সুরা-বাকারাহ্ বাংলা অর্থ (আয়াত ২৫০-২৬৯)

সুরা-বাকারাহ্ এর বাংলা
আয়াত-২৮৬

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু

وَلَمَّا بَرَزُوا لِجَالُوتَ وَجُنُودِهِ قَالُوا رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ

(২৫০) আর যখন সমরক্ষেত্রে জালূত ও তাহার সৈন্যবাহিনীর সম্মুখীন হইল, তখন বলিতে লাগিল, হে আমাদের প্রভু! আমাদের অন্তরে দৃঢ়তা নাযিল করুন। আর আমাদের পদ দৃঢ় রাখুন, আর আমাদিগকে এই কাফের সম্প্রদায়ের উপর বিজয়ী করুন।

فَهَزَمُوهُم بِإِذْنِ اللَّهِ وَقَتَلَ دَاوُودُ جَالُوتَ وَآتَاهُ اللَّهُ الْمُلْكَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَهُ مِمَّا يَشَاءُ ۗ وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَّفَسَدَتِ الْأَرْضُ وَلَـٰكِنَّ اللَّهَ ذُو فَضْلٍ عَلَى الْعَالَمِينَ

(২৫১) অনন্তর তালূতের-বাহিনী জালূতের দলকে আল্লাহর হুকুমে পরাস্ত করিয়া দিল। আর দাউদ (আঃ) জালূতকে হত্যা করিলেন, আর তাহাকে আল্লাহ্ পাক রাজত্ব ও জ্ঞান দান করিলেন, উপরন্তু আরও যাহাকিছু আল্লাহ্ ইচ্ছা করিলেন তাহাকে শিক্ষা দিলেন। আর যদি আল্লাহ্ তা‘আলা মানব সমাজের এক দলকে অন্য দল দ্বারা প্রদমিত না করিতে থাকিতেন, তবে বিশ্ব অশান্তিপূর্ণ হইয়া যাইত। কিন্তু আল্লাহ্ খবই অনুগ্রহশীল বিশ্বাসীর প্রতি।

تِلْكَ آيَاتُ اللَّهِ نَتْلُوهَا عَلَيْكَ بِالْحَقِّ ۚ وَإِنَّكَ لَمِنَ الْمُرْسَلِينَ

(২৫২) এই সমুদয় আল্লাহর আয়াত যাহা সঠিকভাবে পাঠ করিয়া শুনাইতেছি আপনাকে। আর নিশ্চয়, আপনি রাসুলদের অন্তর্ভুক্ত।

শানে নুযুল:

১। এই পরীক্ষার গৃঢ় রহস্য এই ছিল যে, যুদ্ধ-যাত্রার ধুমধামে অনেকে ঝোঁকের বশে সেনা দলে যোগদান করে। পরে তাহাদের উৎসাহে ভাটা দেখা দেয়। যুদ্ধ ক্ষেত্রে ইহাদের ভগ্নোৎ সাহের দরুন অটল ও দৃঢ় মনা যোদ্ধাদের মনেও দূর্বলতা আসিতে পারে। কাজেই এরূপ লোককে তালুতের সেনাবাহিনী হইতে বাহির করার উদ্দেশ্যেই আল্লাহ্ এই পরীক্ষা করেন। বস্তুতঃ প্রবল পিপাসায় প্রচুর পানি খাওয়া সত্ত্বেও নিযেকে সংযত রাখা ধৈর্যশীল হওয়ার পরিচায়ক। (বঃকোঃ)
২। তালুত ও জালুতের সেনাদল মুখোমুখী হইলে তালুত ঘোষনা করিলেন, জালূতকে যে হত্যা করিতে পারিবে তাহাকে আমি অর্ধেক রাজত্ব ও স্বীয় কন্যা দান করিব। হযরত দাঊদ গুলেল দ্বারা জালূতের মস্তক চূর্ণ করিয়া দিলেন। ওয়াদা অনুযায়ী তিনি তালূতের কন্যা ও অর্ধেক রাজত্ব পাইলেন। পরে সম্পূর্ণ রাজত্বই তাঁহার হস্তগত হয়। (বঃকোঃ)

تِلْكَ الرُّسُلُ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ ۘ مِّنْهُم مَّن كَلَّمَ اللَّهُ ۖ وَرَفَعَ بَعْضَهُمْ دَرَجَاتٍ ۚ وَآتَيْنَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ الْبَيِّنَاتِ وَأَيَّدْنَاهُ بِرُوحِ الْقُدُسِ ۗ وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا اقْتَتَلَ الَّذِينَ مِن بَعْدِهِم مِّن بَعْدِ مَا جَاءَتْهُمُ الْبَيِّنَاتُ وَلَـٰكِنِ اخْتَلَفُوا فَمِنْهُم مَّنْ آمَنَ وَمِنْهُم مَّن كَفَرَ ۚ وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا اقْتَتَلُوا وَلَـٰكِنَّ اللَّهَ يَفْعَلُ مَا يُرِيدُ

(২৫৩) এই রাসুলগণ এমন যে, আমি তাঁহাদের একজনকে অন্য জনের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়াছি। তাঁহাদের মধ্যে কেহ এমন আছেন যাঁহার সহিত আল্লাহ্ তা’আলা কথা বলিয়াছেন। আর তাঁহাদের মধ্যে কাহারাও পদ-মর্যাদা বৃদ্ধি করিয়া দিয়াছি। আর আমি ইব্নে মারইয়ামকে উজ্জ্বল প্রমাণসমুহ প্রদান করিয়াছি, এবং আমি তাহাকে সাহায্য করিয়াছি রূহুল কুদুস দ্বারা। আর যদি আল্লাহ্ ইচ্ছা করিতেন, তবে তাহাদের পরবর্তী (উম্মৎ) গণ পরস্পর যুদ্ধ-বিগ্রহ করিত না তাহাদের নিকট প্রমাণাদি আসিবার পর; কিন্তু তাহারা পরষ্পর মতবিরোধী হইল, সুতরাং তাহাদের কেহ ঈমান আনিল এবং কেহ কাফির রহিল। আর যদি আল্লাহ্ ইচ্ছা করিতেন, তবে তাহারা পরস্পর যুদ্ধ-বিগ্রহ করিত না। কিন্তু আল্লাহ্ যাহা ইচ্ছা করেন তাহাই করেন।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنفِقُوا مِمَّا رَزَقْنَاكُم مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِيَ يَوْمٌ لَّا بَيْعٌ فِيهِ وَلَا خُلَّةٌ وَلَا شَفَاعَةٌ ۗ وَالْكَافِرُونَ هُمُ الظَّالِمُونَ

(২৫৪) হে মুমিনগণ! ব্যয় কর ঐ সমস্ত বস্তু হইতে যাহা আমি তোমাদিগকে দিয়াছি, সেই দিন সমাগত হওয়ার পূর্বে যেদিন না কোন ক্রয়-বিক্রয় হইবে এবং না কোন বন্ধুত্ব হইবে এবং না কোন সুপারিশ চলিবে। আর কাফেরেরাই অবিচার করে।

اللَّهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ ۚ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ ۚ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ ۚ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ ۖ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا ۚ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ

(২৫৫) আল্লাহ্ (এইরূপ যে) তিনি ভিন্ন কেহ এবাদতের যোগ্য নহে; চিরঞ্জীব, সংরক্ষণকারী। না তন্দ্র তাঁহাকে অভিভূত করিতে পারে, আর না নিদ্রা। তাঁহারই সত্বাধীন রহিয়াছে যাহাকিছু আসমানসমূহে এবং যাহাকিছু যমিনে আছে। এমন ব্যক্তি কে আছে? যে তাঁহার নিকট সুপারিশ করিতে পারে তাঁহার অনুমতি ব্যতীত। তিনি অবগত আছেন তাহাদের (সৃষ্টির) উপস্থিত ও অনুপস্থিত অবস্থাবলী। আর ঐ সমুদয় সৃষ্টি, তাঁহার এলমের কোন বস্তুকেই স্বীয় জ্ঞানের আবেষ্টনীতে আনিতে পারে না। হাঁ, যে পরিমাণ তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁহার কুরসী আসমানসমূহ ও যমীনকে নিজের মধ্যে ধারণ করিয়া রাখিয়াছে, আর আল্লাহর পক্ষে এতদুভয়ের হেফাযত কিছুমাত্র কষ্টকর হয় না। এবং তিনি অতি উচ্চ মর্যাদাশালী, অতি মহান।

শানে নুযুল:

১। অর্থাৎ, ফেরেসতাদের মাধ্যম ব্যতীত নিজেই সরাসরি কথা বলিয়াছি। (বঃকোঃ)
২। অর্থাৎ, জিব্রাইল (আঃ) এর দ্বারা। ইজদীদের হাত হইতে ঈসা (আঃ) কে রক্ষা করার জন্য তিনি সর্বদা তাঁহার সঙ্গে থাকিতেন। (বঃকোঃ)
৩। অর্থাৎ, ধর্মের ব্যাপারে মতভেদ করিয়া পরস্পর হত্যাবৃত্তি করিত না। (বঃকোঃ)
৪। কিন্তু ইহাদের মতভেদের মধ্যে কতিপয় হেকমত ও রহস্য নিহিত থাকার কারনেই তাহাদের মধ্যে ধর্মমতের সমন্বয় সৃষ্টি করা হয় নাই। এই মতভেদের কারনেই তাহাদের মধ্যে মারামারি কাটাকাটির উদ্ভব হইল। (বঃকোঃ)
ফঃ রাসুলুল্লাহ্ (দঃ) এর রেসালাৎ অকাট্যভাবে প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও এক দল লোকের বিরুদ্ধাচারণের দরুন হুযুরের মনে কষ্ট হইত। তাই প্রাচীন যুগের পয়গম্বরদের সহিত তৎকালীন উম্মতদের বিরোধিতার কথা উল্লেখ করত হুযুর (দঃ) কে সান্ত¡না দেওয়া হইতেছে। (বঃকোঃ)

لَا إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ ۖ قَد تَّبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّ ۚ فَمَن يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِن بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىٰ لَا انفِصَامَ لَهَا ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

(২৫৬) ধর্মে (ইসলাম গ্রহনে) যবরদস্তী নাই। নিশ্চয়ই, হেদায়েত পৃথক হইয়া গিয়াছে পথভ্রষ্টতা হইতে; সুতরাং যে-ব্যক্তি শয়তানকে অমান্য করে এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, সে আক্ড়াইয়া ধরিল খুব শক্ত করে– যাহার কোন প্রকার বিচ্ছিন্নতা নাই। আর আল্লাহ্ খুব শ্রবণকারী, খুব জ্ঞাতা।

اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا يُخْرِجُهُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ ۖ وَالَّذِينَ كَفَرُوا أَوْلِيَاؤُهُمُ الطَّاغُوتُ يُخْرِجُونَهُم مِّنَ النُّورِ إِلَى الظُّلُمَاتِ ۗ أُولَـٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

(২৫৭) আল্লাহ্ উহাদের সাথী হন যাহারা ঈমান আনিয়াছে, তিনি তাহাদিগকে অন্ধকার হইতে বাহির করিয়া অথবা বাঁচাইয়া আনেন নুরের দিকে। আর যাহারা কাফের তাহাদের সাথী হয় শয়তানের দল। তাহারা উহাদিগকে নূর হইতে বাহির করিয়া অথবা বিরত রাখিয়া অন্ধকারের দিকে লইয়া যায়। এই প্রকার লোকই দোযখবাসী হইবে, তাহারা উহাতে অনন্তকাল অবস্থান করিবে।

أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِي حَاجَّ إِبْرَاهِيمَ فِي رَبِّهِ أَنْ آتَاهُ اللَّهُ الْمُلْكَ إِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّيَ الَّذِي يُحْيِي وَيُمِيتُ قَالَ أَنَا أُحْيِي وَأُمِيتُ ۖ قَالَ إِبْرَاهِيمُ فَإِنَّ اللَّهَ يَأْتِي بِالشَّمْسِ مِنَ الْمَشْرِقِ فَأْتِ بِهَا مِنَ الْمَغْرِبِ فَبُهِتَ الَّذِي كَفَرَ ۗ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ

(২৫৮) তুমি কি ঐ ব্যক্তির কাহিনী জ্ঞাত হও নাই, যে ব্যক্তি ইব্রাহীম (আঃ) এর সঙ্গে বিতর্ক করিয়াছিল স্বীয় পরওয়ারদিগার সম্বন্ধে, যেহেতু আল্লাহ্ তাহাকে রাজত্ব দিয়াছিলেন। যখন ইব্রাহীম (আঃ) বলিলেন, আমার রব এইরূপ যে, তিনি জীবন দান করেন এবং জীবন হরণ করেন। সে বলিল, আমিও জীবন দান করি এবং জীবন হরণ করি। ইব্রাহীম (আঃ) বলিলেন, আল্লাহ্ সূর্যকে পূর্ব দিক হইতে উদিত করেন, তুমি উহাকে পশ্চিম দিক হইতে উদিত করিয়া দাও। ইহাতে সেই কাফের হতভম্ব হইয়া গেল। আর আল্লাহ্ এমন বিপদগামীদিগকে হেদায়েত করেন না।

শানে নুযুল:

১। কিয়ামতের দিন নবীগণ ও ওলীগণ আল্লাহr অনুমতি লইয়া পাপি মু’মিনদের জন্য সুপারিশ করিবেন। (বঃকোঃ)
২। কুরসী আসমান ও যমিন হইতে অনেক গুণ বড় এবং আরশ হইতে বহু ছোট। আর আরশের কোন সীমায় বর্ণনা করা যায় না। (বঃকোঃ)
৩। অর্থাৎ, ইসলামের সৌন্দর্য অকাট্য প্রমাণে সুপ্রমাণিত এবং সুস্পষ্ট। যে বিষয়ের সৌন্দর্য অস্পষ্ট ও অপ্রকাশ্য তাহাতেই যবরদস্তির প্রয়োজন হয়। কাজেই মুলতঃ ইসলামে বল প্রয়োগের নীতি নাই। বনী সালেম ইবনে আওফ গোত্রের জনৈক মুসলমানের দুই ছেলে নাছারা ছিল। সে তাহাদিগকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করিবে কি না, রাসুলে করীম (দঃ) কে জিজ্ঞাসা করিলে এই আয়াত নাযিল হয়। (লুঃনুঃ)

أَوْ كَالَّذِي مَرَّ عَلَىٰ قَرْيَةٍ وَهِيَ خَاوِيَةٌ عَلَىٰ عُرُوشِهَا قَالَ أَنَّىٰ يُحْيِي هَـٰذِهِ اللَّهُ بَعْدَ مَوْتِهَا ۖ فَأَمَاتَهُ اللَّهُ مِائَةَ عَامٍ ثُمَّ بَعَثَهُ ۖ قَالَ كَمْ لَبِثْتَ ۖ قَالَ لَبِثْتُ يَوْمًا أَوْ بَعْضَ يَوْمٍ ۖ قَالَ بَل لَّبِثْتَ مِائَةَ عَامٍ فَانظُرْ إِلَىٰ طَعَامِكَ وَشَرَابِكَ لَمْ يَتَسَنَّهْ ۖ وَانظُرْ إِلَىٰ حِمَارِكَ وَلِنَجْعَلَكَ آيَةً لِّلنَّاسِ ۖ وَانظُرْ إِلَى الْعِظَامِ كَيْفَ نُنشِزُهَا ثُمَّ نَكْسُوهَا لَحْمًا ۚ فَلَمَّا تَبَيَّنَ لَهُ قَالَ أَعْلَمُ أَنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

(২৫৯) অথবা তোমাদের এইরূপ ঘটনা জানা আছে কি? যেমন, এক ব্যক্তি এমন এক পল্লীর ভিতর দিয়া যাইতেছিল যাহার ঘরগুলি স্বীয় ছাদের উপর পতিত হইয়াছিল। সে বলিতে লাগিল, কি উপায়ে আল্লাহ্ এই পল্লীকে জীবিত করিবেন উহার মৃত্যুর পর। সুতরাং আল্লাহ্ সেই ব্যক্তিকে একশত বৎসর পর্যন্ত মৃত অবস্থায় রাখিলেন; অতঃপর তাহাকে জীবিত করিয়া উঠাইলেন। আল্লাহ্ জিজ্ঞাসা করিলেন, তুমি কত কাল এই অবস্থায় ছিলে? সে বলিল, হয়ত এক দিন ছিলাম, কিংবা একদিনের চেয়েও কম, আল্লাহ্ বলিলেন, না বরং তুমি একশত বৎসর ছিলে, তুমি স্বীয় পানাহারের বস্তুর প্রতি দৃষ্টিপাত কর, উহা পচিয়া গলিয়া যায় নাই, এবং তোমার গাধার প্রতি দৃষ্টিপাত কর; এবং যেন তোমাকে মানুষের জন্য একটি নযীর করিয়া দেই। আর হাড়গুলির প্রতি দৃষ্টি কর, আমি উহাদিগকে কেমন করিয়া সংযোজিত করি; অনন্তর উহার উপর গোশ্ত স্থাপন করি; অনন্তর যখন এ-সমস্ত অবস্থা তাহার নিকট প্রকাশিত হইল। তখন সে বলিয়া উঠিল, আমি বিশ্বাস করি, নিশ্চয়, আল্লাহ্ যাবতীয় বস্তুর উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান।

وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ أَرِنِي كَيْفَ تُحْيِي الْمَوْتَىٰ ۖ قَالَ أَوَلَمْ تُؤْمِن ۖ قَالَ بَلَىٰ وَلَـٰكِن لِّيَطْمَئِنَّ قَلْبِي ۖ قَالَ فَخُذْ أَرْبَعَةً مِّنَ الطَّيْرِ فَصُرْهُنَّ إِلَيْكَ ثُمَّ اجْعَلْ عَلَىٰ كُلِّ جَبَلٍ مِّنْهُنَّ جُزْءًا ثُمَّ ادْعُهُنَّ يَأْتِينَكَ سَعْيًا ۚ وَاعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

(২৬০) আর সেই সময়কে স্মরণ কর যখন ইব্রহীম (আঃ) আরয করিলেন, হে আমার পরওয়ারদিগার! আমাকে দেখাইয়া দিন, আপনি মৃতকে কি প্রকারে জীবিত করিবেন; এরশাদ হইল, তুমি কি বিশ্বাস কর না? তিনি বলিলেন, বিশ্বাস কেন করিব না, তবে এই উদ্দেশ্যে আবেদন করিতেছি, যেন আমার অন্তর সান্তনা লাভ করে। আল্লাহ্ বলিলেন আচ্ছা, তবে চারিটি পাখী আন, অতঃপর ইহাদিগকে পোষ মানাইয়া লও; অতঃপর প্রত্যেক পাহাড়ের উপর উহাদের এক একটি অংশ রাখিয়া দাও; অতঃপর উহাদিগকে আহ্বান কর প্রত্যেকটি দৌড়িয়া দৌড়িয়া তোমার নিকট আসিবে। আর দৃঢ় বিশ্বাস রাখ, নিশ্চয়, আল্লাহ্ প্রতাপশালী, হেকমত ওয়ালা।

مَّثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنبُلَةٍ مِّائَةُ حَبَّةٍ ۗ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَن يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ

(২৬১) যাহারা আল্লার পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাহাদের ব্যয়িত ধন-সম্পদের অবস্থা এইরূপ– যেমন একটি শষ্য-বীজ যাহা হইতে সাতটি শীষ উৎপন্ন হয় প্রত্যেকটি শীষের মধ্যে শতশষ্য হয়। আর এই বৃদ্ধি আল্লাহ্ যাহাকে ইচ্ছা প্রদান করেন। আর আল্লাহ্ প্রশস্ততার মালিক, মহাজ্ঞানী।

الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ لَا يُتْبِعُونَ مَا أَنفَقُوا مَنًّا وَلَا أَذًى ۙ لَّهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ

(২৬২) যাহারা স্বীয় সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে, আর ব্যয় করার পর কৃপা প্রকাশ করে না এবং ক্লেশও দেয় না। তাহারা তাহাদের বিনিময় পাইবে স্বীয় রব্ এর নিকট, আর না তাহাদের কোন আশংকা হইবে আর না তাহারা চিন্তান্বিত হইবে।

শানে নুযুল:

১। নমরূদ ইব্রাহীম (আঃ) এর সহিত খোদা সম্বন্ধে তর্ক উত্থাপন করিলে ইব্রাহীম (আঃ) বলিলেন, আমার খোদা জীবন দান ও সংহার করিতে পারেন। উত্তরে নমরূদ দুইজন কয়েদিকে আনিয়া একজনকে হত্যা ও অপরজনকে মুক্ত করিয়া দিয়া বলিল, দেখ আমিও পারি। (মুঃকোঃ)
২। ইব্রাহীম (আঃ) দেখিলেন, নমরূদ একেবারেই স্থুল বুদ্ধি সম্পন্ন, কাজেই তিনি অন্য একটি প্রমাণ বর্ণনা করিলেন, যাহা স্থুল বুদ্ধি সম্পন্ন লোকও বুঝিতে পারে। বলিলেন আমার খোদা পূর্ব দিকে সূর্য উদিত করেন। তুমি পশ্চিম দিকে উদিত করিয়া দেখাও। এবারে কাফের হতভম্ব হইয়া গেল। (বঃকোঃ)
৩। ইনি হযরত উ’যাইর (আঃ)। কিয়ামত দিবসে পুনরুত্থান সম্বন্ধে আল্লাহর কুদরতে তাঁহার বিন্দুমাত্রও সন্দেহ ছিল না। কিন্তু কোন উপায়ে আল্লাহ্ তাহা করিবেন, তাহা জানিবার কৌতুহলেই অনিচ্ছাকৃতভাবে এই প্রশ্ন করিয়াছিলেন। (বঃকোঃ)

قَوْلٌ مَّعْرُوفٌ وَمَغْفِرَةٌ خَيْرٌ مِّن صَدَقَةٍ يَتْبَعُهَا أَذًى ۗ وَاللَّهُ غَنِيٌّ حَلِيمٌ

(২৬৩) সন্তুষ্টজনক কথা বলিয়া দেওয়া এবং ক্ষমা করা, ঐ দান অপেক্ষা (বহু) উত্তম যাহার পর কষ্ট প্রদান করা হয়। আর আল্লাহ্ অভাবশূন্য, ধৈর্যশীল।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُبْطِلُوا صَدَقَاتِكُم بِالْمَنِّ وَالْأَذَىٰ كَالَّذِي يُنفِقُ مَالَهُ رِئَاءَ النَّاسِ وَلَا يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۖ فَمَثَلُهُ كَمَثَلِ صَفْوَانٍ عَلَيْهِ تُرَابٌ فَأَصَابَهُ وَابِلٌ فَتَرَكَهُ صَلْدًا ۖ لَّا يَقْدِرُونَ عَلَىٰ شَيْءٍ مِّمَّا كَسَبُوا ۗ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ

(২৬৪) হে মু’মিনগণ! তোমরা কৃপা প্রকাশ করিয়া অথবা ক্লেশ প্রদান করিয়া তোমাদের দানসমূহকে বিনষ্ট করিও না ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে নিজের ধন দান করে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে এবং ঈমান রাখে না আল্লাহর প্রতি ও ক্বিয়ামত দিবসের প্রতি; সুতরাং ঐ ব্যক্তির অবস্থা এইরূপ, যেমন এক খন্ড মসৃণ পাথর, যাহার উপর কিছু পরিমাণ মাটি আছে। অনন্তর উহার উপর প্রবল বৃষ্টিপাত হয় এবং উহাকে পূর্ণরূপে পরিষ্কার করিয়া দেয়, এরূপ লোকের স্বীয় উপার্জন কিছুই হস্তগত হইবে না। আর আল্লাহ্ কাফেরদিগকে (পরকালে বেহেশ্তের) পথ দেখাইবেন না।

وَمَثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ وَتَثْبِيتًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ كَمَثَلِ جَنَّةٍ بِرَبْوَةٍ أَصَابَهَا وَابِلٌ فَآتَتْ أُكُلَهَا ضِعْفَيْنِ فَإِن لَّمْ يُصِبْهَا وَابِلٌ فَطَلٌّ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ

(২৬৫) আর ঐ সমস্ত লোকের ব্যয়িত মালের অবস্থা–যাহারা নিজেদের মাল ব্যয় করে আল্লার সন্তুষ্টি লাভের এবং স্বীয় আত্মাসমূহের দৃঢ়তা সাধনের উদ্দেশ্যে, (তাহাদের) দৃষ্টান্ত ঐ বাগানের ন্যায় যাহা কোন টিলার উপর অবস্থিত, যাহাতে প্রবল বৃষ্টিপাত না হয়, তবে হালকা বৃষ্টিও ইহার জন্য যথেষ্ট। আর আল্লাহ্ তোমাদের কর্মসমূহ পূর্ণরূপে দেখেন।

শানে নুযল:

১। আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী ইব্রাহীম (আঃ) পাখীগুলিকে খন্ড খন্ড করত কয়েক ভাগে বিভক্ত করিয়া বিভিন্ন পাহাড়ের উপর রাখিলেন। অতঃপর ডাক দেওয়া মাত্র উহারা পূর্বাকৃতি ধারন করত ছুটিয়া আসিল। আল্লাহ্ বলিলেন, ইব্রাহীম! শেষ দিবসে এইরূপেই সকল মৃতের বিক্ষিপ্ত অংশগুলিকে একত্রিত করিয়া তন্মুহুর্তে জীবিত করিব। (বঃকোঃ)
২। নেক কাজ তিন প্রকার। (ক) লোক দেখানো নেক কাজের কোনই সওয়াব নাই। (খ) সাধারন নিষ্ঠার সহিত কৃত নেক কাজের সওয়াব দশ গুণ। (গ) সমধিক নিষ্ঠার সহিত (এখলাছের স্তর অনুসারে) কৃত নেক কাজের সওয়াব দশ গুণ হইতে ৭ শত গুণ বরং তার চেয়েও অধিক সওয়াব দেওয়া হইবে। (বঃকোঃ)
৩। অর্থাৎ, খোঁটা দেওয়া, কথায় বা ব্যবহারে হেয় মনে করা অথবা খেদমত লওয়া, যদ্দারা সে মনে কষ্ট ও লজ্জা পায়। (মুঃকোঃ)

أَيَوَدُّ أَحَدُكُمْ أَن تَكُونَ لَهُ جَنَّةٌ مِّن نَّخِيلٍ وَأَعْنَابٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ لَهُ فِيهَا مِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ وَأَصَابَهُ الْكِبَرُ وَلَهُ ذُرِّيَّةٌ ضُعَفَاءُ فَأَصَابَهَا إِعْصَارٌ فِيهِ نَارٌ فَاحْتَرَقَتْ ۗ كَذَ‌ٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُونَ

(২৬৬) আচ্ছা,তোমাদের মধ্যে কেহ কি পছন্দ করে যে, তাহার একটি উদ্দ্যাদ থাকে খেজুর ও আঙ্গুরের যাহার তলদেশ দিয়া সহরসমূহ প্রবাহিত, তাহার ঐ উদ্দ্যানে (অনুরূপ আরও) সর্বপ্রকার ফল হয়, এবং সে ব্যক্তির বার্ধক্য আসিয়া পড়ে, আর তাহার সন্তানাদিও আছে যাহারা অক্ষম। অনন্তর সেই উদ্দ্যানে এক ঝঞ্ঝা বায়ু আসিয়া পড়ে যাহাতে অগ্নিপ্রবাহ থাকে। ফলে উদ্দ্যানটি জ্বলিয়া যায়। আল্লাহ্ এইরূপে নযীরসমূহ বর্ণনা করেন তোমাদের জন্য, যেন তোমরা চিন্তা করিয়া দেখ।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنفِقُوا مِن طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّا أَخْرَجْنَا لَكُم مِّنَ الْأَرْضِ ۖ وَلَا تَيَمَّمُوا الْخَبِيثَ مِنْهُ تُنفِقُونَ وَلَسْتُم بِآخِذِيهِ إِلَّا أَن تُغْمِضُوا فِيهِ ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ حَمِيدٌ

(২৬৭) হে মু’মিনগণ! তোমরা ব্যয় কর স্বীয় উপার্জন হইতে উত্তম বস্তু, আর উহা হইতে যাহা আমি তোমাদের জন্য ভূমি হইতে উৎপন্ন করিয়াছি। আর নিকৃষ্ট বস্তুর প্রতি মনস্থ করিও না যে, উহা হইতে ছদ্কা করিবে। অথচ তোমরা কখনও উহা গ্রহণকারী নও, হাঁ যদি ভ্রক্ষেপ না কর। আর দৃঢ় বিশ্বাস রাখ যে, আল্লাহ্ তা‘আলা কাহারও মুখাপেক্ষী নহেন, প্রশংসার যোগ্য।

الشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَيَأْمُرُكُم بِالْفَحْشَاءِ ۖ وَاللَّهُ يَعِدُكُم مَّغْفِرَةً مِّنْهُ وَفَضْلًا ۗ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ

(২৬৮) শয়তান তোমাদিগকে অভাবগ্রস্ত হওয়ার ভয় দেখায় এবং তোমাদিগকে অসৎ কাজের ( কৃপনতার) পরামর্শ দেয়। আর আল্লাহ্ তোমাদিগকে প্রতিশ্রুতি দেন তাঁহার পক্ষ হইতে ক্ষমা করার ও অধিক দেওয়ার। আর আল্লাহ্ প্রশস্ততার মালিক, মহা জ্ঞানী।

يُؤْتِي الْحِكْمَةَ مَن يَشَاءُ ۚ وَمَن يُؤْتَ الْحِكْمَةَ فَقَدْ أُوتِيَ خَيْرًا كَثِيرًا ۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ

(২৬৯) যাহাকে ইচ্ছা ধর্মের জ্ঞান প্রদান করেন। আর যে-ব্যক্তি ধর্ম-জ্ঞান প্রাপ্ত হয়, সে অতি কল্যাণের বস্তু প্রাপ্ত হইল। বস্তুতঃ নছীহত তাহারাই কবুল করে যাহারা বুদ্ধিমান।

শানে নুযুল:

১। অর্থাৎ, দাতার দানের ক্ষমতা না থাকিলে প্রার্থীকে সুন্দর ও নরম কথায় সন্তুষ্ট করিয়া দেওয়া। (বঃকোঃ)
২। প্রার্থী রুক্ষ ও বিরক্তিকর উক্তি দ্বারা দাতাকে রাগাইয়া তুলিলে, কিংবা মাফ চাওয়া সত্বেও বার বার চাহিয়া বিরক্ত করিলে তাহাকে ক্ষমা করা। (মুঃকোঃ)
৩। দান শুদ্ধ ও কবুল হওয়ার জন্য ঈমান থাকা যেমন শর্ত, তদ্রুপ লোক দেখানো উদ্দেশ্যে না থাকা, দান করিয়া দানের খোঁটা দিয়া প্রার্থীর মনে কষ্ট না দেওয়ার শর্ত। এই শর্তের অভাবেই মুনাফেক ও রিয়াকারের দানকে বাতেল বলা হইয়াছে। (বঃকোঃ)
৪। প্রবল বৃষ্টি বলিতে প্রচুর দান এবং হালকা বৃষ্টি বলিতে সামান্য দান বুঝান হইয়াছে। ফল কথা জমি উর্বর হইলে যেমন কোন অবস্থাতেই শষ্য নষ্ট হয় না তদ্রুপ এখলাছ থাকিলে অর্থাৎ লোক দেখানো উদ্দেশ্যে না থাকিলে দান নষ্ট হয় না। (মুঃকোঃ)