সুরা-বাকারাহ্ এর বাংলা অর্থ (আয়াত ১৪৯-১৬৪)

সুরা-বাকারাহ্
আয়াত-২৮৬

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অসীম দয়াল

وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ۖ وَإِنَّهُ لَلْحَقُّ مِن رَّبِّكَ ۗ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ

(১৪৯) আর যেখান হইতেই আপনি বাহিরে যান স্বীয় চেহারা (নামাযে) মসজিদে-হারামের দিকে রাখিবেন। আর নিশ্চয় ইহা সম্পূর্ণ ঠিক, আপনার প্রভুর তরফ হইতে। আর আল্লাহ্ তোমাদের আমল সম্বন্ধে মোটেই বেখবর নহেন।

وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ۚ وَحَيْثُ مَا كُنتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ لِئَلَّا يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَيْكُمْ حُجَّةٌ إِلَّا الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْهُمْ فَلَا تَخْشَوْهُمْ وَاخْشَوْنِي وَلِأُتِمَّ نِعْمَتِي عَلَيْكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ

(১৫০) আর যেখান হইতে আপনি বাহিরে যান, নিজের চেহারা মসজিদে হারামের দিকে রাখিবেন। আর তোমরা যেখানেই থাক তোমাদের চেহারা ইহার দিকেই রাখিবে, যেন লোকের জন্য তোমাদের বিরূদ্ধে সমালোচনা করার সুযোগ না থাকে, তাহাদের মধ্যে অবিচারীরা ব্যতীত। অতএব, তোমরা এরূপ লোকদিগকে ভয় করিও না; বরং আমাকে ভয় করিতে থাক; আর তোমাদের প্রতি আমার প্রদত্ত নেয়ামত যেন পূর্ণ করিয়া দিতে পারি, আর যেন তোমরা সঠিক পথে থাক।

كَمَا أَرْسَلْنَا فِيكُمْ رَسُولًا مِّنكُمْ يَتْلُو عَلَيْكُمْ آيَاتِنَا وَيُزَكِّيكُمْ وَيُعَلِّمُكُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُعَلِّمُكُم مَّا لَمْ تَكُونُوا تَعْلَمُونَ

(১৫১) যেমন আমি প্রেরণ করিয়াছি তোমাদের মধ্যে একজন রাসুল তোমাদেরই মধ্যে হইতে। তিনি পাঠ করিয়া শুনাইতেছেন তোমাদিগকে আমার আয়াতসমূহ এবং তোমাদিগকে (কুপ্রথা) নির্মল করিতেছেন, আর তোমাদিগকে কিতাব ও জ্ঞানের বিষয় শিখাইতেছেন, আর শিখাইতেছেন তোমাদেরে এমন বিষয় যাহার কিছুই জানিতে না।

فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوا لِي وَلَا تَكْفُرُونِ

(১৫২) অতএব, (এ নেয়ামতের দরুন) তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদিগকে স্মরণ রাখিব। আর আমার শোক্র কর এবং আমার না-শোক্রী করিও না।

শানে নুযুল:

১। তখন তোমাদিগকে সৎকাজের পুরষ্কার এবং পাপ কাজের শাস্তি প্রদান করা হইবে। (বঃকোঃ)
২। তাহারা যেন বলিতে না পারে, মোহম্মদ (দঃ) শেষ নবী হইয়া থাকিলে বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে নামায পড়েন কেন? অথচ কা’বাই তাঁহার প্রকৃত কেবলা হওয়া তাঁহার নুবুওয়্যাতের অন্যতম নিদর্শন। (বঃকোঃ)
৩। যাহারা ন্যায় নীতি ও কান্ড-জ্ঞানহীন তাহারা তবুও বলিবেই যে এ আবার কোন নবী, সব নবীর বিরোধিতা করিয়া কা’বার দিকে নামায পড়ে? (বঃকোঃ)
৪। যে সমস্ত বিষয়ে জ্ঞান লাভ করার জন্য প্রাচীন কিতাবসমূহ ও বিবেক-বুদ্ধি যথেষ্ট নহে, তাহা শিখাইবার জন্য একজন মহা জ্ঞানী নবী প্রেরণের জন্য,হযরত ইব্রাহীম (আঃ) আল্লাহর নিকট দোয়া করিয়াছিলেন। দোআ কবুল করিয়াই আল্লাহ্ হুযূর (দঃ) কে প্রেরণ করেন। (বঃকোঃ)

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ ۚ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ

(১৫৩) হে মুমিনগন! তোমরা ধৈর্য ও নামায দ্বারা আশ্রয় গ্রহণ কর। নিশ্চয় আল্লাহ্ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে থাকেন।

وَلَا تَقُولُوا لِمَن يُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتٌ ۚ بَلْ أَحْيَاءٌ وَلَـٰكِن لَّا تَشْعُرُونَ

(১৫৪) আর যাহারা আল্লাহ্র পথে নিহত হয় তাহাদের সম্বন্ধে এরূপও বলিও না যে, তাহারা মৃত; বরং তাহারা জীবিত। কিন্তু তোমরা অনুভব করিতে পার না।

وَلَنَبْلُوَنَّكُم بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ ۗ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ

(১৫৫) আর আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করিব কিঞ্চিত ভয় দ্বারা, আর উপবাস দ্বারা এবং ধনেরও প্রাণের ও ফল শস্যের অল্পতা দ্বারা।আর সুসংবাদ শুনাইয়া দিন এমন ধৈর্যশীলদিগকে।

الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ

(১৫৬) যখন তাহাদের উপর মুছিবত আসে, তখন বলে, আমরা তো আল্লাহরই আয়ত্তে, আর আমরা সকলে আল্লাহরই সমীপে প্রত্যাবর্তনকারী।

أُولَـٰئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ ۖ وَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ

(১৫৭) তাহাদের প্রতি (বর্ষিত) হইবে বিশেষ বিশেষ করুণাসমূহ তাহাদের প্রভুর তরফ হইতে, এবং সাধারণ করুণাও। আর ইহারাই এমন লোক যাহারা (তত্ত্বজ্ঞানে) পৌছিয়াছে।

إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِن شَعَائِرِ اللَّهِ ۖ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَن يَطَّوَّفَ بِهِمَا ۚ وَمَن تَطَوَّعَ خَيْرًا فَإِنَّ اللَّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ

(১৫৮) নিশ্চয়, ছাফা এবং মারওয়া আল্লাহর স্মৃতি-নিদের্শনের অন্তর্ভূক্ত অতএব, যে ব্যক্তি বাইতুল্লাহর হজ্জ করে কিংবা ওমরা করে, তাহার কোনই গুনাহ্ নাই যাতায়াত করাতে- এতদুভয়ের মধ্যে। আর যে ব্যক্তি সেচ্ছায় কোন কাজ করে, তবে আল্লাহ্ তা’আলা সমুচিত মূল্য প্রদান করেন- খুব ভালরূপে জানেন।

শানে নুযুল:

১। নামায সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ এবাদত। সহনশীলদের সঙ্গে যখন আল্লাহর সাহচর্যের প্রতিশ্রুতি রহিয়াছে, তখন বে নামাযের স্থান সহনশীলতার অনেক ঊর্ধ্বে তাহাতে সেই সাহচর্যের শুভ-সংবাদ থাকিবে ইহাতে আর সন্দেহ কি? (বঃকোঃ)
২। আলমে বরযখে শহীদদের রূহানী জীবন সাধারন মৃতের জীবন অপেক্ষা স্বতন্ত্র। শহীদদের দেহ পচিয়া গলিয়া যায় না, ত তাঁহারা আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত লাভ করেন, কাজেই তাঁহাদিগকে সাধারন মৃতের ন্যায় মৃত বলিতে নিষেধ করা হইয়াছে। (বঃকোঃ)
৩। শত্রু-সৈন্যর সহিত মুকাবেলা করার ভয়; দুর্ভিক্ষ ও দারিদ্রজনিত অনাহার; যাকাত, ছদকা প্রভৃতি কার্যে ব্যয় করিয়া মালের ক্ষতি; যুদ্ধে মৃত্যুবরণ, বার্ধক্যে দুর্বলতা ও রোগ; বাগানের ও ক্ষেতের ফল নষ্ট এবং সন্তানের মৃত্যু ইত্যাদি বিপদ দ্বারা আমি তোমাদের খোদা-ভক্তি ও ধৈর্যের পরীক্ষা করিব। (মুঃকোঃ)

إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَىٰ مِن بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الْكِتَابِ ۙ أُولَـٰئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللَّهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُونَ

(১৫৯) নিশ্চয়, যাহারা গোপন করে আমার অবতারিত বিষয়গুলিকে, যাহা উজ্জল ও সুপথ প্রদর্শনকারী, আমি ঐগুলিকে সর্বসাধারনের জন্য কিতাবে প্রকাশ করিয়া দিবার পর; ইহাদিগকে লা’নত করেন আল্লাহ্ও আর লা’নতকারীগনও তাহাদিগকে লা’নত করেন।

إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا وَأَصْلَحُوا وَبَيَّنُوا فَأُولَـٰئِكَ أَتُوبُ عَلَيْهِمْ ۚ وَأَنَا التَّوَّابُ الرَّحِيمُ

(১৬০) কিন্তু যাহারা তওবা করে এবং সংশোধন করিয়া নেয়, আর ব্যক্ত করিয়া দেয়, তবে ইহাদের প্রতি আমি দৃষ্টি করি। আর আমি তো তওবা কবূল করায় এবং অনুগ্রহ করায় খুবই অভ্যস্ত।

إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَمَاتُوا وَهُمْ كُفَّارٌ أُولَـٰئِكَ عَلَيْهِمْ لَعْنَةُ اللَّهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ

(১৬১) অবশ্য যাহারা ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে না এই কাফের অবস্থায়ই মরিয়া যায়, তাহাদের প্রতি লা’নত আল্লাহর, ফেরেশ্তাদের এবং মানবেরও (অর্থাৎ উভয় কূলের লানতকারীও)

خَالِدِينَ فِيهَا ۖ لَا يُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَلَا هُمْ يُنظَرُونَ

(১৬২) তাহারা অনন্তকাল উহাতেই থাকিবে, তাহাদের না আযাব হালকা হইবে, আর না তাহাদিগকে অবকাশ দেওয়া হইবে।

وَإِلَـٰهُكُمْ إِلَـٰهٌ وَاحِدٌ ۖ لَّا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَـٰنُ الرَّحِيمُ

(১৬৩) আর যিনি তোমাদের মা’বুুদ হইবার যোগ্য তিনি তো একই মা’বুদ, তিনি ব্যতীত অন্য কোন মা’বুদ নাই। পরম দয়ালু করুণাময়।

إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَالْفُلْكِ الَّتِي تَجْرِي فِي الْبَحْرِ بِمَا يَنفَعُ النَّاسَ وَمَا أَنزَلَ اللَّهُ مِنَ السَّمَاءِ مِن مَّاءٍ فَأَحْيَا بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَبَثَّ فِيهَا مِن كُلِّ دَابَّةٍ وَتَصْرِيفِ الرِّيَاحِ وَالسَّحَابِ الْمُسَخَّرِ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ

(১৬৪) নিশ্চয়, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃজনে এবং পর্যায়ক্রমে দিবা ও রাত্রির আগমনে এবং জাহাজসমূহে- যাহা সমুদ্রে চলাচল করে মানুষের লাভজনক পণ্যদ্রব্য লইয়া, আর পানিতে, যাহা আল্লাহ্ আসমান হইতে বর্ষণ করেন; অতঃপর সরস ও সতেজ করেন উহা অনুর্বর হওযার পরে। সর্ব প্রকারের জীবজন্তু উহাতে ছড়াইয়া দিয়াছেন। আর বায়ুরাশির পরিবর্তন এবং মেঘমালায়- যাহা আসমান ও যমিনের মধ্যস্থলে আবদ্ধ থাকে, প্রমাণসমূহ আছে সেই লোকদের জন্য যাহারা জ্ঞান রাখে।

শানে নুযুল:

১। এই (১৬৩ নং) আয়াত নাযিল হওয়ার পর মক্কার কাফেররা বলিত, আমরা তিনশত ষাটটি দেব-দেবীর উপাসনা করিয়া থাকি। ইহাদের দ্বারা একটি শহরের শৃঙ্খলা বিধানই সুচারূপে হইয়া উঠিতেছে না। আর মোহাম্মদ (দঃ) বলিতেছেন, পৃথিবীর সকলেরই মা’বুদ এক মাত্র খোদা, যিনি সমগ্র পৃথিবীর যাবতীয় কার্য নির্বাহ করিয়া থাকেন, ইহা কেমন করিয়া সম্ভব? তাঁহার এই দাবী সত্য হইলে তিনি ইহার প্রমাণ আনয়ন করুন। অতএব, আল্লাহ্ তা‘আলা পরবর্তী আয়াতে নিজের অসীম ক্ষমতার নিদর্শন সমূহ বর্ণনা করিয়াছেন। (মুঃকোঃ)

সূরা ফাতিহা পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সুরা-বাকারাহ্ এর আয়াত ০১ হতে ৪৮ পর্যন্ত বাংলা অর্থ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সুরা-বাকারাহ্ এর আয়াত ৪৯ হতে ৭১ পর্যন্ত বাংলা অর্থ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সুরা-বাকারাহ্ এর আয়াত ৭২ হতে ৮৯ পর্যন্ত বাংলা অর্থ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সুরা-বাকারাহ্ এর আয়াত ৯০ হতে ১০২ পর্যন্ত বাংলা অর্থ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সুরা-বাকারাহ্ এর আয়াত ১০৩ হতে ১১৩ পর্যন্ত বাংলা অর্থ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সুরা-বাকারাহ্ এর আয়াত ১১৪ হতে ১২৬ পর্যন্ত বাংলা অর্থ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সুরা-বাকারাহ্ এর আয়াত ১২৭ হতে ১৩৬ পর্যন্ত বাংলা অর্থ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সুরা-বাকারাহ্ এর আয়াত ১৩৭ হতে ১৪৮ পর্যন্ত বাংলা অর্থ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-