সুরা-বাকারাহ্
আয়াত-২৮৬
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অসীম দয়াল
وَإِذْ نَجَّيْنَاكُم مِّنْ آلِ فِرْعَوْنَ يَسُومُونَكُمْ سُوءَ الْعَذَابِ يُذَبِّحُونَ أَبْنَاءَكُمْ وَيَسْتَحْيُونَ نِسَاءَكُمْ ۚ وَفِي ذَٰلِكُم بَلَاءٌ مِّن رَّبِّكُمْ عَظِيمٌ
(৪৯) আর যখন তোমাদিগকে মুক্তি দিলাম ফেরাউনের দল হইতে যাহারা তোমাদিগকে কঠোর যন্ত্রনা দিবার মানসে থাকিত, হত্যা করিত তোমাদের পুত্র সন্তানদের জীবিত রাখিত তোমাদের মেয়ে (সন্তান) দেরকে। এবং ইহাতে তোমাদের প্রভুর পক্ষ হইতে অতি বড় পরীক্ষা ছিল।
وَإِذْ فَرَقْنَا بِكُمُ الْبَحْرَ فَأَنجَيْنَاكُمْ وَأَغْرَقْنَا آلَ فِرْعَوْنَ وَأَنتُمْ تَنظُرُونَ
(৫০) আর যখন আমি বিভক্ত করিয়াছিলাম তোমাদের জন্ম দরিয়া শুরকে অনন্তর তোমাদের উদ্ধার করিলাম, আর ডুবাইয়া দিলাম ফেরাউন দলকে আর তোমরা প্রত্যক্ষ করিতেছিলে।
وَإِذْ وَاعَدْنَا مُوسَىٰ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً ثُمَّ اتَّخَذْتُمُ الْعِجْلَ مِن بَعْدِهِ وَأَنتُمْ ظَالِمُونَ
(৫১) আর যখন আমি ওয়াদা করিয়াছিলাম
মূসার সহিত চল্লিশ রাত্রির, অনন্তর তোমরা স্থির করিলে বাছুর-পূজা, মূসার (তূরে যাওয়ার) পর আর তোমরা ছিলে সীমা লঙ্ঘনে দৃঢ়।
ثُمَّ عَفَوْنَا عَنكُم مِّن بَعْدِ ذَٰلِكَ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
(৫২) তবুও তোমাদের ক্ষমা করিলাম এত বড় ব্যাপারের পরেও আশা ছিল তোমরা শোকর করিবে।
وَإِذْ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ وَالْفُرْقَانَ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ
(৫৩) আর যখন আমি প্রদান করিলাম মূসাকে কিতাব এবং মীমাংসার বস্তু আশা ছিল, তোমরা ঠিক পথে চলিবে।
وَإِذْ قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ يَا قَوْمِ إِنَّكُمْ ظَلَمْتُمْ أَنفُسَكُم بِاتِّخَاذِكُمُ الْعِجْلَ فَتُوبُوا إِلَىٰ بَارِئِكُمْ فَاقْتُلُوا أَنفُسَكُمْ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ عِندَ بَارِئِكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ ۚ إِنَّهُ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
(৫৪) আর যখন মূসা বলিল, নিজ কাওমকে হে আমার কাওম! নিশ্চয় তোমরা নিজেদের ভয়ানক ক্ষতি করিলে এই বাছুর পূজা সাব্যস্ত করন দ্বারা; সুতরাং এখন তোমরা তওবা কর নিজেদের ¯্রষ্টার সমীপে। তৎপর তোমরা হত্যা কর একে অন্যকে; ইহা তোমাদের জন্য হিতকর হইবে তোমাদের ¯্রষ্টার সমীপে; অতঃপর আল্লাহ্ তোমাদের তওবা কবুল করিলেন; নিশ্চয় তিনি এরূপই যে,তওবা কবুল করিয়া থাকেন এবং করুনা বর্ষণ করেন।
শানে নুযুল:
১। জ্যোতির্ষীরা ফেরাউনকে বলিল,
বনী ইসরাঈল বংশে এক ছেলে জন্মিবে, যাহার দ্বারা তোমার রাজ্য ধ্বংস হইবে। এই জন্য ফেরাউন বনী ইসরাঈলদের সমস্ত নবজাত পুত্র সন্তানদিগকে হত্যা করিয়া ফেলিত এবং কন্যা সন্তানদিগকে জীবিত রাখিত। (বঃকোঃ)
২। পুত্র সন্তানদিগকে হত্যার মধ্যে ছবরের পরীক্ষা আর ফেরাউনীদের হাত হইতে রক্ষা করার মধ্যে শোকর গুযারীর পরিক্ষা (বঃকোঃ)
৩। ফেরাউনের যুলম হইতে আত্মরক্ষার জন্য আল্লার আদেশে বনী ইসরাঈলসহ মূসা (আঃ) গোপনে মিশর হইতে রওনা হইলেন। পথে সাগর পড়িল। আল্লার আদেশে সাগরের পানি ফাঁক হইয়া রাস্তা হইয়া গেল। মূসা স-দলে পার হইয়া গেলেন। তাঁহাদের পশ্চাদ্ধবন করিয়া ফেরাউনও সদলে উক্ত পথে নামিয়া পড়িলে উভয় দিক হইতে পানি আসিয়া তাহাদের শলিল সমাধি ঘটাইল। (বঃকোঃ)
وَإِذْ قُلْتُمْ يَا مُوسَىٰ لَن نُّؤْمِنَ لَكَ حَتَّىٰ نَرَى اللَّهَ جَهْرَةً فَأَخَذَتْكُمُ الصَّاعِقَةُ وَأَنتُمْ تَنظُرُونَ
(৫৫) আর যখন তোমরা বলিলে, হে মূসা! আমরা কখনও ঈমান আনিবো না তোমার কথায় যাবৎ না আল্লাহ্কে দেখিতে পাই প্রকাশ্যে, অতঃপর তোমাদের উপর বাজ পড়িল এবং তোমরা দেখতেছিলে।
ثُمَّ بَعَثْنَاكُم مِّن بَعْدِ مَوْتِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
(৫৬) অনন্তর তোমাদের জীবিত করিলাম তোমাদের মৃত্যুর পর, আশা ছিল যে, তোমরা শোকর করিবে।
وَظَلَّلْنَا عَلَيْكُمُ الْغَمَامَ وَأَنزَلْنَا عَلَيْكُمُ الْمَنَّ وَالسَّلْوَىٰ ۖ كُلُوا مِن طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ ۖ وَمَا ظَلَمُونَا وَلَـٰكِن كَانُوا أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ
(৫৭) আর ছায়া স্বরুপ করিলাম তোমাদের উপর মেঘকে এবং পাঠাইলাম তোমাদের নিকট মান্ন ও সাল্ওয়া; তোমরা খাও, উহার উৎকৃষ্ট বস্তুসমুহ হইতে যাহাকিছু আমি তোমাদিগকে দান করিয়াছি; আর তাহারা আমার কোন অনিষ্ট করে নাই পরন্তু নিজেদেরই অনিষ্ট করতেছিল।
وَإِذْ قُلْنَا ادْخُلُوا هَـٰذِهِ الْقَرْيَةَ فَكُلُوا مِنْهَا حَيْثُ شِئْتُمْ رَغَدًا وَادْخُلُوا الْبَابَ سُجَّدًا وَقُولُوا حِطَّةٌ نَّغْفِرْ لَكُمْ خَطَايَاكُمْ ۚ وَسَنَزِيدُ الْمُحْسِنِينَ
(৫৮) আর যখন আমি বলিলাম, প্রবেশ কর এই জনপদে অতঃপর খাইতে থাক উহা হইতে স্বচ্ছন্দে যেখানে তোমাদের ইচ্ছা হয় এবং দ্বারদেশে প্রবেশ কর নতশিরে আর বলিতে থাক “তওবা,”আমি মাফ করে দিব তোমাদের ভুল ভ্রান্তিসমূহ এবং অতি সত্বরই তদতিরিক্ত আরও দান করিব আন্তরিকতার সহিত নেক আমলকারীদিগকে।
فَبَدَّلَ الَّذِينَ ظَلَمُوا قَوْلًا غَيْرَ الَّذِي قِيلَ لَهُمْ فَأَنزَلْنَا عَلَى الَّذِينَ ظَلَمُوا رِجْزًا مِّنَ السَّمَاءِ بِمَا كَانُوا يَفْسُقُونَ
(৫৯) অনন্তর পরিবর্তন করিল এই যালিমরা তাহাদের প্রতি আদিষ্ট শব্দটি উহার বিপরীত অপর একটি শব্দ দ্বারা, অতএব আমি নাযিল করিলাম সেই যালিমদের প্রতি এক আসমানী বিপদ, এইজন্য যে, তাহারা হুকুম অমান্য করিতেছিল।
শানে নুযুল:
১। অর্থাৎ, তোমাদের মধ্যে যাহারা বাছুর পূজা করে নাই তাহারা বাছুর পূজকদিগকে হত্যা কর। বস্তুতঃ বনী ইসরাঈলদের তওবার নিয়ম এই ছিল যে, কেহ কবীরা গুনাহ করিলে তাহাকে হত্যা করিয়া ফেলাই ছিল তাহার তওবা। (বঃকোঃ)
২। শুভ্র-শিশির বাব রফ খন্ডের ন্যায় এক প্রকার সুমিষ্ট খাদ্যকে ‘মান্ন’ এবং বটের নামক এক প্রকারের পক্ষীকে, ‘সালউয়া’ বলা হইয়াছে। (বঃকোঃ)
৩। অর্থাৎ, আল্লাহ তা’আলা তাহাদিগকে সালউয়া পাখীর মাংস সঞ্চয় করিয়া রাখিতে নিষেধ করিয়াছিলেন। কিন্তু তাহারা লোভ বশতঃ সঞ্চয় করিয়া রাখিত। অবশেষে সঞ্চিত গোশত পচিতে লাগিল। ইহাকেই তাহাদের নিজেদের অনিষ্ট বলিয়াছেন।
৪। তাহারা এর পরিবর্তে (যবের মধ্যে বীজ) বলিল।(বঃকোঃ)
وَإِذِ اسْتَسْقَىٰ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ فَقُلْنَا اضْرِب بِّعَصَاكَ الْحَجَرَ ۖ فَانفَجَرَتْ مِنْهُ اثْنَتَا عَشْرَةَ عَيْنًا ۖ قَدْ عَلِمَ كُلُّ أُنَاسٍ مَّشْرَبَهُمْ ۖ كُلُوا وَاشْرَبُوا مِن رِّزْقِ اللَّهِ وَلَا تَعْثَوْا فِي الْأَرْضِ مُفْسِدِينَ
(৬০) আর যখন মূসা (আঃ) পানি প্রার্থনা করিল নিজ কাওমের জন্য, তখন আমি বলিলাম, আঘাত কর তোমার লাঠি দ্বারা অমুক পাথরটিতে, তখনই বাহির হইলো উহা হইতে বারটি প্র¯্রবণ, প্রত্যেকেই জানিয়া লইলো নিজ নিজ পান করিবার স্থান; খাও এবং পান কর আল্লাহর রিযক হইতে এবং সীমালঙ্ঘন করিও না দুনিয়াতে ফ্যাসাদ করিয়া।
وَإِذْ قُلْتُمْ يَا مُوسَىٰ لَن نَّصْبِرَ عَلَىٰ طَعَامٍ وَاحِدٍ فَادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُخْرِجْ لَنَا مِمَّا تُنبِتُ الْأَرْضُ مِن بَقْلِهَا وَقِثَّائِهَا وَفُومِهَا وَعَدَسِهَا وَبَصَلِهَا ۖ قَالَ أَتَسْتَبْدِلُونَ الَّذِي هُوَ أَدْنَىٰ بِالَّذِي هُوَ خَيْرٌ ۚ اهْبِطُوا مِصْرًا فَإِنَّ لَكُم مَّا سَأَلْتُمْ ۗ وَضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الذِّلَّةُ وَالْمَسْكَنَةُ وَبَاءُوا بِغَضَبٍ مِّنَ اللَّهِ ۗ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ كَانُوا يَكْفُرُونَ بِآيَاتِ اللَّهِ وَيَقْتُلُونَ النَّبِيِّينَ بِغَيْرِ الْحَقِّ ۗ ذَٰلِكَ بِمَا عَصَوا وَّكَانُوا يَعْتَدُونَ
(৬১) আর যখন তোমরা বলিলে, হে মূসা! আমরা একই রকমের খাদ্যের উপর কখনও থাকিব না, আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রভুর নিকট প্রার্থনা করুন, যেন পয়দা করেন আমাদের জন্য এমন খাদ্য যাহা জমিনে উৎপন্ন হয়-শাক, কাঁকুড়, গম, মুসুর এবং পেঁয়াজ; তিনি বলিলেন, তোমরা কি লইতে চাও নিকৃষ্ট বস্তুসমুহকে উৎকৃষ্ট বস্তুসমূহের বদলে? অবতরণ কর কোন শহরে অবশ্য পাইবে তোমরা তোমাদের প্রার্থিত দ্রব্যগুলি; আর স্থায়ী হইলো তাহাদের উপর লাঞ্চনা ও অধঃপতন, আর যোগ্য হইয়া পড়িল তাহারা আল্লাহর গযবের; ইহা এই জন্য যে, উহারা অমান্য করিয়া যাইতেছিল আল্লাহর হুকুমসমূহ এবং হত্যা করিতেছিল নবীগনকে অন্যায়ভাবে; আর ইহা এই কারনে যে, তাহারা অবাধ্য হইয়াছিল এবং বারংবার সীমালঙ্ঘন করিতেছিল।
শানে নুযুল:
১। এই ঘটনাটিও তীহ উপতাকায় ঘটিয়াছে। বনী ইসরাঈল পিপাসার্ত হইয়া হযরত মূসা (আঃ) এর নিকট পানি চাহিল। তাঁহার দোআয় একটি নির্দিষ্ট পাথর হইতে শুধু লাঠির আঘাতেই বারটি প্র¯্রবণ বাহির হইলো। হযরত ইয়াকুব (আঃ) এর বারটি সন্তানের বংশধরগন বনী ইসরাঈল নামে পরিচিত। তাহারা পৃথক পৃথক বারটি খান্দানে বিভক্ত ছিল। প্রত্যেক খান্দানের সামাজিক নিয়ম কানুন সমূহও পৃথক পৃথক রাখা হইতো। এই জন্যই পাথর হইতে বারোটি প্র¯্রবণ নির্ধারিত হইলো। (বঃকোঃ)
ফ: কাযী বায়যাবী বলেন, এই জাতীয় অলৌকিক ঘটনাগুলি অস্বীকার করা নিতান্ত ভ্রম, কোন কোন পাথর যখন লৌহকে আকর্ষণ করিতে পারে, তখন এই পাথরটি যমীন হইতে পানি আকর্ষণ করা এবং উহা হইতে পানি নিঃসৃত হওয়া অসম্ভব হইবে কেন?
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَالَّذِينَ هَادُوا وَالنَّصَارَىٰ وَالصَّابِئِينَ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَعَمِلَ صَالِحًا فَلَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
(৬২) সুনিশ্চিত যে, মুসলমান, ইহুদী, নাছারা এবং সাবেঈন সম্প্রদায় যাহারা বিশ্বাস রাখে আল্লাহর এবং কিয়ামতের প্রতি আর নেককাজ করে, তাহাদের জন্য পুরষ্কারও রহিয়াছে তাহাদের প্রভুর নিকট, তাহাদের কোন প্রকার ভয় নাই, তাহারা শোকান্বিতও হইবে না।
وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَاقَكُمْ وَرَفَعْنَا فَوْقَكُمُ الطُّورَ خُذُوا مَا آتَيْنَاكُم بِقُوَّةٍ وَاذْكُرُوا مَا فِيهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
(৬৩) আর যখন আমি তোমাদের অঙ্গীকার লইলাম এবং তুর পাহাড়কে উঠাইয়া ধরিলাম তোমাদের উপর (এবং বলিলাম) গ্রহন কর যে কিতাবটি আমি তোমাদিগকে দান করিয়াছি-দৃঢ়ভাবে এবং স্মরন রাখ যে সমস্ত হুকুম উহাতে আছে, আশা করা যায় যে, তোমরা মুত্তাকী হইতে পারিবে।
ثُمَّ تَوَلَّيْتُم مِّن بَعْدِ ذَٰلِكَ ۖ فَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ لَكُنتُم مِّنَ الْخَاسِرِينَ
(৬৪) অতঃপর তোমরা ফিরিয়া গেলে সেই অঙ্গীকারের পরেও, তখন যদি তোমাদের উপর আল্লাহর দয়া ও তাঁহার রহমত না হইত, তবে অবশ্যই তোমরা বিনাশপ্রাপ্ত হইতে।
وَلَقَدْ عَلِمْتُمُ الَّذِينَ اعْتَدَوْا مِنكُمْ فِي السَّبْتِ فَقُلْنَا لَهُمْ كُونُوا قِرَدَةً خَاسِئِينَ
(৬৫) আর তোমরা অবগতই আছ ঐ সমস্ত লোকের অবস্থা যাহারা তোমাদের মধ্য হইতে শনিবার সম্বন্ধীয় আদেশ অমান্য করিয়াছিল; সুতরাং আমি তাহাদিগকে বলিয়া দিলাম, তোমরা হইয়া যাও লাঞ্চিত বানর।
فَجَعَلْنَاهَا نَكَالًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهَا وَمَا خَلْفَهَا وَمَوْعِظَةً لِّلْمُتَّقِينَ
(৬৬) অনন্তর আমি ইহাকে করিলাম একটি শিক্ষনীয় বিষয় তৎকালীনদের জন্যও এবং পরবর্তীদের জন্যও আর উপদেশ স্বরূপ করিলাম মুত্তাকীদের জন্য।
শানে নুযুল:
১। অর্থাৎ এই হত্যাকান্ড স্বয়ং তাহাদের বিবেচনায়ও অন্যায়ভাবেই হইতেছিল। (বঃকোঃ)
২। তূর পর্বত হইতে তাওরাত আনার সময় মূসা (আঃ) বনী ইসরাঈলের সত্তর জন মাতব্বরকে সাক্ষীরূপে সঙ্গে নিয়াছিলেন। তাহারা ফিরিয়া আসিয়া কাওমের নিকট সঠিক সাক্ষ্য দিয়া তৎসঙ্গে ইহাও বলিল যে, আল্লাহ্ তা‘আলা বলিয়া দিয়াছেন ‘তোমরা যতটুকু পার আমল কর এবং যাহা না পার তাহা ক্ষমার যোগ্য।’ ফলে ইহুদীরা তাহাদের স্বভাবগত দুষ্টামী বশত এবং মাতব্বরদের মিথ্যা সংযোগের কারনে সুযোগ পাইয়া পরিষ্কার বলিয়া দিল আমরা কিছুতেই এই কিতাব অনুযায়ী আমল করিতে পারিব না। তখন আল্লাহ্ তা‘আলা ফেরেশতাদিগকে তূর পাহাঢ়ের এক অংশ তাহাদের মাথার উপর ধরিতে বলিলেন। অবশেষে নিরূপায় হইয়া তাহারা মানিয়া লইল। (বঃকোঃ)
وَإِذْ قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَن تَذْبَحُوا بَقَرَةً ۖ قَالُوا أَتَتَّخِذُنَا هُزُوًا ۖ قَالَ أَعُوذُ بِاللَّهِ أَنْ أَكُونَ مِنَ الْجَاهِلِينَ
(৬৭) আর যখন মূসা (আঃ) স্বীয় সম্প্রদায়কে বলিলেন আল্লাহ্ আদেশ করিতেছেন তোমরা একটি বলদ যব্হা কর, তাহারা বলিল, আপনি কি আমাদিগকে উপহাস্য বানাইতেছেন? মূসা বলিলেন, আমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করিতেছি এনরূপ মূর্খ লোকদের ন্যায় কাজ করা হইতে।
قَالُوا ادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُبَيِّن لَّنَا مَا هِيَ ۚ قَالَ إِنَّهُ يَقُولُ إِنَّهَا بَقَرَةٌ لَّا فَارِضٌ وَلَا بِكْرٌ عَوَانٌ بَيْنَ ذَٰلِكَ ۖ فَافْعَلُوا مَا تُؤْمَرُونَ
(৬৮) তাহারা বলিল, আপনি প্রার্থনা করুন, আমাদের জন্য আপনার প্রভুর নিকট তিনি যেনো আমাদিগকে বলিয়া দেন উহার কি কি গুনবিশিষ্ট হওয়া চাই। মূসা বলিলেন, আল্লাহ্ বলিতেছেন যে, উহা এমন বলদ হওয়া চাই যাহা একেবারে বৃদ্ধও নয় একেবারে বাচ্চাও নয়, এতদুভয়ের মধ্যবর্তী জোয়ান, অতএব,এ খন আদেশ অনুযায়ী করিয়া ফেল।
قَالُوا ادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُبَيِّن لَّنَا مَا لَوْنُهَا ۚ قَالَ إِنَّهُ يَقُولُ إِنَّهَا بَقَرَةٌ صَفْرَاءُ فَاقِعٌ لَّوْنُهَا تَسُرُّ النَّاظِرِينَ
(৬৯) তাহারা বলিল, প্রার্থনা করুন আমাদের জন্য, আপনার প্রভুর নিকট তিনি যেন আমাদিগকে বলিয়া দেন উহার রং কি? তিনি বলিলেন, আল্লাহ্ বলেন, উহা একটি হলদে রঙ্গের বলদ, তীব্র হলদে উহার রং,দর্শকদিগকে আনন্দ দেয়।
قَالُوا ادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُبَيِّن لَّنَا مَا هِيَ إِنَّ الْبَقَرَ تَشَابَهَ عَلَيْنَا وَإِنَّا إِن شَاءَ اللَّهُ لَمُهْتَدُونَ
(৭০) তাহারা বলিল, আমাদের জন্য প্রার্থনা করুন আপনার প্রভুর নিকট তিনি যেন’ বলিয়া দেন উহা কি কি গুণসম্পন্ন হওয়া চাই, কেননা, এই বলদ সম্বন্ধে আমাদের সংশয় হইতেছে এবং নিশ্চয় আমরা ইনশা-আল্লাহ্ ঠিক বুঝিতে পারিব।
قَالَ إِنَّهُ يَقُولُ إِنَّهَا بَقَرَةٌ لَّا ذَلُولٌ تُثِيرُ الْأَرْضَ وَلَا تَسْقِي الْحَرْثَ مُسَلَّمَةٌ لَّا شِيَةَ فِيهَا ۚ قَالُوا الْآنَ جِئْتَ بِالْحَقِّ ۚ فَذَبَحُوهَا وَمَا كَادُوا يَفْعَلُونَ
(৭১) মূসা (আঃ) বলিলেন, আল্লাহ বলেন,উ হা এমন বলদ যাহা না যমিন কর্ষনে ব্যবহ্যত হয়, না কৃষি খেতে পানি সেচনে, নিখুঁত, উহাতে কোন দাগ থাকিবে না; তাহারা বলিল, এখন আপনি পূর্ণ বর্ণনা দিলেন, অনন্তর উহা যবাহ্ করিল, কিন্তু করিবে বলিয়া মনে হইতে ছিল না।
শানে নুযুল:
১। অর্থাৎ, কোথায় হত্যাকারীর অনুসন্ধান করা আর কোথাও জানওয়ার যবাহ্ করা ইহা বিদ্রূপ ছাড়া আর কি হইতে পারে? (বঃকোঃ)
২। অর্থাৎ, আমি কি এমনই জাহেল যে, আল্লাহ্ তা‘আলার হুকুমের ব্যাপারেও বিদ্রুপ করিতে আরম্ভ করিব। (বঃকোঃ)
ফঃ বনী ইসরাঈলদের এক ব্যাক্তি অপর ব্যাক্তির কন্যাকে বিবাহ করিতে প্রস্তাব করিলে তাহা প্রত্যাখ্যান হয়। প্রস্তাবকারী কন্যার পিতাকে হত্যা করে। বনী ইসরাঈল মূসা (আঃ) এর নিকট উক্ত হত্যার সন্ধান দাবী করিলে তিনি আল্লার হুকুম অনুযায়ী তাহাদিগকে একটি বলদ যবাহ্ করিতে বলিলেন। তাহারা নিজেদের স্বভাবগত কূট তর্ক আরম্ভ করিল। (বঃকোঃ)
৩। অর্থাৎ, এরূপ সংশয় হইতেছে যে, ইহা মামুলী বলদ হইবে, না অদ্ভুত ও দুর্লভ হইবে, যাহাতে হত্যাকারীর অনুসন্ধান ব্যাপারে বিশেষ লক্ষন থাকিবে। (বঃকোঃ)
সূরা ফাতিহা পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-
সুরা-বাকারাহ্ এর আয়াত ০১ হতে ৪৯ পর্যন্ত বাংলা অর্থ পড়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন-