সূরা ইউনুস বাংলা অনুবাদ
সর্বমোট আয়াত-১০৯
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু
الر ۚ تِلْكَ آيَاتُ الْكِتَابِ الْحَكِيمِ
বাংলা অর্থ:
১। ইহা হইতেছে অতি সূক্ষ্মতত্ত্বপূর্ণ কিতাবের আয়াতসমূহ।
أَكَانَ لِلنَّاسِ عَجَبًا أَنْ أَوْحَيْنَا إِلَىٰ رَجُلٍ مِّنْهُمْ أَنْ أَنذِرِ النَّاسَ وَبَشِّرِ الَّذِينَ آمَنُوا أَنَّ لَهُمْ قَدَمَ صِدْقٍ عِندَ رَبِّهِمْ ۗ قَالَ الْكَافِرُونَ إِنَّ هَـٰذَا لَسَاحِرٌ مُّبِينٌ
বাংলা অর্থ:
২। এই লোকদের জন্য কি ইহা বিস্ময়কর হইয়াছে যে, আমি তাহাদের মধ্য হইতে একজনের নিকট ওহী প্রেরণ করিয়াছি যে, আপনি সকলকে ভয় প্রদর্শন করেন এবং যাহার ঈমান আনিয়াছে তাহাদিগকে এই সুসংবাদ দেন যে, তাহারা তাহাদের পরওয়ারদেগারের নিকট পূর্ণ মর্যাদা লাভ করিবে; কাফেররা বলিতে লাগিল যে এই ব্যক্তি তো নি:সন্দেহে প্রকাশ্য জাদুকর।
إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ ۖ يُدَبِّرُ الْأَمْرَ ۖ مَا مِن شَفِيعٍ إِلَّا مِن بَعْدِ إِذْنِهِ ۚ ذَٰلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ فَاعْبُدُوهُ ۚ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ
বাংলা অর্থ:
৩। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ই হইতেছেন তোমাদের প্রতিপালক, যিনি আসমানসমূহকে এবং যমীনকে সৃষ্টি করিয়াছেন ছয় দিন পরিমিত কালে, অত:পর তিনি আরশে সমাসীন হইলেন তিনি প্রত্যেক কাজ পরিচাললনা করিয়া থাকেন; কোন সুফারিশকারী নাই কিন্তু তাহার অনুমতির পর; এমন আল্লাহ্ হইতেছেন তোমাদের পরওয়ারদেগার, অতএব, তোমরা তাঁহার এবাদত কর; তবুও কি তোমরা বুঝিতেছ না?
إِلَيْهِ مَرْجِعُكُمْ جَمِيعًا ۖ وَعْدَ اللَّهِ حَقًّا ۚ إِنَّهُ يَبْدَأُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُ لِيَجْزِيَ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ بِالْقِسْطِ ۚ وَالَّذِينَ كَفَرُوا لَهُمْ شَرَابٌ مِّنْ حَمِيمٍ وَعَذَابٌ أَلِيمٌ بِمَا كَانُوا يَكْفُرُونَ
বাংলা অর্থ:
৪। তোমাদের সকলকে আল্লাহরই দিকে ফিরিয়া য্ইাতে হইবে; আল্লাহ্ তা’আলা (ইহার) সত্য ওয়াদা করিয়া রাখিয়াছেন নিশ্চয় তিনিই প্রথমবার সৃষ্টি করেন, অত:পর তিনিই পুনর্বার ও সৃষ্টি করিবেন। যাহাতে এইরূপ লোকদের যাহারা ঈমান আনয়ন করিয়াছে এবং নেক কাজ করিয়াছে তাহাদিগকে ইনছাফ মত প্রতিফল প্রদান করেন। আর যাহারা কুফর করিয়াছে তাহারা পান করার জন্য উত্তপ্ত পানি পাইবে এবং যন্ত্রনাদায়ক আযাব হইবে তাহাদের আচরিত কুফরের কারণে।
সূরা ইউনুস বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। মুর্তিপূজক কাফেরেরা বলিত, আশ্চর্যের কথা, আল্লাহ্ মানুষের উপর এমন মানুষকেই পয়গম্বর করিয়া পাঠাইয়াছেন, যিনি একজন এতীম! তদুত্তরে এই আয়াতটি নাযিল হয়। (মু:কো:)
هُوَ الَّذِي جَعَلَ الشَّمْسَ ضِيَاءً وَالْقَمَرَ نُورًا وَقَدَّرَهُ مَنَازِلَ لِتَعْلَمُوا عَدَدَ السِّنِينَ وَالْحِسَابَ ۚ مَا خَلَقَ اللَّهُ ذَٰلِكَ إِلَّا بِالْحَقِّ ۚ يُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ
বাংলা অর্থ:
৫। আল্লাহ্ এমন, যিনি সূর্যকে দীপ্তিমান বানাইয়াছেন এবং চন্দ্রকে আলোকময় বানাইয়াছে এবং উহার (গতির) জন্য মঞ্জিলসমূহ নির্ধারিত করিয়াছেন যাহাতে তোমরা বৎসরসমুহের সংখ্যা ও হিসাব জানিতে পার। আল্লাহ্ এই সমস্ত বস্তু অযথা সৃষ্টি করেন নাই তিনি এই প্রমাণাদি বিশেষভাবে বর্ণনা করিতেছেন সেই সকল লোকদের জন্য যাহারা জ্ঞানবান।
إِنَّ فِي اخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَمَا خَلَقَ اللَّهُ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَّقُونَ
বাংলা অর্থ:
৬। নি:সন্দেহে রাত্রি ও দিনের পরপর আসার মধ্যে এবং আল্লাহ্ যাহাকিছু আসমানসমূহে ও যমীনে সৃষ্টি করিয়াছেন তৎসমুদয়ের মধ্যে প্রমাণসমুহ রহিয়াছে সেই লোকদের জন্য যাহারা (আল্লাহর) ভয় পোষণ করে।
إِنَّ الَّذِينَ لَا يَرْجُونَ لِقَاءَنَا وَرَضُوا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَاطْمَأَنُّوا بِهَا وَالَّذِينَ هُمْ عَنْ آيَاتِنَا غَافِلُونَ
বাংলা অর্থ:
৭। যাহাদের আমার নিকট উপস্থিত হওয়ার চিন্তা নাই এবং তাহারা পার্থিব জীবনের প্রতিই পরিতুষ্ট হইয়া গিয়াছে, আর উহাতে মন লাগাইয়া রাখিয়াছে এবং যাহারা আমার আয়াতমসূহ সম্পূর্ণরূপে গাফেল রহিয়াছে।
أُولَـٰئِكَ مَأْوَاهُمُ النَّارُ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ
বাংলা অর্থ:
৮। এইরূপ লোকদের ঠিকানা হইতেছে জাহান্নাম তাহাদের কার্যকলাপের কারণে।
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ يَهْدِيهِمْ رَبُّهُم بِإِيمَانِهِمْ ۖ تَجْرِي مِن تَحْتِهِمُ الْأَنْهَارُ فِي جَنَّاتِ النَّعِيمِ
বাংলা অর্থ:
৯। নিশ্চয় যাহারা ঈমান আনিয়াছে এবং নেক কাজ করিয়াছে তাহাদের রব্ব তাহাদিগকে লক্ষ্য স্থলে (অর্থাৎ, জান্নাতে) পৌছাইবেন তাহাদের ঈমানের কারণে, শান্তির উদ্যান সমুহে তাহাদের (বাসস্থানের) তলদেশ দিয়া নহর সমূহ বহিবে।
সূরা ইউনুস বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। অত্র আয়াতে এ কথার প্রতি ইঙ্গিত রহিয়াছে যে সূর্যের আলো নিজস্ব এবং চন্দ্রের আলো অন্য পদার্থ হইতে গৃহীত। কোন নক্ষত্র এক দিবারাত্রে যে গতিপথ অতিক্রম করে উহাকেই মঞ্জিল বলা হইয়াছে। সূর্যও গতিশীল, অতএব, উহার জন্যও মঞ্জিল রহিয়াছে কিন্তু চন্দ্রের গতি সূর্যের গতি অপেক্ষা অধিক দ্রুত। অথচ উহার গতি পথের পরিবর্তন সহজে বুঝা যায়। এই জন্যই এই আয়াতে কেবল চন্দ্রের মঞ্জিল অতিক্রম করার কথা বলা হইয়াছে। এই হিসাবে চাঁদ কোন মাসে ২৯ এবং কোন মাসে ৩০ মঞ্জিল অতিক্রম করে। কিন্তু আমাবস্যার সময় ২/১ রাত্রি চাঁদ দেখা যায় না বলিয়া চাঁদের ২৮ মঞ্জিলের কথা লোকমুখে প্রসিদ্ধ হইয়া রহিয়াছে। (ব:কো:)
২। ইহা যদি অন্যান্যদের জন্যও প্রমাণ কিন্তু মুমিনরাই এই প্রমাণাদি দ্বারা উপকৃত হইয়া থাকে। অতএব, বিশেষভাবে তাহাদের কথা উল্লেখ করা হইয়াছে। (ব:কো:)
دَعْوَاهُمْ فِيهَا سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَتَحِيَّتُهُمْ فِيهَا سَلَامٌ ۚ وَآخِرُ دَعْوَاهُمْ أَنِ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
বাংলা অর্থ:
১০। তথায় তাহাদের বাক্য হইব সোবাহানাল্লাহ এবং পরস্পরের সালাম হইবে আসসালামু আলাইকুম, আর তাহাদের শেষ বাক্য হইবে আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আ-লামীন।
وَلَوْ يُعَجِّلُ اللَّهُ لِلنَّاسِ الشَّرَّ اسْتِعْجَالَهُم بِالْخَيْرِ لَقُضِيَ إِلَيْهِمْ أَجَلُهُمْ ۖ فَنَذَرُ الَّذِينَ لَا يَرْجُونَ لِقَاءَنَا فِي طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُونَ
বাংলা অর্থ:
১১। আর যদি আল্লাহ্ মানবের উপর ত্বরিত ক্ষতি ঘটাইতেন, যেমন তাহারা ত্বরিত উপকার লাভ করিতে আগ্রহ রাখে তবে তাহাদের অঙ্গীকার কবেই পূর্ণ হইয়া যাইত। অনন্তর আমি সেই লোকদিগকে যাহারা আমার নিকট উপস্থিত হওয়ার চিন্তই করে না, ছাড়িয়া দেই উহাদের অবস্থার উপর, যেন তাহারা তাহাদের অবাধ্যতার মধ্যে ঘরপাক খাইতে থাকে।
وَإِذَا مَسَّ الْإِنسَانَ الضُّرُّ دَعَانَا لِجَنبِهِ أَوْ قَاعِدًا أَوْ قَائِمًا فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُ ضُرَّهُ مَرَّ كَأَن لَّمْ يَدْعُنَا إِلَىٰ ضُرٍّ مَّسَّهُ ۚ كَذَٰلِكَ زُيِّنَ لِلْمُسْرِفِينَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
বাংলা অর্থ:
১২। আর যখন মানুষকে কোন কেলশ স্পর্শ করে তখন আমকে ডাকিতে থাকে শুইয়াও বসিয়াও এবং দাঁড়াইয়াও, অত:পর যখন আমি সেই কষ্ট তাহা হইতে দুর করিয়া দেই তখন সে নিজের পূর্ণ অবস্থায় ফিরিয়া আসে যে কষ্ট তাহাকে স্পর্শ করিয়াছিল, উহা মোচন করার জন্য সে যেন আমাকে কখনও ডাকিয়াই ছিল না, এই সীমালঙ্ঘনকারীদের কার্যকলাপ তাহাদের নিকট এইরূপই পছন্দনীয় মনে হয়।
وَلَقَدْ أَهْلَكْنَا الْقُرُونَ مِن قَبْلِكُمْ لَمَّا ظَلَمُوا ۙ وَجَاءَتْهُمْ رُسُلُهُم بِالْبَيِّنَاتِ وَمَا كَانُوا لِيُؤْمِنُوا ۚ كَذَٰلِكَ نَجْزِي الْقَوْمَ الْمُجْرِمِينَ
বাংলা অর্থ:
১৩। আর আমি তোমাদের পূর্বে বহু সম্প্রদায়কে ধ্বংস করিয়া দিয়াছি যখন তাহার জুলুম করিয়াছিল, অথচ তাহাদের নিকট তাহাদের পয়গম্বরগণ ও আগমন করিয়াছিলেন প্রমাণদিসহ, আর তাহারা কখনই বা এইরূপ ছিল যে, ঈমান আনয়ন করিত; আমি অপরাধ পরায়ণ লোকদিগকে এইরূপেই শাস্তি দিয়া থাকি।
ثُمَّ جَعَلْنَاكُمْ خَلَائِفَ فِي الْأَرْضِ مِن بَعْدِهِمْ لِنَنظُرَ كَيْفَ تَعْمَلُونَ
বাংলা অর্থ:
১৪। অত:পর আমি তাহাদের স্থলে তোমাদিগকে আবাদ করিলাম ভূমন্ডলে তাহাদের পর, যেন আমি প্রত্যক্ষ করিয়া লই যে, তোমরা কিরূপ কাজ কর।
সূরা ইউনুস বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। অর্থাৎ মুমিনগণ বেহেশতে মনোমুগ্ধকর সামগ্রী দেখিয়া আত্মহারা হইয়া বলিবে সোবহানাল্লাহ। আর বেহেশতবাসীদের সহিত সাক্ষাৎ হইলে তাহাদের পারস্পরিক সালাম হইবে আসসালামু আলাইকুম, আর তাহারা বেহেশতে নিজ নিজ আসনে বসিয়া যখন স্বস্তির নিশ্বাস নিবে এবং পার্থিব জীবনের দু:খ কষ্টের কথা স্মরণ করিবে এবং বর্তমানের অনন্ত শান্তিময় জীবনের সহিত উহার তুলনা করিয়া মনে আনন্দ ও তৃপ্তি পাইবে তখন তাহাদের সর্বশেষ কথা হইবে আলহামদুলিল্লাহ। (ব:কো:)
২। কাফেরেরা আযাব সম্পকীয় আয়াতগুলির প্রতি অবিশ্বাসজনিত বিদ্রুপের সহিত বলিত যে, দুনিয়াতেই যদি আমাদের উপর আযাব আসিত, তবেই আমরা উহার প্রতি বিশ্বাস করিতে পারিতাম। যেমন তাহারা বলে হে আমাদের প্রভু! হিসাব দিবসের পূর্বেই আমাদের আযাবের অংশ আমাদিগকে দিয়া দিন। এই উক্তির পরিপ্রেক্ষিতে এই আয়াতটি নাযিল হয়। (ব:কো:)
وَإِذَا تُتْلَىٰ عَلَيْهِمْ آيَاتُنَا بَيِّنَاتٍ ۙ قَالَ الَّذِينَ لَا يَرْجُونَ لِقَاءَنَا ائْتِ بِقُرْآنٍ غَيْرِ هَـٰذَا أَوْ بَدِّلْهُ ۚ قُلْ مَا يَكُونُ لِي أَنْ أُبَدِّلَهُ مِن تِلْقَاءِ نَفْسِي ۖ إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَىٰ إِلَيَّ ۖ إِنِّي أَخَافُ إِنْ عَصَيْتُ رَبِّي عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ
বাংলা অর্থ:
১৫। আর যখন তাহাদের সম্মুখে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়-যাহা অতি স্পষ্ট, তখন সেই সকল লোক যাহাদের আমার নিকট উপস্থিত হওয়ার চিন্ত নাই এইরূপ বলে যে, ইহাছাড়া অন্য কোন কোরআন আনয়ন করুন অথবা ইহাতেই কিছু পরিবর্তন করিয়া দিন; আপনি ইহা বলিয়া দিন যে, আমার দ্বারা ইহা সম্ভব নহে যে, আমি নিজের পক্ষ হইতে ইহাতে পরিবর্তন করিয়া দেই আমি তো কেবল উহারই অনুসরণ করিব যাহা ওহী যোগে আমার নিকট পৌছিয়াছে, যদি আমি নিজ রব্বের নাফরমানী করি তবে আমি এক অতি ভীষণ দিনের শাস্তির আশংকা রাখি।
قُل لَّوْ شَاءَ اللَّهُ مَا تَلَوْتُهُ عَلَيْكُمْ وَلَا أَدْرَاكُم بِهِ ۖ فَقَدْ لَبِثْتُ فِيكُمْ عُمُرًا مِّن قَبْلِهِ ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
বাংলা অর্থ:
১৬। আপনি বলিয়া দিন, যদি আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছা হইত, তবে না আমি তোমাদিগকে ইহা পাঠ করিয়া শুনাইতাম আর না আল্লাহ তোমাদিগকে উহা জানাইতেন, কেননা, আমি ইহার পূর্বেও তো জীবনের এক দীর্ঘ সময় তোমাদের মধ্যে অতিবাহিত করিয়াছি; তবে কি তোমরা এতটুকু জ্ঞান রাখ না?
فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أَوْ كَذَّبَ بِآيَاتِهِ ۚ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الْمُجْرِمُونَ
বাংলা অর্থ:
১৭। অতএব, সেই ব্যক্তির চেয়ে অধিক যালেম কে হইবে, যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে অথবা তাহার আয়াতসমূহকে মিথ্যা ঠাওরায়? নি:সন্দেহে এমন পাপচারীদের কিছুতেই মঙ্গল হইবে না।
وَيَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَـٰؤُلَاءِ شُفَعَاؤُنَا عِندَ اللَّهِ ۚ قُلْ أَتُنَبِّئُونَ اللَّهَ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ ۚ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَىٰ عَمَّا يُشْرِكُونَ
বাংলা অর্থ:
১৮। আর ইহারা ভিন্ন এমন বস্তুসমূহের এবাদত করে, যাহারা তাহাদের কোন অপকারও করিতে পারে না এবং তাহাদের কোন উপকারও করিতে পারে না, আর তাহারা বলে, ইহারা হইতেছে আল্লাহ তা‘আলার নিকট আমাদের সুফারিশকারী; আপনি বলিয়া দিন তোমরা কি আল্লাহ তা‘আলাকে এমন বিষয়ের সংবাদ দিতেছ যাহা তিনি অবগত নহেন না আসমানে আর না যমীনে; তিনি পবিত্র ও অনেক ঊর্ধ্বে তাহাদের মুশরেকী কার্যকলাপ হইতে।
সূরা ইউনুস বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। অর্থাৎ, আপনি বলিয়া দিন, একে তো কোরআনে পাকের কোন অংশ বাদ দেওয়া যাইতে পারে না। দ্বিতীয়ত: সেই বাদ দেওয়ার কাজ ন্যায়ই হউক আর অন্যায়। হউক আমার দ্বারা উহা সম্ভব নহে। বাদ দেওয়া যখন সম্ভব নহে গোটা কোরআন বদলাইয়া তদস্থলে অন্যকিছু আনয়নের প্রশ্নই অবান্তর। ইহা আল্লাহর কালাম, ফেরেশতার মারফতে ওহীরুপে আমি প্রাপ্ত হইয়াছি। অতএব, আমাকে হুবহু ইহারই অনুগমন করিতে হইব। অন্যথায় আমি ক্বিয়ামত দিবসের ভীষণ আযাবের ভয় করিব। (ব:কো:)
وَمَا كَانَ النَّاسُ إِلَّا أُمَّةً وَاحِدَةً فَاخْتَلَفُوا ۚ وَلَوْلَا كَلِمَةٌ سَبَقَتْ مِن رَّبِّكَ لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ فِيمَا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ
বাংলা অর্থ:
১৯। আর সকল মানুষ (প্রথম) এক উম্মতই ছিল, অত:পর তাহারা মতভেদ সৃষ্টি করিল, আর যদি আপনার রব্বের পক্ষ হইতে এক নির্দেশবানী প্রথমে সাব্যস্ত হইয়া না থাকিত তবে যে বিষয়ে তাহারা মতভেদ করিতেছে উহার চূড়ান্ত মীমাংসা হইয়া যাইত।
وَيَقُولُونَ لَوْلَا أُنزِلَ عَلَيْهِ آيَةٌ مِّن رَّبِّهِ ۖ فَقُلْ إِنَّمَا الْغَيْبُ لِلَّهِ فَانتَظِرُوا إِنِّي مَعَكُم مِّنَ الْمُنتَظِرِينَ
বাংলা অর্থ:
২০। আর ইহারা এইরূপ বলে যে, তাঁহার প্রতি তাঁহার রব্বের পক্ষ হইতে কোন মুজেযা কেন নাযিল হইল না? সুতরাং আপনি বলিয়া দিন যে, গায়েবের খবর কেবলমাত্র আল্লাহ্ই জানেন, অতএব তোমরাও প্রতীক্ষায় থাক, আমিও তোমাদের সহিত প্রতিক্ষায় রহিলাম।
وَإِذَا أَذَقْنَا النَّاسَ رَحْمَةً مِّن بَعْدِ ضَرَّاءَ مَسَّتْهُمْ إِذَا لَهُم مَّكْرٌ فِي آيَاتِنَا ۚ قُلِ اللَّهُ أَسْرَعُ مَكْرًا ۚ إِنَّ رُسُلَنَا يَكْتُبُونَ مَا تَمْكُرُونَ
বাংলা অর্থ:
২১। আর যখন আমি মানুষকে কোন নেয়ামতের স্বাদ উপভোগ করাই তাহাদের উপর কোন বিপদ পতিত হওয়ার পর তখনই তাহারা আমার আয়াত সমূহ সম্বন্ধে দুরভিসন্ধি করিত থাকে; আপনি বলিয়া দিন যে, আল্লাহ তা‘আলা অতি সত্বরই এই দুরভিসন্ধির শাস্তি প্রদান করিবেন; নিশ্চয়ই আমার ফেরেশতাগণ তোমাদের সকল দুরভিসন্ধি লিপিবদ্ধ করিতেছেন।
هُوَ الَّذِي يُسَيِّرُكُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ ۖ حَتَّىٰ إِذَا كُنتُمْ فِي الْفُلْكِ وَجَرَيْنَ بِهِم بِرِيحٍ طَيِّبَةٍ وَفَرِحُوا بِهَا جَاءَتْهَا رِيحٌ عَاصِفٌ وَجَاءَهُمُ الْمَوْجُ مِن كُلِّ مَكَانٍ وَظَنُّوا أَنَّهُمْ أُحِيطَ بِهِمْ ۙ دَعَوُا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ لَئِنْ أَنجَيْتَنَا مِنْ هَـٰذِهِ لَنَكُونَنَّ مِنَ الشَّاكِرِينَ
বাংলা অর্থ:
২২। তিনি এমন যিনি তোমাদগকে স্থলভাগে ও জলভাগে পরিভ্রমণ করান এমন কি যখন তোমরা নৌকায় অবস্থান কর, আর সেই নৌযান গুলি লোকদিগকে লইয়া অনুকল বায়ুর সাহায্যে চলিতে থাকে আর তাহারা উহাতে আনন্দিত হয় (হঠাৎ) তাহাদের উপর এক প্রচন্ত (প্রতিকুল) বায়ু আসিয়া পড়ে এবং প্রত্যেক দিক হইতে তাহাদের উপর তরঙ্গমালা ধাইয়া আসে এবং তাহারা মনে করে যে তাহারা (বিপদে) বেষ্টিত হইয়া পড়িয়াছে (তখন) সকলে খাটি বিশ্বাসের সহিত আল্লাহকেই ডাকিতে থাকে, (হে আল্লাহ) আপনি যদি আমাদিগকে ইহা হইতে রক্ষা করেন তবে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞ হইয়া যাইব।
সূরা ইউনুস বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। অর্থাৎ, তোমাদের বাতিল মাবুদের সুফারিশকারী হওয়া অথবা অন্তত:পক্ষে উহার সম্ভাবনা থাকিলে অবশ্যই তাহা আল্লাহর জানা থাকিত। কেননা, তিনি সর্বজ্ঞ। অতএব, খোদার জ্ঞানে যাহা নাই উহার সংঘটন কিংবা সম্ভবনা বাতিল। (ব:কো:)
২। সকলের আদি পিতা হযরত আদম (আ:) এক আল্লাহর বিশ্বাসী ছিলেন। তাহার সন্তানগণও তাহার ন্যায় তাওহীদ পালন করিয়াছে। অত:পর তাহাদের কেহ কেহ নিজেদের বক্র কল্পনার বশে মতভেদ সৃষ্টি করিয়া মুশরিক হইয়া গেল সুতরাং অংশীবাদ নিছক কুসংস্কার প্রসূত অভিনব বস্তু। (ব: কো:)
৩। অর্থাৎ কেবল নুবুওয়াত প্রমাণ করার জন্যই মু‘জেযাহর আবশ্যক হয়। ইহা যেই কোন মু‘জেযাহর দ্বারা সমাধা হইতে পারে তবে ফরমাইশী মু‘জেযাহ প্রকাশ করার কি প্রয়োজন? এই ফরমাইশী মু‘জেযাহ প্রকাশ পাইবে কিনা ইহা কেবল আল্লাহ্ই জানেন। (ব: কো:)
فَلَمَّا أَنجَاهُمْ إِذَا هُمْ يَبْغُونَ فِي الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ ۗ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّمَا بَغْيُكُمْ عَلَىٰ أَنفُسِكُم ۖ مَّتَاعَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ ثُمَّ إِلَيْنَا مَرْجِعُكُمْ فَنُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ
বাংলা অর্থ:
২৩। অনন্তর যখনই আল্লাহ্ তাআলা তাহাদিগকে উদ্ধার করিয়া লন তখনই তাহার ভূপৃষ্ঠে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহাচরণ করিতে থাকে; হে লোকসকল! (শুনিয়া রাখ) তোমাদের এই বিদ্রোহাচরণ তোমাদেরই (প্রাণের) জন্য বিপদ হইবে পার্থিব জীবনে (ইহা দ্বারা কিছু) ফল ভোগ করিতেছ তৎপর আমারই পানে তোমাদের ফিরিয়া আসিতে হইবে, অত:পর আমি তোমাদের যাবতীয় কৃতকর্ম তোমাদিগকে জানাইয়া দিব ।
إِنَّمَا مَثَلُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا كَمَاءٍ أَنزَلْنَاهُ مِنَ السَّمَاءِ فَاخْتَلَطَ بِهِ نَبَاتُ الْأَرْضِ مِمَّا يَأْكُلُ النَّاسُ وَالْأَنْعَامُ حَتَّىٰ إِذَا أَخَذَتِ الْأَرْضُ زُخْرُفَهَا وَازَّيَّنَتْ وَظَنَّ أَهْلُهَا أَنَّهُمْ قَادِرُونَ عَلَيْهَا أَتَاهَا أَمْرُنَا لَيْلًا أَوْ نَهَارًا فَجَعَلْنَاهَا حَصِيدًا كَأَن لَّمْ تَغْنَ بِالْأَمْسِ ۚ كَذَٰلِكَ نُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
বাংলা অর্থ:
২৪। বস্তুত: পার্থিব জীবনের অবস্থা তে এইরূপ যেমন, আমি আসমান হইতে পানি বর্ষণ করিলাম তৎপর উহা (অর্থাৎ পানি) দ্বারা উৎপন্ন হয় যমীনের উদ্ভিদগুলি অতিশয় ঘন হইয়া, যাহা মানুষ এবং পশুরা ভক্ষণ করে; এমনকি যখন সেই যমীন সুদৃশ্যতার পূর্ণ রূপ ধারণ করিল এবং উহা শোভনীয় হইয় উঠিল এবং উহার মালিকের মনে করিল যে, এখন আমরা উহার পূর্ণ অধিকারী হইয়াছি, তখন দিবাকালে অথবা রাত্রিকালে উহার উপর আমার পক্ষ হইতে কোন আপদ আসিয়া পড়িল সুতরাং আমি উহাকে এমন নিশ্চিহ্ন করিয়া দিলাম, যেন গতকল্য ইহার অস্তিত্বই ছিল না। এইরূপেই আয়াতগুলি কে আমি বিশদরূপে বর্ণনা করি এমন লোকদের জন্য যাহারা ভাবিয়া দেখে।
সূরা ইউনুস বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। অর্থাৎ সেই নৌযান গুলির গতিবেগ দেখিয়া আনন্দ উপভোগ করিতে থাকে। (ব:কো:)
২। অর্থাৎ এখন আমাদের বিশ্বাস জন্মিয়াছে যে, এরই আকস্মিক বিপদ হইতে আমাদিগকে রক্ষা করার ক্ষমতা এক আপনি ছাড়া আর কাহারও নাই। সুতরাং আপনি আমাদিগকে এই বিপদ হইতে রক্ষা করিলে আমরা সেই বিশ্বাসে আমরণ বহাল থাকিব। (ব:কো:)
৩। অর্থাৎ পূর্বের ন্যায় সেই শিরক ও অবাধ্যতাচরণে লিপ্ত হইয়া যায়। (ব:কো:)
৪ । পূর্ববতী আয়াতে বলা হইয়াছে কুফর এবং পাপাচার দ্বারা তোমরা কেবল পার্থিব জীবনেই ফলভোগ করিতে পারিবে। কিন্তু পরকালে ইহার শাস্তি ভোগ করিতেই হইবে। এখন এই আয়াতগুলিতে পার্থিব জীবনের অস্থায়ীত্ব এবং পরকালের অনাবিল ও অনন্ত শান্তি এবং পুরস্কারের তফসীলী বর্ণনা হইতেছে। (ব: কো:)
وَاللَّهُ يَدْعُو إِلَىٰ دَارِ السَّلَامِ وَيَهْدِي مَن يَشَاءُ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
বাংলা অর্থ:
২৫। আর আল্লাহ তোমাদিগকে স্থায়ী নিবাসের দিকে আহবান করেন; এবং যাহাকে ইচ্ছা সরল পথে চলিবার ক্ষমতা দান করেন।
لِّلَّذِينَ أَحْسَنُوا الْحُسْنَىٰ وَزِيَادَةٌ ۖ وَلَا يَرْهَقُ وُجُوهَهُمْ قَتَرٌ وَلَا ذِلَّةٌ ۚ أُولَـٰئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
বাংলা অর্থ:
২৬। যাহারা নেক কাজ করিয়াছে (অর্থাৎ ঈমান আনিয়াছে), তাহাদের জন্য উত্তম বস্তু (অর্থাৎ বেহেশত) রহিয়াছে, আর তদুপরি (আল্লাহর দীদার)-ও আর না তাহাদের মুখমন্ডলের উপর মলিনতা আচ্ছন্ন করিবে, আর না অপমান, ইহারাই হইতছে বেহেশতের অধিবাসী, তাহারা উহাতে অনন্তকাল থাকিবে।
وَالَّذِينَ كَسَبُوا السَّيِّئَاتِ جَزَاءُ سَيِّئَةٍ بِمِثْلِهَا وَتَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌ ۖ مَّا لَهُم مِّنَ اللَّهِ مِنْ عَاصِمٍ ۖ كَأَنَّمَا أُغْشِيَتْ وُجُوهُهُمْ قِطَعًا مِّنَ اللَّيْلِ مُظْلِمًا ۚ أُولَـٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
বাংলা অর্থ:
২৭। পক্ষান্তরে যাহারা মন্দ কাজ করিয়াছে তাহারা তাহাদের মন্দ কাজের শাস্তি পাইবে উহার অনুরূপ এবং আপমান তাহাদিগকে আচ্ছাদিত করিয়া লইবে; তাহাদিগকে আল্লাহ্ (-এ আযাব হইতে কেহই রক্ষা করিতে পারিবে না, যেন তাহাদের মুখমন্ডলকে আচ্ছাদিত করিয়া দেওয়া হইয়াছে অন্ধকার রাত্রির পরতসমুহ দ্বারা ইহারা হইতেছে দোযখের অধিবাসী, তাহারা উহাতে অনন্তকাল থাকিবে।
সূরা ইউনুস বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। উপরের আয়াতসমুহে নাফরমান ও অবাধ্য লোকদের বিষয় বর্ণিত হইয়াছে এই আয়াতে মানুষের পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত এই জন্য বর্ণনা করিয়াছেন, যেন অবাধ্য লোকেরা ইহা হইতে এই উপদেশ গ্রহণ করে যে যেই জীবনের ভরসায় তাহারা আল্লাহর নাফরমানী করিতেছে, উহা নিজেই একটি ক্ষণস্থায়ী বস্তু; যেমন মাঠভরা কৃষি মৌসুমকালে খুব সতেজ ও সবুজ হইয়া উঠে কিছুদিন পরে দেখা যায় সেই খানে ধুলি উড়িতেছে। এই রুপে মানব জীবনে আমোদস্ফুর্তির সময় যৌবনকাল। ইহার পর নানা প্রকারে ধ্বংস লক্ষণ প্রকাশ পাইতে থাকে ক্রমে ক্রমে দাঁতগুলি পড়িয়া যায় দৃষ্টি শক্তি দুর্বল হইয়া যায় হাত পা-গুলির তো কেবল আকার অবর্শিষ্ট থাকে, পূর্বের সেই শক্তি থাকে না যেমন এককালে সতেজ বৃক্ষ ছিল অবশেষে শীর্ণ ও ক্ষীণ হইয়া উপড়াইয়া পড়িয়া গেল। (ই:কো:)
وَيَوْمَ نَحْشُرُهُمْ جَمِيعًا ثُمَّ نَقُولُ لِلَّذِينَ أَشْرَكُوا مَكَانَكُمْ أَنتُمْ وَشُرَكَاؤُكُمْ ۚ فَزَيَّلْنَا بَيْنَهُمْ ۖ وَقَالَ شُرَكَاؤُهُم مَّا كُنتُمْ إِيَّانَا تَعْبُدُونَ
বাংলা অর্থ:
২৮। আর সেই দিনটিও উল্লেখযোগ্য-যেদিন আমি উহাদের সকলকে একত্রিত করিব অত:পর মুশরেকদিগকে বলিব তোমরা এবং তোমাদের নিরূপিত শরীকরা স্ব স্ব স্থানে অবস্থান কর অনন্তর আমি তাহাদের মধ্যে পরস্পর বিভদ সৃষ্টি করিয়া দিব এবং তাহাদের সেই শরীকরা বলিবে তোমরা তো আমাদের এবাদত করিতে না।
فَكَفَىٰ بِاللَّهِ شَهِيدًا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ إِن كُنَّا عَنْ عِبَادَتِكُمْ لَغَافِلِينَ
বাংলা অর্থ:
২৯। বস্তুত: আমাদের ও তোমাদের মধ্যে আল্লাহ্ই হইতেছেন যথোপযুক্ত সাক্ষী যে, আমরা তোমাদের এবাদত সম্বন্ধে অবহিত ছিলাম না।
هُنَالِكَ تَبْلُو كُلُّ نَفْسٍ مَّا أَسْلَفَتْ ۚ وَرُدُّوا إِلَى اللَّهِ مَوْلَاهُمُ الْحَقِّ ۖ وَضَلَّ عَنْهُم مَّا كَانُوا يَفْتَرُونَ
বাংলা অর্থ:
৩০। তথায় প্রত্যেক ব্যক্তিই স্বীয় পূর্ব কৃতকর্মগুলি পরীক্ষা করিয়া লইবে এবং তাহাদিগকে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তিত করা হইবে যিনি তাহাদের প্রকৃত মালিক আর যেসব মা‘বুদ গড়িয়া রাখিয়াছিল সকলেই তাহাদিগ হইতে অদৃশ্য হইয়া যাইবে।
قُلْ مَن يَرْزُقُكُم مِّنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ أَمَّن يَمْلِكُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَمَن يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ وَمَن يُدَبِّرُ الْأَمْرَ ۚ فَسَيَقُولُونَ اللَّهُ ۚ فَقُلْ أَفَلَا تَتَّقُونَ
বাংলা অর্থ:
৩১। আপনি বলুন তিনি কে, যিনি তোমাদিগকে আসমান ও যমীন হইতে রিযিক পৌঁছাইয়া থাকেন? অথবা তিনি কে, যিনি কর্ণ ও চক্ষুসমূহের উপর পূর্ণ অধিকার রাখেন? আর তিনি কে, যিনি জীবন্তকে প্রানহীন হইতে বাহির করেন, আর প্রাণহীনকে জীবন্ত হইতে বাহির করেন আর তিনি কে, জিনি সকল কাজ পরিচালনা করেন; তখন অবশ্যই তাহারা ইহাই বলিবে যে, আল্লাহ্ অতএব, আপনি বলুন যে, তবে কেন তোমরা (শিরক হইতে) নিবৃত্ত থাকিতেছ না।
সূরা ইউনুস বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। কেননা এবাদতের উদ্দেশ্য হইল মাবুদকে সন্তুষ্ট করা কিন্তু আমরা তোমাদের এবাদতে মোটেই সন্তুষ্ট ছিলাম না। তোমাদের শিক্ষা গুরু শয়তান অবশ্য ইহাতে সন্তুষ্ট ছিল। অতএব এই হিসাবে বলা যায়, তোমরা তাহাদের উপাসনা করিতে। (ব:কো:)
২। অর্থাৎ হাশরের দিন সকলে জানিতে পারিবে যে, পৃথিবীতে যাহা কিছু তাহারা করিয়াছে তাহা বাস্তবিক পক্ষে উপকারী না অনুপকারী। অবশ্য কবরের মধ্যেও সকলে নিজের কর্মফল কতকটা বুঝিতে পারিব। তবে হাশরের দিন বিশদভাবে জানিতে পারিবে। এই জন্যই হাশরের দিন বুঝিতে পারিবে বলা হইয়াছে। (ব:কো:)
৩। অর্থাৎ আসমান হইতে পানি তদ্দারা যমীন হইতে উদ্ভিদ উৎপন্ন করেন, যাহাতে তোমাদের রিযিকের ব্যবস্থা হয়। (ব:কো:)
৪। অর্থাৎ তিনি এইগুলি পয়দা করিয়াছেন রক্ষণাবেক্ষণ করেন, আবার ইচ্ছা করিলে অকেজো ও করিয়া দেন। (ব:কো:)
فَذَٰلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمُ الْحَقُّ ۖ فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ إِلَّا الضَّلَالُ ۖ فَأَنَّىٰ تُصْرَفُونَ
বাংলা অর্থ:
৩২। সুতরাং তিনিই হইতেছেন আল্লাহ্ যিনি তোমাদের প্রকৃত প্রতিপালক, অতএব সত্যের পর গোমরাহী ব্যতীত আর কি রহিল? তবে তোমরা (সত্যকে ছাড়িয়া) কোথায় ফিরিয়া যাইতেছ।
كَذَٰلِكَ حَقَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ عَلَى الَّذِينَ فَسَقُوا أَنَّهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ
বাংলা অর্থ:
৩৩। এইভাবে ঈমান আনিবে না।
قُلْ هَلْ مِن شُرَكَائِكُم مَّن يَبْدَأُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُ ۚ قُلِ اللَّهُ يَبْدَأُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُ ۖ فَأَنَّىٰ تُؤْفَكُونَ
বাংলা অর্থ:
৩৪। আপনি বলুন যে, তোমাদের (নিরূপিত) শরীকদের মধ্যে এমন কেহ আছে কি? যে প্রথববারেও সৃষ্টি করে, আবার পুর্ববারও সৃষ্টি করে; আপনি বলিয়া দিন, আল্লাহ্ তা‘আলাই প্রথমবারও পয়দা করেন তৎপর তিনিই পুনর্বারও সৃষ্টি করিবেন, অতএব তোমরা (সত্য হইতে) কোথায় ফিরিয়া যাইতেছ?
قُلْ هَلْ مِن شُرَكَائِكُم مَّن يَهْدِي إِلَى الْحَقِّ ۚ قُلِ اللَّهُ يَهْدِي لِلْحَقِّ ۗ أَفَمَن يَهْدِي إِلَى الْحَقِّ أَحَقُّ أَن يُتَّبَعَ أَمَّن لَّا يَهِدِّي إِلَّا أَن يُهْدَىٰ ۖ فَمَا لَكُمْ كَيْفَ تَحْكُمُونَ
বাংলা অর্থ:
৩৫। আপনি বলুন তোমাদের শরীকদের মধ্যে এমন কেহ আছে কি? যে সত্য বিষয়ের সন্ধান দেয়; আপনি বলিয়া দিন যে, আল্লাহ্ই সত্য বিষয়ের পথ প্রদর্শন করেন; তবে কি যে ব্যক্তি সত্য বিষয়ের পথ প্রদর্শন করেন তিনিই অনুসরণ করার সমধিক যোগ্য? অথবা সেই ব্যক্তি যে অন্যের পথ প্রদর্শন করা ব্যতীত নিজেই পথ প্রাপ্ত হয় না তবে তোমাদের কি হইল? তোমরা কিরূপ সিদ্ধান্ত করিতেছ?
وَمَا يَتَّبِعُ أَكْثَرُهُمْ إِلَّا ظَنًّا ۚ إِنَّ الظَّنَّ لَا يُغْنِي مِنَ الْحَقِّ شَيْئًا ۚ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِمَا يَفْعَلُونَ
বাংলা অর্থ:
৩৬। আর তাহাদের অধিকাংশ লোক কেবল অলীক কল্পনার পিছনে চলিতেছে; নিশ্চয়ই অলীক কল্পনা বাস্তব ব্যাপারে মোটেই ফলপ্রসূ নহে; নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা সবই জানেন, যাহাকিছু তাহারা করিতেছে।
সূরা ইউনুস বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। অর্থাৎ এইকথাই যখন সত্য বলিয়া প্রমাণিত হইল যে, তিনিই একমাত্র মা‘বুদ যিনি প্রতিপালক। সুতরাং এই সত্যের যাহা বিপরীত অর্থাৎ শিরক তাহা গোমরাহী ছাড়া আর কি হইবে? (ব:কো:)
২। উপরে তাওহীদের বর্ণনা করা হইয়াছে অত:পর হুযূর (দ:) কে সান্ত¡না প্রদান করা হইতেছে যে, এই কাফেরদের পথ-ভ্রষ্টতা এবং অবাধ্যতাচরণে আপনি চিন্তিত হইবেন না। ইহাদের ঈমান আনয়ন না করা কোন অভিনব ব্যাপার নহে। এই ভাবে ঈমান আনিবে না বলিয়া এক শ্রেণীর লোক সম্বন্ধে আদিকাল হইতেই আপনার প্রভুর কথা প্রামাণিত হইয়া রহিয়াছে। তবে আর আপনি ভাবাতুর কেন হইবেন? (ব:কো:)
৩। যেমন, তিনি মানুষকে বিবেক-বুদ্ধি দান করিয়াছেন, তাহাদের জন্য পথ-প্রদর্শকরূপে পয়গম্বর পাঠাইয়াছেন। (ব:কো:)
وَمَا كَانَ هَـٰذَا الْقُرْآنُ أَن يُفْتَرَىٰ مِن دُونِ اللَّهِ وَلَـٰكِن تَصْدِيقَ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيلَ الْكِتَابِ لَا رَيْبَ فِيهِ مِن رَّبِّ الْعَالَمِينَ
বাংলা অর্থ:
৩৭। আর এই কোরআন কল্পনাপ্রসূত নহে যে, আল্লাহ্ ভিন্ন অন্য কাহারও দ্বারা প্রকাশিত হইয়াছে বরং ইহা তো সেই কিতাবসমূহের সত্যতা প্রমাণকারী যাহা ইহার পূর্বে (নাযিল) হইয়াছে এবং আবশ্যকীয় বিধানসমূহের তফছীল বর্ণনাকারী, (এবং) ইহাতে কোন সন্দেহ নাই (ইহা) রাব্বুল আলামীনের পক্ষ হইতে (নাযিল) হইয়াছে।
أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ ۖ قُلْ فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِّثْلِهِ وَادْعُوا مَنِ اسْتَطَعْتُم مِّن دُونِ اللَّهِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ
বাংলা অর্থ:
৩৮। তাহারা কি এরূপ বলে যে, ইহা আপনার স্বরচিত? আপনি বলিয়া দিন তবে তোমরা ইহার অনুরূপ একটি সূরা-ই আনয়ন কর এবং গায়রুল্লাহ হইতে যাহাদের কে লইতে পার ডাকিয়া লও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।
بَلْ كَذَّبُوا بِمَا لَمْ يُحِيطُوا بِعِلْمِهِ وَلَمَّا يَأْتِهِمْ تَأْوِيلُهُ ۚ كَذَٰلِكَ كَذَّبَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ ۖ فَانظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الظَّالِمِينَ
বাংলা অর্থ:
৩৯। বরং তাহারা এমন বিষয়কে মিথ্যা সাব্যস্ত করিতেছে যাহাকে নিজ জ্ঞানের বেষ্টনে আনয়ন করে নাই, আর এখনও তাহাদের প্রতি উহার পরিণাম (আযাব) পৌছে নাই; এইরূপ ভাবে তাহারও মিথ্যা সাব্যস্ত করিয়াছিল, যাহারা তাহাদের পূর্বে গত হইয়াছে অতএব, দেখুন সেই যালেমদে পরিণাম কি হইল।
وَمِنْهُم مَّن يُؤْمِنُ بِهِ وَمِنْهُم مَّن لَّا يُؤْمِنُ بِهِ ۚ وَرَبُّكَ أَعْلَمُ بِالْمُفْسِدِينَ
বাংলা অর্থ:
৪০। আর তাহাদের মধ্যে এমন কতক লোক আছে যাহারা ইহার প্রতি ঈমান আনিবে এবং এমন কতক লোকও আছে যে ইহা প্রতি ঈমান আনবে না আর আপনার প্রতিপালক অনাচারীদিগকে ভালরূপে জানেন।
وَإِن كَذَّبُوكَ فَقُل لِّي عَمَلِي وَلَكُمْ عَمَلُكُمْ ۖ أَنتُم بَرِيئُونَ مِمَّا أَعْمَلُ وَأَنَا بَرِيءٌ مِّمَّا تَعْمَلُونَ
বাংলা অর্থ:
৪১। আর (এতদসত্ত্বেও) যদি তাহার আপনাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করিতে থাকে তবে বলিয়া দিন, আমার কর্মফল আমি পাইব, তোমরা তো আমার কৃতকর্মের জবাবদিহি নও, আর আমিও তোমাদের কর্মের জবাব দিহি নই।
وَمِنْهُم مَّن يَسْتَمِعُونَ إِلَيْكَ ۚ أَفَأَنتَ تُسْمِعُ الصُّمَّ وَلَوْ كَانُوا لَا يَعْقِلُونَ
বাংলা অর্থ:
৪২। আর তাহাদের কতক এমন (-ও) আছে যাহারা আপনার (কথার) প্রতি কান পাতিয়া রাখে তব কি আপনি বধিরদিগকে শুনাইতেছেন? যদিও তাহাদের বোধশক্তি না থাকে।
সূরা ইউনুস বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। এইখানে কেহ তর্ক উত্থাপন করিতে পারে যে, কোন কোন লোকের মধ্যে এমন বৈশিষ্ট্য থাকে যাহা অন্যের মধ্যে থাকে না। কাজেই কোরআনের ন্যায় রচনা অন্য কেহ করিতে না পারিলেই তাহা হযরতের রচনা নহে বলিয়া কেমন করিয়া প্রমাণিত হইল? ইহার উত্তরে বলা যাইবে যে, কোরআন তাঁহার রচনা হইলে কোরআনের বৈশিষ্ট্য তাঁহার জীবনের অন্য কোন কথায় তো দেখা যায় না। দ্বিতীয়ত: কোরআন হযরতেরই রচনা বৈশিষ্ট্য হইলে সকল সময়েই এই বৈশিষ্ট্য থাকিত। চল্লিশ বৎসরের পর হঠাৎ প্রকাশ পাইত না। তৃতীয়ত: তাঁহার রচনায় যত বড় বৈশিষ্ট্যই থাকুক না কেন ভাষা-বিশারদগন অন্তত:পক্ষে উহার কিছু অংশের অনুকরণ করিত পারে। এইখানে তো শুধু যেই কোন একটি সূরার অনুকরণ করিতে বলা হইয়াছে। কোন নির্দিষ্ট সূরার অনুকরণ করিতে বলা হয় নাই। অতএব, যে কোন একটি ক্ষুদ্র ও সহজ সূরার অনুরূপ রচনা করিতে পারা তাহাদের উচিত ছিল; কিন্তু তাহাও পারে নাই। সুতরাং কোরআন খোদারই কালাম, অন্য কাহারও কালাম নহে। (ব: কো:)
وَمِنْهُم مَّن يَنظُرُ إِلَيْكَ ۚ أَفَأَنتَ تَهْدِي الْعُمْيَ وَلَوْ كَانُوا لَا يُبْصِرُونَ
বাংলা অর্থ:
৪৩। আর উহাদের কতক এমন (-ও) আছে যাহারা আপনাকে দেখিতেছে তবে কি আপনি অন্ধকে পথ দেখাইতে চাহিতেছেন যদিও তাহাদের অন্তদৃষ্টি না থাকে।
إِنَّ اللَّهَ لَا يَظْلِمُ النَّاسَ شَيْئًا وَلَـٰكِنَّ النَّاسَ أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ
বাংলা অর্থ:
৪৪। ইহা স্থির নিশ্চিত যে আল্লাহ্ মানুষের প্রতি জুলুম করেন না পরন্তু মানুষ নিজেরাই নিজেদের কে ধ্বংস করিতেছে।
وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ كَأَن لَّمْ يَلْبَثُوا إِلَّا سَاعَةً مِّنَ النَّهَارِ يَتَعَارَفُونَ بَيْنَهُمْ ۚ قَدْ خَسِرَ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِلِقَاءِ اللَّهِ وَمَا كَانُوا مُهْتَدِينَ
বাংলা অর্থ:
৪৫। আর সেই দিনটি তাহাদিগকে স্মরণ করাইয়া দিন, যে-দিন তাহাদিগকে এইরূপ অবস্থায় একত্রিত করিবেন-যেন তাহার পূর্ণ দিবসের মুহূর্তকাল মাত্র অবস্থান করিয়াছিল, এবং তাহারা পরস্পর এক অপরকে চিনিবে; বাস্তবিক ক্ষতিগ্রস্ত হইল সেই সকল লোক যাহারা রবের দরবারে উপস্থিত হওয়াকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করিয়াছে এবং তাহারা হেদায়ত প্রাপ্ত ছিল না।
وَإِمَّا نُرِيَنَّكَ بَعْضَ الَّذِي نَعِدُهُمْ أَوْ نَتَوَفَّيَنَّكَ فَإِلَيْنَا مَرْجِعُهُمْ ثُمَّ اللَّهُ شَهِيدٌ عَلَىٰ مَا يَفْعَلُونَوَإِمَّا نُرِيَنَّكَ بَعْضَ الَّذِي نَعِدُهُمْ أَوْ نَتَوَفَّيَنَّكَ فَإِلَيْنَا مَرْجِعُهُمْ ثُمَّ اللَّهُ شَهِيدٌ عَلَىٰ مَا يَفْعَلُونَ
বাংলা অর্থ:
৪৬। আর আমি তাহাদের সহিত যে শাস্তির অঙ্গীকার করিতেছি যদি উহার সামান্য অংশও আপনাকে দেখাইয়া দেই অথবা আপনাকে মৃত্যু দান করি-সর্বাবস্থায় তাহাদিগকে আমারই পানে আসতে হইবে আর তাহাদের সকল কৃতকর্মেরই খবর রাখেন।
وَلِكُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولٌ ۖ فَإِذَا جَاءَ رَسُولُهُمْ قُضِيَ بَيْنَهُم بِالْقِسْطِ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ
বাংলা অর্থ:
৪৭। আর প্রত্যেক উম্মতের জন্য এক একজন রাসূল রহিয়াছেন, সুতরাং তাহাদের সেই রাসূল যখন আসিয়া পড়েন (তখন) তাহাদের মীমাংসা করা হয় ন্যায়ভাবে আর তাহাদের প্রতি অবিচার কর হয় না।
وَيَقُولُونَ مَتَىٰ هَـٰذَا الْوَعْدُ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ
৪৮। আর তাহারা বলে, (আযাবের) এই অঙ্গীকার কখন (সংঘটিত) হইবে? যদি তোমরা সত্যবাদী হইয়া থাক।
সূরা ইউনুস বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। অর্থাৎ আপনার কথা শুনার ভান কর; কিন্তু তাহাদের অন্তরে সত্যাম্বেষণ ও ঈমান আনয়নের ইচ্ছা থাকে না। এই হিসাবে তাহাদের শুনা না শুনা উভয়ই সমান। এতএব তাহাদের অবস্থা প্রকারান্তরে বধিরেই মত হইল। (ব:কো:)
২। অন্তর-দৃষ্টি থাকিলে অবশ্য বাহিক্য দৃষ্টি না থাকা সত্ত্বেও কিছু কাজ হইত। তাহাদের জ্ঞানচক্ষু না থাকার মধ্যে আল্লাহর কোন দোষ নাই। কেননা তিনি হেদায়েত প্রাপ্তির ক্ষমতা না দিয়েই কোন মানুষকে বিচারে দোষী করেন না কিন্তু এই ব্যাপারে মানুষেরই দোষ। যে খোদা দত্ত যোগ্যতা ও বিবেক বুদ্ধি কে কাজে না লাগাইয়া অকেজো করিয়া রাখে। (ব:কো:)
قُل لَّا أَمْلِكُ لِنَفْسِي ضَرًّا وَلَا نَفْعًا إِلَّا مَا شَاءَ اللَّهُ ۗ لِكُلِّ أُمَّةٍ أَجَلٌ ۚ إِذَا جَاءَ أَجَلُهُمْ فَلَا يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً ۖ وَلَا يَسْتَقْدِمُونَ
বাংলা অর্থ:
৪৯। আপনি বলিয়া দিন, আমি তো আমার নিজের জন্যও কোন উপকার বা ক্ষতির অধিকারী নহি, কিন্তু যতটুকু আল্লাহ চাহেন; প্রত্যেক উম্মুতের (আযাবের) জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় আছে; যখন তাহাদের সেই নির্দিষ্ট সময় আসিয়া পৌছে, তখন তাহার মুহূর্তকাল না পশ্চাদপদ হইতে পারিবে আর না অগ্রসর হইতে পারিবে।
قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ أَتَاكُمْ عَذَابُهُ بَيَاتًا أَوْ نَهَارًا مَّاذَا يَسْتَعْجِلُ مِنْهُ الْمُجْرِمُونَ
বাংলা অর্থ:
৫০। আপনি বলিয়া দিন বল তো যদি তোমাদের উপর আল্লাহর আযাব রাত্রিকালে অথবা দিবাভাগে আসিয়া পড়ে তবে আযাবের মধ্যে এমন কোন জিনিস রহিয়াছে যে, অপরাধীগণ উহাকে তাড়াতাড়ি চাহিতেছে?
أَثُمَّ إِذَا مَا وَقَعَ آمَنتُم بِهِ ۚ آلْآنَ وَقَدْ كُنتُم بِهِ تَسْتَعْجِلُونَ
বাংলা অর্থ:
৫১। তবে কি যখন উহা আসিয়া পড়িবে তখন উহা বিশ্বাস করিবে? (বলা হইবে) হ্যাঁ এখন মানিলে, অথচ তোমরা উহার তাড়া করিতেছিলে ।
ثُمَّ قِيلَ لِلَّذِينَ ظَلَمُوا ذُوقُوا عَذَابَ الْخُلْدِ هَلْ تُجْزَوْنَ إِلَّا بِمَا كُنتُمْ تَكْسِبُونَ
বাংলা অর্থ:
৫২। অত:পর যালেমদিগকে বলা হইবে, চিরস্থায়ী আযাব গ্রহণ করিতে থাক, তোমরা তো তোমাদেরই কৃতকর্মের ফল পাইয়াছ।
وَيَسْتَنبِئُونَكَ أَحَقٌّ هُوَ ۖ قُلْ إِي وَرَبِّي إِنَّهُ لَحَقٌّ ۖ وَمَا أَنتُم بِمُعْجِزِينَ
বাংলা অর্থ:
৫৩। আর তাহারা আপনার নিকট জিজ্ঞাসা করে যে, আযাব কি যথার্থ বিষয়? আপনি বলিয়া দিন যে, হ্যাঁ, আমার রব্বের কসম! উহা নিশ্চিত সত্য আর তোমরা কিছুতেই আল্লাহকে অক্ষম করিতে পারিবে না।
وَلَوْ أَنَّ لِكُلِّ نَفْسٍ ظَلَمَتْ مَا فِي الْأَرْضِ لَافْتَدَتْ بِهِ ۗ وَأَسَرُّوا النَّدَامَةَ لَمَّا رَأَوُا الْعَذَابَ ۖ وَقُضِيَ بَيْنَهُم بِالْقِسْطِ ۚ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ
বাংলা অর্থ:
৫৪। আর যদি প্রত্যেক মুশরেকের নিকট এই পরিমাণ (মাল) থাকে যে, সমগ্র পৃথিবীর সমপরিমাণ হইয়া যায় তবে সে তাহা দান করিয়াও নিজের প্রাণ রক্ষা করিতে উদ্যত হইবে; এবং যখন তাহার আযাব দেখিতে পাইবে তখন (নিজেদের) মনস্তাপকে গোপন রাখিবে আর তাহাদের ফয়সালা করা হইবে ন্যায়ভাবে এবং তাহাদের উপর অবিচার হইবে না।
সূরা ইউনুস বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। অর্থাৎ আমি যখন নিজের লাভ বা লোকসানের মালিক নই, তখন অন্যের লাভ বা লেকাসানের মালিক কেমন করিয়া হইব? আযাব আনয়নের কাজ আমার অধিকার নহে। উহা যখন আসিবে, খোদার ইচ্ছায় আসিবে। প্রত্যেক সম্প্রদায়ের শাস্তির জন্য খোদার নিকট একটি নির্দিষ্ট সময় রহিয়াছে। তাহা দুনিয়াতেও হইতে পারে, আখেরাতেও হইতে পারে। (ব:কো:)
২। অর্থাৎ, সেই সময়ে বিশ্বাস করাতে কোনই উপকার হইবে না। (ব:কো:)
৩। অর্থাৎ, আল্লাহ্ পাক তোমাদিগকে শাস্তি দিতে চাহিলে তোমরা শাস্তি ঠেকাইয়া রাখতে পারিবে না। (ব:কো:)
৪। অর্থাৎ কাফেরেরা মুখে অথবা কাজে অনুশোচনা প্রকাশ পাইতে দিবে না যাহাতে দর্শকদের নিকট অধিকতার হাস্যাস্পদ হইতে না হয়; কিন্তু তাহাদের এই ধৈর্য্য ও আত্মসংবরণ ক্ষণস্থায়ী হইবে। (ব:কো:)
أَلَا إِنَّ لِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۗ أَلَا إِنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ
বাংলা অর্থ:
৫৫। স্মরণ রাখিও যে, সবই আল্লাহর স্বত্ব যাহাকিছু আসমান সমূহে এবং যমীনে রহিয়াছে স্মরণ রাখিও যে, আল্লাহর অঙ্গীকার সত্য কিন্তু অধিকাংশ লোকই বিশ্বাস করে না।
هُوَ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ
বাংলা অর্থ:
৫৬। তিনিই জীবন দান করেন এবং তিনিই মৃত্যু ঘটান, আর তোমরা সকলে তাহারই পানে প্রত্যাবর্তিত হইবে।
يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُم مَّوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِّمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ
বাংলা অর্থ:
৫৭। হে মানব জাতি! তোমাদের নিকট তোমাদের রব্বের তরফ হইতে এমন এক বস্তু সমাগত হইয়াছে যাহা হইতেছে নসীহত এবং অন্তরসমূহের সকল রোগের আরোগ্যকারী আর উহা পথপ্রদর্শক ও রহমত মু’মেনদের জন্য।
قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ
বাংলা অর্থ:
৫৮। আপনি বলিয়া দিন যে, আল্লাহর এই দান ও রহমতের প্রতি সকলেরই আনন্দিত হওয়া উচিত; তাহা ইহা (অর্থাৎ পার্থিব সম্পদ) হইতে বহু গুণে উত্তম যাহা তাহারা সঞ্চয় করিতেছে।
قُلْ أَرَأَيْتُم مَّا أَنزَلَ اللَّهُ لَكُم مِّن رِّزْقٍ فَجَعَلْتُم مِّنْهُ حَرَامًا وَحَلَالًا قُلْ آللَّهُ أَذِنَ لَكُمْ ۖ أَمْ عَلَى اللَّهِ تَفْتَرُونَ
বাংলা অর্থ:
৫৯। আপনি বলুন, ইহা বল তো আল্লাহ্ তোমাদের জন্য যাহাকিছু রিযক পাঠাইয়াছিলেন, অত:পর তোমরা উহার কতক অংশ হারাম এবং কতক অংশ হালাল সাব্যস্ত করিয়া লইলে আপনি জিজ্ঞাসা করুন যে, আল্লাহ্ কি তোমাদিগকে নির্দেশ দিয়াছেন নাকি তোমরা আল্লাহ্ তাআলার উপর মিথ্যা আরোপ করিতেছ?
وَمَا ظَنُّ الَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَذُو فَضْلٍ عَلَى النَّاسِ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَشْكُرُونَ
বাংলা অর্থ:
৬০। আর যাহারা আল্লাহ্ তা‘আলার উপর মিথ্যা আরোপ করে তাহাদের কিয়ামত দিবস সম্বন্ধে কি ধারণা? বাস্তবিক মানুষের উপর আল্লাহ্ তা‘আলার অতিশয় অনুগ্রহ রহিয়াছে কিন্তু অধিকাংশ লোকই অকৃতজ্ঞ।
সূরা ইউনুস বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। অর্থাৎ পাপ-কার্য দ্বারা মানুষের হৃদয়ে যেই কলুষতা ও মলিনতা দেখা দেয়, কোরআনের নছীহত মোতাবেক আমল করিলে সেই কলুষতা বিদুরিত হইয়া থাকে। (ব:কো:)
২। কোরআন শরীফ যদিও সমগ্র মানব সমাজকেই সত্য ধর্মের প্রতি আহবান করিতছে: কিন্তু কার্যত: কেবল মুমিন সম্প্রদায়ই উহা অনুযায়ী আমল করিয়া উপকৃত হয়। এই হিসাবে ইহাকে কেবল মুমিনদের জন্য রহমত বলা হইয়াছে। (ব:কো:)
৩। যেমন, বাহীরা সায়েবাহ হামী ইত্যাদি নাম দিয়া হালাল চতুষ্পদ পশুগুলিকে কতিপয়ের জন্য হালাল এবং কতিপয়ের জন্য হারাম সাব্যস্ত করিয়া লইয়াছে। (ব:কো:)
৪। তাহাদের নির্ভীক ও যথেচ্ছা আচরণে বুঝা যায় যে, তাহারা বিশ্বাস করে যে ক্বিয়ামত হইলেও তাহাদের কোন হিসাব দিতে হইবে না। (ব:কো:)
وَمَا تَكُونُ فِي شَأْنٍ وَمَا تَتْلُو مِنْهُ مِن قُرْآنٍ وَلَا تَعْمَلُونَ مِنْ عَمَلٍ إِلَّا كُنَّا عَلَيْكُمْ شُهُودًا إِذْ تُفِيضُونَ فِيهِ ۚ وَمَا يَعْزُبُ عَن رَّبِّكَ مِن مِّثْقَالِ ذَرَّةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَلَا أَصْغَرَ مِن ذَٰلِكَ وَلَا أَكْبَرَ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ
বাংলা অর্থ:
৬১। আর আপনি যে অবস্থায়ই থাকুন না কেন আর সেই অবস্থাগুলির অন্তর্গত ইহাও যে, আপনি (রাসূল) যে কোন স্থান হইতে কোরআন পাঠ করুন আর তোমরা (অন্যান্য লোক) যে কাজই কর, আমার সব কিছুরই খবর থাকে, যখন তোমরা সেই কাজ করিতে আরম্ভ কর; আর কণা পরিমাণও কোন বস্তু আপনার প্রতিপালকের (জ্ঞানের) অগোচর নহে-না যমীনে আর না আসমানে, আর না কোন বস্তু তাহা হইতে ক্ষুদ্রতর আর না তাহা হইতে বৃহত্তর কিন্তু এই সমস্তই কিতাবে মুবীনে লিপিবন্ধ রহিয়াছে।
أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
বাংলা অর্থ:
৬২। মনে রাখিও আল্লাহর দোস্তদের না কোন আশঙ্কা আছে আর না তাহার বিষণ্ণ হইবে।
الَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ
বাংলা অর্থ:
৬৩। তাহারা হইতেছে সেই লোক যাহারা ঈমান আনিয়াছে এবং (গুনাহ হইতে) পরহেয করিয়া থাকে;
لَهُمُ الْبُشْرَىٰ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ ۚ لَا تَبْدِيلَ لِكَلِمَاتِ اللَّهِ ۚ ذَٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
বাংলা অর্থ:
৬৪। তাহাদের জন্য সুসংবাদ রহিয়াছে পার্থিব জীবনে এবং পরকালে আল্লাহর বাক্যসমূহে কোন পরিবর্তন হয় না, ইহা হইতেছে বিরাট সফলতা;
وَلَا يَحْزُنكَ قَوْلُهُمْ ۘ إِنَّ الْعِزَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا ۚ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
বাংলা অর্থ:
৬৫। আর আপনাকে যেন তাহাদের উক্তিগুলি বিষণ্ণ না করে। সকল ক্ষমতা আল্লাহ্ তা‘আলারই জন্য রহিয়াছে; তিনি শুনেন জানেন।
أَلَا إِنَّ لِلَّهِ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَمَن فِي الْأَرْضِ ۗ وَمَا يَتَّبِعُ الَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ شُرَكَاءَ ۚ إِن يَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ وَإِنْ هُمْ إِلَّا يَخْرُصُونَ
বাংলা অর্থ:
৬৬। মনে রাখিও যতকিছু আসমানসমূহে আছে এবং যতকিছু যমীনে আছে এই সমস্তই আল্লাহর; আর যাহারা আল্লাহ কে ছাড়িয়া অন্য শরীকদের এবাদত করে তাহারা কোন বস্তুর অনুসরণ করিতেছে? কেবল অবাস্তব খেয়ালের তাবেদীর করিয়া চলিতেছে এবং শুধু অনুমানপ্রসুত কথা বলিতেছে।
সূরা ইউনুস বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। এই স্থলে ইহার অর্থ পার্থিব বিষয়ের ভয় ও ভাবনা। মুমিনদের শক্র তো আছেই কাজেই তাহাদের মনে শত্রুর ভয় এবং চিন্তা থাকা বিচিত্র নহে। আল্লাহ্ পাক এই সম্বন্ধে বলিয়া দিলেন যে, কামেল মুমিনের মনে কখনও ভয় ও ভাবনা আসে না। কেননা, সবাবস্থায় খোদার উপর তাহাদের পূর্ণ নির্ভর থাকে। তাহাদের এই বিশ্বাসও আছে যে, প্রত্যেক ঘটনার মধ্যেই কোন না কোন হেকমত এবং রহস্য নিহিত আছে যাহারা মানুষ দেখে না বা বুঝে না। অতএব, যে কোন অবস্থার সম্মুখীন হউক, তাহার উহাকে মঙ্গলজনক বলিয়াই মনে করে। (ব:কো:)
২। নেককার বান্দাদিগকে অভয় এবং নিশ্চিন্ততার খোশ-খবর দেওয়ার পর হুযূরকে সান্ত¡না দেওয়া হইতেছে যে, আপনি যখন এই খোশ-খবর জানিতে পারিলেন, তখন আপনি কাফেরদের কুফরী কথা-বার্তা এবং অবাধ্যতাচরণে মন:ক্ষুণ্ণ হইবেন না। (ব:কো 🙂
هُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ لِتَسْكُنُوا فِيهِ وَالنَّهَارَ مُبْصِرًا ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَسْمَعُونَ
বাংলা অর্থ:
৬৭। তিনি এমন যিনি তোমাদের জন্য রাত্রি বানাইয়াছেন, যেন তোমরা উহাতে স্বস্তি লাভ কর, আর দিবসকেও এই ভাবে সৃষ্টি করিয়াছেন যে, উহা হইতেছে দেখাশুনার উপকরণ; উহাতে (তওহীদের) প্রমাণসমূহ রহিয়াছে তাহাদের জন্য যাহারা শুনে।
قَالُوا اتَّخَذَ اللَّهُ وَلَدًا ۗ سُبْحَانَهُ ۖ هُوَ الْغَنِيُّ ۖ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۚ إِنْ عِندَكُم مِّن سُلْطَانٍ بِهَـٰذَا ۚ أَتَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ
বাংলা অর্থ:
৬৮। তাহারা বলে, আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তান আছে, সোবহানাল্লাহ! তিনি তো কাহারও মুখাপেক্ষী নহেন; তাঁহারই স্বত্বে রহিয়াছে যাহাকিছু আসমানসমূহে এবং যাহাকিছু যমীনে আছে; তোমাদের নিকট ইহার (উক্ত দাবীর) কোন প্রমাণ (-ও) নাই; আল্লাহ্ তা‘আলার সম্বন্ধে কি তোমরা এমন কথা আরোপ করিতেছ যাহা তোমাদের জানা নাই?
قُلْ إِنَّ الَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ لَا يُفْلِحُونَ
বাংলা অর্থ:
৬৯। আপনি বলিয়া দিন, যাহারা আল্লাহর উপর মিথ্যা রচনা করে তাহারা সফলকাম হইবে না।
مَتَاعٌ فِي الدُّنْيَا ثُمَّ إِلَيْنَا مَرْجِعُهُمْ ثُمَّ نُذِيقُهُمُ الْعَذَابَ الشَّدِيدَ بِمَا كَانُوا يَكْفُرُونَ
বাংলা অর্থ:
৭০। ইহা দুনিয়ার সামান্য আয়েশ-আরাম মাত্র, তৎপর আমারই দিকে তাহাদের আসিতে হইবে, তখন আমি তাহাদিগকে তাহাদের কুফরের বিনিময়ে কঠিন শাস্তি ভোগ করাইবো।
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ نُوحٍ إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ يَا قَوْمِ إِن كَانَ كَبُرَ عَلَيْكُم مَّقَامِي وَتَذْكِيرِي بِآيَاتِ اللَّهِ فَعَلَى اللَّهِ تَوَكَّلْتُ فَأَجْمِعُوا أَمْرَكُمْ وَشُرَكَاءَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُنْ أَمْرُكُمْ عَلَيْكُمْ غُمَّةً ثُمَّ اقْضُوا إِلَيَّ وَلَا تُنظِرُونِ
বাংলা অর্থ:
৭১। আর আপনি তাহাদিগকে নূহের ইতিবৃত্ত পড়িয়া শুনান। যখন তিনি নিজের কাওমেকে বলিলেন, হে আমার কাওম! যদি তোমাদের নিকট দুর্বহ মনে হয় আমার অবস্থান এবং আল্লাহর আদেশাবলীর নসীহত করা তবে আমার তো আল্লাহরই উপর ভরসা, সুতরাং তোমরা তোমাদের (কল্পিত) শরীকদেরকে সঙ্গে লইয়া নিজেদের তদবীর মযবূত করিয়া লও, অত:পর তোমাদের সেই তদবীর যেন তোমাদের দুশ্চিন্তা (গোপন ষড়যন্ত্র) এর কারণ না হয়, তারপর আমার সহিত (যাহা করিতে চাও) করিয়া ফেল আর আমাকে (মোটেই) অবকাশ দিও না।
সূরা ইউনুস বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। অর্থাৎ দুর্বল হইলেও সন্তানের কামনা হয়, সন্তানের সাহায্যে সবল হইবে। অভাবগ্রস্ত হইলে সন্তানের কামনা হয়, সন্তানের উপার্জনে অভাব দূরীভূত হইবে। কিংবা হীন ও লাঞ্ছিত হইলে সন্তানের আকাঙ্খা হয়, সন্তানের ওসীলায় সবল ও অভাবহীন হইবে। ইহার সবগুলিই অভাবগ্রস্ত হওয়ার লক্ষণ, অথচ আল্লাহ্ সম্পূর্ণরূপে অভাবশূন্য। কাজেই তাহার সন্তান গ্রহণের কোনই প্রয়োজন নাই।(মু:কো:)
এতদ্ভিন্ন আল্লাহ্ হইলেন মালিক, আর যাবতীয় বস্তু তাঁহার সত্বাধীন। ব্যক্তিত্বে ও গুণাবলীতে কেহই তাঁহার সমকক্ষ নহে। অথচ সন্তান হইলে অবশ্যই তদনুরূপ হইতে হইবে; কিন্তু খোদার অনুরূপ কোন কিছুই নাই। অতএব, খোদার সন্তান হওয়া কোনরূপেই সম্ভব নহে।(ব:কো:)
২। অর্থাৎ এখন তোমরা আমার অনিষ্ট সাধনের জন্য গোপনে তদবীর করিতেছ। গোপন তদবীর করিতে গেলে অনেক সময়ে মনে উদ্বেগ হয়। অতএব, গোপনে না করিয়া মন খুলিয়া প্রকাশেই সর্ব প্রকার তদবীর করিতে থাক। (ব:কো:)
فَإِن تَوَلَّيْتُمْ فَمَا سَأَلْتُكُم مِّنْ أَجْرٍ ۖ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَى اللَّهِ ۖ وَأُمِرْتُ أَنْ أَكُونَ مِنَ الْمُسْلِمِينَ
বাংলা অর্থ:
৭২। তৎপর ও যদি তোমরা পরাক্ষমুখই থাক, তবে আমি তো তোমাদের নিকট কোন পারিশ্রমিক চাহি নাই; আমার পারিশ্রমিক তো কেবল আল্লাহ্ই যিম্মায় রহিয়াছে, আর আমাকে হুকুম করা হইয়াছে যে আমি যেন অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত থাকি।
فَكَذَّبُوهُ فَنَجَّيْنَاهُ وَمَن مَّعَهُ فِي الْفُلْكِ وَجَعَلْنَاهُمْ خَلَائِفَ وَأَغْرَقْنَا الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا ۖ فَانظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُنذَرِينَ
বাংলা অর্থ:
৭৩। অনন্তর তাহারা তাঁহাকে ঝটলাইতে থাকে, অতএব, আমি তাঁহাকে আর যাহারা তাঁহার সঙ্গে নৌকায় ছিল তাহাদিগকে নাজাত দিলাম এবং তাহাদিগকে আবাদ করিলাম আর যাহার আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা সাব্যস্ত করিয়াছিল তাহাদিগকে নিমজ্জিত করিয়া দিলাম, অতএব দেখ, কি পরিণাম হইয়াছিল তাহাদের যাহাদিগকে ভীতি প্রদর্শন করা হইয়াছিল।
ثُمَّ بَعَثْنَا مِن بَعْدِهِ رُسُلًا إِلَىٰ قَوْمِهِمْ فَجَاءُوهُم بِالْبَيِّنَاتِ فَمَا كَانُوا لِيُؤْمِنُوا بِمَا كَذَّبُوا بِهِ مِن قَبْلُ ۚ كَذَٰلِكَ نَطْبَعُ عَلَىٰ قُلُوبِ الْمُعْتَدِينَ
বাংলা অর্থ:
৭৪। আবার আমি নূহের পরে অপর নবীগণকে তাহাদের কাওমের নিকট প্রেরণ করিলাম সুতরাং তাহারা তাহাদের নিকট মু‘জেযাসমূহ লইয়া আসিলেন, এতদসত্ত্বেও ইহা হইল না যে, তাহারা যেই বস্তুকে পূর্বে মিথ্যা সাব্যস্ত করিয়াছিল পরে উহা মানিয়া লয়; এইভাবেই আল্লাহ্ তা‘আলা কাফেরদের অন্তসমূহের উপর মোহর লাগাইয়া দেন।
ثُمَّ بَعَثْنَا مِن بَعْدِهِم مُّوسَىٰ وَهَارُونَ إِلَىٰ فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِ بِآيَاتِنَا فَاسْتَكْبَرُوا وَكَانُوا قَوْمًا مُّجْرِمِينَ
বাংলা অর্থ:
৭৫। অত:পর আমি এই রাসূলগণের পর মূসা ও হারূনকে আমার মু‘জেযাসমূহ সহকারে ফেরআঊন ও তাহার প্রধানদের নিকট পাঠাইলাম, অনন্তর তাহারা অহংকার করিল, আর সেই লোকগুলি ছিল পাপপরায়ণ।
فَلَمَّا جَاءَهُمُ الْحَقُّ مِنْ عِندِنَا قَالُوا إِنَّ هَـٰذَا لَسِحْرٌ مُّبِينٌ
বাংলা অর্থ:
৭৬। অত:পর যখন তাহাদের প্রতি আমার সন্নিধান হইতে প্রমাণ পৌছিল, তখন তাহারা বলিতে লাগিল, নিশ্চয়ই ইহা সুস্পস্ট জাদু।
সূরা ইউনুস বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। এই আয়াতে তাঁহার লালসাহীনতার কথা ব্যক্ত করা হইতেছে। (ব:কো:)
২। অর্থাৎ নূহের ক্বওমকে অসাবধান অবস্থায় হঠাৎ ধ্বংস করা হয় নায়; বরং প্রথমে তাহাদিগকে সমঝইয়া সাবধান করিয়া দেওয়া হইয়াছিল। ইহার পরেও যখন তাহারা সুপথে আসে নাই, তখনই তাহাদিগকে ধ্বংস করা হইয়াছে।(ব:কো:)
৩। উক্ত মুজেযাহ ছিল, হযরত মূসার লাঠি এবং তাহার জ্যোতি প্রকাশক হাত। (ব:কো:)
৪। অর্থাৎ ফেরআঊনের ক্বওম এই মু‘জেযাহ গুলিকে বিশ্বাস করিল না, বরং উহার প্রতিবাদ করিয়া আত্মম্ভরিতা দেখাইল, সত্যোদ্ধারের জন্য তাহার মোটেই চেষ্টা করিল না। এই লোকগুলি পাপনুষ্ঠানে অভ্যস্ত ছিল, কাজেই তাহারা পয়গম্বরের অনুগমন করে নাই।
قَالَ مُوسَىٰ أَتَقُولُونَ لِلْحَقِّ لَمَّا جَاءَكُمْ ۖ أَسِحْرٌ هَـٰذَا وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُونَ
বাংলা অর্থ:
৭৭। মূসা বলিলেন, তোমরা কি এই যথার্থ প্রমাণ সম্পর্কে এমন কথা বলিতেছ, যখন উহা তোমাদের নিকট পৌছিল; ইহা কি জাদু? অথচ জাদুকররা তো সফলকাম হয় না।
قَالُوا أَجِئْتَنَا لِتَلْفِتَنَا عَمَّا وَجَدْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا وَتَكُونَ لَكُمَا الْكِبْرِيَاءُ فِي الْأَرْضِ وَمَا نَحْنُ لَكُمَا بِمُؤْمِنِينَ
বাংলা অর্থ:
৭৮। তাহারা বলিতে লাগিল, তুমি কি আমাদের নিকট এই জন্য আসিয়াছ যে আমাদিগকে সরাইয়া দাও সেই তরীকা হইতে যাহাতে আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদিগকে পাইয়াছি, আর পৃথিবীতে তোমাদের দুই জনের আধিপত্য স্থাপিত হইয়া যায়? আর আমরা তোমাদের দুই জনকে কখনও মানিব না।
وَقَالَ فِرْعَوْنُ ائْتُونِي بِكُلِّ سَاحِرٍ عَلِيمٍ
বাংলা অর্থ:
৭৯। এবং ফেরআঊন বলিল, আমার নিকট সমস্ত সুদক্ষ জাদুকরদের কে উপস্তিত কর।
فَلَمَّا جَاءَ السَّحَرَةُ قَالَ لَهُم مُّوسَىٰ أَلْقُوا مَا أَنتُم مُّلْقُونَ
বাংলা অর্থ:
৮০। অনন্তর যখন তাহারা আসিল, মূসা তাহাদিগকে বলিলেন, নিক্ষেপ কর যাহা কিছু তোমরা নিক্ষেপ করিতে চাও।
فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَىٰ مَا جِئْتُم بِهِ السِّحْرُ ۖ إِنَّ اللَّهَ سَيُبْطِلُهُ ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ
বাংলা অর্থ:
৮১। অত:পর যখন তাহারা নিক্ষেপ করিল, তখন মূসা বলিলেন, এই সমস্ত যাহাকিছু তোমরা আনিলে, জাদু ইহাই; নিশ্চয়ই আল্লাহ্ এখনই ইহাকে বানচাল করিয়া দিবেন; (কেননা) আল্লাহ্ এমন ফ্যাসাদীদের কাজ সম্পন্ন হইতে দেন না।
وَيُحِقُّ اللَّهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ
বাংলা অর্থ:
৮২। আর আল্লাহ্ তা‘আলা সঠিক প্রামণকে স্বীয় অঙ্গীকার অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত করিয়া দেন, যদিও পাপাচারীরা যতই অপ্রীতিকর বোধ করে।
فَمَا آمَنَ لِمُوسَىٰ إِلَّا ذُرِّيَّةٌ مِّن قَوْمِهِ عَلَىٰ خَوْفٍ مِّن فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِمْ أَن يَفْتِنَهُمْ ۚ وَإِنَّ فِرْعَوْنَ لَعَالٍ فِي الْأَرْضِ وَإِنَّهُ لَمِنَ الْمُسْرِفِينَ
বাংলা অর্থ:
৮৩। বস্তুত: মূসার প্রতি তাঁহার স্বগোত্রীয় লোকদের মধ্যে (প্রথমে) কেবল অল্প সংখ্যক লোকই ঈমান আনিল, তাহাও ফেরআঊন ও তাহার প্রধানবর্গের এই ভয়ে যে, তাহারা তাহাদিগকে নির্যাতন করে; আর বাস্তবিক পক্ষে ফেরআঊন সেই দেশে (রাজ) ক্ষমতা রাখিত, আর ইহাও ছিল যে, সে (ন্যায়ের) সীমাতিক্রম করিয়া ফেলিত।
সূরা ইউনুস বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। অর্থাৎ, তোমরা কি বলিতে চাও যে, ইহা যাদু? কখনই ইহা যাদু নহে। কেননা কোন যাদুকর নুবুওয়াতের দাবি করিয়া উহার পোষকতায় ঐন্দ্র্যজালিক লীলা দেখাইতে চাহিলে সফলকাম হয় না; কিন্তু আমি নুবুওয়াতের দাবি করার পর অলৌকিক ব্যাপার দেখাইতে সক্ষম হইয়াছি। অতএব,আমার এই কার্যকলাপ যাদু ও আমি যাদুকর হওয়া অসম্ভব।(ব:কো:)
২। অর্থাৎ ফেরআঊনের লোক মুসা (আ:) এর এই অকাট্য যুক্তির কোনই উত্তর দিতে পারিল না।
৩। আমরা অনেক সময় যাদুকরদিগকে বহু বিষয় সাফল্য লাভ করিতে দেখি, তবে ফ্যাসাদী বা যাদুকর দের কাজ সমাধা হইতে দেন না। এই কথার অর্থ কি? এইখানে যাদুকর বলিতে সেই যাদুকর উদ্দেশ্যে যাহারা নুবুওয়াতের দাবি করে, আর ফ্যাসাদী বলিতে সেই যাদুকর উদ্দেশ্যে যাহারা নবীর মু‘জেযাহর সহিত প্রতিযোগিতা করিতে উদ্যত হয়। (ব:কো:)
وَقَالَ مُوسَىٰ يَا قَوْمِ إِن كُنتُمْ آمَنتُم بِاللَّهِ فَعَلَيْهِ تَوَكَّلُوا إِن كُنتُم مُّسْلِمِينَ
বাংলা অর্থ:
৮৪। আর মুসা বলিলেন হে আমার সম্প্রদায়! যদি তোমরা আল্লাহর উপর ঈমান রাখ, তবে তাঁহারই উপর তাওয়াক্কুল কর, আর যদি তোমরা ফরমাঁবরদার হইয়া থাক।
فَقَالُوا عَلَى اللَّهِ تَوَكَّلْنَا رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا فِتْنَةً لِّلْقَوْمِ الظَّالِمِينَ
বাংলা অর্থ:
৮৫। তাহারা আরয করিল, আমরা আল্লাহরই উপর তাওয়াক্কুল করিলাম, হে আমাদের পরওয়ারদেগার! আমাদিগকে এই যালেমদের নির্যাতনের লক্ষ্যস্থল বানাইবেন না।
وَنَجِّنَا بِرَحْمَتِكَ مِنَ الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
বাংলা অর্থ:
৮৬। আর আমাদিগকে নিজ রহমতে এই কাফেরদের (কবল) হইতে নাজাত দিন।
وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ وَأَخِيهِ أَن تَبَوَّآ لِقَوْمِكُمَا بِمِصْرَ بُيُوتًا وَاجْعَلُوا بُيُوتَكُمْ قِبْلَةً وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ ۗ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ
বাংলা অর্থ:
৮৭। আর আমি মূসা ও তাঁহার ভ্রাতার প্রতি ওহী প্রেরণ করিলাম যে, তোমরা উভয়ে তোমাদের এই লোকদের জন্য মিসরে (-ই) বাসস্থান বহাল রাখ, আর (নামাযের সময়) তোমরা সকলে নিজেদের সেই গৃহগুলিকে নামায পড়ার স্থানরূপে গণ্য কর। এবং নামাযকে কায়েম কর; আর আপনি মুসলমানদিগকে খোশখবর জানাইয়া দিন।
وَقَالَ مُوسَىٰ رَبَّنَا إِنَّكَ آتَيْتَ فِرْعَوْنَ وَمَلَأَهُ زِينَةً وَأَمْوَالًا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا رَبَّنَا لِيُضِلُّوا عَن سَبِيلِكَ ۖ رَبَّنَا اطْمِسْ عَلَىٰ أَمْوَالِهِمْ وَاشْدُدْ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ فَلَا يُؤْمِنُوا حَتَّىٰ يَرَوُا الْعَذَابَ الْأَلِيمَ
বাংলা অর্থ:
৮৮। আর মূসা আরজ করিলেন হে আমাদের রব্ব! আপনি ফেরআঊন ও তাহার প্রধানবর্গকে দান করিয়াছেন জাঁকজমকের সামগ্রী এবং বিভিন্ন রকমের সম্পদ পার্থিব জীবনে, হে আমাদের রব্ব! যাহার কারণে তাহারা আপনার পথ হইতে (মানবমন্ডলীকে) বিভ্রান্ত করে, হে আমাদের রব্ব! তাহাদের সম্পদগুলিকে নিশ্চিহ্ন করিয়া দিন এবং তাহাদের অন্তর সমূহকে কঠিন করিয়া দিন, যাহাতে তাহার ঈমান আনতে পারে এই পর্যন্ত যে, তাহারা যন্ত্রণাময় আযাবকে দেখিয়া লয়।
সূরা ইউনুস বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। এই আয়াতে আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল থাকাকে ঈমানের মাপকাঠি নির্ধারিত করা হইয়াছে। যাহার ঈমান যত মজবূত, আল্লাহ্ প্রতি তাহার তাওয়াক্কুল ও ততো দৃঢ়। আর যাহার ঈমান যত দুর্বল তাহার তাওয়াক্কুল ততো দুর্বল। (ই:কো:)
২। ইসরাঈলীরা মূসার উপর ঈমান আনিয়া মসজিদসমূহে এবাদত আরম্ভ করিলে ফেরআঊন মসজিদ গুলিকে ধ্বংস করিয়া ইসরাঈলীদিগকে নামায পড়িতে নিষেধ করিয়া দিল। আল্লাহ্ ইসরাঈলীদিগকে আদেশ করিলেন, তোমরা চুপে চুপে গৃহে নামায আদায় কর। এই খানে সেই ঘটনাই ব্যক্ত হইয়াছে।(মু:কো:)
৩। বর্ণিত আছে যে, তাহাদের যাবতীয় ধন-সম্পদ ও যাবতিয় খাদ্যদ্রব্য এবং ফল ফুলের গাছগুলি পাথর হইয়া গিয়াছিল। (ব:কো:)
৪। অর্থাৎ মূসা (আ:) ওহী দ্বারা জানিতে পারিয়াছিলেন, ইহাদের ঈমান আনয়নের সম্ভবনা নাই। কাজেই তিনি বদ দোআ করিয়াছিলেন। (মু:কো:)
قَالَ قَدْ أُجِيبَت دَّعْوَتُكُمَا فَاسْتَقِيمَا وَلَا تَتَّبِعَانِّ سَبِيلَ الَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ
বাংলা অর্থ:
৮৯। আল্লাহ্ বলিলেন যে, তোমাদের উভয়ের দোআ কবুল করা হইল, অতএব তোমরা দৃঢ় থাক, আর তাহাদের পথ অনুসরণ করিও না-যাহাদের জ্ঞান নাই।
وَجَاوَزْنَا بِبَنِي إِسْرَائِيلَ الْبَحْرَ فَأَتْبَعَهُمْ فِرْعَوْنُ وَجُنُودُهُ بَغْيًا وَعَدْوًا ۖ حَتَّىٰ إِذَا أَدْرَكَهُ الْغَرَقُ قَالَ آمَنتُ أَنَّهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا الَّذِي آمَنَتْ بِهِ بَنُو إِسْرَائِيلَ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ
বাংলা অর্থ:
৯০। আর আমি বনী ইসরাঈলদিগকে সমুদ্র পার করিয়া দিলাম, অত:পর ফেরআঊন তাহার সৈন্যদলসহ তাহাদের পশ্চাদানুসরণ করিল জুলুম ও নির্যাতনের উদ্দেশ্য; এমনকি যখন সে নিমজ্জিত হইতে লাগিল তখন বলিতে লাগিল, আমি ঈমান আনিতেছি যে বনী ইসরাঈল যাহার উপর ঈমান আনিয়াছে-তিনি ব্যতীত অন্য কোন মা‘বুদ নাই এবং আমি মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত হইতেছি।
آلْآنَ وَقَدْ عَصَيْتَ قَبْلُ وَكُنتَ مِنَ الْمُفْسِدِينَ
বাংলা অর্থ:
৯১। এখন ঈমান আনিতেছ? অথচ পূর্ব (মুহূর্ত) পর্যন্ত নাফরমানী করিতেছিলে এবং ফ্যাসাদীদের অন্তভুক্ত রহিয়াছিলে।
فَالْيَوْمَ نُنَجِّيكَ بِبَدَنِكَ لِتَكُونَ لِمَنْ خَلْفَكَ آيَةً ۚ وَإِنَّ كَثِيرًا مِّنَ النَّاسِ عَنْ آيَاتِنَا لَغَافِلُونَ
বাংলা অর্থ:
৯২। অতএব, আজ আমি তোমার লাশকে উদ্ধার করিব যেন তুমি তোমরা পরবর্তী লোকদের জন্য উপদেশ গ্রহণের উপকরণ হইয়া থাক; আর প্রকৃতপক্ষে অনেক লোক আমার উপদেশাবলী হইতে গাফেল রহিয়াছে।
সূরা ইউনুস বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। অর্থাৎ মূসা (আ:) দো‘আ করিতেন এবং হারূন (আ:) আমীন বলিতেন। এই জন্যই উভয়ের দো‘আ বলা হইয়াছে।
২। একদিন জিব্রাঈল (আ:) ফেরআঊনের দরবারে আসিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, যে গোলাম তাহার প্রভুর নিআমত ভোগ করিয়া সমস্ত গোলামের উপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করিয়াছে। অবশেষে অবাধ্য হইয়া প্রভুত্বের দাবি করিয়াছে তাহার বিধান কি? ফেরআঊন নিজ হাতে লিখিয়া দিন, তাহাকে সমুদ্র গর্ভে ডুবাইয়া দিতে হইবে। ফেরআঊন যখন সমুদ্রে হাবুডুবু খাইয়া ঈমান প্রকাশ করিল, তখন জিব্রাঈল (আ:) তাহার সেই ফতোয়া দেখাইয়া বলিলেন, তোমার ফতোয়া অনুযায়ীই আমল করা হইয়াছে। (মু:কো:)
৩। ফেরআঊন সৈন্য সমুদ্র গর্ভে নিমজ্জিত হওয়ার পর বনী ইসরাঈলদের মনে সন্দেহ হইল, ফেরআঊন হয়ত মরে নাই। আল্লাহ্ ফেরআঊনের লাশ কে পানির উপরে ভাসাইয়া বনী ইসরাঈলের ভীতি দূর করিলেন। (মু:কো:)
وَلَقَدْ بَوَّأْنَا بَنِي إِسْرَائِيلَ مُبَوَّأَ صِدْقٍ وَرَزَقْنَاهُم مِّنَ الطَّيِّبَاتِ فَمَا اخْتَلَفُوا حَتَّىٰ جَاءَهُمُ الْعِلْمُ ۚ إِنَّ رَبَّكَ يَقْضِي بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ
বাংলা অর্থ:
৯৩। আর আমি বনী ইসরাঈলকে থাকিবার জন্য অতি উত্তম বাসস্থান প্রদান করিলাম আর আমি তাহাদের কে আহার করিবার জন্য উৎকৃষ্ট বস্তুসমূহ দান করিলাম, সুতরাং তাহারা মতভেদ করে নাই এই পর্যন্ত যে, তাহাদের নিকট (আহকারেম) জ্ঞান পৌছিল, (অত:পর তাহারা মতভেদ করিল) নি:সন্দেহে আপনার রব্ব কিয়ামত দিবসে তাহাদের মধ্যে সেই সব বিষয়ের মীমাংসা করিবেন যাহাতে তাহারা মতভেদ করিতেছিল।
فَإِن كُنتَ فِي شَكٍّ مِّمَّا أَنزَلْنَا إِلَيْكَ فَاسْأَلِ الَّذِينَ يَقْرَءُونَ الْكِتَابَ مِن قَبْلِكَ ۚ لَقَدْ جَاءَكَ الْحَقُّ مِن رَّبِّكَ فَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الْمُمْتَرِينَ
বাংলা অর্থ:
৯৪। অত:পর যদি আপনি এই (কিতাব) সম্পর্কে সন্দিহান হন যাহা আমি আপনার নিকট পাঠাইয়াছি, তবে আপনি তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিয়া দেখুন যাহারা আপনার পূর্বেকার কিতাব সমুহ পাঠ করে নি:সন্দেহে আপনার নিকট আসিয়াছে আপনার রব্বের পক্ষ হইতে সত্য কিতাব সুতরাং আপনি কখনই সংশয়ীদের অন্তর্ভুক্ত হইবেন না।
وَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِ اللَّهِ فَتَكُونَ مِنَ الْخَاسِرِينَ
বাংলা অর্থ:
৯৫। আর সেই সমস্ত লোকদের ও অন্তভুক্ত হইবেন না যাহারা আল্লাহর আয়াতগুলিকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করিয়াছে, যেন আপনি ধ্বংস হইয়া না যান।
إِنَّ الَّذِينَ حَقَّتْ عَلَيْهِمْ كَلِمَتُ رَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ
বাংলা অর্থ:
৯৬। নি:সন্দেহে যাহাদের সম্বন্ধে আপনার রব্বের বাক্য সাব্যস্ত হইয়া গিয়াছে, তাহারা কখনও ঈমান আনিবে না।
وَلَوْ جَاءَتْهُمْ كُلُّ آيَةٍ حَتَّىٰ يَرَوُا الْعَذَابَ الْأَلِيمَ
বাংলা অর্থ:
৯৭। যদিও তাহাদের নিকট সমস্ত প্রমাণাদি পৌছিয়া যায় যে পর্যন্ত না তাহারা যন্ত্রণাময় আযাব দেখিয়া লয় (কিন্তু তখন ঈমান আনা বৃথা)
فَلَوْلَا كَانَتْ قَرْيَةٌ آمَنَتْ فَنَفَعَهَا إِيمَانُهَا إِلَّا قَوْمَ يُونُسَ لَمَّا آمَنُوا كَشَفْنَا عَنْهُمْ عَذَابَ الْخِزْيِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَمَتَّعْنَاهُمْ إِلَىٰ حِينٍ
বাংলা অর্থ:
৯৮। সুতরাং এমন কোন জনপদই ঈমান আনে নাই যে, তাহাদের ঈমান আনয়ন উপকারী হইয়াছে ইউনুসের কাওম ব্যতীত; -যখন তাহারা ঈমান আনিল, তখন আমি তাহাদিগ হইতে পার্থিব জীবনে অপমানজনক শাস্তি বিদুরিত করিয়া দিলাম। এবং তাহাদিগকে সুখ স্বচ্ছন্দে থাকেতে দিলাম এক নির্ধারিত কাল পর্যন্ত।
সূরা ইউনুস বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। হযরত ইউনুস (আ:) নীনোয়াবাসীরেদর প্রতি প্রেরিত হন। দীর্ঘ দিন ধরে হেদায়েতের পরও তাঁহার ক্বওম ঈমান আনিল না। আল্লাহ্ তাঁহাকে জানাইয়া দিলেন যে, চল্লিশ দিনের মধ্যে ঈমান না আনিলে তাহাদের প্রতি আযাব আসিবে। ইউনুস (আ:) এই সংবাদ দিয়া অন্যত্র সরিয়া পড়িলেন। নির্দিষ্ট সময়ে গরম বাতাসসহ কাল মেঘ চাইয়া গেল। আযাব দেখিয়া তাহার নবীর সত্যতায় বিশ্বাসী হইল; কিন্তু বহু তালাশ করিয়াও তাহাকে পাইল না। অবশেষে আল্লাহর উপর ঈমান আনিয়া মিনতি সহকারে মুক্তির প্রার্থনা করি। চল্লিশ দিনান্তে ১০ই মুহাররম শুক্রবারে দোআ কবুল হইল এবং কাল মেঘ সরিয়া গেল। ইহা জানিতে পারিয়া ইউনুস (আ:) ক্বওমের অবিশ্বাস আশংকায় ও লজ্জায় দেশ ত্যাগ করিলেন। (মু :কো 🙂
وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ لَآمَنَ مَن فِي الْأَرْضِ كُلُّهُمْ جَمِيعًا ۚ أَفَأَنتَ تُكْرِهُ النَّاسَ حَتَّىٰ يَكُونُوا مُؤْمِنِينَ
বাংলা অর্থ:
৯৯। আর যদি আপনার রব্ব চাহিতেন, তবে সমগ্র বিশ্বের সকল লোকই ঈমান আনিত; তবে আপনি কি মানুষের উপর যবরদস্তি করিতে পারেন-যাহাতে তাহারা ঈমান আনয়নই করে।
وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَن تُؤْمِنَ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ ۚ وَيَجْعَلُ الرِّجْسَ عَلَى الَّذِينَ لَا يَعْقِلُونَ
বাংলা অর্থ:
১০০। অথচ আল্লাহর হুকুম ব্যতীত কাহারও ঈমান আনা সম্ভব নহে; আর আল্লাহ্ নিবোর্ধ লোকদের উপর (কুফরীর) অপবিত্রতা স্থাপন করিয়া দেন।
قُلِ انظُرُوا مَاذَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ وَمَا تُغْنِي الْآيَاتُ وَالنُّذُرُ عَن قَوْمٍ لَّا يُؤْمِنُونَ
বাংলা অর্থ:
১০১। আপনি বলিয়া দিন যে, তোমরা ভাবিয়া দেখ কি কি বস্তু রহিয়াছে আসমানসমূহে এবং যমীনে আর যাহারা ঈমান আনয়ন করে না তাহাদের কে প্রমানাদি ও ভয় প্রদর্শন কোন উপকার সাধন করিতে পারে না।
فَهَلْ يَنتَظِرُونَ إِلَّا مِثْلَ أَيَّامِ الَّذِينَ خَلَوْا مِن قَبْلِهِمْ ۚ قُلْ فَانتَظِرُوا إِنِّي مَعَكُم مِّنَ الْمُنتَظِرِينَ
বাংলা অর্থ:
১০২। অতএব তাহারা কেবল সেই লোকদের অনুরূপ ঘনটাবলীর প্রতীক্ষায় করিতেছে, যাহারা ইহাদের পূর্বে গত হইয়া গিয়াছে; আপনি বলিয়া দিন, আচ্ছা, তবে তোমরা (উহার) প্রতীক্ষায় থাক আমিও তোমাদের সহিত প্রতীক্ষারতদের মধ্যে রহিলাম।
ثُمَّ نُنَجِّي رُسُلَنَا وَالَّذِينَ آمَنُوا ۚ كَذَٰلِكَ حَقًّا عَلَيْنَا نُنجِ الْمُؤْمِنِينَ
বাংলা অর্থ:
১০৩। পরন্তু আমি স্বীয় রাসূলদিগকে এবং ঈমানদারদিগকে বাঁচাইয়া রাখিতাম, ঈমানদারদিগকে নাজাত দিয়া থাকি, ইহা হইতেছে আমার দায়িত্ব।
قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِن كُنتُمْ فِي شَكٍّ مِّن دِينِي فَلَا أَعْبُدُ الَّذِينَ تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ وَلَـٰكِنْ أَعْبُدُ اللَّهَ الَّذِي يَتَوَفَّاكُمْ ۖ وَأُمِرْتُ أَنْ أَكُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ
বাংলা অর্থ:
১০৪। আপনি বলিয়া দিন, হে লোকসকল ! যদি তোমরা আমার দ্বীন সম্বন্ধে সন্দিহান হও, তবে আমি সেই মা‘বুদদের এবাদত করি না আল্লাহকে ছাড়িয়া তোমরা যাহাদের এবাদত কর, কিন্তু আমি সেই মা‘বুদের এবাদত করি যিনি তোমাদের জান কবয করেন, আর আমার প্রতি এই আদেশ হইয়াছে যে, আমি যেন ঈমান আনয়নকারীদের দলভুক্ত থাকি।
সূরা ইউনুস বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। আসমানে নক্ষত্র-সমূহ এবং পৃথিবীর অসংখ্য জীব, তরলতা ইত্যাদির প্রতি অন্তরদৃষ্টি নিক্ষেপ করিলে তোমরা খোদার অস্তিত্ব ও একত্ব উপলব্ধি করিতে পারিবে। অতএব, খোদার আদেশ মান্য করা তোমাদের প্রতি অবশ্য কর্তব্য বলিয়া সাব্যস্ত হইল।(ব:কো:)
২। অর্থাৎ সুস্পষ্ট প্রমাণ, তৎসঙ্গে উপদেশ প্রদান ও ভয় প্রর্দন সত্ত্বেও যখন তাহা ঈমান আনিতেছে না, ইহা তো বুঝা যায়, যেন তাহারা পূর্বকালের কাফেরদের ন্যায় আযাবের প্রতীক্ষা করিতেছে। (ব:কো:)
৩। আখেরাতে আযাব হইতে ম‘ুমিনদের রক্ষিত থাকা সম্বন্ধে তো কোন তর্কই নাই। তোমাদের পূর্ববতী উম্মদের প্রতি যেই সমস্ত আকস্মিক আযাব আসিত, ইহা হইতেও মু’মিনগন রক্ষিত ছিল। হুযূরে আকরাম (দ:) এর যুগে কাফেরদের প্রতি আযাব আসে যুদ্ধ নিহত ও পদদলিত হওয়ার হিসাবে। (ব:কো:)
وَأَنْ أَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًا وَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِينَ
বাংলা অর্থ:
১০৫। আর ইহাও যে, নিজকে নিজে এই ধর্মের প্রতি এইভাবে নিবিষ্ট করিয়া রাখিবে, যেন অন্যান্য সকল তরীকা হইতে পৃথক হইয়া যাও, আর কখনও মুশরেক হইও না।
وَلَا تَدْعُ مِن دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ ۖ فَإِن فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِّنَ الظَّالِمِينَ
বাংলা অর্থ:
১০৬। আর আল্লাহকে ছাড়িয়া এমন বস্তুর বন্দেগী করিও না যাহা না তোমরা কোন উপকার করিতে পারে আর না অপকার করিতে পারে, বস্তুত: যদি এইরূপ কর, তবে তুমি এমতাবস্তায় হক্ব বিনষ্টকারীদের অন্তর্ভুক্ত হইয়া যাইবে।
وَإِن يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ ۖ وَإِن يُرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلَا رَادَّ لِفَضْلِهِ ۚ يُصِيبُ بِهِ مَن يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ ۚ وَهُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
বাংলা অর্থ:
১০৭। আর যদি আল্লাহ তোমাকে কোন কষ্টে নিপতিত করেন, তবে তিনি ব্যতীত কেহ উহা মোচনকারী নাই, আর যদি তিনি তোমার প্রতি কোন শান্তি পৌছাইতে চান, তবে তাঁহারা অনুগ্রহের কোন অপসারণকারী নাই; তিনি স্বীয় অনুগ্রহ নিজের বান্দাদের মধ্যে হইতে যাহাকে চাহেন দান করেন। এবং তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, অতিশয় দয়ালু।
قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُمُ الْحَقُّ مِن رَّبِّكُمْ ۖ فَمَنِ اهْتَدَىٰ فَإِنَّمَا يَهْتَدِي لِنَفْسِهِ ۖ وَمَن ضَلَّ فَإِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَا ۖ وَمَا أَنَا عَلَيْكُم بِوَكِيلٍ
বাংলা অর্থ:
১০৮। আপনি বলিয়া দিন হে সকল লোক! তোমাদের নিকট তোমাদের রব্বের তরফ হইতে সত্য (ধর্ম) আসিয়াছে, অতএব, যে ব্যক্তি সঠিক পথে আসিবে, বস্তুত: সে নিজের জন্যই পথে আসিবে, আর যে ব্যক্তি পথভ্রষ্ট থাকিবে, তাহারা পথভ্রষ্টতা তাহারই উপর বর্তাইবে আর আমাকে (রাসূলকে) তোমাদের উপর দায়িত্ব অর্পন করা হয় নাই;
وَاتَّبِعْ مَا يُوحَىٰ إِلَيْكَ وَاصْبِرْ حَتَّىٰ يَحْكُمَ اللَّهُ ۚ وَهُوَ خَيْرُ الْحَاكِمِينَ
বাংলা অর্থ:
১০৯। আর আপনি আপনার প্রতি প্রেরিত ওহীর অনুসরণ করুন, আর ধৈর্য ধরুন এই পর্যন্ত যে, আল্লাহ মীমাংসা করিয়া দেন, এবং তিনি উত্তম মীমাংসাকারী।
সূরা ইউনুস বাংলা অনুবাদ শানে নুযুলঃ
১। আল্লাহর গুণাবলীর মধ্যে জান কবয করার গুণটি এই খানে উল্লেখ করার কারণ এই যে, এই গুণটি অতি সহজে সকলের বোধগম্য। এই জন্যই এইস্থানে জান কবযের কথা বলা হইয়াছে। (হ:মু‘জেয নূমা)
২। অর্থাৎ আল্লাহ নবীকে বলিতেছেন, লাভ-লোকসানের ক্ষমতা যাহার হাতে নাই, তাহাকে ডাকা এবং মাবুদ সাব্যস্ত করা নিরর্থক; বরং বড়ই অন্যায় এবং অনাচারের কথা। কেননা, যেই খোদা সৃষ্টি করিয়াছেন যাহার ক্ষমতাধীনে বান্দার ভাল-মন্দ সব কিছু। সেই খোদাকে ছাড়িয়া অচেতন পদার্থের উপাসনাকর অপেক্ষা অন্যায় এবং যুলুম আর কী হইতে পারে? (ই:কো:)
৩। অর্থাৎ তোমাদিগকে বলপূর্বক সুপথে আনয়ন করার দায়িত্ব আমার উপর নাই যে তোমাদের গোমরাহীর জন্য আমি অপরাধী হইব। তবে তোমরা ইসলাম গ্রহণ না করিলে আমার কি ক্ষতি হইবে?
সূরা আত-তাওবা এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা আনফাল এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা আরাফ এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা আনআম এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা আল-মায়েদা এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সূরা আন-নিসা এর বাংলা অনুবাদ ও শানে নজুল পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
আমাদের, ফেসবুক পেইজে লাইক, শেয়ার এবং কমেন্টস করে আমাদের সাথেই থাকুন।