আয়াত-১৭৬
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا
১। হে মানব! স্বীয় প্রতিপালক (-এর বিরোধিতা)-কে ভয় কর, যিনি তোমাদিগকে এক-ই প্রাণী (আদম আঃ) হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন, এবং ঐ প্রাণী হইতে তাঁহার জোড়া (বিবি হাওয়াকে) সৃষ্টি করিয়াছেন এবং এতদুভয় হইতে বহু নর ও নারী বিস্তার করিয়াছেন, আর তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর, যাঁহার নামে তোমরা পরস্পরের নিকট (স্বীয় হকের) দাবী করিয়া থাক এবং আত্মীয়তা (-এর হক বিনষ্ট করা) হইতেও ভয় কর; নিশ্চয়, আল্লাহ্ তোমাদের সকলের খবর রাখেন।
وَآتُوا الْيَتَامَىٰ أَمْوَالَهُمْ ۖ وَلَا تَتَبَدَّلُوا الْخَبِيثَ بِالطَّيِّبِ ۖ وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَهُمْ إِلَىٰ أَمْوَالِكُمْ ۚ إِنَّهُ كَانَ حُوبًا كَبِيرًا
২। আর এতীমদেও ধন সম্পত্তি তাহাদিগকে দিতে থাক এবং তোমরা উত্তম বস্তুর সহিত নিকৃষ্ট বস্তুর বিনিময় করিও না এবং তাহাদের ধন-সম্পত্তি ভোগ করিও না নিজেদের ধন-সম্পত্তি থাকা পর্যন্ত; এনরূপ করা গুরুতর পাপ।
وَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تُقْسِطُوا فِي الْيَتَامَىٰ فَانكِحُوا مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاءِ مَثْنَىٰ وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ ۖ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَدْنَىٰ أَلَّا تَعُولُوا
৩। আর যদি তোমাদের এ বিষয়ের আশঙ্কা থাকে যে, তোমরা এতীম বালিকাদের ব্যাপারে সুবিচার করিতে পারিবে না, তাহলে অন্যান্য নারী হইতে যাহারা তোমাদের মনঃপূত হয় বিবাহ করিয়া লও, দুই দুইটি, তিন তিনটি, চারি চারিটি নারীকে, অতঃপর যদি তোমাদের এই আশঙ্কা থাকে যে, ইনসাফ করিতে পারিবে না তাহলে একই বিবিতে ক্ষান্ত থাকিবে অথচ যে দাসী তোমাদের স্বত্বাধিকারে আছে তাহাই যথেষ্ট; এই উল্লেখিত বিধানে অন্যায় না হওয়ার সম্ভাবনাই সমধিক।
وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ۚ فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا
৪। আর তোমরা স্ত্রীদিগকে তাহাদের মহর সন্তুষ্টিচিত্তে দিয়া দাও; হাঁ তবে যদি স্ত্রীগন সন্তুষ্টিচিত্তে তোমাদিগকে উক্ত মহরের কিয়দংশ ছাড়িয়া দেয়, তবে তোমরা উহা মর্যাদার-তৃপ্তিকর মনে করিয়া উপভোগ কর।
শানে নুযূল
(১) অর্থাৎ, হযরত আদম (আঃ)-এর বাম পাঁজর হইতে তাঁহার স্ত্রী হাওয়া (আঃ)-কে পয়দা করিয়াছেন। অতঃপর এই দম্পত্তিযুগল হইতে দুনিয়ার সকল মানুষকে সৃষ্টি করিয়াছেন।(মুঃ কোঃ)
(২) যেমন কাহারও প্রতিপালনে কোন এতীম ধনবতী ও সুন্দরী বালিকা থাকিলে, তাহার অর্থ ও রূপের মোহে সে নিজেই তহাকে বিবাহ করিতে চাহিত কিন্তু সর্বদিক দিয়া তাহার অধিন হওয়ার এবং এই এতীম বালিকার হক্ব বুঝিয়া লওয়ার অন্য কোন অভিভাবক না থাকায় এই বালিকাকে অন্যে যে মহর দিত সে তাহা দিত না। আল্লাহ্ এই আয়াতে তৎসম্বন্ধে ব্যবস্থা দিতেছেন। বোখারী শরীফে হযরত আয়েশা হইতে এনরূপ বর্ণিত আছে। (বঃ কোঃ)
মাস্আলাঃ ন্যায় বিচার করিতে না পারার প্রবল সম্ভবনা থাকিলে একাধিক বিবাহ করিলে গুনাহ্গার হইবে।
মাস্আলাঃ বর্তমানে বাসায় যে চাকরানী রাখা হয় ইহারা শরীঅত সম্মত দাসী নহে। (বঃ কোঃ)
وَلَا تُؤْتُوا السُّفَهَاءَ أَمْوَالَكُمُ الَّتِي جَعَلَ اللَّهُ لَكُمْ قِيَامًا وَارْزُقُوهُمْ فِيهَا وَاكْسُوهُمْ وَقُولُوا لَهُمْ قَوْلًا مَّعْرُوفًا
৫। আর তোমরা অল্প বুদ্ধিসম্পন্ন (বালেগ এতীম)-দিগকে (তাহাদের) স্বীয় ঐ মাল প্রদান করিও না যাহা আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের (সকল মানবের) জন্য জীবন ধারণের উপকরণ করিয়া দিয়াছেন এবং ঐ ধন সম্পত্তির মধ্য হইতে তাহাদিগকে খাওয়াইতে থাক এবং তাহাদেও সহিত যুক্তিসঙ্গত কথা বলিতে থাক।
وَابْتَلُوا الْيَتَامَىٰ حَتَّىٰ إِذَا بَلَغُوا النِّكَاحَ فَإِنْ آنَسْتُم مِّنْهُمْ رُشْدًا فَادْفَعُوا إِلَيْهِمْ أَمْوَالَهُمْ ۖ وَلَا تَأْكُلُوهَا إِسْرَافًا وَبِدَارًا أَن يَكْبَرُوا ۚ وَمَن كَانَ غَنِيًّا فَلْيَسْتَعْفِفْ ۖ وَمَن كَانَ فَقِيرًا فَلْيَأْكُلْ بِالْمَعْرُوفِ ۚ فَإِذَا دَفَعْتُمْ إِلَيْهِمْ أَمْوَالَهُمْ فَأَشْهِدُوا عَلَيْهِمْ ۚ وَكَفَىٰ بِاللَّهِ حَسِيبًا
৬। আর তোমরা এতীমদিগকে পরীক্ষা করিয়া লও, এপর্যন্ত যে, যখন তাহারা বিবাহে (-র বয়সে) পৌঁছিয়া যায়, অনন্তর যদি তাহাদের মধ্যে কিয়ৎ পরিমাণ বুদ্ধিমাত্তা দেখ তবে তাহাদের ধন-সম্পত্তি তাহাদিগকে সমর্পণ করিয়া দাও, আর ঐ সমস্ত সম্পত্তি ভক্ষণ করিও না অপব্যয়ে এবং তাড়াতাড়ি করিয়া এই ধারণায় যে, তাহারা বালেগ হইয়া যাইবে; আর যে ব্যক্তি অভাবমুক্ত হইবে সে নিজকে সম্পূর্ণ বিরত রাখিবে, আর যে ব্যক্তি অভাবী হইবে সে সঙ্গত পরিমাণ ভোগ করিবে; অতঃপর যখন তাহাদের মাল তাহাদের হাতে সমর্পণ করিবে তখন ইহাকে (মাল সমর্পণের) উপর সাক্ষ্য রাখিও; এবং আল্লাহ্ই হিসাব গ্রহনকারী হিসাবে যথেষ্ট।
لِّلرِّجَالِ نَصِيبٌ مِّمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِّمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ مِمَّا قَلَّ مِنْهُ أَوْ كَثُرَ ۚ نَصِيبًا مَّفْرُوضًا
৭। পুরুষদের জন্যও (তাহারা ছোট হোউক বা বড় হউক ) অংশ নির্ধারিত রহিয়াছে উহা হইতে যাহা পিতামাতা এবং নিকট আত্মীয়গন ছাড়িয়া যায় -এবং নারীদেও জন্যও চোট হউক বা বড় হউক ) অংশ (নির্ধারিত) রহিযাছে, যাহা পিতামাতা এবং নিকট-আত্মীয়গণ ছাড়িয়া যায়-সে বস্তু অল্পই হউক আর বেশীই হউক; অংশ অকাট্য।
وَإِذَا حَضَرَ الْقِسْمَةَ أُولُو الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينُ فَارْزُقُوهُم مِّنْهُ وَقُولُوا لَهُمْ قَوْلًا مَّعْرُوفًا
৮। আর যখন বন্টনকালে উপস্থিত হয়-(দূর-সম্পর্কীয়) স্বজনগণ ও এতীমগন ও মীস্কীনগণ, তখন তাহাদিগকেও উহা হইতে কিছু প্রদান কর এবং তাহাদের সহিত সদয়ভাবে কথা বল।
শানে নুযূল
(১) অর্থাৎ, নাবালেগা ও সল্পবুদ্ধি থাকা পর্যন্ত তাহার মাল তাহার হাতে সমর্পণ করিও না; বরং মাল তোমাদের হাতে রাখিয়া তাহার ভরণ পোষণ করিতে থাক এবং তাহাদিগকে সান্তনা দিতে থাকে যে, মাল তো তোমাদেরই। বুদ্ধিসম্পূন্ন হইলেই সমপত্তি তোমাদের হাতে দেওয়া হইবে।(বঃ কোঃ)
(২) অর্থাৎ, মালের সংরক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ করার যোগ্যতা এবং শৃঙ্খলা শক্তি যদি তাহাদের মধ্যে বিদ্যামান দেখ, তবে তাহাদের মাল তাহাদের হাতে প্রদান কর। কিন্তু ২৫ বৎসর পূর্ণ হইলে সর্ব অবস্থায় মাল তাহাদের হাতে প্রদান করিতে হইবে।
(৩) এতীমের প্রতি পালনকারী দরিদ্র হইলে এতীমের মাল হইতে আবশ্যক অনুযায়ী পারিশ্রমিক লইতে হইবে। (হেদায়া)
وَلْيَخْشَ الَّذِينَ لَوْ تَرَكُوا مِنْ خَلْفِهِمْ ذُرِّيَّةً ضِعَافًا خَافُوا عَلَيْهِمْ فَلْيَتَّقُوا اللَّهَ وَلْيَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا
৯। আর এইরূপ লোকেদের ভয় করা উচিত যে, যদি তাহারা নিজেদের পিছনে ছোট ছোট সন্তান ত্যাগ করিয়া (মারা) যায়, তবে ইহাদের জন্য তাহাদের (কেমন) ভাবনা হইবে, সুতরাং (এই বিষয়টি চিন্তা করিয়া) তাহাদেও উচিত আল্লাহ্কে ভয় করা এবং সুসঙ্গত কথা বলা।
إِنَّ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ أَمْوَالَ الْيَتَامَىٰ ظُلْمًا إِنَّمَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ نَارًا ۖ وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيرًا
১০। নিশ্চয়, যাহারা এতীমের মাল অন্যায়ভাবে ভোগ করে, তাহারা নিজেদের উদরে অগ্নি ভিন্ন আর কিছুই পুরিতেছে না; এবং অতি সত্বরই তাহারা জ্বলন্তআগুনে প্রবেশ করিবে।
يُوصِيكُمُ اللَّهُ فِي أَوْلَادِكُمْ ۖ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنثَيَيْنِ ۚ فَإِن كُنَّ نِسَاءً فَوْقَ اثْنَتَيْنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَ ۖ وَإِن كَانَتْ وَاحِدَةً فَلَهَا النِّصْفُ ۚ وَلِأَبَوَيْهِ لِكُلِّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا السُّدُسُ مِمَّا تَرَكَ إِن كَانَ لَهُ وَلَدٌ ۚ فَإِن لَّمْ يَكُن لَّهُ وَلَدٌ وَوَرِثَهُ أَبَوَاهُ فَلِأُمِّهِ الثُّلُثُ ۚ فَإِن كَانَ لَهُ إِخْوَةٌ فَلِأُمِّهِ السُّدُسُ ۚ مِن بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصِي بِهَا أَوْ دَيْنٍ ۗ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ لَا تَدْرُونَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ لَكُمْ نَفْعًا ۚ فَرِيضَةً مِّنَ اللَّهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا
১১। আল্লাহ্ তোমাদিগকে নির্দেশ দিতেছেন, তোমাদেও সন্তানদের (অংশ পাওয়া) সম্বন্ধে- পুত্রের অংশ দুই কন্যার অংশের সমান হইবে, আর যদি শুধু কন্যাগণ দুই-এর অধিকও হয়, তবে তাহারা মৃত ব্যক্তির ত্যাজ্য সম্পত্তির দুই তৃতীয়ংশ পাইবে, আর যদি একটি মাত্র কন্যা হয়, তবে সে অর্ধাংশ পাইবে; আর পিতামাতা অর্থাৎ উভয়ের প্রত্যেকে মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক ষষ্ঠাংশ পাইবে-যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান থাকে, আর যদি ঐ মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান না থাকে এবং কেবল পিতামাতাই তাহার ওয়ারিস হয়, তবে তাহার মাতার প্রাপ্য এক তৃতীয়াংশ, আর যদি মৃত ব্যক্তির একাধিক ভাই-বোন থাকে, তবে তাহার মাতা এক ষষ্ঠাংশ পাইবে, ওসিয়ত আদায় করিবার পর যাহা মৃত ব্যক্তি ওসিয়ত করিয়াছে অথবা ঋণ (অর্থাৎ ঋণ পরিশোধ )-এর পর; তোমাদের মূল ও শাখাসমূহ যাহারা আছে, তোমরা পুরাপুরি জানিতে পার না যে, তন্মধ্যে কোন ব্যক্তি তোমাদের উপকার সাধনে অধিকতর নিকটবর্তী; এই আদেশ আল্লাহ্র নিকট হইতে নির্ধারিত করা হইয়াছে; নিশ্চয়, আল্লাহ্ মহাজ্ঞানী প্রজ্ঞাময়।
শানে নুযূল
(১) অর্থাৎ, দূও সম্পর্কীয় আত্মীয়গণ যাহারা শরীঅত অনুযায়ী ওয়ারিস নহে পরিত্যক্ত সম্পত্তি বন্টন কালে ওয়ারিস হইবে ধারণায় কিংবা দান পাওয়ার আশায় যদি উপস্থিত হয়, তবে বালেগ ওয়ারিসগণ নিজ নিজ প্রাপ্য অংশ হইতে আগন্তকদিগকে কিছু দান কর অথবা মিষ্ট কথায় তাহাদিগকে বিদায় করিয়া দাও। এই দান ওয়াজিব নহে, মস্তাহাব। মাস্আলঃ নাবালেগের আংশ হইতে দান-খয়রাত করা বা কাহারও আপ্যায়ন করা নাজায়েয।
(২) মোটকথা, এতীমের ধন ও প্রাণের কল্যাণ সাধনের প্রতি সুদৃষ্টি রাখিবে, অর্থাৎ, আদব শিখাইবার বেলায়ও নিজের ক্রোধ নিবৃত্তির উদ্দেশ্যে হওয়া চাই। (বঃ কোঃ)
وَلَكُمْ نِصْفُ مَا تَرَكَ أَزْوَاجُكُمْ إِن لَّمْ يَكُن لَّهُنَّ وَلَدٌ ۚ فَإِن كَانَ لَهُنَّ وَلَدٌ فَلَكُمُ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْنَ ۚ مِن بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصِينَ بِهَا أَوْ دَيْنٍ ۚ وَلَهُنَّ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْتُمْ إِن لَّمْ يَكُن لَّكُمْ وَلَدٌ ۚ فَإِن كَانَ لَكُمْ وَلَدٌ فَلَهُنَّ الثُّمُنُ مِمَّا تَرَكْتُم ۚ مِّن بَعْدِ وَصِيَّةٍ تُوصُونَ بِهَا أَوْ دَيْنٍ ۗ وَإِن كَانَ رَجُلٌ يُورَثُ كَلَالَةً أَوِ امْرَأَةٌ وَلَهُ أَخٌ أَوْ أُخْتٌ فَلِكُلِّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا السُّدُسُ ۚ فَإِن كَانُوا أَكْثَرَ مِن ذَٰلِكَ فَهُمْ شُرَكَاءُ فِي الثُّلُثِ ۚ مِن بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصَىٰ بِهَا أَوْ دَيْنٍ غَيْرَ مُضَارٍّ ۚ وَصِيَّةً مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَلِيمٌ
১২। আর তোমরা অর্ধেক পাইবে ঐ সম্পত্তির যাহা তোমাদের পত্নীগন ত্যাগ করিয়া যায় যদি তাহাদের কোন সন্তান না থাকে, আর যদি ঐ পন্তীগণের কোন সন্তান থাকে তবে তাহাদের ত্যাজ্য সম্পত্তি হইতে তোমরা এক চতুর্থাংশ পাইবে, ওসিয়ত পৃথক করিয়া লওয়ার পর যাহা তাহারা ওসিয়ত করিয়া যায় অথবা ঋণ (পরিশোধ)-এর পর; আর তোমাদেও পত্নীগন তোমাদের ত্যাজ্য সম্পত্তি হইতে এক চতুর্থাংশ পাইবে, যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে, আর যদি তোমাদের কোন সন্তান থাকে তবে তাহারা তোমাদের ত্যাজ্য সম্পত্তির এক অষ্টমাংশ পাইবে, তোমাদের কৃত ওসিয়ত পৃথক করিবার পর অথবা ঋণ (পরিশোধ) এর পর; আর এমন মৃত ব্যক্তি- পুরুষ হউক বা নারী, যাহারা ওয়ারিস অন্যে হইবে- মূল ও শাখাবিহীন হয় এবং তাহার এক (বৈপিত্রেয়) ভ্রাতা অথবা এক ভগ্নী থাকে, তবে এতদুভয়ের প্রত্যেকেই এক ষষ্ঠাংশ পাইবে, আর যদি ইহারা তদপেক্ষা (একের) বেশী হয়, তবে ইহারা সকলে এক তৃতীয়াংশের অংশীদার হইবে, ওসিয়ত পূর্ণ করার পর যেই ওসিয়ত করা হইয়াছে, অথবা ঋণ (শোধ)-এর পর, এই শর্তে যে, (ওসিয়তকারী ওয়ারিসদের) কাহারও ক্ষতি না করে, এই নির্দেশ আল্লাহর তরফ হইতে করা হইয়াছে; আর আল্লাহ্ মহাজ্ঞানী, অতীব সহনশীল।
শানে নুযূল
(১) অছীয়ত অর্থে সেই অছীয়তই বুঝিতে হইবে যাহা শরীয়ত সম্মত হয়। অর্থাৎ, অছীয়ত ওয়ারিসের জন্য না হওয়ার এবং কাফন-দাফনের ও ঋণ পরিশোধের পর অবশিষ্ট সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশের অতিরিক্ত না হওয়া চাই। ঋণ ও অয়ীয়তের মধ্যে ঋণকে অগ্রাধিকার দিতে হয়। (বঃ কোঃ)
(২) কাজেই তোমাদেও মতের উপর এই বিষয়টি ছাড়িয়া দেন নাই। কেননা, তোমাদের মতের উপর ছাড়িয়া দিলে যাহার নিকট হইতে যেইরূপ উপকার পাইতে সম্পত্তির বন্টন তদ্দ্রপই করিতে। অথচ উপকারী নির্ণেয়ের কোন মাপকাঠি তোমাদেও জানা নাই। কাজেই সম্পত্তি বন্টন কখনও ঠিক হইত না। বন্টন ব্যবস্থা আল্লাহর নিকট হইতে সমাগত হইয়াছে। অতএব, আল্লহ্র ব্যবস্থাইনির্ভরযোগ্য। (বঃ কোঃ)
(৩) স্বামীর মৃত্যু হইলে স্ত্রীর মহর স্বামীর ঋণের মধ্যে গণ্য হইবে। (মুঃ কোঃ)
تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ ۚ وَمَن يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ وَذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
১৩। এই বর্ণিত নির্দেশাবলী আল্লাহ্ আহ্কাম; আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্ এবং তাঁহার রাসূলের পূর্ণ আনুগত্য করিবে, আল্লাহ্ তাহাকে এনরূপ বেহেশতসমূহে দাখিল করিবেন যাহার তলদেশে নহরসমূহ বহিতে থাকিবে, তাহার অনন্তকাল উহাতে অবস্থান করিবে; আর ইহা বিরাট সফলতা।
وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُّهِينٌ
১৪। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলের কথা অমান্য করিবে এবং সম্পূর্ণরূপেই তাঁহার বিধানসমূহ লঙ্ঘন করিয়া চলিবে, আল্লাহ্ তাহাকে অগ্নিতে (দোযখে) দাখিল করিয়া দিবেন এইরূপ যে, সে উহাতে অনন্তকাল থাকিবে এবং তাহার এইরূপ শাস্তি হইবে যাহাতে লাঞ্ছনাও রহিয়াছে।
وَاللَّاتِي يَأْتِينَ الْفَاحِشَةَ مِن نِّسَائِكُمْ فَاسْتَشْهِدُوا عَلَيْهِنَّ أَرْبَعَةً مِّنكُمْ ۖ فَإِن شَهِدُوا فَأَمْسِكُوهُنَّ فِي الْبُيُوتِ حَتَّىٰ يَتَوَفَّاهُنَّ الْمَوْتُ أَوْ يَجْعَلَ اللَّهُ لَهُنَّ سَبِيلًا
১৫। এবং যে সব স্ত্রীলোক অশ্লীল কাজ (ব্যভিচার) করে তোমাদের পত্নীদের মধ্য হইতে, তবে তোমরা ঐ স্ত্রীলোকদের উপর নিজেদের মধ্য হইতে চারি ব্যক্তিকে সাক্ষী করিয়া লও অতঃপর যদি তাহারা সাক্ষ্য প্রদান করে, তবে তোমরা তাহাদিগকে গৃহের মধ্যে আবদ্ধ করিয়া রাখ ঐ পর্যন্ত যে, (হয়) মৃত্যু তাহাদের অবসান ঘটাইয়া দেয় অথবা আল্লাহ্ তা‘আলা তাহাদের জন্য অন্য কোন পথ নির্ধারণ করেন।
শানে নুযূল
(১) অর্থাৎ, সকলে এক তৃতীয়াংশের মধ্যে সমানভাবে শরীক হইবে এবং স্ত্রী, পুরুষ সকলেই সমান পাইবে। অবশিষ্ট অংশ অন্যান্য অংশীরা পাইবে। আর যদি কেহই না থাকে, তবে ইহারাই অবশিষ্ট অংশ পাইবে।
(২) অর্থাৎ, এক তৃতীয়াংশের অধিক অয়ীয়ত করিবে না, যদি করে,তবে তাহা বন্টনের পূর্বে কার্যকারী হইবে না। আবার তৃতীয়াংশ বা তদপেক্ষা কম ওয়ীয়ত যদি অসদুদ্দেশ্যে হয়, যেমন ওয়ারিসদেও মধ্যে একজনকে ঠকাইয়া অন্যজনকে বেশী দেওয়ার উদ্দেশ্যে হয়, তবে ইহাও কার্যকারী হইবে না।ওয়ারিসদের অংশ কম করার উদ্দেশ্যে অন্য কোন সৎকার্যের জন্য অছীয়ত করিলে বাহ্যতঃ তাহা কার্যকরী হইবে বটে; কিন্তু অছীয়তকারী গোনাহগার হইবে। (বঃ কোঃ)
(৩) মাস্আলাঃ যেনা প্রমাণের জন্য প্রত্যক্ষদর্শী, মুসলমান, জ্ঞানবান, বালেগ ও আযাদ চারিজন সাক্ষী থাকা আবশ্যক। (বঃ কোঃ)
وَاللَّذَانِ يَأْتِيَانِهَا مِنكُمْ فَآذُوهُمَا ۖ فَإِن تَابَا وَأَصْلَحَا فَأَعْرِضُوا عَنْهُمَا ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ تَوَّابًا رَّحِيمًا
১৬। আর যে কোন দুই ব্যক্তিই তোমাদেও মধ্য হইতে এই নির্লজ্জতার কাজ করিবে, তবে তাহাদিগকে কষ্ট প্রদান কর, অনন্তর যদি তাহারা তওবা করে এবং সংশোধন করিয়া লয়, তাহলে তাহাদের পিছনে লাগিয়া থাকিও না; নিঃসন্দেহ, আল্লাহ্ তওবা কবূলকারী, করূনাময়।
إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِن قَرِيبٍ فَأُولَـٰئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا
১৭। তওবা যাহা কবূল করা আল্লাহর দায়িত্বে রহিয়াছে, উহা তো কেবল তাহাদেরই জন্য যাহারা বোকামিবশতঃ কোন পাপ করিয়া ফেলে, অতঃপর অবিলম্বে (মৃত্যু আসিবার পূর্বেবেই) তওবা করে সুতরাং এইরূপ লোকের তওবাই আল্লাহ্ কবূল করিয়া থাকেন; আর আল্লাহ্ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّىٰ إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآنَ وَلَا الَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمْ كُفَّارٌ ۚ أُولَـٰئِكَ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا
১৮। আর এইরূপ লোকের জন্য তওবা নাই যাহারা পাপ করিতে থাকে, এ পর্যন্ত যে, যখন তাহাদের মধ্যে কাহারও সম্মুখে মৃত্যু আসিয়া উপস্থিত হয়, তখন বলে-আমি এখন তওবা করিতেছি, আর না ঐ সমস্ত লোকের জন্য যাহারা মৃত্যুও সম্মুখীন হয় কুফরীর অবস্থায়; ইহাদের জন্য আমি প্রস্তুত করিয়া রাখিয়াছি এক ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
শানে নুযূল
(১) ইসলামের প্রাথমিক যুগে বিবাহিত ও অবিবাহিত পুরুষ ও নারী যেনা করিলে উহার শাস্তি ছিল কষ্ট প্রদান করা। অর্থাৎ, দ্বিতীয় বিধান না আসা পর্যন্ত কেবল বিবাহিত নারীকে গৃহে আবদ্ধ রাখা। অন্যান্যদের জন্য কোন নির্দিষ্ট বিধান ছিল না। ইহাতে বুঝা যায়, অন্যান্যদের শাস্তি মুসলিম বিচারকের উপর ন্যস্ত ছিল। অতঃপর দ্বিতীয় নির্দেশ অবতীর্ণ হয়। অবিবাহিতের জন্য একশত দোররা এবং অবিবাহিতের জন্য প্রস্তর মারিয়া হত্যা করা। সুতরাং এতদ্বরা এই আয়াতে বর্ণিত আবদ্ধ রাখার আদেশ রহিত হইয়া গিয়াছে। (বঃ কোঃ)
(২) অর্থাৎ, যখন মৃত্যু আসিয়া পড়িয়াছে বলিয়া স্থির বিশ্বাস হইয়া যায়, অর্থাৎ, পরজগতের অদৃশ্য বিষয়দি দৃষ্টিগোচর ঘনতে থাকে, সে সময়ের তওবা কবূল হয় না। (মঃ কোঃ)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَحِلُّ لَكُمْ أَن تَرِثُوا النِّسَاءَ كَرْهًا ۖ وَلَا تَعْضُلُوهُنَّ لِتَذْهَبُوا بِبَعْضِ مَا آتَيْتُمُوهُنَّ إِلَّا أَن يَأْتِينَ بِفَاحِشَةٍ مُّبَيِّنَةٍ ۚ وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ ۚ فَإِن كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَىٰ أَن تَكْرَهُوا شَيْئًا وَيَجْعَلَ اللَّهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا
১৯। হে ঈমানদারগণ ! তোমাদেও জন্য ইহা বৈধ নহে যে, বলপূর্বক নারীদের মালিক হইয়া যাও; আর ঐ সমস্ত স্ত্রীলোককে এই জন্য আবদ্ধ করিয় না যে, যাহা কিছু তোমরা তাহাদিগকে দিয়াছ তন্মধ্য হইতে কিছু অংশ আদায় করিয়া লইবে, কিন্তু তাহারা কোন প্রকাশ্য অশ্লীল কাজ করিলে (আবদ্ধ রাখা বা মাল আদায় করা যাইতে পারে) আর তাহাদের সহিত সদ্ভাবে জীবন যাপন কর, আর যদি তাহারা তোমাদেও মনঃপৃত না হয়, তবে (এই ভাবিয়া ধৈর্য ধর যে,) তোমরা কোন এক বস্তুকে অপছন্দ কর, অথচ হইতে পারে আল্লাহ্ তা‘আলা উহার মধ্যে (পার্থিক বা পারলৌকিক) কোন বড় উপকার নিহিত রাখিয়াছে।
وَإِنْ أَرَدتُّمُ اسْتِبْدَالَ زَوْجٍ مَّكَانَ زَوْجٍ وَآتَيْتُمْ إِحْدَاهُنَّ قِنطَارًا فَلَا تَأْخُذُوا مِنْهُ شَيْئًا ۚ أَتَأْخُذُونَهُ بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُّبِينًا
২০। আর যদি তোমরা এক পত্নীর স্থলে অন্য পত্নী গ্রহন করিতে চাও, আর তোমরা সেই একজনকে রাশি রাশি ধন-সম্পদ প্রদান করিয়া থাক, তবুও তোমরা উহা হইতে কিছুই (ফেরৎ) লইও না; তোমরা কি ইহা (ফেরৎ) লইবে (তাহার প্রতি) অপবাদ আরোপ করিয়া এবং প্রকাশ্য পাপচারী হইয়া?
وَكَيْفَ تَأْخُذُونَهُ وَقَدْ أَفْضَىٰ بَعْضُكُمْ إِلَىٰ بَعْضٍ وَأَخَذْنَ مِنكُم مِّيثَاقًا غَلِيظًا
২১। আর তোমরা ইহা কেমন কারিয়া গ্রহন করিবে! অথচ তোমরা একে অন্যের সহিত অবাধ মেলামেশা করিয়াছ, আর এই নারীগণ তোমাদের নিকট হইতে একটি দৃঢ় অঙ্গীকার লইয়া রাখিয়াছে।
وَلَا تَنكِحُوا مَا نَكَحَ آبَاؤُكُم مِّنَ النِّسَاءِ إِلَّا مَا قَدْ سَلَفَ ۚ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَمَقْتًا وَسَاءَ سَبِيلًا
২২। আর তোমরা ঐ সমস্ত নারীকে বিবাহ করিও না যাহাদিগকে তোমাদের পিতৃগণ (অর্থাৎ, বাপ, দাদা, বা নানা) বিবাহ করিয়াছেন, কিন্তু যাহা অতীত হইয়াছে-হইয়াছে; নিশ্চয়, ইহা অত্যন্ত নির্লজ্জতা ও খুব ঘৃণার বিষয়; এবং নিকৃষ্ট প্রথা।
শানে নুযূল
(১) প্রাগ-ইসলামিক যুগে নিয়ম ছিল, পিতার মৃত্যুর পর ছেলে বিমাতাকে গৃহে আবদ্ধ রাখিয়া তাহার ওয়ারিসী হক ভোগ ও আত্মসাৎ করিত। ছেলে না থাকিলে মৃত ব্যক্তির ভাইয়েরা ভাইয়ের স্ত্রীকে নানা উপায়ে কষ্ট দিয়া তাহার সম্পত্তি আত্মসাৎ করিত। ইসলামের আগমনের পরেও এই নিয়ম প্রচলিত ছিল। ইতি মধ্যে জনৈক আনছারের মৃত্যু হইলে তাহার বিধবা স্ত্রীর সহিত ছেলেরা তদ্দ্রপ ব্যবহার আরম্ভ করিল। সে হুযূরের খেতমতে নালিশ করিলে হুযূর বললেন, ধৈর্য ধর এবং এই সম্বন্ধে ওহী আসার অপেক্ষা কর। অতঃপর এই আয়াতটি নাযিল হয়। (মুঃ কোঃ)
(২) স্ত্রীর দোষে মনোমালিন্য ঘটিলে মহরানার টাকা ফেরৎ না দেওয়া পর্যন্ত স্ত্রীকে তালাক্ব না দিয়া আট্কাইয়া রাখা জায়েয আছে।