সূরা-আল-ইমরান বাংলা অর্থ (আয়াত ১৫২-১৮০)

আয়াত-২০০

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু

إِذْ تُصْعِدُونَ وَلَا تَلْوُونَ عَلَىٰ أَحَدٍ وَالرَّسُولُ يَدْعُوكُمْ فِي أُخْرَاكُمْ فَأَثَابَكُمْ غَمًّا بِغَمٍّ لِّكَيْلَا تَحْزَنُوا عَلَىٰ مَا فَاتَكُمْ وَلَا مَا أَصَابَكُمْ ۗ وَاللَّهُ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ

১৫৩। স্মরন কর, যখন তোমরা (পলায়নার্থে) আরোহণ করিতেছিলে, এবং কাহারও প্রতি ফিরিয়াও দেখিতেছিলে না, আর রাসূল পশ্চাৎ দিক হইতে তোমাদিগকে ডাকিতেছিলেন। অনন্তর আল্লাহ তোমাদিগকে তৎবিনিময়ে দুঃখ দিলেন, দুঃখ দেওয়ার দরুন; যেন তোমরা বিষন্ন না হও, না ঐ বস্তুর জন্য যাহা তোমাদের হাত ছাড়া হইয়া যায়, আর না উহার জন্য যে বিপদ তোমাদের উপর পতিত হয়। আর আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজের পূর্ণ খবর রাখেন।

ثُمَّ أَنزَلَ عَلَيْكُم مِّن بَعْدِ الْغَمِّ أَمَنَةً نُّعَاسًا يَغْشَىٰ طَائِفَةً مِّنكُمْ ۖ وَطَائِفَةٌ قَدْ أَهَمَّتْهُمْ أَنفُسُهُمْ يَظُنُّونَ بِاللَّهِ غَيْرَ الْحَقِّ ظَنَّ الْجَاهِلِيَّةِ ۖ يَقُولُونَ هَل لَّنَا مِنَ الْأَمْرِ مِن شَيْءٍ ۗ قُلْ إِنَّ الْأَمْرَ كُلَّهُ لِلَّهِ ۗ يُخْفُونَ فِي أَنفُسِهِم مَّا لَا يُبْدُونَ لَكَ ۖ يَقُولُونَ لَوْ كَانَ لَنَا مِنَ الْأَمْرِ شَيْءٌ مَّا قُتِلْنَا هَاهُنَا ۗ قُل لَّوْ كُنتُمْ فِي بُيُوتِكُمْ لَبَرَزَ الَّذِينَ كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقَتْلُ إِلَىٰ مَضَاجِعِهِمْ ۖ وَلِيَبْتَلِيَ اللَّهُ مَا فِي صُدُورِكُمْ وَلِيُمَحِّصَ مَا فِي قُلُوبِكُمْ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ

১৫৪। অনন্তর আল্লাহ সেই দুঃখের পর তোমাদের প্রতি নাযিল করিলেন শান্তি অর্থাৎ তন্দ্রা, যাহা তোমাদের একদলকে আচ্ছন্ন করিতেছিল, আর একদল উহারা ছিল যাহারা স্বীয় প্রাণেরই চিন্তায় বিব্রত ছিল, উহারা আল্লাহর সহিত অবাস্তব ধারনা করিতেছিল, যাহা ছিল মূর্খতাসুলভ ধানণা। উহারা এইরূপ বলিতেছিল–আমাদের কি কোন অধিকার আছে? আপনি বলিয়া দিন, সমস্ত অধিকার তো আল্লাহরই; তাহারা স্বীয় অনন্তর সমূহে এমন বিষয় গোপন রাখে, যাহা আপনাদের সমীপে প্রকাশ করে না। বলে, যদি আমাদের কোন এখতিয়ার চলিত, তবে আমরা এখানে নিহত হইতাম না। আপনি বলিয়া দিন, যদি তোমরা নিজেদের গৃহে থাকিতে, তথাপিও যাহাদের জন্য নিহত হওয়া নির্ধারিত ছিল, তাহারা বাহির হইয়া পড়িত ঐ স্থানের দিকে যে স্থানে তাহারা নিপতিত আছে। আর এসমস্ত যাহা কিছু ঘটিয়াছে, এই জন্য যেন আল্লাহ তোমাদের অন্তরের বিষয় পরিক্ষা করেন আর যেন তোমাদের অন্তরের বিষয় নির্মল করিয়া দেন। অবশ্য আল্লাহ তা‘আলা অন্তরের সমস্ত গোপনীয় বিষয় পূর্ণরূপে অবগত আছেন।

শানে নুযুল

১) অর্থাৎ প্রথমে মুসলমনেরাই জয়ী ছিল, কাফেরেরা পলায়ন করিতে লাগিল এবং মুসলমান তাহাদিগকে দৌড়াইয়া দৌড়াইয়া হত্যা করিতে লাগিলেন। বিজয়ের চিহ্ন তাহাদের মুখমন্ডলে বিদ্যামান। কেহ গনীমতের মালের জন্য আনন্দিত, কেহ ইসলামের বিজয়ের জন্য আনন্দিত, কিন্তু গিরিপথ রক্ষী সৈন্য তাহাদের কর্তব্যে অবহেলা করিলে যুদ্ধের গতি বিরূপ আকার ধারন করিল। অর্থাৎ গিরিপথ ত্যাগ করিয়া লন্ঠনে প্রবৃত্ত হইলে সুযোগ পাইয়া শত্রুরা পশ্চাদ্দিক হইতে আক্রমণ করিল।যদ্দরুন মুসলমানগণ ছত্রভঙ্গ হইয়া পড়িল। (মুঃ কোঃ)

إِنَّ الَّذِينَ تَوَلَّوْا مِنكُمْ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ إِنَّمَا اسْتَزَلَّهُمُ الشَّيْطَانُ بِبَعْضِ مَا كَسَبُوا ۖ وَلَقَدْ عَفَا اللَّهُ عَنْهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ حَلِيمٌ

১৫৫। নিশ্চয়, তোমাদের মধ্যে হইতে যাহারা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করিয়াছিল– যে দিন উভয় দল সম্মুখীন হইয়াছিল, ইহা ভিন্ন আর কিছুই নহে যে, শয়তান তাহাদেরকে পদস্থলিত করিয়া দিয়াছিল তাহাদের কতিপয় আমলের দরুন। এবং দৃঢ় বিশ্বাস রাখ যে, আল্লাহ তাহাদিগকে ক্ষমা করিয়া দিয়াছেন। নিশ্চয়, আল্লাহ মহা ক্ষমাপরায়ন, অতীব ধৈয্যশীল।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ كَفَرُوا وَقَالُوا لِإِخْوَانِهِمْ إِذَا ضَرَبُوا فِي الْأَرْضِ أَوْ كَانُوا غُزًّى لَّوْ كَانُوا عِندَنَا مَا مَاتُوا وَمَا قُتِلُوا لِيَجْعَلَ اللَّهُ ذَ‌ٰلِكَ حَسْرَةً فِي قُلُوبِهِمْ ۗ وَاللَّهُ يُحْيِي وَيُمِيتُ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ

১৫৬। হে ঈমানদারগণ! তোমরা তাহাদের মত হইও না যাহারা কাফের এবং নিজেদের ভাইদের সম্বন্ধে বলে– যখন তারা ভূপৃষ্ঠের কোথাও ভ্রমন করে, কিংবা কোথাও গাযী হয় (যুদ্ধে গমন করে)। যদি তাহারা আমাদের নিকট থাকিত, তবে মরিতও না এবং নিহতও হইত না। ফলে আল্লাহ এই উক্তিকে তাহাদের অন্তরে পরিতাপের কারণ করিয়া দেন। বস্তুতঃ আল্লাহই মারেন এবং বাঁচান এবং তোমরা যাহাকিছু কর আল্লাহ সবই দেখিতেছেন ।

শানে নুযুলঃ

১) অর্থাৎ যে পরিমান ক্ষতি হওয়া বহ্যিক ছিল। (বঃ কোঃ)
২) কেননা এই বিপদের সময় মুনাফেকদের মুনাফেকী ধরা পড়িয়াগিয়াছে এবং মু‘মিনদের ঈমান আরও মজবুত এবং পরিপক্ক হইয়াছে ।(বঃ কোঃ)
৩) অর্থাৎ তাহারা এমন কিছু অন্যায় ও পাপকার্য করিয়াছিল ,তদ্দরুন তাহাদের দ্বারা আরও কিছু পাপ কার্য করিয়ালইতে শয়তানের লোভ হইল। ঘটনাচত্রেু তাহার সেই লোভ পূর্ণ হইয়া গেল। (বঃ কোঃ)

وَلَئِن قُتِلْتُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَوْ مُتُّمْ لَمَغْفِرَةٌ مِّنَ اللَّهِ وَرَحْمَةٌ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ

১৫৭। আর যদি তোমরা আল্লাহর পথে নিহত হও কিংবা মৃত্যুবরণ কর, তবে নিশ্চয়, আল্লাহ হইতে প্রাপ্ত মার্জনা ও করুণা উহা হইতে উত্তম যাহা তাহারা সঞ্চয় করিতেছে।

وَلَئِن مُّتُّمْ أَوْ قُتِلْتُمْ لَإِلَى اللَّهِ تُحْشَرُونَ

১৫৮। আর যদি তোমরা (স্বভাবিকভাবে) মৃত্যুবরণ কর কিংবা নিহত হও, (তবুও) নিশ্চয়, তোমাদিগকে আল্লাহর সমীপে একত্রিত করা হইবে।

فَبِمَا رَحْمَةٍ مِّنَ اللَّهِ لِنتَ لَهُمْ ۖ وَلَوْ كُنتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ ۖ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ ۖ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ

১৫৯। ইতঃপর আল্লাহর করুণায় আপনি তাহাদের প্রতি বিনম্র রহিয়াছেন, আর যদি আপনি কর্কশ ও কঠোর স্বভাব হইতেন, তবে ইহারা সকলে আপনার নিকট হইতে বিক্ষিপ্ত হইয়া পড়িত। সুতরাং আপনি তাহাদিগকে মা’ফ করিয়া দিন এবং আপনি তাহাদিগের মাগফেরাতের জন্য প্রার্থনা করুণ, আর তাহাদের নিকট হইতে বিশেষ বিশেষ ব্যাপারে পরামর্শ নিতে থাকুন; অনন্তর যখন আপনি সংকল্প দৃঢ় করিয়া লন, তখন আল্লাহর প্রতি নির্ভর করুন। নিশ্চয়, আল্লাহ এমন নির্ভরশীলদিগকে ভালোবাসেন।

إِن يَنصُرْكُمُ اللَّهُ فَلَا غَالِبَ لَكُمْ ۖ وَإِن يَخْذُلْكُمْ فَمَن ذَا الَّذِي يَنصُرُكُم مِّن بَعْدِهِ ۗ وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ

১৬০। যদি আল্লাহ তোমাদিগকে সাহায্য করেন, তবে তো কেহ তোমাদের উপর জয়ী হতে পারেনা, আর যদি তিনি তোমাদেরকে সাহায্য না করেন, তবে তাহার পর এমন কে আছে, যে তোমাদের সাহায্য করিবে? আর শুধু আল্লাহর উপর মু’মিনদের ভরসা রাখা চাই।

وَمَا كَانَ لِنَبِيٍّ أَن يَغُلَّ ۚ وَمَن يَغْلُلْ يَأْتِ بِمَا غَلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۚ ثُمَّ تُوَفَّىٰ كُلُّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ

১৬১। আর নবীর শাসন এই নয় যে, তিনি খেয়ানত করেন। অথচ যে ব্যক্তি খেয়ানত করিবে, সে ব্যক্তি নিজের এই খিয়ানতকৃত বস্তু কিয়ামতের দিন উপস্থিত করিবে। অতঃপর প্রত্যেকে তাহার কৃতকর্মের পূর্ণ বিনিময় প্রাপ্ত হইবে, এবং তাহাদের প্রতি মোটেই যুলুম করা হইবে না।

শানে নুযুলঃ

১) কোন অবস্থাতেই আল্লাহর সমীপে উপস্তিত হওয়া হইতে আত্মগোপন করিতে পারিবে না। বস্তুত ধর্ম পথে প্রাণদান করা মাগফেরাত ও রহমত লাভের কারণ বটে। কাজেই স্বাভাবিক মৃত্যু অপেক্ষা ধর্মপথে শহীদ হওয়াই সর্বতোভাবে শ্রেষ্ঠ বলিয়া প্রমাণিত হইল। (বঃ কোঃ)
২) বদরের যুদ্ধের গনীমতের মালের মধ্যে হইতে একটি চাদর হারাইয়া যায়।গনীমালের স্তুপ হইতে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী কিছু বাছিয়া উঠাইয়া লওয়ার অধিকার হুযুরের আছে। এই ভাবিয়া কোন একজন মুসলমান গাযী অথবা রাসূলের প্রতি আস্থাহীন কোন মোনফেক বলিল, হইত ইহা হুযুর নিয়াছেন । এতদ- সর্ম্পকে আয়াতটি নাযিল  হয় । ইহার সারর্মম এই যে, অধিকার থাকিলে ও গোপনে নেওয়া প্রকৃত পক্ষে খেয়ানত করার শামিল । বস্তুতঃ নবীর স্বভাব খেয়ানত করা হইতে পবিত্র। (বঃ কোঃ)

أَفَمَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَ اللَّهِ كَمَن بَاءَ بِسَخَطٍ مِّنَ اللَّهِ وَمَأْوَاهُ جَهَنَّمُ ۚ وَبِئْسَ الْمَصِيرُ

১৬২। সুতরাং যে ব্যাক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির অনুগত, তিনি সেই ব্যক্তির সদৃশ হইতে পারেন, যে আল্লাহর গযবের যোগ্য? আর তাহার বাসস্থান জহান্নাম, এবং ইহা নিকৃষ্ট গন্তব্যস্থান।

هُمْ دَرَجَاتٌ عِندَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ بَصِيرٌ بِمَا يَعْمَلُونَ

১৬৩। এসমস্ত লোক মর্যদায় বিভিন্ন স্তরের হইবে আল্লাহর নিকট। আর আল্লাহ পূর্ণরূপে দেখেন তাহার আমলসমূহ।

لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ

১৬৪। বস্তুতঃ আল্লাহ মু’মিনদের প্রতি অনুগ্রহ করিয়াছেন, যখন তাহাদের প্রতি তাহাদের মধ্যে হইতে এমন এক নবী প্রেরণ করিয়াছেন, যিনি তাহাদিগকে আল্লাাহর আয়াত সমূহ তিলওয়াত করিয়া শুনান এবং তাহাদিগকে পরিশুদ্ধ করিতে থাকেন এবং কিতাব ও জ্ঞানের শিক্ষা দিতে থাকেন, এবং নিশ্চয় তাহারা পূর্ব হইতে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে ছিল।

أَوَلَمَّا أَصَابَتْكُم مُّصِيبَةٌ قَدْ أَصَبْتُم مِّثْلَيْهَا قُلْتُمْ أَنَّىٰ هَـٰذَا ۖ قُلْ هُوَ مِنْ عِندِ أَنفُسِكُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

১৬৫। আর যখন তোমাদের এইরূপ পরাজয় হইল যাহা অপেক্ষা দ্বিগুন তোমরা জয় লাভ করিয়া ছিলে, তবে কি এমন সময় তোমরা এইরূপ বলিতেছ যে, ইহা কোথা হইতে হইল? আপনি বলিয়া দিন, এই পরাজয় বিশেষ করিয়া তোমাদের পক্ষ হইতে হইয়াছে। নিশ্চয়; সর্ববিষয়োপরি আল্লাহ তা‘আলার পূর্ণ ক্ষমতা রহিয়াছে।

وَمَا أَصَابَكُمْ يَوْمَ الْتَقَى الْجَمْعَانِ فَبِإِذْنِ اللَّهِ وَلِيَعْلَمَ الْمُؤْمِنِينَ

১৬৬। আর যে বিপদ তোমাদের উপর পতিত হইয়া ছিল–যে দিন উভয় দল পরস্পর মুখোমুখি হইয়াছিল। তাহা আল্লাহর ইচ্ছা ক্রমেই হইয়াছিল। এবং যেন তিনি মু’মিনদিগকে দেখিয়া লন।

শানে নুযুল

১) বিশ্বাসঘাতক ব্যক্তি যাহা আত্মসাৎ করিয়াছে কিয়ামতের দিন তাহা লইয়া উপস্থিত হইবে। এসম্বন্ধে হাদীসে হুযুর (দঃ) বলিয়াছেন দেখ আমি যেন কিয়ামতে কাহাকেও এইরূপ আবস্থায় না দেখি যে, তাহার কাধে একটি উট চাপান রহিয়াছে, সে চিৎকার করিয়া আমার নিকট সাহায্য চাহিতেছে। আমি পরিস্কার বলিয়া দিতেছি যে, আমি এখন আর কিছু করিতে পারিব না। আমি তোমাদের নিকট আল্লাহর আদেশ পৌছাইয়া দিয়াছিলাম। (বঃ কোঃ)
২) অর্থাৎ তোমরা বদরের যুদ্ধে সত্তর জন কাফের হত্যা করিয়াছ এবং সত্তর জনকে বন্দী করিয়াছ। ওহুদের যুদ্ধে তোমাদের সত্তর জন শহীদ হইয়াছে তাহাতে দুঃখিত হইতেছে কেন? ইহা তো তোমাদেরকৃত ত্রুটিরই ফল। (মুঃ কোঃ)

وَلِيَعْلَمَ الَّذِينَ نَافَقُوا ۚ وَقِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا قَاتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَوِ ادْفَعُوا ۖ قَالُوا لَوْ نَعْلَمُ قِتَالًا لَّاتَّبَعْنَاكُمْ ۗ هُمْ لِلْكُفْرِ يَوْمَئِذٍ أَقْرَبُ مِنْهُمْ لِلْإِيمَانِ ۚ يَقُولُونَ بِأَفْوَاهِهِم مَّا لَيْسَ فِي قُلُوبِهِمْ ۗ وَاللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا يَكْتُمُونَ

১৬৭। আর ঐ সকল লোকদিগকেও দেখিয়া লন, যাহারা মুনাফেকীর কাজ করিয়াছে; এবং তাহাদিগকে এইরূপ বলা হইয়াছিল যে–আস, আল্লাহর পথে যুদ্ধ কর অথবা শত্রুদের প্রতিরোধকারী হইয়া যাও। তাহারা বলিল, যদি আমরা কোন নিয়ামত যুদ্ধ দেখিতাম, তবে অবশ্যই তোমাদের সঙ্গী হইয়া যাইতাম। এই মুনাফেকরা সেই দিন কুফরেরই অধিক নিকটবর্তী হইয়াগিয়াছিল ঈমানের নিকটবর্তী হওয়া অপেক্ষা। ইহারা মুখে এমন উক্তি করে, যাহা তাহাদের অন্তরে নাই। আর আল্লাহ সমধিক জ্ঞাত আছেন, যাহাকিছু তাহারা অন্তরে পোষন করে।

الَّذِينَ قَالُوا لِإِخْوَانِهِمْ وَقَعَدُوا لَوْ أَطَاعُونَا مَا قُتِلُوا ۗ قُلْ فَادْرَءُوا عَنْ أَنفُسِكُمُ الْمَوْتَ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ

১৬৮। ইহারা এমন লোক যাহারা স্বীয় ভাইদের সম্বন্ধে (গৃহে) বসিয়া সমালোচনা করে — যদি আমাদের কথা মানিত, তবে নিহত হইত না। আপনি বলিয়া দিন, আচ্ছা, তবে নিজেদের উপর হইতে মৃত্যুকে সরাইয়া দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হইয়া থাক।

وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا ۚ بَلْ أَحْيَاءٌ عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ

১৬৯। আর যাহা আল্লাহ তা‘আলার পথে নিহত হইয়াছে তাহাদিগকে (অন্যান্য মৃতের ন্যায়) মৃত ধারনা করিও না; বরং তাহারা জীবিত, স্বীয় রŸের নৈকট্য প্রাপ্ত, তাহারা রেযেকও প্রাপ্ত হয়।

فَرِحِينَ بِمَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ وَيَسْتَبْشِرُونَ بِالَّذِينَ لَمْ يَلْحَقُوا بِهِم مِّنْ خَلْفِهِمْ أَلَّا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ

১৭০। তাহারা পরিতুষ্ট ঐ সমস্ত বস্তুতে যাহা তাহাদিগকে আল্লাহ তা‘আলার স্বীয় অনুগ্রহে দান করিয়াছেন, আর যাহারা তাহাদের নিকট পৌছে নাই, পিছনে (দুনিয়াতে) রহিয়া গিয়াছে, উহাদের এই আবস্থার প্রতিও তাহারা (শহীদানরা) সন্তুষ্ট হয় যে, তাহাদেরও কোনভয় (জনক অবস্থা) ঘটিবে না। এবং তাহারা বিষন্ন ও হইবে না।

শানে নুযুল

১) ইহা যুদ্ধ নহে, কেননা শত্রু সৈন্য তোমাদের চেয়ে তিন চারি গুণ বেশি। তদুপরী তাহাদের সাজ সরঞ্জামও অধিক এমতা অবস্থায় যুদ্ধ করার অর্থ ধ্বংসের সম্মুখিন হওয়া ।ইহাকে নিয়মিত যুদ্ধ বলা যায় না (বঃ কোঃ)
২) কেননা প্রথম হইতেও ইহারা মু‘মিন ছিল না; কিন্তু মুসলমানদের সম্মুখে অনুকুল বলি আওড়াইত, সে দিন চক্ষু লজ্জা এইরূপে হারাইয়া বসিল যে, স্পষ্টরূপে বিরধিতা করিতে লাগিল অতএব তাহারা পূর্বে যেমন নিজেদিগকে ঈমাণের নিকটবর্তী মনে করিত আজ উহা কুফরের নিকটবর্তী অবস্থায় পরিবর্তীত হইল। (বঃ কোঃ)
৩) কেননা, তাহারা মনে মনে স্থির করিয়াছিল, নিয়মিত যুদ্ধ হইলে ও মুসলমানদের সাহায্য করিবেনা। (বঃ কোঃ)
৪) অর্থাৎ মৃত্যুকে কেহ কখন প্রতিরোধ করিতে পারে না। মৃত্যু ঘরে আসিবে। যুদ্ধ ক্ষেত্রেও আসিবে। অতএব যুদ্ধ ক্ষেত্র হইতে সরিয়া থাকিলে কি লাভ? (বঃ কোঃ)

يَسْتَبْشِرُونَ بِنِعْمَةٍ مِّنَ اللَّهِ وَفَضْلٍ وَأَنَّ اللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجْرَ الْمُؤْمِنِينَ

১৭১। তাহারা আনন্দিত হয় আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহের দরুন, আর এই জন্য যে, আল্লাহ মু’মিনদের আমলের প্রতিদান ব্যর্থ করেন না।

الَّذِينَ اسْتَجَابُوا لِلَّهِ وَالرَّسُولِ مِن بَعْدِ مَا أَصَابَهُمُ الْقَرْحُ ۚ لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا مِنْهُمْ وَاتَّقَوْا أَجْرٌ عَظِيمٌ

১৭২। যাহারা আল্লাহ ও তাহার রাসূলের ডাকে সারা দিয়াছে ইহার পর যে, তাহারা আঘাত প্রাপ্ত হইয়াছিল। তন্মধ্য যাহারা নেককার ও মুত্তাক্কী তাহাদের জন্য মহা পুরস্কার রহিয়াছে।

الَّذِينَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ إِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ إِيمَانًا وَقَالُوا حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ

১৭৩। তাহারা এমন লোক যে, (কোন কোন) মানুষ তাহাদিগকে বলিল, নিশ্চয়, তাহারা (কাফেরেরা) তোমাদের (বিরুদ্ধে যুদ্ধের) জন্য আয়োজন করিয়াছে, সুতরাং তোমাদের তাহাদিগকে ভায় করা উচিত। পরন্ত ইহা তাহাদের ঈমানকে আরও বর্ধিত করিয়া দিল, আর তাহারা বলিল যে, আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট এবং তিনিই যাবতীয় কর্ম সমর্পণের জন্য উত্তম।

فَانقَلَبُوا بِنِعْمَةٍ مِّنَ اللَّهِ وَفَضْلٍ لَّمْ يَمْسَسْهُمْ سُوءٌ وَاتَّبَعُوا رِضْوَانَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ ذُو فَضْلٍ عَظِيمٍ

১৭৪। সুতরাং তাহার প্রত্যাবর্তন করিল খোদার নেয়ামত এবং অনুগ্রহে পরিপুষ্ট হইয়া। তাহাদেরকে কোন অসুবিধা মোটেই স্পর্শ করে নাই এবং তাহারা আল্লাহর সন্তুষ্টির অনুগত রহিয়াছে; আর আল্লাহ অতি অনুগ্রহশীল।

إِنَّمَا ذَ‌ٰلِكُمُ الشَّيْطَانُ يُخَوِّفُ أَوْلِيَاءَهُ فَلَا تَخَافُوهُمْ وَخَافُونِ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ

১৭৫। উহারা শয়তান ভিন্ন আর কিছু নহে, সে (তোমাদিগকে) স্বীয় বন্ধুদের ভয় প্রদর্শন করে; সুতরাং তোমরা তাহাদিগকে ভয় করিও না, এবং আমাকেই ভয় কর, যদি তোমরা মু’মিন হও।

وَلَا يَحْزُنكَ الَّذِينَ يُسَارِعُونَ فِي الْكُفْرِ ۚ إِنَّهُمْ لَن يَضُرُّوا اللَّهَ شَيْئًا ۗ يُرِيدُ اللَّهُ أَلَّا يَجْعَلَ لَهُمْ حَظًّا فِي الْآخِرَةِ ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ

১৭৬। আর আপনার জন্য ঐ সমস্ত লোক চিন্তার কারণ না হওয়া উচিত, যাহারা দ্রুত কুফুরিতে লিপ্ত হয়, নিশ্চয়, তাহারা আল্লাহর (দ্বীনের) একটুও অনিষ্ট করিতে পারিবে না; আল্লাহর ইচ্ছা ইহাই যে, তাহাদিগকে পরকালে অদৌ কোন অংশ না দেন, এবং তাহাদের কঠোর শাস্তি হইবে।

শানে নুযুল

১) ওহুদের যুদ্ধ হইতে প্রত্যাবর্তনকালে পথে কাফেরদের আক্ষেপ হইল, মুসলমানদিগকে পরাজিত করিয়া সমূলে বিনাশ করিলাম না, আবার চল শেষ করিয়া আসি । আল্লাহ যাহাদের অন্তরে ভয়ের সঞ্চর করিয়া দিলেন । অতএব তাহার মক্কাভীমুখে ফিরিয়া গেল, পথিমধ্যে কোন যাত্রীকে বলিয়া গেল, তোমরা মদীনায় পৌছিয়া কোন উপায়ে মুসলমানদের মনে আমাদের ভয় সঞ্চার করিও । হুযুর ওহী মারফত ইহা জানিতে পারিয়া সাহাবাগণসহ কাফেরদের পশ্চাদ্ধবন করিয়া হামরাউল আসাদ নামক স্থানে পৌছিয়াশিবির স্থাপন করিলেন। (বঃ কোঃ)
২) আবূ সুফিয়ান খবর পাঠাইল ক্বোরাইশগণ পুনরায় মদীনা আক্রমন করিবে। এই সংবাদ প্রাপ্ত হইয়া সাহাবাগণ বলিয়া উঠিলেন আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং উত্তম কার্যনির্বাহক। আমরা কোন ভয় করি না। (বঃ কোঃ)

إِنَّ الَّذِينَ اشْتَرَوُا الْكُفْرَ بِالْإِيمَانِ لَن يَضُرُّوا اللَّهَ شَيْئًا وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

১৭৭। নিশ্চয়, যাহারা ঈমানের স্থলে কুফরকে গ্রহন করিয়াছে,তাহারা আল্লাহর বিন্দমাত্র ক্ষতিও করিতে পারিবে না ,আর তাহাদের যন্ত্রনাময় শাস্তি হইবে।

وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّمَا نُمْلِي لَهُمْ خَيْرٌ لِّأَنفُسِهِمْ ۚ إِنَّمَا نُمْلِي لَهُمْ لِيَزْدَادُوا إِثْمًا ۚ وَلَهُمْ عَذَابٌ مُّهِينٌ

১৭৮। আর যাহারা কুফর করিতেছে তাহারা যেন কখনও এই ধারনা না করে যে, আামি তাহাদিগকে যে অবকাশ দিতেছি –ইহা তাহাদের জন্য মঙ্গলজনক! আমি ইহাদিগকে শুধু এই জন্য অবকাশ দিতেছি, যেন তাহাদের পাপ আরও বৃদ্ধি পায়। আর তাহাদের লাঞ্ছনাময় শাস্তি হইবে।

مَّا كَانَ اللَّهُ لِيَذَرَ الْمُؤْمِنِينَ عَلَىٰ مَا أَنتُمْ عَلَيْهِ حَتَّىٰ يَمِيزَ الْخَبِيثَ مِنَ الطَّيِّبِ ۗ وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَيْبِ وَلَـٰكِنَّ اللَّهَ يَجْتَبِي مِن رُّسُلِهِ مَن يَشَاءُ ۖ فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ ۚ وَإِن تُؤْمِنُوا وَتَتَّقُوا فَلَكُمْ أَجْرٌ عَظِيمٌ

১৭৯। আল্লাহ মুসলমানদিগকে এই অবস্থায় রাখিতে চাহেন না যে অবস্থায় তোমরা এখন (বর্তমান) আছ, যে পর্যন্ত না অপবিত্রকে পবিত্র হইতে পৃথক করেন; এবং আল্লাহ এইরূপ অদৃশ্য বিষয় তোমাদিগকে অবহিত করেন না, হাঁ, আল্লাহ স্বয়ং যাহাকে চাহেন তাহাকে (পরিজ্ঞাত করার জন্য) মনোনীত করেন–আর তাহারা আল্লাহর পয়গম্বর হইবেন। সুতরাং এখন আল্লাহর এবং তাহার সকল রাসূলের প্রতি ঈমান আন। আর যদি তোমরা ঈমান আন এবং পরহেয কর, তাহা হইলে তোমাদের জন্য মহা পুরস্কার রহিয়াছে।

وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ هُوَ خَيْرًا لَّهُم ۖ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّهُمْ ۖ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُوا بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۗ وَلِلَّهِ مِيرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ

১৮০। আর কখনও যেন ধারণা না করে এইরূপ লোক, যাহারা কৃপণতা করে ঐ বস্তুতে যাহা তাহাদিগকে আল্লাহ স্বীয় করুণায় দান করিয়াছেন– উহা তাহাদের জন্য মঙ্গলজনক হইবে; বরং তাহা উহাদের জন্য খুবই অমঙ্গলজনক। তাহাদিগকে কিয়ামতের দিন তওক পরাইয়া দেওয়া হইবে উহার (ঐ মালে) যাহাতে তাহারা কৃপণতা করিয়াছিল। বস্তুতঃ অবশেষে আসমান ও যমীন আল্লাহ তা‘আলারই থাকিয়া যাইবে। আর আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কর্মের পূর্ণ খবর রাখেন।

শানে নুযুলঃ

১) মুনফেকরা মুসলমানদিগকে একটু দুর্বল দেখিলেই কুফরী উক্তি আরাম্ভ করিত তাহাদের এই বিরোধিতা ইসলামের প্রগতিতে কোনরূপ প্রতিবদ্ধকতা আসিয়া পড়ে, এই আশাংকায় হুযুরের মনে কষ্ট হইত। সুতরাং এই আয়াতে হুযুরকে সান্তনা দেওয়া হইতেছে। (বঃ কোঃ)
২) কাফেরেরা বলিত আমরা এখানে সুখ শান্তিতে আছি, ইহাতে বুঝা যায়, আল্লাহ আমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট নহেন, অতএব পরকাল বলিয়া কিছু থাকিলে সেখানেও আমরা সুখেই থাকিব। (বঃ কোঃ)
৩) কাফেরেরা এইরূপ সন্দেহ করিতে পারে যে, মুসলমানেরা আল্লাহর মাকবূল বান্দা হইলে ওহুদের যুদ্ধে পরাজিত হইল কেন? এবং তাহাদের প্রতি বিপদ আপদই বা আসে কেন? আল্লাহ এই আয়াতে সকল বিপদ আপদে নিহিত রহ্যস্যাদি বর্ণনা করিয়া তাহাদের সন্দেহ দূর করিতেছেন। (বঃ কোঃ)