বায়তুল খালা ব্যবহার সংক্রান্ত সহীহ হাদিস সমুহ

বায়তুল খালায় প্রবেশকালে কি পড়বেঃ-

৫। সহজে তরজমা: কুতায়বা ও হান্নাদ রাযি. …… আনাস ইবনে মালিক রাযি. থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (স.) পায়খানায় প্রবেশকালে বলতেনঃ ( হে আল্লাহ! শয়তান, জ্বিন ও সকল কষ্টদায়ক প্রাণী থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি।) আলখাবিছু ওয়াল খাবিয়িছু এর স্থলে আলখাবছু ওয়াল খাবিয়ীছু বর্ণিত আছে। এই হাদীসটির অন্যতম রাবী শু’বা বলেন, তাঁর উস্তাদ আবদুল আযীয ইবনে সুহাইব আয়ুজুবিকা এর স্থলে এক সময় আয়ূজুবিল্লাহ ও রিওয়ায়াত করেছেন।

এই বিষয়ে আলী, যায়েদ ইবনে আরকাম, জাবির এবং ইবনে মাসউদ রাযি. থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী রহ. বলেন, এই বিষয়ে আনাস রাযি. বর্ণিত এই হাদীসটি সর্বাপেক্ষা সহীহ্ ও আহসান। যায়েদ ইবনে আরকাম বর্ণিত হাদীসটির সনদে ইযতিরাব বিদ্যমান। হাদীসটি হিশাম আদ্-দাস্তাওয়াঈ ও সাঈদ ইবনে আবী আরূবা কাতাদা থেকে রিওয়ায়াত করেছেন। সাঈদ তাঁর সনদে কাসিম ইবনে আওফ আশ-শায়বানীর মাধ্যমে যায়েদ ইবনে আরকাম থেকে রিওয়ায়াত করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন, আর হিশাম উল্লেখ করেন যে, তিনি কাতাদার মাধ্যমে যায়েদ ইবনে আরকাম থেকে রিওয়ায়াত করেছেন। তিনি কাসিমের উল্লেখ করেননি। আনাস থেকে হাদীসটি বর্ণিত বলে উল্লেখ করেছেন। আর মা’মার নাযর ইবনে আনাস তাঁর পিতা আনাস থেকে হাদীসটি বর্ণিত বলে উল্লেখ করেছেন।

ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল বুখারীকে আমি এই ইযতিরাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তিনি বললেন যায়েদ ইবনে আরকাম ও নাযর বিন আনাস উভয় থেকেই কাতাদার রিওয়ায়াতের সম্ভাবনা রয়েছে।

৬। আহমদ ইবনে আবদা আযযাব্বী রহ. …. আনাস ইবনে মালিক রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পায়খানায় প্রবেশকালে বলতেন- আল্লাহুম্মা ইন্নি আয়ুজুবিকা মিনাল খুবছে ওয়াল খাবায়েছ ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এই হাদীসটি হাসান ও সহীহ।

বায়তুল খালা থেকে বের হলে কি পড়বেঃ-

৭। মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাঈল রহ. ….. আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পায়খানা থেকে বের হওয়ার সময় বলতেন গুফরানাকাঃ হে আল্লাহ, তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি।
ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এই হাদীসটি হাসান গরীব অর্থাৎ উত্তম তবে অপ্রসিদ্ধ। ইসরাঈল ইউসুফ ইবনে আবী বুরদা-এর সনদ ব্যতীত অন্য কোন সনদে হাদীসটি বর্ণিত আছে বলে আমাদের জানা নেই। আবূ বুরদা ইবনে আবী মূসা, তাঁর আসল নাম হল আমির ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে কায়স আল-আশআরী। এই বিষয়ে আয়েশা রাযি. এর হাদীসটি ব্যতীত অন্য কোন রিওয়ায়াত তেমন পরিচিত নয়।

পেশাব-পায়খানাকালে কিবলামুখী হওয়া নিষেধঃ-

৮। সাঈদ ইবনে আবদুর রাহমান আল-মাখযূমী রহ. এর সূত্রে……… আবূ আইয়্যুব আনসারী রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা পেশাব বা পায়খানার সময় কিবলার দিকে মূখ করবে না এবং সেদিকে পিছনও দিবে না বরং পূর্ব বা পশ্চিম দিকে ফিরে বসবে। আবূ আইয়্যুব রাযি. বলেন, পরে আমরা যখন শামে এলাম তখন সেখানকার পায়খানাগুলো কিবলার দিকে মুখ করে নির্মিত দেখতে পেলাম। আমরা এ থেকে ফিরে বসতাম আর আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করতাম।

এই বিষয়ে আবদুল্লাহ ইবনুল হারিছ, মা’কিল ইব্নে আবীল হায়ছাম, তিনি মাকিল ইব্নে আবী মা’কিল নামেও পরিচিত। আবূ উমামা, আবূ হুরায়রা ও সাহল ইব্নে হুনাইফ রাযি. থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। ইমাম আবূ ঈসা তিরমিয়ী রহ. বলেন, আবূ আইয়্যুব রাযি. বর্ণিত হাদীসটি এই বিষয়ে সর্বাপেক্ষা উত্তম ও বিশুদ্ধ। আবূ আইয়্যুব রাযি. এর নাম হল খালিদ ইবনে যায়েদ। রাবী আয-যুহরীর নাম হল মুহাম্মাদ ইব্নে মুসলিম ইব্নে উবায়দুল্লাহ্ ইব্নে শিহাব আয্-যুহরী। তাঁর উপনাম আবূ বকর।

আবুল ওয়ালীদ মক্কী বলেন, আবূ আবদুল্লাহ্ আশ্-শাফিঈ রহ. বলেছেন, “এ হাদীসের হুকুম মাঠ বা খোলা জায়গার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। প্রাচীর বেষ্টিত পেশাব-পায়খানায় কিবলামুখী হয়ে বসার অনুমতি আছে।” ইমাম ইসহাকের বক্তব্যও অনুরূপ। আহমদ ইবনে হাম্বাল রহ. বলেন, পেশাব-পায়খানার বেলায় কিবলার দিকে পেছন ফিরে বসার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু কিবলামুখী হয়ে বসার কোন অনুমতি নেই। অর্থাৎ তিনি খোলাস্থান বা নির্মিত পেশাব-পায়খানার কোথায়ও কিবলামুখী হয়ে বসা জায়েয বলে মনে করেন না।

এ ব্যাপারে অনুমতি-

৯। মুহাম্মাদ ইবনে বাশশার ও মুহাম্মাদ ইবনে মুছান্না রহ. ……. জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণনা করেন, পেশাবের সময় কিবলামুখী হয়ে বসতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছিলেন, কিন্তু তাঁর ইন্তেকালের এক বছর পূর্বে তাঁকে ঐ অবস্থায় কিবলামুখী হতে দেখেছি। এই বিষয়ে আবূ কাতাদা, আয়েশা ও আম্মার রাযি. থেকেও হাদীস বর্ণিত রয়েছে।
ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী রহ. বলেন, এই বিষয়ে হযরত জাবির রাযি. এর বর্ণিত হাদীসটি হাসান গরীব।

১০। হান্নাদ রহ. ….. ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি একদিন হযরত হাফসা রাযি. এর ঘরের ছাদে উঠেছিলাম। হঠাৎ দেখলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কা’বার দিকে পিছন দিয়ে এবং শামের দিকে মুখ করে তাঁর হাজত পূরণ (ইস্তিনজাহ) করেছেন।

১১। ইবনে লাহীআ …….. আবূ কাতাদা রাযি. সূত্রে বর্ণনা করেন, আবূ কাতাদা বলেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে কিবলামুখী হয়ে পেশাব করতে দেখেছেন। ইবনে লাহীআর এই রিওয়ায়াতটির তুলনায় হযরত জাবির সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে যে রিওয়ায়াতটি (৯নং) করেছেন সেটি অধিকতর সহীহ। হাদীস বিশারদগণের মতে ইবনে লাহীআ যঈফ বলে গণ্য। ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ আল কাত্তান প্রমুখ ইবনে লাহীআকে তাঁর স্মৃতি শক্তির দিক থেকে যঈফ বলে বর্ণনা করেছেন।
ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ।

দাঁড়িয়ে পেশাব করা নিষেধঃ-

১২। আলী ইবনে হুজর রহ. …….. আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণনা করেন, কেউ যদি তোমাদের বলে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়িয়ে পেশাব করতেন তবে তোমরা তা সত্য বলে বিশ্বাস করো না। তিনি বসা ছাড়া পেশাব করতেন না। এই বিষয়ে উমর, বুরায়দা ও আবদুর রহমান ইবনে হাসানাহ্ রাযি. থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী বলেন, এই বিষয়ে হযরত আয়েশা রাযি. বর্ণিত হাদীসটিই সর্বাপেক্ষা সহীহ এবং উত্তম। আবদূল করীম……. উমর রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে দাঁড়িয়ে পেশাব করতে দেখে বললেন, হে উমর! দাঁড়িয়ে পেশাব করো না। আমি কখনও দাঁড়িয়ে পেশাব করিনি।

ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এ হাদীসটি কেবল মাত্র রাবী আবদুল করীম-ই মারফু হিসাবে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু তিনি হাদীস বিশারদগণের মতে যঈফ বলে গণ্য। আইয়্যুব আস্-সাখতিয়ানী তাঁকে যঈফ বলেছেন এবং তাঁর সমালোচনা করেছেন। উবায়দুল্লাহ্ রহ…… উমর রাযি. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, ইসলাম গ্রহণের পর আমি কখনও দাঁড়িয়ে পেশাব করিনি। আবদুল করীম রিওয়ায়াত থেকে এই রিওয়ায়াতটি অধিক বিশুদ্ধ। এই বিষয়ে বুরাইদা রাযি.-র হাদীসটি মাহফূয (সংরক্ষিত) নয়। দাঁড়িয়ে পেশাব করা হারাম বলে নয় বরং আদব ও শিষ্টাচারের দৃষ্টিকোণ থেকে তা নিষেধ করা হয়েছে। ইবনে মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণিত রয়েছে, তিনি বলেছেন, দাঁড়িয়ে পেশাব করা শিষ্টাচার বিরোধী।

এ ব্যাপারে অনুমতি প্রসঙ্গে-

১৩। হান্নাদ রহ. হুযায়ফা রাযি. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার একটি আস্তাকুঁড়ের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে পেশাব করছিলেন। আমি তাঁর উযূর পানি নিয়ে আসছিলাম। আমি সরে যেতে চাইলে তিনি আমাকে (ইশারায়) ডাকলেন। আমি তাঁর পিছনে এসে দাঁড়ালাম। তারপর তিনি উযূ করলেন এবং চামড়ার মোজায় মাসেহ করলেন।

ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী রহ. বলেন, মানসূর ও উবায়দা আয-যাব্বী ও হুযায়ফা রাযি. থেকে এই ধরনের হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর হাম্মাদ ইব্নে আবী সুলায়মান হযরত মুগীরা ইবনে শু’বা রাযি. থেকে এই বিষয়ে আরেকটি হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন। আবূ ওয়াইলের বরাতে হযরত হুযায়ফা রাযি.-র রিওয়ায়াতটিই অধিকতর শুদ্ধ।

পেশাব করার সময় পর্দা দেয়াঃ-

১৪। কুতয়রা রহ…. আনাস রাযি. থেকে বর্ণনা করেন, পেশাব-পায়খানার সময় ভূমির নিকটবর্তী না হওয়া পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাপড় উঠাতেন না। ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, মুহাম্মাদ ইবনে রাবী’আও আ’মাশ-এর সনদে আনাস রাযি. থেকে অনুুরূপ বর্ণনা করেছেন। ওয়াকী’ ও আবূ ইয়াহইয়া আল-হিম্মানী রহ. হযরত ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণনা করেন যে. পেশাব-পায়খানার সময় ভূমির নিকটবর্তী না হওয়া পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাপড় উঠাতেন না। আনাস রাযি. ও ইবনে উমর রাযি. থেকে বর্ণিত উপরের দুটো হাদীসই মুরসাল। কারণ উভয় হাদীসই আ’মাশ এর সনদে বর্ণিত হয়েছে। আনাস ইবনে মালিক রাযি. বা অপর কোন সাহাবী থেকে আ’মাশ এর হাদীস শোনার সুযোগ হয়নি। তবে আনাস রাযি. কে তিনি দেখেছেন।

তিনি বলেন, আমি আনাসকে নামাযরত অবস্থায় দেখেছি। অতঃপর তিনি আনাস রাযি. থেকে সালাতের বিবরণ দেন। আ’মাশ-এর পূর্ণ নাম সুলায়মান ইবনে মিহরান আবূ মুহাম্মাদ আল-কাহিলী। তিনি আল-কাহিল গোত্রের আযাদকৃত দাস ছিলেন। আ’মাশ বলেন, আমার পিতাকে শৈশবে দারুল-হারব থেকে উঠিয়ে নিয়ে আসা হয়েছিল। পরবর্তীকালে ইমাম মাসরুক তাকে বৈধ উত্তরাধিকারী বলে রায় দিয়েছিলেন।

ডান হাতে ইস্তেঞ্জা করা মাকরূহঃ-

১৫। মুহাম্মাদ ইবনে আবী উমর মাক্কী রহ. ……… আবূ কাতাদা রাযি. থেকে বর্ণনা করেন। ডান হাতে লজ্জাস্থান স্পর্শ করতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন। এই বিষয়ে আয়েশা, সালমান আবূ হুরায়রা ও সাহল ইবনে হুনাইফ রাযি. থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী রহ. বলেন উক্ত হাদীসটি হাসান এবং সহীহ। আবূ কাতাদার আসল নাম আল-হারিছ ইব্নে রিব্ঈ। ফকীহ্ ও আলিমগণ এই হাদীস অনুসারে আমল করে থাকেন এবং তাঁরা ডান হাতে শৌচকর্ম করা মাকরূহ মনে করেন।

ইস্তিঞ্জায় ঢিলা ব্যবহার করাঃ-

১৬। হান্নাদ রহ. ………. আবদুর রহমান ইবনে ইয়াযীদ রহ. থেকে বর্ণনা করেন যে, সালমান রাযি. কে বলা হল, আপনাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনাদের সবকিছুই শিক্ষা দেন এমনকি দেখা যায় ইস্তিঞ্জায় কেমন করে বসতে হবে তাও শিখিয়ে থাকেন। হযরত সালমান রাযি. বললেন, হ্যাঁ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে পেশাব-পায়খানার সময় কিবলার দিকে মুখ করতে, ডান হাতে ইস্তিন্জা করতে, তিনটির কম পাথর দিয়ে ইস্তিন্জা করতে এবং পশুর মল ও হাড্ডী দিয়ে ইস্তিন্জা করতে নিষেধ করেছেন। আয়েশা, খুযাইমা ইবনে ছাবিত, জাবির রাযি. এবং খাল্লাদ ইবনুস সাইব থেকে তাঁর পিতার বরাতেও এই বিষয়ে হাদীস বর্ণিত আছে।

ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এই বিষয়ে হযরত সালমান রাযি. বর্ণিত হাদীসটি উত্তম এবং বিশুদ্ধ। এ হচ্ছে অধিকাংশ সাহাবী ও তৎপরবর্তী যুগের আলিম ও ফকীহগণের অভিমত। পেশাব ও পায়খানার চিহ্ন যদি ভালভাবে পরিষ্কার হয়ে যায় তাহলে পানি ব্যবহার না করে কেবল-মাত্র ঢিলা ব্যবহার করা যথেষ্ট হবে বলে তারা অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ইমাম ছাওরী, ইবনুল মুবারক, ইমাম শাফিঈ, ইমাম আহমদ, ইমাম ইসহাক রহ. ও এই মত প্রকাশ করেছেন।

দুটি ঢিলা দিয়ে ইস্তিঞ্জা করাঃ-

১৭।  হান্নাদ ও কুতায়বা রহ. এর সনদে …….. আবদুল্লাহ্ রাযি. থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার ইস্তিনজার উদ্দেশ্যে বের হলেন। তিনি আমাকে বললেন, আমার জন্য তিনটি পাথর তালাশ করে নিয়ে আস। আবদুল্লাহ রাযি. বলেন, আমি দু’টি পাথর ও এক টুকরা গোবর নিয়ে এলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাথর দু’টি গ্রহণ করলেন এবং গোবর ফেলে দিলেন। বললেন, এটি হল অপবিত্র।

ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, কায়স ইবনুর রাবীও এই হাদীসটি আবূ ইসহাক -আবূ উবায়দা- আবদুল্লাহ রাযি. এর সুত্রে রাবী ইসর্ঈালের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। মা’মার এবং আম্মার ইবনে যুরাইক ও আবূ ইসহাক-আলকামা-আবদুল্লাহ্ এর সূত্রে আর যুহাইর আবু ইসহাক-আবদুর রহমান ইবনুল আসওয়াদ-আসওয়াদ ইবনে ইয়াযীদ-আবদুল্লাহ রাযি. এর সূত্রে হাদীসটি রিওয়ায়াত করেছেন। যাকারিয়া ইব্নে আবী যাইদাও আবূ ইসহাক-আবদুর রহমান ইবনে ইয়াযীদ-আবদুল্লাহ্ রাযি. সূত্রে এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি সনদে ইযতিরাব রয়েছে।

ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, আমি আবদুল্লাহ্ ইবন্ আবদুর রহমানকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আবূ ইসহাকের বরাতে কার বর্ণনাটি অধিকতর সহীহ? তিনি এই বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত প্রদান করেননি। ইমাম মুহাম্মাদ আল-বুখারীকেও এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তিনিও কোনরূপ সিদ্ধান্ত ব্যক্ত করেননি। তবে তাঁর আচরণে মনে হয় যে, তিনি যুহাইর আবূ ইসহাক-আবদুর রহমান ইবনুল আসওয়াদ-তাঁর পিতা আল আসওয়াদ আব্দুল্লাহ রাযি. এর সূত্রটি অধিক গ্রহণযোগ্য মনে করেন। তিনি এই সূত্রে বর্ণিত হাদীসটিকে তাঁর জামি সহীহ (বুখারী শরীফ) তে স্থান দিয়েছেন। আমার মতে ইসরাঈল এবং কায়েস-আবূ ইসহাক-আবূ উবাইদা-আবদুল্লাহ রাযি. এর সূত্রটি অধিক সহীহ। কেননা, আবূ ইসহাক থেকে হাদীস বর্ণনার বিষয়ে এদের সবার চেয়ে ইসরাঈল অধিক নির্ভরযোগ্য ও স্মৃতিধর। তদুপরি কায়স ইবনুর রাবী’ও এই হাদীসটির বর্ণনায় ইসরাঈল সহযোগী।

আবূ মূসা মুহাম্মাদ ইবনুল মুছান্নাকে বলতে শুনেছি যে, আবদুর রহমান ইবনে মাহদী বলেন, ইসরাঈল উপর ভরসা করেই সুফইয়ান ছাওরীর সূত্রে আবূ ইসহাকের বর্ণিত হাদীস সমূহ আমি সংরক্ষণ করিনি। কেননা, ইসরাঈল ঐ হাদীস সমূহ যথাযথ এবং পুরাপুরিভাবে বর্ণনা করে থাকেন। ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, আবূ ইসহাক থেকে হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে যুহাইর তেমন নির্ভরযোগ্য নন। কেননা তিনি আবূ ইসহাকের শেষ বয়সে তাঁর হাদীস শুনেছেন। আহমদ ইবনুল হাসান আত্ তিরমিযীকে বলতে শুনেছি যে, আহমদ ইবনে হাম্বাল বলেন, যায়েদা এবং যুহাইর থেকে কোন হাদীস শুনতে পেলে অন্য কারো কাছ থেকে তা শুনলে কিনা কখনও এর পরওয়া করবে না। তবে আবূ ইসহাক থেকে বর্ণিত তাদের হাদীসের ক্ষেত্রে ভিন্ন কথা। আবূ ইসহাকের নাম হল আমর ইবনে আবদুল্লাহ আস সাবীঈ আল-হামদানী। আবূ উবাইদা ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ তাঁর পিতা ইবনে মাসউদ রাযি. থেকে হাদীস শুনেননি। তাঁর নাম তেমন প্রসিদ্ধ নয়।

কোন জিনিস দ্বারা এস্তেঞ্জা করা মাকরূহঃ-

১৮। হান্নাদ রহ. তাঁর উস্তাদ হাফস ইবনে গিয়াছের সূত্রে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা গোবর এবং হাড্ডি দ্বারা ইস্তিন্জা করবে না। কারণ এগুলো তোমাদের ভাই জিন্দের খাবার। এই বিষয়ে হযরত আবূ হুরায়রা, সালমান, জাবির এবং ইবনে উমর রাযি. থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, ইসমাঈল ইবনে ইবরাহীম এবং অপর কতিপয় রাবীও এই হাদিসটি দাউদ ইবনে আবী হিনদ- শা’বী- আলাকামা- আবদুল্লাহ-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

এতে উল্লেখ আছে যে, লাইলাতুল জিন বা জিন সম্পর্কিত ঘটনার রাতে হযরত আব্দুল্লাহ রাযি. নিজে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সঙ্গে ছিলেন। শা’বী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, তোমরা গোবর এবং হাড্ডি দ্বারা ইস্তিন্জা করো না। কেননা, এগুলো হলো তোমাদের ভাই জ্নিদের খাবার। হাফস ইব্নে গিয়াছের বর্ণনার তুলনায় ইসমাঈলে বর্ণনা অধিকতর শুদ্ধ। ফকীহ আলিমগণ এই হাদীসের বক্তব্য অনুসারে আমল করেন। হযরত জাবির ও ইবনে উমর রাযি. থেকেও এ বিষয়ে হাদীস বর্ণিত আছে

পানি দ্বারা ইস্তেঞ্জা করাঃ-

১৯। কুতায়বা মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল মালিক ইবনে আবিশ শাওয়ারিব রহ. …….. আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, তোমরা তোমাদের স্বামীদের পানির সাহায্যে শৌচ ক্রিয়া সম্পাদন করতে নির্দেশ দিবে, আমি নিজে তাদেরকে সে কথা বলতে লজ্জাবোধ করি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও এইরূপ করতেন। এই বিষয়ে জারীর ইবনে আবদুল্লাহ আল-বাজালী, আনাস ও আবূ হুরায়রা রাযি. থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এই হাদীসটি হাসান ও সহীহ। ফকীহ আলিমগণ এই ধরনের আমল করেন। পাথর বা ঢিলার সাহায্যে ইস্তিন্জা যথেষ্ট হলেও পানি দ্বারা ইস্তিনজা করাকে তাঁরা পছন্দনীয় ও উত্তম বলে মত ব্যক্ত করেছেন। (ইমাম আবূ হানিফা), সুফইয়ান ছাওরী, ইবনুল মুবারক, শাফিঈ, আহমদ ও ইসহাক রহ. ও অনুরূপ মত পোষণ করেন।

হাজত পুরা করার ইচ্ছে করলে নবীজী দূরে চলে যেতেনঃ-

২০। মুহাম্মাদ ইবনে বাশশার রহ. …… মুগীরা ইবনে শু’বা রাযি. থেকে বর্ণনা করেন, মুগীরা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে আমি এক সফরে ছিলাম। তিনি তাঁর ইস্তিঞ্জার প্রয়োজনে অনেক দূর চলে গেলেন। এই বিষয়ে আবদুর রহমান ইবনে আবী কুয়াদ, আবু কাতাদা, জাবির, উবায়দা, আবূ মূসা, ইবনে আব্বাস ও বিলাল ইবনুল হারিছ রাযি. থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে।

ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এই হাদীসটি হাসান ও সহীহ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তিনি অবস্থানের জন্য যেমন পছন্দসই জায়গা তালাশ করে নিতেন তেমনি পেশাবের জন্যও নরম স্থান তালাশ করে নিতেন। আবূ সালামার পূর্ণ নাম হল, আবদুল্লাহ ইবনে আবদুর রহমান ইবনে আওফ আয-যুহরী।

গোসলখানায় পেশাব করা মাকরূহঃ-

২১। আলী ইবনে হুজর ও আহমদ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে মূসা রহ. ……… আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল রাযি. থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (স.) গোসলখানায় পেশাব করতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন, সাধারণতঃ এ থেকেই ওয়াসাওয়াসার সৃষ্টি হয়ে থাকে। এই বিষয়ে অপর এক সাহাবী থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, এই হাদীসটি গরীব। আশ’আছ ইবনে আবদুল্লাহর সূত্র ব্যতীত মারফু হিসাবে এটি রিওয়ায়াত হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। আশআছ ইবনে আবদুল্লাহকে আশআছ আল আ’মা বলেও অভিহিত করা হয়। আলিমগণের এক দল গোসলখানায় পেশাব করা অপছন্দ করেছেন।

তাদের মতে সাধারণত এ থেকেই ওয়াস-ওয়াসার সৃষ্টি হয়। কোন কোন আলিম ফকীহ অবশ্য এই ব্যাপারে অনুমতি দিয়েছেন। এদের মধ্যে ইবনে সীরীন রহ. অন্যতম। তাঁকে বলা হয়েছে যে, সাধারণতঃ এ থেকেই ওয়াসওয়াসার সৃষ্টি হয়ে থাকে। আল্লাহই আমাদের রব। তাঁর সাথে আমরা কাউকে শরীক করি না। ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, আহমদ ইবনে আবদাতা আল-আমুলী স্বীয় সনদে ইবনুল মুবারক থেকে উক্ত কথাটি বর্ণনা করেন।

মিসওয়াক করাঃ-

২২। আবূ কুরায়ব রহ. ……. আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর হবে এই আশঙ্কা যদি না হত তাহলে আমি প্রত্যেক নামাযের সময় মিসওয়াক করতে তাদের নির্দেশ দিতাম।

ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক রহ. ……. আবূ সালামের সূত্রে যায়েদ ইবনে খালিদ থেকেও এই হাদীসটি হয়েছে। আবূ সালামার সুত্রে আবূ হুরায়রা ও যায়েদ ইবনে খালিদ রাযি. থেকে বর্ণিত উভয় হাদীসটি আমার জানা মতে সহীহ। কেননা আবূ হুরায়রা রাযি. থেকে হাদীসটি আরো বহু সূত্রে বর্ণিত রয়েছে। তবে মুহাম্মদ রহ. আবূ সালামার সূত্রে যায়েদ ইবনে খালিদ বর্ণিত হাদীসটি অধিকতর সহীহ বলে মত পোষণ করেন। এই বিষয়ে আবূ বকর সিদ্দীক, আলী, আয়েশা, ইবনে আব্বাস, হুযায়ফ, যায়েদ ইবনে খালিদ, আনাস, আবদুল্লাহ ইবনে আমর, ইবনে উমর, উম্মু হাবীবা, আবূ উমামা, আবু আইয়্যুব, তাম্মাম ইবনে আব্বাস, আবদুল্লাহ ইবনে হানযালা, উম্মু সালামা, ওয়াছিলা ইবনুল আসকা ও আবূ মূসা রাযি. থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে।

২৩। হান্নাদ রহ. ……. যায়েদ ইবনে খালিদ আল-জুহানী রাযি. থেকে বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর হবে এই আশঙ্কা যদি না হত তাহলে প্রতি নামাযের সময় আমি তাদের মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম, আর রাত্রের এক তৃতীয়াংশ সময় পর্যন্ত ঈশার নামায পিছিয়ে নিতাম। রাবী বলেন, লেখক তার কলম কানের যে স্থানে গুজে রাখে তেমনি হযরত যায়েদ ইবনে খালিদ রাযি. কানে মিসওয়াক গুজে রেখে সালাতের জন্য মসজিদে হাযির হতেন। সালাতে দাঁড়ানোর সময় তিনি মিসওয়াক করে নিতেন এবং পুনরায় তা স্বস্থানে রেখে দিতেন। ইমাম আবূ ঈসা তিরমিযী রহ. বলেন, এই হাদীসটি হাসান ও সহীহ।

(সহীহ জামি’ আত তিরমিযী-৫-২৩)