তাহারাত ছাড়া নামায কবুল হয় না

তাহারাত ছাড়া নামায কবুল হয় না, এ বিষয়ে সহীহ হাদীস সমুহঃ-

১। কুতায়বা ইবনে সাঈদ ও হান্নাদ রহ. ……. ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয় সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তাহারাত ব্যতীত নামায কবূল হয় না আর খিয়ানতের মাল থেকে সাদকা (কবূল) হয় না। (ইমাম তিরমিযী রাবী হান্নাদ-এর সূত্রেও হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।) হান্নাদ বিগাইরে তুহুরি এর স্থলে ইল্লাবিতুহুরে উল্লেখ করেছেন।

ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী রহ. বলেন, এই বিষয়ে উল্লেখিত হাদীসটিই হল সর্বাপেক্ষা সহীহ এবং হাসান। এই বিষয়ে আবুল মালীহ তাঁর পিতার সূত্রে আবূ হুরায়রা রাযি. ও আনাস রাযি. থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। এই আবুল মালীহ হলেন উসামার পুত্র। তাঁর নাম আমির অন্য বর্ণনা মতে তিনি হলেন যায়েদ ইবনে উসামা ইবনে উমায়র আল-হুযালী।

ইমাম তিরমিযী রহ. হাদীসের শব্দ দিয়েই তিরযিমাতুল বাবে নির্ণয়ের চেষ্টা করেন। যেমনটি এ অধ্যায়ে করেছেন। তবে যেখানে এরকম করা সম্ভব হয় না সেখানে নিজের থেকে শব্দ চয়ন করে তিরযিমাতুল বাবে কায়েম করেন। ইমাম তিরমিযীর তিরযিমাতুল বাবে গুলো সিহাহ সিত্তার অন্যান্য কিতাবের বাবের তুলনায় বেশি সুন্দর ও বিশুদ্ধ।

১ম মাসআলাঃ কাকাদ তাহাওরায়ান সর্ম্পকে অর্থাৎ যার কাছে পবিত্রতা অর্জন করার জন্য পানি বা মাটি কোনটা নেই, উক্ত ব্যক্তি কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করবে? প্রাচীনকালে এ অবস্থতা কমই ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে উড়োজাহাজে আরোহণ করার কারণে বেশি বেশি এ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এ মাসআলার ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। ইমাম আবু হানিফা রহ. এর মত হলো, এমন ব্যক্তি নামায আদায় না করে পরে কাযা করে নেবে। ইমাম আহমদ রহ.-এর মতে, ঐ ব্যক্তি ঐ অবস্থায় নামায পড়ে নেবে। পরবর্তীতে কাযা করা ওয়াজিব নয়। ইমাম মালেক রহ.-এর মতে এমতাবস্থায় ঐ ব্যক্তির দায়িত্ব থেকে নামায শাকাত হয়ে যাবে। । ঐ সময় তার উপর পড়া জরুরী নয় এমনকি পরবর্তীতে কাযা করা ওয়াজিব নয়। ইমাম শাফেয়ী রহ. থেকে এ মাসাআলায় চার রকম বক্তব্য পাওয়া যায়।

(১) এক মতে ইমাম আবু হানিফার কাওয়ালু মোতাবেক।
(২) আরেক মত ইমাম আহমাদের মোতাবেক , যাহা মুযানী রহ. পছন্দ করেন
(৩) ৩য় কুল হলো (ইয়াসলায়ে আসহাবাবা ওয়াইয়াকযায়ে ওয়া যাওইয়া)
(৪) শেষ মত হলো ইয়াসলায়ে ওয়াইয়াকযা অর্থাৎ ঐ অবস্থায় নামায আদায় করবে এবং পরে কাযা আদায় করে নিবে।
আর শেষাক্ত মত হলো সবচেয়ে সহীহ।

সাহেবাঈন রহ.- এর মতে, ফাকাদ তাহাওয়ারাইন অবস্থায় তাশাবাহু বালামিসালাইয়ান করবে, অর্থাৎ নামাযের সুরতে বসে থাকবে, কিন্তু কিরাত পড়বে না এবং পরবর্তীতে কাযা আদায় করবে। ইমাম আবু হানিফা রহ. এই মতের দিকে প্রত্যাবর্তন করেছেন। আর এই মতের উপরই হানাফী মাযহাবের ফতওয়া। ফিকহী দৃষ্টিকোণ থেকে এ কথাটি বেশি সঠিক, কেননা শরীয়তে এ রকম অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে যে, যখন কোন ব্যক্তি মূল ইবাদত আদায় করতে সক্ষম না হয় তখন ঐ ব্যক্তিকে মূল ইবাদতের সাদৃশ্য অবলম্বন করার হুকুম দেয়া হয়। যেমনঃ কোন অপ্রাপ্ত বয়স্ক বাচ্চা রমযানের দিনে যদি দুপুরে বালেগ হয় অথবা কাফের ব্যক্তি মুসলমান হয় অথবা হায়েয মহিলা হায়েয থেকে পাক হয়। তাহলে অবশিষ্ট দিন তাদেরকে পানাহার ইত্যাদি থেকে দূরে থাকার হুকুম দেওয়া হয়, যা রোযাদারদের সাদৃশ্যপূর্ণ। অনুরূপ যদি কোন ব্যক্তির হজ্জ ফাছাদ হয়ে যায় তাহলে ঐ ব্যক্তিকে অন্য হাজীদের মতো হজ্জের অবশিষ্ট কাজ সম্পাদন করার হুকুম দেয়া হয়, যা মূলতঃ হাজীগণের সাদৃশ্যপূর্ণ। শরীয়তের এ সমস্ত হুকুমের উপর কিয়াস করে ফাকাদ তাহাওয়ারাইন ব্যক্তিকে নামাযীর সাদৃশ্য অবলম্বনের হুকুম দেয়া হয়, যা হুবহু শরীয়তের কায়দানুযায়ী। এ অধ্যায়ের হাদীসটিও হানাফীদের মতের পক্ষে দলীল। কেননা তাদের নিকট কোন প্রকার নামাযই পবিত্রতা ছাড়া আদায় করা ঠিক না। আর ফাকাদ তাহাওয়ারাইন ব্যক্তির নামাযও ঐ হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। কেননা এটাও একটা নামায। আর হাদীসে সকল নামাযই পবিত্রতা ব্যতীত পড়তে নিষেধ করা হয়েছে।

মাসায়ালাতুল বিনায়েঃ এই হাদীসের অধীনে ২য় ফিকহী মাসআলাতুল বিনায়ে এর আলোচনা করা হয়েছে। হানাফী ওলামায়ে কেরামের মতে যদি কোন ব্যক্তির নামাযে অযু ভেঙ্গে যায়। তাহলে ঐ অবস্থায় আবার ওযু করে পূর্বের নামাযের উপর বানায়া করা জায়েয আছে। পক্ষান্তরে ইমাম শাফেয়ী এবং অন্য ওলামায়ে কেরামের মতে এই সুরত জায়েজ নেই। হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রহ. শাফেয়ী রহ. মতের সমর্থন করে এ হাদীস দ্বারা হানাফীদের বিপরীতে আসতাদলাল করে বলেন, যে সময়টুকু তাহারাত ছাড়া অতিবাহিত হলো সেটা সালাতু বাকায়ারা তাহাওার হিসেবে পরিগণিত হবে। আর এটা হাদীসের অর্থের বিপরীত হওয়ার দুরন্ত হবে না।

তার জবাবে হানাফীরা বলেন– ওযুর জন্য যাওয়ার সময়টুকু নামাযের অংশ নয়, যার কারণে বেনা করনেওয়ালা ব্যক্তি নামায ঐখান থেকে শুরু করবে যেখান থেকে হাদাছু হয়েছে। পক্ষান্তরে যদি ওযুর জন্য যাওয়া এবং আসা নামাযের অংশ হতো তাহলে ইমাম ঐ সময়টুকুতে যে কয় রাকাত নামায আদায় করবে বেনা করনেওয়ালা ব্যক্তির উহা পুনরায় পড়ার কোন প্রয়োজন না হওয়া চাই। কিন্তু একথার উপর আসকালু হয়। যদি যাওয়া- আসা নামাযের জায়েজ বা অংশ ধরা না হয় তাহলে তো উহা আমল কসর এর অন্তর্ভুক্ত হবে। আর আমল কসর এর কারণে নামায নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা; এমনকি এ সময়টা নামাযের মধ্যে না হলে তখন কথা বলা জায়েজ হওয়া চাই। কিন্তু আপনারা তা জায়েজ মনে করেন না।

এর জবাবে হানাফী ওলামায়ে কেরাম বলেন, ঐ সময়ের আমল কসর দ্বারা নামায নষ্ট না হওয়া এবং কথা বলার নিষেধাজ্ঞা উভয়টাই খালফা কায়েছ ঐ হাদীস থেকে প্রমাণিত, যা ইবনে মাজাহ এবং আব্দুর রাযযাক রহ. হযরত আয়েশা (রযি.)-এর সূত্রে মারফায়ে হিসেবে বর্ণনা করেন। দারাকুতনী রহ. হযরত আবু সাঈদ খুদরী ও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. এর রাওয়াত বর্ণনা করেন। যেমন- শাফেয়ীদের পক্ষ থেকে এ হাদীসের উপর আকতারাস করা হয়। তাহলো এই হাদীসের সমস্ত সানাদ দুর্বল। ইবনে মাজায় আসমা আয়িলা বিন আয়েশা আন বিন যারির এর সূত্রে বর্ণিত। আর ইসমাঈল বিন আয়েশা শামবাসী ছাড়া যদি অন্য কোন দেশের কারো থেকে রেওয়ারেত করে, তাহলে তার রাওয়াত গ্রহণ্য যোগ্য নয়। আর ‘ইবনে জুরাইজ’ হেজাযী। তাই ইসমাইল ইবনে আইয়াশের রেওয়ায়েত গ্রহণযোগ্য হবে না১ ইবাদাল রাজাক এ রেওয়ায়েতের মাঝে সুলাইমান বিন ইকরাম নামক রাওয়া রয়েছে, যে কিনা মাতারাওাক এবং দারাকুতনীর আবু সাইেদ খাদের সূত্রে বর্ণিত হাদীসে আবু বকর আলদাহারাই নামক রাবী যাইফা এবং ইবনে আব্বাসের রিওয়াত এ ওমর বিন রাইহা হলেন যাইফা। এ সকল কারণে এই হাদীসটি গ্রহণযোগ্য হবে না। হানাফীরা উপরোক্ত আয়তারায এর তিনটি জবাব দেনঃ

১ম জবাবঃ উল্লেখিত হাদীসখানা বিভিন্ন সনদে বর্ণিত। আর যাইফা হাদীস মাতয়াদদ তারিকা এ বর্ণিত হলে সেটা হাসানা গায়রুহা হয়ে যায়। তখন তার দ্বারা আসতাদলাল করা জায়েয হবে।

২য় জবাবঃ ঐ হাদীসের তরিকা মাসায়ালা যদিও দুর্বল কিন্তু মাসানাফ ইবাদা রাজাক, সাননি দারা কাতনায় এবং আবু আব হাতেম এর আলাল হাদিস নামক গ্রন্থে এই হাদীসটিই ইবনে আবী মুলাইকা থেকে মারসালা বর্ণিত হয়েছে এবং এই বর্ণনাসূত্রটি সনদ হিসাবেও সহীহ।২ এমনকি ইবনে আবী হাতেম আলাল হাদীস নামক গ্রন্থে (খ.১পৃ.৩১) এবং দারাকুতনী তার সুনানের মাঝে এই মুরসাল সূত্রে বর্ণিত হাদীসটিকে সহীহ স্বীকৃত দিয়েছেন। ইহা ছাড়াও ইমাম বায়হাকী রহ. (বাইহাকী ২/২৫৬) এই হাদীসটি ইবনে যারইয আন আবইহি এই সূত্রে মুরসাল রেওয়ায়েত করে সহীহ সাব্যস্ত করেন। মুরসাল হাদীস আমাদের ও জুমহুরের নিকট দলীল হওয়ার যোগ্যতা রাখে।

৩য় জবাবঃ একাধিক সাহাবায়ে কেরাম থেকে এই হাদীসের মাজমাওয়ান অর্থাৎ মূল বিষয় মাওকাওফা সাবেত আছে। যেমন দারাকুতনী হযরত আলী রাযি. এর কথা নকল করে বলেন-

ইমাম দারাকুতনী এবং তার মাহশায় আল্লামা আযীম আবাদী এই হাদীস সর্ম্পকে নীরবতা অবলম্বন করেছেন। ইমাম বায়হাকী রহ. (২/৩১) এই হাদীসটিকে তিনসূত্রে উল্লেখ করে তার রাবী আমের ইবনে জামরাহ সর্ম্পকে কালাম করেছেন। কিন্তু হাফেয মারদীনী রহ. আযওয়াহার নাকায়া ফি আরদ আলা বিয়াহাকে নামক কিতাবে লিখেছেন যে, এই রেওয়ায়াতটি মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বার মাঝে (‘আলইলাল’ কিতাব-১/৩১) সহীহ।

(সহীহ জামি’ আত তিরমিযী-১)