সুরা-বাকারাহ্ এর বাংলা
আয়াত-২৮৬
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি মহান আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু
وَمَا أَنفَقْتُم مِّن نَّفَقَةٍ أَوْ نَذَرْتُم مِّن نَّذْرٍ فَإِنَّ اللَّهَ يَعْلَمُهُ ۗ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ
(২৭০) আর তোমরা যে-কোন প্রকার ব্যয় কর অথবা যে-কোন প্রকার মানত কর, আল্লাহ্ উহার সবকিছুই নিশ্চিতভাবে অবগত আছেন। আর অনাচারীদের কোন সাহায্যকারী থাকিবে না।
(২৭১) যদি তোমরা প্রকাশ্যে প্রদান কর ছদ্কাসমুহ সে-ও ভাল কথা। আর যদি উহাতে গোপনীয়তা অবলম্বন কর ও দরিদ্রদিগকে দিয়া দাও, তবে এই গোপনীয়তা তোমাদের জন্য অতি উত্তম। এবং আল্লাহ্ তোমাদের কতিপয় পাপও মোচন করিয়া দিবেন। আর আল্লাহ্ তোমাদের কৃত-কর্মের পূর্ণ খবর রাখেন।
لَّيْسَ عَلَيْكَ هُدَاهُمْ وَلَـٰكِنَّ اللَّهَ يَهْدِي مَن يَشَاءُ ۗ وَمَا تُنفِقُوا مِنْ خَيْرٍ فَلِأَنفُسِكُمْ ۚ وَمَا تُنفِقُونَ إِلَّا ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللَّهِ ۚ وَمَا تُنفِقُوا مِنْ خَيْرٍ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنتُمْ لَا تُظْلَمُونَ
(২৭২) ইহাদিগকে সৎপথে (ইসলামে) আনয়ন করা আপনার দ্বায়িত্ব নহে, বরং আল্লাহ্ যাহাকে ইচ্ছা সৎপথে আনয়ন করেন। আর যাহাকিছু তোমরা ব্যয় কর, নিজেদের সার্থের জন্যই কর। আর তোমরা অন্য কোন উদ্দেশ্যেই ব্যয় করিও না আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অন্বেষণ ব্যতীত;আর তোমরা যে সম্পদ ব্যয় করিতেছ, এই সমস্তের (ছওয়াব) তোমরা পুরাপুরি প্রাপ্ত হইবে এবং তোমাদের জন্য ইহাতে কিছুমাত্র কম করা হইবে না।
(২৭৩) প্রকৃত দাবী সেই অভাবীদেরই যাহারা আবদ্ধ হইয়া পড়িয়াছে আল্লাহর পথে, তাহাদের পক্ষে দেশের কোথাও বিচরণ করা সম্ভব হয় না। যাহারা ওয়াকেফহাল নহে তাহারা ইহাদিগকে ধনী মনে করে, ইহারা যাত্রা করা হইতে বিরত থাকার দরুন। তোমরা ইহাদিগকে চিনিয়া লইতে পারিবে ইহাদের লক্ষনের দ্বারা। তাহারা লোকের নিকট ব্যাকুলভাবে যাত্রা করিয়া বেড়ায় না; আর যে অর্থ তোমরা ব্যয় করিবে নিশ্চয়, আল্লাহ্ উহার পূর্ণ খবর রাখেন।
শানে নুযুল:
১। যাহারা লোক দেখানো উদ্দেশ্যে দান করে কিংবা দান করিয়া দানের খোটা বা অনুযোগ দিয়া প্রার্থীর মনে কষ্ট দেয়, তাহাদের দৃষ্টান্ত সেই ব্যাক্তর ন্যায় যে-ব্যক্তি যৌবন কালে বাগান রচনা করিয়াছে বার্ধক্যে ভোগ করার উদ্দেশ্যে। কিন্তু ফল খাওয়ার সময় আসিলে দেখা গেল, বাগান জ্বলিয়া ভস্মিভ’ত হইয়া গিয়াছে। অর্থাৎ, উপরোক্তরূপ দাতাও দানের ফল আখেরাতে ভোগ করিবে বলিয়া আশায় রহিয়াছে। কিন্তু নিয়ত ভালো না থাকায় তাহার দানের সওয়াব নষ্ট হইয়া গিয়াছে। আখেরাতে ফল ভোগ করিবার সময় কিছুই পাইবে না। (মুঃকোঃ)
২। কোন কোন লোক দানের উদ্দেশ্যে হুযুরের খেদমতে নিকৃষ্ট বস্তু উপস্থিত করিত। তৎসম্বন্ধে এই আয়াতটি নাযিল হইয়াছে। আয়াতটির উদ্দেশ্যে উত্তম বস্তু থাকিতে নিকৃষ্ট বস্তু দান করিলে সওয়াব হইবে না। (বঃকোঃ)
৩। ফরয ও নফল সর্বপ্রকারের ছদ্কাই এই আয়াতের অন্তর্ভুক্ত। দানে গোপনীয়তা অবলম্বন করাই উত্তম। ইহাতে রিয়া হয় না, গ্রহণকারীরাও লজ্জানুভব করে না,ধন-সম্পদের পরিমান লোকে জানিতে পারে না, অবশ্য বিশেষ কারনে প্রকাশ্যে দান করাও উত্তম। যেমন, অপবাদ হইতে রক্ষিত থাকা, অপরে অনুসরণ করিবে বলিয়া আশা করা ইত্যাদি। (বঃকোঃ)
৪। ছাহাবা (রাঃ) এর মধ্যে অনেকেই এই উদ্দেশ্যে কাফিরদিগকে দান করিতেন না যে, হয়ত এই উপায়ে কিছু সংখ্যক লোক মুসলমান হইয়া যাইবে। আর হুযুরও এই অভিমতই প্রকাশ করিয়াছিলেন। এই সম্বন্ধেই আয়াতটি নাযিল হইয়াছে। (বঃকোঃ)
৫। অন্যান্য মানুষকে দান করার চেয়ে ইহাদিগকে দান করিলে অধিক সওয়াব পাওয়া যইবে। (বঃকোঃ)
(২৭৪) যাহারা ব্যয় করে নিজেদের সম্পদসমূহ রাত্রে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যেভাবে, (সর্বাবস্থায়) তাহারা তাহাদের সওয়াব পাইবে তাহাদের রবের নিকটে এবং না তাদের কোন আশংকা আছে আর না তাহারা চিন্তান্বিত হইবে।
(২৭৫) যাহারা সুদ গ্রহণ করে, তাহারা দাঁড়াইবে না সেই অবস্থা ব্যতীত যে অবস্থায় দাঁড়ায় সেই ব্যক্তি যাহাকে শয়তান স্পর্শ করিয়া মোহাভিভূত করিয়া দেয়। ইহা এই জন্য যে, তাহারা বলিয়াছিল, ক্রয়-বিক্রয় সুদের ন্যায়ই। অতচ আল্লাহ্ হালাল করিয়াছেন ক্রয়-বিক্রয়কে এবং হারাম করেছেন সুদকে। অতঃপর যাহার নিকট স্বীয় রবের তরফ হইতে উপদেশ পৌছিয়াছে, অনন্তর সে বিরত রহিয়াছে। তবে তাহারাই থাকিবে যাহাকিছু পূর্বে হইয়াছে। আর তাহার বিষয়টি আল্লাহর হাওয়ালায় রহিল। আর যাহারা পুনরায় সুদ গ্রহন করে, তবে তাহারা দোযগবাসী হইবে। তাহারা উহাতে অনন্তকাল থাকিবে।
يَمْحَقُ اللَّهُ الرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ ۗ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيمٍ
(২৭৬) আল্লাহ্ সুদকে ধ্বংস করিয়া দেন এবং ছদ্কাকে বৃদ্ধি করিয়া দেন। আর আল্লাহ্ পছন্দ করেন না কোন অমান্যকারীকে, কোন পাপাচারীকে।
শানে নুযুল:
১। অর্থাৎ, সুদখোর কিয়ামতের দিন ভুতাশ্রিত লোকের ন্যায় জ্ঞানেন্দ্রীয় বিকৃত অবস্থাই কবর হইতে উঠিবে। (বঃকোঃ)
২। অর্থাৎ, বেচা-কেনাও লাভের জন্য এবং সুদও লাভের জন্য। অতএব সুদও হালাল হওয়া উচিত। (বঃকোঃ)
৩। অথচ উভয়ের মধ্যে প্রকাশ্যে পার্থক্য রহিয়াছে। আল্লাহ্ তা’আলা সুদকে হারাম ও ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল করিয়াছেন। (বঃকোঃ)
৪। অর্থাৎ, সুদকে হারাম মনে করিল এবং সুদ খাওয়া পরিত্যাগ করিল। (বঃকোঃ)
৫। অর্থাৎ, তওবা করিলে ও সুদ খাওয়া ত্যাগ করিলে শরীয়তের বাহিৃক ব্যবস্থায় তাহার তওবা কবুল হইল এবং পূর্বে গৃহীত সুদের টাকাও তাহারই হইল। আর তাহার আভ্যন্তরীন বিষয় অর্থাৎ, সে অন্তরের সহিত তওবা করিল এই মীমাংসা আল্লাহর হাতে রহিল। যদি খালেছ তওবা করিয়া থাকে, তবে ফলপ্রদ হইবে, অন্যথায় এই তওবায় কোনই ফল হইবে না (বঃকোঃ)
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
(২৭৭) নিশ্চয়, যাহারা ঈমান আনিয়াছে, এবং নেক কাজ করিয়াছে, আর নামাযের পাবন্দী করিয়াছে, আর যাকাত আদায় করিয়াছে, তাহারা তাহাদের ছওয়াব পাইবে তাহাদের রবের নিকট। এবং না তাহাদের কোন আশংকা থাকিবে এবং না তাহারা চিন্তান্বিত হইবে।
(২৭৮) হে মুমেনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যাহা বকেয়া রহিয়াছে তাহা পরিত্যাগ কর যদি তোমরা ঈমানদার হও।
فَإِن لَّمْ تَفْعَلُوا فَأْذَنُوا بِحَرْبٍ مِّنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ ۖ وَإِن تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوسُ أَمْوَالِكُمْ لَا تَظْلِمُونَ وَلَا تُظْلَمُونَ
(২৭৯) অতঃপর যদি তোমরা না কর, তবে যুদ্ধের ঘোষনা শুনিয়া লও আল্লার পক্ষ হইতে ও তাঁহার রাসুলের পক্ষ হইতে। আর যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমরা তোমাদের মূলধন প্রাপ্য হইবে। না তোমরা কাহারো প্রতি যুলুম করিতে পারিবে আর না তোমাদের প্রতি কেহ যুলুম করিতে পারিবে।
(২৮০) আর যদি (দেনাদার) অভাবী হয়, তবে অবকাশ দেওয়ার হুকুম আছে সচ্ছলতা পর্যন্ত। আর মা’ফ করিয়া দেওয়া আরও উত্তম তোমাদের জন্য, যদি তোমাদের অবগতি থাকে।
(২৮১) আর সেই দিনকে ভয় কর, যে-দিন তোমরা আল্লার সমীপে নীত হইবে। অতঃপর প্রত্যেকেই তাহার কৃতকর্ম (-র ফল) পুরাপুরি প্রাপ্ত হইবে, এবং তাহাদের উপর কোন প্রকার অবিচার করা হইবে না।
শানে নুযুল:
১। মাসআলাঃ অর্থাৎ, কেহ যদি হালাল মনে করিয়া সুদ খাওয়া না ছাড়ে, তবে সে কােেফর হইবে এবং অন্যান্য কাফেরের ন্যায় তাহার সহিতও যদ্ধি করিতে হইবে। সুদকে হালাল মনে করে না কিন্তু অর্থোপার্জনের উদ্দেশ্যে তাহা পরিত্যাগও করে না, তবে এইরূপ অবস্থায় মুসলিম রাষ্টপ্রধান তাহাকে তওবা ও সুদ পরিত্যাগ করিতে বাধ্য করিবে। আর সে যদি দলবদ্ধ হইয়া রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় তবে তাহার সহিত যুদ্ধ করা ওয়াজেব। (বঃকোঃ)
২। কিন্তু সুদকে হালাল মনে করার কারণে তওবা না করিলে মূলধনও প্রাপ্ত হইবে না বরং সে মুরতাদ হইয়া যাইবে। (বঃকোঃ)
৩। অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিকে যেকোন প্রকার ঋন পরিশোধের জন্য অবকাশ দেওয়া ওয়াজেব।
৪। অর্থাৎ, কাহারও পক্ষপাতিত্ব করিয়া লিখার বিষয়বস্তুকে যেন কম বেশী না করে। (বঃকোঃ)
৫। কেননা, দলীলের সার হইল দাবীর স্বীকৃতি। সুতরাং যাহার উপর দাবী অর্থাৎ, সে দেনাদার তাহার স্বীকৃতিই আবশ্যক। (বঃকোঃ)
৬। ‘ক্ষীণ-বুদ্ধি’ বলিতে পাগল, দুর্বল বলিতে অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু অথবা বৃদ্ধ উদ্দেশ্যে। (বঃকোঃ)
(২৮২) হে মুমিনগণ! যখন আদান-প্রদান করিতে চাও ধারের; এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তবে উহা লিপিবদ্ধ করিয়া লও। আর অবশ্য যেন তোমাদের মধ্যে কোন লিখক ন্যায়-সঙ্গতভাবে লিপিবদ্ধ করে। আর কোন লিখক যেন লিপিবদ্ধ করিতে অস্বীকারও না করে– যেরূপ আল্লাহ্ তাহাকে শিক্ষা দিয়াছেন, তাহারও কর্তব্য লিখিয়া দেওয়া, আর ঐ ব্যক্তি মোসাবিদা করাইবে, যাহার উপর দাবী ওয়াজেব হয়। আর আল্লাহ্ তা’আলাকে যিনি তাহার প্রতিপালক–ভয় করিতে থাকে। আর ইহাতে (লিপিবদ্ধ করাইতে) বিন্দুমাত্রও কম করিবে না। অপিচ যাহার উপর দাবি ওয়াজেব ছিল, সে যদি ক্ষীণবুদ্ধি হয়, অথবা স্বয়ং মোসাবিদা করিতে অক্ষম হয় তবে তাহার কার্য নির্বাহক যথাযথভাবে মোসাবিদা করাইয়া লইবে। আর দুইজন পুরুষকে তোমাদের মধ্যে হইতে সাক্ষী করিয়া লও। কিন্তু যদি এই দুই সাক্ষী পুরুষ না হয়, তবে একজন পুরুষ এবং দুইজন স্ত্রীলোক– এমন সাক্ষীদের মধ্যে হইতে যাহাদিগকে তোমরা পছন্দ কর যেন এই দুইজন স্ত্রীলোকের মধ্যে কোন একজন ভুলিয়া গেলে তাহাদের একজন অপরজনকে স্মরণ করিয়া দিতে পারে। আর সাক্ষীরাও যেন অস্বীকার না করে, যখন তাহাদিগকে ডাকা হয়, আর তোমরা উহা নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত লিখিতে বিতৃষ্ণ হইও না, চাই উহা এই লিখন সমধিক সুবিচার প্রতিষ্ঠাকারী আল্লার নিকট এবং সাক্ষ্যের জন্য সমধিক সঠিকতা সংরক্ষণকারী। আর তোমাদের সন্দেহে পতিত না হওয়ার জন্য বেশী সুবিধাজনক; কিন্তু কোন সওদা হাতে হাতে হইলে, যাহা তোমরা পরস্পর (নগদ) আদান-প্রদান করিয়া থাক, লিপিবদ্ধ না করায় তোমাদের কোন দোষ নাই। আর ক্রয়-বিক্রয়ের সময় তোমরা সাক্ষী করিয়া লইও। আর কোন লিখককে যেন কষ্ট দেওয়া না হয় এবং কোন সাক্ষীকেও না; আর যদি তোমরা এইরূপ কর, তবে এহাতে তোমাদের গোনাহ্ হইবে। আর আল্লাহ্কে ভয় কর। এবং আল্লাহ তা’আলা তোমাদিগকে শিক্ষা প্রদান করেন। আর আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে মহা-জ্ঞানী।
وَإِن كُنتُمْ عَلَىٰ سَفَرٍ وَلَمْ تَجِدُوا كَاتِبًا فَرِهَانٌ مَّقْبُوضَةٌ ۖ فَإِنْ أَمِنَ بَعْضُكُم بَعْضًا فَلْيُؤَدِّ الَّذِي اؤْتُمِنَ أَمَانَتَهُ وَلْيَتَّقِ اللَّهَ رَبَّهُ ۗ وَلَا تَكْتُمُوا الشَّهَادَةَ ۚ وَمَن يَكْتُمْهَا فَإِنَّهُ آثِمٌ قَلْبُهُ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ
(২৮৩) আর যদি তোমরা কোথাও প্রবাসে থাক এবং কোন লিখক না পাও, তবে বন্ধকী দব্যসমূহ, যাহা অধিকারে দেওয়া হয়; আর যদি একে অপরকে বিশ্বাস করে, তবে বিশ্বাসকৃত ব্যক্তির উচিত, যেন অপরের হক পরিশোধ করিয়া দেয়, আর যেন ভয় করে আল্লাহ্কে, যিনি তাহার প্রতিপালক। আর তোমরা সাক্ষ্য গোপন করিও না; আর যে ব্যক্তি ইহা গোপন করিবে তাহার অন্তর পাপী হইবে, আর আল্লাহ্ তোমাদের কৃতকর্মকে খুব ভালভাবে জানেন।
শানে নুযুল:
১। ‘স্বয়ং লিখিতে অক্ষম’ যেমন বোবা হইলে এবং লিখক তাহার ইশারা-ইঙ্গিত বুঝিতে না পারিলে অথবা ভিন্ন দেশের অধিবাসী ও ভাষা ভিন্ন হইলে লিখক যদি তাহার কথা বুঝিতে না পারে। (বঃকোঃ)
২। ধর্ম বিধানে সাক্ষী দাবী প্রমাণিত হওয়ার মূলভিত্তি,যদিও কোন দলীল না থাকে। আর সাক্ষী ব্যতীত শুধু দলীলই প্রমানের জন্য যথেষ্ট নহে। (বঃকোঃ)
৩। “স্মরণ করাইয়া দিতে পারে” কথা হইতে বুঝা যায়, স্মরণ রাখাই সাক্ষ্য প্রদানের ভিত্তি। (বঃকোঃ)
৪। কেননা, হয়ত বিক্রেতা বলিতে পারে, আমি মূল্য পাই নাই। কিংবা এই দ্রব্য আমি বিক্রয় করি নাই অথবা ক্রেতা বলিতে পারে, আমার তো ফেরত দেয়ার অধিকার ছিল কিংবা ক্রীত দ্রব্য এখনও সম্পূন্ন আমার হাতে আসে নাই। (বঃকোঃ)
৫। প্রবাসে বন্ধক রাখা যেমন জায়েয তদ্রুভ বাড়ীতে থাকা কালেও জায়েয। তবে এখানে প্রবাস কালের কথা বিশেষ করে এই জন্য বলা হইয়াছে যে, প্রবাসে ইহার আবশ্যকতা অধিকতর হয়। কেননা, প্রবাসে সাক্ষী রাখা এবং দলীল সম্পাদন করা অধিকাংশ সময়ে সহজসাধ্য হয় না। (বঃকোঃ)
৬। (ক) মূলে সাক্ষ্য না দিয়া কিংবা ভুল সাক্ষ্য দিয়া সত্য সাক্ষ্য গোপন করা হারাম।
(খ) যখন কোন দাবী-দারের দাবী তাহার সাক্ষ্যের অভাবে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয় এবং তাহাকে সাক্ষ্য প্রদাণের জন্য ডাকাও হয়, এমতাবস্থায় সাক্ষ্য প্রদান করিতে অস্বীকার করা হারাম।
لِّلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ وَإِن تُبْدُوا مَا فِي أَنفُسِكُمْ أَوْ تُخْفُوهُ يُحَاسِبْكُم بِهِ اللَّهُ ۖ فَيَغْفِرُ لِمَن يَشَاءُ وَيُعَذِّبُ مَن يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
(২৮৪) আল্লাহ্ তা’আলারই সত্বাধীন রহিয়াছে সবকিছু যাহা আসমানসমূহে আছে এবং যাহা যমিনে আছে। আর যাহা তোমাদের অন্তরে আছে, উহা চাই তোমরা প্রকাশ কর অথবা গোপন রাখ, আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদের নিকট হইতে উহার হিসাব লইবেন। অনন্তর তিনি যাহাকে ইচ্ছা ক্ষমা করিয়া দিবেন এবং যাহাকে ইচ্ছা শাস্তি দিবেন। আর আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে পূর্ণ ক্ষমতাবান।
آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْهِ مِن رَّبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ ۚ كُلٌّ آمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّن رُّسُلِهِ ۚ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا ۖ غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ
(২৮৫) বিশ্বাস রাখেন রাসুল সেই বিষয়ের প্রতি যাহা তাঁহার প্রতি নাযিল করা হইয়াছে তাঁহার প্রভুর পক্ষ হইতে আর মুমেনগণও; সকলেই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি এবং তাঁহার ফেরেশতাগণের প্রতি ও তাঁহার কিতাবসমূহের প্রতি এবং তাঁহার পয়গম্বরগণের প্রতি এইমর্মে যে, আমরা তাঁহার পয়গম্বরগণের মধ্যে কাহাকেও পার্থক্য করি না, আর তাঁহারা সকলেই বলিল, আমরা শ্রবণ করিলাম এবং সানন্দে আনুগত্য স্বীকার করিলাম, আমরা আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করিতেছি। হে আমাদের প্রতিপালক! আর আপনারই দিকে প্রত্যাবর্তিত হইতে হইবে।
(২৮৬) আল্লাহ্ তাআলা কাহাকেও নির্দেশ পালনে বাধ্য করেন না কিন্তু উহাই যাহা তাহার সামর্থ আছে। সে ছওয়াবও উহারই পাইবে যাহা সে স্বেচ্ছায় করে এবং সে শাস্তিও উহারাই ভোগ করিবে যাহা স্বেচ্ছায় করে। হে আমাদের রব! আমাদিগকে পাকড়াও করিবেন না, যদি আমরা ভুলিয়া যাই কিংবা ভুল করিয়া বসি। হে আমাদের রব! আমাদের প্রতি কোন কঠোর ব্যবস্থা পাঠাইবেন না, যেরূপ আমাদের পূববর্তীদের উপর পাঠাইয়াছিলেন, হে আমাদের রব! এবং আমাদের প্রতি এমন কোন গুরুভার চাপাইবেন না যাহা বহন করার শক্তি আমাদের নাই। আর ক্ষমা করিয়া দিন আমাদিগকে এবং মার্জনা করিয়া দিন। আর আমাদের প্রতি কৃপা করুন। আপনি আমাদের কর্ম সম্পাদক। সুতরাং আমাদিগকে কাফের সম্প্রদায়ের উপর প্রাবল্য দান করুন।
শানে নুযুলঃ
১। মানুষ যে কাজ ইচ্ছা বা সংকল্প করিয়া করে নাই তজ্জন্য সওয়াবও নাই আযাবও নাই।
মনে ওয়াস ওয়াসা আসা স্বাভাবিক এবং উহা দমন করা অসাধ্য। অতএব, উহা উদিত হওয়া হারাম এবং উহা দমন করা ওয়াজেব করেন নাই। হুযুর (দঃ) বলিয়াছেন, আমার উম্মতের হৃদয়ে যে ওয়াস ওয়াসা অনিচ্ছায় উদিত হয়, উহা সমস্তই আল্লাহ্ ক্ষমা করিয়া দিবেন। উহা আমলে না আনা বা মুখে উচ্চারন না করা পর্যন্ত তজ্জন্য কেহ দায়ী হইবে না। (বঃকোঃ)
২। রাসুলুল্লাহ্ (দঃ) এর সময়ে ইহাকে প্রার্থনার রূপ দেওয়ার কারণ এই যে, উম্মতে মোহাম্মদীয়ার অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি আল্লাহ্ মাফ করিয়া দিবেন বলিয়া হাদীসে উল্লেখ রহিয়াছে, উহার মূল ভিত্তি হইল– “বান্দা, অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য দায়ী নহে” ইহা একটি শাস্ত্রীয় বিধান। (বঃকোঃ)