সুরা-বাকারাহ্
আয়াত-২৮৬
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অসীম দয়াল
(১৩৭) অতঃপর তাহারাও যদি ঐরূপ ঈমান আনে যেরূপ তোমরা আনিয়াছ, তবে তাহারাও সঠিক পথ পাইবে; আর যদি তাহারা মুখ ফিরাইয়া লয়,তবে তাহারা তো বিরোধিতায় লাগিয়াই আছে; তবে শীঘ্রই আল্লাহ্ আপনার পক্ষ হইতে তাহাদের সহিত পূর্ণ বুঝা পড়া করিবেন। আর আল্লাহ্ শুনিতেছেন, জানিতেছেন।
صِبْغَةَ اللَّهِ ۖ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللَّهِ صِبْغَةً ۖ وَنَحْنُ لَهُ عَابِدُونَ
(১৩৮) আমরা সেই রঙ্গেই থাকিব, যে রঙ্গে আল্লাহ্ তাআলা রঞ্জিত করিয়াছেন; আর এমন কে আছে যাহার রঞ্জন আল্লাহ্ অপেক্ষা অধিক সুন্দর হইবে? আর আমরা তাঁহারই দাসত্বে দৃঢ় আছি।
(১৩৯) আপনি বলুন, তোমরা কি তর্ক জুড়িয়াছ আমাদের সহিত আল্লাহ্ সম্বন্ধে? অথচ তিনি আমাদেরও প্রভু; আর আমরা পাইব আমাদের কর্মফল এবং তোমরা পাইবে তোমাদের কর্মফল; আর আমরা শুধু আল্লাহর জন্য নিজদিগকে খাঁটি করিয়া রাখিয়াছি।
أَمْ تَقُولُونَ إِنَّ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطَ كَانُوا هُودًا أَوْ نَصَارَىٰ ۗ قُلْ أَأَنتُمْ أَعْلَمُ أَمِ اللَّهُ ۗ وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن كَتَمَ شَهَادَةً عِندَهُ مِنَ اللَّهِ ۗ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ
(১৪০) অথবা তোমরা কি বলিতেছ যে, ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব এবং ইয়াকূবের বংশধর, ইহুদী বা নাছারা ছিলেন? আপনি বলিয়া দিন, তোমরাই কি অধিক ওয়াকিফ, না আল্লাহ্? আর কে হইবে অধিক যালিম সেই ব্যক্তি হইতে যে গোপন করে আল্লাহর নিকট হইতে প্রাপ্ত সাক্ষ্য; আর আল্লাহ্ তোমাদের কৃত-কর্ম সম্বন্ধে বে-খবর নহেন।
(১৪১) উহা ছিল একটি জমাআত যাহা অতীত হইয়াছে; তাহাদের কৃত-কর্ম তাহাদের কাজে আসিবে এবং তোমাদের কৃত-কর্ম তোমাদের কাজে আসিবে; আর তাহাদের কৃত-কর্ম সম্বন্ধে তোমরা জিজ্ঞাসিতও তো হইবে না।
শানে নুযুল:
১। উপরোক্ত কথাসমূহ শ্রবণ করিয়া ইহুদীরা নিরুত্তর হইয়া গেল। কিন্তু ঈমান আনিল না। আর নাছারারা এ সমস্ত কথার উত্তরে বলিল আমাদের নিকট এক প্রকার রং আছে যা মুসলমানদের নিকট নাই। বস্তুতঃ নাছারাদের নিকট হরিদ্রা বর্ণের এক প্রকার রং ছিল। তাহাদের কোন শিশু জন্মগ্রহণ করিলে,কিংবা কেহ খৃষ্টান ধর্মে নূতন দীক্ষিত হইলে তাহারা উহাদিগকে উক্ত রঙ্গের মধ্যে ডুবাইয়া লইতো এবং বলিত,এখন সে খাঁটি খৃষ্টান হইয়াছে। আল্লাহ্ তা‘আলা তদুত্তরে বলেন, হে মুসলমাগণ! তোমরা বল,আমরা আল্লাহ্ তা‘আলার রং অর্থাৎ, ইসলাম কবুল করিয়াছি। আল্লাহ্র রঙ্গের চেয়ে আর কোন রং অধিক সুন্দর হইবে? (মুঃকোঃ)
سَيَقُولُ السُّفَهَاءُ مِنَ النَّاسِ مَا وَلَّاهُمْ عَن قِبْلَتِهِمُ الَّتِي كَانُوا عَلَيْهَا ۚ قُل لِّلَّهِ الْمَشْرِقُ وَالْمَغْرِبُ ۚ يَهْدِي مَن يَشَاءُ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
(১৪২) এখন তো নির্বোধেরা বলিবেই যে, তাহারা (মুসলমানরা) যে দিকে পূর্বে মুখ করিত,নিজেদের কেবলা হইতে তাহাদিগকে কিসে ফিরাইয়া দিল? আপনি বলিয়া দিন, মাশ্রেক এবং মাগ্রেব খোদা-ই যাহাকে ইচ্ছা করেন সরল পথ প্রদর্শন করেন।
(১৪৩) আর এইরূপে আমি তোমাদিগকে এমন এক মধ্য পন্থার ভিত্তিতে সুপ্রতিষ্ঠিত, যেন তোমরা অন্য লোকের প্রতিপক্ষে সাক্ষী হও। আর রাসুল হইবেন তোমাদের সাক্ষী। আর যে কেবলার দিকে আপনি ছিলেন তাহা তো শুধু এই জন্য ছিল, যেন আমার নিকট প্রকাশ পায়- কে রাসুলকে অনুসরণ করে আর কে পশ্চাৎপদ হয়। আর এই কেব্লা পরিবর্তন বড়ই দুরূহ ব্যাপার হইয়া দাঁড়াইল, কিন্তু যাহাদিগকে আল্লাহ হেদায়েত করিয়াছেন (তাহাদের ব্যতীত) । আর আল্লাহ্ এমন নহেন যে, তোমাদের ঈমান বিনষ্ট করিবেন। বাস্তবিকই আল্লাহ্ মানুষের প্রতি খুবই স্নেহশীল, করুণাময়।
(১৪৪) আমি আকাশের দিকে বারংবার আপনার মুখমন্ডল উঠিতে দেখিতেছি, তাই আপনাকে আমি ফিরাইয়া দিব সেই কেবলার দিকেই যাহা আপনি পছন্দ করেন; তবে আপনার চেহারা (নামাযে) মসজিদে-হারামের (কা’বার) দিকে ফিরাইয়া লউন। আর তোমরা যেখানেই থাক স্বীয় চেহারা এদিকেই ফিরাও। আর এই আহলে-কিতাবরাও দৃঢ়রূপে জানে যে, ইহা খুবই সত্য, তাহাদের প্রভুরই তরফ হইতে। আর আল্লাহ্ তাহাদের এইসব কার্যকলাপ হইতে মোটেই বেখবর নহেন।
শানে নুযুল:
১। নবী করীম (দঃ) মদীনায় আসিয়াও ষোল সতর মাস পর্যন্ত বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করিয়া নামায পড়িতেন, অতঃপর তিনি কা’বার দিকে ফিরিয়া নামায পড়িতে আদিষ্ট হইলেন। ইহাতে ইহুদী, মুনাফেক এবং কোন কোন মুশরিকও নানা প্রকার সমালোচনা করিতে লাগিল। এই উপলক্ষ্যে আয়াতগুলি নাযিল হয়। (বঃকোঃ)
২। নামাযে কা’বা ঘরের দিকে মুখ করিতে আদেশ করা হইলে ইহুদীরা বলিতে লাগিল, কা’বাই যদি আসল কেব্লা হইয়া থাকে,তবে এতদিন বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে যে নামায পড়া হইয়াছে,তাহা বিনষ্ট হইয়াছে, আর ইতিমধ্যে যাহাদের মৃত্যু হইয়াছে, তাহারা পথভ্রষ্ট হইয়াছে। আয়াতে এই উক্তির অসারতা বর্ণিত হইয়াছে।
(১৪৫) আর যদি আপনি আহলে কিতাবদের সম্মুখে যাবতীয় প্রমাণাদিও উপস্থিত করেন, তবু তাহারা আপনার কেবলাকে গ্রহন করিবে না। আর আপনিও তাহাদের কেবলাকে গ্রহণ করিতে পারেন না। এবং ইহাদের কোন দলই অন্য দলের কেবলাকে গ্রহণ করে না। আর যদি আপনি তাহাদের আত্ম-প্রবৃত্তিকে গ্রহণ করেন আপনার নিকট জ্ঞান আসার পর, তবে নিশ্চয়ই আপনি যালেমদের মধ্যে পরিগণিত হইবেন।
الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَعْرِفُونَهُ كَمَا يَعْرِفُونَ أَبْنَاءَهُمْ ۖ وَإِنَّ فَرِيقًا مِّنْهُمْ لَيَكْتُمُونَ الْحَقَّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ
(১৪৬) যাহাদিগকে আমি কিতাব দিয়াছি, তাহারা রাসুল (দঃ) কে এইরূপ চিনে, যেরূপ তাহারা আপন পুত্রগনকে চিনিয়া থাকে। আর নিশ্চয়, ইহাদের কেহ কেহ বাস্তব সত্যকে ভালভাবে জানা সত্ত্বেও গোপন করিতেছেন।
(১৪৭) এই বাস্তব সত্য আপনার প্রভুর নিকট হইতে; সুতরাং আপনি কখনও সংশয়ীদের মধ্যে পরিগণিত হইবেন না।
(১৪৮) আর প্রত্যেক (ধর্মাবলম্বী) ব্যক্তির জন্য এক একটি কেবলা রহিয়াছে, যাহার দিকে সে মুখ করিয়া থাকে। সুতরাং তোমরা নেক কাজের দিকে ধাবিত হও। তোমরা যেখানেই থাক না কেন, আল্লাহ্ তোমাদের সকলকে হাযির করবেন।
শানে নুযুল:
১। সুতরাং ঐক্যের কোন উপায়ই নাই। আহলে কিতাবদের আপনার সঙ্গে যেরূপ জেদ রহিয়াছে, তদ্রুপ তাহাদের নিজেদের মধ্যেও ঐক্যে নাই, ইহাদের কোন দলই অন্য দলের কেবলাকে স্বীকার করে না। যেমন ইহুদীদের কেবলা বাইতুল মোকাদ্দাস এবং নাছারাদের কেবলা পূর্বদিক। আর তাহাদের এই সমস্ত কেবলা বর্তমানে রহিত হইয়া গিয়াছে, সুতরাং আপনি তাহা কিছুতেই গ্রহণ করিতে পারেন না। (বঃকোঃ)