সুরা-বাকারাহ্ এর বাংলা অর্থ (আয়াত ১১৪-১২৬)

সুরা-বাকারাহ্
আয়াত-২৮৬

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অসীম দয়াল

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن مَّنَعَ مَسَاجِدَ اللَّهِ أَن يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ وَسَعَىٰ فِي خَرَابِهَا ۚ أُولَـٰئِكَ مَا كَانَ لَهُمْ أَن يَدْخُلُوهَا إِلَّا خَائِفِينَ ۚ لَهُمْ فِي الدُّنْيَا خِزْيٌ وَلَهُمْ فِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ

(১১৪) আর কে অধিক যালেম হইবে, ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা যে আল্লাহর মসজিদসমূহে তাঁহার নাম যেকর করিতে বাধা সৃষ্টি করে এবং ঐগুলি বিরাণ হওয়ার চেষ্টা করে? ইহাদের তো কখনও নির্ভীক ভাবে ঐ গুলিতে পা রাখাই উচিত ছিল না, ইহাদের জন্য দুনিয়াতেও লাঞ্চনা হইবে, আর আখেরাতেও ইহাদের ভীষন শাস্তি হইবে।

وَلِلَّهِ الْمَشْرِقُ وَالْمَغْرِبُ ۚ فَأَيْنَمَا تُوَلُّوا فَثَمَّ وَجْهُ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ وَاسِعٌ عَلِيمٌ

(১১৫) আর আল্লাহরই আধিপত্যে পূর্বও এবং পশ্চিমও। অতএব, তোমরা যে দিকেই মুখ ফিরাও সে দিকেই আল্লাহর চেহারা বিরাজমান। কেননা, আল্লাহ্ তা‘আলা (সর্বদিকে) পরিবেষ্টনকারী-পূর্ণ জ্ঞানবান।

وَقَالُوا اتَّخَذَ اللَّهُ وَلَدًا ۗ سُبْحَانَهُ ۖ بَل لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ كُلٌّ لَّهُ قَانِتُونَ

(১১৬) আর তাহারা বলে আল্লাহর সন্তান আছে; সোবহানাল্লাহ্! বরং একমাত্র তাঁহারাই আধিপত্যে রহিয়াছে যাহাকিছু আসমানসমূহে ও যমিনে আছে। সমস্তই তাঁহার আজ্ঞাধীন।

بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ وَإِذَا قَضَىٰ أَمْرًا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُ كُن فَيَكُونُ

(১১৭) তিনি আবিষ্কর্তা আসমানসমূহ এবং যমিনের; আর যখন কোন কাজ সমাধা করিতে চাহেন, শুধু উহাকে বলেন, ‘হইয়া যা’ তখনই উহা হইয়া যায়।

وَقَالَ الَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ لَوْلَا يُكَلِّمُنَا اللَّهُ أَوْ تَأْتِينَا آيَةٌ ۗ كَذَ‌ٰلِكَ قَالَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِم مِّثْلَ قَوْلِهِمْ ۘ تَشَابَهَتْ قُلُوبُهُمْ ۗ قَدْ بَيَّنَّا الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يُوقِنُونَ

(১১৮) আর মূর্খেরা বলে-কেন আমাদের সহিত কথা বলেন না আল্লাহ; অথবা আমাদের নিকট কোন অন্য প্রমাণ আসে না। এইরূপ ইহাদের পূর্ববর্তিগনও ইহাদের ন্যায় উক্তি করিয়া আসিতেছিল। উহাদের সকলের অন্তরই পরস্পর সাদৃশ্য। আমি তো বহু স্পষ্ট দলিল বর্ণনা করিয়াছি দৃঢ় বিশ্বাসকামীদের জন্য।

শানে নুযুল:

১। কেবলা পরিবর্তনের সময় ইহুদীরা মুসলমানদের মনে নানাপ্রকার সন্দেহ জাগাইয়া মদীনার মসজিদ বিরান করার চেষ্টা করিয়াছিল। মদীনার খৃষ্টানদের পূর্ব-পুরুষ রোমান বাদশাহ্ তাইতাস বায়তুল মুকাদ্দাসের অবমাননা করিয়া তথাকার নামাযীদের নামাযের ব্যাঘাত ঘটাইয়াছিল। হুযর (দঃ) ছোল্হে হোদাইবিয়ার বৎসর সদলবলে কা’বা শরীফে ওমরা পালনের জন্য গমন করিলে মক্কার কাফেরেরা বাধা দিইয়াছিল। সুতরাং, ইহুদী নাছারা এবং মক্কার কাফের এই তিন সম্প্রদায়কেই মসজিদ বিরানকারী বলা যাইতে পারে। (বঃকোঃ)
২। এক সময়ে কতিপয় মুসাফের রাত্রে মেঘের ঘন অন্ধকারে কেবলা নির্ণয় করিতে না পারিয়া অনুমান দ্বারা বিভিন্ন দিকে নামায পড়িয়াছিল। পরে দেখা গেল, কাহারও কেবলা ঠিক হয় নাই। মদীনায় আসিয়া তাঁহারা হুযুরের নিকট উক্ত নামাযের ক্বাযা পড়িবার অনুমতি চাহিলে এই আয়াতটি নাযিল হয়। (মুঃকোঃ)
ফঃ আল্লাহ্ পাকের সত্তার তথা জানা বান্দার পক্ষে সম্ভব নহে। সে সম্বন্ধে তথ্যানুসন্ধানে প্রবৃত্ত না হইয়া মোটামুটিভাবে আল্লাহর অস্তিত্ব ও সর্বগুনবান গাওয়ার প্রতি ঈমান আনিতে হইবে। ইহা অপেক্ষা অধিক অনুসন্ধানে লিপ্ত হওয়া নিষিদ্ধ।

إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ بِالْحَقِّ بَشِيرًا وَنَذِيرًا ۖ وَلَا تُسْأَلُ عَنْ أَصْحَابِ الْجَحِيمِ

(১১৯) আমি আপনাকে একটি সত্য ধর্ম দিয়া পাঠাইয়াছি যেন সুসংবাদ শুনাইতে থাকেন এবং ভীতি প্রদর্শন করিতে থাকেন; অনন্তর আপনার নিকট কৈফিয়ৎ তলব করা হইবে না দোযখীদের সম্বন্ধে।

وَلَن تَرْضَىٰ عَنكَ الْيَهُودُ وَلَا النَّصَارَىٰ حَتَّىٰ تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ ۗ قُلْ إِنَّ هُدَى اللَّهِ هُوَ الْهُدَىٰ ۗ وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ أَهْوَاءَهُم بَعْدَ الَّذِي جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ ۙ مَا لَكَ مِنَ اللَّهِ مِن وَلِيٍّ وَلَا نَصِيرٍ

(১২০) আর কখনও আপনার উপর সন্তুষ্টি হইবে না ইহুদীরাও এবং নাছারারাও যাবৎ না আপনি তাহাদের ধর্মের অনুসারী হইবেন; আপনি বলুন, বস্তুতঃ খোদার নির্দেশিত রাস্তাই হেদায়তের রাস্তা; আর যদি আপনি অনুসরন করেন তাহাদের ভ্রান্ত ধারনাসমূহের, আপনার নিকট জ্ঞান আসিবার পর, তবে আপনার জন্য খোদা হইতে রক্ষাকারী কোন বন্ধুও থাকিবে না-কোন সাহায্যকারীও না।

الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَتْلُونَهُ حَقَّ تِلَاوَتِهِ أُولَـٰئِكَ يُؤْمِنُونَ بِهِ ۗ وَمَن يَكْفُرْ بِهِ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ

(১২১) যাহাদিগকে আমি দান করিয়াছি কিতাব, আর তাহারা উহা তেলাওয়াৎ করিতেছে যথোচিত ভাবে, এরূপ লোকই উহার প্রতি ঈমান আনে; আর যাহারা উহা অমান্য করিবে, তাহারা নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হইবে।

يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ اذْكُرُوا نِعْمَتِيَ الَّتِي أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَأَنِّي فَضَّلْتُكُمْ عَلَى الْعَالَمِينَ

(১২২) হে বনী-ইসরায়ীল! আমার সেই নেয়ামতগুলি স্মরণ কর যাহা আমি তোমাদিগকে দিয়াছি আর ইহাও যে, আমি শ্রেষ্ঠত্ব দিয়াছি তোমাদিগকে বহু লোকের উপর।

وَاتَّقُوا يَوْمًا لَّا تَجْزِي نَفْسٌ عَن نَّفْسٍ شَيْئًا وَلَا يُقْبَلُ مِنْهَا عَدْلٌ وَلَا تَنفَعُهَا شَفَاعَةٌ وَلَا هُمْ يُنصَرُونَ

(১২৩) আর তোমরা এমন দিনকে ভয় কর-যেদিন আদায় করিতে পারিবে না কেহ কাহারও পক্ষ হইতে কোন দাবী আর না কাহারও পক্ষ হইতে কোন বিনিময়ে গৃহীত হইবে, আর না কাহারও পক্ষে কোন সুপারিশও ফলপ্রদ হইবে, আর না উহাদিগকে কেহ রক্ষা করিতে পারিবে।

শানে নুযুল:

১। জনাব রাসুলুল্লাহ্ (দঃ) প্রথম প্রথম কোন জায়েজ বিষয়ে তাঁহার স্বাভাবিক নম্রতা বসতঃ কিতাবীদের চিত্ত জয়ের উদ্দেশ্যে তাহাদের অনুকূলে রায় দিতেন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, আপনি এরূপ ব্যবহার হইতে ক্ষান্ত হউন যদিও ‘তাহারা আকৃষ্ট হইয়া ইসলাম গ্রহণ করিবে’ এরূপ একটি মহান উদ্দেশ্যে আপনার অন্তরে নিহিত আছে। (বঃকোঃ)

وَإِذِ ابْتَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ رَبُّهُ بِكَلِمَاتٍ فَأَتَمَّهُنَّ ۖ قَالَ إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا ۖ قَالَ وَمِن ذُرِّيَّتِي ۖ قَالَ لَا يَنَالُ عَهْدِي الظَّالِمِينَ

(১২৪) আর যখন পরীক্ষা করিলেন ইবরাহীমকে তাঁহার প্রভু কয়েকটি বিষয়ে, তিনি উহা পূর্ণরূপে সমাধা করিলেন; আল্লাহ্ বলিলেন,আমি আপনাকে মানুষের ইমাম বানাইবো। তিনি বলিলেন, আর আমার বংশধরগণ হইতেও; আল্লাহ্ বলিলেন, আমার (এই) পদ অবাধ্য লোকেরা পাইবে না।

وَإِذْ جَعَلْنَا الْبَيْتَ مَثَابَةً لِّلنَّاسِ وَأَمْنًا وَاتَّخِذُوا مِن مَّقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلًّى ۖ وَعَهِدْنَا إِلَىٰ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ أَن طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْعَاكِفِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ

(১২৫) আর যখন আমি কা’বা গৃহকে মানুষের এবাদতের স্থান এবং নিরাপত্তার স্থান করিলাম এবং (বলিলাম) মাকামে ইবরাহীমকে নামায পড়িবার স্থান বানাইয়া লও; আর আমি ইব্রাহীম ও ইসমাঈলকে আদেশ করিলাম আমার ঘরটিকে খুব পবিত্র রাখিও বহিরাগত ও স্থানীয় লোকদের জন্য এবং রুকু ও সিজদাকারীদের জন্য।

وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ اجْعَلْ هَـٰذَا بَلَدًا آمِنًا وَارْزُقْ أَهْلَهُ مِنَ الثَّمَرَاتِ مَنْ آمَنَ مِنْهُم بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۖ قَالَ وَمَن كَفَرَ فَأُمَتِّعُهُ قَلِيلًا ثُمَّ أَضْطَرُّهُ إِلَىٰ عَذَابِ النَّارِ ۖ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ

(১২৬) আর যখন ইব্রাহীম বলিলেন, হে প্রভু! ইহাকে একটি নিরাপত্তাময় শহরে পরিণত করুন এবং ইহার অধিবাসীর মধ্যে উহাদিগকে ফলাদি দ্বারা অনুগৃহীত করুন যাহারা আল্লাহর প্রতি এবং ক্বিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান রাখে; আল্লাহ্ বলিলেন, আর যে কাফের তাহাকেও; বস্তুতঃএ ইরূপ ব্যক্তিকে তো অল্পদিন খুব আরাম দান করিব; অতঃপর তাহাকে হেঁচড়াইয়া হেঁচড়াইয়া দোযখের আযাবে পৌছাইয়া দিব; আর সেই পৌঁছিবার স্থান তো অত্যন্ত মন্দ।

শানে নুযুল:

১। অহঙ্কারী বনী-ইসরাঈলরা বলিত, আমরা ইব্রাহীম (আঃ)-এর আওলাদ। আল্লাহ্ তা‘আলা নুবুওয়্যাতের সম্মান ইব্রাহীম (আঃ) এর বংশধরগণের মধ্যে দেওয়ার ওয়াদা করিয়াছেন। এই কারণেই সকলে তাঁহার ধর্মের অনুসরণ করিয়া থাকে। এখন আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, ইব্রাহীমের নেককার আওলাদের জন্যই আল্লাহর ওয়াদা ছিল। হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর দুই পুত্র ছিল। দীর্ঘ কাল পর্যন্ত হযরত ইসহাক (আঃ) এর আওলাদের মধ্যে নুবুওয়্যাত ছিল। এখন ইসমাঈল (আঃ) আওলাদের মধ্যে আসিয়াছে। হযরত ইব্রাহীমের দোআ উভয় পত্রের জন্যই ছিল। (মুঃকোঃ)
২। যে পাথরে দাঁড়াইয়া ইব্রাহীম (আঃ) কা’বা গৃহ নির্মাণ করিয়াছিলেন, তাহাই ‘মাকামে ইব্রাহীম’ নামে অভিহিত। তথায় তওয়াফ করার সময় দুই রাকাত নামায পড়া ওয়াজেব। (বঃকোঃ)

সূরা ফাতিহা পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সুরা-বাকারাহ্ এর আয়াত ০১ হতে ৪৮ পর্যন্ত বাংলা অর্থ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সুরা-বাকারাহ্ এর আয়াত ৪৯ হতে ৭১ পর্যন্ত বাংলা অর্থ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সুরা-বাকারাহ্ এর আয়াত ৭২ হতে ৮৯ পর্যন্ত বাংলা অর্থ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সুরা-বাকারাহ্ এর আয়াত ৯০ হতে ১০২ পর্যন্ত বাংলা অর্থ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সুরা-বাকারাহ্ এর আয়াত ১০৩ হতে ১১৩ পর্যন্ত বাংলা অর্থ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-