সূরা-আন-নিসা বাংলা অনুবাদ
সর্বমোট আয়াত ১৭৬
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَبَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِيرًا وَنِسَاءً ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِي تَسَاءَلُونَ بِهِ وَالْأَرْحَامَ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا
বাংলা অর্থ:
১। হে মানব! স্বীয় প্রতিপালক (-এর বিরোধিতা)-কে ভয় কর, যিনি তোমাদিগকে এক-ই প্রাণী (আদম আঃ) হইতে সৃষ্টি করিয়াছেন, এবং ঐ প্রাণী হইতে তাঁহার জোড়া (বিবি হাওয়াকে) সৃষ্টি করিয়াছেন এবং এতদুভয় হইতে বহু নর ও নারী বিস্তার করিয়াছেন, আর তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর, যাঁহার নামে তোমরা পরস্পরের নিকট (স্বীয় হকের) দাবী করিয়া থাক এবং আত্মীয়তা (-এর হক বিনষ্ট করা) হইতেও ভয় কর; নিশ্চয়, আল্লাহ্ তোমাদের সকলের খবর রাখেন।
وَآتُوا الْيَتَامَىٰ أَمْوَالَهُمْ ۖ وَلَا تَتَبَدَّلُوا الْخَبِيثَ بِالطَّيِّبِ ۖ وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَهُمْ إِلَىٰ أَمْوَالِكُمْ ۚ إِنَّهُ كَانَ حُوبًا كَبِيرًا
বাংলা অর্থ:
২। আর এতীমদেও ধন সম্পত্তি তাহাদিগকে দিতে থাক এবং তোমরা উত্তম বস্তুর সহিত নিকৃষ্ট বস্তুর বিনিময় করিও না এবং তাহাদের ধন-সম্পত্তি ভোগ করিও না নিজেদের ধন-সম্পত্তি থাকা পর্যন্ত; এনরূপ করা গুরুতর পাপ।
وَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تُقْسِطُوا فِي الْيَتَامَىٰ فَانكِحُوا مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاءِ مَثْنَىٰ وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ ۖ فَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تَعْدِلُوا فَوَاحِدَةً أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَدْنَىٰ أَلَّا تَعُولُوا
বাংলা অর্থ:
৩। আর যদি তোমাদের এ বিষয়ের আশঙ্কা থাকে যে, তোমরা এতীম বালিকাদের ব্যাপারে সুবিচার করিতে পারিবে না, তাহলে অন্যান্য নারী হইতে যাহারা তোমাদের মনঃপূত হয় বিবাহ করিয়া লও, দুই দুইটি, তিন তিনটি, চারি চারিটি নারীকে, অতঃপর যদি তোমাদের এই আশঙ্কা থাকে যে, ইনসাফ করিতে পারিবে না তাহলে একই বিবিতে ক্ষান্ত থাকিবে অথচ যে দাসী তোমাদের স্বত্বাধিকারে আছে তাহাই যথেষ্ট; এই উল্লেখিত বিধানে অন্যায় না হওয়ার সম্ভাবনাই সমধিক।
وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ۚ فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا
বাংলা অর্থ:
৪। আর তোমরা স্ত্রীদিগকে তাহাদের মহর সন্তুষ্টিচিত্তে দিয়া দাও; হাঁ তবে যদি স্ত্রীগন সন্তুষ্টিচিত্তে তোমাদিগকে উক্ত মহরের কিয়দংশ ছাড়িয়া দেয়, তবে তোমরা উহা মর্যাদার-তৃপ্তিকর মনে করিয়া উপভোগ কর।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
(১) অর্থাৎ, হযরত আদম (আঃ)-এর বাম পাঁজর হইতে তাঁহার স্ত্রী হাওয়া (আঃ)-কে পয়দা করিয়াছেন। অতঃপর এই দম্পত্তিযুগল হইতে দুনিয়ার সকল মানুষকে সৃষ্টি করিয়াছেন।(মুঃ কোঃ)
(২) যেমন কাহারও প্রতিপালনে কোন এতীম ধনবতী ও সুন্দরী বালিকা থাকিলে, তাহার অর্থ ও রূপের মোহে সে নিজেই তহাকে বিবাহ করিতে চাহিত কিন্তু সর্বদিক দিয়া তাহার অধিন হওয়ার এবং এই এতীম বালিকার হক্ব বুঝিয়া লওয়ার অন্য কোন অভিভাবক না থাকায় এই বালিকাকে অন্যে যে মহর দিত সে তাহা দিত না। আল্লাহ্ এই আয়াতে তৎসম্বন্ধে ব্যবস্থা দিতেছেন। বোখারী শরীফে হযরত আয়েশা হইতে এনরূপ বর্ণিত আছে। (বঃ কোঃ)
মাস্আলাঃ ন্যায় বিচার করিতে না পারার প্রবল সম্ভবনা থাকিলে একাধিক বিবাহ করিলে গুনাহ্গার হইবে।
মাস্আলাঃ বর্তমানে বাসায় যে চাকরানী রাখা হয় ইহারা শরীঅত সম্মত দাসী নহে। (বঃ কোঃ)
وَلَا تُؤْتُوا السُّفَهَاءَ أَمْوَالَكُمُ الَّتِي جَعَلَ اللَّهُ لَكُمْ قِيَامًا وَارْزُقُوهُمْ فِيهَا وَاكْسُوهُمْ وَقُولُوا لَهُمْ قَوْلًا مَّعْرُوفًا
বাংলা অর্থ:
৫। আর তোমরা অল্প বুদ্ধিসম্পন্ন (বালেগ এতীম)-দিগকে (তাহাদের) স্বীয় ঐ মাল প্রদান করিও না যাহা আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের (সকল মানবের) জন্য জীবন ধারণের উপকরণ করিয়া দিয়াছেন এবং ঐ ধন সম্পত্তির মধ্য হইতে তাহাদিগকে খাওয়াইতে থাক এবং তাহাদেও সহিত যুক্তিসঙ্গত কথা বলিতে থাক।
وَابْتَلُوا الْيَتَامَىٰ حَتَّىٰ إِذَا بَلَغُوا النِّكَاحَ فَإِنْ آنَسْتُم مِّنْهُمْ رُشْدًا فَادْفَعُوا إِلَيْهِمْ أَمْوَالَهُمْ ۖ وَلَا تَأْكُلُوهَا إِسْرَافًا وَبِدَارًا أَن يَكْبَرُوا ۚ وَمَن كَانَ غَنِيًّا فَلْيَسْتَعْفِفْ ۖ وَمَن كَانَ فَقِيرًا فَلْيَأْكُلْ بِالْمَعْرُوفِ ۚ فَإِذَا دَفَعْتُمْ إِلَيْهِمْ أَمْوَالَهُمْ فَأَشْهِدُوا عَلَيْهِمْ ۚ وَكَفَىٰ بِاللَّهِ حَسِيبًا
বাংলা অর্থ:
৬। আর তোমরা এতীমদিগকে পরীক্ষা করিয়া লও, এপর্যন্ত যে, যখন তাহারা বিবাহে (-র বয়সে) পৌঁছিয়া যায়, অনন্তর যদি তাহাদের মধ্যে কিয়ৎ পরিমাণ বুদ্ধিমাত্তা দেখ তবে তাহাদের ধন-সম্পত্তি তাহাদিগকে সমর্পণ করিয়া দাও, আর ঐ সমস্ত সম্পত্তি ভক্ষণ করিও না অপব্যয়ে এবং তাড়াতাড়ি করিয়া এই ধারণায় যে, তাহারা বালেগ হইয়া যাইবে; আর যে ব্যক্তি অভাবমুক্ত হইবে সে নিজকে সম্পূর্ণ বিরত রাখিবে, আর যে ব্যক্তি অভাবী হইবে সে সঙ্গত পরিমাণ ভোগ করিবে; অতঃপর যখন তাহাদের মাল তাহাদের হাতে সমর্পণ করিবে তখন ইহাকে (মাল সমর্পণের) উপর সাক্ষ্য রাখিও; এবং আল্লাহ্ই হিসাব গ্রহনকারী হিসাবে যথেষ্ট।
لِّلرِّجَالِ نَصِيبٌ مِّمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِّمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ مِمَّا قَلَّ مِنْهُ أَوْ كَثُرَ ۚ نَصِيبًا مَّفْرُوضًا
বাংলা অর্থ:
৭। পুরুষদের জন্যও (তাহারা ছোট হোউক বা বড় হউক ) অংশ নির্ধারিত রহিয়াছে উহা হইতে যাহা পিতামাতা এবং নিকট আত্মীয়গন ছাড়িয়া যায় -এবং নারীদেও জন্যও চোট হউক বা বড় হউক ) অংশ (নির্ধারিত) রহিযাছে, যাহা পিতামাতা এবং নিকট-আত্মীয়গণ ছাড়িয়া যায়-সে বস্তু অল্পই হউক আর বেশীই হউক; অংশ অকাট্য।
وَإِذَا حَضَرَ الْقِسْمَةَ أُولُو الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينُ فَارْزُقُوهُم مِّنْهُ وَقُولُوا لَهُمْ قَوْلًا مَّعْرُوفًا
বাংলা অর্থ:
৮। আর যখন বন্টনকালে উপস্থিত হয়-(দূর-সম্পর্কীয়) স্বজনগণ ও এতীমগন ও মীস্কীনগণ, তখন তাহাদিগকেও উহা হইতে কিছু প্রদান কর এবং তাহাদের সহিত সদয়ভাবে কথা বল।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
(১) অর্থাৎ, নাবালেগা ও সল্পবুদ্ধি থাকা পর্যন্ত তাহার মাল তাহার হাতে সমর্পণ করিও না; বরং মাল তোমাদের হাতে রাখিয়া তাহার ভরণ পোষণ করিতে থাক এবং তাহাদিগকে সান্তনা দিতে থাকে যে, মাল তো তোমাদেরই। বুদ্ধিসম্পূন্ন হইলেই সমপত্তি তোমাদের হাতে দেওয়া হইবে।(বঃ কোঃ)
(২) অর্থাৎ, মালের সংরক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ করার যোগ্যতা এবং শৃঙ্খলা শক্তি যদি তাহাদের মধ্যে বিদ্যামান দেখ, তবে তাহাদের মাল তাহাদের হাতে প্রদান কর। কিন্তু ২৫ বৎসর পূর্ণ হইলে সর্ব অবস্থায় মাল তাহাদের হাতে প্রদান করিতে হইবে।
(৩) এতীমের প্রতি পালনকারী দরিদ্র হইলে এতীমের মাল হইতে আবশ্যক অনুযায়ী পারিশ্রমিক লইতে হইবে। (হেদায়া)
وَلْيَخْشَ الَّذِينَ لَوْ تَرَكُوا مِنْ خَلْفِهِمْ ذُرِّيَّةً ضِعَافًا خَافُوا عَلَيْهِمْ فَلْيَتَّقُوا اللَّهَ وَلْيَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا
বাংলা অর্থ:
৯। আর এইরূপ লোকেদের ভয় করা উচিত যে, যদি তাহারা নিজেদের পিছনে ছোট ছোট সন্তান ত্যাগ করিয়া (মারা) যায়, তবে ইহাদের জন্য তাহাদের (কেমন) ভাবনা হইবে, সুতরাং (এই বিষয়টি চিন্তা করিয়া) তাহাদেও উচিত আল্লাহ্কে ভয় করা এবং সুসঙ্গত কথা বলা।
إِنَّ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ أَمْوَالَ الْيَتَامَىٰ ظُلْمًا إِنَّمَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ نَارًا ۖ وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيرًا
বাংলা অর্থ:
১০। নিশ্চয়, যাহারা এতীমের মাল অন্যায়ভাবে ভোগ করে, তাহারা নিজেদের উদরে অগ্নি ভিন্ন আর কিছুই পুরিতেছে না; এবং অতি সত্বরই তাহারা জ্বলন্তআগুনে প্রবেশ করিবে।
يُوصِيكُمُ اللَّهُ فِي أَوْلَادِكُمْ ۖ لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنثَيَيْنِ ۚ فَإِن كُنَّ نِسَاءً فَوْقَ اثْنَتَيْنِ فَلَهُنَّ ثُلُثَا مَا تَرَكَ ۖ وَإِن كَانَتْ وَاحِدَةً فَلَهَا النِّصْفُ ۚ وَلِأَبَوَيْهِ لِكُلِّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا السُّدُسُ مِمَّا تَرَكَ إِن كَانَ لَهُ وَلَدٌ ۚ فَإِن لَّمْ يَكُن لَّهُ وَلَدٌ وَوَرِثَهُ أَبَوَاهُ فَلِأُمِّهِ الثُّلُثُ ۚ فَإِن كَانَ لَهُ إِخْوَةٌ فَلِأُمِّهِ السُّدُسُ ۚ مِن بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصِي بِهَا أَوْ دَيْنٍ ۗ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ لَا تَدْرُونَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ لَكُمْ نَفْعًا ۚ فَرِيضَةً مِّنَ اللَّهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا
বাংলা অর্থ:
১১। আল্লাহ্ তোমাদিগকে নির্দেশ দিতেছেন, তোমাদেও সন্তানদের (অংশ পাওয়া) সম্বন্ধে- পুত্রের অংশ দুই কন্যার অংশের সমান হইবে, আর যদি শুধু কন্যাগণ দুই-এর অধিকও হয়, তবে তাহারা মৃত ব্যক্তির ত্যাজ্য সম্পত্তির দুই তৃতীয়ংশ পাইবে, আর যদি একটি মাত্র কন্যা হয়, তবে সে অর্ধাংশ পাইবে; আর পিতামাতা অর্থাৎ উভয়ের প্রত্যেকে মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক ষষ্ঠাংশ পাইবে-যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান থাকে, আর যদি ঐ মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান না থাকে এবং কেবল পিতামাতাই তাহার ওয়ারিস হয়, তবে তাহার মাতার প্রাপ্য এক তৃতীয়াংশ, আর যদি মৃত ব্যক্তির একাধিক ভাই-বোন থাকে, তবে তাহার মাতা এক ষষ্ঠাংশ পাইবে, ওসিয়ত আদায় করিবার পর যাহা মৃত ব্যক্তি ওসিয়ত করিয়াছে অথবা ঋণ (অর্থাৎ ঋণ পরিশোধ )-এর পর; তোমাদের মূল ও শাখাসমূহ যাহারা আছে, তোমরা পুরাপুরি জানিতে পার না যে, তন্মধ্যে কোন ব্যক্তি তোমাদের উপকার সাধনে অধিকতর নিকটবর্তী; এই আদেশ আল্লাহর নিকট হইতে নির্ধারিত করা হইয়াছে; নিশ্চয়, আল্লাহ্ মহাজ্ঞানী প্রজ্ঞাময়।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
(১) অর্থাৎ, দূও সম্পর্কীয় আত্মীয়গণ যাহারা শরীঅত অনুযায়ী ওয়ারিস নহে পরিত্যক্ত সম্পত্তি বন্টন কালে ওয়ারিস হইবে ধারণায় কিংবা দান পাওয়ার আশায় যদি উপস্থিত হয়, তবে বালেগ ওয়ারিসগণ নিজ নিজ প্রাপ্য অংশ হইতে আগন্তকদিগকে কিছু দান কর অথবা মিষ্ট কথায় তাহাদিগকে বিদায় করিয়া দাও। এই দান ওয়াজিব নহে, মস্তাহাব। মাস্আলঃ নাবালেগের আংশ হইতে দান-খয়রাত করা বা কাহারও আপ্যায়ন করা নাজায়েয।
(২) মোটকথা, এতীমের ধন ও প্রাণের কল্যাণ সাধনের প্রতি সুদৃষ্টি রাখিবে, অর্থাৎ, আদব শিখাইবার বেলায়ও নিজের ক্রোধ নিবৃত্তির উদ্দেশ্যে হওয়া চাই। (বঃ কোঃ)
وَلَكُمْ نِصْفُ مَا تَرَكَ أَزْوَاجُكُمْ إِن لَّمْ يَكُن لَّهُنَّ وَلَدٌ ۚ فَإِن كَانَ لَهُنَّ وَلَدٌ فَلَكُمُ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْنَ ۚ مِن بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصِينَ بِهَا أَوْ دَيْنٍ ۚ وَلَهُنَّ الرُّبُعُ مِمَّا تَرَكْتُمْ إِن لَّمْ يَكُن لَّكُمْ وَلَدٌ ۚ فَإِن كَانَ لَكُمْ وَلَدٌ فَلَهُنَّ الثُّمُنُ مِمَّا تَرَكْتُم ۚ مِّن بَعْدِ وَصِيَّةٍ تُوصُونَ بِهَا أَوْ دَيْنٍ ۗ وَإِن كَانَ رَجُلٌ يُورَثُ كَلَالَةً أَوِ امْرَأَةٌ وَلَهُ أَخٌ أَوْ أُخْتٌ فَلِكُلِّ وَاحِدٍ مِّنْهُمَا السُّدُسُ ۚ فَإِن كَانُوا أَكْثَرَ مِن ذَٰلِكَ فَهُمْ شُرَكَاءُ فِي الثُّلُثِ ۚ مِن بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصَىٰ بِهَا أَوْ دَيْنٍ غَيْرَ مُضَارٍّ ۚ وَصِيَّةً مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَلِيمٌ
বাংলা অর্থ:
১২। আর তোমরা অর্ধেক পাইবে ঐ সম্পত্তির যাহা তোমাদের পত্নীগন ত্যাগ করিয়া যায় যদি তাহাদের কোন সন্তান না থাকে, আর যদি ঐ পন্তীগণের কোন সন্তান থাকে তবে তাহাদের ত্যাজ্য সম্পত্তি হইতে তোমরা এক চতুর্থাংশ পাইবে, ওসিয়ত পৃথক করিয়া লওয়ার পর যাহা তাহারা ওসিয়ত করিয়া যায় অথবা ঋণ (পরিশোধ)-এর পর; আর তোমাদেও পত্নীগন তোমাদের ত্যাজ্য সম্পত্তি হইতে এক চতুর্থাংশ পাইবে, যদি তোমাদের কোন সন্তান না থাকে, আর যদি তোমাদের কোন সন্তান থাকে তবে তাহারা তোমাদের ত্যাজ্য সম্পত্তির এক অষ্টমাংশ পাইবে, তোমাদের কৃত ওসিয়ত পৃথক করিবার পর অথবা ঋণ (পরিশোধ) এর পর; আর এমন মৃত ব্যক্তি- পুরুষ হউক বা নারী, যাহারা ওয়ারিস অন্যে হইবে- মূল ও শাখাবিহীন হয় এবং তাহার এক (বৈপিত্রেয়) ভ্রাতা অথবা এক ভগ্নী থাকে, তবে এতদুভয়ের প্রত্যেকেই এক ষষ্ঠাংশ পাইবে, আর যদি ইহারা তদপেক্ষা (একের) বেশী হয়, তবে ইহারা সকলে এক তৃতীয়াংশের অংশীদার হইবে, ওসিয়ত পূর্ণ করার পর যেই ওসিয়ত করা হইয়াছে, অথবা ঋণ (শোধ)-এর পর, এই শর্তে যে, (ওসিয়তকারী ওয়ারিসদের) কাহারও ক্ষতি না করে, এই নির্দেশ আল্লাহর তরফ হইতে করা হইয়াছে; আর আল্লাহ্ মহাজ্ঞানী, অতীব সহনশীল।
শানে নুযূল
(১) অছীয়ত অর্থে সেই অছীয়তই বুঝিতে হইবে যাহা শরীয়ত সম্মত হয়। অর্থাৎ, অছীয়ত ওয়ারিসের জন্য না হওয়ার এবং কাফন-দাফনের ও ঋণ পরিশোধের পর অবশিষ্ট সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশের অতিরিক্ত না হওয়া চাই। ঋণ ও অয়ীয়তের মধ্যে ঋণকে অগ্রাধিকার দিতে হয়। (বঃ কোঃ)
(২) কাজেই তোমাদেও মতের উপর এই বিষয়টি ছাড়িয়া দেন নাই। কেননা, তোমাদের মতের উপর ছাড়িয়া দিলে যাহার নিকট হইতে যেইরূপ উপকার পাইতে সম্পত্তির বন্টন তদ্দ্রপই করিতে। অথচ উপকারী নির্ণেয়ের কোন মাপকাঠি তোমাদেও জানা নাই। কাজেই সম্পত্তি বন্টন কখনও ঠিক হইত না। বন্টন ব্যবস্থা আল্লাহর নিকট হইতে সমাগত হইয়াছে। অতএব, আল্লহর ব্যবস্থাইনির্ভরযোগ্য। (বঃ কোঃ)
(৩) স্বামীর মৃত্যু হইলে স্ত্রীর মহর স্বামীর ঋণের মধ্যে গণ্য হইবে। (মুঃ কোঃ)
تِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ ۚ وَمَن يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ وَذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
বাংলা অর্থ:
১৩। এই বর্ণিত নির্দেশাবলী আল্লাহ্ আহ্কাম; আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্ এবং তাঁহার রাসূলের পূর্ণ আনুগত্য করিবে, আল্লাহ্ তাহাকে এনরূপ বেহেশতসমূহে দাখিল করিবেন যাহার তলদেশে নহরসমূহ বহিতে থাকিবে, তাহার অনন্তকাল উহাতে অবস্থান করিবে; আর ইহা বিরাট সফলতা।
وَمَن يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُّهِينٌ
বাংলা অর্থ:
১৪। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলের কথা অমান্য করিবে এবং সম্পূর্ণরূপেই তাঁহার বিধানসমূহ লঙ্ঘন করিয়া চলিবে, আল্লাহ্ তাহাকে অগ্নিতে (দোযখে) দাখিল করিয়া দিবেন এইরূপ যে, সে উহাতে অনন্তকাল থাকিবে এবং তাহার এইরূপ শাস্তি হইবে যাহাতে লাঞ্ছনাও রহিয়াছে।
وَاللَّاتِي يَأْتِينَ الْفَاحِشَةَ مِن نِّسَائِكُمْ فَاسْتَشْهِدُوا عَلَيْهِنَّ أَرْبَعَةً مِّنكُمْ ۖ فَإِن شَهِدُوا فَأَمْسِكُوهُنَّ فِي الْبُيُوتِ حَتَّىٰ يَتَوَفَّاهُنَّ الْمَوْتُ أَوْ يَجْعَلَ اللَّهُ لَهُنَّ سَبِيلًا
বাংলা অর্থ:
১৫। এবং যে সব স্ত্রীলোক অশ্লীল কাজ (ব্যভিচার) করে তোমাদের পত্নীদের মধ্য হইতে, তবে তোমরা ঐ স্ত্রীলোকদের উপর নিজেদের মধ্য হইতে চারি ব্যক্তিকে সাক্ষী করিয়া লও অতঃপর যদি তাহারা সাক্ষ্য প্রদান করে, তবে তোমরা তাহাদিগকে গৃহের মধ্যে আবদ্ধ করিয়া রাখ ঐ পর্যন্ত যে, (হয়) মৃত্যু তাহাদের অবসান ঘটাইয়া দেয় অথবা আল্লাহ্ তা‘আলা তাহাদের জন্য অন্য কোন পথ নির্ধারণ করেন।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
(১) অর্থাৎ, সকলে এক তৃতীয়াংশের মধ্যে সমানভাবে শরীক হইবে এবং স্ত্রী, পুরুষ সকলেই সমান পাইবে। অবশিষ্ট অংশ অন্যান্য অংশীরা পাইবে। আর যদি কেহই না থাকে, তবে ইহারাই অবশিষ্ট অংশ পাইবে।
(২) অর্থাৎ, এক তৃতীয়াংশের অধিক অয়ীয়ত করিবে না, যদি করে,তবে তাহা বন্টনের পূর্বে কার্যকারী হইবে না। আবার তৃতীয়াংশ বা তদপেক্ষা কম ওয়ীয়ত যদি অসদুদ্দেশ্যে হয়, যেমন ওয়ারিসদেও মধ্যে একজনকে ঠকাইয়া অন্যজনকে বেশী দেওয়ার উদ্দেশ্যে হয়, তবে ইহাও কার্যকারী হইবে না।ওয়ারিসদের অংশ কম করার উদ্দেশ্যে অন্য কোন সৎকার্যের জন্য অছীয়ত করিলে বাহ্যতঃ তাহা কার্যকরী হইবে বটে; কিন্তু অছীয়তকারী গোনাহগার হইবে। (বঃ কোঃ)
(৩) মাস্আলাঃ যেনা প্রমাণের জন্য প্রত্যক্ষদর্শী, মুসলমান, জ্ঞানবান, বালেগ ও আযাদ চারিজন সাক্ষী থাকা আবশ্যক। (বঃ কোঃ)
وَاللَّذَانِ يَأْتِيَانِهَا مِنكُمْ فَآذُوهُمَا ۖ فَإِن تَابَا وَأَصْلَحَا فَأَعْرِضُوا عَنْهُمَا ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ تَوَّابًا رَّحِيمًا
বাংলা অর্থ:
১৬। আর যে কোন দুই ব্যক্তিই তোমাদেও মধ্য হইতে এই নির্লজ্জতার কাজ করিবে, তবে তাহাদিগকে কষ্ট প্রদান কর, অনন্তর যদি তাহারা তওবা করে এবং সংশোধন করিয়া লয়, তাহলে তাহাদের পিছনে লাগিয়া থাকিও না; নিঃসন্দেহ, আল্লাহ্ তওবা কবূলকারী, করূনাময়।
إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ ثُمَّ يَتُوبُونَ مِن قَرِيبٍ فَأُولَـٰئِكَ يَتُوبُ اللَّهُ عَلَيْهِمْ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا
বাংলা অর্থ:
১৭। তওবা যাহা কবূল করা আল্লাহর দায়িত্বে রহিয়াছে, উহা তো কেবল তাহাদেরই জন্য যাহারা বোকামিবশতঃ কোন পাপ করিয়া ফেলে, অতঃপর অবিলম্বে (মৃত্যু আসিবার পূর্বেবেই) তওবা করে সুতরাং এইরূপ লোকের তওবাই আল্লাহ্ কবূল করিয়া থাকেন; আর আল্লাহ্ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
وَلَيْسَتِ التَّوْبَةُ لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السَّيِّئَاتِ حَتَّىٰ إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ الْمَوْتُ قَالَ إِنِّي تُبْتُ الْآنَ وَلَا الَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمْ كُفَّارٌ ۚ أُولَـٰئِكَ أَعْتَدْنَا لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا
বাংলা অর্থ:
১৮। আর এইরূপ লোকের জন্য তওবা নাই যাহারা পাপ করিতে থাকে, এ পর্যন্ত যে, যখন তাহাদের মধ্যে কাহারও সম্মুখে মৃত্যু আসিয়া উপস্থিত হয়, তখন বলে-আমি এখন তওবা করিতেছি, আর না ঐ সমস্ত লোকের জন্য যাহারা মৃত্যুও সম্মুখীন হয় কুফরীর অবস্থায়; ইহাদের জন্য আমি প্রস্তুত করিয়া রাখিয়াছি এক ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
(১) ইসলামের প্রাথমিক যুগে বিবাহিত ও অবিবাহিত পুরুষ ও নারী যেনা করিলে উহার শাস্তি ছিল কষ্ট প্রদান করা। অর্থাৎ, দ্বিতীয় বিধান না আসা পর্যন্ত কেবল বিবাহিত নারীকে গৃহে আবদ্ধ রাখা। অন্যান্যদের জন্য কোন নির্দিষ্ট বিধান ছিল না। ইহাতে বুঝা যায়, অন্যান্যদের শাস্তি মুসলিম বিচারকের উপর ন্যস্ত ছিল। অতঃপর দ্বিতীয় নির্দেশ অবতীর্ণ হয়। অবিবাহিতের জন্য একশত দোররা এবং অবিবাহিতের জন্য প্রস্তর মারিয়া হত্যা করা। সুতরাং এতদ্বরা এই আয়াতে বর্ণিত আবদ্ধ রাখার আদেশ রহিত হইয়া গিয়াছে। (বঃ কোঃ)
(২) অর্থাৎ, যখন মৃত্যু আসিয়া পড়িয়াছে বলিয়া স্থির বিশ্বাস হইয়া যায়, অর্থাৎ, পরজগতের অদৃশ্য বিষয়দি দৃষ্টিগোচর ঘনতে থাকে, সে সময়ের তওবা কবূল হয় না। (মঃ কোঃ)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَحِلُّ لَكُمْ أَن تَرِثُوا النِّسَاءَ كَرْهًا ۖ وَلَا تَعْضُلُوهُنَّ لِتَذْهَبُوا بِبَعْضِ مَا آتَيْتُمُوهُنَّ إِلَّا أَن يَأْتِينَ بِفَاحِشَةٍ مُّبَيِّنَةٍ ۚ وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ ۚ فَإِن كَرِهْتُمُوهُنَّ فَعَسَىٰ أَن تَكْرَهُوا شَيْئًا وَيَجْعَلَ اللَّهُ فِيهِ خَيْرًا كَثِيرًا
বাংলা অর্থ:
১৯। হে ঈমানদারগণ ! তোমাদেও জন্য ইহা বৈধ নহে যে, বলপূর্বক নারীদের মালিক হইয়া যাও; আর ঐ সমস্ত স্ত্রীলোককে এই জন্য আবদ্ধ করিয় না যে, যাহা কিছু তোমরা তাহাদিগকে দিয়াছ তন্মধ্য হইতে কিছু অংশ আদায় করিয়া লইবে, কিন্তু তাহারা কোন প্রকাশ্য অশ্লীল কাজ করিলে (আবদ্ধ রাখা বা মাল আদায় করা যাইতে পারে) আর তাহাদের সহিত সদ্ভাবে জীবন যাপন কর, আর যদি তাহারা তোমাদেও মনঃপৃত না হয়, তবে (এই ভাবিয়া ধৈর্য ধর যে,) তোমরা কোন এক বস্তুকে অপছন্দ কর, অথচ হইতে পারে আল্লাহ্ তা‘আলা উহার মধ্যে (পার্থিক বা পারলৌকিক) কোন বড় উপকার নিহিত রাখিয়াছে।
وَإِنْ أَرَدتُّمُ اسْتِبْدَالَ زَوْجٍ مَّكَانَ زَوْجٍ وَآتَيْتُمْ إِحْدَاهُنَّ قِنطَارًا فَلَا تَأْخُذُوا مِنْهُ شَيْئًا ۚ أَتَأْخُذُونَهُ بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُّبِينًا
বাংলা অর্থ:
২০। আর যদি তোমরা এক পত্নীর স্থলে অন্য পত্নী গ্রহন করিতে চাও, আর তোমরা সেই একজনকে রাশি রাশি ধন-সম্পদ প্রদান করিয়া থাক, তবুও তোমরা উহা হইতে কিছুই (ফেরৎ) লইও না; তোমরা কি ইহা (ফেরৎ) লইবে (তাহার প্রতি) অপবাদ আরোপ করিয়া এবং প্রকাশ্য পাপচারী হইয়া?
وَكَيْفَ تَأْخُذُونَهُ وَقَدْ أَفْضَىٰ بَعْضُكُمْ إِلَىٰ بَعْضٍ وَأَخَذْنَ مِنكُم مِّيثَاقًا غَلِيظًا
বাংলা অর্থ:
২১। আর তোমরা ইহা কেমন কারিয়া গ্রহন করিবে! অথচ তোমরা একে অন্যের সহিত অবাধ মেলামেশা করিয়াছ, আর এই নারীগণ তোমাদের নিকট হইতে একটি দৃঢ় অঙ্গীকার লইয়া রাখিয়াছে।
وَلَا تَنكِحُوا مَا نَكَحَ آبَاؤُكُم مِّنَ النِّسَاءِ إِلَّا مَا قَدْ سَلَفَ ۚ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَمَقْتًا وَسَاءَ سَبِيلًا
বাংলা অর্থ:
২২। আর তোমরা ঐ সমস্ত নারীকে বিবাহ করিও না যাহাদিগকে তোমাদের পিতৃগণ (অর্থাৎ, বাপ, দাদা, বা নানা) বিবাহ করিয়াছেন, কিন্তু যাহা অতীত হইয়াছে-হইয়াছে; নিশ্চয়, ইহা অত্যন্ত নির্লজ্জতা ও খুব ঘৃণার বিষয়; এবং নিকৃষ্ট প্রথা।
শানে নুযূল
(১) প্রাগ-ইসলামিক যুগে নিয়ম ছিল, পিতার মৃত্যুর পর ছেলে বিমাতাকে গৃহে আবদ্ধ রাখিয়া তাহার ওয়ারিসী হক ভোগ ও আত্মসাৎ করিত। ছেলে না থাকিলে মৃত ব্যক্তির ভাইয়েরা ভাইয়ের স্ত্রীকে নানা উপায়ে কষ্ট দিয়া তাহার সম্পত্তি আত্মসাৎ করিত। ইসলামের আগমনের পরেও এই নিয়ম প্রচলিত ছিল। ইতি মধ্যে জনৈক আনছারের মৃত্যু হইলে তাহার বিধবা স্ত্রীর সহিত ছেলেরা তদ্দ্রপ ব্যবহার আরম্ভ করিল। সে হুযূরের খেতমতে নালিশ করিলে হুযূর বললেন, ধৈর্য ধর এবং এই সম্বন্ধে ওহী আসার অপেক্ষা কর। অতঃপর এই আয়াতটি নাযিল হয়। (মুঃ কোঃ)
(২) স্ত্রীর দোষে মনোমালিন্য ঘটিলে মহরানার টাকা ফেরৎ না দেওয়া পর্যন্ত স্ত্রীকে তালাক্ব না দিয়া আট্কাইয়া রাখা জায়েয আছে।
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ وَبَنَاتُكُمْ وَأَخَوَاتُكُمْ وَعَمَّاتُكُمْ وَخَالَاتُكُمْ وَبَنَاتُ الْأَخِ وَبَنَاتُ الْأُخْتِ وَأُمَّهَاتُكُمُ اللَّاتِي أَرْضَعْنَكُمْ وَأَخَوَاتُكُم مِّنَ الرَّضَاعَةِ وَأُمَّهَاتُ نِسَائِكُمْ وَرَبَائِبُكُمُ اللَّاتِي فِي حُجُورِكُم مِّن نِّسَائِكُمُ اللَّاتِي دَخَلْتُم بِهِنَّ فَإِن لَّمْ تَكُونُوا دَخَلْتُم بِهِنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ وَحَلَائِلُ أَبْنَائِكُمُ الَّذِينَ مِنْ أَصْلَابِكُمْ وَأَن تَجْمَعُوا بَيْنَ الْأُخْتَيْنِ إِلَّا مَا قَدْ سَلَفَ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَّحِيمًا
বাংলা অর্থ:
২৩। তোমাদের প্রতি হারাম করা হইয়াছে তোমাদের মাতৃগণ এবং তোমাদের কন্যাগণ এবং তোমাদের ভগ্নীগণ এবং তোমাদেও ফুফুগন এবং তোমাদের খালাগণ এবং ভ্রাতৃ-কন্যাগণ এবং ভগিনী-কন্যাগণ এবং তোমাদের ঐ মাতৃগণ যাহারা তোমাদিগকে স্তন্য দান করিয়াছেন,আর তোমাদের ঐ ভগ্নীগণ যাহারা স্তন্য পানের দরুন (ভগ্নী) হইয়াছে এবং তোমাদের স্ত্রীদের মাতৃগণ এবং তোমাদের স্ত্রীদের কন্যাগণ যাহারা তোমাদের প্রতিপালনে রহিয়াছে এইরূপ পত্নীগণ হইতে, যাহাদের সহিত তোমরা সঙ্গম করিয়াছ আর যদি তোমারা ঐ স্ত্রীদের সহিত সঙ্গম না করিয়া থাক, তবে তোমাদের কোন পাপ নাই, আর তোমাদের পুত্রগণের স্ত্রীগণ যাহারা তোমাদের ঔরসজাত, আর এই যে, তোমারা দুই ভগ্নীকে একত্রে (বিবাহ) রাখ কিন্তু যাহা (এইহুকুমের) পূর্বে হইয়াছে (তাহা মাফ); নিশ্চয় আল্লাহ্ মহা ক্ষমাপরায়ণ, অতীব করুণাময়।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
(১) প্রাক-ইসলাম যুগের লোকেরা হারাম নারীদিগকে বিবাহ করিত, যেমন বিম্যতাকে এবং এক্ব ভগ্নী বিবাহ-বন্ধনে থাকাকালিন দ্বিতীয় ভগ্নীকে বিবাহ করা। আবার কেহ বৈধ নারীকে হারাম মনে করিত। যেমন পোষ্যপুত্রের স্ত্রী। অতএব, আল্লাহ্ তা‘আলা এই দুইটি আয়াতে এ সম্বন্ধীয় বিধান বর্ণানা করিতেছেন।(বঃ কোঃ)
(২) অজ্ঞ যুগের সভ্য লোকেরাও এইরূপ বিবাহকে ঘৃণার বিবাহ আখ্যা দিত এবং এ বিবাহের দ্বারা যে-সন্তান হইত তাহাদিগকে ‘মাক্তী’ বলা হইত। (কাশ্শাফ)
মাস্আলাঃ যে নারীর সহিত পিতার বিবাহ হইয়াছে কিন্তু সঙ্গম কওে নাই; কিংবা বিবাহ এবং সঙ্গম উভয়ই হইয়াছে, সেনারী পুত্রের জন্য হারাম। এনরূপে যে নারীর সহিত পিতা যেনা করিয়াছে, সে নারীও পুত্রের জন্য হারাম।(বঃ কোঃ)
وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ النِّسَاءِ إِلَّا مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ۖ كِتَابَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ ۚ وَأُحِلَّ لَكُم مَّا وَرَاءَ ذَٰلِكُمْ أَن تَبْتَغُوا بِأَمْوَالِكُم مُّحْصِنِينَ غَيْرَ مُسَافِحِينَ ۚ فَمَا اسْتَمْتَعْتُم بِهِ مِنْهُنَّ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً ۚ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا تَرَاضَيْتُم بِهِ مِن بَعْدِ الْفَرِيضَةِ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا
বাংলা অর্থ:
২৪। এবং ঐ স্ত্রীগণ (হরাম করা হইয়াছে) যাহারা সধবা, কিন্তু হাঁ, যাহারা (ধর্ম ব্যবস্থায়) তোমাদের মালিকানাধীন হয়, আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদেও উপর এই ব্যবস্থাসমূহ ফরয করিয়া দিয়াছেন, আর ঐ নারীগণ ব্যতীত অন্যান্য নারীদিগকে তোমাদের জন্য হালাল করিয়া দেওয়া হইয়াছে অর্থাৎ তোমরা স্বীয় অর্থের বিনিময়ে তাহাদিগকে (বিবাহ করিতে) চাও, এইভাবে যে, তোমরা পত্নী করিয়া লও- শুধু কাম-প্রবৃত্তি নিবৃত্তির জন্যই নহে; অতঃপর যে-পন্থায় তোমরা তাহাদিগকে উপভোগ করিলে তজ্জন্য উক্ত নারীদিগকে তাহাদের নির্ধারিত মহর প্রদান কর; আর নির্ধারিত হওয়ার পর যে পরিমাণে তোমরা পরস্পর সম্মত হইয়া যাও তাহাতে কোন পাপ নাই; নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
وَمَن لَّمْ يَسْتَطِعْ مِنكُمْ طَوْلًا أَن يَنكِحَ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ فَمِن مَّا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُم مِّن فَتَيَاتِكُمُ الْمُؤْمِنَاتِ ۚ وَاللَّهُ أَعْلَمُ بِإِيمَانِكُم ۚ بَعْضُكُم مِّن بَعْضٍ ۚ فَانكِحُوهُنَّ بِإِذْنِ أَهْلِهِنَّ وَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ مُحْصَنَاتٍ غَيْرَ مُسَافِحَاتٍ وَلَا مُتَّخِذَاتِ أَخْدَانٍ ۚ فَإِذَا أُحْصِنَّ فَإِنْ أَتَيْنَ بِفَاحِشَةٍ فَعَلَيْهِنَّ نِصْفُ مَا عَلَى الْمُحْصَنَاتِ مِنَ الْعَذَابِ ۚ ذَٰلِكَ لِمَنْ خَشِيَ الْعَنَتَ مِنكُمْ ۚ وَأَن تَصْبِرُوا خَيْرٌ لَّكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
বাংলা অর্থ:
২৫। আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি পূর্ণ সার্মথ্য না রাখে স্বাধীন মুসলমান নারীকে বিবাহ করার, তবে সে নিজেদেও মধ্য হইতে মুসলমান ক্রীতদাসীদেরকে- যাহারা তোমাদের অধিকারে রহিয়াছে, বিবাহ করিয়া লইবে; এবং তোমাদের ঈমানের সম্যক অবস্থা আল্লাহ্ই জানেন; তোমরা পরস্পরে একে অন্যের সমতুল্য, সুতরাং তাহাদিগকে তাহাদেও মালিকের অনুমতিক্রমে বিবাহ কর, এবং তাহাদিগকে তাহাদের মহর নিয়মানুযায়ী দিয়া দাও, এই হিসাবে যে, তাহারা বিবাহিতারূপে গৃহীত হইয়াছে, এই হিসাবে নহে যে, তাহারা প্রকাশ্য ব্যভিচারিণী বা গুপ্ত প্রেমিকা, অনন্তর যখন ঐ ক্রীতদাসীগণ বিবাহিতা পত্নী হইয়া যায়, ইতঃ পর যদি তাহারা জঘন্য অশ্লীল কাজ করে, তাহলে তাহাদের জন্য ঐ শাস্তির অর্ধেক শাস্তি হইবে, যাহা স্বাধীনা নারীদের হইয়া থাকে; ইহা (অর্থাৎ, ক্রীতদাসীকে বিবাহ করা) ঐ ব্যক্তির জন্য, যে তোমাদের মধ্যে ব্যভিচারে (লিপ্ত হওয়া)-র আশংকা করে; এবং (দাসীদিগকে বিবাহ করা অপেক্ষা) তোমাদেও সংযমী হওয়া অতি উত্তম; আর আল্লাহ্ অতীব ক্ষমাপরায়ণ, পরম করুণাময়।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
(১) অর্থাৎ, আয়াতে বর্ণিত স্ত্রীলোকগণ ব্যতীত অন্যান্য সমস্ত স্ত্রীলোকই শর্তাধীনে তোমাদের জন্য শরীঅতের বিধান মতে হালাল। (মুঃ কোঃ)
(২) সহবাসের পূর্বে তালাক্ব দিলে পূর্ণ নির্ধারিত মহর ওয়াজিব হইবে। (বঃ কোঃ)
(৩) যেমন, স্বামী নির্ধারিত মহরের চেয়ে অধিক দিতে স্বীকৃত হইল, অথবা স্ত্রী নির্ধারিত মহরের অংশ বিশেষ কিংবা সম্পূর্ণ মহর মাফ করিয়া দিল, সব কিছুই জায়েয। (বঃ কোঃ)
(৪) অর্থাৎ, এই মহর বিবাহের বিনিময়স্বরূপ হইবে। গুপ্ত প্রণয় বা ব্যভিচারের বিনিময়ে দিলে তাহা বৈধ হইবে না। (বঃ কোঃ)
يُرِيدُ اللَّهُ لِيُبَيِّنَ لَكُمْ وَيَهْدِيَكُمْ سُنَنَ الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ وَيَتُوبَ عَلَيْكُمْ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
বাংলা অর্থ:
২৬। আল্লাহর ইচ্ছা এই যে, তোমাদিগকে তোমাদেও কল্যাণকর নির্দেশসমূহ) বর্ণনা করিয়া দেন এবং তোমাদের পূর্ববর্তীগণের অবস্থা তোমাদিগকে বলিয়া দেন এবং তোমাদেও প্রতি (কৃপা) দৃষ্টি করেন; আর আল্লাহ্ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
وَاللَّهُ يُرِيدُ أَن يَتُوبَ عَلَيْكُمْ وَيُرِيدُ الَّذِينَ يَتَّبِعُونَ الشَّهَوَاتِ أَن تَمِيلُوا مَيْلًا عَظِيمًا
বাংলা অর্থ:
২৭। আর আল্লাহ্ তো তোমাদের অবস্থার প্রতি তাওয়াজ্জুহ করিতে ইচ্ছা করেন। আর যাহারা প্রবৃত্তির পূজারী তাহারা চায় যে, তোমরা অত্যন্ত বক্রতায় নিপতিত হও।
يُرِيدُ اللَّهُ أَن يُخَفِّفَ عَنكُمْ ۚ وَخُلِقَ الْإِنسَانُ ضَعِيفًا
বাংলা অর্থ:
২৮। আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের সহিত সহজ ব্যবহর করিতে ইচ্ছা করেন, বস্ততঃ মানুষকে দুর্বল সৃষ্টি করা হইয়াছে।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُم بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ إِلَّا أَن تَكُونَ تِجَارَةً عَن تَرَاضٍ مِّنكُمْ ۚ وَلَا تَقْتُلُوا أَنفُسَكُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا
বাংলা অর্থ:
২৯। হে ঈমানদারগণ ! তোমরা পরস্পরে একে অন্যের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করিও না কিন্তু ব্যবসায়-বাণিজ্যে যাহা পরস্পরের সম্মতিক্রমে হয়, তাহলে দোষ নাই। আর তোমরা একে অন্যকে হত্যাও করিও না; নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের প্রতি অতীব করুণাশীল।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
(১) স্বাধীন পুরুষ ও স্ত্রী বিবাহ করিয়া সহবাস সুখ ভোগ করার পর যেনা করিলে তাহাদের শাস্তি প্রস্তর মারিয়া হত্যা করা, আর অবিবাহিত অবস্থায় যেনা করিলে, একশত কোড়া মারিতে হইবে। ক্রীতদাস দাসী যেনা করিলে তাহাদের শাস্তি ইহার অর্ধেক অর্থাৎ, পঞ্চাশ কোড়া। (মুঃ কোঃ)
(২) বিধর্মীরা মুসলমানদিগকে বলিত, তোমরা ফুফু ও খালার কন্যাকে যখন বৈধ মনে কর,তখন ভাই ও বোনদের কন্যাকে অবৈধ মনে কর কেন? অথচ তাহাদের জননী ফুফু, খালা ভগ্নীদিগকে হারাম বলিয়া থাক। (বঃ কোঃ)
(৩) তাই তাহাদের দুর্বল অবস্থা অনুযায়ী বিধান নির্ধারণ করিয়াছেন। অন্যথায় সওয়াবের তুলনায় আরও কঠিন বিধান নির্ধারণ করাও অপত্তিকর ছিল না। কিন্তু আল্লাহ্ পাক উভয়বিধ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি রাখিয়াছেন। (বঃ কোঃ
وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ عُدْوَانًا وَظُلْمًا فَسَوْفَ نُصْلِيهِ نَارًا ۚ وَكَانَ ذَٰلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرًا
বাংলা অর্থ:
৩০। আর যে ব্যক্তি এনরূপ কাজ করিবে সীমালঙ্ঘন করিয়া এবং জুলুম করিয়া, তাহলে আমি সত্বরই তাহাকে আগুন (দোযখে) দাখিল করিব; এবং ইহা আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষে সহজ।
إِن تَجْتَنِبُوا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُم مُّدْخَلًا كَرِيمًا
বাংলা অর্থ:
৩১। যে সমস্ত কাজ হইতে তোমাদিগকে নিষেধ করা হইয়া থাকে তন্মধ্যে যেগুলি বড় বড় কাজ (গুনাহ) যদি তোমরা তাহা হইতে পরহেয কর, তবে আমি তোমাদের ছোট ছোট গুনাহ্গুলি তোমাদিগ হইতে মোচন করিয়া দিব এবং তোমাদিগকে একটি সম্মানিত স্থানে দাখিল করিব।
وَلَا تَتَمَنَّوْا مَا فَضَّلَ اللَّهُ بِهِ بَعْضَكُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ ۚ لِّلرِّجَالِ نَصِيبٌ مِّمَّا اكْتَسَبُوا ۖ وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِّمَّا اكْتَسَبْنَ ۚ وَاسْأَلُوا اللَّهَ مِن فَضْلِهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا
বাংলা অর্থ:
৩২। আর তোমরা এমন কোন মর্যাদার আকাক্সক্ষা করিও না, যাহাতে আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদেও কাহাকেও কাহারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করিয়াছেন; পুরুষের জন্য তাহাদের আমলসমূহের অংশ রহিয়াছে; এবং নারীদের জন্য তাহাদের আমলসমূহের অংশ রহিয়াছে; আর আল্লাহ্ তা‘আলার হুযূওে তাঁহার অনুগ্রহের আবেদন কর; নিশ্চয়, আল্লাহ্ সর্ব বিষয়ে মহাজ্ঞানী।
وَلِكُلٍّ جَعَلْنَا مَوَالِيَ مِمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ ۚ وَالَّذِينَ عَقَدَتْ أَيْمَانُكُمْ فَآتُوهُمْ نَصِيبَهُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدًا
বাংলা অর্থ:
৩৩। আর প্রত্যেক ঐ ধন-সম্পত্তির জন্য আমি উল্টরাধিকারী নির্ধারণ করিয়া দিয়াছি যাহা পিতামাতা ও আত্মীয়-স্বজনগণ পরিত্যাগ করিয়া যায়; আর যাহাদেও সঙ্গে তোমাদেও অঙ্গীকার সম্পাদিত হইয়াছে তাহাদিগকে তাহাদেও অংশ দিয়া দাও; নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা সর্ব বিষয় পরিজ্ঞাত আছেন।
الرِّجَالُ قَوَّامُونَ عَلَى النِّسَاءِ بِمَا فَضَّلَ اللَّهُ بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ وَبِمَا أَنفَقُوا مِنْ أَمْوَالِهِمْ ۚ فَالصَّالِحَاتُ قَانِتَاتٌ حَافِظَاتٌ لِّلْغَيْبِ بِمَا حَفِظَ اللَّهُ ۚ وَاللَّاتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ ۖ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلًا ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا
বাংলা অর্থ:
৩৪। পুরুষগণ নারীদের শাসনকর্তা এই জন্য যে, আল্লাহ্ কতক্কে কতকের উপর মর্যাদা দিয়াছেন এবং এই জন্য যে, পুরুষগন স্বীয় অর্থ ব্যয় করিয়াছে; সুতরাং পুণ্যশীলা নারীগণ অনুগত হয়, পুরুষের অবর্তমানে (তাহার ধন ও মানের) রক্ষণাবেক্ষণ কওে আল্লাহ্ তা‘আলার হেফাযত অনুসারে এবং যে কোন নারী এনরূপ হয় যে, তোমরা তাহাদেও অবাধ্যতার আশংকা কর, তবে তাহাদিগকে মৌখিক উপদেশ দাও এবং তাহাদিগকে তাহাদেও শয্যাস্থানে একা পরিত্যাগ কর এবং তাহাদিগকে (লঘু) প্রহার কর, অতঃপর যদি তাহারা তোমাদেও আনুগত্য করিতে আরম্ভ কওে, তবে তাহাদেও প্রতি বাহানা আণে¦ষণ করিও না; নিশ্চয় আল্লাহ্ অতি মহান, মর্যাদাশীল।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
(১) কবীরা গুনাহ্ অর্থাৎ, যাহার বিনিময়ে দোযখের ভয় প্রদর্শন করা হইয়াছে কিংবা যাহাতে আল্লাহ্ ক্রোধান্বিত হন’ কিংবা যে গুনাহর জন্য শাস্তির বিধান নির্ধারিত হইয়াছে। আর ছগীরা-ছোট গুনাহ্, যাহার জন্য শুধু নিষেধ আসিয়াছে।(মঃ কোঃ)
(২) স্ত্রীলোকেরা হুযূরের খেদমতে আরয করিয়া ছিল, ইহার কারণ কি, যে আল্লাহ্ পাক প্রত্যেক কাজেই পুরুষদিগকে সম্বোধন করেন, স্ত্রীলোকদের উল্লেখ থাকে না। আর ওয়ারিসী সত্ত্বেও পুরুষরা দ্বিগুন পাইয়া থাকে।তদুত্তরে এই আয়াতটি নাযিল হয়।(মুঃ কোঃ)
(৩) জনৈকা নারী-সাহাবী তাঁহার স্বামীর অবধ্যতা চরণ করিলে, স্বামী স্ত্রীকে চপেটাঘাত করেন। এই অভিযোগে হুযুরের নিকট উপস্থিত করা হইলে হুযূও স্বামী হইতে সমপরিমাণ প্রতিশোধ গ্রহণের আদেশ দিলেন। ইতিমধ্যে এই আয়াতটি নাযিল হয়।(মুঃ কোঃ)
وَإِنْ خِفْتُمْ شِقَاقَ بَيْنِهِمَا فَابْعَثُوا حَكَمًا مِّنْ أَهْلِهِ وَحَكَمًا مِّنْ أَهْلِهَا إِن يُرِيدَا إِصْلَاحًا يُوَفِّقِ اللَّهُ بَيْنَهُمَا ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا خَبِيرًا
বাংলা অর্থ:
৩৫। আর যদি তোমরা উপরস্থগণ এই স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের মধ্যে ঝসড়া-বিবাদেও আশঙ্কা কর, তবে তোমরা প্রেরণ কর স্বামীর বংশ হইতে মীমাংশা করার যোগ্যতাসম্পন্ন এক ব্যক্তিকে এবং স্ত্রীর বংশ হইতে মীমাংশা করার যোগ্যতাসম্পন্ন এক ব্যক্তিকে , যদি এতদুভয় সংশোধন কামনা করে, তবে আল্লাহ্ এই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্প্রীতি সঞ্চার করিয়া দিবেন; নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা মহাজ্ঞানী, সর্ববিষয়ে খবরদার।
وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا ۖ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَىٰ وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ مَن كَانَ مُخْتَالًا فَخُورًا
বাংলা অর্থ:
৩৬। আর তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলারই এবাদত কর, এবং তাঁহার সহিত কাহাকেও শরীক করিও না এবং পিতামাতার সহিত স্বদব্যবহার কর এবং আত্মীয়-স্বজনের সহিতও এবং এতীমদেও সহিতও এবং দরিদ্রগণের সহিতও এবং প্রতিবেশীর সহিতও এবং সহচরদের সহিতও পথিকদের সহিতও, এবং উহাদের সহিতও যাহারা তোমাদের মালিকাধীন আছে; নিশ্চয়, আল্লাহ্ এনরূপ লোকদিগকে ভালবাসেন না যাহারা নিজেকে বড় মনে করে ও আত্ম-গর্ব করে।
শানে নুযূল
(১) মাস্আলঃ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার বিবাদের মীমাংসা বিচারকের নিকট উপস্থাপিত হইলে, তাহা মীমাংসা করিয়া দেওয়া তাঁহার জন্য ওয়াজিব। অন্যান্য সালিসের পক্ষে মুস্তাহাব। সর্বাবস্থায় উভয় পক্ষের প্রতিনিধি লইয়া মীমাংসা করা মুস্তাহাব। (মুঃ কোঃ)
(২) মোটকথা, উল্লিখিত সকল প্রকার লোকের সহিতই সদ্ব্যবহার কর। আর যাহারা এই সদ্ব্যবহার কওে না, তাহাদেও মধ্যে এই কয়েকটি কারণ বিদ্যামান। (ক) অহংকারী, কাহারও প্রতি লক্ষ্যই করে না। (খ) কৃপণ, কাহাকেও কিছু দিওয়ার প্রবৃত্তি হয় না। (গ) রসূলের প্রতি তাহাদেও আস্থা নাই। হুযূও (দঃ) এই সমস্ত কাজে যে সওয়াবের প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন তৎপ্রতি বিশ্বাস রাখে না। (ঘ) রিয়াকার, লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে অপাত্রেও দান করে। নতুবা, যোগ্য পাত্রেও দান কওে না। (ঙ) খোদা ও ক্বিয়ামতের প্রতি বিশ্বাস রাখে না। ইহারা কেিফর। পরবর্তী আয়াতগুলিতে ইহাদের পরিণাম বর্ণিত হইবে। (বঃ কোঃ)
وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا ۖ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَىٰ وَالْيَتَامَىٰ وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَىٰ وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ مَن كَانَ مُخْتَالًا فَخُورًا
বাংলা অর্থ:
৩৭। যাহারা কৃপণতা করে এবং অন্যকে কৃপণতা শিক্ষা দেয় এবং ঐ বস্তুকে গোপন করে যাহা আল্লাহ্ তা‘আলা তাহাদিগকে স্বীয় অনুগ্রহে প্রদান করিয়াছেন; আর আমি এনরূপ অকৃতজ্ঞদের জন্য অপমানজনক শাস্তি প্রস্তুত রাখিয়াছি।
الَّذِينَ يَبْخَلُونَ وَيَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبُخْلِ وَيَكْتُمُونَ مَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ ۗ وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُّهِينًا
বাংলা অর্থ:
৩৮। আর যাহারা স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে মানুষকে দেখাইবার জন্য এবং আল্লাহ্ তা‘আলার প্রতি ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে না; আর যাহারা মোছাহের হয় শয়তান, বস্তুতঃ সে নিকৃষ্ট মোছাহেব।
وَالَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ رِئَاءَ النَّاسِ وَلَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَلَا بِالْيَوْمِ الْآخِرِ ۗ وَمَن يَكُنِ الشَّيْطَانُ لَهُ قَرِينًا فَسَاءَ قَرِينًا
বাংলা অর্থ:
৩৯। এবং ইহাদের প্রতি কি বিপদ নাযিল হইয়া যাইবে, যদি ইহারা আল্লাহর প্রতি শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনয়ন করে এবং আল্লাহ্ তাহাদিগকে যাহা প্রদান করিয়াছেন উহা হইতে কিছু ব্যয় করিতে থাকে; আর আল্লাহ্ তা‘আলা ইহাদেও সম্বন্ধে পূর্ণ জ্ঞাত আছেন।
وَمَاذَا عَلَيْهِمْ لَوْ آمَنُوا بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَأَنفَقُوا مِمَّا رَزَقَهُمُ اللَّهُ ۚ وَكَانَ اللَّهُ بِهِمْ عَلِيمًا
বাংলা অর্থ:
৪০। নিশ্চয়, আল্লাহ্ তা‘আলা এক বিন্দু পরিমাণও জুলুম করিবেন না, আর যদি একটি নেকী হয়, তবে ইহাকে কয়েক গুণে বর্ধিত করিয়া দিবেন এবং নিজ সন্নিধান হইতে আরও মহান বিনিময় প্রদান করিবেন।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
(১) কতিপয় ইহুদী, আনছার সম্প্রদায়ের দানশীল লোকদিগকে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করিতে বাধা দিত এবং কৃপণতা অবলম্বন করার জন্য প্ররোচিত করিত। ইহাদের সম্বন্ধে এই আয়াটি নাযিল হয়। (লুঃ নুঃ)
(২) ইহার অর্থ, সংরক্ষণের নিয়ত না করিয়া কেবল কৃপণতা বশতঃ ধন-সম্পদ গোপন করিযা রাখে, অথবা এই অর্থও হইতে পারে যে, দ্বীনীএল্ম গোপন করে। যেমন ইহুদী আলেমরা হুযূও (দঃ)-এর রেসালতের খোম-খবর জনগণের নিকট গোপন রাখিত। সুতরাং এইখানে আর্থিক কৃপনতা এবং জ্ঞান বিতরনে কৃপণতা উভয়ই উদ্দেশ্য হইতে পারে। (বঃ কোঃ)
(৩) অর্থাৎ, কাহাকেও তাহার আমলের যোগ্য সওয়াব দিতে ত্রুটি করিবেন না এবং বিনা দোষে কাহাকেও শাস্তি দিবেন না কিংবা লঘু পাপের জন্য গুরু দন্ডের ব্যবস্থা করিবেন না। (বঃ কোঃ)
فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِن كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَىٰ هَـٰؤُلَاءِ شَهِيدًا
বাংলা অর্থ:
৪১। সুতরাং ঐ সময়েই বা কি অবস্থা হইবে? যখন আমি প্রত্যেক উম্মত হইতে এক একজন সাক্ষী উপস্থাপিত করিব এবং আপনাকে তাহাদের উপর সাক্ষীরূপে উপস্থিত করিব।
يَوْمَئِذٍ يَوَدُّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَعَصَوُا الرَّسُولَ لَوْ تُسَوَّىٰ بِهِمُ الْأَرْضُ وَلَا يَكْتُمُونَ اللَّهَ حَدِيثًا
বাংলা অর্থ:
৪২। যাহারা কুফর করিয়াছে এবং রাসূলের কথা অমান্য করিয়াছে-তাহারা ঐ দিন কামনা করিবে যে, হায় ! যদি আমরা মাটির সহিত বিলীন হইয়া যাইতাম; আর তাহারা আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট কোন কথা গোপন করিতে পারিবে না।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَقْرَبُوا الصَّلَاةَ وَأَنتُمْ سُكَارَىٰ حَتَّىٰ تَعْلَمُوا مَا تَقُولُونَ وَلَا جُنُبًا إِلَّا عَابِرِي سَبِيلٍ حَتَّىٰ تَغْتَسِلُوا ۚ وَإِن كُنتُم مَّرْضَىٰ أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِّنكُم مِّنَ الْغَائِطِ أَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَفُوًّا غَفُورًا
বাংলা অর্থ:
৪৩। হে ঈমানদারগণ ! তোমরা নামাযের নিকটেও যাইও না নেশার অবস্থায়- যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা নিজেদের মুখের কথাগুলি উপলব্ধি করিতে পার এবং জানাবতের আবস্থায়ও-তোমাদের মুসাফেরী অবস্থা ব্যতীত, যে পর্যন্ত না গোসল করিয়া লও; আর যদি তোমরা পীড়িত হও অথবা মুসাফেরী অবস্থায় থাক অথবা তোমাদের মধ্যে কেহ এস্তেন্জা হইতে আসে অথবা তোমরা স্ত্রী-সঙ্গম করিয়া থাক, ইতঃপর তোমরা পানি না পাও, তবে পাক মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করিয়া লও, অর্থাৎ, স্বীয় মুখ মন্ডল ও হস্তদ্বয়ের মস্হে কর; নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা অতিশয় মার্জনাকারী, মহা ক্ষমাপরায়ণ।
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ أُوتُوا نَصِيبًا مِّنَ الْكِتَابِ يَشْتَرُونَ الضَّلَالَةَ وَيُرِيدُونَ أَن تَضِلُّوا السَّبِيلَأَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ أُوتُوا نَصِيبًا مِّنَ الْكِتَابِ يَشْتَرُونَ الضَّلَالَةَ وَيُرِيدُونَ أَن تَضِلُّوا السَّبِيلَ
বাংলা অর্থ:
৪৪। তুমি কি তাহাদিগকে লক্ষ্য কর নাই ! যাহাদেরকে কিতাবের এক বড় অংশ প্রদত্ত হইয়াছে, তাহারা গোমরাহীকে গ্রহণ করিতেছে এবং কামনা করে যে, তোমরা (-ও সরল) পথ হইতে পথহারা হইয়া যাও।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
১) অর্থাৎ, হাশরের দিন পাপীরা দোষ অস্বীকার করিবে, তখন নবীগণ তাহাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবেন। যে যাহা করিয়াছিল সবকিছুই তাঁহারা প্রকাশ করিবেন। হুযূর (দঃ)-কেও অন্যান্য নবীগণের ন্যায় স্বীয় উম্মতদের অবস্থা বর্ণনা করার জন্য এবং সাক্ষ্যরূপে উপস্থিত করা হইবে। (হাঃ শায়খুল্হিন্দ)
২) শরাব হারাম হওয়ার পূর্বে একদিন আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ) এক নিমন্ত্রণে স্বীয় মেহ্মানদিগকে শরাব পান করাইয়া ছিলেন। তখন মাগরিবের সময় ছিল। সকলেই নামাযে দাঁড়াইলেন। হযরত আলী ইমামত করিতে ছিলেন। নেশার ঘোরে নামাযে তাঁহার মুখ হইতে তৌহিদের পরিপন্থী একটি কালাম বাহির হইয়া পড়িল। (অব্যশক ইহা অনিচ্ছাকৃত ছিল)। এই প্রসঙ্গে এই আয়াতটি নাযিল হয়। ইহাতে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামায পড়িতে নিষেধ করা হইয়াছে। (বঃ কোঃ)
وَاللَّهُ أَعْلَمُ بِأَعْدَائِكُمْ ۚ وَكَفَىٰ بِاللَّهِ وَلِيًّا وَكَفَىٰ بِاللَّهِ نَصِيرًا
বাংলা অর্থ:
৪৫। আর আল্লাহ্ তোমাদের শত্রুদিগকে পূর্ণরূপে জানেন; এবং আল্লাহ্ ওলী হিসাবে যথেষ্ট, এবং আল্লাহ্ মদদগার হিসাবেও যথেষ্ট।
مِّنَ الَّذِينَ هَادُوا يُحَرِّفُونَ الْكَلِمَ عَن مَّوَاضِعِهِ وَيَقُولُونَ سَمِعْنَا وَعَصَيْنَا وَاسْمَعْ غَيْرَ مُسْمَعٍ وَرَاعِنَا لَيًّا بِأَلْسِنَتِهِمْ وَطَعْنًا فِي الدِّينِ ۚ وَلَوْ أَنَّهُمْ قَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا وَاسْمَعْ وَانظُرْنَا لَكَانَ خَيْرًا لَّهُمْ وَأَقْوَمَ وَلَـٰكِن لَّعَنَهُمُ اللَّهُ بِكُفْرِهِمْ فَلَا يُؤْمِنُونَ إِلَّا قَلِيلًا
বাংলা অর্থ:
৪৬। এই (বর্ণিত) ব্যক্তিরা ইহুদীদের মধ্যকার লোক-কালাম (তাওরাত)-কে উহার স্থান হইতে (শব্দ বা অর্থের দিক দিয়া) অন্য দিকে ফিরাইয়া দেয়, আর (রাসূলুল্লাহর সঙ্গে) এই বাক্যগুলি ব্যবহার করে…….এবং …….এবং ….এইভাবে যে, নিজেদের ভাষা (ভঙ্গি) বদলাইয়া এবং (অন্তরে) ধর্মের প্রতি দোষারোপের ইচ্ছায়; আর যদি তাহারা ……..এবং ………এই বাক্যগুলি ব্যবহার করিত, তবে ইহা তাহাদের জন্য উত্তম এবং স্থানোপযোগী কথা হইত, কিন্তু আল্লাহ্ ইহাদিগকে ইহাদের কুফরীর দরুন স্বীয় করুণা হইতে দূরে নিক্ষেপ করিয়াছেন, অতএব, তাহারা ঈমান আনিবে না অল্প কয়েকজন ব্যতীত।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ آمِنُوا بِمَا نَزَّلْنَا مُصَدِّقًا لِّمَا مَعَكُم مِّن قَبْلِ أَن نَّطْمِسَ وُجُوهًا فَنَرُدَّهَا عَلَىٰ أَدْبَارِهَا أَوْ نَلْعَنَهُمْ كَمَا لَعَنَّا أَصْحَابَ السَّبْتِ ۚ وَكَانَ أَمْرُ اللَّهِ مَفْعُولًا
বাংলা অর্থ:
৪৭। হে কিতাব প্রাপ্ত লোকগণ ! তোমরা ঐ কিতাবের প্রতি ঈমান আন যাহা আমি নাযিল করিয়াছি-এইরূপে যে, উহা তোমাদের নিকটস্থ কিতাবের সত্যতা সমর্থন করে-ইহার পূর্বে যে, (আমি তোমাদের) চেহারাগুলিকে নিশ্চহ্ন করিয়া দেই, বস্তুতঃ ইহাদের বিপরীত দিকের ন্যায় করিয়া দেই অথবা আমি ইহাদের প্রতি এইরূপ অভিসম্পাত করি যেইরূপ অভিসম্পাত শনিবার পালনকারীদের প্রতি করিয়াছিলাম; আর আল্লাহর আদেশ সুসম্পন্ন হইয়াই থাকে।
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ ۚ وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَىٰ إِثْمًا عَظِيمًا
বাংলা অর্থ:
৪৮। নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁহার সহিত শরীক স্থির করার অপরাধ ক্ষমা করিবেন না এবং ইহা ব্যতীত অন্যান্য পাপগুলি তিনি যাহাকে ইচ্ছা ক্ষমা করিয়া দিবেন; আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সহিত অংশী সাব্যস্ত করে, সে গুরুতর পাপে পাপী হইল।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
১) এই শব্দগুলি দ্ব্যর্থবোধক …….এর ভাল অর্থ-আমরা আপনার আদেশ শুনিয়াছি, যাহারা আপনার বিরুদ্ধে প্ররোচনা দেয় তাহাদের কথা মানি নাই। কদর্থ-আমরা আপনার আদেশ শুনিয়াছি, মানিব না।…….ভাল অর্থ, “আপনার মতবিরোধী কথা আপনাকে শুনানো না হউক। আপনি যাহা কিছু বলেন তদুত্তরে সকলেই যেন আপনার সপক্ষে বলে”। কদর্থ, “আপনাকে কোন ভালো কথা শুনানো না হউক। আপনার কথার বিরূপ উত্তরই আপনার কর্ণগোচর হউক ”।…..শব্দের ভালো অর্থ, আমাদের প্রতি লক্ষ্য করুন। ইহার কদর্থ, ইহুদীদের ভাষায় একটি গালি। কাফের ও ইহুদীরা এসকল শব্দের কদর্থই গ্রহণ করিত। (বঃ কোঃ)
২) সুতরাং, তোমাদের ঈমান না আনাতে যদি আল্লাহ্ মুখমন্ডল বিকৃত করার বা বানরের আকৃতিতে পরিণত করার আদেশ দেন, তবে ইহা নিশ্চয়ই হইয়া যাইবে। (বঃ কোঃ)
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يُزَكُّونَ أَنفُسَهُم ۚ بَلِ اللَّهُ يُزَكِّي مَن يَشَاءُ وَلَا يُظْلَمُونَ فَتِيلًا
বাংলা অর্থ:
৪৯। তুমি কি তাহাদিগকে লক্ষ্য কর নাই ! যাহারা নিজদিগকে পবিত্র বলিয়া প্রকাশ করে; বরং আল্লাহ্ যাহাকে ইচ্ছা পবিত্র করেন, আর তাহাদের প্রতি সূত্র পরিমাণও জুলুম করা হইবে না।
انظُرْ كَيْفَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ ۖ وَكَفَىٰ بِهِ إِثْمًا مُّبِينًا
বাংলা অর্থ:
৫০। লক্ষ্য কর ! তাহারা আল্লাহর প্রতি কিরূপ মিথ্যা অপবাদ দিতেছে; এবং ইহাই স্পষ্ট অপরাধী হওয়ার জন্য যথেষ্ট।
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ أُوتُوا نَصِيبًا مِّنَ الْكِتَابِ يُؤْمِنُونَ بِالْجِبْتِ وَالطَّاغُوتِ وَيَقُولُونَ لِلَّذِينَ كَفَرُوا هَـٰؤُلَاءِ أَهْدَىٰ مِنَ الَّذِينَ آمَنُوا سَبِيلًا
বাংলা অর্থ:
৫১। তুমি কি তাহাদিগকে লক্ষ্য কর নাই, যাহাদেরকে কিতাবের এক বড় অংশ প্রদত্ত হইয়াছে, তাহারা জিব্ত (মূর্তি) ও শয়তানকে মান্য করে, আর তাহারা কাফেরদের সম্বন্ধে বলে, ইহারা মুসলমানদের তুলনায় অধিকতর সঠিক পথে রহিয়াছে।
أُولَـٰئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللَّهُ ۖ وَمَن يَلْعَنِ اللَّهُ فَلَن تَجِدَ لَهُ نَصِيرًا
বাংলা অর্থ:
৫২। ইহারাই সে সকল লোক, আল্লাহ্ যাহাদিগকে লা’নত করিয়াছেন; আর আল্লাহ্ যাহাকে লা’নত করেন তাহার জন্য কোনই সাহায্যকারী পাইবে না।
أَمْ لَهُمْ نَصِيبٌ مِّنَ الْمُلْكِ فَإِذًا لَّا يُؤْتُونَ النَّاسَ نَقِيرًا
বাংলা অর্থ:
৫৩। তবে কি তাহাদের নিকট রাজত্বের কোন অংশ রহিয়াছে ? তবে এমতাবস্থায় তো তাহারা লোকদিগকে সামান্য বস্তুও দিত না।
أَمْ يَحْسُدُونَ النَّاسَ عَلَىٰ مَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ ۖ فَقَدْ آتَيْنَا آلَ إِبْرَاهِيمَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَآتَيْنَاهُم مُّلْكًا عَظِيمًا
বাংলা অর্থ:
৫৪। নাকি তাহারা অন্য লোকদের (যেমন রাসূল্লাহর) প্রতি হিংসায় জ্বলিয়া মরিতেছে ঐ সমস্ত বস্তুর দরুন যাহা আল্লাহ্ স্বীয় অনুগ্রহে তাহাদিগকে প্রদান করিয়াছেন, সুতরাং (আপনার এইরূপ বস্তু প্রাপ্ত হওয়া কোন নূতন বিষয় নয়, কেননা) আমি (ইতিপূর্বে) ইব্রাহীমের বংশধরকে কিতাবও দান করিয়াছি এবং জ্ঞান দান করিয়াছি, আর আমি ইহাদিগকে সুবিশাল রাজ্যও প্রদান করিয়াছি।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
১) ইহুদীরা বাছুর পুজিত, হযরত উযাইর (আঃ)- কে খোদার পুত্র বলিত। উপরোক্ত আয়াত দ্বারা যখন তাহারা জানিতে পারিল যে, র্শিক মহা পাপ, ইহা কখনও ক্ষমা করা হইবে না। তখন বলিত লাগিল, “আমরা র্শিক করি না; বরং আমরা আল্লাহর প্রিয় বান্দা। আমরা পয়গম্ব-রের সন্তান। পয়গম্বরী আমাদের উত্তরাধীকার।” আল্লাহ্ তা‘আলা তাহাদের এই অহংকার পছন্দ করিলেন না। আয়াতটি এই সম্বন্ধেই নাযিল হইয়াছে। (মুঃ কোঃ)
২) ক্বোরাইশ সম্প্রদায়ের কাফেরেরা ইহুদী আলেমদিগকে জিজ্ঞাসা করিল, আমাদের ধর্ম ভাল না মুহাম্মাদের (দঃ) অনুগামীদের ধর্ম ভাল? আমরা হাজীদের এবং কা‘বা শরীফের খেদ্মত করিয়া থাকি। তদুত্তরে ইহুদী আলেমরা বলিল, তোমাদের ধর্ম ভাল। তোমরা তাহাদের চেয়ে অধিক সুপথ প্রাপ্ত। এতদ্সম্বন্ধে এই আয়াতটি নাযিল হয়। (বঃ কোঃ)
فَمِنْهُم مَّنْ آمَنَ بِهِ وَمِنْهُم مَّن صَدَّ عَنْهُ ۚ وَكَفَىٰ بِجَهَنَّمَ سَعِيرًا
বাংলা অর্থ:
৫৫। অনন্তর তাহাদের কেহ কেহ তো উহার প্রতি ঈমান আনিল, আর কেহ কেহ এমনও ছিল যে, উহা হইতে বিমুখ রহিল; এবং দোযখের জলন্ত অগ্নি (-র শাস্তি তাহাদের জন্য) যথেষ্ট।
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بِآيَاتِنَا سَوْفَ نُصْلِيهِمْ نَارًا كُلَّمَا نَضِجَتْ جُلُودُهُم بَدَّلْنَاهُمْ جُلُودًا غَيْرَهَا لِيَذُوقُوا الْعَذَابَ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَزِيزًا حَكِيمًا
বাংলা অর্থ:
৫৬। নিশ্চয় যাহারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করিয়াছে, আমি সত্বরই তাহাদিগকে এক ভীষণ অগ্নিতে দাখিল করিব; যখনই একবার তাহাদের চর্ম জ্বলিয়া যাইবে তৎক্ষণাৎই আমি তাহাদের পূর্ব-চর্মের স্থলে অন্য চর্ম সৃষ্টি করিয়া দিব যেন তাহারা আযাবই ভুগিতে থাকে; নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা মহা পরাক্রমশীল, প্রজ্ঞাময়।
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَنُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ۖ لَّهُمْ فِيهَا أَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ ۖ وَنُدْخِلُهُمْ ظِلًّا ظَلِيلًا
বাংলা অর্থ:
৫৭। আর যাহারা ঈমান আনিয়াছে এবং নেক কাজ করিয়াছে, আমি সত্বরাই তাহাদিগকে এমন উদ্যানসমূহে দাখিল করিব যাহারা নিম্নে নহরসমূহ বহিতে থাকিবে, তাহারা উহাতে অনন্তকাল অবস্থান করিবে; তাহাদের জন্য উহাতে পাক-ছাপ বিবিগণ থাকিবে, এবং আমি তাহাদিগকে অত্যন্ত ঘন ছায়ায় দাখিল করিব।
إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَن تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَىٰ أَهْلِهَا وَإِذَا حَكَمْتُم بَيْنَ النَّاسِ أَن تَحْكُمُوا بِالْعَدْلِ ۚ إِنَّ اللَّهَ نِعِمَّا يَعِظُكُم بِهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ سَمِيعًا بَصِيرًا
বাংলা অর্থ:
৫৮। নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদিগকে এই বিষয়ে আদেশ করিতেছেন যে, হকদারকে তাহাদের হক পৌঁছাইয়া দাও আর যখন জনগণের মীমাংসা কর তখন ন্যায়ের সহিত মীমাংসা করিও; নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদিগকে যে বিষয়ে উপদেশ দেন তাহা অতি উত্তম; নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা পূর্ণরূপে শুনেন, পূর্ণরূপে দেখেন।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
১) অর্থাৎ, ইব্রাহীমী গোত্রে যে সকল নবী অতিক্রান্ত হইয়াছেন, তাহাদের প্রতিও কেহ কেহ ঈমান আনিয়াছিল, আবার কেহ কেহ মুখ ফিরাইয়া রহিয়াছিল। অতএব, যদি আপনার যুগেও কেহ কেহ আপনার প্রেরিতত্ব ও কোরআন শরীফের প্রতি ঈমান না আনে, তবে পরিতাপের কিছুই নাই। (বঃ কোঃ)
২) মক্কা বিজয়ের দিন হুযূর (দঃ) কা‘বা গৃহের চাবি রক্ষক ওয়মান ইবনে আবি তাল্হার নিকট হইতে চাবি লইলে হযরত আব্বাস আবেদন করিলেন, এখন হইতে এই কাজের দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হউক। এই সমন্ধে এই আয়াতটি নাযিল হইয়াছে। (লোঃ নুঃ)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنكُمْ ۖ فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا
বাংলা অর্থ:
৫৯। হে ঈমানদারগণ ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর ও তাঁহার রাসূলের আনুগত্য কর এবং তোমাদের মধ্যে যাহারা উপরস্থ তাহাদেরও, অনন্তর যদি তোমরা কোন বিষয়ে পরস্পর দ্বিমত হও, তবে ঐ বিষয়কে আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলের উপর হওয়ালা করিয়া দাও যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি এবং কিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান রাখ; এই বিষয়গুলি উত্তম এবং ইহার পরিণামও খুব ভাল।
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَن يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَن يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا
বাংলা অর্থ:
৬০। আপনি কি তাহাদিগকে লক্ষ্য করেন নাই ! যাহারা দাবী করে যে, তাহারা ঐ কিতাবের প্রতিও ঈমান রাখে যাহা আপনার প্রতি নাযিল করা হইয়াছে এবং ঐ কিতাবের প্রতিও যাহা আপনার পূর্বে নাযিল করা হইয়াছে, এই অবস্থায় তাহারা নিজেদের মোকদ্দমাগুলি শয়তানের নিকট লইয়া যাইতে চায় অথচ তাহাদিগকে এই আদেশ করা হইয়াছে, যেন তাহাকে না মানে; আর শয়তান ইহাদিগকে পথভ্রষ্ট করিয়া বহু দূরে লইয়া যাইতে চায়।
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا إِلَىٰ مَا أَنزَلَ اللَّهُ وَإِلَى الرَّسُولِ رَأَيْتَ الْمُنَافِقِينَ يَصُدُّونَ عَنكَ صُدُودًا
বাংলা অর্থ:
৬১। আর যখন তাহাদিগকে বলা হয়, আস এই হুকুমের দিকে যাহা আল্লাহ্ নাযিল করিয়াছেন এবং (আস) তাঁহার রাসূলের দিকে, তখন আপনি মুনাফেকদের এই অবস্থা দেখিবেন যে, তাহারা আপনার নিকট আসিতে বিরত থাকিতেছে।
فَكَيْفَ إِذَا أَصَابَتْهُم مُّصِيبَةٌ بِمَا قَدَّمَتْ أَيْدِيهِمْ ثُمَّ جَاءُوكَ يَحْلِفُونَ بِاللَّهِ إِنْ أَرَدْنَا إِلَّا إِحْسَانًا وَتَوْفِيقًا
বাংলা অর্থ:
৬২। অনন্তর কি দশা হইবে ! যখন তাহাদের উপর কোন বিপদ উপনীত হয় তাহাদের ঐ কর্মের দরুন যাহাকিছু তাহারা অতঃপর আপনার নিকটে আসে খোদার নামে শপথ করিয়া-এতদ্ভিন্ন আমাদের অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না যে, (উভয় দলের মধ্যে) কোন কল্যাণ (-এর পন্থা) বাহির হয় এবং পরস্পর মিলন হইয়া যায়।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
১) দুইজন মুসলমানের মধ্যে ঝগড়া হইলে যদি একজন বলে, চল, শরীঅত অনুযায়ী ইহার মীমাংসা হউক, তদুত্তরে অপর জন যদি বলে, আমি শরীঅত মানি না, তবে সে কাফের হইয়া যাইবে। (মুঃ কোঃ)
২) জনৈক ইহুদীর সহিত জৈনিক মুনাফেকের ঝগড়া হইলে ইহুদী মুহাম্মদ (দঃ)-কে সালিস মানিল। সে জানিত, ধর্ম বিষয়ে মতবিরোধ থাকিলেও তিনি পক্ষপাতিত্ব করিবেন না। আর মুনাফেকের দাবি মিথ্যা ছিল, সে মনে করিল, আমি বাহিরে মুসলমান হইলেও রাসূলুল্লাহর নিকট বাক চাতুরীতে কাজ হইবে না। অপর দিকে কা‘ব ইব্নে আশরাফ একজন অসৎ ইহুদী সরদার, তাহাকে পক্ষে আনিতে পারিব, কাজেই সে কা‘বকে সালিস মানিল। অবশেষে উভয়েই হুযূরের নিকট বিচার প্রার্থী হইল, এবং ইহুদীর জয় হইল।
মুনাফেক ইহাতে সন্তুষ্ট না হইয়া ওমরের নিকট গেল। সে ধারণা করিয়াছিল ওমর আমার পক্ষেই রায় দিবেন, ইহুদী মনে করিল, ওমর ন্যায়পরায়ণ। তিনি আমার পক্ষেই রায় দিবেন। কাজেই মুনাফেকের প্রস্তাবে সে সম্মত হইয়া হযরত ওমরের নিকট গেল এবং পূর্ন ঘটনা বর্ণনা করিল, এবং ইহাও বলিল যে, হুযূর (দঃ) ইহার মীমাংসা করিয়াছিলেন কিন্তু এই ব্যক্তি মানে নাই। হযরত ওমর তৎক্ষণাৎ মুনাফেকের শিরোচ্ছেদ করিয়া বলিলেন, নবীর মীমাংসা অমান্য করার এই শাস্তি। অনন্তর মুনাফেকের ওয়ারিসগণ হুযুরের খেদমতে যাইয়া বলিল, একটা আপোষ মীমাংসার জন্যই ওমরের নিকট যাওয়া হইয়াছিল, অনর্থক তিনি উহাকে হত্যা করিয়াছেন; কাজেই আমরা হত্যার প্রতিশোধ চাই। এই আয়াতগুলিতে ঘটনার মূল তথ্য প্রকাশ করা হইয়াছে। (মুঃ কোঃ)
أُولَـٰئِكَ الَّذِينَ يَعْلَمُ اللَّهُ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ وَعِظْهُمْ وَقُل لَّهُمْ فِي أَنفُسِهِمْ قَوْلًا بَلِيغًا
বাংলা অর্থ:
৬৩। ইহারা ঐসকল লোক-আল্লাহ্ অবগত আছেন যাহাকিছু তাহাদের অন্তরে আছে, সুতরাং আপনি তাহাদের (ত্রুটির) প্রতি লক্ষ্য করিবেন না এবং তাহাদিগকে সদুপদেশ দিতে থাকুন আর তাহাদিগকে বিশেষ করিয়া তাহাদের নিজেদের (সংশোধন) সম্বন্ধে যথোপযোগী বাণী বলিয়া দিন।
وَمَا أَرْسَلْنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذْنِ اللَّهِ ۚ وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذ ظَّلَمُوا أَنفُسَهُمْ جَاءُوكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللَّهَ تَوَّابًا رَّحِيمًا
বাংলা অর্থ:
৬৪। আর আমি পয়গম্বরগণকে বিশেষ করিয়া এই জন্যই প্রেরণ করিয়াছি, যেন আল্লাহর আদেশে তাঁহাদের আনুগত্য করা হয়; আর যদি তাহারা নিজেদের ক্ষতি সাধনের পর আপনার নিকট উপস্থিত হইত এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাহিত এবং রাসূলও তাহাদের জন্য আল্লাহর সমীপে ক্ষমা চাহিতেন, তবে আবশ্যই তাহারা আল্লাহ্কে তওবা কবূলকারী, করুণাময় পাইত।
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
বাংলা অর্থ:
৬৫। অতএব, আপনার পরওয়ারদেগারের শপথ ! ইহারা ঈমানদার হইবে না, যে পর্যন্ত না তাহাদের মধ্যে যে-সব ঝগড়া-বিপদ সংঘটিত হয়, উহার মীমাংসা আপনার দ্বারা করাইয়া লয়, অতঃপর আপনার এই মীমাংসায় তাহারা নিজেদের অন্তরে কোনরূপ সংকীর্ণতা বোধ না করে এবং পুরাপুরি মানিয়া লয়।
وَلَوْ أَنَّا كَتَبْنَا عَلَيْهِمْ أَنِ اقْتُلُوا أَنفُسَكُمْ أَوِ اخْرُجُوا مِن دِيَارِكُم مَّا فَعَلُوهُ إِلَّا قَلِيلٌ مِّنْهُمْ ۖ وَلَوْ أَنَّهُمْ فَعَلُوا مَا يُوعَظُونَ بِهِ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُمْ وَأَشَدَّ تَثْبِيتًا
বাংলা অর্থ:
৬৬। আর যদি আমি মানুষের প্রতি ফরয করিয়া দিতাম যে, তোমরা আত্মহত্যা কর কিংবা স্বীয় দেশ হইতে বাহির হইয়া যাও, তবে অল্প কয়েকজন ব্যতীত এই আদেশ কেহই পালন করিত না; আর যদি তাহারা-তাহাদিগকে যেরূপ উপদেশ দেওয়া হয় তদনুযায়ী আমল করিত, তবে তাহাদের জন্য উত্তম হইত এবং ঈমানকে অধিকতর দৃঢ়কারী হইত।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
১) অর্থাৎ, প্রাণ দেওয়ার আদেশ করা হইলে মুনাফেকেরা তাহা পালন করিতে পারিত না। এখানে তো শুধু রসূলের আনুগত্য করিয়া তাঁহাকে বিচারক মানিতে বলা হইয়াছে। ইহা মানা উত্তম ছিল।(মুঃ কোঃ)
وَإِذًا لَّآتَيْنَاهُم مِّن لَّدُنَّا أَجْرًا عَظِيمًا
বাংলা অর্থ:
৬৭। আর এই অবস্থায় আমি তাহাদিগকে বিশেষ করিয়া নিজ সন্নিধান হইতে মহা পুরষ্কার প্রদান করিতাম।
وَلَهَدَيْنَاهُمْ صِرَاطًا مُّسْتَقِيمًا
বাংলা অর্থ:
৬৮। এবং আমি অবশ্যই তাহাদিগকে সরল পথ প্রদর্শন করিতাম।
وَمَن يُطِعِ اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَأُولَـٰئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِم مِّنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ ۚ وَحَسُنَ أُولَـٰئِكَ رَفِيقًا
বাংলা অর্থ:
৬৯। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলের অনুগত হয়, তবে এইরূপ ব্যক্তিগণও সেই মহান ব্যক্তিগণও সহচর হইবেন যাঁহাদের প্রতি আল্লাহ্ তা‘আলা অনুগ্রহ করিয়াছেন অর্থাৎ, নবীগণ এবং ছিদ্দীকগণ এবং শহীদগণ এবং নেক্কারগণ, আর এই মহাপুরুষগণ অতি উত্তম সহচর।
ذَٰلِكَ الْفَضْلُ مِنَ اللَّهِ ۚ وَكَفَىٰ بِاللَّهِ عَلِيمًا
বাংলা অর্থ:
৭০। ইহা (শুধু) অনুগ্রহ আল্লাহর হুযুর হইতে; এবং সর্বজ্ঞ হিসাবে আল্লাহ্ই যথেষ্ট।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا خُذُوا حِذْرَكُمْ فَانفِرُوا ثُبَاتٍ أَوِ انفِرُوا جَمِيعًا
বাংলা অর্থ:
৭১। হে ঈমানদারগণ ! নিজেরা সতর্কতা অবল্বন কর, ইতঃপর (জেহাদের জন্য) বাহির হও, পৃথক পৃথকভাবে অথবা সম্বিলিতভাবে।
وَإِنَّ مِنكُمْ لَمَن لَّيُبَطِّئَنَّ فَإِنْ أَصَابَتْكُم مُّصِيبَةٌ قَالَ قَدْ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيَّ إِذْ لَمْ أَكُن مَّعَهُمْ شَهِيدًا
বাংলা অর্থ:
৭২। আর তোমাদের দলে কতক এমন লোক আছে যাহারা পশ্চাৎপদ হইয়া পড়ে অনন্তর যদি তোমাদের কোন বিপদ উপস্থিত হয়, তবে বলে, নিশ্চয় আল্লাহ্ আমার প্রতি খুব অনুগ্রহ করিয়াছেন যে, আমি তাহাদের সঙ্গে উপস্থিত হই নাই।
وَلَئِنْ أَصَابَكُمْ فَضْلٌ مِّنَ اللَّهِ لَيَقُولَنَّ كَأَن لَّمْ تَكُن بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُ مَوَدَّةٌ يَا لَيْتَنِي كُنتُ مَعَهُمْ فَأَفُوزَ فَوْزًا عَظِيمًا
বাংলা অর্থ:
৭৩। আর যদি তোমাদের প্রতি আল্লাহর কোন অনুগ্রহ হয়, তবে এইরূপভাবে বলে-যেন তোমাদের মধ্যে এবং তাহার মধ্যে কোন সম্পর্কই নাই-হায় ! কতই না চমৎকার হইত যদি আমিও ইহাদের সঙ্গী হইতাম, তাহা হইলে আমারও খুব সফলতা লাভ হইত।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
১) কোন কোন সাহাবী হুযূরের খেদমতে আরয করিলেন, দুনিয়াতে হুযূরকে দেখিবার আগ্রহ হওয়া মাত্র খেদমতে হাযির হইয়া দর্শন লাভ করিতে পারি, কিন্তু বেহেশ্তে হুযূর অনেক উচ্চস্তরে অবস্থান করিবেন, সেখানে আমরা হুযূরের দর্শন লাভ করিব কেমন করিয়া? তদুত্তরে এই আয়াতটি নাযিল হয়।(লোঃ নুঃ)
২) অর্থাৎ, শত্রুপক্ষের চক্রান্ত হইতে সর্তক থাকিও এবং জিহাদের সময় ঢাল, তরবারি ইত্যাদি অস্ত্রশস্ত্র ও যুদ্ধের সরঞ্জাম লইয়া প্রস্তুত থাকিও।
فَلْيُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ الَّذِينَ يَشْرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا بِالْآخِرَةِ ۚ وَمَن يُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيُقْتَلْ أَوْ يَغْلِبْ فَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا
বাংলা অর্থ:
৭৪। তবে সে ব্যক্তির উচিত আল্লাহর পথে জেহাদ করা সেসব লোকদের বিরুদ্ধে, যাহারা পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবনকে গ্রহন করিয়া লইয়াছে; আর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জেহাদ করিবে, অনন্তর সে নিহত হউক বা বিজয়ী হউক, আমি তাহাকে মহা বিনিময় প্রদান করিব।
وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَـٰذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ وَلِيًّا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ نَصِيرًا
বাংলা অর্থ:
৭৫। আর তোমাদের নিকট কি ওযর আছে যে, তোমরা আল্লাহর পথে জেহাদ করিবে না এবং (ঐ) দুর্বলদের জন্য-যাহাদের মধ্যে কতক পুরুষও আছে, কতক নারীও আছে, কতক শিশুও আছে, যাহারা প্রার্থনা করিতেছে যে, হে আমাদের রব্ব ! আমাদিগকে এই নগর হইতে বাহির করুন, যাহার অধিবাসীরা ভয়ঙ্কর যালেম, এবং আমাদের জন্য গায়েব হইতে কোন ওলী দাঁড় করাইয়া দিন এবং আমাদের জন্য গায়েব হইতে কোন সাহায্যকারী প্রেরণ করুন।
الَّذِينَ آمَنُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ۖ وَالَّذِينَ كَفَرُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ الطَّاغُوتِ فَقَاتِلُوا أَوْلِيَاءَ الشَّيْطَانِ ۖ إِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيفًا
বাংলা অর্থ:
৭৬। যাহারা পূর্ণ ঈমানদার তাহারা তো আল্লাহর পথে জেহাদ করে, আর যাহারা কাফের তাহারা শয়তানের পথে সংগ্রাম করে, অতএব, হে মু‘মেনগণ !) তোমরা শয়তানের সহচরদের বিরুদ্ধে জেহাদ কর, বস্তুতঃ শয়তানের প্রচেষ্টা দুর্বলই হইয়া থাক।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
১) অর্থাৎ, জিহাদে মুসলমানদের পরাজয় ঘটিলে মুনাফেকেরা বলে, “আমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ হইয়াছে, আমরা তাহাদের সঙ্গে ছিলাম না”। পক্ষান্তরে যদি মুসলমানগণ বিজয়ী হইয়া গনীমতের মাল প্রাপ্ত হন, তবে জিহাদে অংশগ্রহণ না করার জন্য আক্ষেপ করে, ইহাতে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, তাহারা কেবল স্বার্থের জন্যই নিজদিগকে মুসলমান বলিয়া প্রকাশ করিতেছে।(বঃ কোঃ)
২) মক্কায় এইরূপ বহু মুসলমান রহিয়া গিয়াছিলেন, যাহারা দুর্বলতা ও অন্যান্য কারণে হিজ্রত করিতে সক্ষম হন নাই। কাফেরেরা তাঁহাদিগকে নানা প্রকারে যন্ত্রণা দিত, তাঁহারা মুক্তি পাইবার জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করিতেন। আল্লাহ্ তাঁহাদের দো‘আ কবূল করিলের, ফলতঃ মক্কা বিজয়ের ফলে তাঁহারা সকলেই শাস্তি ও সম্মান লাভ করিলেন। এই আয়াতে উহারই বর্ণনারহিয়াছে। (বঃ কোঃ)
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ قِيلَ لَهُمْ كُفُّوا أَيْدِيَكُمْ وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ فَلَمَّا كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقِتَالُ إِذَا فَرِيقٌ مِّنْهُمْ يَخْشَوْنَ النَّاسَ كَخَشْيَةِ اللَّهِ أَوْ أَشَدَّ خَشْيَةً ۚ وَقَالُوا رَبَّنَا لِمَ كَتَبْتَ عَلَيْنَا الْقِتَالَ لَوْلَا أَخَّرْتَنَا إِلَىٰ أَجَلٍ قَرِيبٍ ۗ قُلْ مَتَاعُ الدُّنْيَا قَلِيلٌ وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ لِّمَنِ اتَّقَىٰ وَلَا تُظْلَمُونَ فَتِيلًا
বাংলা অর্থ:
৭৭। তুমি কি তাহাদিগকে লক্ষ্য কর নাই ! যাহাদের বলা হইয়াছিল যে, স্বীয় হাতসমূহকে বিরত রাখ এবং নামাযের পাবন্দী কর এবং যাকাত প্রদান করিতে থাক, অনন্তর যখন তাহাদের প্রতি জেহাদ ফরয করিয়া দেওয়া হইল, তখন ঘটনা এই দাঁড়াইল যে, তাহাদের মধ্য হইতে কেহ কেহ মানুষকে এইরূপ ভয় করিতে লাগিল যেরূপ আল্লাহ্কে ভয় করে বরং তদপেক্ষাও অধিক, এবং এইরূপ বলিতে লাগিল, হে আমাদের রব্ব ! আপনি আমাদের উপর জেহাদ কেন ফরয করিয়া দিলেন? আমাদিগকে যদি আরও কিছু সময় অবকাশ দিতেন; আপনি বলিয়া দিন, পার্থিক ভোগ-বিলাস কেবল কয়েক দিনের জন্য, আর পরকাল ঐ ব্যক্তির জন্য সর্বদিক দিয়া উত্তম, যে আল্লাহর বিরোধিতা হইতে বাঁচিয়া থাকে। এবং তোমাদের প্রতি সূত্র-পরিমাণও জুলুম করা হইবে না।
أَيْنَمَا تَكُونُوا يُدْرِككُّمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنتُمْ فِي بُرُوجٍ مُّشَيَّدَةٍ ۗ وَإِن تُصِبْهُمْ حَسَنَةٌ يَقُولُوا هَـٰذِهِ مِنْ عِندِ اللَّهِ ۖ وَإِن تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَقُولُوا هَـٰذِهِ مِنْ عِندِكَ ۚ قُلْ كُلٌّ مِّنْ عِندِ اللَّهِ ۖ فَمَالِ هَـٰؤُلَاءِ الْقَوْمِ لَا يَكَادُونَ يَفْقَهُونَ حَدِيثًا
বাংলা অর্থ:
৭৮। তোমরা যেখানেই থাক, সেখানেই তোমাদের মৃত্যু আসিবে, যদিও তোমরা সুদৃঢ় দুর্গের মধ্যেই থাক না কেন; আর যদি তাহাদের (মুনাফেকদের) কোন ভাল অবস্থা উপস্থিত হয়, তবে বলে, ইহা আল্লাহর পক্ষ হইতে হইয়াছে, আর যদি তাহাদের কোন মন্দ অবস্থা উপস্থিত হয়, তবে বলে, ইহা আপনার দরুন হইয়াছে; আপনি বলিয়া দিন, সমস্ত আল্লাহর পক্ষ হইতেই হয়; তবে এসমস্ত লোকের কি হইয়াছে যে, কথা বুঝিবার কাছেও যায় না।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
১) হিজরতের পূর্বে মক্কার কাফেরেরা মুসলমানদিগকে কষ্ট দিত। এই কারনে কোন কোন সাহাবী হুযূরের খেদমতে জিহাদের জন্য অনুমতি চাইতেন। হুযূর বলিতেন, এখনও জিহাদের অনুমতি আসে নাই; অতএব, ধৈর্য ধারণ কর। হিজরতের পর যখন জিহাদের আদেশ পৌঁছাল, তখন স্বভাবতঃ কাহারও কাহারও নিকট ইহা কঠিন বলিয়া মনে হইল।(বঃ কোঃ)
২) কেননা, কেহ কুফরীমূলক বিরোধিতা করিলে পারলৌকিক ভোগ বিলাস তো তাহার ভাগ্যে বিন্দুমাত্রও হইবে না। পক্ষান্তরে, ঈমানদার ব্যক্তি পাপাচারী হইলে মাত্র উচ্চস্তরের ভোগ বিলাস হইতে বঞ্চিত হইবে।(বঃ কোঃ)
৩) অর্থাৎ, যে পরিমাণ আমল করিবে, উহার সওয়াব পুরাপুরি পাইবে। অতএব, জিহাদের ন্যায় মহান কাজের অশেষ সওয়াব হইতে কেন বঞ্চিত থাকিতেছ।
مَّا أَصَابَكَ مِنْ حَسَنَةٍ فَمِنَ اللَّهِ ۖ وَمَا أَصَابَكَ مِن سَيِّئَةٍ فَمِن نَّفْسِكَ ۚ وَأَرْسَلْنَاكَ لِلنَّاسِ رَسُولًا ۚ وَكَفَىٰ بِاللَّهِ شَهِيدًا
বাংলা অর্থ:
৭৯। হে মানব ! তোমাদের প্রতি যে-কোন মঙ্গল উপস্থিত হয়, উহা কেবল আল্লাহরই পক্ষ হইতে, আর যে-কোন অমঙ্গল উপস্থিত হয়, উহা তোমাদেরই (বদ্ আমলের) কারণে হইয়া থাকে; আর আমি আপনাকে সমস্ত মানুষের জন্য নবীরূপে প্রেরণ কারয়াছি; এবং আল্লাহ্ই যথেষ্ট সাক্ষী হিসাবে।
مَّن يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ ۖ وَمَن تَوَلَّىٰ فَمَا أَرْسَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ حَفِيظًا
বাংলা অর্থ:
৮০। যে-ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করিয়াছে সে তো খোদারই আনুগত্য করিল, আর যে-ব্যক্তি বিমুখ থাকে, তবে আমি তো আপনাকে তাহাদের প্রতি রক্ষকরূপে প্রেরণ করি নাই।
وَيَقُولُونَ طَاعَةٌ فَإِذَا بَرَزُوا مِنْ عِندِكَ بَيَّتَ طَائِفَةٌ مِّنْهُمْ غَيْرَ الَّذِي تَقُولُ ۖ وَاللَّهُ يَكْتُبُ مَا يُبَيِّتُونَ ۖ فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ وَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ ۚ وَكَفَىٰ بِاللَّهِ وَكِيلًا
বাংলা অর্থ:
৮১। আর এসমস্ত লোক বলে, আমাদের কাজ আনুগত্য করা, অনন্তর যখন ইহারা চলিয়া যায় আপনার নিকট হইতে, তখন তাহাদের একদল রাত্রিকালে পরামর্শ করে উহার বিপরীত যাহাকিছু তাহারা মুখে বলিয়াছিল; আর আল্লাহ্ তা‘আলা লিপিবদ্ধ করিতেছেন যাহা তাহারা রাত্রিকালে পরামর্শ করিয়া থাকে, অতএব, আপনি ইহাদের প্রতি ভ্রূক্ষেপও করিবেন না এবং (সর্ববিষয়) আল্লাহর হাওয়ালা করুন; আর আল্লাহ্ তা‘আলাই যথেষ্ট-কার্য সম্পাদনে।
أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ ۚ وَلَوْ كَانَ مِنْ عِندِ غَيْرِ اللَّهِ لَوَجَدُوا فِيهِ اخْتِلَافًا كَثِيرًا
বাংলা অর্থ:
৮২। তবে কি তাহারা কোরআনে মনঃসংযোগ করে না? আর যদি ইহা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাহারও নিকট হইতে হইত, তবে ইহার মধ্যে তাহারা বহু বৈসাদৃশ্য পাইত।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
১) মুনাফেকেরা কোন কৃতীত্ব স্বীকার করিত না। হুযূরের পরিচালনার ফলে যুদ্ধে জয়লাভ এবং গনীমতের মাল হস্তগত হইলে তাহারা বলিত ইহা আল্লাহর তরফ হইতে হইয়াছে। আর পরাজয় হইলে বলিত, হুযূরের ত্রুটিপূর্ণ পরিচালনার জন্য হইয়াছে। আল্লাহ্ বলেন, জয় পরাজয় সবই আল্লাহর পক্ষ হইতে হইয়া থাকে। পয়গম্বর আল্লাহর তরফ হইতে ইঙ্গিত পাইয়াই তদ্বীর করেন। কাজেই, উহাতে কোন ভুল হয় না। পরাজয়কে পরাজয় মনে করিও না। ইহা তোমাদেরই কর্মফল। আলোচ্য আয়াতে ইহাই বলা হইয়াছে। (মঃ কোঃ)
২) অর্থাৎ, মানুষকে কুফর হইতে ফিরাইয়া রাখা আপনার দায়িত্ব নহে। আপনার দায়িত্ব শুধু পয়গাম পৌঁছাইয়া দেওয়া। কেহ কেন কাফের হইল? এই কৈফিয়ৎ আপনার নিকট জিজ্ঞাসা করা হইবে না। এখানে হুযূরকে সান্তনা দেওয়া হইতেছে। (বঃ কোঃ)
وَإِذَا جَاءَهُمْ أَمْرٌ مِّنَ الْأَمْنِ أَوِ الْخَوْفِ أَذَاعُوا بِهِ ۖ وَلَوْ رَدُّوهُ إِلَى الرَّسُولِ وَإِلَىٰ أُولِي الْأَمْرِ مِنْهُمْ لَعَلِمَهُ الَّذِينَ يَسْتَنبِطُونَهُ مِنْهُمْ ۗ وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ لَاتَّبَعْتُمُ الشَّيْطَانَ إِلَّا قَلِيلًا
বাংলা অর্থ:
৮৩। আর যখন তাহাদের নিকট কোন বিষয়ের খবর পৌঁছে, তাহা নিরাপত্তার হউক বা ভয়েরই হউক, তবে উহা (তৎক্ষণাৎ) প্রচার করিয়া দেয়; আর যদি তাহারা উহাকে রাসূলের উপর এবং তাহাদের মধ্যে যাহারা এইরূপ বিষয় বুঝিতে সক্ষম তাহাদের উপর সমর্পণ করিত, তাহা হইলে ইহাকে তাহারা জানিয়াই লইত যাহারা ইহাদের মধ্যে সংবাদের সঠিক তথ্য অনুসন্ধান করিয়া লয়; আর যদি তোমাদের প্রতি আল্লাহ্ তা‘আলার অনুগ্রহ এবং তাঁহার রহমত না হইত, তবে তোমরা সকলেই শয়তানের অনুগামী হইতে অল্প কয়েকজন ব্যতীত।
فَقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ لَا تُكَلَّفُ إِلَّا نَفْسَكَ ۚ وَحَرِّضِ الْمُؤْمِنِينَ ۖ عَسَى اللَّهُ أَن يَكُفَّ بَأْسَ الَّذِينَ كَفَرُوا ۚ وَاللَّهُ أَشَدُّ بَأْسًا وَأَشَدُّ تَنكِيلًا
বাংলা অর্থ:
৮৪। অতএব, আপনি আল্লাহর পথে জেহাদ করুন ! আপনার প্রতি আপনার নিজের কর্ম ব্যতীত কোন আদেশ নাই এবং মুসলমানদিগকে উৎসাহিত করুন, আল্লাহ্ হইতে এই আশা যে, তিনি কাফেরদের সংগ্রাম-শক্তিকে প্রতিরোধ করিয়া দিবেন; আর আল্লাহ্ সংগ্রাম-শক্তিতে অধিক দৃঢ় এবং শাস্তি প্রদানেও অধিক কঠোর।
مَّن يَشْفَعْ شَفَاعَةً حَسَنَةً يَكُن لَّهُ نَصِيبٌ مِّنْهَا ۖ وَمَن يَشْفَعْ شَفَاعَةً سَيِّئَةً يَكُن لَّهُ كِفْلٌ مِّنْهَا ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ مُّقِيتًا
বাংলা অর্থ:
৮৫। যে ব্যক্তি সৎ সুফারিশ করিবে, সে ইহার দরুন (সওয়াবের) অংশ প্রাপ্ত হইবে; এবং যে-ব্যক্তি অসৎ সুফারিশ করিবে, সে ইহার দরুন (গুনাহর) অংশ প্রাপ্ত হইবে; বস্তুতঃ আল্লাহ্ তা‘আলা সকল বিষয়োপরি শক্তিমান।
وَإِذَا حُيِّيتُم بِتَحِيَّةٍ فَحَيُّوا بِأَحْسَنَ مِنْهَا أَوْ رُدُّوهَا ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ حَسِيبًا
বাংলা অর্থ:
৮৬। আর যখন কেহ তোমাদিগকে সালাম করে, তখন তোমরা তাহারা চেয়ে উৎকৃষ্ট বাক্যে সালাম (-এর উত্তর) কর অথবা সেই শব্দটাই (উত্তরে) বলিয়া দাও নিশ্চয়, আল্লাহ্ সকল বিষয়ের হিসাব লইবেন।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
১) অর্থাৎ, যুদ্ধক্ষেত্র হইতে জয় কিংবা পরাজয়ের সংবাদ পৌঁছালে, প্রথমে হুযূর কিংবা তাঁহার প্রধান সাহাবীদের গোচরীভূত করা আবশ্যক। এতদ্ভিন্ন নিজের বিবেক দ্বারা কোন খবর সত্য বলিয়া জানিতে পারিলে, তাহা যাচাই না করিয়া তৎক্ষণাৎ প্রচার করিয়া দেওয়া উচিত নহে। কেননা, অনেক সময় মিথ্যা সংবাদও প্রচারিত হইয়া থাকে। (মুঃ কোঃ)
২) অর্থাৎ, দুর্বলমতি মুসলমানগণ কাফেরদের সহিত যুদ্ধ করিতে ভয় পাইতেছে। তবে কি তাহারা খোদার সঙ্গে যুদ্ধ করিবে? মোটকথা, খোদার হুকুম অমান্য করিলে তাঁহার কোপে পতিত হইতে হইবে। সুতরাং আল্লাহ্ তা‘আলার কোপে পতিত হওয়ার চেয়ে কাফেরদিগকে হত্যা করা এবং নিজে শহীদ হওয়াই তো সঙ্গত ও সহজ।(মুঃ কোঃ)
اللَّهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ ۚ لَيَجْمَعَنَّكُمْ إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ لَا رَيْبَ فِيهِ ۗ وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللَّهِ حَدِيثًا
বাংলা অর্থ:
৮৭। আল্লাহ্ এইরূপ যে, তিনি ভিন্ন কেহই মা‘বূদ হওয়ার যোগ্য নহে; তিনি নিশ্চয়ই তোমাদিগকে একত্রিত করিবেন কিয়ামত দিবসে-ইহাতে কোন সন্দেহ নাই; আর আল্লাহ্ তা‘আলার চেয়ে কাহার কথা অধিক সত্য হইবে?
فَمَا لَكُمْ فِي الْمُنَافِقِينَ فِئَتَيْنِ وَاللَّهُ أَرْكَسَهُم بِمَا كَسَبُوا ۚ أَتُرِيدُونَ أَن تَهْدُوا مَنْ أَضَلَّ اللَّهُ ۖ وَمَن يُضْلِلِ اللَّهُ فَلَن تَجِدَ لَهُ سَبِيلًافَمَا لَكُمْ فِي الْمُنَافِقِينَ فِئَتَيْنِ وَاللَّهُ أَرْكَسَهُم بِمَا كَسَبُوا ۚ أَتُرِيدُونَ أَن تَهْدُوا مَنْ أَضَلَّ اللَّهُ ۖ وَمَن يُضْلِلِ اللَّهُ فَلَن تَجِدَ لَهُ سَبِيلًا
বাংলা অর্থ:
৮৮। অনন্তর তোমাদের কি হইল যে, তোমরা এই মুনাফেকদের ব্যাপারে দুই দল হইয়া গেলে? অথচ আল্লাহ্ তা‘আলা ইহাদের আমলের দরুন ইহাদিগকে উল্টা দিকে ফিরাইয়া দিয়াছেন; তোমরা কি ইচ্ছা রাখ যে, এইরূপ লোকদিগকে হেদায়ত করিবে, যাহাদিগকে আল্লাহ্ তা‘আলা গোমরাহীতে নিপতিত রাখিয়াছেন? এবং যাহাকে আল্লাহ্ তা‘আলা গোমারহীতে নিপতিত রাখেন, তাহার (মু’মেন হওয়ার) জন্য কোনই পথ খুঁজিয়া পাইবে না।
وَدُّوا لَوْ تَكْفُرُونَ كَمَا كَفَرُوا فَتَكُونُونَ سَوَاءً ۖ فَلَا تَتَّخِذُوا مِنْهُمْ أَوْلِيَاءَ حَتَّىٰ يُهَاجِرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ ۚ فَإِن تَوَلَّوْا فَخُذُوهُمْ وَاقْتُلُوهُمْ حَيْثُ وَجَدتُّمُوهُمْ ۖ وَلَا تَتَّخِذُوا مِنْهُمْ وَلِيًّا وَلَا نَصِيرًا
বাংলা অর্থ:
৮৯। তাহারা এই আশা করে যে, যেমন তাহারা কাফের, তদ্রূপ তোমরাও কাফের হইয়া যাও, যাহাতে তোমরা ও তাহারা একরূপ হইয়া যাও, অতএব, তাহাদের মধ্যে হইতে কাহাকেও বন্ধু বানাইও না-যে পর্যন্ত না তাহারা আল্লাহর পথে হিজরত করে; আর যদি তাহারা বিমুখ হয়, তবে তাহাদিগকে ধর এবং হত্যা কর, যেখানেই তাহাদিগকে পাও, আর তাহাদের মধ্যে কাহাকেও বন্ধুরূপে গ্রহণ করিও না এবং সাহায্যকারীরূপেও নহে।
إِلَّا الَّذِينَ يَصِلُونَ إِلَىٰ قَوْمٍ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُم مِّيثَاقٌ أَوْ جَاءُوكُمْ حَصِرَتْ صُدُورُهُمْ أَن يُقَاتِلُوكُمْ أَوْ يُقَاتِلُوا قَوْمَهُمْ ۚ وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ لَسَلَّطَهُمْ عَلَيْكُمْ فَلَقَاتَلُوكُمْ ۚ فَإِنِ اعْتَزَلُوكُمْ فَلَمْ يُقَاتِلُوكُمْ وَأَلْقَوْا إِلَيْكُمُ السَّلَمَ فَمَا جَعَلَ اللَّهُ لَكُمْ عَلَيْهِمْ سَبِيلًا
বাংলা অর্থ:
৯০। কিন্তু যাহারা এইরূপ যে, এমন লোকের সহিত মিলিত হয়, তাহাদের মধ্যে এবং তোমাদের মধ্যে চুক্তি রহিয়াছে কিংবা তোমাদের নিকট এইরূপ অবস্থায় উপস্থিত হয় যে, তাহাদের অন্তর তোমাদের সহিত ও স্বীয় সম্প্রদায়ের সহিত সংগ্রাম করিতে সংকোচ বোধ করে (ইহাদের সম্বন্ধে এই নির্দেশ প্রযোজ্য নহে); আর যদি আল্লাহ্ তা‘আলা ইচ্ছা করিতেন, তবে তাহাদিগকে তোমাদের উপর প্রবল করিয়া দিতেন, অনন্তর তাহারা তোমাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করিত, অতএব, যদি তাহারা তোমাদের হইতে নিবৃত্ত থাকে অর্থাৎ, তোমাদের সহিত যুদ্ধ না করে এবং তোমাদের সহিত শান্তি ভাব রক্ষা করে, তবে আল্লাহ্ তোমাদিগকে তাহাদের প্রতি (হত্যা বা আবদ্ধ করার) কোন পন্থা (-এর অনুমতি) দেন নাই।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
১) মাস্আলাঃ সালামের জওয়াব দেওয়া ওয়াজিব। (বঃ কোঃ)
২) কতিপয় কাফের মক্কা হইতে মদীনায় আসিয়া বলিল যে, আমরা মুসলিম মুহাজির। অতএবঃ বাণিজ্যের ভান করিয়া মক্কায় ফিরিয়া যায় পুঃআর পত্যাবর্তন করে নাই। মুসলমানদের কেহ তাহাদেরকে কাফের বলিল। এই আয়াতে তাহাদেরকে কাফের আখ্যা দিয়া হত্যার আদেশ হইয়াছে। (বঃ কোঃ)
৩) সুরাক্বা ইবনে মালেক মুদলেজী বদর ও ওহুদের ঘটনার পর হুযূরের কেদমতে আসিয়া বলিল, আমাদের সহিত সন্ধি করুন। হুযূর সন্ধির উদ্দেশ্যে হযরত খালেদা কে তথায় প্রেরণ করিলেন। এই শর্তে সন্ধি হইল যে, “তাহারা মুসলমানদের প্রতিপক্ষের সাহায্য করিবে না। ক্বোরাইশ কাফেরেরা ইসলাম গ্রহণ করিলে তাহারাও ইসলাম গ্রহণ করিবে। তাহাদের সম্মিলিত সমস্ত সম্প্রদায় তাহাদের এই চুক্তিতে শরীক থাকিবে। এই সম্বন্ধে উক্ত আয়াতটি নাযিল হয়। (বঃ কোঃ)
سَتَجِدُونَ آخَرِينَ يُرِيدُونَ أَن يَأْمَنُوكُمْ وَيَأْمَنُوا قَوْمَهُمْ كُلَّ مَا رُدُّوا إِلَى الْفِتْنَةِ أُرْكِسُوا فِيهَا ۚ فَإِن لَّمْ يَعْتَزِلُوكُمْ وَيُلْقُوا إِلَيْكُمُ السَّلَمَ وَيَكُفُّوا أَيْدِيَهُمْ فَخُذُوهُمْ وَاقْتُلُوهُمْ حَيْثُ ثَقِفْتُمُوهُمْ ۚ وَأُولَـٰئِكُمْ جَعَلْنَا لَكُمْ عَلَيْهِمْ سُلْطَانًا مُّبِينًا
বাংলা অর্থ:
৯১। তোমরা নিশ্চয়ই এমনও কতক লোক পাইবে, যাহারা (প্রবঞ্চনা করিয়া) ইহাই কামনা করে যে, তোমাদিগকে হইতেও নিরাপদ হইয়া থাকে এবং স্বীয় সম্প্রদায় হইতেও নিরাপদ হইয়া থাকে; যখনই তাহাদিগকে দুষ্টামির (ও ফ্যাসাদের) প্রতি আকৃষ্ট করা হয়, তখনই তাহারা উহাতে পতিত হয়, সুতরাং এসমস্ত লোক যদি তোমাদিগ হইতে নিবৃত্ত না থাকে, এবং তোমাদের সহিত শান্তি রক্ষা না করে এবং স্বীয় হস্তসমমূহকে সংরুদ্ধ না রাখে, তবে তোমরা তাহাদিগকে ধর এবং হত্যা কর, যেখানেই তাহাদিগকে পাও; এবং আমি তোমাদিগকে তাহাদের উপর উজ্জ্বল প্রমাণ দিয়াছি।
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ أَن يَقْتُلَ مُؤْمِنًا إِلَّا خَطَأً ۚ وَمَن قَتَلَ مُؤْمِنًا خَطَأً فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مُّؤْمِنَةٍ وَدِيَةٌ مُّسَلَّمَةٌ إِلَىٰ أَهْلِهِ إِلَّا أَن يَصَّدَّقُوا ۚ فَإِن كَانَ مِن قَوْمٍ عَدُوٍّ لَّكُمْ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مُّؤْمِنَةٍ ۖ وَإِن كَانَ مِن قَوْمٍ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُم مِّيثَاقٌ فَدِيَةٌ مُّسَلَّمَةٌ إِلَىٰ أَهْلِهِ وَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مُّؤْمِنَةٍ ۖ فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ تَوْبَةً مِّنَ اللَّهِ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا
বাংলা অর্থ:
৯২। আর কোন মু‘মেনের শান এইরূপ নহে যে, কোন মু’মেনকে হত্যা করে, হাঁ ভ্রমবশতঃ আর যে ব্যক্তি ভ্রমবশতঃ কোন মু’মেনকে হত্যা করে, তবে তাহাকে একটি মুসলমান গোলাম বা দাসী আযাদ করিয়া দিতে হইবে, এবং রক্ত-বিনিময় (-ও ওয়াজেব) যাহা নিহত ব্যক্তির বংশধরগণকে সমর্পণ করিতে হইবে, তবে যদি তাহারা ক্ষমা করিয়া দেয়-আর যদি সেই (নিহত) ব্যক্তি এইরূপ সম্প্রদায়ভুক্ত হয়, যাহারা তোমাদের শত্রু অথচ সে নিজে মু’মেন, তবে একটি মুসলমান গোলাম বা দাসী আযাদ করিতে হইবে; আর যদি সে এমন সম্প্রদায়ভুক্ত হয় যে, তাহাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সন্ধি-চুক্তি রহিয়াছে, তবে রক্ত-বিনিময় (ওয়াজেব) যাহা তাহার বংশধরগণকে সমর্পণ করিতে হইবে, এবং একটি মুসলমান গোলাম বা দাসী আযাদ করিতে হইবে, তবে যে ব্যক্তি (ইহা) না পায়, তাহলে একাদিক্রমে দুই মাস রোযা রাখিবে, যাহা আল্লাহর পক্ষ হইতে তওবা হিসাবে নির্ধারিত হইয়াছে; আর আল্লাহ্ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
১) অর্থাৎ, বাহ্যিক মেলামেশার দরুন তাহাদিগকে যুদ্ধক্ষেত্রে রেহাই দিওনা। কিন্তু দুই অবস্থায় (ক) তোমাদের সহিত সন্ধিভুক্ত লোকদের সহিত যাহাদের চুক্তি রহিয়াছে। (খ) যুদ্ধে অপরাগ হইয়া যাহারা তোমাদের সহিত এই শর্তে সন্ধি করিয়াছে যে, না নিজ সম্প্রদায়ের পক্ষে তোমাদের সহিত সংগ্রাম করিবে, না তোমাদের পক্ষে নিজ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিবে। যদি তাহারা উভয় শর্ত রক্ষা করে, তবে ইহা খোদার অনুগ্রহ মনে করিও। (মুঃ কোঃ)
২) অর্থাৎ, যাহারা তোমাদের সহিত যুদ্ধ না করার চুক্তিতে আবদ্ধ হইয়াছে, অতঃপর যদি তাহারা চুক্তি ভঙ্গ করতঃ স্বীয় সম্প্রদায়ের পক্ষ অবলম্বন করে, তবে তাহাদিগকে বিনা দ্বিধায় হত্যা কর, কারণ, তাহারা সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করিয়াছে। উজ্জ্বল প্রমাণ বলিতে ইহাই বুঝা যায়। (মুঃ কোঃ)
وَمَن يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَاؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيهَا وَغَضِبَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَهُ عَذَابًا عَظِيمًا
বাংলা অর্থ:
৯৩। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে স্বেচ্ছায় হত্যা করিয়া ফেলে, তবে তাহার (মূল) শাস্তি (তো) জাহান্নাম ছিল যাহাতে সে অনন্তকাল থাকিত, (কিন্তু আল্লাহর করুণায়, ঈমানের বরকতে পরিশেষে মুক্তি পাইবে) এবং আল্লাহ্ তাহারা প্রতি ক্রুদ্ধ হইবেন এবং তাহাকে স্বীয় (বিশেষ) করুণা হইতে দূরে নিক্ষেপ করিবেন এবং তাহার জন্য ভীষণ শাস্তির ব্যবস্থা করিবেন।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا ضَرَبْتُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَتَبَيَّنُوا وَلَا تَقُولُوا لِمَنْ أَلْقَىٰ إِلَيْكُمُ السَّلَامَ لَسْتَ مُؤْمِنًا تَبْتَغُونَ عَرَضَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فَعِندَ اللَّهِ مَغَانِمُ كَثِيرَةٌ ۚ كَذَٰلِكَ كُنتُم مِّن قَبْلُ فَمَنَّ اللَّهُ عَلَيْكُمْ فَتَبَيَّنُوا ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا
বাংলা অর্থ:
৯৪। হে ঈমানদারগণ ! যখন তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলার পথে বহির্গত হও, তখন প্রত্যেক কাজই তাহ্কীক করিয়া করিও এবং এমন ব্যক্তিকে-যে তোমাদের সম্মুখে আনুগত্য প্রকাশ করে-এইরূপ বলিও না যে, তুমি মুসলমান নও, এই অবস্থায় যে, তোমরা পার্থিব জীবনের সরঞ্জাম কামনা কর, বস্তুতঃ আল্লাহর নিকট প্রচুর গনীমতের মাল রহিয়াছে; প্রথমে তোমরাও এনরূপই ছিলে, অনন্তর আল্লাহ্ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করিয়াছেন, অতএব,-ভাবিয়া দেখ; নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের কৃতকর্মের পূর্ণ খবর রাখেন।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
১) অজ্ঞতসারে, অনিচ্ছায় কিংবা ভুলক্রমে হত্যা করা কয়েক প্রকার হইতে পারে। ভুল করিয়া যে কোন প্রকার হত্যার দরুন হত্যাকারীর উপর দ্বিবিধ শাস্তি প্রজোয্য হইবে যথাঃ (ক) একজন মুসলমান ক্রীতদাস বা দাসীকে আযাদ করিয়া দেওয়া। সম্ভব না হইলে উপর্যুপরি পূর্ণ দুই মাস রোযা রাখা (খ) তদুপরি নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসদেরকে ‘দিয়ত’ অর্থাৎ, হত্যার বিনিময় দিতে হইবে। অবশ্য তাহারা মাফ করিয়া দিলে, মাফ হইবে। হত্যাকারীর আত্মীয় বন্ধুগণ তাহার পক্ষ হইতে ইহা তিন বৎসরের মধ্যে কয়েক কিস্তিতে আদায় করিবে। (মুঃ কোঃ)
২) স্বেচ্ছায় কোন মুসলমানকে হত্যা করিলে হত্যাকারী জাহান্নামী হইবে। তওবা কবূল হইবে না। তবে আল্লাহর ইচ্ছাধীন কিন্তু বিনিময়ে তাহাকে হত্যা করা হইলে সে নির্দোষ হইবে। (মুঃ কোঃ)
لَّا يَسْتَوِي الْقَاعِدُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ غَيْرُ أُولِي الضَّرَرِ وَالْمُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ ۚ فَضَّلَ اللَّهُ الْمُجَاهِدِينَ بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ عَلَى الْقَاعِدِينَ دَرَجَةً ۚ وَكُلًّا وَعَدَ اللَّهُ الْحُسْنَىٰ ۚ وَفَضَّلَ اللَّهُ الْمُجَاهِدِينَ عَلَى الْقَاعِدِينَ أَجْرًا عَظِيمًا
বাংলা অর্থ:
৯৫। সমান নহে-সেই মুসলমানগণ কোন ওযর ব্যতিরেকে গৃহে বসিয়া থাকে এবং যাহারা আল্লাহর পথে জেহাদ করে স্বীয় ধন-সম্পদ ও প্রাণ দিয়া; আল্লাহ্ তাহাদের মর্যাদা অনেক বেশী করিয়া দিয়াছেন যাহারা স্বীয় ধন ও প্রাণ দিয়া জেহাদ করে-গৃহে উপবিষ্টদের তুলানায়; আর সকলকেই আল্লাহ্ তা‘আলা উত্তম গৃহের প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন; আর আল্লাহ্ মুজাহিদদিগকে গৃহে উপবিষ্টদের তুলনায় অতি মহান পুরস্কার দিয়াছেন।
دَرَجَاتٍ مِّنْهُ وَمَغْفِرَةً وَرَحْمَةً ۚ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
বাংলা অর্থ:
৯৬। অর্থাৎ, বহু পদমর্যাদা যাহা আল্লাহর সন্নিধান হইতে প্রাপ্ত হইবে এবং ক্ষমা ও করুণা; আর আল্লাহ্ তা‘আলা অতিব ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়।
إِنَّ الَّذِينَ تَوَفَّاهُمُ الْمَلَائِكَةُ ظَالِمِي أَنفُسِهِمْ قَالُوا فِيمَ كُنتُمْ ۖ قَالُوا كُنَّا مُسْتَضْعَفِينَ فِي الْأَرْضِ ۚ قَالُوا أَلَمْ تَكُنْ أَرْضُ اللَّهِ وَاسِعَةً فَتُهَاجِرُوا فِيهَا ۚ فَأُولَـٰئِكَ مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ ۖ وَسَاءَتْ مَصِيرًا
বাংলা অর্থ:
৯৭। নিশ্চয়, যখন ফেরেশতাগণ এইরূপ লোকদের রূহ্ কব্য করেন-যাহারা (ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও হিজরত না করিয়া) নিজদিগকে পাপী করিয়া রাখিয়াছিল-তখন ফেরেশতাগণ তাহাদিগকে বলিবেন যে, তোমরা (ধর্মের কোন) কোন কর্মে ছিল? তাহারা (উত্তরে) বলিবে, আমরা যমীনে সম্পূর্ণ প্রভাবান্বিত ছিলাম; ফেরেশতাগণ বলিবেন, খোদার দুনিয়া কি প্রশস্ত ছিল না? তোমাদের উচিত ছিল স্বদেশ পরিত্যাগ করিয়া উহাতে চলিয়া যাওয়া; অতএব, তাহাদের ঠিকানা হইবে জাহান্নাম; আর উহা নিকৃষ্ট গন্তব্যস্থান।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
১) হুযূর (দঃ) একদা এক সেনাবাহিনীকে কোন এক কাফের দলের বিরুদ্ধে পাঠাইলেন। উক্ত দলে একজন মুসলমানও ছিল। সে পৃথক একস্থানে দাঁড়াইয়া রহিল এবং মুসলমানদিগকে দেখিয়া সালাম করিল। কিন্তু মুসলমানগন মনে করিলেন, সে প্রাণ রক্ষার জন্যই সালাম করিতেছে। অতএব, তাহাকে হত্যা করিয়া তাহার ধন-সম্পদ লুন্ঠন করিয়া লইলেন। তখন এই আয়াতটি নাযিল হয়। (মুঃ কোঃ)
২) অক্ষমদের প্রতি জিহাদের দায়িত্ব নাই। তদ্ব্যতীত গৃহে অবস্থান কারীদের চেয়ে মুজাহিদগণের মর্যাদা অনেক উচ্চেঃ। (মুঃ কোঃ)
৩) মক্কার কতিপয় মুসলমান স্বীয় ইসলাম গ্রহণের কথা গোপন রাখিয়া কাফেনদের সহিত বাস করিত এবং তাহাদের সংগে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধও করিত, নিহতও হইত। তাহাদের সম্বন্ধেই এই আয়াত নাযিল হয়। (মুঃ কোঃ)
إِلَّا الْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ لَا يَسْتَطِيعُونَ حِيلَةً وَلَا يَهْتَدُونَ سَبِيلًا
বাংলা অর্থ:
৯৮। কিন্তু যে-সমস্ত পুরুষ ও নারী এবং শিশু (হিজরত করিতে) এমন অক্ষম যে, তাহারা কোন উপায়ই অবলম্বন করিতে পারে না এবং পথ সম্বন্ধেও জ্ঞাত নহে।
فَأُولَـٰئِكَ عَسَى اللَّهُ أَن يَعْفُوَ عَنْهُمْ ۚ وَكَانَ اللَّهُ عَفُوًّا غَفُورًا
বাংলা অর্থ:
৯৯। সুতরাং, ইহাদের জন্য আশা করা যায় যে, আল্লাহ্ তা‘আলা তাহাদিগকে মাফ করিয়া দিবেন; এবং আল্লাহ্ অতিশয় মার্জনাকারী, অতীব ক্ষমাশীল।
وَمَن يُهَاجِرْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ يَجِدْ فِي الْأَرْضِ مُرَاغَمًا كَثِيرًا وَسَعَةً ۚ وَمَن يَخْرُجْ مِن بَيْتِهِ مُهَاجِرًا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ يُدْرِكْهُ الْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ أَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
বাংলা অর্থ:
১০০। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে হিজরত করিবে, ভূপৃষ্ঠে সে যাইবার বহু স্থান পাইবে এবং (ধর্ম প্রকাশেরও) বহু সুযোগ (পাইবে); আর যে ব্যক্তি স্বীয় গৃহ হইতে এই উদ্দেশ্যে বহির্গত হয় যে, আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলের দিকে হিজরত করিবে, অতঃপর তাহার মৃত্যু উপস্থিত হয় তথাপিও আল্লাহর নিকট তাহার সওয়াব সাব্যস্ত হইয়া গিয়াছে; আর আল্লাহ্ অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম করুনাময়।
وَإِذَا ضَرَبْتُمْ فِي الْأَرْضِ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَن تَقْصُرُوا مِنَ الصَّلَاةِ إِنْ خِفْتُمْ أَن يَفْتِنَكُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا ۚ إِنَّ الْكَافِرِينَ كَانُوا لَكُمْ عَدُوًّا مُّبِينًا
বাংলা অর্থ:
১০১। আর যখন তোমরা যমীনে সফর কর তখন তোমাদের ইহাতে কোন পাপ হইবে না যে, তোমরা (যোহর, আছর ও এশার ফরয) নামায (-এর রাকাত)-কে কম করিয়া দাও, যদি তোমাদের এই আশঙ্কা হয় যে, কাফেররা তোমাদিগকে বিব্রত করিবে; নিঃসন্দেহে কাফেররা তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
১) আয়াতটিতে এমন লোকদের সম্বন্ধে বলা হইয়াছে যাহারা কাফেরদের দেশে থাকিয়া গোপনে ঈমান আনিয়া ছিল এবং অত্যাচারের ভয়ে প্রকাশ করিতে পারিত না। তাহারা উপার্জনক্ষম ও সফর সম্বন্ধে অভিজ্ঞ হইলে, হিজরত না করিয়া সেই অবস্থায় মৃত্যু হইলে শাস্তিযোগ্য হইবে। নিঃসহায় পরাধীন হইলে আল্লাহ্ মাফ করিবেন।(মুঃ কোঃ)
২) অর্থাৎ, হিজরত করিলে জীবিকার অভাব হইবে বলিয়া ভয় করিও না। পথে মৃত্যুর ভয়ও করিও না, পথে মরিলেও হিজরতের পূর্ণ সওয়াব পাইবে। (মুঃ কোঃ)
৩) মাস্আলাঃ ৪৮ মাইল বা তদুর্ধ্ব দূরত্বের সফরে চারি রাকাতবিশিষ্ট ফরয নামায দুই রাকাত পড়া ওয়াজিব। ইহাকে কয়র বলে। গন্তব্য স্থানে পৌঁছায়া পনরদিন বা তদুর্ধ্ব কাল থাকার নিয়ত করিলে পূর্ন নামায পড়িতে হইবে। (বঃ কোঃ)
وَإِذَا كُنتَ فِيهِمْ فَأَقَمْتَ لَهُمُ الصَّلَاةَ فَلْتَقُمْ طَائِفَةٌ مِّنْهُم مَّعَكَ وَلْيَأْخُذُوا أَسْلِحَتَهُمْ فَإِذَا سَجَدُوا فَلْيَكُونُوا مِن وَرَائِكُمْ وَلْتَأْتِ طَائِفَةٌ أُخْرَىٰ لَمْ يُصَلُّوا فَلْيُصَلُّوا مَعَكَ وَلْيَأْخُذُوا حِذْرَهُمْ وَأَسْلِحَتَهُمْ ۗ وَدَّ الَّذِينَ كَفَرُوا لَوْ تَغْفُلُونَ عَنْ أَسْلِحَتِكُمْ وَأَمْتِعَتِكُمْ فَيَمِيلُونَ عَلَيْكُم مَّيْلَةً وَاحِدَةً ۚ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ إِن كَانَ بِكُمْ أَذًى مِّن مَّطَرٍ أَوْ كُنتُم مَّرْضَىٰ أَن تَضَعُوا أَسْلِحَتَكُمْ ۖ وَخُذُوا حِذْرَكُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ أَعَدَّ لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُّهِينًا
বাংলা অর্থ:
১০২। আর যখন আপনি তাহাদের সঙ্গে থাকেন এবং আপনি তাহাদিগকে (জামাআতে) নামায পড়াইতে চান তবে এইরূপ করিতে হইবে যে, তন্মধ্য হইতে একদল আপনার সঙ্গে (নামাযে) দাঁড়াইবে এবং তাহারা নিজেদের অস্ত্র-শস্ত্র সঙ্গে রাখিবে। অনন্তর যখন তাহারা সেজদা করিয়া (এক রাকাত পূর্ণ করিয়া) লয়, তখন তাহারা আপনাদের পিছনে যাইবে এবং অন্য দল যাহারা এখনও নামায পড়ে নাই তাহারা আসিবে এবং আপনার সঙ্গে নামায (-এর অবশিষ্ট এক রাকাত) পড়িয়া লইবে। এবং ইহারাও আত্মরক্ষার সরঞ্জাম এবং নিজ নিজ অস্ত্র-শস্ত্র সঙ্গে রাখিবে, (কেননা), কাফেররা ইহাই চায় যে, যদি আপনারা নিজ নিজ অস্ত্র-শস্ত্র এবং দ্রব্যসম্ভার হইতে (একটু) অসতর্ক হন তবে অমনি তাহারা আপনাদের উপর একযোগে আক্রমণ করিয়া বসিবে; আর যদি বৃষ্টির দরুন আপনাদের কষ্ট হয় অথবা আপনারা পীড়িত হন, তবে ইহাতে আপনাদের কোন পাপ না যে, আপনারা নিজেদের অস্ত্র-শস্ত্র খুলিয়া রাখেন, এবং (তবুও) নিজেদের আত্মরক্ষার উপকরণ (অবশ্যই) লইয়া লইবেন; নিশ্চয়, আল্লাহ্ তা‘আলা কাফেরদের জন্য লাঞ্ছনাময় শাস্তি প্রস্তুত করিয়া রাখিয়াছেন।
فَإِذَا قَضَيْتُمُ الصَّلَاةَ فَاذْكُرُوا اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَىٰ جُنُوبِكُمْ ۚ فَإِذَا اطْمَأْنَنتُمْ فَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ ۚ إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا
বাংলা অর্থ:
১০৩। অনন্তর যখন তোমরা এই নামায সম্পন্ন কর তখন তোমরা আল্লাহকে স্মরণ করিতে থাক দাঁড়াইয়াও এবং বসিয়াও এবং শায়িত অবস্থায়ও, তৎপর যখন তোমরা নিশ্চিন্ত হও, তখন নামায পড়িতে থাক যথানিয়মে, নিশ্চয় নামায মুসলমানদের উপর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফরয করা হইয়াছে।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
১) ভয়কালীন নামাযের ব্যবস্থা এই যে, শত্রু সৈন্যেও সম্মুখীন অবস্থায় নামাযের সময় হইলে নিজেদের সৈন্যদিকে দুই দলে বিভক্ত করিবে। প্রত্যেক দল ইমামের সহিত অর্ধেক নামায পড়িবে, অবশিষ্ট নামায পড়িবে, অবশিষ্ট নামায নিজে নিজে পড়িবে। এনরূপ অবস্থায় নামাযের মধ্যে আশা যাওয়ার নামাযের ক্ষতি হইবে না। নামাযে নিজের সঙ্গে তীর, বল্লব, তরবারি ইত্যাদি অস্ত্রশস্ত্র রাখাতেও নিষেধ নাই। জামাতে নামায পড়িবার অবকাশ না হইলে একাকী পড়িবে। পদাতিক অবস্থায় হউক, ইশারায় হউক, নামায আদায় করিবে। তাহাও সম্ভব না হইলে ক্বাযা করিবে।(মুঃ কোঃ)
২) আলোচ্য আয়াতে ইমামের সহিত প্রত্যেক দলেরই কেবল অর্ধেক নামায পড়ার বিবরণ রহিয়াছে; অবশিষ্ট নামায সম্বন্ধে বোখারী ও আবূ দাউদ শরীফে বর্ণিত আছে। (বঃ কোঃ)
وَلَا تَهِنُوا فِي ابْتِغَاءِ الْقَوْمِ ۖ إِن تَكُونُوا تَأْلَمُونَ فَإِنَّهُمْ يَأْلَمُونَ كَمَا تَأْلَمُونَ ۖ وَتَرْجُونَ مِنَ اللَّهِ مَا لَا يَرْجُونَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا
বাংলা অর্থ:
১০৪। আর ভগ্নোৎসাহ হইও না এই বিরোধী সম্প্রদায়ের পশ্চাদ্ধাবন করিতে; যদি তোমরা ব্যথিত হইয়া থাক, তবে তাহারাও তো ব্যথা পাইয়াছে যেমন তোমরা ব্যথা পাইয়াছ, এবং তোমরা আল্লাহ্ও হুযূরে এমন এমন বস্তুও (সওয়াবের) আশা রাখ যে, তাহারা (যাহারা) আশা রাখে না; আর আল্লাহ্ তা‘আলা মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।
إِنَّا أَنزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِتَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ بِمَا أَرَاكَ اللَّهُ ۚ وَلَا تَكُن لِّلْخَائِنِينَ خَصِيمًا
বাংলা অর্থ:
১০৫। নিশ্চয় আমি আপনার নিকট এই কিতাব প্রেরণ করিয়াছি (যদ্দ্বারা) বাস্তবানুরূপ (অবস্থা জানা যাইবে,) যেন আপনি মানুষের মধ্যে তদনুযায়ী মীমাংসা করেন যাহা আল্লাহ্ আপনাকে (ওহী দ্বারা) জানাইয়া দিয়াছেন; আর আপনি ঐ বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষপাতমূলক কথা বলিবেন না।
وَاسْتَغْفِرِ اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَّحِيمًا
বাংলা অর্থ:
১০৬। আর আপনি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করুন; নিশ্চয় আল্লাহ্ অতীব ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়।
وَلَا تُجَادِلْ عَنِ الَّذِينَ يَخْتَانُونَ أَنفُسَهُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ مَن كَانَ خَوَّانًا أَثِيمًا
বাংলা অর্থ:
১০৭। আর আপনি তাহাদের পক্ষ হইতে জরয় অবদিহির কোন কথা বলিবেন না যাহারা নিজেদেরই অনিষ্ট করিতেছে; নিশ্চয় আল্লাহ্ এনরূপ ব্যক্তিকে পছন্দ করেন না, যে অতি বড় বিশ্বাসঘাতক, মহাপাপী।
يَسْتَخْفُونَ مِنَ النَّاسِ وَلَا يَسْتَخْفُونَ مِنَ اللَّهِ وَهُوَ مَعَهُمْ إِذْ يُبَيِّتُونَ مَا لَا يَرْضَىٰ مِنَ الْقَوْلِ ۚ وَكَانَ اللَّهُ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطًا
বাংলা অর্থ:
১০৮। যাহাদের অবস্থা এইরূপ যে, মানুষ হইতে তো গোপন করে আর আল্লাহ্ তা‘আলাকে লজ্জা করে না অথচ আল্লাহ্ ঐ সময়ে (-ও) তাহাদের নিকটে থাকেন যখন তাহারা আল্লাহর সন্তুষ্টি-বিরুদ্ধে কথাবার্তা সম্বন্ধে অভিসন্ধি করিতে থাকে; এবং আল্লাহ্ তাহাদের কৃতকর্মসমূহকে স্বীয় বেষ্টনীতে রাখিয়াছেন।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
১) অর্থাৎ, ভয়কালীন নামাযে কোন ত্রুটি হইয়া থাকিলেও নামাযের পর সকল অবস্থায় আল্লাহর স্মরণ করিবে। সময়ের সহিত কেবল নামাযই সীমাবদ্ধ। যিকির প্রত্যেক অবস্থায়ই চলিতে পারে।
২) জৈনিক মুসলমান রাত্রিকালে আর এক মুসলমানের ঘরে ঢুকিয়া এক বস্তা আটা ও কিছু অস্ত্রশস্ত্র চুরি করিয়া, প্রথমে এক বাড়ীতে নিল, অতঃপর তথা হইতে আর এক ইহুদী বন্ধুর ঘরে নিয়া আমানত রাখিল। ঘটনা ক্রমে বস্তাটি ছিদ্রযুক্ত থাকায় পথে পথে আটা পড়িয়া চিহ্ন রাখিয়া গেল। মালিক প্রাতঃকালে চিহ্ন ধরিয়া চোরের বাড়ি উপস্থিত হইয়া মালের দাবী করিলে, সে কসম করিয়া অস্বীকার করিল।
মালিক পুনঃ চিহ্ন ধরিয়া ইহুদীর বাড়ী যাইয়া মালের দাবি করিল। ইহুদী বলিল, অমুক ব্যক্তি গতরাত্রে আমার বাড়ীতে এইগুলি আমানত রাখিয়া গিয়াছে। প্রতিবেশীরা ইহুদীর পক্ষে সাক্ষ্যও দিল। অবশেষে মোকদ্দমা হুযূরের দরবারে পেশ হইল। চোর ও তাহার সম্প্রদায়ের লোকেরা কসম করিয়া ইহুদীকে চোর প্রমানিত করিল। হুযূরও ধারণা করিলেন, মুসলমান মিথ্যা কসম করে না। সুতরাং তিনিও ইহুদীকে চোর সাব্যস্ত করিয়া তাহাকে রাগ করিতেছিলেন। এমন সময় আয়াতগুলী এই সম্বন্ধে নাযিল হয়। (বঃ কোঃ)
هَا أَنتُمْ هَـٰؤُلَاءِ جَادَلْتُمْ عَنْهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فَمَن يُجَادِلُ اللَّهَ عَنْهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَم مَّن يَكُونُ عَلَيْهِمْ وَكِيلًا
বাংলা অর্থ:
১০৯। হাঁ ! তোমরা এইরূপ যে, পার্থিব জীবনে তো তোমরা তাহাদের পক্ষ হইতে জওয়াবদিহির কথা বলিলে। কিন্তু কিয়ামত-দিবসে আল্লাহর সম্মুখে তাহাদের পক্ষ হইয়া কে জওয়াবদিহি করিবে। কিংবা সেই ব্যক্তি কে যে তাহাদের কার্যনির্বাহক হইবে।
وَمَن يَعْمَلْ سُوءًا أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَهُ ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللَّهَ يَجِدِ اللَّهَ غَفُورًا رَّحِيمًا
বাংলা অর্থ:
১১০। আর যে-ব্যক্তি কোন দুষ্কর্ম করে, অথবা নিজ আত্মার ক্ষতি সাধন করে অতঃপর আল্লাহর হুযূরে ক্ষমা প্রার্থনা করে তবে, সে আল্লাহ্কে অতীব ক্ষমাশীল, পরম করুণাময় পাইবে।
وَمَن يَكْسِبْ إِثْمًا فَإِنَّمَا يَكْسِبُهُ عَلَىٰ نَفْسِهِ ۚ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا
বাংলা অর্থ:
১১১। আর যে-ব্যক্তি কোন পাপ কার্য করে, সে শুধু স্বীয় আত্মার উপরই ইহার প্রতিক্রিয়া পৌঁছায়; আর আল্লাহ্ মহাজ্ঞানী, হেকমতওয়ালা।
وَمَن يَكْسِبْ خَطِيئَةً أَوْ إِثْمًا ثُمَّ يَرْمِ بِهِ بَرِيئًا فَقَدِ احْتَمَلَ بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُّبِينًا
বাংলা অর্থ:
১১২। আর যে-ব্যক্তি কোন ছোট পাপ কিংবা বড় পাপ করে, অতঃপর ইহার অপবাদ কোন নিরপরাধ ব্যক্তির প্রতি আরোপ করে, তবে সে নিজের উপর চাপাইয়া লইল জঘন্যতর অপবাদ এবং প্রকাশ্য পাপ।
وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكَ وَرَحْمَتُهُ لَهَمَّت طَّائِفَةٌ مِّنْهُمْ أَن يُضِلُّوكَ وَمَا يُضِلُّونَ إِلَّا أَنفُسَهُمْ ۖ وَمَا يَضُرُّونَكَ مِن شَيْءٍ ۚ وَأَنزَلَ اللَّهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُن تَعْلَمُ ۚ وَكَانَ فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكَ عَظِيمًا
বাংলা অর্থ:
১১৩। আর যদি আপনার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা না হইত, তবে উহাদের মধ্য হইতে একদল তো আপনাকে ভ্রান্তিতেই ফেলিবার ইচ্ছা করিয়াছিল; আর তাহারা বিভ্রান্ত করিতে পারিবে না-স্বীয় আত্মাকে ব্যতীত, এবং আপনার বিন্দুমাত্রও ক্ষতি করিতে পারিবে না আর আল্লাহ্ তা‘আলা আপনার প্রতি নাযিল করিয়াছেন কিতাব ও জ্ঞানের বিষয় এবং আপনাকে এমন সকল বিষয় শিক্ষা দিয়াছেন যাহা আপনি জানিতেন না; এবং আপনার প্রতি আল্লাহর অসীম অনুগ্রহ রহিয়াছে।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
১) অর্থাৎ, বান্দার হক্ব থাকিলে তাহা পরিশোধ করিয়া দেয়, অথবা তাহা হইতে দাবি মাফ লয়, তবেই আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট ক্ষমার যোগ্য হইবে। (বঃ কোঃ)
২) কিন্তু আল্লাহর অনুগ্রহে তাহাদের অতিরঞ্জিত কথায় আপনার উপর কোন প্রতিক্রিয়া হয় নাই এবং ভবিষ্যতেও হইবে না। (বঃ কোঃ)
৩) অর্থাৎ, নিজেকে পাপে নিমজ্জিত করিয়া শাস্তির যোগ্য করিতেছে। (বঃ কোঃ)
ا خَيْرَ فِي كَثِيرٍ مِّن نَّجْوَاهُمْ إِلَّا مَنْ أَمَرَ بِصَدَقَةٍ أَوْ مَعْرُوفٍ أَوْ إِصْلَاحٍ بَيْنَ النَّاسِ ۚ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ فَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا
বাংলা অর্থ:
১১৪। মানুষের অধিকাংশ গুপ্ত পরামর্শে কোন মঙ্গল নিহিত থাকে না, হাঁ, তবে যে-ব্যক্তি দান অথবা কোন নেক কাজ কিংবা জনগণের মধ্যে পরস্পর সন্ধি স্থাপনে উৎসাহিত করে; আর যে-ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এইরূপ কাজ করিবে, তাহলে আমি সত্বরই তাহাকে মহান পুরস্কার প্রদান করিব।
وَمَن يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَىٰ وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ ۖ وَسَاءَتْ مَصِيرًا
বাংলা অর্থ:
১১৫। আর যে-ব্যক্তি রাসূলের বিরোধিতা করিবে, তাহার নিকট সত্য বিষয় প্রকাশিত হওয়ার পর, এবং মুসলমানদের পথ পরিত্যাগ করিয়া অন্য পথ অবলম্বন করিবে, তাহলে আমি তাহাকে করিতে দিব সে যাহাকিছু করে, এবং তাহাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করিব; আর উহা হইতেছে নিকৃষ্ট গন্তব্য স্থান।
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ ۚ وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيدًا
বাংলা অর্থ:
১১৬। নিশ্চয় আল্লাহ্ ক্ষমা করিবেন না তাঁহার সহিত শরীক স্থির করাকে, এবং তদ্ব্যতীত অন্যান্য যাবতীয় পাপ যাহাকে ইচ্ছা ক্ষমা করিয়া দিবেন; আর যে-ব্যক্তি আল্লাহর সহিত শরীক স্থির করে, সে তো বহু দূরের পথভ্রষ্টতায় পতিত হইয়াছে।
إِن يَدْعُونَ مِن دُونِهِ إِلَّا إِنَاثًا وَإِن يَدْعُونَ إِلَّا شَيْطَانًا مَّرِيدًا
বাংলা অর্থ:
১১৭। ইহারা (অংশীবাদীরা) খোদাকে পরিত্যাগ করিয়া কেবল কয়েকটি নারী জাতীয় বস্তুর পূজা করে, আর কেবল শয়তানের পূজা করে, যে (আল্লাহর) নির্দেশ লঙ্ঘনকারী।
শানে নুযূল
১) মুনাফেকরা হুযূরের কানে কথা বলিত। যাহাতে লোকে মনে করে যে, এই ব্যক্তি হুযূরের দরবারে খুব মর্যাদাসম্পন্ন। এতদ্ভিন্ন মজলিসে বসিয়া নিজেরা পরস্পর কাহারও নিন্দা, কাহারও বিরুদ্ধে কূটনামী করিত। আল্লাহ্ বলেন, ইহাদের পরামর্শে কোন মঙ্গল নিহিত নাই। পরিস্কার কথা গোপনে বলার কি প্রয়োজন? তবে ছদ্কা খায়রাত গোপনে করিতে পারে, যাহাতে গ্রহনকারী লজ্জিত না হয়। (মুঃ কোঃ)
২) অর্থাৎ, শিরক ভিন্ন আর যত প্রকার পাপ আছে, কবীরাই হউক, আর ছসীরাই হউক। (মুঃ কোঃ)
৩) শিরক এবং কুফরকে বহু দূরের পথভ্রষ্টতা বলা হইয়াছে। কেননা, ইহা সঠিক ও সত্য বিষয় “তাওহীদ” হইতে বহু দূরে। (বঃ কোঃ)
لَّعَنَهُ اللَّهُ ۘ وَقَالَ لَأَتَّخِذَنَّ مِنْ عِبَادِكَ نَصِيبًا مَّفْرُوضًا
বাংলা অর্থ:
১১৮। যাহাকে আল্লাহ্ স্বীয় (বিশেষ) করুণা হইতে দূরে নিক্ষেপ করিয়াছেন। এবং যে এনরূপ বলিয়াছিল, আমি অবশ্যই তোমার বান্দাগণ হইতে স্বীয় নির্ধারিত অংশ লইব।
وَلَأُضِلَّنَّهُمْ وَلَأُمَنِّيَنَّهُمْ وَلَآمُرَنَّهُمْ فَلَيُبَتِّكُنَّ آذَانَ الْأَنْعَامِ وَلَآمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللَّهِ ۚ وَمَن يَتَّخِذِ الشَّيْطَانَ وَلِيًّا مِّن دُونِ اللَّهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُّبِينًا
বাংলা অর্থ:
১১৯। -(আনুগত্যের দ্বারা) আমি তাহাদিগকে পথভ্রষ্ট করিব এবং আমি তাহাদিগকে বৃথা আশ্বাস প্রদান করিব এবং আমি তাহাদিগকে শিক্ষা দিব যেন তাহারা (প্রতিমার নামে) চতুষ্পদ জন্তুর কান কর্তন করে, এবং আমি তাহাদিগকে (আরও) শিক্ষা দিব, যেন তাহারা আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতিকে বিকৃত করিয়া দেয়; আর যে-ব্যক্তি আল্লাহ্কে ত্যাগ করিয়া শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করিবে, সে নিশ্চয় প্রকাশ্য ক্ষতিতে নিপতিত হইবে।
يَعِدُهُمْ وَيُمَنِّيهِمْ ۖ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ إِلَّا غُرُورًا
বাংলা অর্থ:
১২০। শয়তান তাহাদের সহিত অঙ্গীকার করে ও বৃথা আশ্বাস দেয়; আর শয়তান ইহাদের সহিত শুধু মিথ্যা (প্রবঞ্চনামূলক) অঙ্গীকার করে।
أُولَـٰئِكَ مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ وَلَا يَجِدُونَ عَنْهَا مَحِيصًا
বাংলা অর্থ:
১২১। এইরূপ লোকের বাসস্থান হইবে জাহান্নাম, এবং ইহা হইতে বাঁচিবার স্থান কোথাও পাইবে না।
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَنُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ۖ وَعْدَ اللَّهِ حَقًّا ۚ وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللَّهِ قِيلًا
বাংলা অর্থ:
১২২। আর যাহারা ঈমান আনয়ন করিয়াছে এবং নেক কাজ করিয়াছে, আমি তাহাদিগকে সত্বরই এমন উদ্যান সমূহে দাখিল করিব যাহার তলদেশে নহরসমূহ বহিতে থাকিবে, তাহারা উহাতে অনন্তকাল অবস্থান করিবে; আল্লাহ্ তা‘আলা ইহার প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন এবং সত্য প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন; আর আল্লাহ্ তা‘আলার চেয়ে কাহার কথা সত্য হইবে।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
১) অর্থাৎ, তোমার বান্দারা স্বীয় ধন-সম্পত্তিতে আমার প্রাপ্য অংশ নির্দিষ্ট করিয়া রাখিবে। যেমন, কাফেরদের দস্তুর আছে যে, দেবদেবী ও প্রতিমার নামে ধন-সম্পদ ও কোন কোন গৃহপালিত পশু উৎসর্গ করিয়া থাকে। অথবা নির্দিষ্ট অংশ এই যে, হাজার হাজার মানুষকে প্রতারণা পূর্বক বেঈমান করিয়া নিজের সঙ্গে দোযখের দিকে লইয়া যাইবে। (মুঃ কোঃ)
২) আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করার অর্থ এই যে, (কাফেরদের মধ্যে প্রচলন ছিল) গরুর বাছুর ও বক্রীর বাচ্চা প্রতিমার নামে উৎসর্গ করিয়া উহাদের কান ফাঁড়িয়া দেওয়া, কিংবা ছিদ্র করিয়া কোন চিহ্ন ঝুলাইয়া দেওয়া, অথবা খোঁড়া করিয়া দেওয়া, অথবা শরীরে সূঁচ বিদ্ধ করিয়া নক্শা বা অংকিত করা, ছেলেপেলেদের মাথায় টিকি রাখা। (মুঃ কোঃ)
لَّيْسَ بِأَمَانِيِّكُمْ وَلَا أَمَانِيِّ أَهْلِ الْكِتَابِ ۗ مَن يَعْمَلْ سُوءًا يُجْزَ بِهِ وَلَا يَجِدْ لَهُ مِن دُونِ اللَّهِ وَلِيًّا وَلَا نَصِيرًا
বাংলা অর্থ:
১২৩। না তোমাদিগের আকাংখায় কাজ হইবে আর না আহলে কিতাবদিগের আকাংখায়; যে-ব্যক্তি কোন মন্দ কাজ করিবে তদ্বিনিময়ে তাহাকে শাস্তি ভোগ করিতে হইবে, এবং সে-ব্যক্তি আল্লাহ্কে ব্যতীত কোন বন্ধুও পাইবে না এবং কোন সাহায্যকারীও পাইবে না।
وَمَن يَعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ مِن ذَكَرٍ أَوْ أُنثَىٰ وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَـٰئِكَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُونَ نَقِيرًا
বাংলা অর্থ:
১২৪। আর যে ব্যক্তি কোন নেক কাজ করিবে-চাই সে পুরুষ হউক কিংবা নারী হউক,-যদি সে মু‘মেনও হয় তবে এইরূপ লোকগণ জান্নাতে প্রবেশ করিবে, এবং তাহাদের প্রতি বিন্দুমাত্রও অবিচার করা হইবে না।
وَمَنْ أَحْسَنُ دِينًا مِّمَّنْ أَسْلَمَ وَجْهَهُ لِلَّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ وَاتَّبَعَ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا ۗ وَاتَّخَذَ اللَّهُ إِبْرَاهِيمَ خَلِيلًا
বাংলা অর্থ:
১২৫। আর এইরূপ ব্যক্তি (-র ধর্ম) অপেক্ষা কাহার ধর্ম অধিক উত্তম হইবে? যে-ব্যক্তি স্বীয় চেহারা আল্লাহর দিকে ঝুঁকাইয়া দেয়, এবং সে নিষ্ঠাবানও হয়, এবং সে মিল্লাতে ইব্রাহীমীর অনুসরণও করে, যাহাতে বক্রতার লেশ নাই; এবং আল্লাহ্ তা‘আলা ইব্রাহীমকে স্বীয় খাঁটি বন্ধুরূপে গ্রহণ করিয়াছিলেন।
وَلِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۚ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ مُّحِيطًا
বাংলা অর্থ:
১২৬। আর আল্লাহরই আধিপত্যে রহিয়াছে যাহাকিছু আসমানসমূহে আছে ও যাহাকিছু যমীনে আছে; এবং আল্লাহ্ তা‘আলা সকল বস্তুকে পরিবেষ্টন করিয়া আছেন।
وَيَسْتَفْتُونَكَ فِي النِّسَاءِ ۖ قُلِ اللَّهُ يُفْتِيكُمْ فِيهِنَّ وَمَا يُتْلَىٰ عَلَيْكُمْ فِي الْكِتَابِ فِي يَتَامَى النِّسَاءِ اللَّاتِي لَا تُؤْتُونَهُنَّ مَا كُتِبَ لَهُنَّ وَتَرْغَبُونَ أَن تَنكِحُوهُنَّ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الْوِلْدَانِ وَأَن تَقُومُوا لِلْيَتَامَىٰ بِالْقِسْطِ ۚ وَمَا تَفْعَلُوا مِنْ خَيْرٍ فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ بِهِ عَلِيمًا
বাংলা অর্থ:
১২৭। আর মানুষ আপনার নিকট নারীদের (মীরাস ও মহর) সম্বন্ধে বিধান জিজ্ঞাসা করে: আপনি বলিয়া দিন, আল্লাহ্ তাহাদের সম্পর্কে তোমাদিগকে (ঐ পূর্ব) ব্যবস্থা দিতেছেন, এবং সেই আয়াতগুলিও যাহা কিতাবের মধ্যে তোমাদিগকে পাঠ করিয়া শুনানো হইয়া থাকে-যাহা ঐ এতীম নারীদের সম্বন্ধে (নাযিল হইয়াছে), যাহাদিগকে তোমরা তাহাদের নির্ধারিত স্বত্ব প্রদান কর না, এবং যাহাদিগকে বিবাহ করিতে ঘৃণা কর এবং (ঐ আয়াতগুলিও) দুর্বল শিশুদের সম্বন্ধে,-এবং এই সম্বন্ধে যে, এতীমের (যাবতীয়) কার্য ন্যায়ের সহিত সম্পাদন কর; আর তোমরা যে নেক কাজ কর, নিশ্চয় আল্লাহ্ উহা খুব জানেন।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
১) ইহুদী, নাছার ও কিছু সংখ্যক মুসলমানেরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করিত যে, আমরই বেহেশ্তে প্রবেশের অধিকার পাইবে। এই সম্বন্ধে এই আয়াতটি নাযিল হয়। আল্লাহ্ বলেন, তোমাদের বৃথা আকাঙ্খায় কাজ হইবে না। বেহেশ্তে প্রবেশ বা আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠতম মর্যাদা লাভের মূল ভিত্তি হইল, তাঁহার আনুগত্য করা। (মুঃ কোঃ)
২) কোন কোন ব্যক্তির প্রতিপালক কুৎসিত ধনবতী এতীম বালিকা থাকিত। কিন্তু কুৎসিত হওয়ার দরুন নিজেও তাহাকে বিবাহ করিতে চাহিত না এবং অন্যের সহিতও এই জন্য বিবাহ দিত না যে, সম্পত্তি অপরের নিকট চলিয়া যাইবে। এই সম্বন্ধে হুযূরের নিকট জিজ্ঞাসা করা হইলে এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (লোঃ নুঃ)
إِنِ امْرَأَةٌ خَافَتْ مِن بَعْلِهَا نُشُوزًا أَوْ إِعْرَاضًا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يُصْلِحَا بَيْنَهُمَا صُلْحًا ۚ وَالصُّلْحُ خَيْرٌ ۗ وَأُحْضِرَتِ الْأَنفُسُ الشُّحَّ ۚ وَإِن تُحْسِنُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا
বাংলা অর্থ:
১২৮। আর যদি কোন নারী নিজ স্বামী হইতে দুর্ব্যবহার কিংবা উপেক্ষার আশংকা করে, তবে (এই অবস্থায়) তাহাদের কোন পাপ নাই যে, উভয়ে পরস্পর এক বিশেষ পদ্ধতিতে মীমাংসা করিয়া লয় এবং (বিবাহ বিচ্ছেদের চেয়ে) এই মীমাংসাই অধিক কল্যাণকর; আর লালসার সহিত আত্মার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক (ও মিল স্বাভাবিক); আর যদি তোমরা সদ্ব্যবহার কর ও (দুর্ব্যবহার হইতে) সংযমী হও, তবে (তোমরা মহা পুরস্কার প্রাপ্ত হইবে। কেননা,) নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের আমলের পূর্ণ খবর রাখেন।
وَلَن تَسْتَطِيعُوا أَن تَعْدِلُوا بَيْنَ النِّسَاءِ وَلَوْ حَرَصْتُمْ ۖ فَلَا تَمِيلُوا كُلَّ الْمَيْلِ فَتَذَرُوهَا كَالْمُعَلَّقَةِ ۚ وَإِن تُصْلِحُوا وَتَتَّقُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ غَفُورًا رَّحِيمًا
বাংলা অর্থ:
১২৯। আর তোমাদের দ্বারা ইহা কখনও সম্ভব হইবে না যে, তোমরা পত্নীদের মধ্যে (সর্বদিকে দিয়া) সমতা রক্ষা করিবে যদিও তোমরা (সমতা রক্ষার জন্য) কতই না আকাঙ্খা কর, তবে তোমরা (ক্ষমতাধীন বিষয়ে) সম্পূর্ণরূপে এক দিকে ঝুঁকিয়া পড়িও না, যদ্দূরুন তাহাকে (অত্যাচারিত পত্নীকে) এইরূপ করিয়া দাও যেমন কেহ শূন্যে ঝুলিতেছে; আর যদি সংশোধন করিয়া লও এবং (এইরূপ আচরণ হইতে আত্ম-সংবরণ কর, তবে (ক্ষমা প্রাপ্ত হইবে,) নিশ্চয় আল্লাহ্ অতিশয় ক্ষমা, পরম দয়ালু।
وَإِن يَتَفَرَّقَا يُغْنِ اللَّهُ كُلًّا مِّن سَعَتِهِ ۚ وَكَانَ اللَّهُ وَاسِعًا حَكِيمًا
বাংলা অর্থ:
১৩০। আর যদি স্বামী-স্ত্রী পরস্পর বিছিন্ন হইয়া যায়, তবে আল্লাহ্ স্বীয় প্রাচুর্য হইতে প্রত্যেককে মুখাপেক্ষীহীন করিয়া দিবেন আর আল্লাহ্ সুপ্রশস্ত, প্রজ্ঞাময়।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
১) অর্থাৎ, যদি কোন স্ত্রীলোক স্বীয় স্বামীকে তাহার প্রতি বিমুখ দেখিতে পায়, তবে তাহাকে সন্তুষ্ট করার জন্য নিজের হক্ব হইতে কিছু ছাড়িয়া দিয়া, সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করিতে পারে। মানুষ স্বভাবতঃ লোভী, ধন-সম্পদ পাইলে সন্তুষ্ট হইয়া থাকে। (মুঃ কোঃ)
২) আর “কেহ শূন্যে ঝুলিতেছে” কথার অর্থ এই যে, যেই স্ত্রীর প্রতি মনের আকর্ষণ কম, তাহাকে তাহার দাবিও যথোচিতরূপে মিটাইয়া দেওয়া হয় না, পরিত্যাগও করা হয় না, যে অন্যত্র বিবাহ করিয়া সুখে জীবন যাপন করিতে পারে। (মুঃ কোঃ)
৩) অর্থাৎ, খোলা বা তালাক্ব দ্বারা পরস্পর বিছিন্ন হইয়া যায়, তবে যাহারই ত্রুটি হউক, সে যেন মনে না করে যে, আমাকে ব্যতীত তাহার কাজ অঢ়ল থাকিত। (বঃ কোঃ)
৪) অর্থাৎ, প্রত্যেকের নির্ধারিত কাজ অন্যের সাহায্য ব্যতিরেকে চলিয়া যাইবে। (বঃ কোঃ)
وَلِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ وَلَقَدْ وَصَّيْنَا الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْلِكُمْ وَإِيَّاكُمْ أَنِ اتَّقُوا اللَّهَ ۚ وَإِن تَكْفُرُوا فَإِنَّ لِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۚ وَكَانَ اللَّهُ غَنِيًّا حَمِيدًا
বাংলা অর্থ:
১৩১। আর আল্লাহ্ তা‘আলারই স্বত্বে রহিয়াছে যাহাকিছু আসমানসমূহে আছে ও যাহাকিছু যমীনে আছে; এবং বাস্তবিকই আমি তাহাদিগকেও আদেশ করিয়াছিলাম যাহারা তোমাদিগের পূর্বে কিতাব পাইয়াছিল, এবং তোমাদিগকেও (আদেশ দিয়াছি) যে, তোমরা আল্লাহ্কে ভয় কর; আর যদি তোমরা শোকরগুযারী না কর, তবে (আল্লাহ্ কোন অনিষ্ট হইবে না; কেননা,) আল্লাহরই স্বত্বে রহিয়াছে যাহাকিছু আসমানসমূহে আছে এবং যাহাকিছু যমীনে আছে; আর আল্লাহ্ কাহারও মুখাপেক্ষী নহেন, স্বয়ং নিজ সত্তায় প্রশংসিত।
وَلِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۚ وَكَفَىٰ بِاللَّهِ وَكِيلًا
বাংলা অর্থ:
১৩২। আর আল্লাহরই স্বতে রহিয়াছে যাহাকিছু আসমানসমূহে আছে এবং যাহাকিছু যমীনে আছে; আল্লাহ্ই কার্য সম্পাদনে যথেষ্ট।
إِن يَشَأْ يُذْهِبْكُمْ أَيُّهَا النَّاسُ وَيَأْتِ بِآخَرِينَ ۚ وَكَانَ اللَّهُ عَلَىٰ ذَٰلِكَ قَدِيرًا
বাংলা অর্থ:
১৩৩। হে মানব ! তিনি ইচ্ছা করিলে তোমাদিগকে লোপ করিয়া দিবেন, এবং অন্যদিকে অস্তিত্ব দান করিবেন; আর আল্লাহ্ তা‘আলা ইহার পূর্ণ ক্ষমতা রাখেন।
مَّن كَانَ يُرِيدُ ثَوَابَ الدُّنْيَا فَعِندَ اللَّهِ ثَوَابُ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ۚ وَكَانَ اللَّهُ سَمِيعًا بَصِيرًا
বাংলা অর্থ:
১৩৪। যে-ব্যক্তি (দ্বীনের কাজে) পার্থিব বিনিময় কামনা করে, তবে (সে বড়ই ভুল করিবে, কেননা) আল্লাহর নিকট তো ইহকাল এবং পরলোক উভয়েরই বিনিময় রহিয়াছে; এবং আল্লাহ্ অতিশয় শ্রবণকারী, অতীব দর্শনকারী।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ بِالْقِسْطِ شُهَدَاءَ لِلَّهِ وَلَوْ عَلَىٰ أَنفُسِكُمْ أَوِ الْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ ۚ إِن يَكُنْ غَنِيًّا أَوْ فَقِيرًا فَاللَّهُ أَوْلَىٰ بِهِمَا ۖ فَلَا تَتَّبِعُوا الْهَوَىٰ أَن تَعْدِلُوا ۚ وَإِن تَلْوُوا أَوْ تُعْرِضُوا فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا
বাংলা অর্থ:
১৩৫। হে ঈমানদারগণ ! (আদান-প্রদানে ও মীমাংসায়) ন্যায়ের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত (এবং স্বীয়রোক্তি বা সাক্ষ্যকালে) আল্লাহর উদ্দেশ্যে (সত্য) সাক্ষ্য প্রদানকারী থাক, যদিও তোমাদের নিজেদের অথবা পিতামাতা ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধে হয়, সেই ব্যক্তি (যাহারা বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদান করা হইবে) চাই ধনী হউক কিংবা গরীব হউক উভয়ের সহিতই আল্লাহর সমধিক সম্বন্ধ রহিয়াছে। সুতরাং তোমরা (এই সাক্ষ্য প্রদানে) প্রবৃত্তির অনুসরণ করিও না, এই জন্য যে, ন্যায়-বিচ্যুত হইয়া পড়িবে, আর যদি তোমরা বর্ণনায় বত্রুতায় অবলম্বন কর কিংবা (সাক্ষ্য প্রদানে) পশ্চাৎপদ হও, তবে (স্মরণ রাখিও) নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের সমস্ত কর্মের পূর্ণ খবর রাখেন।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
১) ইহাই তাক্বওয়া আল্লাহর যাবতীয় আদেশ ও নিষেধ ইহার অন্তভূক্ত। এই কারণেই এই সূরাটিকে তাক্বওয়া দ্বারা আরম্ভ করিয়া উহার ব্যাখ্যায় বিভিন্ন নির্দেশ বর্ণনা করিয়াছেন।(বঃ কোঃ)
২) তিনি যখন এইরূপ সার্বভৌ ক্ষমতাবান, তাঁহাকেও ভয় করিবে না। তিনি ধর্ম বিষয়ে যেই নির্দেশ দিতেছেন, তাহা তোমাদেরই মঙ্গলের জন্য। অন্য জাতি সৃষ্টি করিয়া তাহাদের দ্বারা কাজ লইতে পারেন। (বঃ কোঃ)
৩) যখন উৎকৃষ্ট ও নিকৃষ্ট উভয়েই তাহার ক্ষমতা রহিয়াছে, তখন উৎকৃষ্টকেই কেন চাও না? (বঃ কোঃ)
৪) অর্থাৎ, সকলের প্রার্থনাই শ্রবণ করেন। ইহলৌকিকই হউক বা পারলৌকিকই হউক। এবং সকলের নিয়তই জানেন। সুতরাং পরলোকের প্রার্থীকে পুরস্কার দিবেন এবং ইহলোকের প্রার্থীকে পরলোকে বঞ্চিত রাখিবেন। (বঃ কোঃ)
৫) অর্থাৎ, সাক্ষ্য প্রদান কালে ধনবান লোকেদের খাতির করিও না এবং দরিদ্রদের প্রতি দয়া পরবশ হইও না, আত্মীয়-স্বজনের পক্ষ-পাতিত্ব করিও না। যাহা সত্য তাহাই প্রকাশ করিয়া দাও। অস্পষ্ট কথায় বলিও না, যাহাতে শ্রবণকারী সন্দেহে পতিত হয়।(মুঃ কোঃ)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا آمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي نَزَّلَ عَلَىٰ رَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي أَنزَلَ مِن قَبْلُ ۚ وَمَن يَكْفُرْ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيدًا
বাংলা অর্থ:
১৩৬। হে ঈমানদারগণ ! বিশ্বাস স্থাপন কর আল্লাহর প্রতি এবং তাঁহার রাসূলের প্রতি এবং সেই কিতাবের প্রতি যাহা তিনি স্বীয় রাসূলের প্রতি নাযিল করিয়াছেন এবং ঐ কিতাবসমূহের প্রতি যাহা ব্যতীতে (অন্যান্য নবীদের প্রতি) নাযিল হইয়াছে; আর যে-ব্যক্তি অস্বীকার করে আল্লাহ্ তা‘আলাকে এবং তাঁহার ফেরেশতাগণকে এবং তাঁহার কিতাবসমূহকে এবং তাঁহার রাসূলগণকে এবং কিয়ামত-দিবসকে, তবে তো সে ভ্রষ্টতায় বহু দূরে সরিয়া পড়িয়াছে।
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا ثُمَّ كَفَرُوا ثُمَّ آمَنُوا ثُمَّ كَفَرُوا ثُمَّ ازْدَادُوا كُفْرًا لَّمْ يَكُنِ اللَّهُ لِيَغْفِرَ لَهُمْ وَلَا لِيَهْدِيَهُمْ سَبِيلًا
বাংলা অর্থ:
১৩৭। নিশ্চয় যাহারা মুসলমান হইয়াছে, অতঃপর কাফের হইয়া গিয়াছে, তৎপর মুসলমান হইয়াছে, পুঃ কাফের হইয়া গিয়াছে, অতঃপর (মৃত্যু পর্যন্ত) কুফরীতে অগ্রসর হইয়া চলিয়াছে-আল্লাহ্ এনরূপ লোকদিগকে কখনও ক্ষমা করিবেন না এবং পথও প্রদর্শন করিবেন না।
بَشِّرِ الْمُنَافِقِينَ بِأَنَّ لَهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا
বাংলা অর্থ:
১৩৮। মুনাফেকদিগকে সুসংবাদ শুনাইয়া দিন যে, তাহাদের জন্য ভীষন যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি রহিয়াছে।
الَّذِينَ يَتَّخِذُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِن دُونِ الْمُؤْمِنِينَ ۚ أَيَبْتَغُونَ عِندَهُمُ الْعِزَّةَ فَإِنَّ الْعِزَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا
বাংলা অর্থ:
১৩৯। যাহাদের অবস্থা এই যে, মুসলমানদিগকে ত্যাগ করিয়া কাফেরদিগকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে; ইহারা কি তাহাদের নিকট সম্মানিত হইয়া থাকিতে চায়? বস্তুতঃ সমস্ত সম্মান আল্লাহরই অধিকারে রহিয়াছে।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
১) এইখানে ঐসমস্ত লোককে সম্বোধন করা হইয়াছে যাহারা বাহ্যিক ঈমান প্রকাশ করিতেছে, অথচ অন্তরে ঈমান নাই।(মুঃ কোঃ)
২) যে একবার “মুরতাদ্” হয় তাহারও বিধান এই যে, কাফের অবস্থায় মরিলে মাগ্ফেরাত ও বেহেশ্ত হইতে বঞ্চিত থাকিবে। এইখানে দ্বিতীয়বার মুরতাদ্ হওয়ার বর্ণনা শর্ত হিসাবে নহে; বরং কেহ এই আয়াতটি নাযিল হওয়ার সময় এইরূপ করিয়াছিল, তাই এই ধারায় বর্ণিত হইয়াছে।(বঃ কোঃ)
وَقَدْ نَزَّلَ عَلَيْكُمْ فِي الْكِتَابِ أَنْ إِذَا سَمِعْتُمْ آيَاتِ اللَّهِ يُكْفَرُ بِهَا وَيُسْتَهْزَأُ بِهَا فَلَا تَقْعُدُوا مَعَهُمْ حَتَّىٰ يَخُوضُوا فِي حَدِيثٍ غَيْرِهِ ۚ إِنَّكُمْ إِذًا مِّثْلُهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ جَامِعُ الْمُنَافِقِينَ وَالْكَافِرِينَ فِي جَهَنَّمَ جَمِيعًا
বাংলা অর্থ:
১৪০। আর আল্লাহ্ তোমাদের নিকট এই নির্দেশ পাঠাইয়াছেন যে, যখন (কোন মজলিসে) শুনিতে পার যে, আল্লাহর বিধানসমূহের প্রতি উপহাস ও কুফর করা হইতেছে, তখন তাহাদের নিকট বসিও না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাহারা অন্য কোন আলোচনা আরম্ভ করে, অন্যথায় তোমরাও তাহাদের মত হইয়া যাইবে; নিশ্চয় আল্লাহ্ মুনাফেক ও কাফের সকলকেই দোযখের মধ্যে একত্রিত করিবেন।
الَّذِينَ يَتَرَبَّصُونَ بِكُمْ فَإِن كَانَ لَكُمْ فَتْحٌ مِّنَ اللَّهِ قَالُوا أَلَمْ نَكُن مَّعَكُمْ وَإِن كَانَ لِلْكَافِرِينَ نَصِيبٌ قَالُوا أَلَمْ نَسْتَحْوِذْ عَلَيْكُمْ وَنَمْنَعْكُم مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ ۚ فَاللَّهُ يَحْكُمُ بَيْنَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۗ وَلَن يَجْعَلَ اللَّهُ لِلْكَافِرِينَ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ سَبِيلًا
বাংলা অর্থ:
১৪১। তাহারা (মুনাফেকরা) এইরূপ যে, তোমাদের প্রতি বিপদ আসার প্রতীক্ষায় থাকে, অনন্তর যদি আল্লাহর তরফ হইতে তোমাদের বিজয় হইয়া যায়, তখন তাহারা বলে, আমরা কি তোমাদের সঙ্গে ছিলাম না ! (আমরা কি গনীমতের মাল পাইব না?) আর যদি কাফেররা (বিজয়ের) কোন অংশ পায়, তবে বলে, আমরা কি তোমাদের উপর বিজয়ী হইতেছিলাম না? এবং আমরা কি (সুযোগ দিয়া) তোমাদিগকে মুসলমানগণ হইতে রক্ষা করি নাই? (কাজেই আমাদিগকেও অংশ দাও;) সুতরাং আল্লাহ্ ইহাদের ও তোমাদের মধ্যে কিয়ামতের দিন (কার্যকরী) মীমাংসা করিয়া দিবেন; আর (ঐ মীমাংসায়) আল্লাহ্ তা‘আলা কখনও কাফেরদিগকে মুসলমানদের মোকাবেলায় জয়ী করিবে না।
إِنَّ الْمُنَافِقِينَ يُخَادِعُونَ اللَّهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ وَإِذَا قَامُوا إِلَى الصَّلَاةِ قَامُوا كُسَالَىٰ يُرَاءُونَ النَّاسَ وَلَا يَذْكُرُونَ اللَّهَ إِلَّا قَلِيلًا
বাংলা অর্থ:
১৪২। নিশ্চয় মুনাফেকরা প্রতারণা করে আল্লাহর সহিত অথচ আল্লাহ্ এই প্রতারণা প্রতিফল তাহাদিগকে প্রদান করিবেন, আর যখন তাহারা নামাযে দাঁড়ায়, তখন নিতান্ত অলসতার সহিত দাঁড়ায়, শুধু লোকদিগকে দেখায় এবং আল্লাহর যিকর (মুখে)-ও করে না কিন্তু খুবই কম।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
১) সুতরাং ইহাদিগকে অথবা যাহাদের সঙ্গে ইহারা বন্ধুত্ব করে, তাহাদিগকে আল্লাহ্ যদি সম্মান না দেন, তবে ইহারা কোথা হইতে সম্মান পাইবে? আর অচিরেই মুসলমানদের হাতে ইহারা সকলে লাঞ্চিত ও অপমানিত হইবে। (বঃ কোঃ)
২) এই সমস্ত লোকের সঙ্গে (ক) কুফরীকর্মের প্রতি সন্তুষ্টির সহিত উঠাবসা করা কুফর মূলক কাজ। (খ) কুফরী কথাবার্তা এবং ইসলাম বিরূপ সমালোচনার সময় কিছু না বলিয়া ঘৃণার সহিত তথায় বসিয়া থাকা ফাসেকী। (গ) কোন পার্থিক উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য বসিলে জায়েয হইবে। (ঘ) হেদায়েতের উদ্দেশ্যে বসিলে এবাদতে গণ্য হইবে। (ঙ) অপরাগ হইয়া অনিচ্ছায় বসিলে ওযর গ্রহণীয় হইবে। (বঃ কোঃ)
مُّذَبْذَبِينَ بَيْنَ ذَٰلِكَ لَا إِلَىٰ هَـٰؤُلَاءِ وَلَا إِلَىٰ هَـٰؤُلَاءِ ۚ وَمَن يُضْلِلِ اللَّهُ فَلَن تَجِدَ لَهُ سَبِيلًا
বাংলা অর্থ:
১৪৩। লটকানো অবস্থায় আছে (মু‘মেন ও কাফের) উভয়ের মধ্যস্থলে, না এদিকে না ওদিকে; আর আল্লাহ্ যাহাকে ভ্রান্তিতে নিক্ষেপ করেন, এইরূপ লোকের জন্য কোন পথ পাইবে না।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِن دُونِ الْمُؤْمِنِينَ ۚ أَتُرِيدُونَ أَن تَجْعَلُوا لِلَّهِ عَلَيْكُمْ سُلْطَانًا مُّبِينًا
বাংলা অর্থ:
১৪৪। তোমরা মু‘মেনদিগকে ত্যাগ করিয়া (মনাফেক কিংবা প্রকাশ্য) কাফেরদিগকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করিও না; তোমরা কি (তাহাদের সহিত বন্ধুত্ব স্থাপন করিয়া) এইরূপ চাও যে, নিজেদের (দোষী হওয়ার) উপর আল্লাহর স্পষ্ট প্রমান প্রতিষ্ঠা করিয়া লও।
إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ وَلَن تَجِدَ لَهُمْ نَصِيرًا
বাংলা অর্থ:
১৪৫। নিশ্চয় মুনাফেকরা দোযখের সর্বনিম্নস্তরে থাকিবে, এবং তুমি কখনও ইহাদের কোন সাহায্যকারী পাইবে না।
إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا وَأَصْلَحُوا وَاعْتَصَمُوا بِاللَّهِ وَأَخْلَصُوا دِينَهُمْ لِلَّهِ فَأُولَـٰئِكَ مَعَ الْمُؤْمِنِينَ ۖ وَسَوْفَ يُؤْتِ اللَّهُ الْمُؤْمِنِينَ أَجْرًا عَظِيمًا
বাংলা অর্থ:
১৪৬। কিন্তু যাহারা তওবা করিয়া লয় এবং সংশোধন করিয়া লয় এবং আল্লাহর প্রতি নির্ভয় করে এবং স্বীয় দ্বীন (-এর আমল)-কে খালেছ আল্লাহরই সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করে, তবে এসমস্ত লোক মু‘মেনদের সঙ্গে থাকিবে; আর আল্লাহ্ মু‘মেনদিগকে মহান পুরস্কার প্রদান করিবেন।
مَّا يَفْعَلُ اللَّهُ بِعَذَابِكُمْ إِن شَكَرْتُمْ وَآمَنتُمْ ۚ وَكَانَ اللَّهُ شَاكِرًا عَلِيمًا
বাংলা অর্থ:
১৪৭। আল্লাহ্ তোমাদিগকে শাস্তি প্রদান করিয়া কি করিবেন? (কেননা, তোমাদিগকে শাস্তি প্রদানের উপর আল্লাহর কোন কাজ আটকিয়া রহে নাই,) যদি তোমরা শোকরগুযারী কর এবং ঈমান আন,-আর আল্লাহ্ অত্যন্ত গুনগ্রাহী, মহাজ্ঞানী।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
১) এইখানে সেই অবসাদের কথা বলা হইয়াছে, তাহা বিশ্বাসের অভাবজনিত অবসাদ। অর্থাৎ, নামাযকে ফরযও মনে করে না, ইহাতে সওয়াব আছে বলিয়াও বিশ্বাস রাখে না। আর পাকা বিশ্বাস থাকা সত্বেও নামাযে যে অবসাদ ও অলসতা আসে, তাহা ইহার বহির্ভূত। (বঃ কোঃ)
২) অর্থাৎ, শুধু নামাযীর বাহ্যিকরূপ গ্রহণ করিয়া থাকে, যাহাতে নামাযী বলিয়া প্রকাশ পায়। আশ্চর্য নহে যে, শুধু উঠা বসাই করিত। (বঃ কোঃ)
৩) শুধু তোমাদের কুফরই তোমাদের শাস্তির কারণ যেহেতু, কুফর আল্লাহর নিয়ামতের কঠোর অকৃতজ্ঞতা। যদি এই কুফর পরিত্যাগ কর, দেখিবে শুধু করুণাই করুণা। (বঃ কোঃ)
لَّا يُحِبُّ اللَّهُ الْجَهْرَ بِالسُّوءِ مِنَ الْقَوْلِ إِلَّا مَن ظُلِمَ ۚ وَكَانَ اللَّهُ سَمِيعًا عَلِيمًا
বাংলা অর্থ:
১৪৮। আল্লাহ্ তা‘আলা মন্দ কথা মুখে আনা পছন্দ করেন না (কাহারো জন্য) মযলূম ব্যতীত; আর আল্লাহ্ (মযলূমের কথা) খুব শুনেন, (যালেমের অবস্থা) খুব জানেন।
إِن تُبْدُوا خَيْرًا أَوْ تُخْفُوهُ أَوْ تَعْفُوا عَن سُوءٍ فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ عَفُوًّا قَدِيرًا
বাংলা অর্থ:
১৪৯। যদি কোন নেক কাজ প্রকাশ্যে কর কিংবা উহা গোপনে কর অথবা কোন (ব্যক্তির) মন্দ ব্যবহার ক্ষমা করিয়া দাও, তবে (অতি উত্তম। কেননা,) আল্লাহ্ তা‘আলা (-ও) অতীব ক্ষমাশীল, পূর্ণ ক্ষমতাবান।
إِنَّ الَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيُرِيدُونَ أَن يُفَرِّقُوا بَيْنَ اللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيَقُولُونَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَنَكْفُرُ بِبَعْضٍ وَيُرِيدُونَ أَن يَتَّخِذُوا بَيْنَ ذَٰلِكَ سَبِيلًا
বাংলা অর্থ:
১৫০। যাহারা আল্লাহর সহিত এবং তাঁহার রাসূলগণের সহিত কুফর করে এবং এইরূপ ইচ্ছা রাখে যে, আল্লাহ্ ও তাঁহার রাসূলগণের মধ্যে (ঈমান আনয়নের ব্যাপারে) পার্থক্য করে এবং বলে, আমরা (পয়গম্বরদের) কতিপয়ের উপর ঈমান রাখি এবং কতিপয়কে অবিশ্বাস করি, আর এইরূপ ইচ্ছা রাখে যে, ইহার মাঝামাঝি একটি পথ উদ্ভাবন করে।
أُولَـٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ حَقًّا ۚ وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُّهِينًا
বাংলা অর্থ:
১৫১। এইরূপ লোকেরা সুনিশ্চিত কাফের, আর কাফেরদের জন্য আমি অপমানজনক শাস্তি প্রস্তুত করিয়া রাখিয়াছি।
وَالَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ وَلَمْ يُفَرِّقُوا بَيْنَ أَحَدٍ مِّنْهُمْ أُولَـٰئِكَ سَوْفَ يُؤْتِيهِمْ أُجُورَهُمْ ۗ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا
বাংলা অর্থ:
১৫২। আর যাহারা আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে এবং তাঁহার রাসূলগণের প্রতিও, আর তাঁহাদের কাহারও মধ্যে (ঈমান আনয়নে) পার্থক্য করে না, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা তাহাদিগকে তাহাদের কর্মের বিনিময় প্রদান করিবেন; আর আল্লাহ্ অতীব ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
১) অর্থাৎ, কাহারও মধ্যে পার্থিক কিংবা ধর্মীয় কোন প্রকার ত্রুটি দেখিলে তাহা প্রকাশ করা উচিত নহে। কেননা, আল্লাহ্ই সবকিছু অবগত আছেন। তিনি প্রত্যেককে যথোচিত শাস্তি প্রদান করিবে। (মুঃ কোঃ)
২) এই আয়াতে নির্যাতিত ব্যক্তিকে ধৈর্যধারণ এবং ক্ষমার প্রতি উৎসাহিত করা হইয়াছে। (মুঃ কোঃ)
৩) অর্থাৎ, মুসলমানদের ন্যায় সকল নবীর উপর ঈমানও রাখে না এবং কাফেরদের ন্যায় সকল নবীকে অবিশ্বাসও করে না। কাজেই ইহারা ঈমান ও কুফরের মাঝামাঝি এক নূতন ধর্ম আবিষ্কার করিয়াছে। বস্তুতঃ শরীঅতে মুহাম্মাদীর পূর্ণ অনুসরণ ব্যতীত আল্লাহর পথ পাওয়া কোনক্রমেই সম্ভব নহে। (মুঃ কোঃ)
يَسْأَلُكَ أَهْلُ الْكِتَابِ أَن تُنَزِّلَ عَلَيْهِمْ كِتَابًا مِّنَ السَّمَاءِ ۚ فَقَدْ سَأَلُوا مُوسَىٰ أَكْبَرَ مِن ذَٰلِكَ فَقَالُوا أَرِنَا اللَّهَ جَهْرَةً فَأَخَذَتْهُمُ الصَّاعِقَةُ بِظُلْمِهِمْ ۚ ثُمَّ اتَّخَذُوا الْعِجْلَ مِن بَعْدِ مَا جَاءَتْهُمُ الْبَيِّنَاتُ فَعَفَوْنَا عَن ذَٰلِكَ ۚ وَآتَيْنَا مُوسَىٰ سُلْطَانًا مُّبِينًا
বাংলা অর্থ:
১৫৩। (হে মোহাম্মদ [দঃ] !) আপনার নিকট আহলে কিতাবরা এই আবেদন করে যে, আপনি তাহাদের নিকট এক বিশেষ লিপিকা আসমান হইতে আনাইয়া দেন, বস্তুতঃ ইহারা মূসার নিকট ইহার চেয়েও বড় বিষয়ের আবেদন করিয়াছিল এবং তাহারা এইরূপ বলিয়াছিল যে, আল্লাহ্ তা‘আলাকে প্রকাশ্যভাবে আমাদিগকে দেখাইয়া দাও, ফলে তাহাদের এই ধৃষ্টতার দরুন তাহাদের উপর বজ্র নিপতিত হইল, অতঃপর তাহারা গো-বৎসকে (উপাসনার জন্য) মনোনীত করিয়াছিল তাহাদের নিকট বহু প্রমানদি আসার পর, ইতঃপর আমি উহা ক্ষমা করিয়া দিয়াছিলাম, এবং মূসাকে আমি প্রকাশ্য প্রভাব দান করিয়াছিলাম।
وَرَفَعْنَا فَوْقَهُمُ الطُّورَ بِمِيثَاقِهِمْ وَقُلْنَا لَهُمُ ادْخُلُوا الْبَابَ سُجَّدًا وَقُلْنَا لَهُمْ لَا تَعْدُوا فِي السَّبْتِ وَأَخَذْنَا مِنْهُم مِّيثَاقًا غَلِيظًا
বাংলা অর্থ:
১৫৪। আর আমি তাহাদিগ হইতে স্বীকারোক্তি লওয়ার উদ্দেশ্যে তূর পর্বতকে উঠাইয়া তাহাদের উপর ঝুলাইয়া দিয়াছিলাম এবং তাহাদিগকে আদেশ করিয়াছিলাম-নগর-দ্বারে বিনয়ের সহিত প্রবেশ করিবে এবং আমি তাহাদিগকে এই আদেশ (-ও) করিয়াছিলাম যে, শনিবার সম্বন্ধে-সীমালঙ্ঘন করিও না এবং আমি তাহাদিগ হইতে দৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহন করিয়াছিলাম।
فَبِمَا نَقْضِهِم مِّيثَاقَهُمْ وَكُفْرِهِم بِآيَاتِ اللَّهِ وَقَتْلِهِمُ الْأَنبِيَاءَ بِغَيْرِ حَقٍّ وَقَوْلِهِمْ قُلُوبُنَا غُلْفٌ ۚ بَلْ طَبَعَ اللَّهُ عَلَيْهَا بِكُفْرِهِمْ فَلَا يُؤْمِنُونَ إِلَّا قَلِيلًا
বাংলা অর্থ:
১৫৫। অনন্তর আমি তাহাদিগকে শাস্তিতে নিপতিত করিলাম তাহাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের দরুন এবং আল্লাহর আয়াতসমূহের সহিত কূফরী করার দরুন এবং তাহাদিগের অন্যায়ভাবে নবীদিগকে হত্যা করার দরুন এবং তাহাদের এই উক্তির দরুন যে,-আমাদের অনন্তরসমূহ সংরক্ষিত; বরং তাহাদের কুফরীর দরুন অন্তরসমূহে আল্লাহ্ মোহর মারিয়া দিয়াছেন, সুতরাং ইহাদের মধ্যে ঈমান নাই-হাঁ, খুবই সামান্য।
وَبِكُفْرِهِمْ وَقَوْلِهِمْ عَلَىٰ مَرْيَمَ بُهْتَانًا عَظِيمًا
বাংলা অর্থ:
১৫৬। (যাহা গ্রহনযোগ্য নহে, কাজেই তাহারা কাফের।) আর ইহাদের কুফরীর দরুন এবং মারইয়ামের প্রতি গুরুতর অপবাদ আরোপ করার দরুন।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
১) কতিপয় ইহুদী সরদার হুযূরও সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে উপস্থিত হইয়া বলিল, আপনি সত্য পয়গম্বর হইলে হযরত মূসা (আঃ)-এর তাওরাতের ন্যায় আসমান হইতে একটি পূর্ণ কিতাব আনয়ন করুন। তদুত্তরে এই আয়াতটি নাযিল হয়। (মুঃ কোঃ)
২) ইহুদীদের প্রতি নির্দেশ ছিল যে, শনিবার মাছ শিকার করিও না। ঘটনা এইরূপ দাঁড়াইল যে, অন্যান্য দিনের চেয়ে শনিবারেই নদীতে মাছ অধীক পরিমাণে দেখা যাইতে লাগিল। ইহুদীরা নদীর তীরের ধারে ধারে বহু গর্ত খনন করিয়া নালী দ্বারা নদীর সহিত সংযুক্ত করিয়া দিল। শনিবার দিন মাছ উক্ত গর্তগুলিতে প্রবেশ করিলে তাহারা গর্তের নালী বন্ধ করিয়া দিত এবং পরবর্তী দিন উক্ত মাছ শিকার করিত। (মুঃ কোঃ)
وَقَوْلِهِمْ إِنَّا قَتَلْنَا الْمَسِيحَ عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ رَسُولَ اللَّهِ وَمَا قَتَلُوهُ وَمَا صَلَبُوهُ وَلَـٰكِن شُبِّهَ لَهُمْ ۚ وَإِنَّ الَّذِينَ اخْتَلَفُوا فِيهِ لَفِي شَكٍّ مِّنْهُ ۚ مَا لَهُم بِهِ مِنْ عِلْمٍ إِلَّا اتِّبَاعَ الظَّنِّ ۚ وَمَا قَتَلُوهُ يَقِينًا
বাংলা অর্থ:
১৫৭। আর ইহাদের এই উক্তির যে, আমরা হত্যা করিয়াছি মসীহ্ ঈসা ইবনে মারইয়ামকে যিনি আল্লাহর রাসূল ছিলেন, অথচ তাহারা তাঁহাকে হত্যাও করে নাই এবং তাঁহাকে শূলেও চড়ায় নাই, পরন্তু তাহারা সন্দেহে পতিত হইয়াছিল; আর যাহারা তাঁহার সম্বন্ধে মতবিরোধ করে নিশ্চয় তাহারা ভ্রান্ত ধারণায় রহিয়াছে; তাহাদের নিকট ইহার কোন প্রমান নাই-আনুমানিক বিষয়ের অনুসরণ ব্যতীত, আর নিশ্চিত সত্য যে, তাহারা তাঁহাকে হত্যা করে নাই।
بَل رَّفَعَهُ اللَّهُ إِلَيْهِ ۚ وَكَانَ اللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمًا
বাংলা অর্থ:
১৫৮। বরং আল্লাহ্ তাঁহাকে নিজের দিকে (আসমানে সশরীরে) উঠাইয়া লইয়াছে; আর আল্লাহ্ তা‘আলা মহা পরাক্রমশীল, প্রজ্ঞাময়।
وَإِن مِّنْ أَهْلِ الْكِتَابِ إِلَّا لَيُؤْمِنَنَّ بِهِ قَبْلَ مَوْتِهِ ۖ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكُونُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا
বাংলা অর্থ:
১৫৯। আর আহলে কিতাব (ইহুদীদের মধ্য) হইতে কেহ (অবশিষ্ট) থাকিবে না কিন্তু সে স্বীয় মৃত্যুর পূর্বক্ষণে (যখন আলমে র্বযখ দৃষ্টিগোচর হইবে) অবশ্যই ঈসাকে স্বীকার করিবে, আর কিয়ামত দিবসে তিনি তাহাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদান করিবেন।
فَبِظُلْمٍ مِّنَ الَّذِينَ هَادُوا حَرَّمْنَا عَلَيْهِمْ طَيِّبَاتٍ أُحِلَّتْ لَهُمْ وَبِصَدِّهِمْ عَن سَبِيلِ اللَّهِ كَثِيرًا
বাংলা অর্থ:
১৬০। অনন্তর ইহুদীদের এসমস্ত বড় বড় অপরাধের দরুন আমি তাহাদের জন্য বহু পবিত্র বস্তু হারাম করিয়া দিয়াছি যাহা তাহাদের জন্য হালাল ছিল, আর এই কারণে (-ও) যে, তাহারা বহু লোককে আল্লাহর পথ হইতে বিরত রাখিত।
وَأَخْذِهِمُ الرِّبَا وَقَدْ نُهُوا عَنْهُ وَأَكْلِهِمْ أَمْوَالَ النَّاسِ بِالْبَاطِلِ ۚ وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ مِنْهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا
বাংলা অর্থ:
১৬১। এবং এই জন্য যে, তাহারা সুদ গ্রহণ করিত অথচ তাহাদিগকে উহা হইতে নিষেধ করা হইয়াছিল, আর এই জন্য (-ও) যে, তাহারা মানুষের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করিত; এবং আমি তাহাদের মধ্যে যাহারা কাফের তাহাদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করিয়া রাখিয়াছি।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
১) ইহুদীরা বলে, আমরা ঈসাকে শূলে চড়াইয়া হত্যা করিয়াছি, আর নাছারাদের কতিপয় ব্যক্তি বলে, তাঁহার দেহকে হত্যা করা হইয়াছে, কিন্তু তাঁহার রূহ খোদার নিকট চলিয়া গিয়াছে। এই সমস্ত উক্তি সর্বৈই মিথ্যা। আল্লাহ তা‘আলা বলিতেছেন, ইহারা ঈসান আকৃতিকে হত্যা করিয়াছে। ঈসাকে গ্রেফ্তার করার সময় তাঁহার সাহায্যকারী নাছারাগণও সরিয়া পড়িয়াছিল। ইহুদীরাও তখন পর্যন্ত আসিয়া পৌঁছিতে পারে নাই। এই মুহূর্তের খবর ইহুদীরাও রাখে না এবং নাছারারাও রাখে না। (মুঃ কোঃ)
২) হযরত ঈসা (আঃ) এখন চতুর্থ আসমানে জীবিত আছেন। ইহুদীদের মধ্য হইতে দাজ্জালের আবির্ভাব হইলে তিনি আসিয়া দাজ্জালকে ধ্বংস করিবেন। (মুঃ কোঃ)
لَّـٰكِنِ الرَّاسِخُونَ فِي الْعِلْمِ مِنْهُمْ وَالْمُؤْمِنُونَ يُؤْمِنُونَ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ ۚ وَالْمُقِيمِينَ الصَّلَاةَ ۚ وَالْمُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَالْمُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ أُولَـٰئِكَ سَنُؤْتِيهِمْ أَجْرًا عَظِيمًا
বাংলা অর্থ:
১৬২। কিন্তু ইহাদের মধ্যে যাহারা (ধর্ম-) জ্ঞানে (ও আমলে) পরিপক্ক এবং (তাহাদের মধ্যে) যাহারা ঈমান আনয়নকারী-ঈমান আনে আপনার প্রতি অবতারিত কিতাবের উপর এবং ঐ কিতাবের উপরও যাহা আপনার পূর্বে অবতারিত হইয়াছে এবং যাহারা রীতিমত নামায আদায়কারী এবং যাহারা যাকাত প্রদানকারী এবং যাহারা আল্লাহর প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাসী; এইরূপ লোকদিগকে আমি অবশ্যই মহান পুরস্কার প্রদান করিব।
إِنَّا أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ كَمَا أَوْحَيْنَا إِلَىٰ نُوحٍ وَالنَّبِيِّينَ مِن بَعْدِهِ ۚ وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطِ وَعِيسَىٰ وَأَيُّوبَ وَيُونُسَ وَهَارُونَ وَسُلَيْمَانَ ۚ وَآتَيْنَا دَاوُودَ زَبُورًا
বাংলা অর্থ:
১৬৩।আমি আপনার প্রতি ওহী প্রেরণ করিয়াছি যেমন প্রেরণ করিয়াছিলাম নূহের প্রতি এবং তাঁহার পরে অন্যান্য নবীগণের প্রতি (-ও প্রেরণ করিয়াছিলাম), এবং আমি ওহী প্রেরণ করিয়াছিলাম ইব্রাহীম ও ইসমাঈল ও ইসহাক ও ইয়াকূর এবং ইয়াকূবের বংশধর এবং ঈসা ও আইয়ূব ও ইফনুস ও হারূন এবং সুলায়মানের প্রতি আর (এমনিভাবে) আমি দাউদকে যাবূর প্রদান করিয়াছিলম।
وَرُسُلًا قَدْ قَصَصْنَاهُمْ عَلَيْكَ مِن قَبْلُ وَرُسُلًا لَّمْ نَقْصُصْهُمْ عَلَيْكَ ۚ وَكَلَّمَ اللَّهُ مُوسَىٰ تَكْلِيمًا
বাংলা অর্থ:
১৬৪। এবং এইরূপ নবীদিগের প্রতি ওহী প্রেরণ করিয়াছিলাম, যাহাদের অবস্থা ইতিপূর্বে আমি আপনার নিকট বর্ণনা করিয়াছি এবং এইরূপ নবীদিগের প্রতিও-যাহাদের অবস্থা আমি আপনার নিকট (এখনও) বর্ণনা করি নাই; আর মূসার সহিত আল্লাহ্ বিশেষ ধরনে কথা বলিয়াছেন।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
১) অর্থাৎ, এলম অনুযায়ী আমল করিতে মজবূত। এই প্রস্তুতিই তাহাদের নিকট সত্যকে স্পষ্ট করিয়া দিয়াছে এবং সত্যের অনুবর্তন সরল ও সহজ করিয়া দিয়াছে। এই স্থলে “জ্ঞানে সুপরিপক্ব” বলিতে আব্দুল্লাহ্ ইবনে সালাম, আসিয়াদ, সা‘লাবা এবং তাঁহাদের অনুরূপ সত্যান্বেষিগণকে বুঝান হইয়াছে।(বঃ কোঃ)
২) ১৫৩ নং আয়াতে ইহুদীদের বিদ্বেষ ও মূর্খতামূলক প্রশ্ন ও আবদারের উল্লেখ করা হইয়াছে। এইখানে তাহাদের সেই বিদ্বেষ ও মূর্খতা প্রমাণের জন্যই আল্লাহ্ পাক বলিতেছেন, যাহারা সারমর্ম এই যে, নুবুওয়াতের সত্যতা প্রমানের জন্য পূর্ণ কিতাব প্রাপ্তির আবদার অর্থহীন। এই নবীর পূর্বে ওহীপ্রাপ্ত আরও বহু নবী অতীত হইয়াছে। তাঁহাদের নুবুওয়াত তোমরাও স্বীকার কর। যদি নুবুওয়াতের প্রমাণ উহারই উপর নির্ভর করিত, তবে প্রত্যেক নবীর বেলায়ই উহা প্রাপ্ত হওয়া আবশ্যক ছিল।(বঃ কোঃ)
رُّسُلًا مُّبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ لِئَلَّا يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَى اللَّهِ حُجَّةٌ بَعْدَ الرُّسُلِ ۚ وَكَانَ اللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمًا
বাংলা অর্থ:
১৬৫। তাঁহাদিগকে সুসংবাদ প্রদানকারী এবং ভয় প্রদর্শনকারী নবী করিয়া এই জন্য প্রেরণ করিয়াছি, যেন এই পয়গম্বরদের পর আল্লাহর সম্মুখে মানুষের নিকট কোন ওযর (বাহ্যিক দৃষ্টিতেও) বাকী না থাকে; আর আল্লাহ্ পূর্ণ ক্ষমতাবান, বড়ই প্রজ্ঞাময়।
لَّـٰكِنِ اللَّهُ يَشْهَدُ بِمَا أَنزَلَ إِلَيْكَ ۖ أَنزَلَهُ بِعِلْمِهِ ۖ وَالْمَلَائِكَةُ يَشْهَدُونَ ۚ وَكَفَىٰ بِاللَّهِ شَهِيدًا
বাংলা অর্থ:
১৬৬। কিন্তু আল্লাহ্ তা‘আলা সাক্ষ্য প্রদান করিতেছেন ঐ কিতাবের মাধ্যমে যাহা আপনার নিকট প্রেরণ করিয়াছেন-এবং প্রেরণও করিয়াছেন স্বীয় জ্ঞানের পূর্ণতার সহিত, এবং ফেরেশতাগণ (-ও নুবুয়াতের) সত্যতা স্বীকার করিতেছেন; আর আল্লাহ্ তা‘আলার সাক্ষ্যই যথেষ্ট।
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَصَدُّوا عَن سَبِيلِ اللَّهِ قَدْ ضَلُّوا ضَلَالًا بَعِيدًا
বাংলা অর্থ:
১৬৭। যাহারা অমান্যকারী হয় এবং আল্লাহর ধর্ম হইতে প্রতিরোধ করে, তাহারা তো দূরতর ভ্রান্তিতে উপনীত হইল।
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَظَلَمُوا لَمْ يَكُنِ اللَّهُ لِيَغْفِرَ لَهُمْ وَلَا لِيَهْدِيَهُمْ طَرِيقًا
বাংলা অর্থ:
১৬৮। নিঃসন্দেহে যাহারা আমান্যকারী হয় এবং অন্যেরও অনিষ্ট করে, আল্লাহ্ তা‘আলা তাহাদিগকে কদাচ ক্ষমা করিবেন না এবং তাহাদিগকে কোন পথ দেখাইবেন না।
إِلَّا طَرِيقَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ۚ وَكَانَ ذَٰلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرًا
বাংলা অর্থ:
১৬৯। জাহান্নামের পথ ব্যতীত এইরূপে যে, তাহারা উহাতে অনন্তর অবস্থান করিবে; আর আল্লাহর নিকট এই শাস্তি প্রদান খুবই সহজ।
يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُمُ الرَّسُولُ بِالْحَقِّ مِن رَّبِّكُمْ فَآمِنُوا خَيْرًا لَّكُمْ ۚ وَإِن تَكْفُرُوا فَإِنَّ لِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا
বাংলা অর্থ:
১৭০। হে মানবগণ ! এই রাসূল তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের সন্নিধান হইতে সত্য বাণীসহ আগমন করিয়াছেন, সুতরাং তোমরা দৃঢ় বিশ্বাস রাখ, (ইহা) তোমাদের জন্য উত্তম হইবে; আর যদি কাফের থাক, তবে নিশ্চয় আল্লাহরই স্বত্বে রহিয়াছে যাহাকিছু আসমানসমূহে ও যমীনে আছে; আর আল্লাহ্ (তাহাদের ঈমান ও কুফরের) পূর্ণ খবর রাখেন, (ও) প্রজ্ঞাময়।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
১) অর্থাৎ, ক্বিয়ামত দিবসে মানব যেন বলিতে না পারে, হে খোদা ! আপনার পছন্দনীয় ও অপছন্দনীয় বিষয়গুলি আমাদের জানা ছিল না। ইসলাম ধর্মই আপনার পছন্দনীয় বলিয়া জানিতে পারিলে আমরা তাহাই অবলম্বন করিতাম। এই কারণেই আল্লাহ্ নবীগণকে ‘ম’জেযাহ্’সহ পাঠাইয়াছেন, যেন তাঁহারা মানুষকে সরল পথ প্রদর্শন করেন। (মুঃ কোঃ)
২) ক্বোরাইশ সর্দারগণ হুযূর (দঃ)-কে বলিল, আমরা ইহুদী আলেমদিগকে জিজ্ঞাসা করিয়াছি, মুহাম্মাদ যিনি নুবুওয়াতের দাবি করেন, সেই সম্বন্ধে তোমাদের কিতাবে কোন উল্লেখ আছে কি? তাহারা বলিয়াছে, মুহাম্মাদের নুবুওয়াত সম্বন্ধে তাওরাতে কোন উল্লেখ নাই। ঐ সময় ইহুদী আলেমরাও আসিয়া পড়িলে হুযূর তাহাদিগকে কসম দিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন। তাহারা বলিল, আপনার বিষয়ে তাওরাতে কোন উল্লেখ নাই। তখন এই আয়াতটি নাযিল হয়। (মুঃ কোঃ)
يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لَا تَغْلُوا فِي دِينِكُمْ وَلَا تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ إِلَّا الْحَقَّ ۚ إِنَّمَا الْمَسِيحُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ رَسُولُ اللَّهِ وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَىٰ مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِّنْهُ ۖ فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ ۖ وَلَا تَقُولُوا ثَلَاثَةٌ ۚ انتَهُوا خَيْرًا لَّكُمْ ۚ إِنَّمَا اللَّهُ إِلَـٰهٌ وَاحِدٌ ۖ سُبْحَانَهُ أَن يَكُونَ لَهُ وَلَدٌ ۘ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ وَكَفَىٰ بِاللَّهِ وَكِيلًا
বাংলা অর্থ:
১৭১। হে আহলে কিতাবগণ ! তোমরা নিজেদের ধর্মে সীমালঙ্ঘন করিও না এবং আল্লাহ্ সম্বন্ধে ভ্রান্ত উক্তি করিও না; মারইয়ামের পুত্র ঈসা মসীহ্ তো আর কিছুই নহেন অবশ্য আল্লাহর রাসূল এবং আল্লাহর এক (আদেশ)-বাণী (দ্বারা সৃষ্ট), যাহা আল্লাহ্ (জিবরায়ীল মারফৎ) মারইয়াম পর্যন্ত পৌঁছাইয়াছিলেন এবং আল্লাহর তরফ হইতে এক জান (রূহ), সুতরাং আল্লাহর প্রতি এবং তাঁহার সমস্ত রাসূলের প্রতি ঈমান আন। আর এইরূপ বলিও না যে, (খোদা) তিন; (এই র্শিক হইতে) নিবৃত্ত হও, তোমাদের জন্য উত্তম হইবে; প্রকৃত মা‘বূদ তো এক আল্লাহ্ তা‘আলাই; তিনি সন্তানের জনক হওয়া হইতে পবিত্র। যাহাকিছু আসমানসমূহে এবং যমীনে আছে সবকিছুই তাঁহার স্বত্ব; আর আল্লাহ্ তা‘আলাই যথেষ্ট কার্য-সম্পাদকরূপে।
لَّن يَسْتَنكِفَ الْمَسِيحُ أَن يَكُونَ عَبْدًا لِّلَّهِ وَلَا الْمَلَائِكَةُ الْمُقَرَّبُونَ ۚ وَمَن يَسْتَنكِفْ عَنْ عِبَادَتِهِ وَيَسْتَكْبِرْ فَسَيَحْشُرُهُمْ إِلَيْهِ جَمِيعًا
বাংলা অর্থ:
১৭২। মসীহ্ কস্মিনকালেও ইহাতে লজ্জাবোধ করিবেন না যে, তিনি খোদার বান্দা এবং সান্নিধ্য প্রাপ্ত ফেরেশতাগণও (লজ্জাবোধ করিবেন) না; আর যে-ব্যক্তি খোদার দাসত্ব করিতে লজ্জাবোধ করিবে এবং অহংকার করিবে, তবে (পরিণাম শুনিয়া রাখ,) নিশ্চয়ই খোদা তা‘আলা সমস্ত মানবকে নিজের দিকে একত্রিত করিবেন।
فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَيُوَفِّيهِمْ أُجُورَهُمْ وَيَزِيدُهُم مِّن فَضْلِهِ ۖ وَأَمَّا الَّذِينَ اسْتَنكَفُوا وَاسْتَكْبَرُوا فَيُعَذِّبُهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا وَلَا يَجِدُونَ لَهُم مِّن دُونِ اللَّهِ وَلِيًّا وَلَا نَصِيرًا
বাংলা অর্থ:
১৭৩। অনন্তর যাহারা ঈমান আনিয়াছে এবং নেক কাজ করিয়াছে, তবে তাহাদিগকে তো তাহাদের পূর্ণ সওয়াব প্রদান করিবেন এবং তাহাদিগকে স্বীয় করুণায় আরও অধিক প্রদান করিবেন, আর যাহারা লজ্জাবোধ করিয়া থাকিবে এবং অহংকার করিয়া থাকিবে, তাহাদিগকে কঠোর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দিবেন, এবং তাহারা কোন গায়রুল্লাহ্কে স্বীয় বন্ধু ও সাহায্যকারী পাইবে না।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
১) অর্থাৎ, এমন বলিও না যে, তিনি সন্তানের পিতা, নাঊযুবিল্লাহ্! যেমন নাছারাদের কেহ কেহ বলে, ঈসা আল্লাহর পুত্র। আবার কেহ কেহ বলে, আল্লাহ্ তিন খোদার মধ্যে এক খোদা। অপর দুই খোদা ঈসা ও জিব্রাঈল। কেহ কেহ জিব্রাঈলের স্থলে হযরত মারইয়ামকে এক খোদা বলিত। কেহ কেহ বলিত, মারইয়ামের পুত্র ঈসাই স্বয়ং আল্লাহ্। মোটকথা, এই সমস্ত আক্বীদাই বাতিল। (বঃ কোঃ)
২) খৃষ্টানগণ তো অনর্থক হযরত ঈসাকে আল্লাহর অংশ বা স্বয়ং আল্লাহ্ বলিয়া সাব্যস্ত করিতেছে, কিন্তু স্বয়ং ঈসা (আঃ)-এর অবস্থা এই যে, দুনিয়াতেও তিনি নিজেকে আল্লাহর বান্দা বলিয়া স্বীকার করিয়াছেন। ইহা সর্বজন বিদিত। এখন তিনি আসমানে আছেন। তাঁহার বর্তমান অবস্থায় অথবা ক্বিয়ামত পর্যন্ত তিনি যে অবস্থায় থাকেন, তাঁহাকে কেহ জিজ্ঞাসা করিয়া দেখুক, তিনি নিজেকে আল্লাহর বান্দা বলিয়া স্বীকার করিবেন। (বঃ কোঃ)
يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُم بُرْهَانٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَأَنزَلْنَا إِلَيْكُمْ نُورًا مُّبِينًا
বাংলা অর্থ:
১৭৪। হে মানব ! নিশ্চয় তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের সন্নিধান হইতে এক প্রমান (রাসূল) আসিয়াছে, আর আমি তোমাদের নিকট এক উজ্জ্বল নূর (কোরআন) পাঠাইয়াছি।
فَأَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَاعْتَصَمُوا بِهِ فَسَيُدْخِلُهُمْ فِي رَحْمَةٍ مِّنْهُ وَفَضْلٍ وَيَهْدِيهِمْ إِلَيْهِ صِرَاطًا مُّسْتَقِيمًا
বাংলা অর্থ:
১৭৫। সুতরাং যাহারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনিয়াছে এবং আল্লাহ্ (-এর দ্বীন)-কে দৃঢ়রূপে ধারণ করিয়াছে, বস্তুতঃ এইরূপ লোকদিগকে আল্লাহ্ স্বীয় করুণায় (বেহেশতে) দাখিল করিবেন ও স্বীয় অনুগ্রহে (আবৃত করিবেন,) এবং স্বীয় সন্নিধান পর্যন্ত (পৌঁছিবার) সরল পথ প্রদর্শন করিবেন।
يَسْتَفْتُونَكَ قُلِ اللَّهُ يُفْتِيكُمْ فِي الْكَلَالَةِ ۚ إِنِ امْرُؤٌ هَلَكَ لَيْسَ لَهُ وَلَدٌ وَلَهُ أُخْتٌ فَلَهَا نِصْفُ مَا تَرَكَ ۚ وَهُوَ يَرِثُهَا إِن لَّمْ يَكُن لَّهَا وَلَدٌ ۚ فَإِن كَانَتَا اثْنَتَيْنِ فَلَهُمَا الثُّلُثَانِ مِمَّا تَرَكَ ۚ وَإِن كَانُوا إِخْوَةً رِّجَالًا وَنِسَاءً فَلِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنثَيَيْنِ ۗ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ أَن تَضِلُّوا ۗ وَاللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ
বাংলা অর্থ:
১৭৬। লোকে আপনার নিকট (মীরাস সম্বন্ধে) বিধান জিজ্ঞাসা করে; আপনি বলিয়া দিন, আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদিগকে কালালাহ্ সম্বন্ধে ব্যবস্থা দিতেছেন যে;-যদি কোন ব্যক্তি নিঃসন্তান অবস্থায় মরিয়া যায় এবং তাহার একজন (সহোদরা বা বৈমাত্রেয়) ভগ্নী থাকে, তবে সে অর্ধাংশ পাইবে তাহার পরিত্যক্ত সম্পত্তির, এবং এই ব্যক্তি (ভ্রাতা) ভগ্নীর ওয়ারিস হইবে, যদি (ভগ্নী মরিয়া যায় এবং) তাহার কোন সন্তান না থাকে; আর যদি ভগ্নী দুই জন (বা ততোধিক) হয়, তবে তাহারা (উক্ত) ভাইয়ের পরিত্যক্ত সম্পত্তি দুই-তৃতীয়াংশ পাইবে; আর যদি ওয়ারিস ভ্রাতা-ভগ্নী পুরুষ ও নারী কয়েকজন হয়, তবে একজন পুরুষের অংশ হইবে দুই জন নারীর অংশের সমান; আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের নিকট (দ্বীনের বিষয়) এই জন্য বর্ণনা করেন, যেন তোমরা ভ্রাষ্টতায় পতিত না হও; আর আল্লাহ্ তা‘আলা সর্ববিষয়ই খুব জানেন।
সূরা আন-নিসা শানে নুযূলঃ
১) বাহ্যতঃ দেখা যায়, নাছারাগণ আল্লাহর এবাদতে লজ্জা বা অহংকার বোধ করিত না। শুধু একত্ববাদে তাহাদের আপত্তি ছিল। কিন্তু তাহাদের সম্যক অবস্থা পর্যলোচনা করিলে দেখা যায়, তাহারা সত্যকে জানিয়া শুনিয়াই রসূল (দঃ) এর অনুসরণ করিতে লজ্জা ও অহংকার বোধ করিত। (বঃ কোঃ)
২) ‘কালালা’ শব্দের অর্থ দুর্বল। যাহারা প্রকৃত ওয়ারিস অর্থাৎ, পিতামাতা ও সন্তানাদি নাই, এইখানে তাহাকেই ‘কালালা’ বলা হইয়াছে। এমতাবস্থায় তাহারা সহোদয় ভাই-বোনেরা তাহার পুত্র-কন্যার স্থলবর্তী হইবে। আর সহোদর ভাই-বোন না থাকিলে সৎ ভাই , বোনেরাই স্থলবর্তী হইবে। এক বোন থাকিলে তাহার জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধেক। তদুর্ধ্ব বোন থাকিলে দুই তৃতীয়াংশ এবং ভাই-বোন মিশ্রিত থাকিলে প্রত্যেক ভাই দুই বোনের সমান অংশ পাইবে। আর যদি শুধু ভাই থাকে, তবে সে তাহার বোনের পরিত্যক্ত সম্পূর্ণ সম্পত্তির ওয়ারিস হইবে। (মুঃ কোঃ)
সূরা আল-ফাতিহা বাংলা অর্থ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
আমাদের, ফেসবুক পেইজে লাইক, শেয়ার এবং কমেন্টস করে আমাদের সাথেই থাকুন।
… সূরা আন-নিসা। সূরা আন-নিসা সূরা আন-নিসা। সূরা আন-নিসা সূরা। আন-নিসা সূরা আন-নি… সূরা আন-নিসা সূরা। আন-নিসা সূরা আন-নিসা সূরা আন-নিসা সূরা আন-নিসা সূরা আন-নিসা সূরা আন-নিসা সূরা আন-নিসা সূরা আন-নিসা সূরা আন-নিসা সূরা আন-নিসা সূরা আন-নিসা সূরা আন-নিসা সূরা আন-নিসা