تَمَسُّوهَا بِسُوءٍ فَيَأْخُذَكُمْ عَذَابٌ قَرِيبٌ
বাংলা অর্থ:
৬৪। আর হে আমার কাওম ! ইহা হইতেছে আল্লাহর উটনী যাহা তোমাদের জন্য নিদর্শন, অতএব, উহাকে ছাড়িয়া দাও, যেন আল্লাহ তা‘আলার যমীনে চরিয়া খায় আর ইহাকে মন্দ উদ্দেশ্যে স্পর্শও করিও না , অন্যথায় তোমাদিগকে আকস্মিক আযাব আসিয়া পাকড়াও করিতে পারে।
فَعَقَرُوهَا فَقَالَ تَمَتَّعُوا فِي دَارِكُمْ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ ۖ ذَٰلِكَ وَعْدٌ غَيْرُ مَكْذُوبٍ
বাংলা অর্থ:
৬৫। অনন্তর তাহারা উহাকে মারিয়া ফেলিল, তখন ছালেহ বলিলেন, তোমরা নিজেদের ঘরে আর তিনটি দিন বাস করিয়া লও ; ইহা এমন ওয়াদা যাহাতে বিন্দমাত্র মিথ্যা নাই।
فَلَمَّا جَاءَ أَمْرُنَا نَجَّيْنَا صَالِحًا وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ بِرَحْمَةٍ مِّنَّا وَمِنْ خِزْيِ يَوْمِئِذٍ ۗ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ الْقَوِيُّ الْعَزِيزُ
বাংলা অর্থ:
৬৬। অত:পর যখন আমার হুকুম আসিয়া পৌছিল, আমি ছালেহকে এবং যাহারা তাঁহার সঙ্গে ছিল তাহাদিগকে নিজ অনুগ্রহে রক্ষা করিলাম, আর বাঁচাইলাম সেই দিনের বড় লাঞ্ছনা হইতে; নিশ্চয় আপনার রব্ব শক্তিমান পরাক্রমশীল ।
সূরা হুদ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। অর্থাৎ তোমাতে আমাদের আশা- ভরসা ছিল যে, তোমার ক্রমবর্ধমান যোগ্যতা ও খ্যাতি , কালে আমাদিগকে তথা সমগ্র জাতিকে গৌরবাম্বিত করিয়া তুলিবে। (ব: কো:)
২। অর্থাৎ তুমি শিক্ষ দিতেছ, এক খোদার এবাদত করিতে; কিন্তু এই তাওহীদের ব্যাপার টি আমাদের ধারণায়ই আসে না । ইহা এমন একটি ধারণাবহিভূত ব্যাপার, যাহা আমাদিগকে দ্বিধাাদ্বন্ধে¦ ফেলিয়া রাখিয়াছে । (ব:কো 🙂
৩। কাফেরেরা হযরত ছালেহ (আ:) এর নিকট নুবুওয়াত প্রমাণিত করার জন্য মু‘জেযাহ দেখাইতে ফরমাইশ করিয়াছিল । তখন তিনি আল্লাহর দরবারে দো‘আ করিলে প্রস্তর উটনী বাহির হইয়া তৎক্ষণাৎ বাচ্চা প্রসব করিল। (মু: কো 🙂
وَأَخَذَ الَّذِينَ ظَلَمُوا الصَّيْحَةُ فَأَصْبَحُوا فِي دِيَارِهِمْ جَاثِمِينَ
বাংলা অর্থ:
৬৭। আর সেই যালেমদিগকে এক প্রচন্ড ধ্বনি আসিয়া আক্রমণ করিল, যাহাতে তাহারা নিজ নিজ গৃহে উপুর হইয়া পড়িয়া রহিল।
كَأَن لَّمْ يَغْنَوْا فِيهَا ۗ أَلَا إِنَّ ثَمُودَ كَفَرُوا رَبَّهُمْ ۗ أَلَا بُعْدًا لِّثَمُودَ
বাংলা অর্থ:
৬৮। যেমন তাহারা সেই গুহগুলিতে কখনও বসবাস করেই নাই; ভালরূপে শুনিয়া লও সামূদ সম্প্রদায় নিজ প্রতিপালকের সঙ্গে কুফর করিল; শুনিয়া রাখ, সামুদ সম্প্রদায় রহমত হইতে দূর হইয়া পড়িল।
وَلَقَدْ جَاءَتْ رُسُلُنَا إِبْرَاهِيمَ بِالْبُشْرَىٰ قَالُوا سَلَامًا ۖ قَالَ سَلَامٌ ۖ فَمَا لَبِثَ أَن جَاءَ بِعِجْلٍ حَنِيذٍ
বাংলা অর্থ:
৬৯। আর আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ ইবরাহীমের নিকট সুসংবাদ লইয়া উপস্থিত হইল, (এবং) তাহারা সালাম করিল; ইবরাহীমও সালাম করিলেন, অনতিবিলম্বে তিনি একটি ভাজা গো-বৎস আনয়ন করিলেন।
فَلَمَّا رَأَىٰ أَيْدِيَهُمْ لَا تَصِلُ إِلَيْهِ نَكِرَهُمْ وَأَوْجَسَ مِنْهُمْ خِيفَةً ۚ قَالُوا لَا تَخَفْ إِنَّا أُرْسِلْنَا إِلَىٰ قَوْمِ لُوطٍ
বাংলা অর্থ:
৭০। অত:পর যখন ইবরাহীম দেখিলেন যে, তাহাদের হাত সেই খাদ্যের দিকে অগ্রসর হইতেছে না, তখন তাহদিগকে অদ্ভুত ভাবিতে লাগিলেন এবং মনে মনে তাহাদিগ হইতে শংকিত হইলেন, সেই ফেরেশতাগণ বলিলেন ভয় করিবেন না, আমরা লূত – সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত হইয়াছি।
وَامْرَأَتُهُ قَائِمَةٌ فَضَحِكَتْ فَبَشَّرْنَاهَا بِإِسْحَاقَ وَمِن وَرَاءِ إِسْحَاقَ يَعْقُوبَ
বাংলা অর্থ:
৭১। আর ইবরাহীমের স্ত্রী দন্ডয়মান ছিলেন, তিনি হাসিয়া উঠিলেন, তখন আমি তাহাকে (ইবরাহীমের স্ত্রীকে ) সুসংবাদ দান করিলাম ইসহাকের, এবং ইসহাকের পর ইয়াকূবের ।
قَالَتْ يَا وَيْلَتَىٰ أَأَلِدُ وَأَنَا عَجُوزٌ وَهَـٰذَا بَعْلِي شَيْخًا ۖ إِنَّ هَـٰذَا لَشَيْءٌ عَجِيبٌ
বাংলা অর্থ:
৭২। বলিল হায় কপাল! এখন সন্তান প্রসব করিব বৃদ্ধা হইয়া, আর এই আমার স্বামী অতি বৃদ্ধ; বাস্তবিক ইহা তো একটি তাজ্জব ব্যাপার ।
قَالُوا أَتَعْجَبِينَ مِنْ أَمْرِ اللَّهِ ۖ رَحْمَتُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الْبَيْتِ ۚ إِنَّهُ حَمِيدٌ مَّجِيدٌ
বাংলা অর্থ:
৭৩। ফেরেশতাগণ বলিলেন, তুমি কি আল্লাহর কাজে বিস্ময় বোধ করিতেছ ? (হে) এই পরিবারের লোকগণ ! তোমাদের প্রতি তোআল্লাহ তা‘আলার (খাছ) রহমত ও তাহার (বিবিধ ) বরকতসমূহ (নাযিল হইয়া আসিতেছে) ; নিশ্চয় তিনি প্রশংসার যোগ্য, মহামহিমাম্বিত।
সূরা হুদ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। প্রতিশ্রুতি তিন দিনের তাহারা নিজ নিজ ঘরের মধ্যে কবর প্রস্তুত করিয়া আযাবের প্রতিক্ষায়া রহিল । চতুর্থ দিন সূর্যোদয়ের সঙ্গেও যখন আযাব আসিল না তখন তাহারা সকলে গৃহের বাহিরে আসিল ।অকস্মাৎ জিব্রাঈল (আ:) নিজের আসল আকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করিলেন। ভয়ঙ্কর আকৃতি দেখিয়া লোকেরা দৌড়াইয়া গিয়া নির্মিত কবরে ঢুকিয়া পড়িল। জিব্রাঈল এক বিকট গর্জন করিলেন তাহাতে ভূমিকম্প হইয়া সমস্ত বাড়ী ঘর ধ্বংস প্রাপ্ত হইল (মু: কো:)
২। তৎকালে দস্তুর ছিল কেহ কাহারও ক্ষতি করিবার ইচ্ছা করিলে তাহার খাদ্য গ্রহণ করিত না ।তাহাতেই গৃহস্বামী আগন্তুকের প্রতি সন্ধিহান হইয়া পড়িত। হযরত ইব্রাহীমও আগন্তুকদের আচরণ দেখিয়া শংকিত হইয়া পড়িলেন ইহা টের পাইয়া আগন্তুকদের বলিলেন, ভয় নাই । আমরা ফেরেশতা লূতের ক্বওমের প্রতি আযাব লইয়া আসিয়াছি । (মু: কো:)।
فَلَمَّا ذَهَبَ عَنْ إِبْرَاهِيمَ الرَّوْعُ وَجَاءَتْهُ الْبُشْرَىٰ يُجَادِلُنَا فِي قَوْمِ لُوطٍ
বাংলা অর্থ:
৭৪। অত:পর যখন ইবরাহীমের সেই ভয় দূর হইয়া গেল এবং তিনি শুভসংবাদ প্রাপ্ত হইলেন , তখন আমার (প্রেরিত ফেরেশতাগণের ) সহিত লূত- কাওম সম্বন্ধে তর্ক-বিতর্ক (জোর সুপারিশ) করিতে আরম্ভ করিয়া দিলেন।
إِنَّ إِبْرَاهِيمَ لَحَلِيمٌ أَوَّاهٌ مُّنِيبٌ
বাংলা অর্থ:
৭৫। বাস্তবিক ইবরাহীম, ছিলেন বড় সহিষ্ণু প্রকৃতির, দয়ালু স্বভাব, কোমল হৃদয় ।
يَا إِبْرَاهِيمُ أَعْرِضْ عَنْ هَـٰذَا ۖ إِنَّهُ قَدْ جَاءَ أَمْرُ رَبِّكَ ۖ وَإِنَّهُمْ آتِيهِمْ عَذَابٌ غَيْرُ مَرْدُودٍ
বাংলা অর্থ:
৭৬। হে ইবরাহীম ! এই কথা ছাড়িয়া দিন, আপনা রব্বের ফরমান আসিয়া গিয়াছে, এবং উহাদের উপর অবশ্যই এমন এক আযাব আসিতেছে যাহা কিছুতেই টলিবার নহে।
وَلَمَّا جَاءَتْ رُسُلُنَا لُوطًا سِيءَ بِهِمْ وَضَاقَ بِهِمْ ذَرْعًا وَقَالَ هَـٰذَا يَوْمٌ عَصِيبٌ
বাংলা অর্থ:
৭৭। আর কখন আমার সেই ফেরেশতাগণ লূতের নিকট উপস্থিত হইলেন, তখন লুত তাহাদের কারণে চিন্তম্বিত হইয়া পড়িলেন এবং সেই কারণে অন্তরে সঙ্কুচিত হইলেন এবং বলিলেন, আজিকার দিনটি অতি কঠিন।
وَجَاءَهُ قَوْمُهُ يُهْرَعُونَ إِلَيْهِ وَمِن قَبْلُ كَانُوا يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ ۚ قَالَ يَا قَوْمِ هَـٰؤُلَاءِ بَنَاتِي هُنَّ أَطْهَرُ لَكُمْ ۖ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَلَا تُخْزُونِ فِي ضَيْفِي ۖ أَلَيْسَ مِنكُمْ رَجُلٌ رَّشِيدٌ
বাংলা অর্থ:
৭৮। আর তাহার কাওম তাঁহার নিকট ছুটিয়া আসিল; এবং তাহার পূর্ব হইতে কুকার্যসমূহ করিয়াই আসিতেছিল লূত বলিলেন হে আমার কাওম ! (তোমাদের ঘরে) আমার এইসব কন্যাগণ রহিয়াছে, ইহারা তোমাদের জন্য উত্তম, অতএব আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় কর এবং আমাকে আমার মেহমানদের সম্মুখে অপমানিত করিও না; তোমাদের মধ্যে কি কেহই সুবোধ লোক নাই ?
قَالُوا لَقَدْ عَلِمْتَ مَا لَنَا فِي بَنَاتِكَ مِنْ حَقٍّ وَإِنَّكَ لَتَعْلَمُ مَا نُرِيدُ
বাংলা অর্থ:
৭৯। তাহারা বলিতে লাগিল যে, আপনি তো অবগত আছেন, আপনার এই কন্যাগুলিতে আমাদের কোন আবশ্যক নাই, আর তাহাও আপনার জানা আছে যাহা আমাদের অভিপ্রায়।
সূরা হুদ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। অর্থাৎ তিনি তাহাদের রক্ষার জন্য আমার নিকট সুফারিশ করিলৈন এবং বারংবার অনুরোধ করাতে বাহ্যত: তাহা তর্কের আকার ধারণ করিল। তাহার সুফারিশ এই জন্য ছিল যে, এই জনপদে লূতও বাস করেন। উহাতে আযাব আসিলে হয়ত তাহারও কষ্ট হইতে পারে। মূলে হয়ত তিনি এই অজুহাতে গোটা সম্প্রদায়কে নিরাপদে রাখিতে চাহিয়াছেন, অথবা তাহাদের ঈমান আনয়নে আশাম্বিত ছিলেন। (ব: কো:)
২। অতএব এসম্বন্ধে সুফারিশ ও অনুরোধ করা নিষ্ফল। অবশ্য লূত ও এই জনপদেই বাস করেন। তাঁহাকে এবং তাঁহার অনুগামী দিগকে পূর্বেই সরাইয়া নেওয় হইবে। (ব: কো:)
৩। কেননা ফেরেশতাগণ সুদর্শন বালকের আকৃতিতে আসিয়া ছিলেন এবং লূতও আগন্তুকদিগকে মানুষ্ই মনে করিয়া তথাকার অসৎ লোকদের পাশবিকতা হইতে রক্ষা করার ব্যাপারে অধীর হইয়া পড়িলেন। (ব: কো:)
قَالَ لَوْ أَنَّ لِي بِكُمْ قُوَّةً أَوْ آوِي إِلَىٰ رُكْنٍ شَدِيدٍ
বাংলা অর্থ:
৮০। লূত বলিলেন, কি উত্তম হইত যদি তোমাদের উপর আমার কিছু ক্ষমতা চলিত অথবা আমি কোন দৃঢ় স্তম্ভের আশ্রয় লইতাম।
قَالُوا يَا لُوطُ إِنَّا رُسُلُ رَبِّكَ لَن يَصِلُوا إِلَيْكَ ۖ فَأَسْرِ بِأَهْلِكَ بِقِطْعٍ مِّنَ اللَّيْلِ وَلَا يَلْتَفِتْ مِنكُمْ أَحَدٌ إِلَّا امْرَأَتَكَ ۖ إِنَّهُ مُصِيبُهَا مَا أَصَابَهُمْ ۚ إِنَّ مَوْعِدَهُمُ الصُّبْحُ ۚ أَلَيْسَ الصُّبْحُ بِقَرِيبٍ
বাংলা অর্থ:
৮১। ফেরেশতাগন বলিলেন, হে লূত ! আমরা তো আপনার রব্বের প্রেরিত তাহারা কখনও আপনার নিকট পর্যন্ত পৌছিতে পারিবে না । অতএব আপনি রাত্রির কোন এক ভাগে নিজের পরিজনবর্গকে লইয়া চলিয়া যান , আর আপনাদের কেহ যেন পিছনের দিকে ফিরিয়াও না দেখে, কিন্তুু হাঁ, আপনার স্ত্রী যাইবে না, তাহার উপরও সেই আপদ আসিবে যাহা অন্যান্যদে প্রতি আসিবে তাহাদের (আযাবের) অঙ্গীকৃত সময় হইতেছে প্রাত:কাল; প্রভাত কি নিকটবতী নহে?
فَلَمَّا جَاءَ أَمْرُنَا جَعَلْنَا عَالِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهَا حِجَارَةً مِّن سِجِّيلٍ مَّنضُودٍ
বাংলা অর্থ:
৮২। অত:পর যখন আমার হুকুম আসিয়া পৌছিল, আমি ভূখন্ডের উপরিভাগে নীচে করিয় দিলাম এবং উহার উপর ঝামা পাথর বর্সণ করিতে লাগিলাম যাহা একাধারে ছিল
مُّسَوَّمَةً عِندَ رَبِّكَ ۖ وَمَا هِيَ مِنَ الظَّالِمِينَ بِبَعِيدٍ
বাংলা অর্থ:
৮৩। যাহা বিশেস চিহ্নিত করা ছিল আপনার রব্বের নিকট; আর সেই জনপদগুলি এই যালেমদের হইতে বেশী দূরে নহে।
وَإِلَىٰ مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْبًا ۚ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـٰهٍ غَيْرُهُ ۖ وَلَا تَنقُصُوا الْمِكْيَالَ وَالْمِيزَانَ ۚ إِنِّي أَرَاكُم بِخَيْرٍ وَإِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ مُّحِيطٍ
বাংলা অর্থ:
৮৪। আর আমি মাদইয়ানের (অধিবাসীদের) প্রতি তাহাদের ভ্রাতা শোআয়বকে প্রেরণ করিলাম; তিনি বলিলেন, হে আমার কাওম ! তোমরা আল্লাহর এবাদত কর, তিনি ব্যতীত আর কেহ তোমাদের মা‘বুদ নাই; আর তোমরা মাপে ও ওযনে কম করিও না । আমি তোমাদিগকে সচ্ছর অবস্থায় দেখিতে পাইতেছি, আর আমি তোমাদের প্রতি এমন এক দিবসের আযাবের আশংকা করিতেছি যাহা নানাবিধ বিপদের সমষ্টি হইবে ।
সূরা হুদ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। অর্থাৎ লূত (আ:) পরিশেষে নিতান্ত অপারগ হইয়া বলিতে লাগিলেন, আমার হাতে যদি ক্ষমতা থাকিত, তবে আমি তোমাদের কদাচার দমন করিতাম, অথবা কোন সুদৃঢ় স্তম্ভের আশ্রয় লইতাম। অর্থাৎ আমার স্বেগোত্রেীয় লোক থাকিলে তাহারা আমার সাহায্য করিত। (বা:কো:)
২। অর্থাৎ আপনার কেশাগ্র পর্যন্ত স্পর্শ করার সামর্থ্যও তাহাদের হইবে না । আমরা তো এখনই তাহাদিগকে নিশ্চহ্ন করিয়া দেওয়ার উদ্দেশ্যেই আসিয়াছি। (ব:কো:)
৩। কেননা, সে অজ্ঞাতসারে কুফর করিতেছ্ কাজেই সেও আযাবের মধ্যে গ্রেফতার হইবে। (ব:কো:)
৪। তাহাদের প্রতি আযাব আসার নিধারিত সময় প্রাত:কাল বলার সঙ্গে সঙ্গে লূত (আ:) কাফেরদের আচরণে অতিষ্ঠহেতু বলিয়া উঠিলেন যাহা হইবার এখনই হইয়া য্উাক। অতএব, ফেরেশতারা বলিলেন প্রভাত কি নিকটবর্তী নহে? (ব:কো:)
وَيَا قَوْمِ أَوْفُوا الْمِكْيَالَ وَالْمِيزَانَ بِالْقِسْطِ ۖ وَلَا تَبْخَسُوا النَّاسَ أَشْيَاءَهُمْ وَلَا تَعْثَوْا فِي الْأَرْضِ مُفْسِدِينَ
বাংলা অর্থ:
৮৫। আর হে আমার কাওম ! তোমরা মাপ ও ওযনে পুরাপুরি ভাবে সম্পন্ন কর এবং লোকদের কে তাহাদের দ্রব্যাদেরকে তাহাদের দ্রব্যাদিতে ক্ষতি করিও না । আর ভূপৃষ্ঠে ফ্যাসাদ করিয়া সীমাতিক্রম করিও না।
بَقِيَّتُ اللَّهِ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ ۚ وَمَا أَنَا عَلَيْكُم بِحَفِيظٍ
বাংলা অর্থ:
৮৬। আল্লাহ প্রদত্ত যাহা অবশিষ্ট থাকে তাহাই তোমাদের জন্য অতি উত্তম – যিনি তোমাদের বিশ্বাস হয়, আর আমি তো তোমাদের পাহারাদার নহি।
قَالُوا يَا شُعَيْبُ أَصَلَاتُكَ تَأْمُرُكَ أَن نَّتْرُكَ مَا يَعْبُدُ آبَاؤُنَا أَوْ أَن نَّفْعَلَ فِي أَمْوَالِنَا مَا نَشَاءُ ۖ إِنَّكَ لَأَنتَ الْحَلِيمُ الرَّشِيدُ
বাংলা অর্থ:
৮৭। তাহারা বলিল হে মোআয়ব! তোমার ধর্মনিষ্ঠা কি তোমাকে এই শিক্ষা দিতেছে যে, আমরা সেইসব উপাস্য বর্জন করি যাহাদের উপাসনা আমাদের পিতৃ- পুরুষগণ করিয়া আসিতেছে ? অথবা ইহা বর্জন করিতে যে আমরা নিজেদের মালে নিজেদের ইচ্ছানুসারে ব্যবস্থা অবলম্বন করি ? বাস্তবিক আপনি হইতেছেন বড় জ্ঞানবানম ধর্মপরায়ণ।
قَالَ يَا قَوْمِ أَرَأَيْتُمْ إِن كُنتُ عَلَىٰ بَيِّنَةٍ مِّن رَّبِّي وَرَزَقَنِي مِنْهُ رِزْقًا حَسَنًا ۚ وَمَا أُرِيدُ أَنْ أُخَالِفَكُمْ إِلَىٰ مَا أَنْهَاكُمْ عَنْهُ ۚ إِنْ أُرِيدُ إِلَّا الْإِصْلَاحَ مَا اسْتَطَعْتُ ۚ وَمَا تَوْفِيقِي إِلَّا بِاللَّهِ ۚ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ أُنِيبُ
বাংলা অর্থ:
৮৮। শোআয়ব বলিলেন, হে আমার কাওম ! আচছা বলতো যদি আমি স্বীয় রব্বের তরফ হইতে প্রমাণের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকি এবং তিনি আমাকে নিজ সন্নিধান হইতে একটি উত্তম সম্পদ (নুবুওয়াত ) দান করিয়া থাকেন; তবে আমি কিরূপে প্রচার না করিয়া পারি ? আর আমি ইহা চাহি না যে, আমি তোমাদের বিপরীত সেই সমস্ত কাজ করি যাহা হইতে তোমাদিগকে নিষেধ করিতেছি; আমি তো সংশোধন করিয়া দিতে চাহিতেছি, যে পর্যন্ত আমার সাধ্যে হয়; আর আমার যাহাকিছু ওহফীক হয়, তাহা কেবল আল্লাহরই সাহায্য হইয়া থাকে; তাহারই উপর ভরসা রাখি এবং তাহারই দিকে প্রত্যাবর্তন করি।
সূরা হুদ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। পূর্ববতী আয়াতে মেপে কম দেওয়ার প্রতি নিষেধাজ্ঞা রহিয়াছে । এই আয়াত সঠিক মাপে ক্রয়- বিক্রয় করার নির্দেশ প্রদান করা হইয়াছে। (ব:কো:)
২। কেননা, হারাম মাল অনেক হইলেও উহাতে বরকত হয়না, অথচ পরিণাম দোযখ। পক্ষান্তরে হালাল মাল অল্প হইলেও উহাতে যথেষ্ট বরকত হয়। আর ইহার পরিণাম হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি । (ব:কো:)
৩। অর্থাৎ প্রতিমা পূজা তো আমাদের বংশ পরস্পরায় হইয়া আসিতেছে। কাজেই ইহা মন্দ হইতে পারে না । আর মাপে কম দেওয়াও সাধারণ বুদ্ধিতে মন্দ হইতে পারে না । কেননা , নিজের মালে আমরা যথেচ্ছা আদান প্রদান করিব, তাহাতে আবার বাধা- নিষেধ কিসের ? এমন ধর্মবার্তা তুমি কোথায় পাইলে ? বড় ধার্মিক সাজিয়াছ দেখি তেছি কাজেই হালমি ও রশীদ শব্দ দুইটি বিদ্রুপচ্ছলে ব্যবহার করিয়াছিল বুঝা যায়। (ব: কে:)
وَاسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ ۚ إِنَّ رَبِّي رَحِيمٌ وَدُودٌ
বাংলা অর্থ:
৮৯। হে আমার কাওম! তোমাদের জন্য আমার প্রতি জিদ যেন ইহার কারণ না হইয়া পড়ে যে, তোমাদের উপর সেই রূপ বিপদসমূহ আসিয়া পড়ে যেমন নূহের কাওম অথব হূদের কাওম অথবা ছালেহের কাওমের উপর পতিত হইয়াছল; আর নূতের কাওম তো তোমাদের হইতে দুর (যুগে) নহে ।
قَالُوا يَا شُعَيْبُ مَا نَفْقَهُ كَثِيرًا مِّمَّا تَقُولُ وَإِنَّا لَنَرَاكَ فِينَا ضَعِيفًا ۖ وَلَوْلَا رَهْطُكَ لَرَجَمْنَاكَ ۖ وَمَا أَنتَ عَلَيْنَا بِعَزِيزٍ
বাংলা অর্থ:
৯০। আর তোমরা নিজেদের রব্বের নিকটে নিজেদের গুনাহ মাফ করাইয়া লও; অত:পর তাঁহার দিকে মনোনিবেশ কর; নিশ্চইয় আমার রব্ব পরম দয়ালু, অতি প্রেমময় ।
قَالُوا يَا شُعَيْبُ مَا نَفْقَهُ كَثِيرًا مِّمَّا تَقُولُ وَإِنَّا لَنَرَاكَ فِينَا ضَعِيفًا ۖ وَلَوْلَا رَهْطُكَ لَرَجَمْنَاكَ ۖ وَمَا أَنتَ عَلَيْنَا بِعَزِيزٍ
বাংলা অর্থ:
৯১। তাহারা বলিল, হে শোআয়ব ! তোমার বর্ণিত অনেক কথা আমাদের বুঝে আসে না এবং আমরা নিজেদের মধ্যে তোমাকে দুর্বল দেখিতেছি, আর যদি তোমার স্বজনবর্গের লক্ষ্য না হইত তবে আমরা তোমাকে প্রস্তরাঘাতে চুর্ণ করিয়া ফেলিতাম, আর আমাদের নিকট তোমার কোনই মযার্দা নাই।
قَالَ يَا قَوْمِ أَرَهْطِي أَعَزُّ عَلَيْكُم مِّنَ اللَّهِ وَاتَّخَذْتُمُوهُ وَرَاءَكُمْ ظِهْرِيًّا ۖ إِنَّ رَبِّي بِمَا تَعْمَلُونَ مُحِيطٌ
বাংলা অর্থ:
৯২। শোআয়ব বলিলেন, হে আমার কাওম ! আমার পরিজনবর্গ কি তোমাদের নিকট আল্ল্াহ্ অপেক্ষাও অধিক মযার্দাবান ? আর তোমরা তাঁহাকে পশ্চাতে ফেলিয়া রাখিয়াছ; নিশ্চয়ই আমার রব্ব তোমাদের সমস্ত কার্যকলাপকে বেষ্টন করিয়া আছেন।
وَيَا قَوْمِ اعْمَلُوا عَلَىٰ مَكَانَتِكُمْ إِنِّي عَامِلٌ ۖ سَوْفَ تَعْلَمُونَ مَن يَأْتِيهِ عَذَابٌ يُخْزِيهِ وَمَنْ هُوَ كَاذِبٌ ۖ وَارْتَقِبُوا إِنِّي مَعَكُمْ رَقِيبٌ
বাংলা অর্থ:
৯৩। আর হে আমার কাওম ! তোমরা নিজেদের অবস্থায় কাজ করিতে থাক, আমিও (আমার) কাজ করিতেছি; এখন সত্বরই তোমরা জানিতে পারিবে যে, কে সেই ব্যক্তি যাহার উপর এমন আযাব আসন্ন যাহা তাহাকে অপমানিত করিবে এবং কে সেই ব্যক্তি যে মিথ্যাবাদী ছিল; আর তোমরা প্রতিক্ষায় থাক, আমিও তোমাদের সঙ্গে প্রতীক্ষায় রহিলাম।
সূরা হুদ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। অর্থাৎ নূহ, হূদ, কিংবা ছালেহ (আ:) এর ঘটনাগুলি প্রাচীন কালে বলিয়া যদি তদ্দারা প্রভাবিত না হও, তবে লূত সম্প্রদায়ের ঘটনা তো তোমাদিগ হইতে খুব দূরবতী কালে নয়। পূর্ববতী ঘটনাগুলির তুলনায় ইহা তো খুব নিকটবর্তী কালের। অতএব, ইহা হইতে তো উপদেশ গ্রহণ করিতে পার। (ব: কো:)
২। কাফের ব্যক্তি ঈমান আনিলে বান্দার হক্ব ব্যতীত তাহার যাবতীয় পাপ মোচন হয়। (ব:কো:)
৩। তাহারা অমনোযোগী হওয়ায় সত্য সত্যই অধিকাংশ কথা বুঝিতে পারে নাই। কিংবা হয়ত অবজ্ঞার সহিত এই কথা বলিয়া ছিল । (ব: কো:)
৪। অর্থাৎ আমাদের দৃষ্টিতে তুমি মর্যাদা হীন; কিন্তু তোমার গোত্রের লোকগণ আমাদেরই ধর্মমতে থাকার খাতিরে আমরা তোমার প্রতি হতা উঠাইতেছি না (ব: কো:)
وَلَمَّا جَاءَ أَمْرُنَا نَجَّيْنَا شُعَيْبًا وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ بِرَحْمَةٍ مِّنَّا وَأَخَذَتِ الَّذِينَ ظَلَمُوا الصَّيْحَةُ فَأَصْبَحُوا فِي دِيَارِهِمْ جَاثِمِينَ
বাংলা অর্থ:
৯৪। (আল্লাহ বলিলেন,) আর যখন আমার হুকুম আসিয়া পৌছিল, তখন আমি নাজাত দিলাম শোআয়বকে আর যাহারা তাহার সঙ্গে ঈমানদার ছিল তাহাদের কে নিজ রহমতে, আর সেই যালেমদিগকে আক্রমণ করিল এক বিকট গর্জন, অত:পর তাহারা নিজ নিজ গৃহের মধ্যে উপুড় হইয়া পড়িয়া রহিল।
كَأَن لَّمْ يَغْنَوْا فِيهَا ۗ أَلَا بُعْدًا لِّمَدْيَنَ كَمَا بَعِدَتْ ثَمُودُ
বাংলা অর্থ:
৯৫। যেন তাহারা এই গুহগুলিতে কখনও বসতি করেই নাই ভালরূপে শুনিয়া লও রহমত হইতে দুরে সরিয়া পড়ির মাদইয়ান, যেমন দুর হইয়াছিল সামুদ (সম্প্রদায়) রহমত হইতে।
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مُوسَىٰ بِآيَاتِنَا وَسُلْطَانٍ مُّبِينٍ
বাংলা অর্থ:
৯৬। আর মূসাকে আমি প্রেরণ করিলাম আমার মু‘জেযাসমূহ এবং সুস্পষ্ট প্রমাণ সহকারে।
إِلَىٰ فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِ فَاتَّبَعُوا أَمْرَ فِرْعَوْنَ ۖ وَمَا أَمْرُ فِرْعَوْنَ بِرَشِيدٍ
বাংলা অর্থ:
৯৭। ফেরআ্ঊন ও তাহার প্রধানবর্গের নিকট, অনন্তর তাহারা (-ও) ফেরআঊনের মতানুসারে চলিতে রহিল, এবং ফেরআঊনের মত মোটেই ঠিক ছিল না ।
يَقْدُمُ قَوْمَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَأَوْرَدَهُمُ النَّارَ ۖ وَبِئْسَ الْوِرْدُ الْمَوْرُودُ
বাংলা অর্থ:
৯৮। কিয়ামতের দিন সে নিজ সম্প্রদায়ের আগে আগে থাকিবে, অত:পর তাহাদিগকে উপনীত করিয়া দিবে দোযখে; আর তাহা অতি নিকৃষ্ট স্থান যাহাতে তাহারা উপনীত হইবে।
وَأُتْبِعُوا فِي هَـٰذِهِ لَعْنَةً وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ ۚ بِئْسَ الرِّفْدُ الْمَرْفُودُ
বাংলা অর্থ:
৯৯। আর লা‘নত তাহাদের সঙ্গে সঙ্গে রহিল এই দুনিয়াতে (-ও) এবং কিয়ামত দিবসেরও; তাহা হইল নিকৃষ্ট পুুরস্কার যাহা তাহাদিগকে দেওয়া হইয়াছে।
ذَٰلِكَ مِنْ أَنبَاءِ الْقُرَىٰ نَقُصُّهُ عَلَيْكَ ۖ مِنْهَا قَائِمٌ وَحَصِيدٌ
বাংলা অর্থ:
১০০। ইহা ছিল সেই জনপদসমূহের কতিপয় অবস্থা যাহা আমি আপনার নিকট বর্ণনা করিতেছি, কোন কোন জনপদ তো উহাদের মধ্যে হইতে বহাল রহিয়াছে এবং কোন কোনটির সম্পূর্ণ বিলুপ্তি ঘটিয়াছে।
وَمَا ظَلَمْنَاهُمْ وَلَـٰكِن ظَلَمُوا أَنفُسَهُمْ ۖ فَمَا أَغْنَتْ عَنْهُمْ آلِهَتُهُمُ الَّتِي يَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ مِن شَيْءٍ لَّمَّا جَاءَ أَمْرُ رَبِّكَ ۖ وَمَا زَادُوهُمْ غَيْرَ تَتْبِيبٍ
বাংলা অর্থ:
১০১। আর আমি তাহাদের প্রতি অত্যাচার করি নাই, কিন্তু তাহারা নিজেরাই নিজেদের উপর অত্যাচার করিয়াছে বস্তুত: তাহাদের কোনই উপকার করে নাই তাহাদের সেই উপাস্যগুলি যাহাদিগের তাহার উপাসনা করিত আল্লাহকে ছড়িয়া, যখন আসিয়া পৌছিল আপনার পরওয়ারদেগারের হুকুম; বরং তাহাদের ক্ষতি সাধন করিল।
সূরা হুদ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। এখানে “ বিকট গর্জন ধ্বনি” এবং নবম পারায় ভূকম্পের কথা বলা হইয়াছে। অতএব ,বুঝা গেল, উভয় সম্প্রদায়ের প্রতি একই প্রকারে দ্বিবিধ শাস্তি দেখা দিয়াছিল । (ব:কো:)
২। “সুলত্বনমমুবীন” (প্রকাশ্য দলীল ) এর ভাবার্থ- হযরত মূসার হাতের লাঠি এবং হাতের জ্যোতি সংক্রান্ত মু‘জেযাহ। ফেরআঊনে দরবারে হযরত মূসা যেই ওজস্বিনী বক্তৃতা দিয়াছিলেন, প্রকাশ্য দলীলার্থে তাহাও হইতে পারে। (ব:কো:)
৩। যেমন মিসর, তথায় ফেরআঊনের প্রাসাদ সমূহের ধ্বংসাশেষ এখনও রহিয়াছ্ । (ব: কো:)
৪। আল্লাহ বলেন, আমি যে এই জনপদসমূহের বাসিনস্দাগণকে দন্ডিত করিয়াছি, ইহাতে আমি তাহাদের প্রতি অত্যাচার করি নাই। তাহারা নিজেরাই নিজেদের উপর শাস্তি যোগ্য অত্যাচার করিয়াছে । (ব: কো:)
وَكَذَٰلِكَ أَخْذُ رَبِّكَ إِذَا أَخَذَ الْقُرَىٰ وَهِيَ ظَالِمَةٌ ۚ إِنَّ أَخْذَهُ أَلِيمٌ شَدِيدٌ
বাংলা অর্থ:
১০২। আর আপনার রব্বের পাক্ড়াও এইরূপই হইয়া থাকে যখন তিনি কোন জনপদের অধিবাসীদিগকে পাকড়াও করেন – – যখন তাহারা জুলুম করে; নি:সন্দেহে তাঁহার পাক্ড়াও হইতেছে অত্যন্ত যাতনাদায়ক, কঠিন।
إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لِّمَنْ خَافَ عَذَابَ الْآخِرَةِ ۚ ذَٰلِكَ يَوْمٌ مَّجْمُوعٌ لَّهُ النَّاسُ وَذَٰلِكَ يَوْمٌ مَّشْهُودٌ
বাংলা অর্থ:
১০৩। এইসমস্ত ঘটনায় সেই ব্যক্তির জন্য বড় উপদেশ রহিয়াছে, যেই ব্যক্তি পরকালের আযাবকে ভয় করে; উহা এমন এক দিন হইবে যেইদিন সমস্ত মানুষকে সমবেত করা হইবে এবং উহা হইল সকলের উপস্থিতির দিন।
وَمَا نُؤَخِّرُهُ إِلَّا لِأَجَلٍ مَّعْدُودٍ
বাংলা অর্থ:
১০৪। আর আমি উহা কেবল সামান্য কালের জন্য স্থগিত করিয়া রাখিয়াছি।
يَوْمَ يَأْتِ لَا تَكَلَّمُ نَفْسٌ إِلَّا بِإِذْنِهِ ۚ فَمِنْهُمْ شَقِيٌّ وَسَعِيدٌ
বাংলা অর্থ:
১০৫। যখন সেই দিন আসিবে – কোন ব্যক্তি আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কথাও বলিতে পারিবে না, অনন্তর তাহাদের মধ্যে কতক তে দুর্ভাগা হইবে এবং কতক ভাগ্যবান হইবে।
فَأَمَّا الَّذِينَ شَقُوا فَفِي النَّارِ لَهُمْ فِيهَا زَفِيرٌ وَشَهِيقٌ
বাংলা অর্থ:
১০৬। অতএব যাহারা দুভাগা হইবে তাহারা তো দোযখে এইরূপ অবস্থায় থাকিবে যে, তাহাতে তাহাদের চীৎকার ও আর্তনাদ হইতে থকিবে ।
خَالِدِينَ فِيهَا مَا دَامَتِ السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ إِلَّا مَا شَاءَ رَبُّكَ ۚ إِنَّ رَبَّكَ فَعَّالٌ لِّمَا يُرِيدُ
বাংলা অর্থ:
১০৭। তাহারা অনন্তকাল সেখানে থাকিবে যে পর্যন্ত আসমান ও যমীন স্থায়ী থাকে, অবশ্য যদি আল্লাহরই ইচ্ছা হয়, তবে ভিন্ন কথা; আপনার রব্ব যাহাকিছু চাহেন তাহা পূর্ণরুপে সমাধা করিতে পরেন।
সূরা হুদ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। উপদেশ লাভের সুত্র এই যে, ইহাকার চুড়ান্ত কর্মফল ভোগের স্থান নহে; তথাপি এখানকার শাস্তি যখন এত কঠিন, তখন কর্মফল ভোগের স্থান আখেরাতের মাস্তি যে আর ভীষণ হইবে তাহাতে আর সন্দেহ কি। (ব: কো;)
২। অর্থাৎ হাশরের ময়দানে আসমানবাসী ও যমীববাসী সকলেই সমবেত হইবে।
৩। যখন কাহারও নিকট কোন বিষয়ের কৈফিয়ৎ তলব করা হইবে, তখন তাহার মুখ হইতে কথা বাহির হইবে । সেই কথা গ্রাহ্য হউক আর নাই হউক। (ব: কো:)
৪। চলিত কথায় ইহার অর্থ হয়, অসীম ও অনন্তকাল । (মু: কো:)
৫। কিন্তু ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যে তিনি কাফেরদিগকে বাহির করিতে ইচ্ছাই করিবেন না, তাহা স্থির নিশ্চিত কথা, সুতরাং দোযখ হইতে বাহির হওয়াও তাহাদের ভাগ্যে হইবে না (ব: কো:)
وَأَمَّا الَّذِينَ سُعِدُوا فَفِي الْجَنَّةِ خَالِدِينَ فِيهَا مَا دَامَتِ السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ إِلَّا مَا شَاءَ رَبُّكَ ۖ عَطَاءً غَيْرَ مَجْذُوذٍ
বাংলা অর্থ:
১০৮। আর পক্ষান্তরে যাহারা হইয়াছে ভাগ্যবান, বস্তুুত: তাহারা থাকিবে বেহেশতে, (এবং ) উহাতে তাহারা অনন্তকাল থাকিবে যে পর্যন্ত আসমান ও যমীন স্থায়া থাকে, কিন্তু যদি আল্লাহরই ইচ্ছা হয় তবে ভিন্ন কথা; উহা অফুরন্ত দান হইবে ।
فَلَا تَكُ فِي مِرْيَةٍ مِّمَّا يَعْبُدُ هَـٰؤُلَاءِ ۚ مَا يَعْبُدُونَ إِلَّا كَمَا يَعْبُدُ آبَاؤُهُم مِّن قَبْلُ ۚ وَإِنَّا لَمُوَفُّوهُمْ نَصِيبَهُمْ غَيْرَ مَنقُوصٍ
বাংলা অর্থ:
১০৯। সুতরাং ইহারা যাহার উপাসনা করে উহার সম্বন্ধে একটুকুও সংশয় করিও না। তাহারাও ঠিক সেইরূপেই এবাদত করিতেছে যেইরূপে তাহাদের পূর্বে তাহাদের পূর্বপুরুষগণ করিত; এবং নিশ্চিয় আমি তাহাদগকে তাহাদের (শাস্তির ) অংশ পূর্ণভাবে দিয়া দিব, একটুও কম না করিয়া।
وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ فَاخْتُلِفَ فِيهِ ۚ وَلَوْلَا كَلِمَةٌ سَبَقَتْ مِن رَّبِّكَ لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ ۚ وَإِنَّهُمْ لَفِي شَكٍّ مِّنْهُ مُرِيبٍ
বাংলা অর্থ:
১১০। আর আমি মুসাকে কিতাব দিয়াছিলাম, অনন্তর উহাতে (-ও) মতভেদ করা হইল; আর যদি একটি উক্তি আপনার রব্বের পক্ষ হইতে পূর্বেই স্থিরীকৃত হইয়া না থাকিত তবে উহাদের (চূড়ান্ত ) মীমাংসা হইয়া যাইত; আর এই লোকেরা ইহার সম্বন্ধে এমন সন্দেহে (পতিত) আছে যাহা তাহাদিগকে দ্বিধা- দ্বন্ধে ফেলিয়া রাখিয়াছে।
وَإِنَّ كُلًّا لَّمَّا لَيُوَفِّيَنَّهُمْ رَبُّكَ أَعْمَالَهُمْ ۚ إِنَّهُ بِمَا يَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
বাংলা অর্থ:
১১১। আর নিশ্চিতরূপে সকলেই এইরূপ যে, আপনার রব্ব তাহাদিগকে তাহাদের কর্মের পূর্ণ অংশ প্রদান করিবেন; নিশ্চয়ই তিনি তাহাদের কার্যকলাপের পূর্ণ খবর রাখেন।
فَاسْتَقِمْ كَمَا أُمِرْتَ وَمَن تَابَ مَعَكَ وَلَا تَطْغَوْا ۚ إِنَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
বাংলা অর্থ:
১১২। অতএব আপনি যেভাবে আদিষ্ট হইয়াছেন দৃঢ় থাকুন, এবং সেই লোকেরাও যাহারা কুফর হইতে তওবা করিয়া আপনার সঙ্গে আছে, আর (ধর্মের ) গন্ডি হইতে একটুও বাহির হইও না নিশ্চয় তিনি তোমাদের কার্যকলাপ সম্যভাবে প্রত্যক্ষ করেন।
وَلَا تَرْكَنُوا إِلَى الَّذِينَ ظَلَمُوا فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ وَمَا لَكُم مِّن دُونِ اللَّهِ مِنْ أَوْلِيَاءَ ثُمَّ لَا تُنصَرُونَ
বাংলা অর্থ:
১১৩। আর যালেমদের প্রতি ঝুঁকিও না, অন্যতায় তোমাদিগকে দোযখের অগ্নি স্পর্শ করিবে, আর আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কেহ সহায় হইবে না, অত:পর তোমাদেরকে কোন সাহায্যও করা হইবে না ।
সূরা হুদ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। সেই কথাটি এই যে, পরকালে প্রত্যেক কে তাহার কর্মফল পূর্ণরূপে দেওয়া হইবে। একথা স্থিরিকৃত না থাকিলে তাহারা যে মতভেদ করিতেছে, ইহার আযাব তাহাদের প্রতি ইহকালেই দেখা দিত। (ব:কো:)
২। দিনের দুই প্রান্ত অর্থে কেহ কেহ ফজরের ও আছরের নামায বুঝিয়াছেন আবার কেহ কেহ মনে করেন দুই প্রান্ত বলিতে দিনরে দুইটি অংশ বুঝায়। প্রথম অংশে ফজরের নামায, আর দ্বিতীয় অংশে যোহর ও আছরের নামায। আর রাত্রির অংশে রহিয়াছে মাগরিব ও এশার নামায। এই দ্বিতীয় অর্থে আয়াতটিতে পাঁচ ওয়াক্তের নামাযের প্রতিই ইঙ্গিত রহিয়াছে। আর প্রথম অর্থে যোহর ব্যতীত চারি ওয়াক্তের নামাযের উল্লেখ রহিয়াছে এবং সূরায়ে রূমের ১৮ নং আয়াতের “হীনা তুযহিরূন” শব্দে যোহরের উল্লেখ হইয়াছে। (ব: কো:)
وَأَقِمِ الصَّلَاةَ طَرَفَيِ النَّهَارِ وَزُلَفًا مِّنَ اللَّيْلِ ۚ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ ۚ ذَٰلِكَ ذِكْرَىٰ لِلذَّاكِرِينَ
বাংলা অর্থ:
১১৪। আর নামাযে পা বন্দী করুন দিবসের দুই প্রান্তে ও রাত্রির কিছু অংশে; নি:সন্দেহে সৎ কার্যাবলী মুছিয়া ফেলে মন্দ কার্য সমূহকে, ইহা হইতেছে একটি (ব্যাপক) নসীহত – নসীহত মান্যকারীদের জন্য ।
وَاصْبِرْ فَإِنَّ اللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجْرَ الْمُحْسِنِينَ
বাংলা অর্থ:
১১৫। আর ধৈর্য ধারণ করুন; কেননা আল্লাহ নেকারদের পুণ্যফলকে পন্ড করেন না।
فَلَوْلَا كَانَ مِنَ الْقُرُونِ مِن قَبْلِكُمْ أُولُو بَقِيَّةٍ يَنْهَوْنَ عَنِ الْفَسَادِ فِي الْأَرْضِ إِلَّا قَلِيلًا مِّمَّنْ أَنجَيْنَا مِنْهُمْ ۗ وَاتَّبَعَ الَّذِينَ ظَلَمُوا مَا أُتْرِفُوا فِيهِ وَكَانُوا مُجْرِمِينَ
বাংলা অর্থ:
১১৬। বস্তুত: যেই সমস্ত উম্মতগণ তোমাদের পূর্বে গত হইয়াছে তাহাদের মধ্যে এমন বুদ্ধিমান লোক হয় নাই – যাহারা দেশে ফ্যাসাদ বিস্তার করিতে সামান্য কয়েকজন ব্যতীত যাগাদিগকে আমি তাহাদের মধ্যহইতে রক্ষা করিয়াছিলাম , আর যাহারা অবাধ্য ছিল তাহারা যেই আরাম- আয়েশে ছিল, উহার পিছনেই পড়িয়া রহিল এবং অপরাধ পরায়ণ হইয়া পড়িল।
وَمَا كَانَ رَبُّكَ لِيُهْلِكَ الْقُرَىٰ بِظُلْمٍ وَأَهْلُهَا مُصْلِحُونَ
বাংলা অর্থ:
১১৭। আর আপনার রব্ব এমন নহেন যে, জনপদসমূহকে কুফরের দুরণ ধ্বংস করিয়া দেন অথচ উহার অধিবাসীরা সৎকাজে লিপ্ত রহিয়াছে।
وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ لَجَعَلَ النَّاسَ أُمَّةً وَاحِدَةً ۖ وَلَا يَزَالُونَ مُخْتَلِفِينَ
বাংলা অর্থ:
১১৮। আর যদি আপনার রব্বের ইচ্ছা হইত, তবে তিনি সকল মানুষকে একই মতাবলম্বী করিয়া দিতেন (কিন্তু এইরূপ করেন নাই) আর তাহারা সর্বদাই মতভেদ করিতে থাকিবে।
إِلَّا مَن رَّحِمَ رَبُّكَ ۚ وَلِذَٰلِكَ خَلَقَهُمْ ۗ وَتَمَّتْ كَلِمَةُ رَبِّكَ لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ
বাংলা অর্থ:
১১৯। কিন্তু যাহার প্রতি আপনার প্রতিপালকের অনুগ্রহ হয়; আর এই জন্যই আল্লাহ তা’আলা তাহাদিগকে সৃষ্টি করিয়াছেন; আর আপনার পরওয়ারদেগারের এই বাণীও পূর্ণ হইবে, যে আমি জাহান্নামকে পূর্ণ করিব জিনদের ও মানবদের -সকলের দ্বারা।
সূরা হুদ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। অথাৎ যাহারা সর্বাংশে আল্লাহর বিধান মনিয়া চলে, এই নেকী দ্বারা বদী মাফ হওয়ার বিধানটি তাহাদের জন্য একটি নছীহত। অতএব ইহার প্রতি লক্ষ্য করিয়া প্রত্যেক নেককাজের প্রতিই আগ্রহ হওয়া বাঞ্ছনীয়। (ব:কো:)
২। সারকথা এইযে, তাহাদের মধ্যে ব্যাপক বাবে লাফরমানী চলিতেছেল এবং বাধা দানের মত লোকও ছিলনা । কাজেই দন্ডও ব্যাপকভাবে আসিল। তাহারা সকলে কাফের হইয়াও যদি কিছু সংখ্যক লোক অনাচার প্রতিরোধ করিত, তবে কুফরীর জন্য শাস্তি ব্যাপক ভাবে আসিত না। আর যাহারা অনাচারও করিয়াছে তাহাদের জন্য স্বতন্ত্ররূপে আযাব আসিত কিন্তু এখন বাধা না দেওয়ায় সকলের প্রতিই সমান আযাব আসিয়াছে। (ব:কো:)
৩। বরং সংস্কারের পরিবর্তে ফ্যাসাদের কাজে লিপ্ত হইলে তাহারা সকলেই কঠিন দন্ডভোগের যোগ্য হয়। (ব: কো:)
وَكُلًّا نَّقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ أَنبَاءِ الرُّسُلِ مَا نُثَبِّتُ بِهِ فُؤَادَكَ ۚ وَجَاءَكَ فِي هَـٰذِهِ الْحَقُّ وَمَوْعِظَةٌ وَذِكْرَىٰ لِلْمُؤْمِنِينَ
বাংলা অর্থ:
১২০। আর আমি রাসূলগণের ঘটনাবলী হইতে এইসব ঘটনাগুলি আপনার নিকট বর্ণনা করিতেছি, যাহা দ্বারা আমি আপনার অন্তরকে সবল করি, আর এই সমস্ত ঘটনাবলীতে আপনার নিকট এমন সব বিষয়বস্তু পৌছিয়াছে যাহা সত্য, আর মুসলমানদের জন্য নসীহত স্মারকবাণী ।
وَقُل لِّلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ اعْمَلُوا عَلَىٰ مَكَانَتِكُمْ إِنَّا عَامِلُونَ
বাংলা অর্থ:
১২১। আর যাহারা ঈমান আনিতেছ না, তাহাদিগকে বলিয়া দিন যে, তোমরা নিজ রীতি অনুসারে কাজ করিতে থাক; আমরাও (নিজ দস্তুর অনুযায়ী) কাজ করিতেছি ,
وَانتَظِرُوا إِنَّا مُنتَظِرُونَ
বাংলা অর্থ:
১২২। এবং তোমরা (-ও) অপেক্ষা করিতে থাক, আমরাও অপেক্ষায় রহিলাম।
وَلِلَّهِ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَإِلَيْهِ يُرْجَعُ الْأَمْرُ كُلُّهُ فَاعْبُدْهُ وَتَوَكَّلْ عَلَيْهِ ۚ وَمَا رَبُّكَ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ
বাংলা অর্থ:
১২৩। আর আসমান ও যমীনে যত গায়েব – এর বিষয় আছে, উহার এলম আল্লাহরই রহিয়াছে এবং সমস্ত বিষয় তাহারই পানে প্রত্যাবর্তিত হইবে, অতএব, আপনি তাহারই এবাদত করুন এবং তাহারই উপর নির্ভর করুন। আর আপনার রব্ব সেই সমস্ত কাযকলাপ সম্বন্ধে গাফেল নহেন যাহাকিছু তোমরা করিতেছ।
সূরা হুদ বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। হক্ব বা সততা কোরআনের সমস্ত আয়াতেরই অবিচ্ছেদ্য গুণ ।তদুপরি এই আয়াতগুলিতে অতিরিক্ত গুণ এইযে, ইহা শ্রোতৃমন্ডলীর জন্য উপদেশ এবং স্মৃতি বিজড়িত্ অতএব, এই আয়াতগুলি উপদেশ হিসাবে শ্রোতাদের মনে ভয়ের উদ্রেক করিতেছে এবং স্মারক হিসাবে তাহাদের সম্মুখে ভবিষ্যতের কর্মপন্থা পেশ করিতেছে । (ব: কো 🙂
২। ইবনে আব্বাস (রা:) কর্তৃক বণিত আছে যে, কতিফয় সাহাবী হুযূরের সমীপে আসিয়া কিছছা শনিতে চাহিলে তথন সূরা ইউসুফ নাযিল হয়। ইবেনে আব্বাস (রা:) আরও বলিয়াছেন, ইহুদীরা পরিক্ষামূলক ভাবে হুযূরকে ইউসুফ ও তাঁহার ভাইদের ঘটনা জিজ্ঞাসা করিলে এই সুরাটি নাযিল হয়। (ব: কো:)
৩। ইহাতে পরস্পর সম্পর্ক বিশিষ্ট কতিপয় বিষয়ের সমাবেশ হইয়াছে । এই জন্য ইহাকে “আহসানুল কাছাছ” বলা হইয়াছ্ (ব: কো:)
সূরা ইউনুস এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা আত-তাওবা এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা আনফাল এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা আরাফ এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা আনআম এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা আল-মায়েদা এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা আন-নিসা এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
আমাদের, ফেসবুক পেইজে লাইক, শেয়ার এবং কমেন্টস করে আমাদের সাথেই থাকুন।